Search

Thursday, March 8, 2018

নারী ও শিশুরা বিচার পায় না


২০০৭ সালের এক সন্ধ্যায় ঢাকার প্রান্তে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিল ১৩ বছরের একটি মেয়ে। পরিচিত দুজন তরুণ তাকে ডেকে নিয়ে সারা রাত আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। এই অভিযোগে মায়ের এজাহারে মামলা হয়। ডাক্তার ধর্ষণের আলামত পেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ এক আসামির হদিস বের করতে না পারায় তিনি অব্যাহতি পান। অন্যজন প্রায় আট বছর বিচার চলার পর সাক্ষীর অভাবে খালাস পান। মেয়েটির পরিবার বলছে, দুজনই এখনো এলাকায় আছেন।

২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর বিকেলে ভাটারা এলাকায় বাড়ির পাশের দোকানে গিয়েছিল নয় বছরের মেয়েটি। বাবা পরদিন কাছের এক ডোবায় তার বস্তাবন্দী লাশ পেলেন। মেয়েটিকে কেউ ধর্ষণ করার পর গলা টিপে মেরেছিল। পরপর ছয়জন পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করেন। চারজন গ্রেপ্তারও হয়। কিন্তু সর্বশেষ কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে তাদের অব্যাহতি চান। তিনি লেখেন, আগের তদন্তে অবহেলার কারণে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি। মেয়েটির বাবা এই প্রতিবেদনে নারাজি দিয়েছেন।

শ্যামলীর ১৩ বছরের পিংকীকে উত্ত্যক্ত করতেন এলাকার দুই যুবক। ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি পাড়ার ওষুধের দোকানে তাঁরা মেয়েটির হাত ধরে টানাহেঁচড়া করেন, চড়-থাপ্পড় মারেন। ঘরে ফিরে পিংকী আত্মহত্যা করে, কারণটা চিরকুটে লিখে যায়। অভিযুক্ত দুজন গ্রেপ্তার হয়ে বছর না ঘুরতেই জামিন পেয়েছেন। সাড়ে সাত বছর ধরে বিচার চলছে। সাক্ষ্য দিয়েছেন শুধু তিনজন আত্মীয়।

পিংকীর পরিবার মধ্যবিত্ত। বাকি দুটি নিম্নবিত্ত। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা এই মামলাগুলোর বিচার হচ্ছে একই নামের ট্রাইব্যুনালে।

ঢাকা জেলার পাঁচটি ট্রাইব্যুনালে আসা গুরুতর ছয়টি অপরাধের মামলা নিয়ে প্রথম আলোর প্রায় দেড় বছরের অনুসন্ধান বলছে, বিচারের পরিস্থিতি এ রকমই। পুলিশ আসামিদের খুঁজে পাচ্ছে না অথবা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাচ্ছে না। পুলিশ আর সরকারি কৌঁসুলিরা (পিপি) সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করে মামলা জিততে পারছেন না। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের জন্য হত্যা, যৌতুকের জন্য হত্যা, আত্মহত্যায় প্ররোচনা আর যৌন পীড়নের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেও না।

ট্রাইব্যুনালগুলোর বিচারিক নিবন্ধন খাতা থেকে প্রথম আলো এই ছয় অপরাধে ২০০২ থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আসা ৭ হাজার ৮৬৪টি মামলার প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করেছে। তখনো পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছিল ৪ হাজার ২৭৭টি মামলা। সাজা হয়েছিল মাত্র ১১০টি মামলায়। অর্থাৎ বিচার হয়েছিল ৩ শতাংশের কম ক্ষেত্রে। বাকি ৯৭ শতাংশ মামলার আসামি হয় বিচার শুরুর আগেই অব্যাহতি পেয়েছে, নয়তো পরে খালাস হয়ে গেছে।

মামলাগুলোর বেশির ভাগ থানায় করা, কয়েক শ মামলা হয়েছে সরাসরি ট্রাইব্যুনালে। সব কটিরই তদন্তের ভার পুলিশের। তদন্তে অবহেলা, গাফিলতি ও অদক্ষতা থাকে। আদালতে সাক্ষী আনা আর সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনে পুলিশ আর পিপিদের অযত্ন ও গাফিলতি থাকে। ভুক্তভোগী পক্ষ হয়রানি আর টাকা খেয়ে মামলা ঘুরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করে।

অনেক মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। কখনো আদালতের বাইরে আপস হয়। ট্রাইব্যুনালের মাথায় মামলার পাহাড় জমে। এসবের জন্য জবাবদিহি বা নজরদারির নজির চোখে পড়েনি। ভাটারায় ধর্ষণের পর খুন হওয়া শিশুটির বাবা এখনো আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘পুলিশের ভুলে আসামিরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। আমি কি তাহলে আমার মেয়ে হত্যার বিচার পাব না?’

আর শ্যামলীর পিংকীর চাচা আলী আশরাফ আখন্দ বলেছেন, ‘আমরা অনেক আগে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে এসেছি। অথচ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ অন্য সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে হাজির হচ্ছে না। বিচার চাইতে গিয়ে প্রতি পদে বিড়ম্বনা সহ্য করতে হচ্ছে।’

মামলা প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে আরও এসেছে অভিযোগকারী আর আসামিদের মধ্যে আপস অথবা আঁতাত হয়ে যাওয়ার কথা। আর এসেছে মিথ্যা মামলা হওয়ার অভিযোগ। তা ছাড়া, আজ পর্যন্ত সরকার আইনটির কোনো বিধি করেনি। এতে নানা রকম সমস্যা হচ্ছে। আইনজীবীরা আইনের কিছু ঘাটতির কথাও বলেছেন।

অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা ৬৫টি মামলার নথিপত্র খুঁটিয়ে পড়েছেন। এগুলোর এবং এর বাইরেও অনেকগুলো নথির ঠিকানা ধরে ভুক্তভোগী আর আসামিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন সরকারি কৌঁসুলি আর পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে, রাষ্ট্রের পক্ষে অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব যাঁদের। কথা হয়েছে অভিজ্ঞ আইনজীবী আর মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে।

আসামির সঙ্গে অভিযোগকারীর আপসের নেপথ্যে অনেক রকম কথা থাকে। ২০০২ সালের মাঝামাঝি ঢাকার এক উপজেলায় অতি দরিদ্র একজন কিশোরী গ্রামের পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছিল। বিচার চলছিল। কিন্তু ২০১০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি লিখে পিপিকে জানায়, ‘মামলাটি না চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি আর চালাতে চায় না জানিয়ে পিপি আবেদন করলে ১ নম্বর ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।

অভিযোগকারীরা অবশ্য এত কথা জানেন না। গত অক্টোবরের এক সন্ধ্যায় মেয়েটি ও তাঁর মা প্রথম আলোকে বলেন, আসামিরা জামিনে বের হয়ে আসার পর থেকে এলাকায় তাঁদের ওপর আপস করার জন্য খুব চাপ ছিল। মেয়েটি বলেন, ‘নেতা লগে থাকছে, আর দ্যাশের মইধ্যে গইন্যমাইন্য লোকেরা আছে। মাতবর-চেয়ারম্যান এরা বলছে। আসামির লোকেরা বলছে, এ রকম আর কোনো সময় হইব না, যা হওয়ার হয়া গেছে। মাথা নত হয়া মাইন্যা নিছি।’

অভিযোগকারীদের বড় অংশ দরিদ্র। খুঁটিয়ে দেখা ৬৫টি মামলার ৫১ টিতেই অভিযোগকারীরা স্বল্প আয়ের পোশাককর্মী, গৃহকর্মী, বস্তিবাসী বা ছিন্নমূল নারী ও শিশু। তাঁরা থানা আর আদালতে চক্কর কেটে খরচপত্র করে মামলা টানতে পারেন না। মামলা তদারকির জন্য তাঁরা মূলত পিপির ওপর নির্ভরশীল। সহায়ক আইনজীবী নিয়োগের সামর্থ্য তাঁদের নেই।

আপসের বাস্তবতার সঙ্গে মিলেমিশে আসে এই সাধারণ অভিযোগ যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা অধিকাংশ মামলাই মিথ্যা। ২০১৬ সালের জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে সারা দেশের ৪০ টির বেশি ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার এক নম্বর কারণ হিসেবে মিথ্যা মামলাকে চিহ্নিত করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, এমনকি ধর্ষণের মামলারও নেপথ্যে অন্য বিরোধ থাকে।

তবে প্রথম আলোর খুঁটিয়ে দেখা মামলাগুলো ভুয়া মামলার ঢালাও অভিযোগকে সমর্থন করেনি। তা ছাড়া সাবেক ও বর্তমান অন্তত আটজন পিপি, বেশ কয়েকজন আইনজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা ও অভিযোগকারীরা বলেছেন, হত্যা বা আত্মহত্যা তো বটেই, গুরুতর এই ছয় অপরাধের মামলাগুলোর বেশির ভাগ ঘটনাই সত্য।

ধর্ষণ ও যৌন পীড়নের অভিযোগকারীকে থানা থেকে আদালত পর্যন্ত অশেষ হয়রানি পোহাতে হয়। লোকলজ্জা আর ধিক্কারের মুখোমুখি হতে হয়। তাদের সান্ত্বনা-পরামর্শ বা পুনর্বাসনের সুযোগ খুবই কম। নিতান্ত মরিয়া না হলে কেউ মামলা করতে আসে না।

অব্যাহতি, খালাস, ঝুলে থাকা
পুলিশ যখন এজাহারে বর্ণিত আসামির বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণ করার মতো তথ্য পায় না, তখন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। ট্রাইব্যুনাল শুনানিতে সেটা গ্রহণ করলে সেখানেই মামলার ইতি হয়, আসামি অব্যাহতি পায়। তদন্তে প্রাথমিক প্রমাণ পেলে পুলিশ অভিযোগপত্র দেয়, যার ভিত্তিতে শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করেন। অথবা আসামি অব্যাহতিও পেতে পারে।

অভিযোগ গঠিত হলে বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ সময়ে ন্যূনতম সাক্ষী ও প্রমাণ হাজির করা না হলে আদালত মামলার ইতি টেনে আদেশ দিতে পারেন। তখন সাক্ষীর অভাবে আসামি খালাস পায়। আবার রাষ্ট্রপক্ষ পূর্ণ শুনানিতে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে আসামি বেকসুর খালাস পায়।

ছয় অপরাধে ১৫ বছরে নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর ৪১ শতাংশের ক্ষেত্রে আসামিরা বিচার শুরুর আগেই অব্যাহতি পেয়েছে। আর ৫৫ শতাংশ মামলায় সাক্ষ্য-শুনানির শেষে আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়েছে। কিছু মামলা নিষ্পত্তির কারণ নিবন্ধন খাতায় লেখা নেই, কয়েকটির নিষ্পত্তি হয়েছে আসামির মৃত্যুতে। এভাবে ৯৭ শতাংশ মামলার আসামির বিরুদ্ধেই এসব গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

চলমান মামলাসহ মোট দেখা মামলার তিন-চতুর্থাংশের কিছু কম ধর্ষণের অপরাধে করা। প্রায় এক-চতুর্থাংশ হচ্ছে যৌন পীড়নের মামলা। দেখা যায়, ২০১২ সালের পর থেকে মামলা আসা বেড়েছে এবং সেটা মূলত যৌন অপরাধের মামলার জন্য।

সাজার হার সবচেয়ে কম যৌন পীড়নের মামলাগুলোতে, সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায়। তবে এই মামলাগুলো সংখ্যায় খুবই কম আর সেখানেও নিষ্পত্তি হওয়া তিন-চতুর্থাংশ মামলায় আসামি অব্যাহতি বা খালাস পেয়েছে।

চলমান ছিল ৩ হাজার ৫৮৭টি মামলা। ২০০২ সালে আদালতে আসা ১৬টি মামলা তখনো ঝুলছিল। এর বড় অংশ ধর্ষণ ও গণধর্ষণের মামলা। চলমান মামলার প্রায় ৪০ শতাংশ (১ হাজার ৩৪৬ টি) ছয় থেকে ১৩ বছর ধরে ঝুলছিল। বিচার শুরু হতে হতেই অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। এভাবে ঝুলে থাকার সময়টা ২০ বছর পেরিয়ে যাওয়ারও নজির আছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বললেন, ‘অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রসিকিউশন পক্ষের (রাষ্ট্রপক্ষ) দুর্বলতার কারণে আসামিরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, অনেক মামলা শক্তভাবে অতি দ্রুত বিচার করা উচিত। কিন্তু তদন্ত, অভিযোগপত্র দেওয়া আর অভিযোগ গঠনে অনেক সময় চলে যায়। বিচারও ধীরগতিতে চলে।

মামলা যত গড়ায়, সাক্ষী এনে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে আসামিদের শাস্তি দেওয়ার সম্ভাবনা তত কমে। আপসের সম্ভাবনাও বাড়ে। ২০০২ সালে আসা মামলাগুলোর মাত্র চারটিতে সাজা হয়েছে। সবই ২০০৪ সালের মধ্যে। এরপর সব মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে খালাসে।

অব্যাহতির চক্কর
ভাটারার ধর্ষণ ও হত্যা মামলাটি একে একে থানা, গোয়েন্দা বিভাগ আর সিআইডির ছয়জন কর্মকর্তা তদন্ত করেছিলেন। শেষ তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক মো. শামসুদ্দিন চূড়ান্ত প্রতিবেদনে লিখেছেন, সুরতহালের সময় লিজার যৌনাঙ্গ থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করানোর দরকার ছিল। তা ছাড়া মেয়েটির পোশাক সিআইডির ডিএনএ পরীক্ষণাগারে পাঠানো হয়েছিল ২৬ দিন পরে। আসামি শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা তখন আর পাওয়া যায়নি।

শামসুদ্দিন লিখেছেন, ‘পূর্ববর্তী তদন্তকারী অফিসারের অবহেলার কারণে’ তদন্তে কোনো ফলপ্রসূ তথ্য পাওয়া যায়নি। বারবার চেষ্টা করেও তিনি ওই কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাননি। সব শেষে তিনি লিখেছেন, এটি একটি ‘সত্য মামলা বলে প্রতীয়মান হলেও’ কোনো আসামিকে শনাক্ত করা বা ঘটনা উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি শামসুদ্দিন দেন মামলা হওয়ার এক বছর এক মাস পর, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। এজাহারকারী মেয়েটির বাবার নারাজির ওপর শুনানি এখনো চলছে। আসামিরা জামিনে আছেন।

বিচারিক নিবন্ধন খাতার লিপিকারদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, অব্যাহতির প্রায় সবই চূড়ান্ত প্রতিবেদন মূলে হয়েছে। ছয় অপরাধের মোট মামলার সেটা প্রায় চার ভাগের এক ভাগ। ঘটনা ‘সত্য’, কিন্তু অপরাধী মিলছে না-এমনটা বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হয়েছে। তবে অনেকগুলোই হয়েছে এজাহার ‘মিথ্যা’ বা ‘ভুল তথ্য’ দিচ্ছে বলে।

পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) ও ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজিএম) আদালতে জমা পড়ে। তাদের ২০১৬ সালের নিবন্ধন খাতায় এই ছয় অপরাধের মামলায় যত চূড়ান্ত প্রতিবেদন হয়েছে, প্রায় অর্ধেকই ‘ভুল তথ্য’ হিসেবে।

অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশ আসামিপক্ষের কাছ থেকে টাকা খেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। মামলা না নেওয়ার অভিযোগও আছে। সরাসরি ট্রাইব্যুনালে মামলা হওয়ার এটা একটা কারণ। বেশ কয়েকজন এজাহারকারী ও ভুক্তভোগী নারী প্রথম আলোকে আরও বলেছেন, থানায় মামলা করার সময় পুলিশ সন্দেহ বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, খারাপ কথা বলে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলছেন, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অসদুপায় ও গাফিলতির সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

আর ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোনালিসা বেগম বলেছেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে ভিকটিম সাবালক হলে অন্য তথ্য মেলে, ঘটনাস্থল ভুল বেরোয়। তখন সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। গ্রহণ বা অগ্রহণ আদালতের এখতিয়ার।’

মোনালিসা বলেছেন, ‘৫ কি ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশের ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে।’ তবে এই আইনের মামলাগুলো পুলিশ খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখে। জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা তদন্ত তদারক করেন। প্রথম আলো শিশু ধর্ষণ ও হত্যার কয়েকটি মামলায় বারবার তদন্ত হতে দেখেছে।

মিথ্যা মামলা হলে বাদীর বিরুদ্ধে বিচারের বিধান আইনেই আছে। প্রথম আলো মাত্র একটিতে সেটা হতে দেখেছে। মোনালিসা বলেছেন, পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এর প্রস্তাব থাকে, কিন্তু আদালত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই করেন না। আদালতের ওপর এমনিতেই অনেক মামলার চাপ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারটির (ওসিসি) আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার বহু বছর ধরে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের পক্ষে মামলা লড়ছেন। তিনি বলছেন, মামলা দায়েরের পর আপস হয়ে গেলে তদন্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগকারী বলেন, আসামিপক্ষের সঙ্গে তাঁর কোনো বিরোধ নেই। তখন পুলিশ ‘তথ্যগত ভুল’ বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। ফাহমিদা বলেন, ‘তখনই পুলিশ বলছে এগুলো মিথ্যা মামলা।’

একাধিক মামলায় পুলিশ আসামির হদিস পায়নি। প্রথম আলো অবশ্য তাদের খুঁজে পেয়েছে। আসামি ভুল বেরোলে পুলিশ সঠিক আসামিকে খুঁজে বের করতে পারেনি। নাম-ঠিকানার ছোটখাটো ভুল দেখিয়ে আসামির অব্যাহতি চেয়েছে। প্রাথমিক তথ্য-আলামত সংগ্রহে খামতি, ডাক্তারি বা ফরেনসিক পরীক্ষা নিয়ে সমস্যা আর ঠিক লোককে সাক্ষী না করায় সাজা হয়নি। পরবর্তী প্রতিবেদনগুলোয় এমন উদাহরণ এবং পুলিশের নানা সীমাবদ্ধতার বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।

এদিকে গত নভেম্বরে পুলিশ ব্যুরো অব ইভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২৩৮টি হত্যা মামলার ওপর একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে। গবেষণাটি বলছে, থানা-পুলিশ আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তদন্তে গাফিলতি, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ত্রুটি আর ম্যাজিস্ট্রেটের ভুলে অর্ধেকের বেশি মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন।

সময়ের ফেরে আপস
নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সব অপরাধই বিচারের জন্য গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ আপস-মীমাংসার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বিচার চলাকালেও আপস হয়।

সচরাচর ভুক্তভোগীর চেয়ে আসামিপক্ষ সবল থাকে। তাদের চাপে ভুক্তভোগীরা আপস করতে বাধ্য হয়। ফাহমিদা বলেন, ‘চাপটা এমন হয় যে আপস করতে হবে, নয়তো এলাকা ছাড়তে হবে।’ কয়েকটি নথিতে দেখা যায়, স্বয়ং ভুক্তভোগী আদালতে হলফনামা বা সাক্ষ্য দিয়ে অভিযোগ তুলে নিচ্ছেন। খালাসের রায় হয়ে যাচ্ছে।

তা ছাড়া বিচার হবে-এই আস্থার প্রশ্নটি বড়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিকটিম যদি জানেন মামলার সঠিক বিচার হবে, তখন কিন্তু তিনি আর আপসের দিকে যাবেন না। তিনি বিচার চাইবেন। কিন্তু অভিযোগকারী যখন দেখেন আসামি টাকার জোরে নিজেকে খালাস করে নেবেন, তখন আপস করে ফেলেন। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরাও আদালতে পাল্টি খান।’

পিবিআইয়ের গবেষণাটি দেখেছিল, লম্বা সময় লাগায় ৩৭ শতাংশ সাক্ষী আপস করেছেন। বিচারে দেরি হলে বাদীপক্ষের লোকজনও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আর সাক্ষ্য দিতে আসেন না।

সাক্ষী গরহাজির
যে ধর্ষণের মামলার কথা দিয়ে এই প্রতিবেদন শুরু হয়েছে, তাতে রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ জন সাক্ষী ছিলেন। আট বছরে ২৯টি শুনানির তারিখে এজাহারকারী মা ও ভুক্তভোগী মেয়েটি ছাড়া আর কেউ সাক্ষ্য দিতে আসেননি। ট্রাইব্যুনালের বিচারক এক আদেশে মামলাটির ইতি টানেন।

সাক্ষী হাজির করার দায়িত্ব পুলিশের। সাক্ষীকে কোর্টে তোলা, সাক্ষ্য উপস্থাপনের ভার পিপির। পিপিদের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে এই দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ আছে। পিপিরা অবশ্য এ কথা মানেন না। আর অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব বলছেন, বেশির ভাগ পিপি রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান। তাঁদের দায়বদ্ধতা থাকে না।

সর্ব অঙ্গে ব্যথা
কয়েকজন আইনজ্ঞ বলেছেন, বড় পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে অনেকগুলো অপরাধে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনের মতো চরম সাজার বিধান থাকা আসামিদের খালাস পাওয়ার একটি কারণ। সাজা কম হলে শাস্তি পাওয়া বাড়ে। তা ছাড়া, আইনে কিছু অপরাধের ধারা ঢালাও হওয়ায় মিথ্যা মামলা দায়েরের সুযোগ বেশি। পাল্টা মামলা না করায় ‘মিথ্যা মামলা’র অভিযোগের সুরাহা হচ্ছে না।

আইনে তদন্ত ও বিচারের জন্য সময়সীমাসহ পুলিশ, ডাক্তার, পিপি ও ট্রাইব্যুনালের জবাবদিহির বিধান আছে। কিন্তু শেষের দুই ক্ষেত্রে বিচ্যুতির শাস্তি সুনির্দিষ্ট নয়। বিধি না থাকায় অনেক কাজের পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট হচ্ছে না। জবাবদিহি হওয়ার হিসাব-কিতাব বা নজরদারি নেই। আর ভুক্তভোগীর ভোগান্তির শেষ নেই।
  • প্রথম আলো/৮-৩-১৮

INTERNATIONAL WOMEN’S DAY Derogatory words for women in school texts not just slipshod


Textbooks studied by schoolchildren have words to mean a woman that carry degrading shades and overtones of helplessness, lustfulness, wantonness, sensuousness, entertainment and various other derogatory words that demonstrate how a woman is treated in a patriarchal society. 
Such words mentioned as synonyms for nari (woman) are found in Bangla grammar books used as texts from grade four to 10 in government and non-government schools and madrassahs across the country. 

But, these textbooks do not contain any entry for Purush (man) in the chapter dealing with synonyms.

Parents, rights activists and educationists observe that depiction of women degradingly in the textbooks reflects the sorry state of the country’s education system that may hinder sound mental growth of future generations. 

‘It’s alarming that schoolchildren study textbooks demeaning women, which may help develop patriarchal mentality among the male students to look down upon women in society while the female students may lose self-confidence,’ said rights activist Khushi Kabir, expressing her concern.

‘Depicting women derogatorily also goes against the spirit of building a discrimination-free society that we aspire for and also has been endorsed in the country’s sustainable development goals,’ she said. 

‘I was shocked when my daughter asked me whether I am abala [helpless] as she learned the word as a synonym for women in her Bangla grammar book,’ said Rokeya Sultana, a single mother.

Bangla Bhashar Byakaran, written by martyred intellectuals Munier Chowdhury and Mofazzal Haider Chowdhury in 1969 and published by National Curriculum and Textbook Board, is the textbook for grade IX and X in all schools and madrassahs. 

Page 188 of the book mentions nari (woman) having abala (helpless), kamini (lustful), mahila (a woman confined to home), streelok (housewife) and ramani (sensuous) as its synonyms.

Besides, teachers at schools and private coaching centres use additional Bangla grammar books such as Bhasha Shoily: Bangla Byakaran O Rachana, written by Dr Delwar Mofiz and published by Grantha Bitan, for improving skills of the pupils of grade IX and X to solve creative questions. 

Page 221 of the book mentions ramani, rama, streelok, patni, bama, abala, angana, manabi, manabika, awrat, jenana, bala, mohila, kamini, bhamini, banita, lalana, angana, bharja, pramada and shimantini. Kamini, banita and pramada respectively stand for lustful, darling and entertainer. 

Grantha Bitan staff said the book was hugely sought for by the grade IX and X students as many teachers of both government and non-government schools recommended it for solving creative questions.

Many schools use Bhasha Reeti: Bangla Byakaran Nirmity, published by Bangla Prakash and written jointly by AKM Abdur Rab and Tapankar Chakrabarti, as text for grade VIII students, which on page 309 also gives similar synonyms for nari. 
Though the NCTB does not publish Bangla grammar textbooks for primary schoolchildren, head teachers of many non-government schools said they included Bangla grammar books published by private publishers in their curriculum to make their pupils more advanced than students of other schools which follow only the NCTB curriculum.

One of such books Lal Sabuj Bangla Byakaran O Nirmiti, written by Dr Shamiuzzaman and published by Tanha Publications, on page 22 mentions abala, Ramani, streelok, kanta and bala as synonym for nari. 

Khorshed Alam, owner of Tanha Publications, said that the book was used as text at Ideal School, Viqarunnisa Noon School, South Point School and many other reputed non-government schools. 

Many government school teachers at classes and private coaching centres also recommended it to the students, he said. 

Dhaka University’s retired Bangla professor Abul Kashem Fazlul Haque told New Age that neither nari (woman) nor purush (man) had any appropriate synonym in Bangla as did male or female in English. 

‘Depending on status in society, women have been described with some words which have been stated in these books as synonyms,’ Professor Haque said. 

He suggested revision of textbooks to portray women with dignity. ‘If the book written by Munier Chowdhury and Mofazzal Haider Chowdhury in 1969 contains some words not relevant to present society, it needs to be corrected. And other textbooks should be written keeping in mind an enlightened and sensible future generation,’ he suggested.

For making the textbooks relevant to the present time, NCTB member (curriculum) Professor Md Moshiuzzaman said, the board had already decided to publish a new textbook for Bangla grammar for grade IX and X students. ‘Application for appointing writers will be called soon,’ he said. 

‘We gave advisement in newspapers asking schools not include textbooks published by private publishers in their curriculum and also requested Directorate of Secondary and Higher Education to take action in this regard,’ Moshiuzzaman said.

DSHE director general Professor Md Mahbubur Rahman said that stern action would be taken against schools forcing children to study additional books published by private publishers. 

  • NewAge/8-3-18

INTERNATIONAL WOMEN’S DAY Safety of women in public transports at stake


The use of public transports by women is becoming riskier and more unsafe amid increasing incidents of rape and sexual harassments and even murder while on board.

Some gangs are active on different highways to conduct these crimes and what is more alarming is that these crimes are taking place not only at night but also in broad daylight on busy roads and in so-called secure places. 

Culture of impunity, patriarchal attitudes and lack of speedy trial and awareness are the main reasons behind the situation, educationists and rights activists say. 

Incidents like gang-rape and murder of law student Zakia Sultana Rupa in Tangail, another gang-rape of an ethnic minority woman in a microbus in Dhaka and molestation of a Bangladeshi female passenger on the Maitree Express on Dhaka-Kolkata route by an Indian Border Security Force soldier shocked the entire country.

BRAC Road Safety Programme director Ahmed Najmul Hussain told New Age that between Gazipur intersection and Bangabandhu Bridge there were some active gangs who got on buses as passengers to violate women.

Najmul was also former Inspector General of Police and former chairman of Bangladesh Road Transport Authority. 

Deputy inspector general Md Atiqul Islam of highway police told New Age on Monday that they were working on 12 such incidents and in five of them they had detected the perpetrators.
So far they had arrested six such gangs on Dhaka-Tangail highway, he said.

People were stunned after Rupa was brutally killed after gang rape in a moving bus at Madhupur in Tangail by transport workers who also dumped her body on roadside on August 25, 2017.

On February 12, a court in Tangail sentenced the bus driver and his three assistants to death and the bus supervisor to seven years’ jail for killing Rupa.

On January 23 this year, a female Dhaka University student jumped off a running bus in Uttar Badda at 10:00am to escape sexual assault attempt. Later police detained two transport workers. 

Just a day ago on January 22, a Bangladeshi female passenger was molested on Maitree Express on Dhaka-Kolkata route by an Indian Border Security Force soldier.

Maliha Salehin, a banker who travels daily on Mugdapara-Banani route, said that after office time she avoids buses without passengers. 

‘Now-a-days we hear of incidents of sexual assaults and crime against female passengers,’ she said, adding, ‘That is why I am afraid of riding empty buses.’ 

A female lecturer of Udayan Higher Secondary School said on different occasions female students shared with her how they faced sexual harassment in public transports. 

According to a report compiled and published by Passenger Welfare Association this February, at least 21 female passengers were victims of rape, sexual assault and harassment in transports across the country in the last 13 months. 

On Tuesday, BRAC launched a research report which says that about 94 per cent of the female passengers have experienced sexual harassment at some time or other in public transports in the country.

Following harassment, about 46 per cent of them were influenced to wear hijab, about 21 per cent reduced using of public transports and about 8 per cent quit jobs or outside work. 

An ActionAid Bangladesh study in 2016 revealed that 84 per cent of all woman commuters surveyed said they were subjected to sexual harassment while 62 per cent of the surveyed women limited their movement and had strict timings when they were moving about alone.

Dhaka University professor emeritus Najma Chowdhury said culture of impunity was the main reason behind the recurrent incidents of violence against women in transports. 

Only stern implementation of laws could ease these incidents, she said. 

Bangladesh Mahila Parishad president Ayesha Khanam alleged that though the country had achieved progress in economic indicators, it still lagged behind in social indicators due to continued violence against women.

‘Violence against women never was an agenda for policy makers; they rather say that this is not an issue at all,’ Ayesha regretted. 

Human rights lawyer Salma Ali said still most people in society observed women as a ‘commodity product’.

These incidents continued to take place due to culture of impunity, patriarchal attitude, misuse of technology and lack of accountability.

Salma, also former executive director of Bangladesh National Women Lawyers’ Association, said that recently life term was given to a bus driver and his helper for raping a female passenger in 2016 while the victim fought the case without informing the incident to her family. 

Change in mindset of law enforcers, speedy trial, awareness and family support for the victims could change the scenario, she suggested. 

Nijera Kori coordinator Khushi Kabir pointed out transport owners’ indifference to bringing responsible transport workers under law after any incidents for this situation. 

‘In this country implementation of laws and polices is rare,’ she observed and added that immediate action and complaint system in transports could play a strong role in easing violence against women. 

Road Transport and Highways Division secretary Md Nazrul Islam admitted that though they had taken initiatives to make people and transport workers aware about violence against women in transports, there should be more initiatives for it.

  • NewAge/ 08-3-18

A hectic day for Dhaka dwellers


It was a day full of struggle and suffering for the city dwellers as the capital experienced a traffic chaos due to an Awami League rally at Suhrawardy Udyan yesterday. People waiting for transports at Farmgate. Photo: Anisur Rahman


Thousands suffered traffic snarl-ups yesterday due to an Awami League rally at Suhrawardy Udyan in the capital, marking the historic March 7.

With traffic management suffering a serious setback, the party General Secretary Obaidul Quader sought the city dwellers' cooperation to make the rally a success.

“You might be suffering on the roads. But please be patient and cooperate with us in observing the historic day,” Obaidul urged during the rally.

Quader, also the road, transport and bridges minister, said they had previously rescheduled some programmes considering public sufferings.

“But there are certain days, such as March 7, February 21, March 26 and December 16 that have to be observed on the due dates,” he added.


This rally is not just a rally of the party, it is a rally for the people, the minister said.

Police made roads surrounding the venue off limits to vehicles since 11:30am. Many other roads were filled with processions brought out by Awami League men.

Throughout the day, traffic interruptions were observed in areas around Suhrawardy Udyan, as police closed down Shahbagh, Kataban, Bangla Motor, Farmgate, High Court, Mirpur, Segunbagicha, Bijoynagar, Kakrail and some other intersections to facilitate the passage of the arriving AL supporters.

This also caused severe tailbacks along Manik Mia Avenue, Mirpur Road, Karwan Bazar, Bijoy Sarani, Paltan, Moghbazar and other adjacent areas.

Buses carrying AL activists were seen parked haphazardly on the roads around the venue.


Unable to find one in Shahbagh area, family members of Nasima Akthar, middle, taking her to a hospital on foot. Photo: Rajib Raihan

Meanwhile, talking to this correspondent at Dhaka Medical College Hospital (DMCH), some relatives of patients complained about the delay in taking patients to the hospital.

Some ambulances were also seen stuck in traffic jam.

Hazera Begum, 40, who came to DMCH from Narayanganj due to a leg injury, said it took her nearly three hours to get there. Usually, it takes much less, she said.

An auto-rickshaw driver, who was carrying a patient to DMCH, said he was stuck on the road for two hours because of the traffic congestion.

Priyam Roy, employee of a private company, was going to the High Court from Farmgate. “It took me two hours to reach there,” he said while describing his ordeal.

“First, it took 30 minutes to cross Karwan Bazar intersection while the bus was diverted towards Moghbazar in Bangla Motor as police blocked the road towards Shahbagh.”

“From Moghbazar, I had to walk to the High Court as there was no other option available,” he said. “The sufferings didn't stop there. While returning, I had to walk all the way to Farmgate, which also took around two hours.”

Meanwhile, thinking that it might take more time than usual to reach his destination due to a lack of public transport, Dhaka University student Fayaz Ahmed left home around nine in the morning.

His class was supposed to start at 11:30am. He barely made it.

 “It took me two and a half hours to reach the campus from Gandaria. Usually, it takes me 30 minutes.”

Parvej Ahmed, a lawyer at Chief Metropolitan Magistrate's (CMM) Court, said he found no bus near Roy Saheb Bazar intersection around 2:00pm. He was planning to go to Farmgate.


The usually busy Shahbagh intersection had very light traffic in the afternoon due to a restriction on vehicular movement. Photo: Palash Khan

“I had to walk all the way. It was also difficult to walk as the roads were packed with people heading for the rally,” he said. It took him two and a half hours to reach his destination.

“It was a hectic day,” he said.

The situation got worse in the evening when people left offices for home.

Many, including women, children and elderly persons, suffered due to an inadequate number of public transports while others had to spend hours in the gridlocks on some key roads.

“There were few buses on the road, and most of them were over-crowded,” said Sonia Ahmed, a private-sector employee. Sonia was seen trying to get on a bus near Karwan Bazar intersection, but failed even after repeated attempts.

Those who could not board buses, started heading to their destinations on foot. Even the number of rickshaws was much less than usual on many city roads.

  • The Daily Star/8-3-18

Wednesday, March 7, 2018

Child Marriage: Declines globally, not in Bangladesh Says Unicef report


 Staff Report

Child marriages still remain high in Bangladesh, although the rate is globally declining, with the largest drop in South Asia, according to the Unicef.

The rate of child marriage in Bangladesh is 59 percent, the fourth highest in the world, reports CNN.

Niger has the highest child marriage rate (76 percent), followed by Central African Republic and Chad.



 In 2011, Bangladesh had a child marriage rate of 52 percent, Bangla daily Prothom Alo reported citing government statistics.

Ten years ago, a South Asian girl's risk of getting married as a child was about 50 percent, but now that has fallen to about 30 percent, the Unicef said in a release yesterday.

The Unicef attributed the progress in India to increasing rates of girls' education, government investments and public messaging around the illegality of child marriage.

"Any reduction is welcome news, but we've got a long way to go," said Anju Malhotra, UNICEF's principal gender adviser.

Even with the declines, 12 million girls are married in childhood every year, according to the Unicef.

Globally, one in five women are married before they turn 18 years old. A decade ago, the rate had been one in four, it said.

"While South Asia has led the way on reducing child marriage over the last decade, the global burden of child marriage is shifting to sub-Saharan Africa," it added.

One in three recently married child brides are now in sub-Saharan Africa, compared to one in five a decade ago.

Poverty, ideas of family honor, social norms, customs and religious laws are factors that could force girls into child marriages.

But the consequences can be devastating. Marriages can rob girls of their childhood, compromise their development and put them at risk of early and complicated pregnancies. They often pay a heavy price in not getting an education or access to proper health care and economic opportunities.

Child marriages also occur in the US, and remains legal in every state because of a hodgepodge of exceptions that let minors get married with parental consent or judicial approval.

Courtesy: The Daily Star Mar 07, 2018

Is five years not enough?Taqi's murder remains a 'mystery'

EDITORIAL


The lax progress in the Taqi murder case is deeply disturbing. Five years have passed since the seventeen-year-old boy was brutally killed in Narayanganj and Rab, the investigating agency in this case, has not yet been able to submit the charge sheet. It is frustrating to hear
the same thing over and over again from the Rab officials that they would submit the probe report soon. How soon is soon enough?



 The murder triggered a huge public outcry in the country at that time.People of Narayanganj formed “Santrash Nirmul Taqi Mancha” and held countless demonstrations and public events demanding justice for Taqi.The eminent citizens of the country including educationists and writers even made repeated pleas to the authorities calling for proper investigation to find out the real killers. The media has also been vocal in this case. But as it seems, nothing could make the investigating authority complete its investigation process as yet. One wonders whether the charge sheet will ever be submitted.

It is suspected that there are politically powerful quarters behind the murder and they are trying to interfere in the investigation process. Taqi's father Rafiur Rabbi submitted a complaint to the SP
Narayanganj in 2013 accusing seven people and several unnamed others, of murdering Taqi. But yet, no palpable progress has been made.

The inordinate time taken to process this case is unacceptable. Law cannot be applied selectively. Not only does it make a mockery of the system, it also causes people to lose faith in it.

Courtesy: The Daily Star Mar 07, 2018

গাঁজা-কাহিনি

প্রতিনিধি, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া


গাড়ি তল্লাশি করে দুই মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজা জব্দ করা হয়েছিল। তবে মামলার কাগজে দেখা গেল, জব্দ হওয়া গাঁজার পরিমাণ বেশ কম। খবর পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থানায় তল্লাশি করে পরিত্যক্ত কক্ষে পেলেন বাকি গাঁজা।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার এ ঘটনায় পুলিশের দুই উপপরিদর্শকসহ (এসআই) ছয় পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যে পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছিল, তা ১৮০
কেজি হতে পারে। অথচ কাগজে-কলমে জব্দ গাঁজার পরিমাণ দেখানো হয়েছে মাত্র ৪০ কেজি।




সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন কসবা থানার এসআই শ্যামল
মজুমদার, এসআই মো. মনির হোসেন-১, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. সালাহ উদ্দিন, এএসআই মো. ফারুক মিয়া, কনস্টেবল মো. শাহজাহান ও কনস্টেবল আবুল কাশেম।গ্রেপ্তার হওয়া দুই মাদক ব্যবসায়ী হলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার তেহাবাদ গ্রামের মৃত নুরুল হকের ছেলে হাসান মিয়া (৩০) ও পটুয়াখালীর বাউফল থানার ইন্দ্রকোল গ্রামের আলমগীর মিয়ার ছেলে আল আমিন (৩৩)।


 পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুই মাদক ব্যবসায়ীর পৃথক দুটি ব্যক্তিগত গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গাঁজা জব্দ করে পুলিশ। তাঁরা ওই গাঁজা ভারত সীমান্ত থেকে সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। কসবা পৌর এলাকার টি আলী বাড়ি মোড়ে তাঁদের গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এ ঘটনায় থানার এএসআই মো. সালাহদ্দিন বাদী হয়ে ৪০ কেজি গাঁজা জব্দ দেখিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাকরেন। গ্রেপ্তার দেখানো হয় দুই মাদক ব্যবসায়ীকে।খবর পেয়ে রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন থানায় এসে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেন। পরে থানার একটি পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজা জব্দ করেন তিনি। রাতেই ওই দুই এসআই, দুই এএসআইসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান। আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পরিমাণে কম দেখানোর দায়ে ছয় পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জব্দ করা গাঁজা আদালতে জমা দেওয়া হবে। ঘটনাটি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে মোট কী পরিমাণ গাঁজা জব্দ করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দেননি তিনি।


 


Courtesy: Prothom Al0 Mar 07, 2018

হাইওয়ে পুলিশকে সামলাবে কে? মহাসড়কে প্রাণঘাতী চাঁদাবাজি

মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে পুলিশের দুই সদস্যের চাঁদাবাজির চেষ্টার পরিণতিহলো মর্মান্তিক: দুটি নিরীহ প্রাণ অকালে ঝরে গেল; আহত হলেন একটি বাসের ৪০ জন যাত্রীর প্রায় সবাই। এ কেমন দেশ আমাদের?

গত রোববার রাতে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার পালাহার এলাকায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটির বিবরণ প্রথম আলোয় মঙ্গলবার ছাপা হয়েছে। দুর্ঘটনার শিকার বাসটির যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, সেখানে নান্দাইল
হাইওয়ে থানা-পুলিশের কয়েকজন সদস্য চলন্ত যানবাহন থামিয়ে চালকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছিলেন। একটি যাত্রীবাহী বাস তাঁদের পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁরা বাসটির চালকের চোখে টর্চের আলো তাক করলে চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফলে একজন বাইসাইকেল আরোহী বাসটির নিচে চাপা পড়ে মারা যান এবং বাসটি সড়কের পাশের পুকুরে পড়ে যায়। ফলে একটি শিশু মারা যায়
এবং বাসের প্রায় সব যাত্রী বিভিন্ন মাত্রায় জখম হন।




 এই বিবরণ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে পুলিশের ওই সদস্যরা শুধু অপরাধপ্রবণই নন, তাঁদের সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানেরও অভাব রয়েছে। চলন্ত যানবাহনের চালকের চোখে টর্চের আলো ফেললে চালক নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন এবং তার ফলে ওই যানটি দুর্ঘটনায় পড়ে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে—এটুকু সাধারণ জ্ঞান যাঁদের নেই, তাঁরা কী করে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি পান, তা গুরুতর ভাবনার
বিষয়। আরও গুরুতর অভিযোগ হলো, ওই এলাকার গ্রামবাসী প্রথম আলোকে যেমনটি বলেন, নান্দাইল হাইওয়ে থানা-পুলিশের সদস্যরা মুশলি ও পালাহারের মাঝখানে নির্জন স্থানে প্রতি রাতেই যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজি করেন এবং এই কাজে তাঁরা চালকদের চোখে টর্চের আলো ফেলার পদ্ধতিটি নিয়মিতভাবেই প্রয়োগ করেন। এর মানে, সেখানে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি শুধু নিয়মিত ব্যাপারই নয়, অতি
মাত্রায় বিপজ্জনকও বটে। তাঁরা এই অপরাধ নিয়মিতভাবে করে চলেছেন যানবাহনের যাত্রীসাধারণের জীবনের পক্ষে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পন্থায়।

রোববারের দুর্ঘটনাটির পরপর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হাইওয়ে পুলিশের দুই সদস্যকে ধরে পিটুনি দিয়েছেন, তাঁদের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন এবং মহাসড়ক অবরোধ করে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন।অথচ নান্দাইল হাইওয়ে থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই।’ এটা দায়িত্বহীন বক্তব্য। অথবা এই ওসি সব জেনেও না জানার ভান করছেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত নান্দাইল হাইওয়ে থানা পুরোটাই সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ হয়ে উঠেছে কি না।



Courtesy: Prothom Alo Mar 07, 2018

Tuesday, March 6, 2018

ভোট উধাও ব্যবসায়ী সংগঠন থেকেও

  • নির্বাচনের বদলে সমঝোতা
  • জেলা চেম্বারের ৬৪ টির মধ্যে ৪৭ টিতে ভোটাভুটি ছাড়া কমিটি।
  • কমপক্ষে ২০ টির সভাপতি পদে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা।


ভোট কার্যত উধাও হয়ে গেছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো থেকেও। ব্যবসায়ীরা এখন আর নিজ নিজ সংগঠনের নেতা নির্বাচন করার সুযোগ পান না। জেলা পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের সংগঠন জেলা চেম্বারগুলোর সিংহভাগ কমিটি হয়েছে ভোটাভুটি ছাড়া। পণ্যভিত্তিক সংগঠনগুলোতেও কমিটি হচ্ছে চাপিয়ে দেওয়া সমঝোতার মাধ্যমে। সব মিলিয়ে দেশের সাধারণ নির্বাচনের মতো ব্যবসায়ীদের সংগঠনের নির্বাচনেও প্রতিযোগিতা বিদায় নিয়েছে।

সারা দেশে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬৪টি জেলা চেম্বারের মধ্যে ৪৭ টিতেই সর্বশেষ কমিটি হয়েছে কোনো রকমের ভোটাভুটি ছাড়া। ৫ টিতে আংশিকভাবে ভোট হয়েছে। ১ টিতে ভোটাভুটি নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। পূর্ণ ভোটাভুটি হয়েছে মাত্র ১১টি চেম্বারে।

পণ্যভিত্তিক বড় সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (রিহ্যাব) কিছু সংগঠনে এখন আর ভোট হচ্ছে না। এমনকি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) কমিটিও হয়েছে আংশিক ভোটাভুটির মাধ্যমে।

ভোট না হওয়ার মূল কারণ সংগঠন দখলে রাখার চেষ্টা। ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা হতে পারলে নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া, রাজনৈতিক দলের পদ পাওয়া, এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরে যাওয়ার সুযোগ হয়। পাশাপাশি নিজ নিজ ব্যবসার ক্ষেত্রেও সুবিধা হয়। এসব কারণে ব্যবসায়ীদের একটি অংশের মধ্যে যেকোনোভাবে নেতা হওয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক দলের নেতারাও ব্যবসায়ী সংগঠনের পদ দখলে রাখতে উদ্যোগী হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে সরকারও সমাজের প্রভাবশালী পক্ষ ব্যবসায়ীদের নিজের পক্ষে রাখতে চায়। এ জন্য প্রধান সংগঠনগুলোতে দলীয় অথবা অনুগত ব্যবসায়ীদের নেতা বানানো নিশ্চিত করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য সংগঠনগুলো নামে ব্যবসায়ীদের সংগঠন হলেও তারা রাজনৈতিক অঙ্গনের ছায়া হিসেবে কাজ করছে। তারা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সহায়তাকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি শুরু হয়, তখন তার অবশ্যম্ভাবী উপসর্গ হয় জবাবদিহির অভাব। আমাদের দেশে সেটাই হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে সুশাসনের ঘাটতি সামাজিক ও ব্যবসায়িক অঙ্গনে প্রবেশ করেছে।’

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে শুধু ভোট বিদায় নিয়েছে তা নয়, বিনা ভোটের কমিটিতে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পদধারীরা। এফবিসিসিআইয়ের দুজন সহসভাপতিই সরকারি দলের নেতা। জেলার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কমপক্ষে ২০ টির সভাপতি পদে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা স্থান পেয়েছেন। অনেক কমিটির শীর্ষ পদটিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের স্বজনেরা আসীন হয়েছেন।

সরকারের ব্যবসায়ী শাখা এফবিসিসিআই
এফবিসিসিআইতে কে সভাপতি ও সহসভাপতি হবেন, তা ঠিক করে দেয় সরকার। ফলে বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে সভাপতি পদে সরকার-সমর্থিত প্রার্থীর বিপরীতে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। এমনকি সহসভাপতির দুটি পদেও নেতা ঠিক হয়েছে সরকারের আশীর্বাদে। ব্যবসায়ী মহলের আলোচনাই হচ্ছে এফবিসিসিআই কার্যত সরকারের ব্যবসায়ী শাখা।

সংগঠনটির সর্বশেষ নির্বাচনে বর্তমান কমিটির সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের বিপরীতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। এমনকি বরাবরের মতোই সংগঠনটির সভাপতি ও দুজন সহসভাপতি হয়েছেন সরকারের আশীর্বাদ পেয়ে। তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। বর্তমান দুই সহসভাপতির একজন যুবলীগের নেতা শেখ ফজলে ফাহিম। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে। অন্যজন সাবেক ডেপুটি স্পিকার আলী আশরাফের ছেলে মুনতাকিম আশরাফ। তিনি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি।

এফবিসিসিআইয়ের সর্বশেষ সাতজন সভাপতির ছয়জনই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, প্রয়াত আনিসুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। আগে থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন আওয়ামী লীগের সাংসদ। আরেক সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা। অন্যদিকে আবদুল আউয়াল মিন্টু বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।

দেখা গেছে, স্থগিত হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনা প্রায় সবাই ছিলেন ব্যবসায়ী। বিএনপির প্রার্থীও ব্যবসায়ী।

হলফনামা বিশ্লেষণ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ২০১৪ সালে জানায়, দশম সংসদের সাংসদ হওয়া ১৭৫ জনের পেশা ব্যবসা। ফলে সংসদে ব্যবসায়ীদের হার এখন ৫০ শতাংশ।

জেলা চেম্বার ভোটহীন, কমিটিতে দলীয়রা
এফবিসিসিআই ও বড় বড় পণ্যভিত্তিক সংগঠনের নির্বাচনে নেতা হতে যেমন সরকারের আশীর্বাদ লাগে, তেমনি জেলা চেম্বারের নেতা হতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতার সুদৃষ্টির প্রয়োজন হচ্ছে। অবশ্য নিজে আওয়ামী লীগের নেতা হলে ভোট ছাড়াই সভাপতি হওয়া যাচ্ছে।

বরিশাল চেম্বারের সাইদুর রহমান মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি ভোট ছাড়াই সভাপতি হয়েছেন। ভোলা চেম্বারের আবদুল মমিন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনিও ভোট ছাড়া কমিটিতে এসেছেন। কুমিল্লা চেম্বারের মাসুদ পারভেজ খান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। এই চেম্বারে দীর্ঘদিন ভোট হয় না। ঝিনাইদহ চেম্বারের সাইদুল করিম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনিও ভোট ছাড়া সভাপতি। কুষ্টিয়া চেম্বারের রবিউল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। তিনি আবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। দুবার ভোট ছাড়া সভাপতি হয়েছেন। সুনামগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি খায়রুল হুদা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। তাঁর কমিটিতেও ভোট হয়নি।

আওয়ামী লীগের বাইরে জেলা চেম্বারের সভাপতি পদে সংসদে বিরোধী দল ও সরকারের অংশ জাতীয় পার্টির নেতা আছেন পাঁচটি চেম্বারের সভাপতি পদে। বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা আছেন পাঁচটি চেম্বারের প্রধান হিসেবে।

ভোটাভুটি না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের মাধ্যমে সবকিছু হওয়া সব সময় ভালো জিনিস। কিন্তু অনেক সময় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ভয়ভীতি বা চাপ প্রয়োগ করে অন্যকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দেয়, সেটা সঠিক নয়।

পণ্যভিত্তিক সংগঠনেও ভোট হয় না
সাড়ে সাত বছর ধরে বিকেএমইএর সভাপতি পদ আঁকড়ে আছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমান। ২০১২ সালের পর থেকে ব্যবসায়িক সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হচ্ছে না। বিকেএমইএর কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। তখন সভাপতি পদ ধরে রাখতে কৌশলের আশ্রয় নেন সেলিম ওসমান। নারায়ণগঞ্জে সংগঠনের প্রধান কার্যালয় বিকেএমইএ কমপ্লেক্স নির্মাণের অজুহাত দেখিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে কমিটির মেয়াদ ছয় মাস করে দুই দফা বাড়িয়ে নেন সেলিম ওসমান। এরপর সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে নতুন করে দুই বছরের জন্য সভাপতি হয়েছেন সেলিম ওসমান।

দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএতে সর্বশেষ ২০১৩ সালে ভোট হয়েছিল। তারপরই সমঝোতার ভিত্তিতে সংগঠনটির দুই পক্ষ-সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম বিজিএমইএর নেতৃত্ব ভাগাভাগির বিষয়ে চুক্তি করেন। ফলে এখানেও আর ভোট হয় না। সংগঠনটির বর্তমান কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর পর চলতি মাসে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান কমিটির মেয়াদই এক বছর বাড়িয়ে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ফলে দুই বছরের জন্য গঠিত কমিটি শেষ পর্যন্ত সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করবে।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবে আগে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাভুটি হতো। ২০১৪ সাল থেকে রিহ্যাবে ভোটাভুটি হয় না। সমঝোতার মাধ্যমেই দ্বিতীয় মেয়াদে সভাপতি পদে আছেন আলমগীর শামসুল আলামিন। বর্তমান কমিটির মেয়াদ নতুন করে ছয় মাস বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানালেন একজন নেতা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন পরিচালকের (ডিটিও) কার্যালয় অর্থাৎ ডিটিও অনুবিভাগ বিদ্যমান ১৯৬১ সালের বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশে দেওয়া ক্ষমতাবলে সংগঠনগুলোর মেয়াদ একের পর এক বাড়াচ্ছে।

জানতে চাইলে ডিটিও মো. ওবায়দুল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটাভুটির পরিবর্তে সমঝোতার বিষয়ে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে কোনো দরখাস্ত এলে মন্ত্রণালয় যাচাই করে তার অনুমোদন দেয়। মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও তাই করা হয়। এখানে মন্ত্রণালয়ের নিজের স্বার্থের কিছু নেই।’

ভোট উধাও হওয়ায় মূলত ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ীদেরই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের আশীর্বাদে নেতা হওয়া ব্যবসায়ীদের কাজ সরকারকে কাজে সমর্থন দেওয়া। ব্যবসায় পরিবেশের উন্নতি রাজনৈতিক মদদপুষ্ট অথবা সমর্থনপুষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের অগ্রাধিকারে থাকে না। তারা নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ফলে এসব সংগঠন নীতিনির্ধারণে প্রভাব ও গুরুত্ব ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশে বৈষম্যের সুযোগে সমাজের একটি অংশ এখন অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। এর কিছু অংশ ব্যবসায়ী, কিছু অংশ রাজনৈতিক নেতা। তাঁদের মধ্যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, যার উদ্দেশ্য রাজনীতিকে প্রভাবিত করা। তিনি আরও বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জনগণের প্রতি আগের মতো অঙ্গীকার নেই। এ কারণে অর্থশালী রাজনৈতিক পক্ষ ও ব্যবসায়ী পক্ষের মধ্যে এই ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো থেকে ভোট বিদায় রাজনৈতিকীকরণের অংশ কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা যেভাবে শক্তি অর্জন করা যায়, সেভাবেই করবে।

  • প্রথম আলো /৬-৩-১৮

দুর্নীতির সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে দেশ - নাগরিক ঐক্য

* দেশে চলছে নির্বাচিত স্বৈরশাসন, র‌্যাগিংয়ের দায়ে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃতদের কেউ দাড়িওয়ালা ছেলেকে দিয়ে এটা ঘটিয়েছে কিনা দেখতে হবে -ডা. জাফরুল্লাহ 

* ঝুঁকিতে ব্যাংক খাত, দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে -সালেহউদ্দিন আহমেদ 

* দুর্নীতিবাজদের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক মহাশক্তিশালী ক্ষমতাবানরা -আনু মুহাম্মদ



জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশে নির্বাচিত স্বৈরশাসন চলছে । দেশে দুর্নীতির সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে পড়ায় সর্বত্র দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। দুর্নীতি মহামারী আকার ধারণ করেছে। অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হলে বদলাতে পারে পরিস্থিতি। নইলে জনগণকে আরও খেসারত দিতে হবে।

নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘দুর্নীতি’ শীর্ষক এক সেমিনারের আলোচকরা এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, এম হাফিজ উদ্দিন খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, গবেষক গওহর নাঈম ওয়ারা প্রমুখ। সেমিনারে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন নাগরিক ঐক্যের সদস্য জাহেদ-উর-রহমান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, গণতন্ত্র না থাকায় দেশে বাকস্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা বলতে কিছু নেই। সরকার সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করায় দুর্নীতি লাগামহীন হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। তারা বলেন, দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক ও দৃশ্যমান শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে তাদের পেছনের খেলোয়াড়দেরও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ কাজগুলো করতে হলে দুর্নীতিবাজদের তাড়িয়ে ভালো লোকজনকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।

সেমিনারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, দেশে নতুন শক্তি হিসেবে দুর্নীতির আবির্ভাব হয়েছে। দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের পুলিশ, আমাদের কর্মকর্তারা সাহায্য করছেন। দেশের শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা করে শান্তি আনতে পারে। তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে উগ্র বামপন্থীদের প্রভাব ব্যাপক। তারা আমাদের রাজনীতি ধ্বংস করে দিচ্ছে।

এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, দেশে নাগরিকরা কোনো কথা বলছেন না। সব কথা বলছে সরকার। সরকার বলছে, সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্ট ভাঙা যাবে না, সেনা মোতায়েন করা যাবে না। কারণ এসব সংবিধানে নেই। সরকার যখন বলে প্রশ্ন ফাঁস আগেও হয়েছে তখন প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যাবে না। তিনি মনে করেন, বড় ধরনের গণআন্দোলন ছাড়া দেশকে এ পরিস্থিতি থেকে বের করে আনা সম্ভব নয়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সব দুর্নীতির মূল কারণ সরকার। দুর্নীতির কারণে দেশের অবস্থা ভালো না। তিনি বলেন, বড় প্রকল্পে বড় দুর্নীতি হচ্ছে। সেগুলোয় দুর্নীতির বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার। বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, র‌্যাগিংয়ের দায়ে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃতদের কেউ হাবাগোবা দাড়িওয়ালা ছেলেকে দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাত আগে অনেক ভালো ছিল। বর্তমানে অনেক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ব্যাংকের টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেয়ায় ব্যাংক খাতে দুর্নীতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাবেক এ গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক শক্তিশালী নর্মস রয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে ব্যাংক খাত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক ধ্বংস হলে সব ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না দিয়ে শুধু ওএসডি করে নিশ্চিন্তে অবসরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। তাদের ওএসডি না করে শাস্তি দিন। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করুন। এদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার মেগা প্রজেক্ট চালু করছে। প্রজেক্টের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করছে। আর এই দুর্নীতি অবাধ রাখতে দেশে স্বৈরশাসন কায়েম করে জবাবদিহিতা ও বাকস্বাধীনতা বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার। তিনি আরও বলেন, যারা টাকা পাবে তাদেরই যদি বাজেট তৈরি করতে দেয়া হয়, তাহলে দুর্নীতি থামানো যাবে কী করে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিচার ব্যবস্থায় ইনভেস্টিগেশন এবং প্রসিকিউশন কুক্ষিগত করা হয়েছে। আদালতের কী অবস্থা তা সবার জানা। নিু আদালত এবং উচ্চ আদালতে কী হয় তা বলার অধিকার আইন দিয়ে খর্ব করা হয়েছে।

গবেষক গওহর নাঈম ওয়ারা বলেন, আমাদের দেশে ফাঁক রেখে আইন করা হয়। প্রক্রিয়াগতভাবে দুর্নীতি আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই যে নির্বাচনের বছর এলেই নানারকম আন্দোলন, দাবি-দাওয়া আমরা এই প্রেস ক্লাবের সামনেই দেখি। এই দাবি-দাওয়া একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হওয়ার কারণেই আমরা রাস্তায় আন্দোলন দেখতে পাই। আমাদের কর্মকর্তারা প্রকল্পের কাজ খুব ভালোবাসেন। কারণ, সেখানে দুর্নীতি করা যায়। প্রকল্পে বদলি করা হলে কর্মকর্তারা খুশি হন। কিন্তু কুতুবদিয়ায় পাঠানো হলে তাদের মন খারাপ হয়।

সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জাফর ইকবালের ওপর হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- এগুলো যারা করে তারা বিপথগামী, এটা করে বেহেশতে যাওয়া যায় না। খুন-জখম করে বেহেশতে যাওয়া যায় না ঠিকই, তাহলে ক্রসফায়ার করে কীভাবে বেহেশতে যাওয়া যায়? মানুষকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়, মাসের পর মাস খোঁজ থাকে না। ছয় মাস এক বছর পর লাশ পাওয়া যায়। কার বা কাদের নির্দেশে ক্রসফায়ার হয়? দেখতে দেখতে সবার ভেতর একটা ভয় ঢুকে গেছে। তিনি বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচন করে তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। আজ যদি আমরা কথা বলতে পারি, সারা দেশে যদি আমাদের কথা বলতে দেয়া হয়, তবে আশা করি ছয় থেকে এক বছরের মধ্যে কথার কারণেই এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব। কিন্তু তারা এ কথা বলতে দেয়াকেই ভয় পায়।


  • Courtesy: The Daily Jugantor Mar 06, 2018