Search

Wednesday, December 27, 2017

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করছে ক্ষমতা-ফ্যাক্টর!


আফসান চৌধুরী/ southasianmonitor.com 



বাংলাদেশ যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা কি সংখ্যাগরিষ্ঠ বাড়িতে পৌঁছাচ্ছে এবং ২০১৮-১৯ সময়কালের নির্ধারিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য ভোটে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে?

শীর্ষ স্থানীয় অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ তাসলিম উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং উচ্চ ইক্যুইটির উপকারিতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। ‘হয়্যার ডিড দি বেনিফিটস অব ইকোনমিক গ্রোথ ডিস-এপেয়ার?’ (বিডিনিউজ২৪, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭) শীর্ষক প্রতিবেদনে তিনি কেবল সমৃদ্ধির দাবিই চ্যালেঞ্জ করেননি, সরকারি উপাত্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

পারিবারিক আয় ও ব্যয় সমীক্ষা তথ্য ব্যবহার করে অধ্যাপক তাসলিম দেখিয়েছেন, ‘২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত পারিবারিক আয় সত্যিকার অর্থে ১১ ভাগ কমেছে। এই সময়কালে সত্যিকারের ভোগও একই অনুপাতে কমেছে।’

‘পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য দেখলে বুঝা যাবে, ২০০৯-১০ এবং ২০১৫-১৬ সময়কালে প্রকৃত জাতীয় আয় বেড়েছে ৪২ ভাগ, অথচ প্রকৃত মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩১ ভাগ। অন্য কথায়, এই ছয় বছরে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিটি পরিবার সদস্যের গড়ে প্রকৃত আয় বেড়েছে ৩১ ভাগ। এই আয় মাথাপিছু প্রকৃত ভোগেও বেড়েছে।’

কিন্তু পারিবারিক তথ্যে দেখা যায়, ২০১০ সালের তুলনায় পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সত্যিকারের আয় দুই ভাগ কমে গেছে। ‘প্রত্যেকের ভোগব্যয় কমেছে ১ শতাংশ করে।’

তিনি বলেন, এইচআইইএস এবং জাতীয় তথ্যের মধ্যকার পার্থক্য এত বেশি যে তা পরিসংখ্যানগত ভুল কিংবা পদ্ধতিগত বা হিসাবগত ভুল হিসেবে এড়ানোর উপায় নেই। অধ্যাপক তাসলিমের যুক্তি হলো, প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেনি।

তিনি বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময়কার প্রবৃদ্ধি থেকে পুরো জনসংখ্যা বাদ পড়েছে। অথচ তাদের কাছেও তা যাওয়ার কথা ছিল। এই সময়কালে জাতীয় আয়ে সরকারি রাজস্বের অংশও বাড়েনি।

রাজনৈতিক কোনো ভ্রান্তি কি আছে?

সরকারি দাবির সাথে সাংঘর্ষিক দাবির ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের জন্য তা কি রাজনৈতিকভাবে নেতিবাচক বিবেচিত হবে না? এক দশক ধরে শাসন করার পর দলটি স্বাভাবিকভাবেই আগের মতো জনপ্রিয় নয়। এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা যেকোনো দলের ক্ষেত্রেই এমনটি হতে পারে এবং আওয়ামী লীগ ভিন্ন কিছু নয়। কিন্তু এটি কি এমন কোনো নির্বাচনী সমস্যা, যার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত?

সদ্য অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে ক্ষমতাসীন দলকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন দলটির প্রধান মিত্র জাতীয় পার্টির প্রার্থী। জাতীয় পার্টির প্রধান এইচ এম এরশাদ রংপুরের লোক হওয়ায় ওই এলাকায় জাতীয় পার্টি শক্তিশালী। কিন্তু ২০১২ সালের নির্বাচনে সেখানে আওয়ামী লীগ জিতেছিল।

২০১২ সালের জয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী চলতি বছর এক লাখ ছয় হাজারেরও বেশি ভোটে হেরে গেছে। চলতি বছর তিনি ভোট পেয়েছেন ৬০ হাজারের কিছু বেশি ভোট, আগেরবারের চেয়ে তা ৫০ হাজার বা অর্ধেকেরও কম।

এই বছর বিজয়ী এম আর মোস্তফা পেয়েছেন এক লাখ ৬০ হাজার ভোট, ২০১২ সালে পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার।

আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি গতবার পেয়েছিলো ২১ হাজার, এবার ৩৫ হাজার।

জয়ের চেয়েও বড় তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সম্ভবত আওয়ামী লীগ মোট ভোটের ৩৫ ভাগেরও কম পেয়েছে। ভোট ব্যাংকের হিসাবটি বিবেচনা করলে দেখা যাবে, আওয়ামী লীগের মূল ভোটে টান পড়েছে, আর বিএনপির বেড়েছে।

অন্যান্য স্থানের মতো ক্ষমতাসীনবিরোধী ভোট যায় সম্ভাব্য জয়ী প্রার্থীর বাক্সে এবং রংপুরেও ভিন্ন কিছু হয়নি।

আওয়ামী লীগ কি উদ্বিগ্ন?

মিত্রের জয়ে সাধারণত বড় ধরনের ক্ষতি হয় না। অবশ্য দলটি বলেছে, তারা তদন্ত করবে। তবে দলটি যে সমস্যায় পড়েছে, তা স্পষ্ট। কিছু ‘সম্পদ’ হাসিলের আশায় এক দশক আগে যারা ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিতে লাইন ধরেছিলেন, তাদের অন্তঃদ্বন্দ্ব এখন একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলটি এ যাবতকালের অন্যতম শক্তিশালী নেতার নেতৃত্বে পরিচালিত হলেও এখন দলটিকে ২০০৮ সালের চেয়েও কম শক্তিশালী দল মনে হচ্ছে। দলটিকে দারুণ দেখালেও দলটির স্বাস্থ্য আসলে তত ভালো নয়।

অর্থাৎ অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত হয়তো আসলেই কোনো ব্যাপার, কিংবা কোনো ব্যাপারই নয়। কারণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের মতো রাজনীতির প্রতিও জনসাধারণের প্রত্যাশা খুবই কম। পুঁজির সাথে সম্পর্কিত ক্ষমতাসীন শ্রেণির অংশটিই হয়তো ভোট কমা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে কেউ ভালো নেই বলে অধ্যাপক তাসলিমের যুক্তি সত্ত্বেও এ নিয়ে এখনো কেউ উদ্বিগ্ন নয়।

No comments:

Post a Comment