আসাদুল করিম শাহীন
সহ প্রচার সম্পাদক, বিএনপি
২০ নভেম্বর দিনটি ছিল সুন্দর, হালকা রোদ্দুর, মনোরম, হেমন্তের আকাশ ছিল
ঈষৎ নীলাভ। প্রকৃতির মধ্যে এক ধরণের আনন্দ অনুরণিত। ৫১ বছর আগে এইরকম একটি আনন্দঘন
পরিবেশে, একটি আদর্শিক পরিবারে জন্ম নেয় এক কাংখিত শিশু। সেই শিশুটিই আজকের স্বপ্নবান
তারেক রহমান। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা। আগামী বাংলাদেশের পথ প্রদর্শক। তাঁর শুভ জন্মদিনে
তাকে এবং সকল ভক্ত অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই মূহুর্তে সবচেয়ে যোগ্য মেধাবী দূরদৃষ্টি সম্পন্ন
রাজনৈতিক নেতা তারেক রহমান। ১৯৮৮ সালে নিজ জেলা বগুড়ার গাবতলী থানা বিএনপির একজন সাধারণ
সদস্য হিসাবে তাঁর আনুষ্ঠানিক রাজনীতি শুরু। যদিও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী
হিসাবে কখনও বা পরামর্শদাতা হিসেবে মাঝে মাঝে তাকে দেখা যেত। তিনি আগে বিএনপি পুনর্গঠনে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়া ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
বিশেষ অবদান রাখেন দেশ বরেণ্য এই তরুণ নেতা। ১৯৮২ সনের ২৪ মার্চ স্বৈরাচারী হুসাইন
মোহাম্মদ এরশাদ নির্বাচিত বিএনপি সরকারকে বন্দুকের নলে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে, বিএনপির
সেই চরম ক্রান্তিকালে আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির হাল ধরেন। বিএনপির
অনেক নেতাই সেদিন বিএনপি ত্যাগ করে ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থে জেনারেল এরশাদের অবৈধ
সরকারে যোগ দেয়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং জাতীয়তাবাদী যুবদলকে সাথে নিয়ে দেশনেত্রী
বেগম খালেদা জিয়া, অগ্নিঝরা দুঃসময়ে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে মহাসংগ্রামে নেতৃত্ব
দেন। সেই কঠিন সময়ে সদ্য কৈশরোত্তীর্ণ তারেক রহমান ছাত্রাবস্থায় তাঁর মায়ের পাশে থেকে
বিএনপি পুনর্নিমাণে অনেক সহযোগিতা করেছেন, যা বিএনপির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জাতীয়তাবাদী শক্তিকে গতিময়তাদানের জন্য তাঁর রাজনীতিতে আর্বিভাব। যিনি
বুকের গভীরে লালন করেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। আব্রাহাম লিঙ্কন এর প্রদর্শিত গণতন্ত্রই
তাঁর প্রথম পছন্দ, “জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন, যা কখনো পৃথিবী থেকে
বিলুপ্ত হবেনা। তাঁর স্বপ্ন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ
গড়ার লক্ষে তিনি শুরুতেই ছুটে গিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে। পথে প্রান্তরে হেঁটে বেড়িয়েছেন
তিনি। এই আদর্শ অনুপ্রেরণা তিনি লাভ করেছেন তাঁর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা
চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর কাছ থেকে। পিতার আদর্শ ও কর্মসূচি হৃদয়ে
ধারণ করে দেশপ্রেমের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সত্য-ন্যায় ও কল্যাণের পথে এগিয়ে যাবার প্রত্যয়
নিয়েছেন আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা তারেক রহমান। তিনি রাজনীতিতে আসার আগে ও পরে একাধিকবার
উল্লেখ করেছেন, তাঁর পিতাই তাঁর শিক্ষক। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদৎ বরণের
কিছু পরে তিনি একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন “আমার শিক্ষক” শিরোনামে, তাতে তাঁর পিতার সাথে
কিছু স্মৃতির উল্লেখ করেছেন। এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, “১৯৮১ সালের ৩০ মে বহুবার এসেছে
জীবনে। যতদিন বেঁচে থাকব ঘুরে ঘুরে প্রতিবছর দিনটি আসবে। কিন্তু আমরা তো কখনও ১৯৮১
সালের ২৯ মে’তে ফিরে যেতে পারবো না। ৩০ মে’র পর যখন দেখলাম লাখ লাখ মানুষ চোখের পানি
নিয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে একটি কফিনের পেছনে দাঁড়িয়ে তাদের নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন,
তখন শুধু এইটুকুই মনে হয়েছিল, একটি মানুষ কিভাবে এত লাখো কোটি মানুষ আপন করে নিতে পারেন,
কেমন করে পারেন কোটি মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিতে। সেই লাখো কোটি মানুষের প্রিয় জিয়াউর
রহমানের সন্তান আমি, এটি মনে হলে বাবাকে হারানোর ব্যথা একটু হলেও লাঘব হয়। যখন মনে
পড়ে, লাখ লাখ লোক জানাজায় এবং রেডিও-টিভির সামনে বসে কোটি কোটি মানুষ আল্লাহর দরবারে
তাদের প্রিয় মানুষটির জন্য দোয়া করছে, তখন পিতার মৃত্যুর বেদনা অল্প হলেও প্রশমিত হয়।
আজো মনে পড়ে জানাজার দিনের সেই অচেনা মুরব্বীর কথা, তিনি বলেছিলেন, ‘বাবা, কাঁদতে নেই;
দেখ লাখ লাখ মানুষ এসেছে এই জানাজায়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার বাবাকে বেহেশত নসিব করবেন;
তোমরা কাঁদলে তোমার বাবার আত্মা কষ্ট পাবে।’ আজও যখন বাদজুমা বাবার কবর জিয়ারতে যাই,
একজন মানুষ হলেও পাই সেখানে সেই সময়ে, যে তার নেতার জন্য দু হাত তুলে দোয়া করছে। যাকে
আগে কোনদিন দেখিনি; হয়ত আর কোনোদিন দেখবও না। আসলে এত মানুষের দোয়ার জন্য আজও মাঝে
মাঝে মনে হয়, বাবা আমাদের মধ্যেই আছেন, হয়ত অফিসে গেছেন, কাজ শেষ হলেই চলে আসবেন। যেমন
মনে হয়েছিল ২৯ মে ১৯৮১ সালে। আমার বাবা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স ১৪/১৫ বছর। অর্থাৎ
যে সময় একজন কিশোরের জীবনের পথ চলতে শেখার জন্য দরকার তার জীবনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য
শিক্ষককে, অর্থাৎ তার বাবাকে। কিন্তু আমার এবং ভাই কারও এই শিক্ষকের কাছ থেকে সরাসরি
বেশি কিছু শিখার অবকাশ হয়নি। তার প্রধান কারণ, আমাদের এই শিক্ষকের কাঁধে ন্যস্ত ছিল
সেই সময়ে সমগ্র দেশ ও জনগণের গুরুদায়িত্ব। তাই জীবনের পরবর্তী সময়ে আমাদের শিখতে হয়েছে
এই শিক্ষকের রেখে যাওয়া সততা থেকে, শিখতে হয়েছে তার রেখে যাওয়া আদর্শ থেকে এবং সেই
সব কর্ম থেকে, যা তিনি একজন পিতা হিসেবে আমাদের দিয়ে করিয়েছেন, বলেছিলেন করতে, তা থেকে।
তারই ছোট ছোট অনেক ঘটনা রয়েছে। ঘটনাগুলো বিচার করলে এর প্রভাব আমাদের জীবনে অনেক।”
কঠিন দুঃসময়ে তারেক রহমান রাজনীতিতে আগমন করেন, তাঁর সেই আগমন ছিল রাজনীতির
বদ্ধঘরে খোলা জানালার মত, যে জানালা দিয়ে রাজনীতির বদ্ধ ঘরে ঢুকতে পেরেছিল একমুঠো মিষ্টি
সুবাতাস। রাজনীতিতে তারেক রহমানের আগমনে তখনকার ছাত্র-যুবক-শ্রমিক, তথা সকল তরুণ কর্মীদের
মাঝে উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল, জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিকেরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছবি
দেখেছিলেন তাঁর মধ্যে। কর্মে-কথায়-আচরণে তৃণমূল নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষের মনে আশা-ভালোবাসার
সঞ্চার করেছিলেন তিনি। যে ভালোবাসা এখনও অটুট অম্লান রয়েছে। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী খুলনা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর গোলাম আলী ফকির তাঁকে মূল্যায়ন করেছেন এই ভাবে
- “ঐক্যবদ্ধ অগ্রগতির অমোঘ দাবি উৎপাদনের রাজনীতি এবং জনগণের গণতন্ত্র।
এই কর্মসূচি নিয়ে একদিন গ্রামের পর গ্রামে ছুটে গেছেন বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর
রহমান। তারই প্রদর্শিত পথে পা রাখলেন তারেক জিয়া এবং গণমানুষের প্রাণের ছোঁয়া পেয়ে
তিনিও উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন। সেই থেকে তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে
আত্মনিয়োগ করেন তারেক জিয়া। সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা সরাসরি শোনা এবং সমাধানের কার্যকর
পদক্ষেপ গ্রহণ করে এক নতুন ইতিহাস গড়ে তুলতে তৎপর হন। তারেক জিয়া নৈতিকতা ও মানবিক
মূল্যবোধকে ফিরিয়ে আনতে এক অনন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের
মাঝে গড়ে তোলেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। এক একটি সাধারণ হাত হয়ে ওঠে তখন কর্মীর হাতিয়ার।
নারীর ক্ষমতায়নে শিক্ষার আলো জ্বালাতে তিনি কিছু কিছু কর্মসূচি গ্রহণ
করেন। ফলে তাদের মধ্যেও জেগে ওঠে গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সমাজে তাদের অবদান রাখার
স্পৃহা। ফলে নারীরাও সমাজ ও জাতি গঠনে এগিয়ে আসার মানসিক প্রস্তুতি নেন। পল্লী উন্নয়নে
তারেক জিয়া গ্রহণ করেন যুগান্তকারী পদক্ষেপ। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাঝে অক্ষরজ্ঞান দান,
জীবনমুখী শিক্ষার প্রসার, উন্নত বাসস্থানের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টি করা,
বিদ্যুতায়ন প্রক্রিয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়নের জন্যও তিনি সার্বিক প্রয়াস
চালাতে সচেষ্ট হন। মূলত গ্রাম উন্নয়নের মাধ্যমেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব বলে তারেক
জিয়া পল্লী উন্নয়নের ব্যাপারে যথাসাধ্য চেষ্টা চালান। তিনি মনে করেন, আলোকিত গ্রামই
আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার পূর্বশর্ত। তারেক জিয়া ইতোমধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, বন্যা-সিডর-আইলা-মঙ্গা
ইত্যাদিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন কার্যক্রম, শিশু স্বাস্থ্য সচেতনতা, ক্যাম্প, বীজ
ও সুপেয় পানি প্রকল্প, বৃত্তি প্রকল্পসহ সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে গণমানুষের
মাঝে আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছেন। এমনকি ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রেও তারেক
জিয়া ফলপ্রসূ কল্যাণকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এসব কর্মসূচির লক্ষ্য আগামী দিনের বাংলাদেশ
হবে নিরক্ষরতামুক্ত-সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। একটি সুশিক্ষিত স্বনির্ভর জাতি হিসেবে বাংলাদেশের
মানুষ বিশ্ব দরবারে আপন মহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, প্রফেসর
এমাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতিকথায় লিখেছেন- আমি তারেককে ভালোবাসি। “তারেক রহমানকে আমি দেখি
একজন শিক্ষকের দৃষ্টি দিয়ে। ভাল ছেলে। বিনয়ী, সদাশয়, মৃদুভাষী। নন্দিত জাতীয় নেতা বাংলাদেশের
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। নেতা-নেত্রীর
কাতারে বুদ্ধিদীপ্ত অগ্রগামী তারুণ্যের প্রতীক। দীর্ঘজীবী হোক এই কামনা প্রতি মুহূর্তের।
তাকে চিনি দীর্ঘদিন ধরে। কোন আলোচনা সভা বা সেমিনার নয় বরং ঘরোয়া পরিবেশে।
সুশীল তরুণ হিসাবে। তার বক্তব্য ঋজু। চিন্তা-ভাবনা সুস্পষ্ট। কৃত্রিমতা এখনো তাকে স্পর্শ
করেনি। স্পর্শ করেনি দুর্বুদ্ধিপ্রসূত কোন জটিলতা।”
বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির মানসপুত্র তারেক রহমান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে
একটি নতুন সকাল সৃষ্টির জন্য তাঁর আগমন। তারেক রহমান এবং তার অনুগামি জাতীয়তাবাদী শক্তির
চাওয়া নির্বাচন কেন্দ্রিক বহুদলীয় গণতন্ত্র। আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্র অবরুদ্ধ। দেশে চলছে
একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন। এই ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন থেকে আমরা মুক্ত হতে চাই। তারুণ্যের
প্রতীক বুদ্ধিদীপ্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তারেক রহমান আমাদের মুক্ত করবেন, নতুন আলোর
পথ দেখাবেন। বাংলাদেশের ধ্বংসপ্রাপ্ত গণতন্ত্রের ভঙ্গস্তুুপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো
তাঁর উত্থান হোক জন্মদিনে এই প্রবল প্রত্যাশা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী আপমর মানুষের।