Search

Sunday, February 19, 2017

কল্পকথার কারিগররা শান্ত হোন

শওকত মাহমুদ 

বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া


লক্ষ করছি, একটা কল্পকথাকে বাস্তবতার পোশাক পরিয়ে খবর বানানোর মতলবি কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে ইদানিং। তবে ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়, ঐ জল্পনা থেকে একটা জনবয়ান গড়াপেটার অপচেষ্টাও আছে একই সঙ্গে। বিশ্বের এক নম্বর পাবলিক ইনটেলেকচুয়াল নোয়া চমস্কি’র ভাষায় যেটা কিনা Consent making - দুরভিসন্ধিমূলক অনুমানকে খবর বানিয়ে ভুয়া মতৈক্য তৈরি করা। ফ্যাসিবাদের ধর্মই হলো, জনমানসকে পরিচালনা করতে গিয়ে খবরকে ঢেকে দেয়া আর খবরকে,  ট্রাম্প গংয়ের মতে, Alternative truth , বানিয়ে তোলা। ক’দিন ধরে ইতি-উতি একটা প্রচারণা দেখছি। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নাকি কারাদণ্ড হয়ে যাচ্ছে, তিনি গ্রেফতার হয়ে জেলে ঢুকছেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে কাজ চলছে কে বা কারা দলের দায়িত্ব নেবেন, কতক বুদ্ধিজীবী নাকি প্যানেলও বানিয়ে ফেলেছেন ইত্যাদি, ইত্যাদি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে জিজ্ঞেসও করা হয়ে গেছে কবে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে গ্রেফতার করা হবে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় থই থই ভাবের ও. কাদের প্রশ্নকর্তাকে লুফে নিয়ে জবাব দিলেন, না না সরকার করবে না, আদালত যদি দন্ড দেয়, আমাদের কিছু করার নেই। জার্মানিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীও উচ্চস্বরে বেগম জিয়াকে গাল দিয়ে একই কথা বলেছেন। এসব চিত্রনাট্যের মূল টার্গেট, বেগম জিয়াকে অস্থির করে তোলা। আর বিএনপি নেতা কর্মীদের বিভ্রান্ত করা। ভাবখানা হলো, নিশ্চিতই জেলে যাচ্ছেন বেগম জিয়া, বিএনপি নামক দলটা গলাপানিতে ডুবছে।

আসল অবস্থানটা বলছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মোটেও অস্থির নন। বরং আগের চাইতে বেশি সুস্থির ও আত্মবিশ্বাসী। আর নেতাকর্মীরা অনেক উজ্জীবিত। এটা সত্য, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলাগুলির বিচারিক গতি বেশ দ্রুত। অসুস্থ নেত্রীকে আদালত ঘন ঘনই ডাকছে এবং বলাই বাহুল্য আদালত ঘিরে জনসমাগমও বাড়ছে। কিন্তু কখন কবে কি সাজা হবে অথবা আদৌ হবে কি না, হলেও এসবের রাজনৈতিক দায় বহন করার সক্ষমতা ফ্যাসিবাদী সরকার রাখে কিনা - সে সব প্রশ্ন আছেই। ঝড় একটা উঠবেই বাংলাদেশ জুড়ে এবং বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদটা আন্তর্জাতিক দুরবিনে আবার স্পষ্ট হবে। এক-এগারোর সময় করা মামলাগুলিতে বেগম জিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনাও আসামী ছিলেন। কিন্তু এক যাত্রার পৃথক ফল হয়েছে স্রেফ প্রতিহিংসার কারণে। শেখ হাসিনা নিজে ওসব মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, বেগম জিয়া পান নি। কারণ শেখ হাসিনার ফয়সালা হলো, তিনি বেগম জিয়া, বিএনপি তথা বিরোধী দল ও মতকে নির্যাতনে-নিপীড়নে রক্তাক্ত করবেনই। কিন্তু বড় ভুল করে ফেলেছেন তিনি। হয়তো অ-নির্বাচিত শাসনকে প্রলম্বিত করতে পেরেছেন, কিন্তু পরিণতি হচ্ছে আওয়ামীলীগের জন্য এক দীর্ঘ অন্ধকার ভবিষ্যৎ। জনরোষ প্রায় বিস্ফোরোন্মুখ। বিএনপি কিছু পারে না - এমন আত্নতৃপ্তিতে শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে যত ঢেঁকুর তোলেন অন্তরে তাঁর ততই জ্বালা । নইলে হররোজ তিনি শহীদ জিয়া, বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে অশ্রাব্য ভাষায় গাল-মন্দ করেন কেন? তিনি কি সুরা হুজরাত-এর ১১ নম্বর আয়াতটি পড়েন নি? এতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেছেন,

“কোন নারী অপর কোন নারীকেও যেন উপহাস না করে, কেননা যাহাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হইতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করিও না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডাকিও না। ঈমানের পর মন্দ নাম অতি মন্দ। যাহারা তওবা না করে তাহারা জালিম।”

হিটলারের “সুহৃদ” স্টালিনের শাসন সম্পর্কে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি চিঠিতে বলেছিলেন,

“মানুষের ব্যষ্টিগত ও সমষ্টিগত সীমা এরা যে ঠিকমতো ধরতে পেরেছে তা আমার বোধ হয় না। সে হিসেবে এরা ফ্যাসিস্টদের মতো। এই কারণে সমষ্টির খাতিরে ব্যষ্টির প্রতি পীড়নে এরা কোন বাধাই মানতে চায় না। ভুলে যায় ব্যষ্টিকে দুর্বল করে সমষ্টিকে সবল করা যায় না। ব্যষ্টি যদি শৃঙ্খলিত হয় তবে সমষ্টি স্বাধীন হতে পারে না। এখানে জবরদস্ত লোকের একনায়কত্ব চলছে। এই রকম একের হাতে দশের চালনা, দৈবাৎ কিছুদিনের মতো ভাল ফল দিতেও পারে, কিন্তু কখনোই চিরদিন পারে না ।”

শেখ হাসিনারও একিই পরিণতি হতে পারে। দুই নেত্রীর একজন দণ্ডিত হলে বা জেলে গেলে আরেকজনের বাইরে থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আর পরিবর্তন হলে? 

সূরা আনআম-এর ৪৭ আয়াতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে বলেছেন,

“দেখো তো, যদি আল্লাহর শাস্তি আকস্মিক কিংবা প্রকাশ্যে তোমাদের উপর আসে, তবে জালেম সম্প্রদায় ব্যতীত কে ধ্বংস হবে?”

প্রখ্যাত ইসলামী লেখক ইবনে কাসীর জানান,

"হজরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন যখন তোমরা দেখো যে কোনো ব্যক্তির উপর নেয়ামত ও ধনদৌলত বৃষ্টি হচ্ছে, অথচ সে গোনাহ ও অবাধ্যতায় অটল, তখন বুঝে নেবে তাকে ঢিল দেয়া হছে।" 

অর্থাৎ তার এই ভোগ বিলাস কঠোর আযাবে গ্রেফতার হওয়ারই পূর্বাভাস। 

২০০৮-এর নির্বাচনে বেগম জিয়া জামিনে মুক্ত হয়ে অংশ নিয়েছেন। পক্ষান্তরে শেখ হাসিনা প্যারালে অর্থাৎ সাময়িক মুক্তি নিয়ে ভোটে যান -  যা আইনের শাসনের বোধ করি ব্যত্যয়। এই প্যরোলের ভবিষ্যৎ কি আল্লাহই জানেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বেগম জিয়া এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোনও দুর্নীতি করেন নি। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি জিয়া পরিবারের শ্রদ্ধা যেমন প্রশ্নাতীত, তেমন আর্থিক সততায়ও এই পরিবার সন্দেহাতীত। 

বেগম জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর দুঃসাহস শেখ হাসিনার হবে কি না জানি না । তবে বেগম জিয়ার মনে সম্ভাব্য কারাদন্ড নিয়ে বিন্দুমাত্র দোলাচল নেই । বিএনপি সমর্থিত কোনো বুদ্ধিজীবীও পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করার ওস্তাগারিতে আছে বলে জানা নেই। কোন কারণে যদি সেই পরিস্থিতি আসে তবে বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানই তো আছেন। প্রবাস থেকে সফলভাবে দল পরিচালনার যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে বিশ্বরাজনীতিতে আর বিএনপির অসংখ্য নেতা ও তৃণমূল কর্মী রয়েছেন যাঁরা এক-এগারোর দুঃসহ সময়ে জিয়া পরিবারের পাশে ছিলেন। তাঁরা অটল, অকুতোভয়, বিশ্বস্ত সঙ্গী। অতএব যারা বানোয়াট খবর বানাচ্ছেন এবং তা দিয়ে হাইকমান্ডের ঘৃণা উস্কে দিচ্ছেন তাদেরকে বলছি - শান্ত হোন।
  • লেখক সাংবাদিক এবং ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। 

Wednesday, February 8, 2017

Rampal: A layman’s perspective

Israfil Khosru

The Rampal issue seemed to have died down. While the opposition against it was and remains quite significant, the media seemed to not cover it with equal significance after a certain point. The media, be it electronic or print, seemed to have implicitly adopted (with few exceptions of course) a uniform policy to black out this story.

The government meanwhile continued to proceed with the 1320 MW plant in question with unflinching fervor and no propensity to compromise. However, the recent attacks by the police on the protestors against the plant in Shahbagh and other parts of the capital city on January 26 seem to have forced the issue back in the information mainstream.

This begs the question, “What makes this plant so unique that the government is willing to take on such overwhelming opposition to forward this agenda?” Let us look at it from a layman’s perspective. The coal-fired plant in question is a partnership between India’s state owned National Thermal Power Corporation and Bangladesh Power Development Board. The joint venture company is known as Bangladesh India Friendship Power Company (BIFPC).

The proposed project, on a substantial area of over 1834 acres of land, is situated 14 kilometers north of the Sundarbans and once implemented will be Bangladesh’s largest power plant. However, basic precondition states that such projects must be outside a 25-kilometer radius of the outer periphery of an ecologically sensitive area. Furthermore, transportation of coal to fuel the plant through the river flow path that cuts through the Sundarbans adds a greater dimension of risk.

While the environmental threat posed by this proposed plant was never in question, a UNESCO report published in 2016 overtly labeled the environmental impact assessment (EIA) undertaken to proceed with the plant to be highly questionable and thus vindicated the general consensus by suggesting the project to be shelved. Various environmental experts have also labeled the EIA to be grossly faulty. In light of the very basic information furnished thus far, let us just say that we have enough materials to comprehend what the activists and the environmentalists are protesting against.
Exploring the fundamental financial viability of the project is likely to open a new can of worms.

Reportedly, 70% of the project is funded by loan and the remaining 30% is shared equally by the Bangladesh and India governments. According to a 2016 report by the Institute for Energy Economics and Financial Analysis, the Rampal power station will produce electricity that will cost 32% more than the average electricity costs in Bangladesh, despite multiple subsidies from Bangladesh and India. Furthermore, the Government of Bangladesh is proposing a tax exemption of 15 years for the plant, which also amounts to a significant figure in terms of revenue loss. Thus a rudimentary view of the financial aspect of the project also point towards ambiguity and encourages no confidence.

Upon exploration of basic facts thus far, from a general citizen’s perspective, there is no perceivable rationale behind driving this project forward with such extant uncertainty. However, if the motivations and the priorities of the state are to be entirely different from what we think it is, such an obdurate position of the government could be understood. Let me further expand on what I am trying to say.

As the Indian government is an equal partner in this project one could argue that the GOB is prioritizing prior commitments/obligations towards its financial partner, which is a neighboring country, over its own constituents. If that is the case, then the issue of environment by default becomes secondary. There is something even greater we have to be concerned about here and that would be the state of our national sovereignty.

The manner in which the government is proceeding with this plant, one cannot be blamed for questioning the loyalty of the state towards its own constituents. Thus far, various phases of the protests against the plant has been met with acrimony by the government followed by the usual failed lip service of defending the project, whereas it should not at all proceed with such a project with even minimal probability of risk.

The bait of ‘development’ has been used incessantly by the government in this regard to justify their position but so far it has failed to produce a viable cost-benefit analysis to appease the real stakeholders. Furthermore, it intentionally shied away from engaging various platforms and pressure groups that oppose the plant as if to avoid any scope of compromise.

The protests are purely about the location of the plant and in no way undermines the need for energy to enable a sustainable economic growth. Hence, the GOB’s intractably static position regarding a possible relocation is rather baffling. Given the events that have unfolded regarding this solitary project so far, one cannot be blamed for thinking that our sovereignty is under threat.

The government can only be judged by the actions it is undertaking and through only positive approaches it can convince the citizens otherwise. If they fail to do so, we will see more Rampals in the future where preservation of Bangladesh’s nature and environmental standards will be never be a priority. We cannot afford to fall prey to hegemonic motivations of external factors that cloud our decision-making process. As the movement to save the Sundarbans gains momentum, time has come for us to acknowledge the fact that something greater than the issue of environment might be at play and has to be addressed to ensure clarification.

The mainstream media in this regard needs to play a proactive role. The Rampal plant has become a symbol of various issues that intertwine to make it significant at various levels and the media’s coverage of it has been rather inadequate and guarded at best in my humble opinion. Like our government, our mainstream media also needs to think seriously about their priorities. There has to be concerted effort in this particular case and sitting on the fence will not bear any fruit.

The writer is a businessman and a concerned citizen.

Tuesday, February 7, 2017

Outcry Grows Against Threat to Rare Bengal Tiger




By Leon Kaye / TriplePundit

 

Bangladesh may have delivered its climate action plan well before the 2015 COP21 climate talks in Paris, but the country’s leaders are sending mixed messages with their determination to build a $1.7 billion coal-fired power plant. The problem with the 1.3-gigawatt project, however, goes beyond worsening the country’s struggles with air pollution — which, according to the World Bank, contributes to 230 million cases of respiratory disease annually.

The Rampal project would be located near the world’s largest mangrove forest, which is home to endangered species such as the Bengal tiger and Indian python. And as a result, some of the world’s most influential environmental NGOs are fuming.

And a new campaign aiming to pressure international financial lenders such as JPMorgan and Crédit Agricole to turn their backs on the project has so far attracted more than 1 million signatures.
The Sundarbans, which cover over 540 square miles (140,000 hectares), has been a UNESCO World Heritage Site for almost 20 years. The sprawling coastal forest is renowned for its rich collection of wildlife, including at least 260 species of birds that thrive amongst the meandering waterways and mudflats.

But these mangroves cratered in size by at least 50 percent over the past 150 years. And along with its decline came the extinction of many species.

Due to the Sundarbans’ fragile ecosystem, UNESCO has called for Bangladeshi authorities to relocate the power plant to avoid threats ranging from acid rain to a further reduction in freshwater flows. UNESCO also insisted that the plant’s backers have not completed any assessment on how its operations could impact on the Sundarbans, its wildlife or the citizens living within the mangroves.

Other critics pointed out that the economics of the Rampal plant do not make sense. The NGO Institute for Energy Economics and Financial Analysis (IEEFA), which advocates for more sustainable development worldwide, described the project as little more than a financial boondoggle.

In a report issued last summer, IEEFA analysts described the plant as overly subsidized to the tune of at least $3 billion. Yet despite the government’s financial support, IEEFA claims that electricity rates in Bangladesh could spike as high as 32 percent. The lack of any plan on how the coal will be sourced, whether it is imported from India or as far as Australia, further puts the project at risk.

Finally, even if the plant operated at near or full capacity, Rampal would be situated in a notorious “wind risk zone” that would subject it to sudden storm surges – in a country that is constantly beset by flooding.

In a more recent IEEFA study, an analyst described the project as so over-leveraged that it could put its creditors at “significant” risk.

In sum, for a low-lying country threatened by sea-level rise and volatile weather, IEEFA described a project that will only increase costs to Bangladesh’s electricity customers. And considering the falling costs of solar and wind power, rooftop and utility-scale solar would make far more sense than a project that would drive capital out of the country and increase its dependence on energy imports.

Saturday, February 4, 2017

সুখী মানুষের খোঁজে...



জাকারিয়া চৌধুরী

 

নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের পরিবর্তে ‘রকিব উদ্দিন মার্কা নির্বাচন কমিশন’ হলে দেশ চরম অস্থিতিশীল হবে বলে মনে করছে বিএনপি। সেজন্য নতুন ইসি গঠনে নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যনমশ সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সব দল বা জোটের সাথে আলোচনা করে সকল দল বা জোটের মহাসচিব পর্যায়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা স্বাধীন, নিরপেক্ষ ইসি গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন বেগম খালেদা জিয়া, গত ১৮ই নভেম্বর হোটেল ওয়েস্টিনে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ২০-দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ এবং আমন্ত্রিত দেশী-বিদেশী অতিথিরা। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবনা শেষ হওয়ার এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যেই সরকারি দল তথা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তা নাকচ করে গণমাধ্যমে কথা বলেন। এ নিয়ে নানা নাটকীয়তা, পক্ষে বিপক্ষে বক্তৃতা-বিবৃতির পরে রাষ্ট্রপতি আলোচনার উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি, আওয়ামীলীগ সহ সর্বমোট ৩১টি দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ম্যারাথন আলোচনা চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে প্রধান করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠনের ঘোষণা আসে বঙ্গভবন থেকে। কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে তাঁদের মধ্যে মাত্র একজন ছাড়া বাকি পাঁচজনের নাম-ধাম, দলীয় পরিচয়, অভিজ্ঞতা এবং বলয়ের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৭শে জানুয়ারি দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন।

বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ঘোষিত সার্চ কমিটি কোনও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবে না।’ তিনি বলেন, এর আগে গত ১৮ই নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়া নিরপেক্ষ ইসি গঠনে যে প্রস্তাব রেখেছিলেন, সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে সেটাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। দলীয় অনুগত লোকের সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটি একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে কিভাবে আমরা তা প্রত্যাশা করবো? সাধারণ জনগণই করে না। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের একজন মাননীয় বিচারপতিকে প্রধান করে ছয় সদস্যের যে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে, আগেরবারের অনুসন্ধান কমিটিরও প্রধান ছিলেন ওই একই লোক। যাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতেই রকিব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অযোগ্য, মেরুদ-হীন এবং বিতর্কিত কমিটি গঠিত হয়। একই ব্যক্তিকেই যখন দ্বিতীয়বারের মতো সার্চ কমিটির প্রধান করা হয় তখন আরেকটি রকিব উদ্দিন মার্কা ইসি গঠিত হবে বলেই ধারণা করা যায়।

অনুসন্ধান কমিটির আরেক সদস্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতা আওয়ামীলীগের অন্যতম নেতা ছিলেন, তাঁর ছোট ভাই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। অনুসন্ধান কমিটির আরেক সদস্য সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক। গত জাতীয় নির্বাচনের সময় তিনি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ছিলেন। বিতর্কিত সেই নির্বাচনকে নিয়মসিদ্ধ করার পুরস্কার হিসেবে তিনি অবসরের পরেও পিএসসি’র চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি সরকারের ইচ্ছা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন তা-ই স্বাভাবিক। কমিটির একমাত্র নারী সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরিন আখতার। মির্জা ফখরুল বলেন, শিরিন আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী শিক্ষক হিসেবেই পরিচিত। তাঁর বাবা কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। শিরিন আখতার নিজে কক্সবাজার জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের নেত্রী ছিলেন। অনুসন্ধান কমিটির আরেক সদস্য মাসুদ আহমেদ একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি সরকারি ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছয় সদস্যের মধ্যে পাঁচজনেরই নাম-ধাম, দলীয় পদ, পরিচয় তুলে ধরলেও সরকারি দল এসব অভিযোগকে আমলে না নিয়ে বরং উড়িয়ে দিয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশে অবস্থান করেন এবং সরকারে প্রভাব রাখেন এমন কূটনীতিকেরা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে অতীতে সব সময়ই সরব ছিলেন। কিš ‘২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের পরে তাঁদের ভুমিকা অনেকটাই গৌণ হয়ে আসে সরকারের কঠোর ভারতঘেঁষা নীতি এবং ভারতীয় কূটনীতিতে বাংলাদেশকে নিজেদের বলয়ে রাখার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে। কিন্তু তাঁরা আবার পর্দার সামনে এসেছেন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতির সময় প্রার্থনা করে চিঠি দিয়ে। অবশ্য বঙ্গভবন এ বিষয়ে এখনও কিছু জানায় নি এবং তাঁদের যে এ বিষয়ে কারও সাথে কথা বলার ইচ্ছাও নেই সেই ইঙ্গিতই যেন পাওয়া গেল আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদেরের কথায়। কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সার্চ কমিটির বিষয়ে বিদেশীদের নাক গলানোর প্রয়োজন নেই। বিএনপি’র কথায় প্রেসিডেন্টকে বিদেশীদের সঙ্গে বসতে হবে, কিন্তু আমরা কি মেরুদ-হীন জাতি? সেদিন চলে গেছে। আমাদের দেশের নীতি নির্ধারণ আমরাই করবো।

অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত সার্চ কমিটি। এ বৈঠকের পরেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ম্যারাথন আলোচনায় থাকা দলগুলোর কাছ থেকে পাঁচ সদস্যের নাম চাওয়া হয়েছে। আবার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ নিতে সোমবার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে সার্চ কমিটি।

প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য নাম প্রস্তাবের দায়িত্ব দেন। সার্চ কমিটির সুপারিশ থেকেই অনধিক পাঁচ সদস্যের নতুন ইসি নিয়োগ দেবেন প্রেসিডেন্ট। রকিব উদ্দিন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারি, নির্বাচন কমিশনার এ কে এম শাহনেওয়াজের মেয়াদ আছে ১৪ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখন সদ্যগঠিত সার্চ কমিটির ছয় জনের মধ্যে একজন বাদে বাকি পাঁচজনের দলীয় পরিচয় এবং বিএনপি’র আস্থাহীনতা, অন্যদিকে কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের অন্য এক আইনজীবী। শনিবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন জমা দেয়ার পর আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে একটি আইনের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা থাকলেও এখন পর্যন্ত সেই আইন প্রণয়ন করা হয় নি। একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সংবিধানের বাইরে চলতে পারে না। আর আইনে সার্চ কমিটির কথা নেই। তাই সার্চ কমিটি গঠন করে যে গেজেট জারি করা হয়েছে তার বৈধতাই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে ওই আবেদনে।

এত আপত্তি, প্রশ্ন, কেন’র পরেও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, সার্চ কমিটির কাছে বিএনপি তাদের প্রস্তাব পেশ করবে। সে অনুযায়ী বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি এবং একই দিনে ক্ষমতাসীন দলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ তাঁদের নিজ নিজ দলের পক্ষে পাঁচ জনের তালিকা নিয়ে যান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিতে। মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত ২৭টি রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবকৃত নাম জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও বিধি) আব্দুল ওয়াদুদ।

আপাতত রাষ্ট্রপতি নির্দেশিত ১০ কার্যদিবস শেষ হওয়া তক অপেক্ষা করা ছাড়া রাজনৈতিক ভাবে কারও করণীয় কিছু আছে বলে মনে হয় না। আমাদেরকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আওয়ামীলীগ ও তাঁদের সরকার নিজেদের ভবিষ্যৎ রচনা করতে নেমেছে নাকি জাতির ভাগ্যরেখাকে পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে তা বলে দিতে পারে একমাত্র ভবিষ্যৎ। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা জানি না বিচারপতি সাঈদের মতো আরেকজন সৎ এবং যোগ্য লোক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদে আরেকবার পাবো কিনা!! আমার মনে আছে, সাঈদ সাহেব কতটা নিভৃতে মারা গেলেন !! পত্রিকায় তাঁর মৃত্যুর খবর ছাপার জায়গা হলো এক কলাম ইঞ্চি, মানে একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবির সমান জায়গায়। তা-ও সেটা ছাপা হলো যে সব পৃষ্ঠায় হারবালের বিজ্ঞাপন ছাপা হয় সেখানে, একেবারে কোনার দিকে। রাষ্ট্র বলুন, বিএনপি কিংবা আওয়ামীলীগ যাদের কথা-ই বলুন না কেন, এই বীর পুরুষকে কেউ মনে রাখে নি। এখন তাকিয়ে আছি এমন আরেকজনের আশায় - যিনি দেশের হাল ধরবেন। দেশটাকে বাঁচিয়ে দেবেন। এমন একজন মানুষ যিনি অকপটে বলতে পারেন, ‘আমি সুখী কিনা জানি না কিন্তু আমার কোনও দুঃখ নেই। সারাদিন আমি নিজের কাজ সুষ্ঠুভাবে করি, রাতে ঘুমাই।’ বাস্তবতা হলো, এদেশে বীরের স্থান নেই। এখানে তাই বীরের জন্ম হয় না। আমাদেরকে শ’ শ’ বছর ধরে সয়ে যেতে হয় নন রেসিং স্টেট-এর খেতাব।

- লালপুর, নাটোর থেকে