কলামিস্ট ফরহাদ মজহার |
বাংলাদেশে সরকারের কঠোর সমালোচক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার বলেছেন, তাকে অপহরণ করে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যাবার চেষ্টা হয়েছিল এবং পুলিশ তাকে উদ্ধারের পর তার ভাষায়, তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নেবার চেষ্টা করেছে।
গত জুলাই মাসে নিখোঁজ হওয়ার পর মি. মজহার এই প্রথম সেই ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন।
তিনি বলেন, "গুমের হাত থেকে আমার উদ্ধার পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন, ঘটনাকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা তাদের সাফল্য ও গৌরবকে মারাত্মকভাবে ম্লান করে দিয়েছে।"
ফরহাদ মজহারের এসব অভিযোগের ব্যাপারে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
আজ শনিবার ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদ মজহার এসব কথা তুলে ধরেন। এসময় তার স্ত্রী ফরিদা আক্তার এবং তার আইনজীবীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদা আক্তার বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত এবং আইনি প্রক্রিয়ার স্বার্থে তারা এবিষয়ে এতোদিন কোনো কথা বলেন নি।
ফরহাদ মজহারের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় স্ত্রী ফরিদা আক্তারের করা মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ বলেছে, ফরহাদ মজহারকে অপহরণের প্রমাণ পাননি তারা। পাশাপাশি মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে মি মজহার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করার অনুমতি চাওয়া হয় আদালতের কাছে। গত বৃহস্পতিবার তাদের ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলা করার অনুমতি দিয়েছে আদালত।
এর পরেই ফরহাদ মজহার সস্ত্রীক সাংবাদিকদের সামনে হাজির হলেন।
ফরহাদ মজহারের স্ত্রী বলেন, "দেশের কোন সংবাদ মাধ্যমের সাথেও আমরা কথা বলিনি। এজন্যে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি যে আমরা কথা বলে উঠতে পারিনি। বর্তমান পরিস্থিতির চরম নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুঁকি সত্বেও আমাদের অবশ্যই কথা বলতে হবে।"
গত ৩রা জুলাই সকালে ঢাকার একটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ফরহাদ মজহার। তারপর তার স্ত্রী ফরিদা আক্তারকে ফোন করে তিনি জানান যে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর শ্বাসরুদ্ধকর ১৮ ঘণ্টা পর গভীর রাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নাটকীয়ভাবে তাকে যশোর থেকে উদ্ধার করেন।
সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে ফরহাদ মজহার বলেন, "ভোরে কম্পিউটারে লিখতে গিয়ে দেখি আমি চোখ খুলতে পারছি না। এই অবস্থা হলে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এমন একটা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনার জন্যে বের হই। এসময় তিনজন লোক আমাকে জোর করে একটি শাদা মাইক্রোবাসে তুলে আমার চোখ বন্ধ করে ফেলে।"
পরে তিনি তার স্ত্রী ফরিদা আক্তারকে ফোন করে ঘটনাটি জানান। "বাঁচার জন্যে টেলিফোন করা, টাকা পাঠানোসহ অপহরণকারীরা যা কিছু করতে বলে আমি তা করি।"
তিনি জানান, যেখানে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিলো সে জায়গাটি তিনি চেনেন না। কিন্তু তারা তার ওপর নজরদারি করতে থাকে এবং সন্ধ্যায় তার নির্দেশ মতো হানিফ পরিবহনের গাড়িতে উঠলে তারা তাকে বাসের পেছনে বসিয়ে দেয়।
"আমি মৃত্যু ভয়ে ভীত, বিধ্বস্ত শারীরিক অসুস্থতায় নির্জীব হয়ে পড়ি। শোরগোল শুনে আমি জেগে উঠি। কিছু শাদা পোশাকের লোক জোর করে আমাকে আবার নামিয়ে আনার চেষ্টা করে। শাদা পোশাকের কিছু লোক বন্দুক তুলে শাসিয়ে আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে উভয়ের মধ্যে প্রচণ্ড তর্কাতর্কি হয়। কিন্তু র্যাব ছোটখাটো যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে আমাকে তাদের গাড়িতে উঠায়। এবং আমার স্ত্রী ফরিদা আক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে আমাকে আশ্বস্ত করে।"
তিনি বলেন, অপহরণকারীরা ওই এলাকায় থাকতে পারে ভেবে র্যাব আমাকে নিয়ে খুলনায় ঘটনাটি তদন্ত করতে চাইলেও কে বা কারা র্যাবের গাড়ির দুদিকে রাস্তায় রাতের ট্রাক থামিয়ে দু'দিকের পথরোধ করে। এবং র্যাবের গাড়িসহ আমাকে একটি জায়গায় নিয়ে আসে। আমাকে তখন র্যাবের গাড়ি থেকে নামানো হয়। আমার সঙ্গে তারা প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করে। এবং জিজ্ঞাসাবাদের নামে আমাকে বলতে বাধ্য করা হয় যে আমি বিনোদনের জন্যে বেরিয়েছি।"
তিনি জানান, এর পর তাকে ক্যামেরাসহ কিছু লোকের সামনে দাঁড় করানো হয়। "সাংবাদিকদের সামনে আমি বিনোদনের জন্যে স্বেচ্ছায় বেরিয়েছি এটা স্বীকার করার জন্যে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হয়। অনেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে আমাকে পুলিশের একটি গাড়িতে নিয়ে উচ্চস্বরে গান গাইতে গাইতে ঢাকার পথে রওনা হয়। সারা পথে নানা ভাবে আমাকে মানসিক নির্যাতন করা হয়।"
তিনি বলেন, ঢাকায় নিয়ে আসার পরেও বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাকে তার পরিবারের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। পরে তাকে গোয়েন্দাদের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত অবস্থায় তাকে জেরা করা হয়।
ফরহাদ মজহার বলেন, আদালতকে তিনি জানান তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ডিবি অফিস তাকে দিয়ে যা লিখিয়ে নিয়েছে সেটাই তিনি আদালতে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, "পরে জানতে পারি এবং এখন বুঝতে পারি অপহরণকারীরা খুলনা যশোর সীমান্তের দিক দিয়ে আমাকে সীমান্তের ওপাশে নিতে চেষ্টা করেছিলো।"
তিনি অভিযোগ করেন পুলিশ ঘটনাটিকে অন্যদিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে।
"তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রেস কনফারেন্স করে আমাকে সামাজিকভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা করেন। পুলিশের প্রতিবেদন চ্যালেঞ্জ করলে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন," বলেন মি. মজহার।
তিনি জানান, গোয়েন্দা পুলিশ পরেও তাদেরকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে পুলিশের প্রতিবেদনে সায় না দিলে তাদেরকে সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন।
মি মজহারের স্ত্রী ফরিদা আক্তার সংবাদ সম্মেলনে জানান, তারা এখন এর সুবিচার চেয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন।
- Source - bbc.com/bengali
- Source - bbc.com/bengali
No comments:
Post a Comment