হারুন উর রশীদ স্বপন / ডয়চে ভেলে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ৩০শে অক্টোবর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার পর
সারাদেশেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে৷ ঐ ঘটনার পর অন্তত আরো ছয়টি হামলার ঘটনা ঘটে
সারাদেশে৷ এছাড়া নাসিরনগরে ৩০শে অক্টোবরের হামলার পর আরো দু'দফা হামলার ঘটনা ঘটে৷
সেই হামলার ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে, এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও জড়িত৷ এই হামলায়
জড়িত থাকার অভিযোগে নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক আবুল হাসেম, হরিপুর
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহমেদ ও চাপৈরতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরুজ
আলীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে৷ তারা হামলার দিন সকালে কর্মীদেরসহ লাঠিসোটা
নিয়ে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন৷ সেই সমাবেশ থেকেই হামলা চালানো
হয়৷
তবে তাদের দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলেও এখনো তাদের আইনের আওতায়
নেয়া হয়নি৷ শুধু তাই নয়, নাসিরনগরের সংসদ সদস্য এবং মৎস্যমন্ত্রী ছায়েদুল হক এখনো তাদের
প্রটেকশন দিয়ে যাচ্ছেন৷ মঙ্গলাবারও তিনি নাসিরনগরে এক সমাবেশে বলেন, ‘‘তিলকে তাল করা
হয়েছে, মাত্র চার-পাঁচটি বাড়িতে হামলা হয়েছে৷''
এদিকে ঝিনাইদহে ৬৫ বছরের এক মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতনের ভিডিও এখন সামাজিক
যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল৷ ঐ মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতনের অভিযোগও স্থানীয় আওয়ামী লীগ,
যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে৷ মুক্তিযোদ্ধার নাম মোক্তার আহমেদ মৃধা৷ ঝিনাইদহের
শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তিনি৷ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য৷
১৮ই অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে শৈলকুপার কবিরপুরে জাকির মেডিকো নামে একটি ওষুধের দোকানের
সামনে প্রথমে তার ছেলে খোরশেদ মৃধাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়৷ এরপর ভিতরে বসা মুক্তার
আহমেদ মৃধাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়৷ তারা এখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন৷
আহত মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার আহমেদ মৃধা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আওয়ামী লীগ
নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের ক্যাডাররা আমার ওপর হামলা চালায়৷ আমার অপরাধ
আমি টেন্ডার জমা দিয়েছিলাম৷'' তিনি জানান, এখন হামলাকারীরা সবাই আদালত থেকে জামিন নিয়ে
প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই নির্যাতনের শিকার
হওয়ার আগে আমার মরে যাওয়া ভালো ছিল৷'
এদিকে রবিবার পুরনো ঢাকা অবৈধ পলিথিন কারখানা নিয়ে রিপোর্ট করতে দিয়ে
হামলার শিকার হয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক শাকিল হাসান এবং ক্যামেরাম্যান শাহীন
আলম৷ শাকিল হাসানের গায়ে কোরোসিন ঠেলে আগুন
দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়৷ শাহীন ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘হামলাকারী
বলে আমরা আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগ জন্ম দেই৷ সাংবাদিক মারলে কিছু হয় না৷''
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘‘ঘটনাস্থল থেকে থানা পায়ে হেঁটে ১০ মিনিটের পথ
হলেও পুলিশ আসে দেড় ঘণ্টা পর৷ আর এখনো অপরাধীরা আটক হয়নি৷''
এছাড়া ঢাকার গুলিস্তানে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা দুই ছাত্রলীগ
নেতা সাব্বির রহমান ও আশিকুর রহমান দুই সপ্তাহেও গ্রেপ্তার হয়নি৷ সংবাদমাধ্যমে লেখালেখির
কারণে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে
রয়েছে৷ জানা গেছে, তারা নাকি এখনো এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় আছে৷
No comments:
Post a Comment