হারুন উর রশীদ স্বপন / ডয়চে ভেলে
বাংলাদেশে রাজধানীমুখী মানুষের সংখ্যা কমছেনা৷ যে কারণে নগর-দারিদ্র্যও
কমছে না৷ নগর গবেষক এবং জনসখ্যা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, গ্রামের মানুষ এখনো মনে করছে
শহরে কাজের সুযোগ বেশি তাই শহরে এসে নতুন করে নগর-দারিদ্র্য বাড়াচ্ছে৷
বিশ্বব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, প্রতি বছর কাজের জন্য গ্রাম থেকে ঢাকায়
আসছে পাঁচ লাখ মানুষ৷ তাদের তিন-চতুর্থাংশই বস্তিতে বসবাস করেন৷ সরকারি জমিতে আগে তারা
ঘর (বস্তি) তুলে বসবাস করলেও এখন সে সুযোগ তেমন নেই৷ এ কারণে রাজধানীতে ব্যক্তি মালিকানার
বস্তি গড়ে উঠেছে৷ এসব বস্তিতে ভাড়া বেশি, কিন্তু সুযোগ-সুবিধা কম৷ তারপরও গ্রামের মানুষ
ঢাকায় আসছে৷ নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘ঢাকায় প্রতিবছর সাত লাখ
নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে৷ এবং এদের শতকরা ৯০ ভাগই দরিদ্র৷ তারা নানা কারণে গ্রামে সহায়-সম্বল
হারিয়ে ঢাকামূখী হয় কাজের জন্য, আয়ের জন্য৷''
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং জনসংখ্যা বিজ্ঞানী অধ্যাপ
ড. এ কে এম নুর-উন নবী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকা শহরে গ্রামের মানুষ আসা কিছুটা কমেছে,
কিন্তু জনস্রোত থামেনি৷ আগে গড়ে প্রতিদিন ঢাকায় ২৪শ' নতুন লোক যোগ হতো, এখন যোগ হয়
১৭শ'৷ সংখ্যায় কমছে৷ কিন্তু প্রবণতা কমেনি৷ আর যারা আসেন তাদের বড় অংশই নিম্নবিত্ত৷
তারা মনে করেন, ঢাকায় কাজ পাওয়া যাবে৷''
স্বাধীনতার পর যেমন ছিল এখন ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা তার চারগুণ হয়ে প্রায়
২ কোটিতে পৌঁছেছে৷ ২০৫০ সাল নাগাদ লোকসংখ্যা সাড়ে তিন কোটির বেশি হতে পারে বলে আভাস
রয়েছে৷ এদিকে গ্রামীণ দরিদ্রের সংখ্যার তুলনায় শহুরে দরিদ্রের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷
১৯৯১ থেকে ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে শহুরে দরিদ্রের সংখ্যা ৬০ লাখ থেকে বেড়ে
৮০ লাখ হয়েছে৷ আর একই সময়ে গ্রামীণ দরিদ্রের সংখ্যা কমেছে৷ গ্রামীণ দরিদ্রের সংখ্যা
৫ কোটি ৫০ লাখ থেকে কমে ৪ কোটি ৬০ লাখ হয়েছে৷
২০১৬ সালে বিশ্বব্যাংক পরিচালিত আরবান স্লাম সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা
শহরে বস্তিবাসীদের প্রতি ১০ জনে ৯ জনের জন্ম ঢাকার বাইরে৷ এর মধ্যে এক পঞ্চমাংশ দরিদ্র৷
নগর গবেষক অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন ঢাকা শহরের ৪০ ভাগ মানুষ
বস্তিতে বসবাস করেন৷ ঢাকায় বস্তির জায়গাও আর নাই৷ তাই ঢাকার পাশে গাজীপুরসহ আরো কয়েকটি
এলাকায় বস্তি সম্প্রসরাতি হচ্ছে৷ ঢাকার পাশের উপ শহরগুলো বস্তির শহরে পরিণত হচ্ছে৷
অনেকে সেখানেই কাজ করেন৷ আবার কেউ কেউ ঢাকায় কাজ করলেও থাকেন গাজীপুর বা ঢাকার আসপাশে
উপ শহরের বস্তিতে৷''
এই পরিস্থিতি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শহুরে দরিদ্রদের পরামর্শ দানকারী
সংগঠন ‘কোয়ালিশন'-এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সান-ইয়াত একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ
মাধ্যমকে বলেন,‘‘শহরগুলোতে আয়ের উৎস রয়েছে৷ আপনি যদি শহরে অবকাঠামো তৈরি করেন, তবে
কিভাবে ভাবতে পারেন যে গ্রামের লোকজন শহরে আসবে না? যদি গ্রামে আয়ের উৎস এবং মিল-কারখানা
থাকতো তবে লোকজনকে ঢাকায় আসতে হতো না৷''
তবে অধ্যাপক ড. এ কে এম নুর উন নবী বলেন, ‘‘এটা উন্নয়নের সমস্যা৷ গ্রামে
যে উন্নয়ন হচ্ছে না, অবকাঠামো হচ্ছেনা তা কিন্তু ঠিক নয়৷ গ্রামে কর্মসংস্থানের সুযোগও
তৈরি হচ্ছে৷ কিন্তু কেউ কেউ তাতে সন্তুষ্ট নয়৷ ঢাকায় একজন রিকশা চালকেরও আয় অনেক৷ তাই
গ্রামের নদী ভাঙা বা অন্য কারণে বিপদগ্রস্থ মানুষ ঢাকায় আসছে৷ এখন গ্রামে কৃষি শ্রমিকও
তেমন আর পাওয়া যায় না। তারা বেশি আয়ের জন্য ঢাকা আসেন৷ তাদের কাছে কষ্টের বস্তিজীবন
আয়ের বিবেচনায় সহনীয়৷''
অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘গ্রাশের তুলনায় ঢাকায় গরিব আবাসন, শিক্ষা
এবং চিকিৎসা সুবিধা সংকুচিত৷ তারপরও তারা আসছেন, কারণ, তারা জানেন, ১০ বছর কষ্ট করে
ঢাকা থাকতে পারলে তার অর্থিক ভিত শক্ত হবে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘নগরে যে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে তারা নুতন৷ আগে যারা
এসেছেন তারা কিন্তু দরিদ্র বা অতি দরিদ্র নয়৷ এর সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে চাপ তা-ও
ঢাকাকে চাপের মুখে রাখছে৷ তাই ঢাকার পরিস্থিতি খারাপই বলতে হবে৷''
No comments:
Post a Comment