কাদের গণি চৌধুরী
বিশ্ব জুড়ে মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে এই সপ্তাহে। সারা বিশ্ব যখন যথাভাবগাম্ভীর্যে এ দিবসটি পালন করছে বাংলাদেশে তখন চলছে মানবাধিক লংঘনের মহোৎসব। মানুষের জান, মাল, ইজ্জতের কোন নিরাপত্তা নেই। মসজিদে খুন। মন্দিরে খুন।গীর্জায় খুন। পিলখানায় খুন। ক্যান্টনমেন্টে খুন। জেলহাজতে খুন। ডিবি অফিসে খুন। বেডরুমে খুন। এমন কি মায়ের পেটেও শিশু নিরাপদ নয়। পীর-মাশায়েখ,ইমাম- মওলানা থেকে শুরু করে যাজক,পুরোহিত কারও রেহাই নেই। খুন হচ্ছে সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, কুটনীতিক, শিক্ষক, ছাত্র। পার্লামেন্ট মেম্বার, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরমেয়র কেউ রেহায় পাচ্ছেনা। কাউকে কেটে ১২ টুকরো, কাউকে টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছে, আবার পেট কেটে পাথর বোঝায় করে লাশ ডুবিয়ে দেয়া হচ্ছে নদীতে। যে খাল, বিল, ঝিলে মাছ থাকার কথা সেখানে এখন পাওয়া যায় লাশ।
তিন বছরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষিতা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গুম হচ্ছে ভিন্নমতের রাজনীতিকরা। তাদের হদিস মেলে না। লাশও পাওয়া যায় না। হাতে গোনা যারা ফিরছে বিধ্বস্ত হয়ে তারা কি যেন অজ্ঞাত রহস্যে মুখ খুলছে না।
পত্রিকায় দেশবরেন্য বুদ্ধিজীবী, কবি, কলামিস্ট ও সমাজ চিন্তক ফরহাদ মজহার তাকে গুম করার পর অনেকদিন বিচারের অপেক্ষায় থেকে নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।
চলতি বছর নিখোঁজ হন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, শিক্ষক ড. মুবাশ্বার হাসান সিজার, ব্যবসায়ী সৈয়দ সাদাত আহমেদ, সাংবাদিক উৎপল দাস, রাজীনিতক এম এম আমিনুর রহমান ও ছাত্র ইশরাক আহমেদ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে চার সহস্রাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৮৫৫টি হত্যাকাণ্ড। গুম বা নিখোঁজ হয়েছেন ৫২ জন।বন্দুকযুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৮৩ জন। এছাড়া ৫ বছরে নিখোঁজ হয়েছেন ৫২০ জন।
সবশেষ মঙ্গলবার নিখোঁজ হয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। খুনের শিকার হচ্ছে অবুঝ শিশুও।নিখোঁজ বা গুমের শিকার হচ্ছে মানুষ। বাসা, অফিস, রাস্তা থেকে হঠাৎ করেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছেন অনেকে। আবার অনেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুসারে, এ ছয় মাসে প্রতিদিন গড়ে ২৩টির বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। মোট মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ৪ হাজার২৪০টি। এর মধ্যে ৮৫৫টি হত্যাকাণ্ড। গুম বা নিখোঁজ হয়েছেন ৫২ জন। বন্দুকযুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৮৩ জন। একই সময়ে অপহরণের শিকার হয়েছেন ১৯৩ জন। নির্মমতা থেকে বাদ যাচ্ছে না নারী-শিশুও। হত্যার শিকার হয়েছে ১২৯ শিশু। আর নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১২৩ শিশু। বছরের প্রথম ৬ মাসে ৩০৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যৌন নির্যাতন, পারিবারিক সহিংসতা, এসিড নিক্ষেপসহ আরও বিভিন্নভাবেসহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৯৯ নারী। এর বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অমানবিক শাস্তির শিকার ১২৭ শিশু শিক্ষার্থী।
পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে অনুসারে, পুলিশের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ১২৭টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানিকেও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়েছে পর্যবেক্ষণে। ৬ মাসেসড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৮৫৩ যাত্রী ও পথচারী।
তবে বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে খুন ১০৫২, শিশুহত্যা ১৯৭, গণধর্ষণ ৭৭ ও ক্রসফায়ারে মৃত্যু ১৫৭ জনের।২০১৭ সালে (জানুয়ারি থেকে নভেম্বর) সেটি এসে দাঁড়িয়েছে- খুন ৮৮৪, গণধর্ষণ ৭২২, ক্রসফায়ারে মৃত্যু ৯৩ জন ও শিশুহত্যা ৩১৩।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির চিত্র ফুটে উঠেছে সুপ্রিমকোর্টের পর্যবেক্ষণে।বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি হুমকির মুখে, সংসদ অকার্যকর এবং প্রশাসনে অব্যবস্থা বিরাজমান বলে মন্তব্য করেছে দেশের সর্বোচ্চ এআদালত।সম্প্রতি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালতের এইসব পর্যবেক্ষণ প্রকাশিত হয়।
উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি হুমকির মুখে, দুর্নীতির প্রাদুর্ভাব বেড়েছে, সংসদ কার্যকর নয়, কোটি কোটি মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এবং প্রশাসনেও তীব্র অপব্যবস্থাপনাবিরাজ করছে।”নাগরিকদের জীবন ও নিরাপত্তা সম্পূর্ণরূপে অনিরাপদ হয়ে উঠছে মন্তব্য করে রায়ে বলা হয়, “আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, যার ফলশ্রুতিতে একটি বিকলাঙ্গ সমাজ তৈরিহয়েছে; যেখানে ভালো মানুষ আর ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখছে না। কিন্তু খারাপ মানুষগুলো অবৈধ সুবিধা আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠছে।”
“এমন অবস্থায় নির্বাহী বিভাগ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছে। এর ফলে আমলাতন্ত্রে দক্ষতা বলে কিছু থাকবে না,” মন্তব্য সর্বোচ্চ আদালতের।
আদালতের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, “স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানেই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দাঁড় করাতে পারিনি। কোথাও কোনো চেক অ্যান্ড ব্যালান্স নেই; কর্মক্ষেত্রে নজরদারি নেই; যেকারণে পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে ও ইচ্ছেমতো ক্ষমতা প্রয়োগের দুঃসাহস দেখাচ্ছে।”
বিচার ব্যবস্থার ওপরও আলোকপাত করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, “অবিরাম চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বিচার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের একমাত্র অপেক্ষাকৃত স্বাধীন অঙ্গ। যদিও তা নিমজ্জিত হচ্ছে কিন্তু প্রতিকূলতা মাড়িয়ে টিকে থাকার আপ্রাণচেষ্টা করছে।”
নিউইয়র্কভিত্তিক বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে বাংলাদেশ স্বৈরতান্ত্রিকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে কিছুদিন আগে।৯০টির বেশি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তৈরি করা ওই প্রতিবেদনের ‘বাংলদেশ অধ্যায়ে মন্তব্য করা হয়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ স্বৈরতান্ত্রিক দিকে এগিয়ে গেছে; দেশটিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতারওপর প্রচণ্ড আঘাত এসেছে; সরকার গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে, আদালত অবমাননার অভিযোগ বা অস্পষ্ট আইনের আওতায় তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করেছে; নিরাপত্তাবাহিনীগুলো ‘গুম’ (ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স), যথেচ্ছ গ্রেপ্তারসহ (আরবিট্র্যারি অ্যারেস্ট) মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন ঘটিয়েছে; যারা এসবের জন্য দায়ী, তাদের ব্যাপারে তদন্ত বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সামান্যই; নিরাপত্তা বাহিনীগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করে বিচারের ঊর্ধ্বে থাকার বা ‘ইমপিউনিটি’ ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছে ইত্যাদি।
বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার শূণ্যের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন ভয়াবহ দুঃসময়চলছে। এদেশে শুধু বিরোধীদলের নেতাকর্মীরাই শুধু নয়, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, নারী, শিশুসহ কারোই কোনো নিরাপত্তা নেই। এদের অধিকাংশই গুম, গুপ্ত হত্যা এবং বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকারহচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও দল নিরপেক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষক, টকশো আলোচকদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে এবং কাউকে কাউকে কারান্তরীণও করেরাখা হয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকারের কতগুলো শর্ত আছে, যেখানে একজন মানুষ সমাজে স্বাধীনভাবে বসবাস করবে। সে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, অন্যেরমুখাপেক্ষী হতে হবে না। কিন্তু সমাজের সবাই এ সুবিধা পাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, একের পর এক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক নিখোঁজ হচ্ছে, তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বেঁচে আছে নাকি মরেগেছে- তাদের খুঁজে বের করার মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র এ দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না।
সবচেয়ে বড় বিপদ হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কখনো কখনো এমন বক্তব্য দিয়ে বসেন, যা ভুক্তভোগী পরিবারের লোককে আরো বেশি মর্মাহত ও আশাহত করে তোলে। যখন তারা বলেন, অপহৃতব্যক্তি বা গুম হওয়া লোক নিজেই আত্মগোপন করেছেন, কিংবা পুলিশের পক্ষে তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়; এ ধরনের বক্তব্য দায়িত্বহীন। কিন্তু পরিবার তো জানে, আত্মগোপন করেছে নাকি গুম হয়ে গেছে, নাকি কেউতুলে নিয়ে গেছে। সে কথার কোনো মূল্য থাকে না। এসব বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর ওপর আস্থা আরো কমে আসে। এ কথা এখন সমাজের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর অনেকেই বলতে শুরু করেছেন।
এর সর্বশেষ শিকার সাবেক অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ছোট মেয়েকে আনতে বিমানবন্দরের উদ্দেশে নিজেই গাড়ি চালিয়ে যাত্রা করেছিলেন দুর্ভাগা মারুফজামান। তার ছোট মেয়ে বড় বোনের সাথে দেখা করতে বেলজিয়াম গিয়েছিল। তার ঢাকায় ফিরে আসার কথা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।
কিন্তু মারুফ বিমানবন্দরে পৌঁছেননি। মাঝপথেই কী যে ঘটে গেল, বোঝা দায়। রাত ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে তার বাসার ল্যান্ডফোন বেজে ওঠে। কাজের মেয়ে সে ফোন ধরে ‘হ্যালো হ্যালো’ বলতেই তাকেটে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আবারো ল্যান্ডফোনটি বাজে। ফোন করেছিলেন মারুফ জামানই। তার কণ্ঠস্বর চিনতে পারেন কাজের মেয়ে। মারুফ তাকে বলেন, ‘কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় কম্পিউটার নিতে লোক যাবে। তাদেরকম্পিউটার দিয়ে দাও।’ ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে তিনজন সুঠামদেহী সুদর্শন ফর্সা লম্বা তরুণ তার বাসার গেটে হাজির হন। দারোয়ানকে বলেন, ‘মারুফ জামানের বাসায় যাবো, কথা হয়েছে।’ তারা এসে ল্যাপটপ, ডেস্ক টপেরহার্ডডিস্ক, তার ক্যামেরা নিয়ে যায় এবং ঘরের বিভিন্ন ড্রয়ার তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখে। মিনিট দশেকের মধ্যে তারা বেরিয়েও যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, তাদের তিনজনেরই মাথায় মাঙ্কি ক্যাপ পরা ছিল এবংক্যামেরার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। ফলে তাদের স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি।
খুব স্পষ্ট যে বাসা থেকেই কেউ তাকে ফলো করছিল এবং বিষয়টি ছিল অত্যন্ত পরিকল্পিত। আগে থেকেই ঠিক করা ছিলÑ ফলো করে কেউ তার পথ আটকাবে, তাকে তুলে নেবে এবং তাকে দিয়ে তার বাসায় ফোন করাবে যে, ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক এগুলো দিয়ে দেয়া হোক। কাছেই লোক মোতায়েন ছিল। তারা এসে ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক, ক্যামেরা এসব নিয়ে চলে যাবে। হ্যাঁ, তারা কোনো ডাকাতি করেনি, কাউকে মারধরও করেনি, নীরবে সব নিয়ে চলেগেছে।
গত চার মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে গেছেন ১৩ জন। তাদের মধ্যে আটজন ফিরে এসেছেন। বাকি পাঁচজনের আজো কোনো সন্ধান মেলেনি। যে পাঁচজনের সন্ধান মেলেনি তারাহলেন- নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের হাসান সিজার, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাদাত আহমেদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবআমিনুর রহমান এবং কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইশরাক আর সাংবাদিক উৎপল দাস। এদের হারানোর বেদনা যে কত গভীর সেটি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোই জানে। মাঝে মাঝে তারা সাংবাদিকদের সামনেহাজির হন, বলেনÑ তার স্বজনের লাশটি হলেও ফিরিয়ে দেয়া হোক। সেখানে মা কাঁদেন, বাবা কাঁদেন, শিশুসন্তান কাঁদে। এই জনপদ থেকে তবে কি হাসির বিলুপ্তি ঘটবে?
এরকম একেকটি ঘটনা ঘটে। আর সমাজের ভেতরে নতুন করে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কেউ জানে না, কে কোথায় ওঁৎ পেতে বসে আছে, কাকে তুলে নেয়ার জন্য। যদি কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে আইনি প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার বিচার হতে পারে। কিন্তু একটি লোককে নিখোঁজ করে দেয়ার অর্থ কার্যত আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া। এটা এক ভয়ঙ্কর অপরাধ। আর সে অপরাধী যেই হোক, তার বিচার হওয়া জরুরি।
বোঝার তো কোনো উপায় নেই যে, কে এই অপরাধ ঘটাল? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক, নাকি সাধারণ দুষ্কৃতকারী? সরকারি কতৃপক্ষের সাফাই হলো, কারা এটা করছে জানা নেই। উল্টো বরং কেউ কোনো ফাঁকে সেই রহস্যের ঢাকা কৃষ্ণবিবর থেকে বেরিয়ে অাসছে যেমন ফরহাদ মাযহার প্রতিকার পাবেন কি! পুলিশ তার বিরুদ্ধে অপহরণ নাটক সাজানোর মামলা ঠুকে দিতে একমূহূর্তও সময় নষ্ট করেনি ।