Search

Monday, March 19, 2018

প্রায় ৩৫ শতাংশ বন্দী মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট: আইজি প্রিজন



কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেছেন, দেশের কারাগারে যত বন্দী আছে, তার ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে কারা সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইজি প্রিজন। কারা সপ্তাহ ২০১৮ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সৈয়দ ইফতেখার জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে গড়ে ৭৫ হাজার বন্দী আছে।

আইজি প্রিজন বলেন, অভিনব কায়দায় কারাগারে মাদক ঢুকছে। কেউ গিলে মাদক আনছে। শুকনা মরিচের ভেতরে করে আনছে। কেউ আনছে পেঁয়াজের ভেতরে করে।

সৈয়দ ইফতেখার বলেন, ‘আমাদেরও অনেক ভুল-ত্রুটি আছে। কারারক্ষীর সংখ্যাও কম।’

আইজি প্রিজন জানান, গত এক বছরে কমপক্ষে ২০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কারা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য দেয় না বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে আইজি প্রিজন বলেন, কী ধরনের তথ্য চাওয়া হচ্ছে, সেটাও বিষয়।

  • Courtesy: Prothom Alo mar 19, 2018

Sunday, March 18, 2018

মানুষ ভালো আছে!

গোলাম মোর্তোজা


চারিদিকে ‘উন্নয়ন’র নানা গল্প! দৃশ্যমান প্রমাণ পদ্মা সেতু, দু’তিনটি চার লেনের রাস্তা, কয়েকটি ফ্লাইওভার। মানুষ ভালো আছে, আয় বেড়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও কিনতে মানুষের সমস্যা হচ্ছে না! বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার হয়েছে, বিচার হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে! বেশকিছু উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে ভারত, পাকিস্তানের চেয়ে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে।

ক্ষমতাসীনদের মুখ থেকে একথা প্রতিদিন কয়েকবার শোনা যায়। তারা টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, বলেন রাজনৈতিক সমাবেশে। টেলিভিশনের টকশোতেও শোনা যায় প্রতিরাতে।

এই কথাগুলো যে পুরোপুরি অসত্য, তা তো নয়। আবার বাস্তবতা যদি এমন হয়, তাহলে দেশের মানুষের তো খুশি থাকার কথা। যদি বলি যে দেশের মানুষ খুশি বা ভালো নেই, তীব্র প্রতিবাদ হবে এ কথার। যুক্তি দেওয়া হবে পাল্টা যুক্তিও দেওয়া যাবে। সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। সাধারণ মানুষের কথা যদি একটু কান পেতে শোনা যায়, তবে ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। এর কারণ কী? মানুষ কী যত পায়, তত চায়? না কি ‘ভালো আছে’ বলতে যা বোঝানো হয়, তার ভেতরে ত্রুটি বা দুর্বলতা আছে? সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে দেখি।

১. আলোচনার শুরুতেই সরকারি পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখব। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের ‘খানা আয় ব্যয় জরিপ’র প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের মাসিক আয় গড়ে বেড়েছে ৩২ হাজার ৪৪১ টাকা। আর সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশ পরিবারের মাসিক আয় গড়ে কমেছে ১০৫৮ টাকা।

এই গরিব মানুষ মানে দিনমজুর শ্রেণি। ক্ষমতাসীনরা সর্বত্র বলেন, শ্রমের মজুরি বেড়েছে, ১৫০ টাকার মজুরি ৪০০ টাকা হয়েছে। মানুষ ভালো আছে, গরিব মানুষ বেশি ভালো আছে। তাই যদি হয় তাহলে সরকারি হিসাবে ৫ শতাংশ গরিব মানুষের আয় কমে গেল কেন? এই জরিপ তো বেসামরিক কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান করেনি। তার মানে মানুষের ভালো থাকার যে গল্প করা হচ্ছে, তা আসলে পুরোপুরি সত্যি নয়। গল্পের ভেতরে বড় রকমের সমস্যা আছে।

২. ঢাকা শহরের রাস্তায় নামেন। যে কোনো একজন মানুষের কাছে জানতে চান, কেমন আছেন? প্রায় ৯৯ ভাগ নিশ্চিত হয়ে বলা যায় বলবেন, ভালো নেই?

বলতেই পারেন এটা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। হ্যাঁ মানুষ অধিকাংশ ‘ভালো নেই’ বলতে অভ্যস্ত। কিন্তু ‘ভালো থেকে’ও ভালো নেই বলবে, এতটা সরলিকরণ নয় বিষয়টি।

৪৭ বছরের বাংলাদেশে রাজধানীর মানুষের জন্যেও গণপরিবহন নেই। মানুষ কীভাবে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবে, কোনো সরকার তা ভাবল না। একদিকে সাধারণ মানুষের পরিবহন নেই, অন্যদিকে যানজট এমন একটা অবস্থায় পৌঁছালো যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হয় সব মানুষকে।

একথার সঙ্গে সঙ্গেই বলা হবে, যানজট একদিনে তৈরি হয়নি। সমাধানও একদিনে হবে না। কাজ চলছে, সমাধান হবে।

৩. কাজ বলতে, নগর ঢাকায় ফ্লাইওভার তৈরি হলেই, যানজট সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ফ্লাইওভার বেশ কয়েকটি তৈরি হলো। ঢাকা শহরের যানজট সমস্যার সমাধান হলো না।

ফ্লাইওভারের ফলে এক জায়গার যানজট আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত হলো।

তারপর বলা হলো, মেট্রোরেল তৈরি হলেই যানজট, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মেট্রোরেল তৈরি হচ্ছে। নিশ্চয় মেট্রোরেলের কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। যানজট সমস্যার কী সমাধান হবে? মেট্রোরেল চালু হলে, উত্তরা থেকে খুব সহজে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত চলে আসা যাবে। কিন্তু যানজট সমস্যার সমাধান হবে না। নিচে দিয়ে গাড়ি-রিকশা-বাসের যানজট থাকবেই। মেট্রোরেল সারা শহরে বিস্তৃত করার সুযোগ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভার নির্মাণ করে। 

আর ফ্লাইওভার নির্মাণের সঙ্গে মানুষের ভালো থাকার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।

ফ্লাইওভার দেখে আনন্দিত হন যাদের গাড়ি আছে তারা। ঢাকা শহরে এমন মানুষের সংখ্যা ৯ শতাংশের বেশি নয়।

৪. গ্রামের কৃষকের কাছে গিয়ে জানতে চান, কেমন আছেন?
উত্তর পাবেন, ভালো নেই। না, এত সরাসরি তিনি উত্তর দেবেন না। আলুচাষি বলবেন, উৎপাদন তো খুব ভালো হয়েছে। দাম তো পেলাম না। লোকসান দিতে হলো। টমেটো চাষি বলবেন, গতবার তো ভালোই দাম পেয়েছিলাম। এবার তো পুরাই লোকসান। ব্যাংকের ঋণ শোধ করব কীভাবে? ধান চাষি কৃষক হাহাকার করছেন, খরচের সমান দাম না পেয়ে। ভালো আছেন মূলত দেশের কিছু অঞ্চলের সবজি ও ফল চাষিরা। কিন্তু এটা তো সমগ্র বাংলাদেশের খুব কমসংখ্যক চাষি। বৃহত্তর অংশই তো ভালো নেই।

গ্রামের দিনমজুরদের মজুরি বেড়েছে, তাও সত্য। শুভঙ্করের ফাঁকি হলো, গ্রামে সারাবছর কাজ থাকে না। বছরের তিন চার মাস কাজ ছাড়া থাকতে হয়। ফসলের মৌসুমে কাজের লোক পাওয়া যায় না। মৌসুম শেষে লোক থাকে, কাজ থাকে না।
গ্রামে কাজ না পেয়ে, শহরে বা ঢাকায় আসার প্রবণতা শুধু বাড়ছেই, কমছে না। গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে যিনি রিকশা চালান, তার আয় বেড়েছে- ব্যয় বেড়েছে তার চেয়েও বেশি।

৫. গ্রামের যে কৃষক অনেক কষ্ট করে সন্তানকে পড়াশোনা করিয়েছেন। চাকরির জন্যে তাকে ১০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। জমি বিক্রি করে তিনি ঘুষ দেন।

ইয়াবাসহ মাদক গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গেছে। দেখার বা ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নেই। যারা দেখবেন বা ব্যবস্থা নেবেন তারাই মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। সাধারণ মানুষের ভালো না থাকার এটা খুব বড় একটা কারণ। যারা ইয়াবার হাজার হাজার কোটি টাকার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ‘মাদকবিরোধী সপ্তাহ’ পালন করার দৃশ্য টেলিভিশনে দেখেন সাধারণ মানুষ।

৬. তাহলে কেউ কি ভালো নেই? না, কেউ কেউ ভালো আছেন। যারা ফ্লাইওভার তৈরি করছেন, তারা ভালো আছেন। ৩০০ কোটি টাকার বাজেটে কাজ শুরু করে, তা ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় শেষ করছেন। যারা ৪ লেনের রাস্তা নির্মাণের কাজ পেয়েছেন, তারা ভালো আছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে সবচেয়ে নিম্ন মানের রাস্তা নির্মাণ করছেন। রাজধানীর ভালো ফুটপাত, ভালো রোড ডিভাইডার ভেঙে নতুন করে গড়ার কাজ যারা পেয়েছেন, তারা ভালো আছেন।

আর ভালো আছেন ব্যাংক থেকে যারা লোন নিয়েছেন এবং যারা দিয়েছেন। শেখ আবদুল হাই বাচ্চুরা ভালো আছেন, তারা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যাংক থেকে জনগণের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে নিয়েছেন। সোনালী ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা যারা নিয়েছেন, তারা ভালো আছেন। একজন তানভীর জেলে থাকলেও, সুবিধাভোগী সবাই নিরাপদেই আছেন। একদা গাড়ি চোর ইউনুছ বাদল সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ভালো আছেন। ১০০ কোটি টাকা মসজিদ নির্মাণের জন্যে দিয়ে পরকালেও ভালো থাকা নিশ্চিত করছেন। 

তারা ভালো আছেন যারা প্রতি বছর নিয়ম করে লক্ষাধিক কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন। যারা ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা বা মালয়েশিয়া চলে যাওয়া নিশ্চিত করে রেখেছেন।
তারা ভালো আছেন যারা তৃতীয় বিশ্বের টাকায়, প্রথম বিশ্বে থেকে প্রথম শ্রেণির জীবনযাপন করেন।

৭. কাগজের হিসাবে বাংলাদেশ নিম্নমধ্য আয়ের দেশ হয়েছে। এখন উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিজন মানুষের ঋণ ৪৬ হাজার টাকা। বিদেশ থেকে আনা ঋণে কিছু অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। ‘উন্নয়ন’র জন্যে অবকাঠামো নির্মাণ খুব জরুরি। এসব অবকাঠামো যদি একটা বড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সঠিক ব্যয়ে নির্মিত হতো, নিশ্চয় তা ভালো ব্যাপার হতো। প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ৫ বা ১০ গুণ বেশি ব্যয়ে নির্মিত এসব অবকাঠামো শেষ পর্যন্ত দেশের মানুষের ভাগ্য বদলে কতটা ভূমিকা রাখবে, বড় প্রশ্ন সেটা নিয়ে। মনে রাখতে হবে, অবকাঠামো নিজে উন্নয়ন নয়, উন্নয়নের সহায়ক। নির্মিত হচ্ছে ঋণের টাকায়। সে ঋণ সুদসহ শোধ করতে হবে। এখন যে ঋণ নেওয়া হচ্ছে, তা শোধ করা শুরু হবে ১০ বা ১৫ বছর পর থেকে। অবকাঠামো যদি পরিকল্পিত না হয়, কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হবে না। কিন্তু ঋণ শোধ করতে হবে। সমস্যাটা তৈরি হবে তখন। এখন প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ, জনগণের নামে ঋণের অর্থ আছে, হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার হচ্ছে। একই ফর্মুলায় বিপদে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ কাগজে ‘উন্নয়নশীল’ দেশ হলেও, তা ধরে রাখার জন্যে, টেকসই করার জন্যে যে পরিকল্পনা তার খুব বড় রকমের অনুপস্থিতি দৃশ্যমান। 

বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি। যা ছিল তাও ধ্বংসের পথে। শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও, টেকসই পথে এগোয়নি বিদ্যুৎ খাত। চুরির উৎসব চলছে। কৃষক ঠিকমতো ঋণ পায় না, ক্ষমতার কাছের ঋণখেলাপি ধনীর তালিকায় নাম লেখায়। কৃষকের ঋণ মাফ হয় না, এসব খেলাপিদের হাজার হাজার কোটি টাকা মাফ করে দেয়া হয়। ফলে মানুষের ভালো থাকার গল্পের পাশাপাশি, খুব বড় রকমের ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ।


  •  SHAPTAHIK/Editor : Golam Mortoza

EU wants probe into disappearance, extrajudicial killings



Shakhawat Hossain

Expressing its grave concern over the incident of enforced disappearances and extrajudicial killings, the Council of the European Union has called on Bangladesh and a few other countries to effectively investigate the incidents in an impartial and transparent manner.

The council approved conclusions on EU priorities in United Nations Human Rights Fora 2018 at a meeting in Brussels on February 26, according to a release posted on its website.

According to the conclusions, the European Union called on all states to ensure that ensure appropriate prosecution of those responsible for enforced disappearances and extrajudicial killings.

It also expresses concerns over such cases notably in Bangladesh, Libya, Syria, Myanmar, Crimea Sevastopol, Russian Federation, the Philippines, Pakistan, Burundi and Venezuela.

The union will continue to be engaged in the fight against torture and other
cruel, inhuman or degrading treatment or punishment, in particular when used by law enforcement personnel and security forces, resolved the council.

‘The EU will continue in all its external relations to promote respect for diversity by protecting and promoting human rights of persons belonging to national minorities, including already acquired rights, in accordance with applicable UN and Council of Europe norms and standards,’ it stated.

Asked on Wednesday, home minister Asaduzzman Khan declined to comment on the issue. 

Law minister Anisul Huq could not be reached despite repeated attempts. In several occasions, he, however, expressed concerns about the incidents of enforced disappearance and extrajudicial killing, but advised journalists to highlight the country’s role in sheltering a large number of Rohingyas in Bangladesh.

Even on Human Rights Day in 2017, the law minister had declared that the government was investigating reported incidents of enforced disappearance and extrajudicial killings. 

By mid-December 2017, the law minister publicly announced that he would follow up the cases.
The National Human Rights Commission has, however, claimed that over 150 cases remained unresolved over the years while its chairman Kazi Reazul Hoque said that many reports came to them without identification of the suspects.

According to rights organisation Odhikar, at least 408 people were subjected to enforced disappearance between January 2009 and November 2017. On December 4, 2017, former diplomat Muhammed Maroof Zaman, who served Qatar and Vietnam as ambassador from Bangladesh, went missing when he was going to Hazrat Shahjalal International Airport to pick his daughter. His whereabouts is still unknown. 

- Shakhawat Hossain is Dhaka-based freelance journalist. 

  • http://weeklyholiday.net 



উন্নয়নের ধারাবাহিকতা না ক্ষমতায় কালনিরবধি?

মো: মতিউর রহমান


বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকেই একাদশ সংসদ নির্বাচন তথা জাতীয় নির্বাচন করবে বলে মনে হয়। আমাদের দেশে তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে কোনো দল বা জোট পরপর দুইবার ক্ষমতায় যেতে পারে না। এর কারণ হলো এক দিকে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি তথা লুটপাট, দলীয় ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মাস্তানি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি, অন্য দিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া, মামলা-মোকদ্দমা ও জেল-জুলুমে হয়রানি এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও নেতাকর্মীদের ধরাপাকড়, দমন-পীড়ন করা।

উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদের হুমকিকে রাজনীতিকীকরণ করেছে। এর সুযোগ নিয়ে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা এখনো যেন জরুরি অবস্থায় আটকে আছেন। এ কারণে জনগণ ক্ষমতাসীনদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং সুযোগ পেলে বা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটায়। এ কারণে তত্ত্বাবধায়ক কিংবা সহায়ক যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এ ধরনের সরকারের দরকার নেই বলে বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা মনে করেন। আর পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার সংবিধানকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির এ দাবিকে অসাংবিধানিক রূপ আখ্যা দিয়ে তা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠে আর জায়গা নেই বলে অন্যদের উঠতে নিষেধ করার মতো। 

জাতি হিসেবে আমরা বিস্মৃতিপ্রবণ হলেও জনগণ এত দ্রুত ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুর আন্দোলনের কথা ভুলে যায়নি। সেই আন্দোলনে জনজীবনের চরম নৈরাজ্য নেমে এসেছিল। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুরো দেশকে অচল করে দিয়েছিল। এমনকি বাসে আগুন দিয়ে মানুষমারা হয়েছিল। আর আন্দোলনের অংশ ও কৌশল হিসেবে কথিত জনতার মঞ্চ এক দিকে যানবাহন চলাচলে স্থবিরতা সৃষ্টি করেছিল, অন্য দিকে সৃষ্টি করেছিল প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা। 

প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারী এ ধরনের কার্যক্রমে যোগদান করতে পারে না। এমন হঠকারী কাজ একটা নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ তুল্য এবং সেই কারণে দেশদ্রোহিতার শামিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করা ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধের পর্যায়ে পড়ে না। জনতার মঞ্চ ছিল একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারীদের মঞ্চ। অন্য দিকে, ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ ছিল জাতির ভাষাগত ও জাতিগত অস্তিত্বের লড়াই।

ভাবতে অবাক লাগে যে, সেই আওয়ামী লীগ এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামগন্ধও সহ্য করতে পারছে না। তারা ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘দানব’ বলে প্রচার করেছে। আর এখন সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। কিন্তু ১৯৯৬ সালেও তো দেশের সংবিধান ছিল। সংবিধানের জন্য জনগণ নয়, জনগণের জন্যই সংবিধান।

অতীতে প্রয়োজনে একাধিকবার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। কেননা, সংবিধান কোনো ধর্মগ্রন্থ নয় যে, চিরদিন অপরিবর্তনীয়। আর ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল ব্যতিক্রমধর্মী সরকার। সেনাসমর্থিত ওই সরকার তৎকালীন সেনাপ্রধানের উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ এবং ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে জনতুষ্টিমূলক এমন কতকগুলো কাজ হাতে নেয়, যা ছিল তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত এবং সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর স্পিরিটের পরিপন্থী। তাদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ছিল মূলত আইওয়াশ। এর আবরণে তারা নিজেদের পদ ও পদমর্যাদা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আখের গুছিয়ে নেন। এ কারণে মইন ইউ আহমেদের পক্ষে বছরের পর বছর বিদেশে আয়েশি জীবনযাপন এবং আরেকজন জেনারেলের পক্ষে পাঁচ তারকা হোটেল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে অন্যদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াও শিকার হন। অবশ্য শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি দৃশ্যত তীব্র উষ্মা প্রকাশ করলেও তিনি কিন্তু এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রত্যক্ষ বেনিফিশিয়ারি। 

এ ক্ষেত্রে একটি বড় প্রশ্ন ও বিস্ময় রয়েছে। তিনি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মইন ইউ আহমেদ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন না কেন? মইন ইউ আহমেদকে বিদেশ যেতে দিলেন কেন এবং লে. জেনারেল মাসুদউদ্দীন চৌধুরীকে দীর্ঘদিনের জন্য অস্ট্র্রেলিয়ায় হাইকমিশনার করে পাঠালেন কেন? এটা একধরনের দ্বিচারিতা। প্রতিপক্ষ অভিযোগ করেছে, ভারতের মধ্যস্থতায় সেনাপতিদের সাথে আপস করেই নাকি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আরূঢ় হয়েছিল। 

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য অতীতের সব তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে মন্দ বলা যাবে না। এক-এগারোর আগের সব তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। উচ্চ আদালত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।

সংবিধান সংশোধন (পঞ্চদশ) সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি উচ্চ আদালতের মতের অনুরূপ সুপারিশ করলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তা পাল্টে যায় এবং তার অভিপ্রায় অনুযায়ী সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। ক্ষমতায় থেকে এবং সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করার অতীত অভিজ্ঞতা মোটেও শুভ হয়নি। আর আওয়ামী লীগের অধীনে অতীতে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হতে পারেনি। এর ব্যতিক্রম ছিল ২০১৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিএনপি সব ক’টিতে জয়ী হয়। সুতরাং অংশগ্রহণমূলক হওয়াই শুধু অন্বিষ্ট নয়, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়াও জরুরি। 

ক্ষমতাসীন দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আগে ‘দানব’ বললেও হালআমলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার লক্ষ্যে মহাসড়কে ওঠা ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা’ বজায় রাখা ধুয়া তুলেছেন। ভাবখানা এমন যে, উন্নয়নে শুধু তাদের দলেরই পারঙ্গমতা আছে, অন্য কোনো দলের নেই। এর মধ্যে একটা অহঙ্কার এবং আত্মম্ভরিতার ভাব ফুটে ওঠে। কিন্তু এ কথাও অনস্বীকার্য, এ দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অতীতে ক্ষমতায় ছিল এমন সব দলেরই অবদান আছে। উন্নয়ন কারো একচেটিয়া অধিকার ও পারঙ্গমতার বিষয় হতে পারে না। যদি তাই হয়, তাহলে তো বর্তমান সরকারের দৃঢ়োক্তি (না দম্ভোক্তি?) অনুযায়ী তাদের কালনিরবধি ক্ষমতায় রাখতে ও থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে তো ভোটারবিহীন নির্বাচন কিংবা ক্ষমতা জবরদখল বৈধ হয়ে যেতে পারে গুরুত্বহীন। সে অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোট ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল গুরুত্বহীন ও অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, উন্নয়ন বলতে শুধু নির্মাণ কাজ বা বস্তুগত উন্নয়নকে বোঝায় না। গণতন্ত্র তথা আইনের শাসনের অনুপস্থিতি এবং কর্তৃত্ববাদী তথা একচেটিয়া শাসনের মনোভাব থাকলে এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ ও মুক্ত গণমাধ্যম না থাকলে রাষ্ট্রের সার্বিক ও প্রকৃত উন্নয়ন হয় না। ভৌত উন্নয়নের সাথে গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিরও উন্নয়ন একান্ত আবশ্যক। অন্যথায় অন্যসব উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না। গণতন্ত্রের উন্নয়ন হলে এর অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও উন্নয়ন ঘটবে।

ক্ষমতাসীনদের ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছে, ক্ষমতার মোহ তাদের ভালোই ধরেছে। আর এ কারণেই বিরোধী নেত্রীকে জেলে রেখে সরকারি যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আগাম ভোট চাওয়া শুরু হয়েছে। কোনো কোনো পত্রিকা সংবাদ শিরোনাম করেছেন খালেদা জিয়া কোর্টে, শেখ হাসিনা ভোটে। গণতন্ত্রের এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা হলো, অধিকারের সমতা যা বেপরোয়াভাবে হরণ করা হয়েছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, ‘ক্ষমতার গুরুতর অসাম্যের মধ্যে নিহিত থাকে অবিচার।’ গণতন্ত্র আজ রাহুগ্রস্ত। প্রশাসন ও পুলিশ দলীয় ব্যাধিগ্রস্ত, সুশাসন নির্বাসিত। আর নির্বাচন কমিশন নিয়ে সবাই সংশয়গ্রস্ত। নির্বাচনকে মাথায় রেখে সংসদ সদস্যদের ইচ্ছামাফিক প্রকল্প গ্রহণ করায় এবং নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া ও ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েনের দাবি উপেক্ষিত হওয়ায় বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে, এমন নির্বাচনের আশা সুদূরপরাহত বলে মনে হয়। 

  • লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
  • নয়াদিগন্ত/১৮-৩-১৮

কানাডার ফেডারেল কোর্টের নতুন রায় - বিএনপি’র কর্মসূচি ‘সন্ত্রাস’ নয়



মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে 


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং তাতে তাদের চলমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে আগাম নির্বাচনের দাবিতে ডাকা ‘হরতাল’ কর্মসূচি ‘সন্ত্রাস’ বলে গণ্য হতে পারে না। কেননা দক্ষিণ এশিয়ায় ‘হরতাল’ শব্দটির প্রায়োগিক বিষয়টি এসেছে মহাত্মা গান্ধীর ডাকা অসহযোগ আন্দোলন ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স মুভমেন্ট’ থেকে এবং বাংলাদেশে ক্ষমতাহীন অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েই এই কৌশলটিই অবলম্বন করে। এতে বিএনপিকে নিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার আগের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল বিচারকের প্রদত্ত রায়টি কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, তেমন অভিমত ব্যক্ত করে নতুন রায় দিয়েছেন কানাডার সর্বোচ্চ ফেডারেল আদালতের বিচারপতি রিচার্ড জি মোসলে।

গত ১ মার্চ কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণে পরিপূর্ণ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র আইনজীবী অঙ্গসংগঠনের জনৈক ‘এ. কে.’ আদ্যাক্ষর সংবলিত ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের রাজধানী ভ্যান্কুভারে অনুষ্ঠিত শুনানিতে এমন রায়ই দিয়েছেন দেশটির ফেডারেল কোর্টের বিচারপতি রিচার্ড জে মোসলে। তাতে রাজনৈতিক আশ্রয় পুর্নবিবেচনার জন্য আবেদনকারীর আবেদনসহ তার সঙ্গী স্ত্রী ও কন্যার আবেদনদ্বয় ভিন্ন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার তদারকিতে দেওয়া হয়েছে।

অথচ এর আগে ২০১৩ সালের ২৪ জুলাই কানাডায় আশ্রিত বিএনপি কর্মীর পরিচয়ধারী জনৈক মোহাম্মদ জুয়েল হোসেন গাজী স্বগতোক্তি অনুযায়ী তার চূড়ান্ত শুনানিতে ফেডারেল কোর্টের বিচারক তার আবেদনটি নাকচ করে দেন, যদিও ওই রায়ে বাংলাদেশের দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে বলে অভিমত ছিল।

তবে সর্বশেষ ‘বিএনপি সন্ত্রাসী দল কিনা’, এমন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ তদন্তকারী ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার ‘দ্য সোল ইস্যু ফর কন্সিডারেশন ইজ হোয়েদার দ্য ডিসিশন ইজ রিজোনাবল্’ এই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি সংক্রান্ত তদন্তকারী ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার ইন্টারনেটে প্রাপ্ত তথ্য অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ, এমন অভিমত ব্যক্ত করেন ১৮ পৃষ্টা সংবলিত ওই রায়ে বিচারপতি রিচার্ড জি মোসলে। সেক্ষেত্রে সংবাদ সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি সংগঠন ও অন্যান্য সূত্র থেকে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা একটি ধারণায় উপনীত হন, যেখানে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টিতে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মাঝে সংঘটিত সহিংসতার চিত্রটি দৃশ্যমান। এতে বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তা যে বিষয়টিতে সবিশেষ নজর দেন সেটি হচ্ছে, হরতাল। দক্ষিণ এশিয়ায় সেভাবেই তা পরিচিত। জনমানুষ সম্পৃক্ত অসহযোগের এ কর্মসূচিটি মহাত্মা গান্ধীর ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স মুভমেন্ট’ থেকে উদ্ভূত। তদন্ত কর্মকর্তা অনুসন্ধানে যেটা পেয়েছেন সেটা হলো- বিএনপি বা আওয়ামী লীগ যে দলই ক্ষমতার বাইরে থাকে তারা চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে হরতালকে ব্যবহার করে থাকে। একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে অর্থনৈতিক চাপ হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচিটি ব্যবহৃত হয়। তাই হরতাল আহবান করা সন্ত্রাসবাদের আওতায় পড়ে না উল্লেখ করে বিচারক রিচার্ড জে মোসলে তাঁর রায়ে বলেন, চলমান সংসদ ভেঙ্গে দিতে কিংবা আগাম নির্বাচনের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে কোনো রাজনৈতিক দল আহুত ‘হরতাল’ কর্মসূচি সন্ত্রাস বিবেচিত হতে পারে না এবং সেক্ষেত্রে “এসেন্স অব হোয়াট দ্য ওয়ার্ল্ড আন্ডাস্ট্যান্ডস বাই ‘টেরোরিজম’”, অর্থাৎ বিশ্বের কাছে নির্যাস হিসেবে বিবেচিত ‘সন্ত্রাস’ বিষয়টি তার কাছে দুর্বোধ্য।

  • ই-মেইল: bukhari.toronto@gmail.com 


একজন সংশপ্তক রাজনীতিবিদ

— সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল


ক্রমাগত তাগিদে এলোমেলো ভাবনার সুতাগুলো, কী লিখব? কোথা থেকে শুরু করব? শেষ না হয় জানি, জীবিত সিঙ্গাপুরে যাওয়া এবং নিথর নিস্তব্দ হয়ে ফিরে এসে পাঁচুরিয়ার মাটির বিছানায় অনন্ত বিশ্রামে চলে যাওয়া এক চেনা মানুষ। কত মাস, বছর, যুগের হৃদয়ের গভীর চোখে চেনা একজন ক্লান্তিহীন মানুষ। নিষ্পাপ শৈশব, দূরন্ত কৈশোর আর তেজোদ্দীপ্ত যৌবনের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল আশি বছরের এক যুবক একজন মানুষের সমন্বয় সত্তায়।

কী এক জাদুকরি ব্যক্তিত্ব! তার সাথে রাগ করা যায়, কিন্তু অশ্রদ্ধা করা যাবেই না। ঘৃণার তো প্রশ্নই আসে না। অথচ খুব সহজেই যে কেউ বুঝতে পারবে তাকে। কারো সাথে তিনি আন্তরিক, আবার রাগী কখনো কারো সাথে। নীতি এবং বিশ্বাসবোধ এর ভিত্তি কতটা দুঃসাহসী এবং অনমনীয় করতে পারে একজন মানুষকে, তার বিরল দৃষ্টান্ত তিনি। রাজনীতিতে এলপিআর-এ যাওয়া এক নিভৃতচারী আপদমস্তক দেশপ্রেমিক, জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার কাছে এবং দূর অতীতের ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত তিনি। যথার্থই এক সংশপ্তক।



হ্যাঁ, আমি মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের কথা বলছি। কত বিশেষণ তার দীর্ঘ জীবনের বহুমুখী অবদানে। ভাষা সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, আইনজীবী, সংসদ সদস্য, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, গণতান্ত্রিক চেতনার নিরন্তর যোদ্ধা, সমাজসেবক, ধার্মিক, সাচ্চা জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক ইত্যাদি। কিন্তু শিশু সরল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের একান্ত পরিচিতি আমরা ক’জনাইবা জানি। আর জানলেও তা কতটা? যেটুকু জেনেছি তাতে মনে হয়েছে খোন্দকার দেলোয়ারের হৃদয় একটা বিশাল সমুদ্র। তিনি যেন একটি রাজনৈতিক বিজ্ঞানাগার। বিশাল সমুদ্রের সহস্র গর্জনে মাতোয়ারা সত্যের সাহায্যে পরিপূর্ণ বিস্ময়কর এক অন্তহীন জলরাশি।

কেউ ছাত্র হতে চাইলে পরম মমতাময় একজন শিক্ষক পেতেন, রাজনীতি শিখতে চাইলে সে অকৃপণ হাতের ভাণ্ডার নিতে পারতেন। হতাশায় নুয়ে পড়া কেউ কাছে গিয়ে নিষ্কলুষ স্বীকারোক্তি দিলে আশার সঞ্জীবনী সুধা নিয়ে ফিরতে পারতেন, কিন্তু কখনো রাজনীতি করার মানসিকতায় কেউ কাছে গেলে সে নিশ্চিত রাগী অনমনীয় একজন মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেতেন। অন্য যেকোনো নেতার চেয়ে খোন্দকার সাহেব রজনীতিবিদদের আয়নায় ছবিটি বেশি পরিষ্কার করে দেখতে পেতেন। যত বেশি তার কাছে গিয়েছি তত বেশি মনে হয়েছে এক বিশাল অনাবিষ্কৃত খনির সামান্যটুকুই আহরণ করতে পেরেছি। সারাক্ষণ যিনি বিশ্বাস করতেন মানব জীবনে সুসময়-দুঃসময়ে বলতে কিছু নেই। কাজে লাগাতে পারলে পুরো জীবনকালটাই যথার্থ সময়। তাকে কখনো মনে হতো অভিভাবক, কখনো প্রদর্শক, কখনো বন্ধু, কখনো আত্ম-অভিমানী এক শিশু। 

মানব চরিত্রের সব বৈশিষ্ট্যের এক অপূর্ব ছন্দময় মিশেল ছিল তার সত্তার ক্যানভাসে। মহান সৃষ্টিকর্তা তাকে দিয়েছিলেন শ্রদ্ধা সম্মানের বিরল এক সৌভাগ্য। মাত্র চার বছরের মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকালে, তিনি এলেন, কাজ করলেন, জয় করলেন। একটু বলে না থামলে মহাকাব্য লিখতে হবে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে জীবন পাখি জমা দেয়ার মরদেহকে ঘিরে পক্ষ-বিপক্ষ, মত-বিপরীত মত, নারী-পুরুষ, বন্ধু-শত্রু নির্বিশেষে এরারপোর্ট, আরমানিটোলা মাঠ, শহিদমিনার, হাইকোর্ট সংসদ প্লাজা, বিএনপি অফিস, মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজ, ঘিওর পাঁচুরিয়া সর্বত্র শোকার্ত মানুষের মিছিল, নামাজে জানাজা, সবকিছু মিলে মনে হয়েছে তার জীবনের সব উজ্জ্বলতায় ভাসিয়ে দিয়েছে।

এই মানুষটির খুব কাছে যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে ২০০১ থেকে ২০১১, তার শেষকৃত্য পর্যন্ত। ২০০১-এর ৪ দলীয় জোটের বিপুল সংখ্যাঘরিষ্ঠতায় সংসদে একদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর আমি উদাহরণ হিসেবে বলেছিলাম, আইন ভঙ্গের দায়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার মন্ত্রী পুত্রকেও ছাড় দেননি, নিজ দলের সংসদ সদস্যকে ছাড় দেননি। সংসদের চিপ হুইপের পুত্রকেও রেহাই দেননি, অধিবেশনের বিরতিকালে অত্যন্ত হাসিমুখে দেলোয়ার ভাই আমার নামধরে বললেন তুমিও আমাকে Escape goat বানালে! ভালো। আমি লজ্জা পেয়েছিলাম; কিন্তু কষ্ট পাইনি। কারণ তিনি কষ্ট পাওয়ার মতো করে বলেননি।

ন্যামভবনের ফ্ল্যাট বরাদ্দকালীন বরাদ্দ কমিটির প্রধান হিসেবে তার কাছে ১৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট চেয়েছিলাম। হাসিমুখে দরখাস্তটি হাতে নিয়ে বললেন, তুমি তো কোনো পদার্থই না। একাধিকবার এমপি, যুবদলের সেক্রেটারি আর ঢাকা শহরের নিজের একটা বাসা নেই। একটুও ইন্ধন মনে হয়নি ওনার কথায়, বরং তৃপ্তি পাওয়ার উপাদান খুঁজে পেয়েছিলাম কথার সুরে এবং প্রকাশ ভঙ্গিতে। ২০০৭-এর ১১ জানুয়ারির পর মহাসচিব হওয়ার আগে একবার একটা জটিল সমস্যার স্পষ্ট ও দৃঢ় সমাধানের পরামর্শ দিলেন। জনাব তারেক রহমান এবং দাউদ ইব্রাহীমকে নিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে সব দৈনিক একটি সংবাদ প্রকাশিত হলো। 

তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান ফোনে সব অঙ্গসংগঠনকে বললেন ‘নিন্দা প্রতিবাদ’ পাঠাতে পত্রিকায়। আমি যুবদলের তৎকালীন সভাপতি এবং আমার যৌথ প্রতিবাদ লিখে পাঠালে রাতে কয়েকজন সাংবাদিক জানালেন যুবদল সভাপতি তার নাম ছাপাতে নিষেধ করেছেন। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের কাছে চিন্তিত মনে দ্রুত গিয়ে হাজির হয়ে পরামর্শ চাইলে বিনাদ্বিধায় বললেন, সাহস থাকলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তোমার একার নাম ছাপাতে বলো। আমি তাই করলাম। পরদিন পত্রিকাগুলোতে আমার একার বরাতে ‘নিন্দা প্রতিবাদ’ ছাপানো হলো। এ ঘটনার কয়েক দিন পর তিনি আমাকে ডেকে সতর্ক করলেন, তুমি একটু সাবধানে চলাফেরা করো। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও আমাকে একই পরামর্শ দিলেন।

শহীদ জিয়ার মাজারে সংস্কারপন্থী কয়েক নেতা লাঞ্ছিত ঘটনায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হান্নান শাহর সাথে আমিও আসামি হলাম। আমার বাড়িঘর তল্লাশি শুরু হলো। ১১ জানুয়ারি ২০০৭-এর জরুরি অবস্থাকালীন প্রথম রাজনৈতিক মামলা ছিল সেটি এবং বহুল আলোচিত বটে। দেলোয়ার ভাই আমাকে সাহস দিতেন।



জরুরি অবস্থা জারির কিছু দিন পর দেশনেত্রী আমাকে চারজন সিনিয়র নেতার কাছে কিছু মেসেজ দিয়ে পাঠালেন এবং আলোচনার ফলাফল পরদিন রাতেই তাকেই জানাতে বললেন। চারজনের মধ্যে খোন্দকার দেলোয়ার একজন ছিলেন। আমি পুরো মিশন শেষ করতে গিয়ে দেখলাম অনেক ভাগ্যবান অনেক প্রাপ্তির অধিকারীদের পলায়নী কিংবা সমঝোতামূলক মানসিকতা। একমাত্র খোন্দকার দেলোয়ার সেদিন সাহস দিয়েছিলেন এই বলে ‘একটু ধৈর্য ধরো, ঈমান ঠিক রেখে কাজ করলে আর সৎ সাহস দেখাতে পারলে স্বৈরাচার পালাতে বাধ্য হবে। শহীদ জিয়া আর বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তা এবং দৃঢ়তা সম্পর্কে এই অসভ্যরা জানে না। সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় বছর লাগবে সব ঠিক হতে। বিএনপি ষড়যন্ত্রের শিকার এর আগেও হয়েছে। এবারও এটা সাময়িক।’

আমাদের সাবেক মন্ত্রী, সিনিয়র নেতা, এমপিরা অনেকই তখন জেল জরিমানায় একটু বিচলিত, আমি নিজেও। যা হোক ম্যাডামকে সার সংক্ষেপে জানালাম। ম্যাডাম শুধু বললেন, তোমার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে তাকে দিয়ে হবে, তাই না? আমি হ্যাঁ সূচক মতামত দিলাম। জরুরি বিধির ১৬ (২) ধারায় আমার গ্রেফতার, রিমান্ড শুরু হওয়ার আগে খোন্দকার দেলোয়ার সাহেব একাধিকবার ন্যাম ফ্ল্যাটে বসে আমাকে সতর্ক করে বলেছিলেন, তুমি খুব সতর্কভাবে চলা ফেরা করো, তোমার বিপদ হবে কিন্তু ঘরের ভেতরের ইন্ধনে। একবার খুব জোরের সাথে বললেন রহুল কবির রিজভী এবং ফরহাদ হোসেন আজাদের সামনেও। এর অনুকরণে বহুমাত্রিক ঘটনা প্রবাহ সৃষ্টি হয়েছিল। সে প্রসঙ্গ অন্য দিনের জন্য থাক। যখন দেশনেত্রী কারাগারে, প্রিয় নেতা তারেক রহমান পঙ্গু প্রায় অবস্থায় কারাগারে বন্দী, আরাফাত রহমান মৃতপ্রায় কারাগারে বন্দী, সিনিয়র নেতারা হয় করাগারে না হয় পলাতক। উদ্ধত বুটের তলায় পিষ্ট হয়ে গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার মৃতপ্রায়, চার দিকে ঘনঘোর অন্ধকার, তখন শুধু একটাই বাতিঘর ছিল সামনে। সেই বাতিঘর হিমালয়ের মতো দৃঢ়, অবিচল, সব আঘাত সইবার জন্য সর্বদা প্রস্তুত। বেগম খালেদা জিয়ার আমানত রক্ষার প্রয়োজনে জীবন দিতে তৈরি এক মহীরুহ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। তার পাশাপাশি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হান্নান শাহসহ আরো কিছু সিনিয়র জুনিয়র নেতা ছিলেন।

তবে নিজ পুত্রকে নির্দয় টর্চার সেলে আর্তচিৎকাররত অবস্থায় গোয়েন্দা দফতর থেকে ফোন করে জন্মদাতা পিতাকে তা শুনিয়ে দুর্বল করে তার বিশ্বাস এবং দৃঢ়তা থেকে সরানোর যে ফ্যাসিবাদী অপচেষ্টা তার মর্মযাতনা, অসহনীয় যন্ত্রণা শুধু জন্মদাতা মমতাময় পিতা ছাড়া আর কারো পক্ষে পরিপূর্ণ অনুভব করা সম্ভব নয়। একমাত্র খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সে দুঃসহ যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে পেরেছিলেন পিতৃত্বের ওপরে নেতৃত্বকে স্থান দিতে। যেটা সচরাচর অকল্পনীয়। এর পরেও ক্রামগত হুমকি, ভীতি, মৃত ভয় উপেক্ষা করে বারডেম হাসপাতাল থেকে তার কৌশলগত দুঃসাহসী অন্তর্ধান না হলে সেদিন বিএনপি ভয়ঙ্কর পরিণতির মুখোমুখি হতো। এরকম ঘনঘন দুঃসাহসী যুদ্ধ জয় করে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সক্ষম হয়েছিলেন। বৃহত্তর যুদ্ধের সেনাপতির দায়িত্ব দেশনেত্রীর হাতে সফল এবং সুন্দরভাবে তুলে দিতে। আর সে জন্যই তিনি সংশপ্তক।

ফুরফুরে মেজাজে থাকলে অনেক সময় প্রাণখোলা দুষ্টমি করতেন তিনি। আবার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা নির্দ্বিধায় মনের ভাব প্রকাশ করতেন। একাধিক হাসপাতালে বিভিন্ন সময় তাকে দেখতে গেলে দোয়া চাইতেন এবং দোয়া করতেন। আজ খুব মনে পড়ে ‘অনেকেই পচে গেছে, তুমি পচোনা, এই স্টাইলটা ধরে রেখো। ভবিষ্যৎ ভালো হবে।’ বলেছিলেন তিনি, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়িতে একদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার একান্ত সংস্পর্শে কাটিয়েছি। লুঙ্গি পরিহিত গেঞ্জি গায়ে লাঠি হাতে দৃঢ় পদক্ষেপ সোজা হাঁটতে হাঁটতে অনেক গল্প, শৈশবে নদীতে সাঁতার কাটা, হাডুডু খেলা, বন্ধুদের গল্প, শিক্ষকতা, আইন পেশা, বহু স্মৃতি রোমন্থন করছেন তিনি। তার বাড়ির আঙিনায় বহু ফলজ গাছ, পুকুর, মাছ দেখিয়েছেন। তার সাথে দুপুরের খাবার খেলাম। ফাঁকে ফাঁকে রাজনৈতিক আলোচনা, মসজিদে নামাজ পড়া, অনেক অনেক দোয়া পেয়েছি তার কাছ থেকে আমি।

যুবদলের ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশ হলো নারায়ণগঞ্জে। মহাসচিব হিসেবে ঢাকার বাইরে বিএনপির গোটা পরিবারের কোনো বড় সমাবেশে তিনি রাজনৈতিক বক্তব্য রাখলেন। মুক্তকণ্ঠে তিনি স্বীকৃতি দিলেন ঢাকার বাইরে এত বিশাল এবং এত সুশৃঙ্খল সমাবেশ তিনি আর দেখেননি। বর্তমান যুবদলের কমিটির প্রতি এটা ছিল তার প্রকাশ্যে প্রশংসা এবং স্বীকৃতি। বিএনপি আয়োজিত মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের স্মরণে জাতীয় শোকসভা আমি প্রস্তাব করে ছিলাম। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্দিষ্ট যে চেয়ারটিতে তিনি বসতেন সেটি সংরক্ষিত রাখা হোক এবং তার সম্মানে একটি সম্মাননা চেয়ার প্রবর্তন করা হোক। বিএনপিতে নির্মোহ থেকে ঈমানদারির সাথে যারা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দায়িত্ব পালন তথা নেতৃত্ব দানে সফল হবে তাদেরকে ‘খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সম্মাননা চেয়ার’ এ ক্রমানুসারে বসার সুযোগ দেয়া হবে। আমার মতে, এর দ্বারা তার কর্মের মূল্যায়নের প্রতি সম্মান চিরকাল থাকবে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব প্রেরণা পাবে সঠিক নির্মোহ, সাহসী দায়িত্ব পালনে। মরহুমের ব্যবহৃত চেয়ারটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহাসচিবের কক্ষে স-সম্মানে সংরক্ষিত আছে। খুব ভালো লাগে দেখলে।

এখন আরো ভালো লাগবে পরবর্তী প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হতে দেখলে। প্রতীক্ষায় থাকলাম। আল্লাহ রাব্বুল আলাআমিন মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে জান্নাতবাসী করুন। তার রেখে যাওয়া কর্ম প্রেরণা এবং আদর্শে উজ্জীবিত করুক আমাদের সবাইকে।



  • লেখক যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি

প্রকল্পের শুরুতেই বড় ঘাপলা!

ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা পুনঃস্থাপন



সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার’ প্রকল্পের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, গণখাতে ক্রয় আইন (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট বা পিপিএ) এবং গণখাতে ক্রয় বিধি (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস বা পিপিআর) লংঘন করে প্রকল্পের কাজ সর্বোচ্চ দরে দেয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে।

বিধান অনুযায়ী, দরপত্র আহ্বানের আগে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটি অনুসরণ করা হয়নি। এমনকি প্রকল্প সমাপ্তির সময়সীমা ৩৩ মাস নির্ধারিত থাকলেও নিয়মবহির্ভূতভাবে তা বাড়িয়ে ৩৯ মাস করা হয়েছে। এতে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ১৪৭৩ কোটি টাকা।

শুধু তাই নয়, ঠিকাদার নিয়োগে ‘উন্মুক্ত পদ্ধতি’তে প্রাকযোগ্যতা যাচাই করে চারটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়। পরবর্তীকালে এ চারটি থেকে একটিকে বাছাই করতে ‘এক ধাপ দুই খাম’ পদ্ধতিতে পুনরায় কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব নিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পিপিআরের বিধান অনুযায়ী কোনো দরপত্রে দুই পদ্ধতি অনুসরণের কোনো সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে ‘দরপত্র আহ্বান ও মূল্যায়ন’ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয়নি- এ মর্মে লিখিতভাবে দুই দফা মতামত দিয়েছে ক্রয় আইন ও বিধির ব্যাখ্যাদানকারী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)। এরপরও এটি অনুমোদনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারের কতিপয় ব্যক্তিরা অনৈতিক সুবিধা বাগিয়ে নিতে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতেই এ সুপারিশ করা হয়েছে বলে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করা হয়েছে।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের বিষয়টি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে। ‘দরপত্রে বিসিআইসি-শিল্প মন্ত্রণালয়ের ক্রয় বিধি লঙ্ঘন, অনিয়ম ও জালিয়াতি; ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা প্রকল্পের দুর্নীতিতে প্রধানমন্ত্রী ও ক্রয় কমিটির সদস্যদের ফাঁসানোর ব্যবস্থা’ শিরোনামের ওই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ নির্দেশের পরপরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২৭ ফেব্র“য়ারি শিল্প সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহর কাছে চিঠি দিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগের ব্যাখা চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ক্রয় ও অর্থনৈতিক অধিশাখার উপসচিব মো. মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘অভিযোগের বিষয়গুলো যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানাতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।’

এছাড়া ওই প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানায় দুদক সূত্র। ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানা ৪৪ বছর এবং পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা ২৯ বছরের পুরনো। আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়ায় এ দুটি সার কারখানার উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বিবেচিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট শিল্প মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পলাশ ও ঘোড়াশাল সার কারখানা দুটির পুরনো যন্ত্রপাতির পরিবর্তে নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন করে দ্রুত নতুন সার কারখানা স্থাপনের নির্দেশ দেন। এরপর উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি করার উদ্যোগ নেয়া হয়।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, প্রকল্পটি আরও কম খরচে বাস্তবায়নের সুযোগ ছিল। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিসিআইসির মূল্যায়ন কমিটি এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অসৎ উদ্দেশ্যে ও অনৈতিক সুবিধা বাগিয়ে নিতে তারা একমাত্র বা সর্বোচ্চ দরদাতার মাধ্যমে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অনড় থাকেন। উন্মুক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাকযোগ্যতা যাচাই করে ১১টি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪টিকে যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কিন্তু নিয়মবহির্ভূতভাবে ‘এক ধাপ, দুই খাম’ পদ্ধতি অনুসরণ করে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এ পদ্ধতি অন্য তিন প্রতিষ্ঠানকে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিপিটিইউ সুস্পষ্টভাবে আপত্তি দিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিআইসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, ‘একই ক্রয়ে একটি পদ্ধতি চলমান থাকা অবস্থায় অন্য পদ্ধতি অনুসরণ করার সুযোগ নেই।

এক্ষেত্রে এক ধাপ, দুই খাম অনুসরণ করতে হলে, আগের প্রক্রিয়াটি (প্রাকযোগ্যতা যাচাইয়ে ব্যবহৃত উন্মুক্ত পদ্ধতি) বাতিলপূর্বক এক ধাপ, দুই খাম পদ্ধতি উল্লেখপূর্বক উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মতো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও বিধি-৬৮ খ, ৬৮গ, ৬৮ঙ অনুসরণে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।’ কিন্তু ঠিকাদার নিয়োগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এ সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি শিল্প মন্ত্রণালয়।

‘এক ধাপ দুই খাম’ পদ্ধতি হচ্ছে ঠিকাদার নির্বাচনের জন্য দুটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন। এর একটি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি এবং অপরটি হচ্ছে আর্থিক মূল্যায়ন কমিটি। কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির কাজ হচ্ছে- সক্ষমতার ভিত্তিতে প্রাকযোগ্যদের মধ্য থেকে একটি প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করবে। আর আর্থিক কমিটির কাজ হচ্ছে- কারিগরি কমিটির সুপারিশকৃত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে।

প্রকল্পের প্রাক-বাস্তবায়ন পর্যায়ে এসব অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে শিল্প সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ২৮ ফেব্র“য়ারি যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি এখনও প্রি-ম্যাচিউরড অবস্থায় আছে। এখনই এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। যদি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে থাকে, তাহলে কাজটি যারা করেছে (বিসিআইসির মূল্যায়ন কমিটি) তাদের প্রশ্ন করেন কোথায় কী হয়েছে?

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে সবকিছু করা হয়েছে বিসিআইসির মূল্যায়ন কমিটির এমন দাবি প্রসঙ্গে জিজ্ঞাস করা হলে শিল্প সচিব বলেন, ‘যদি কেউ বলে থাকেন, এটা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে করা হয়েছে, তাহলে সে নির্দেশনা কে দিয়েছে, তাদের বলতে বলুন। কেউ যদি আমার নাম বলে থাকে, তাহলে আমি আমার মতো করে জবাব দেব। এর বেশি কিছু বলব না। কিছু পেলে আপনারা ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখতে পারেন।’

অভিযোগের বিষয়গুলো যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশ প্রসঙ্গে জানতে ১২ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে শিল্পসচিবের দফতরে উপস্থিত হন যুগান্তরের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক। কিন্তু তিনি সাক্ষাৎ করেননি। তবে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেন, তিনি (শিল্প সচিব) এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলবেন না।

এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মহাপরিচালক মো. ফারুক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ঠিকাদার নিয়োগে আহূত দরপত্র ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি সঠিক হয়নি। বিসিআইসি ও শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সিপিটিইউর মতামত চাওয়া হয়েছিল। আমরা একাধিকবার এ সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলেছি যে, প্রক্রিয়াটি সঠিক হচ্ছে না। এরপরও তারা তাদের মতো করেই ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রী দ্রুতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর নিয়ম মেনে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে তো তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যুক্তিসঙ্গত নয়, এমন কিছু করতে বলেননি। দ্রুততার সঙ্গেই নিয়ম মেনে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যেত। বাস্তবতা হচ্ছে, এ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় তার ব্যত্যয় ঘটেছে, যা ক্রয় আইন ও ক্রয়বিধির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ নয়।

দুদকে দাখিল করা অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, প্রকল্পে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। অথচ ঠিকাদার নিয়োগে আহূত দরপত্র পদ্ধতিই সঠিকভাবে মানা হয়নি। এখানে পরিকল্পিতভাবে উপেক্ষা করা হয় দরপত্র আহ্বানের পদ্ধতি ও ক্রয় আইন। এ ব্যাপারে সিপিটিইউর দেয়া দুই দফা মতামতও উপেক্ষা করে প্রাথমিক দরপত্র আহ্বানের পর প্রাকযোগ্যদের মধ্য থেকে ‘এক ধাপ দুই খাম’ পদ্ধতিতে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে উন্মুক্ত দরপত্রে অবাধ প্রতিযোগিতা ক্ষু্ণ্ণ হয় এবং এ কার্যক্রমে স্বচ্ছতাও নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এসব প্রক্রিয়ায় জারিকৃত সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপনের কার্যপরিধি (টার্মস অব রেফারেন্স) সঠিকভাবে অনুসরণ করেনি। নিয়ম অনুযায়ী পিপিআরের বিধি ১৬-এর উপবিধি (৫ক) ও (৫খ) অনুযায়ী দরপত্র আহ্বানের আগে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এখানে সেটি করা হয়নি।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ দরে কাজ পাইয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যেই এসব অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। যার নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিসিআইসি ও নিয়ন্ত্রণাধীন শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। এই প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হলে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।

অনিয়মের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান শাহ মো. আমিনুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘বিসিআইসিতে আমি সদ্য যোগদান করেছি। আপনি আমাকে হাজারবার বললেও সঠিক উত্তর দিতে পারব না। কারণ এ প্রক্রিয়ায় ঘটেছে বা কী আছে, সেটি আমার নজরে নেই।’

তবে বিসিআইসির প্রকল্প পরিচালক ও ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনে দরপত্র আহ্বান ও উন্মুক্তকরণে গঠিত মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব রাজিউর রহমান মল্লিক দাবি করেন, কোথাও কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা নেই। সবকিছু নিয়ম-কানুন মেনেই করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই সবকিছু করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাকযোগ্য চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে চূড়ান্তভাবে একটিকে নির্বাচিত করতে টেকনিক্যাল (কারিগরি) ও ফিন্যান্সিয়াল (আর্থিক) নামে দুটি মূল্যায়ন কমিটি করা হয়েছে। বিসিআইসির দরপত্রের শর্তাবলীতে যেসব শর্ত ছিল ওই চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেবল একটি প্রতিষ্ঠানই সেসব শর্ত পূরণ করতে পেরেছে। যাকে আমরা নির্বাচিত করেছি।

শর্তের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমরা চেয়েছি স্টিম টারবাইন, কিন্তু অনির্বাচিতরা প্রস্তাব করেছে গ্যাস টারবাইনের। ফলে টেকনিক্যাল কমিটির বিবেচনায় ওই তিনটি উত্তীর্ণ হয়নি। একইভাবে যোগ্য হিসেবে বিবেচিত না হওয়ার কারণে তাদের আর্থিক প্রস্তাবও আর খোলা হয়নি। অন্যদিকে যে প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা আমাদের শর্তাবলী পূরণ করেছে। পরে আর্থিক মূল্যায়ন কমিটি তাদের জমাকৃত আর্থিক প্রস্তাব খুলে জানতে পারে, প্রকল্প ব্যয় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করেছে নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় দুটি সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসে পলাশের খালি জায়গায় এই নতুন সার কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এ সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হলে তা অনুমোদন করেন তিনি। মন্ত্রিসভা কমিটির ওই সভায় প্রকল্পটির দরপত্র ‘এক ধাপ, দুই খাম’ পদ্ধতিতে আহ্বানের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও তা উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

এরপরই বিসিআইসি প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগের উদ্যোগ নেয়। যার ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি এই প্রকল্পের জন্য দরদাতা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে প্রাকযোগ্যতা নির্ধারণের জন্য আগ্রহ প্রস্তাব (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট বা ইওআই) আহ্বান করা হয়। এতে ১১টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব জমা দেয়। উন্মুক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে এই ১১টির মধ্য থেকে চারটিকে বাছাই করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ১. চায়না হুয়াংজিও কন্ট্রাক্টিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (এইচকিউসি), চায়না অ্যান্ড টেকনিপ, ইতালি। ২. মিৎসুবিসি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লি., (এমএইচআই) জাপান ও সিসি-সেভেন জেভি। ৩. উহুয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লি., চায়না অ্যান্ড চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) এবং ৪. চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএনটিআইসি)-বেইজিং হুয়াফু ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লি. (এইচএফইসি) কনসোর্র্টিয়াম চায়না।

এরপর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত করতে ২০১৬ সালের ১ আগস্ট শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ‘এক ধাপ দুই খাম’ পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের (সিপিটিইউ) মতামত চেয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু সিপিটিইউর দু’দফা আপত্তিসহ উল্লিখিত মতামত উপেক্ষা করে সর্বোচ্চ দরদাতা জাপানের মিৎসুবিসি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে (এমএইচ আই) যোগ্য বিবেচিত করা হয়।

মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় যেসব বিচ্যুতি : দুদকে দাখিল করা অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, পিপিআরের বিধি ১৬-এর উপবিধি (৫ক) ও (৫খ) অনুযায়ী দরপত্র আহ্বানের আগে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা করা হয়নি। সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় সার কারখানা নির্মাণ ব্যয় ৮০ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেখানো হয়। কিন্তু এমএইচআই-সিসি-সেভেন জেভির সঙ্গে ১০৩ কোটি ডলারের ইপিসি চুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এতে নিয়ম অনুযায়ী দেশীয় মুদ্রা কত হবে- তা উল্লেখ করা হয়নি। সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় প্রকল্প বাস্তবায়নে যে ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে, তার চেয়ে ২১ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ১৮০০ কোটি টাকারও বেশি দরে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল দরপত্রে নির্ধারিত ৩৩ মাস থেকে ৬ মাস বেশি অর্থাৎ ৩৯ মাসের প্রকল্প কাজ শেষে হবে। এ ছয় মাস বেশি সময় ধরায় বিসিআইসির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪৭৩ কোটি টাকা। কিন্তু দরপত্র মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, উন্মুক্তকরণ কমিটির কার্যপরিধিতে পিপিআরের ৯৭ বিধি অনুসরণের মাধ্যমে চেকলিস্ট তৈরি করতে বলা হলেও কমিটির সদস্য সচিব মো. রাজিউর রহমান মল্লিক চার দরদাতার দর প্রস্তাব উন্মুক্ত করার সময় ৯৭ বিধির উপবিধি (৪)(ই) অনুযায়ী দরপত্র মূল্য উল্লেখ করেননি এবং তুলনামূলক দর বিবরণীও তৈরি করেননি। বরং দরদাতাদের আর্থিক প্রস্তাব না খুলে সেটি রেখে দিয়েছেন, যা ৯৭ বিধির লঙ্ঘন।

প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারিত আছে ৩৩ মাস। নির্বাচিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এমএইচআই-সিসি সেভেন (জেভি) তা ৪৪ মাসে বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। শিল্প সচিব মুহাম্মদ আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত ক্রয় প্রস্তাব বা সারসংক্ষেপে ঠিকাদারের প্রকল্পটি ৩৯ মাসে বাস্তবায়ন করার তথ্য দেয়া হয়েছে। পিপিআরের ৯৮ বিধি অনুযায়ী দরপত্রে নির্ধারিত বাস্তবায়নকাল পরিবর্তনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঠিকাদারের ৪৪ মাস বাস্তবায়নকাল দরপত্রের ৩৩ মাসের চাহিদা পূরণ করে না। অর্থাৎ শিল্প সচিব ক্রয় কমিটিকে মূল্যায়ন প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দেননি বলে দুদকে দাখিল করা অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়।

  • যুগান্তর/১৮-৩-১৮

নারী–শিশু নির্যাতন মামলা, কাঠগড়ায় পিপি ও পুলিশ

• সাক্ষীর খরা ও সমন্বয়ের অভাব। • তদন্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের দুর্বলতা। • খালাসের হরিলুট।


গুরুতর নির্যাতনের মামলায় সাজা না হওয়ার দৌড়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালগুলোর সরকারি কৌঁসুলিরা (পিপি) গায়ে গা লাগিয়ে পাল্লা দিচ্ছেন। পাল্লা দিচ্ছেন মহানগর আর জেলার থানাগুলোর তদন্তকারীরাও।

ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণ করে হত্যা, যৌতুকের জন্য হত্যা, সম্ভ্রমহানি করে আত্মহত্যায় প্ররোচনা আর যৌন পীড়ন—এই অপরাধগুলোয় জেলার পাঁচ ট্রাইব্যুনালের তিনটিতেই প্রথম আলোর দেখা মামলাগুলোতে সাজার হার ছিল ১-২ শতাংশ। অন্যদিকে ১৫ বছরে ২২টি থানার তদন্ত করা একটি মামলাতেও কারও সাজা হয়নি।

প্রথম আলো ২০০২ থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় আট হাজার মামলার পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান করেছে। পাঁচ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক নিবন্ধন খাতা অনুযায়ী তখন পর্যন্ত অর্ধেকের কিছু বেশি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছিল। সাজার হার সাকল্যে ৩ শতাংশের কম।

মামলা তদন্ত করে পুলিশ। সেই তদন্তের ভিত্তিতে মামলা এগিয়ে নেন ট্রাইব্যুনালের পিপিরা। অনেকটা ফুটবল খেলার মতো। পেছনের সারি বল গুছিয়ে না দিলে গোল করা কঠিন। আবার গোছানো বলটি সামনের সারি ঠিকমতো না ধরলে গোল হবে না।

ট্রাইব্যুনালে পুলিশের প্রতিবেদন গ্রহণের শুনানির সময় পিপি তদন্তের ভুলত্রুটি ঠিকঠাক করার আবেদন করতে পারেন। মামলা চলার সময় সাক্ষী হাজির করবে পুলিশ। কিন্তু সেটা নিশ্চিত করবেন পিপি।

খেলা দরকার সমন্বয় করে। অথচ এই যে সাজা না হওয়ার দৌড়, এ জন্য পুলিশ কর্মকর্তারা দুষছেন পিপিকে। পিপিরা দুষছেন পুলিশকে। দুই পক্ষই আবার দুষছে এজাহারকারী তথা ভুক্তভোগীকে।

প্রতিবেদকেরা আরও দেখেছেন, ভুক্তভোগীর অবস্থাটা মাঠের পাশে বসিয়ে রাখা খেলোয়াড়ের মতো। তাঁর মামলা, কিন্তু বাদী রাষ্ট্র তাঁকেই গৌণ করে দিচ্ছে। আর নেপথ্যে টাকাপয়সা লেনদেনের কথা এত বেশি শোনা গেছে যে তার ঝনঝনানি প্রায় কানে বাজে।

তদন্তের জের

পুলিশের দুজন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) তিন মাসের বেশি সময় ধরে তদন্ত করে মতিঝিল থানার ২০১৬ সালের একটি শিশু-ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামিকে ধরতে পারেননি। তাঁরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু পলাতক প্রধান আসামি বা তাঁর সহযোগীর নাম-ঠিকানা সঠিক না থাকায় তাঁদের আপাতত অব্যাহতি দেওয়া হোক।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি ১ নম্বর ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করার পর গত অক্টোবরে প্রথম আলোর প্রতিবেদক সহজেই ওই আসামির হদিস পেয়েছেন। তিনি স্থানীয় একটি ক্লাবে জুয়ার আখড়ায় কাজ করেন।

মামলার এজাহারকারী ছিলেন শিশুটির মা, পেশায় ঠিকা ঝি। টাইপ করা এজাহারে তিনি টিপসই দিয়েছেন। তাতে ঘটনাস্থলের ঠিকানা ভুল ছিল। মামলার প্রথম আইও ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির কাপড়চোপড় আলামত হিসেবে জব্দ করেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ‘রাসায়নিক পরীক্ষা’র নমুনা সংগ্রহের জন্য সেগুলো মহাখালীর পরীক্ষণাগারে পাঠানোর কথা লেখা আছে। ফলাফল লেখা নেই। আলামত এখন মতিঝিল থানার মালখানায়।

এজাহারের বিবরণ শুরু হয়েছে ঘটনার এক দিন আগে থেকে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দ্বিতীয় আইও সে তারিখকেই ঘটনার তারিখ বলে লিখেছেন। এজাহার আর পুলিশ প্রতিবেদন প্রায়ই গৎবাঁধা হয়। টুকটাক থেকে বড় অসংগতিও চোখে পড়ে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দের মতে, এজাহার হচ্ছে মামলার মেরুদণ্ড। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এজাহার ত্রুটিতে আরম্ভ হলে মামলার অনেক ত্রুটি শুরু হয়ে গেল।’ এজাহারকারী ভুলচুক করলে রুজুকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে সেটা ঠিকঠাক করে নিতে হয়।

শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছিল ঘটনার তিন দিনের মাথায়। তার যৌনাঙ্গ থেকে নেওয়া নমুনায় (ভ্যাজাইনাল সোয়াব) বীর্য মেলেনি। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা না করালে অথবা শরীর ধুয়ে ফেললে এ আলামত পাওয়ার কথাও না। ডাক্তারি প্রতিবেদন বলছে, মেয়েটির শরীরে যৌন সংসর্গের চিহ্ন আছে, তবে তা ‘সাম্প্রতিক নয়’।

যৌন সংসর্গে অভ্যস্ত নারীও কিন্তু ধর্ষণের শিকার হতে পারেন। মেয়েটির বয়স বলা হচ্ছে ‘১৩ বছরের মতো’। আইন অনুযায়ী শিশুর ক্ষেত্রে সম্মতি বা অসম্মতির প্রশ্নটিই অবান্তর।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার বলছেন, বছর তিনেক হলো সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে ডিএনএ পরীক্ষা হচ্ছে। তারপরও পুলিশের তদন্ত এখনো মূলত মৌখিক সাক্ষ্যভিত্তিক। তিনি বলেন, ‘আমাদের বৈজ্ঞানিক তদন্তের যে সক্ষমতা, সেটা এখনো অনেকখানি অর্জন করা বাকি আছে, করা দরকার।’

বেশির ভাগ মামলার তদন্ত থানার কর্মকর্তারাই করেন। রেজাউল হায়দার থানার তদন্ত কর্মকর্তাদের ওপর রোজকার কাজ থেকে শুরু করে ‘এক শটা’ কাজের চাপের কথা বলেছেন।

আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলছেন, ‘ভিআইপি’ দায়িত্বের কথা: ‘আমাদের পুলিশ আছে অনেক। কিন্তু তারা জনগণের নিরাপত্তার চেয়ে বিশেষগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যস্ত থাকে।’ ফলে একটানা একমনে তদন্ত করার সুযোগ হয় না।

আইওকে প্রতিদিনের তদন্তের বিবরণ সময় ধরে ‘কেস ডায়েরি’তে (সিডি) লিখতে হয়। বেশ কিছু সিডির বয়ান গৎবাঁধা, অসংগতিও আছে।

নাম-ঠিকানা না মেলা একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষত কেউ ভুয়া ঠিকানা দিয়ে জামিনে বেরিয়ে গেলে। ঘাটতি থাকে টাটকা টাটকা তথ্য-সাক্ষ্য আর প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহেও।

২০১২ সালের এপ্রিলে ঢালাই মিস্ত্রি বাবার ছোট্ট মেয়েটা মোহাম্মদপুরে বাসার সামনে খেলতে বেরিয়েছিল। সন্ধ্যায় ঘরের কাছেই তার লাশ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্ত বলে, মেয়েটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে। থানার চারজন কর্মকর্তা দেড় বছরেরও বেশি সময় তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, ঘটনা সত্য তবে অপরাধী সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

৪ নম্বর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে বর্ধিত তদন্ত করে সিআইডির পরিদর্শক মাসুদুর রহমানও গত বছর চূড়ান্ত প্রতিবেদন (সত্য) দেন। তিনি লেখেন, ঘটনাটি অনেক পুরোনো। মেয়েটির খেলার সঙ্গীসাথি বা প্রতিবেশীদের পাওয়া যায়নি। আসল অপরাধী চিহ্নিত করা বা কোনো তথ্য বের করা সম্ভব হয়নি।

এ প্রতিবেদনের ওপর শুনানি চলছে। মেয়েটির বাবার প্রশ্ন, থানা-পুলিশের কর্মকর্তারা তো ঘটনার পরপরই তদন্তে নেমেছিলেন, তাঁরা কী করলেন? তিনি বলেন, সে সময় পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা খাওয়ার গুঞ্জন ছিল।

মিথ্যা ও ভুল তথ্য
নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর ৪১ শতাংশে আসামিরা অব্যাহতি পেয়েছেন মূলত পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে। এজাহারের তথ্য ‘মিথ্যা’ বা ‘ভুল’ পাওয়ায় অনেক চূড়ান্ত প্রতিবেদন হয়েছে।

শাহবাগ থানার ২০১৪ সালের একটি ধর্ষণ মামলায় ছয় মাসের মধ্যে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অভিযোগটিকে মিথ্যা বলে। সেটায় ধর্ষণের অভিযোগকারী নারীর শরীরের আলামতের সঙ্গে আসামির ডিএনএ মেলেনি। তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, তিনি পূর্বশত্রুতার কারণে মিথ্যা অভিযোগ এনেছিলেন।

তবে এমন একাধিক তদন্ত নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। রামপুরা থানার পুলিশ ২০১৬ সালের একটি গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে বলেছিল, অভিযোগের তথ্য ভুল। থানা মামলা নিচ্ছে না বলে মামলাটি সরাসরি ট্রাইব্যুনালে করেছিলেন এক রিকশাওয়ালা বাবা। তাঁর কিশোরী মেয়ে যে সেলাই কারখানায় কাজ করত, প্রধান আসামি ছিলেন সেটার মালিক ও একজন কর্মচারী।

কারখানা থেকে মেয়েটির গলায় ফাঁস লাগানো লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। ময়নাতদন্ত বলে, এটা আত্মহত্যা। কিন্তু সুরতহাল প্রতিবেদনে তার যৌনাঙ্গে সামান্য বীর্য পাওয়ার কথা লেখা ছিল। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পুলিশ লিখেছে, এই কথা শুনে এবং ফাঁসির লাশ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় ‘কিছু কুচক্রী মহলের প্ররোচনায়’ বাবা মামলাটি করেছেন। এটা তাঁর তথ্যগত ভুল।

তবে সুরতহাল প্রতিবেদনের তথ্যটি ভুল ছিল কি না, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ নিয়ে কোনো তথ্য নেই। দুই প্রধান আসামির কারও ঠিকানা দেওয়া নেই, পিতার নাম ‘অজ্ঞাত’। ‘কেস ডায়েরি’তে দেখা যায়, প্রথম আইও ১ নম্বর আসামি কারখানার মালিকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তাঁকে গ্রেপ্তার করেননি। প্রতিবেদনটিতে এজাহারকারী নারাজি দিয়েছেন, শুনানি চলছে।

সাক্ষীর খরা ও সমন্বয়ের অভাব
ট্রাইব্যুনালের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন পিপি বলেছেন, অনেক সময় তদন্ত কর্মকর্তার অনভিজ্ঞতার কারণে আইনি চাহিদা মেটে না। মামলাগুলো প্রমাণ করা কঠিন হয়। কয়েকজন আইনজীবী বলেছেন, কখনো তদন্তের দুর্বলতা ইচ্ছাকৃত হয়।

মামলা বিচারের জন্য গেলে খালাসের প্রথম কারণ অবশ্য হয়ে দাঁড়ায় আদালতে সাক্ষী হাজির না করা। আইন বলছে, সাক্ষীকে হাজির করবেন তাঁর সর্বশেষ ঠিকানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। অভিযোগপত্রের তালিকা ধরে আদালত তাঁর কাছেই সাক্ষীর সমন পাঠান। পরের ধাপে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও তাঁর কাছে যায়।

তবে সাক্ষীকে সমন পাঠানোর জন্য তাগাদা দেওয়া এবং আদালতে সাক্ষী আর সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা পিপির দায়িত্ব। সুতরাং, পুলিশ আর পিপির মধ্যে সমন্বয়-যোগাযোগ চাই। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইনি সহায়তা কার্যক্রমের পরিচালক অ্যাডভোকেট মাকছুদা আখতার বলেছেন, তদন্ত কর্মকর্তার পরামর্শ-সহযোগিতাও লাগবে। এখানে একটা বড় ঘাটতি আছে।

তা ছাড়া ট্রাইব্যুনাল ৩-এর পিপি মাহমুদা আক্তার বলছেন, আইও, ফরেনসিক ডাক্তার আর প্রাথমিক জবানবন্দি গ্রহণকারী হাকিমসহ সরকারি সাক্ষীরা আদালতে খুব কম আসছেন।

যাকে বলে ২৬৫জ ধারা
নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর ৫৫ শতাংশেই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা খালাস পেয়েছেন। এর মধ্যে ১২ শতাংশ (৫০৩) মামলায় সাক্ষ্যপ্রমাণ শুনানির সুযোগই হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী হাজির না করায় ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫জ ধারায় বিচারকের আদেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা খালাস পেয়েছেন।

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগে করা মিরপুর থানার ১৯৯৬ সালের একটি মামলা ২০০৩ সালে ৫ নম্বর ট্রাইব্যুনালে যায়। মামলাটির নিষ্পত্তি হয় ২০১৫ সালের নভেম্বরে। ৯৭টি তারিখে সমন পাঠানোর পর রাষ্ট্রপক্ষ মাত্র একজন সাক্ষীকে হাজির করেছিল। তবে মামলার এজাহারকারী এবং কোনো সরকারি সাক্ষীই আসেননি।

এমন ২০টি নথি খুঁটিয়ে পড়ে দেখা যায়, একটিতেও আইও বা কোনো সরকারি কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেননি। আদতে ১৪টি মামলায় একজনও সাক্ষ্য দেননি; একটিতে তারিখ পড়েছিল ১১০টি। অন্তত ১৭টি মামলার আদেশ বলছে, সাক্ষী হাজির করতে ট্রাইব্যুনাল বছরের পর বছর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে গেছেন। কখনো পুলিশের বড় কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছেন। ফল হয়নি। এগুলো সব গণধর্ষণ আর ধর্ষণের মামলা।

তবে ২৬৫জ ধারা বলছে, রাষ্ট্রপক্ষের প্রমাণ দেখেশুনে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পরীক্ষা করে আদালত যদি নিশ্চিত হন যে অভিযোগের কোনো প্রমাণ নেই, তাহলে তিনি খালাসের আদেশ দিতে পারেন। প্রথম আলোর দেখা মামলাগুলোর অন্তত ১২টিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক অবস্থায় খালাস পেয়েছেন।

এই ধারার সব খালাস নিয়ম মেনে হচ্ছে কি না, তা নিয়ে আইনজীবী শাহদীন মালিক ও সাবেক পিপি আরফান উদ্দিন খানের উদ্বেগ আছে।

দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা এসব মামলার মধ্যে ২ নম্বর ট্রাইব্যুনালের একটি মামলা আছে, যেখানে ১০ মাসের মধ্যে মাত্র দুটি তারিখে কোনো সাক্ষী না আসায় খালাসের আদেশ হয়েছে।

খালাসের হরিলুট
১ হাজার ৮৪৮টি মামলায় (৪৩ শতাংশ) সাক্ষ্য-শুনানি হয়েছে বটে, কিন্তু পিপিরা সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি। সুতরাং, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা রায়ে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। আরও অল্প কিছু মামলায় আসামিরা বিবিধ নিষ্পত্তিতে ছাড়া পেয়েছেন।

খালাসের কয়েকটি রায়ে সাক্ষীর নিরপেক্ষতা বা প্রাসঙ্গিকতা এবং সাক্ষ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আলামতের ঘাটতির কথা এসেছে।

সবুজবাগ থানার ২০০৩ সালের একটি গণধর্ষণ মামলায় ৫ নম্বর ট্রাইব্যুনাল রায় দেন ২০১৪ সালে। অভিযোগ ছিল, এক দরিদ্র গৃহকর্মীকে (১৪) গভীর রাতে ঘরের বেড়া কেটে তুলে নিয়ে গিয়ে দুজন ধর্ষণ করেন। দুজনই খালাস পান।

রায়ে বিচারক বলেন, অপহরণের প্রত্যক্ষদর্শীসহ গুরুত্বপূর্ণ দুজন সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ উপস্থাপন করেনি। মেয়েটির যৌনাঙ্গ থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষাকারী ডাক্তারকে বা তাঁর রিপোর্টটি উপস্থাপন করা হয়নি। সাক্ষ্যদাতা ডাক্তারের রিপোর্টে ধর্ষণ প্রমাণিত হয়নি। অপহরণের গুরুত্বপূর্ণ একটি আলামত পুলিশ জব্দ করেনি।

সাক্ষীর গরহাজিরা
পিপিদের ঢালাও অভিযোগ, পুলিশ সাক্ষী হাজির না করাতেই খালাসের রায় হচ্ছে। আর অন্তত ১০টি থানার ওসি বলেছেন, আদালতের সমন তাঁরা ফেলে রাখেন না। কিন্তু ঢাকার বেশির ভাগ মানুষ ভাসমান। বিচার শুরু হলে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে তাঁদের থানায় কত মামলায় সাক্ষীর অভাবে খালাস হয়েছে, সে হিসাব তাঁরা রাখেন না।

ওসিরা বলেন, এজাহারকারীসহ সাধারণ মানুষ সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী হয় না। নিজের খরচে আসতে হয়, সারা দিন থাকতে হয়। বসার কোনো জায়গা নেই। তিনজন ওসি বলেছেন, তাঁরা ঠিকমতো সমন পান না। পুলিশ সাক্ষীরা অধিকাংশই বদলি হয়ে যান। নানা রকম কাজের চাপ থাকে।

কখনো হয়তো বিচারক থাকেন না, ফিরে যেতে হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সব কটি ধারার অপরাধ মিলে একেক ট্রাইব্যুনালের হাতে বেশুমার মামলা। এই মাসের ৪ তারিখে যেমন প্রতি ট্রাইব্যুনালের দৈনন্দিন কার্যতালিকায় গড়ে মোট ৪৫টি মামলার শুনানি ছিল, যার মধ্যে সাক্ষ্য-শুনানি ছিল ১৮টি।

পুলিশ কর্মকর্তা ও পিপিরা আরও বলেছেন, সাক্ষী না আসার একটা বড় কারণ দুই পক্ষের মধ্যে আপস হয়ে যাওয়া।

এদিকে মহিলা পরিষদের আইনজীবী মাকছুদা বলছেন, না পুলিশ, না পিপি, কেউই এজাহারকারীকে আমলে নেন না। তাঁকে ডাক্তারি রিপোর্ট দেওয়া হয় না। এজাহার, অভিযোগপত্র—এসবই নিজেকে টাকা দিয়ে তুলতে হয়। এতে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন।

খিলগাঁও থানায় ২০১৩ সালে করা যৌতুকের জন্য হত্যার একটি মামলার শুনানি চলছে ৪ নম্বর ট্রাইব্যুনালে। মামলাটির এজাহারকারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে সাক্ষীদের আদালতে আনছি আর ফিরে যাচ্ছি। কবে বিচার শেষ হবে, জানি না।’

কাফরুল থানায় ২০১৪ সালে করা একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার চলছে ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালে।

মেয়েটির ভাই মামলার এজাহারকারী। তিনি বলেন, প্রথম দিকে সরকারি কৌঁসুলি কোনো খবরই দিতেন না। শুধু মামলার তারিখ জানার জন্য তিনি একজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন।

অ্যাডভোকেট মাকছুদা, কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আর ভুক্তভোগী অনেকে বলছেন, সাক্ষী এলেও অনেক সময় পিপিরা হাজিরা নেন না। আসামিপক্ষের প্রভাব আর লেনদেনের একটা বিষয় থাকে।

পিপির সম্মানী দিনে ৫০০ টাকা, আর সহকারী পিপির (এপিপি) ২৫০ টাকা। তা-ও তিন বছরের টাকা বকেয়া পড়ে আছে। ঢাকার দায়রা আদালতের প্রধান পিপি খন্দকার আবদুল মান্নান বলেন, সম্মানীটা বাড়লে তাঁরা একটা মামলা নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন।

আর সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলছেন, ‘বেশির ভাগ পিপি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিয়োগ পান। যাঁরা দক্ষ-যোগ্য আইনজীবী থাকেন, তাঁরা নিয়োগ পান না।’ দায়বদ্ধতা থাকে না।

আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিকও মনে করেন, এভাবে পিপিদের নিয়োগ একটা গোড়ার সমস্যা। তাঁর কথায়, ‘এই পিপি-ব্যবস্থা অপরাধীদের জন্য স্বর্গরাজ্য। এতে সবচেয়ে লাভবান হচ্ছে অপরাধীরা।’


  • Prothom Alo/ 18-3-18

'Save family land' now his struggle

Police say AL men attempted to evict 'save Buriganga' campaigner from his house; two arrested


Police have found two Awami League men and their associates involved in the abduction of green activist Mihir Biswas in the capital's Shyamoli on March 3, investigators said yesterday.

It was an attempt to grab 8.5-katha land on which Mihir's house was built, they added.

Some followers of Towfik Ur Reza Mishul and Kamran Shahid Prince Mohabbat abducted Mihir, member secretary of Buriganga Bachao Andolon, along with his wife, aunt, friend, caretaker and house help at gunpoint, according to police. 

Towfik, vice-president of Mohammadpur thana AL, has been arrested while police are looking for Kamran, health affairs secretary of central Jubo League.

The gang also looted valuables from the house and took away furniture on a pick-up van, officials said.


All the victims were released after about four hours of the abduction, police said following the arrest of Towfik and Jubo league activist Rajon in Mohammadpur two days after the incident.

Interrogating the two, police came to know about Kamran.

“We have conducted a couple of drives to arrest Kamran at his Banani house but he managed to flee,” Biplob Kumar Sarker, deputy commissioner of Tejgaon Division Police, told The Daily Star, on Friday.

The Jubo League, AL's youth front, also found involvement of Kamran in the alleged land grabbing attempt, said organisation sources.

In a press release issued on March 13, Jubo League's Office Secretary Kazi Anisur Rahman said Kamran's acts go against the policy of the government and harm the public interest, and that's why he was suspended from the party.

Contacted, Sadek Khan, secretary of Dhaka North AL, said police will deal the legal issues while "we will take organisational action against the offenders after our own investigation”.

DC Biplob said they have primarily found that three to four people acted as masterminds behind the incident that centred on a conflict over land. “We are now conducting drives to arrest them.”

Biplob did not disclose the identities of the masterminds.

But officials in Tejgaon Division Police said all those behind the kidnapping are influential people and have connections with the ruling party. They requested anonymity as the investigation is not over yet.

Visiting the house on Road No 2 in Shyamoli, this correspondent on Thursday saw three policemen deployed at the main gate of house 11-Ga and some four CCTV cameras installed around the compound. There are a number of tin-shed rooms inside the boundary wall.

In one portion, Mihir lives with his wife Sanchita Barman, son Samurdro, aunt Parul Rani Biswas and house help Kabita. In another, caretaker Sharmin Akter lives with her husband Dulal and two children.

Mihir said he and his friend Golam Nabi Manju were in the drawing room on March 3. Around 7:30am, the doorbell rang and Kabita opened the door.

"Suddenly, a group of people aged about 26 to 40 burst into the house. Three of them held my hands and legs while another grabbed my friend by the neck.”

At gunpoint, they forced Mihir and Manju into an ambulance parked in front of the main gate. “The gang also got my wife, aunt, house help and caretaker inside the ambulance,” he told this newspaper. 

Mihir said the men drove the ambulance through different parts of Mohammadpur. “When we asked about the reason behind picking us up, they only said they did it as instructed but they would release us soon.”

As his aunt, aged about 80, fell sick and had difficulties breathing, Mihir requested the abductors to take her to hospital. “The gang members then talked to someone over the phone about it.”  

The assailants first dropped caretaker Sharmin on Babar Road of Mohammadpur and after driving about one to two hours, released others on the same road around 11:30am, he said.

Back home, he found all his furniture was taken away.

Mihir alleged that Md Nuruzzaman, now living in the UK, has a feud with his elder brother Sudangshu Chandra Biswas regarding the 8.5-katha land.

Sudangshu, who lives on Iqbal Road, brought the land in 1995 and a trial is going on at a Dhaka court over the land ownership for the last eight years, he said, alleging that Nuruzzaman is behind the abduction.

Mihir filed a case with Sher-e-Bangla Nagar Police Station against Nuruzzaman and 25 others unidentified people over the abduction and looting.

Police recovered all the furniture abandoned on a school ground on Iqbal Road on March 5. According to local security guards, the furniture was there for two days.  

Liakat Mia, a security guard on Shyamoli Road No 2, said he saw an ambulance at Mihir's house around 7:30am on March 3. People in the ambulance said that they came to take a sick person to hospital, and it left after about 10 minutes, he said.

Moments later, a pick-up van came to the house with some labourers who said they have a contract to move the belongings. The van came twice by 10:00am, said Liakat.

After the van took away the furniture, police rushed to the house on information from locals, said officials.  

Sources added that investigators suspect someone had given contract to the ruling party men to evict the family from the land.

“We are analysing and taking into consideration all the aspects,” said DC Biplob.

  • The Daily Star/18-3-18