Search

Thursday, December 28, 2017

ব্যাংক খাতে রাজনীতি টেনে আনার ফল



২০১৭ সালে ব্যাংক খাত ছিল কেলেঙ্কারির বছর। ব্যাংক দখল থেকে শুরু করে গ্রাহকের আমানত ফিরে না পাওয়া—সবই ঘটেছে বছরটিতে। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। 

প্রথম আলো: প্রতিষ্ঠার চার বছরের মধ্যে গ্রাহকদের বিশ্বাসে চিড় ধরাল ফারমার্স ব্যাংক। গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি। একই সময়ে যাত্রা করা এনআরবি কমার্শিয়ালের অবস্থাও খারাপ। নতুন ব্যাংকের এই অবস্থা হলো কেন?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: যখন নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, আমরা তখনই আপত্তি তুলেছিলাম। ব্রিটিশ ব্যাংকিং অনুসরণ করে আমরা ব্যাংকের শাখা বাড়ানোর নীতিতে চলি। এখানে ব্যাংকের সংখ্যা কম থাকবে, শাখা হবে অনেক। ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার আগে অনেক যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বলে দিলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতিকে রাজনৈতিকভাবে পরিচালনা করলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। এটা ব্যাংক খাতে রাজনীতি টেনে আনারই ফল। রাজনীতিবিদদের তো ব্যাংক দেওয়া উচিত না। যখন দেখা গেল, ফারমার্স ব্যাংক উল্টাপাল্টা কাজ করছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ছিল তখনই ব্যবস্থা নেওয়া। তারা নোটিশ দিয়ে বসে রইল, অগ্রসর হতে পারল না। শোনা যায়, ওপর থেকে চাপ এসেছিল, তাই খুব বেশি এগোতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তো স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। ওপরের নির্দেশ না মেনে গভর্নরের উচিত ছিল, যথাযথ দায়িত্ব পালন করা। এসব দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে চাকরি হারালেও সম্মানের সঙ্গে থাকা যায়। এসব অবস্থার জন্য দায়ী ভুল ব্যক্তিকে ব্যাংক দেওয়া এবং যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেওয়া। ব্যাংকটি শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিল। অবস্থা এমন যে রোগী মরে যাওয়ার পর চিকিৎসক আসিল। একই কারণে এনআরবি কমার্শিয়ালও খারাপ করেছে।
প্রথম আলো: বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানকে তো দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করল। তাহলে কি বিচার হবে?

ইব্রাহিম খালেদ: যখন আইনের শাসন থাকে না, তখন এমনই হয়, বিচার বিঘ্নিত হয়। বিচারকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি আবদুল হাই বাচ্চুকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে সংস্থাগুলো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বেসিক ব্যাংকের নিজেদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল, তা-ও পারেনি। দুদকও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। উচ্চ আদালতের আদেশের পর তারা বাধ্য হয়ে বাচ্চুকে ডাকল। এটা কি লোক দেখানো, নাকি সত্যি? এটা বুঝতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তাকে সত্যিই বিচারের আওতায় আনা হবে কি না, এটা নিয়ে এখনো সন্দেহ রয়ে গেছে। দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি আমার আস্থা রয়েছে, আশা করি তিনি বিচারের ব্যবস্থা করে তা প্রমাণ করবেন।
প্রথম আলো: নতুন ব্যাংকগুলো খারাপ করছে। এরপরও নতুন ব্যাংক দিতে তৎপরতা চলছে।

ইব্রাহিম খালেদ: আইনে নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে, সরকার বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের না। অর্থ মন্ত্রণালয় সুপারিশ পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা খর্ব করেছে। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংককে চাপ দিয়ে ব্যাংক দিতে বাধ্য করছে সরকার, যা আইনের অপব্যবহার। এত ব্যাংক থাকতে কেন নতুন ব্যাংক দেবে সরকার? বর্তমানে কার্যক্রমে থাকা ব্যাংকগুলোই গ্রামে শাখা দিতে পারে। নতুন ব্যাংক দেওয়া মানে আবার কিছু রাজনীতিবিদকে সহায়তা করা। রাজনীতিকে অর্থনীতির মধ্যে টেনে আনা উচিত হবে না। অনেকে বলে থাকেন, কাউকে পদ না দিতে পারায় ব্যাংক দিতে হচ্ছে। এটা তো ভুল সিদ্ধান্ত, তাঁকে ঠিকাদারি কাজ দিয়ে সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।

প্রথম আলো: ইসলামী ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় হঠাৎ পরিবর্তন হলো। এটিকে কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

ইব্রাহিম খালেদ: চট্টগ্রামভিত্তিক গ্রুপটি যখন ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিল, তখন জনগণ ভালোভাবেই নিয়েছিল। জামায়াতের আগ্রাসন থেকে ব্যাংকটি বাঁচল। এখন দেখা যাচ্ছে, তারা আরও ব্যাংক অধিগ্রহণ করছে। এটা আইনি প্রক্রিয়াতেই হচ্ছে, তবে ন্যায়ের ব্যত্যয় ঘটছে। এভাবে তারা একের পর এক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিলে পুরো খাতের ওপর একটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে; যা দেশ, সরকার, অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে। সময় থাকতে এসব কঠোর নজরদারিতে আনতে হবে। একটি গোষ্ঠী কী পরিমাণ শেয়ার ধারণ করতে পারবে, আইন সংশোধন করে তা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।

No comments:

Post a Comment