Search

Friday, March 23, 2018

ঢাকা ডুববে, অচল হবে-দেখবে সবাই


এ কে এম জাকারিয়া


                    স্বাভাবিক বর্ষার ধকল নেওয়ার ক্ষমতা ঢাকার নেই
বর্ষা শুরু হলো বলে। স্বাভাবিক প্রকৃতির নিয়মে এপ্রিলে কালবৈশাখী দিয়ে যে ঝড়-বাদলের শুরু, মে মাসে তা রূপ নেয় বর্ষায়। বর্ষাকে বরণ করতে হলে কিছু প্রস্তুতি লাগে, এবার ঢাকায় নাকি সেই প্রস্তুতি নেই। ফলে স্বাভাবিক বর্ষা মানেই ঢাকা ডুববে। প্রথম আলো শিরোনাম করেছে, ‘ডুববে ঢাকা, দেখবে ওয়াসা। কারণ, প্রতিবছর বর্ষার আগে ওয়াসা নর্দমা পরিষ্কারের কাজটি শুরু করে জানুয়ারি মাস থেকে, এবার অর্থের অভাবে সেই কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। জলাবদ্ধতা সামাল দিতে এ বছর ওয়াসার দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। সেই দুটিও বাদ গেছে। এই যখন অবস্থা, তখন ঢাকা ডুবলে শুধু ওয়াসা কেন, আমাদের সবাইকেই তা দেখতে হবে। ডুবে যাওয়া ঢাকায় দুর্ভোগের সবটাই আমাদের পোহাতে হবে।

ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তাই এবারের বর্ষায় ঢাকাবাসীকে প্রকৃতির ওপর ভরসা রাখতে বলেছেন। বৃষ্টি বেশি হলে এবার নাকি রক্ষা নেই, ভয়াবহ হতে পারে জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা দূর করার উদ্যোগ ও উদ্যমে সরকারের ঘাটতিতে হতাশ নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘এখন দোয়া করতে হবে যাতে গত বছরের মতো একসঙ্গে এত বৃষ্টি না হয়।সৃষ্টিকর্তা ঢাকাবাসীর ডাকে সাড়া দিয়ে বৃষ্টিপাত কমিয়ে দিলে তবেই রক্ষা! দুর্ভোগ থেকে মুক্তির আর তো কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না।

তবে স্রষ্টার কাছে ঢাকায় কতটুকু বৃষ্টি আমরা চাইব বা চাইব না, তার একটি হিসাব-নিকাশ জরুরি। তা না হলে আমাদের চাওয়ায় ভুল হয়ে যেতে পারে। আসুন গত বছরের বর্ষায় আমাদের কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা মনে করার চেষ্টা করি। আর তখন বৃষ্টিপাত কেমন হয়েছিল, তারও খোঁজখবর নিই। গত বছর বর্ষা মৌসুমে ঢাকায় এক দফা অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছিল এবং সেটা হয়েছিল নিম্নচাপের প্রভাবে। তবে বর্ষা মৌসুমে এক বা দুই দফা এ ধরনের অতি ভারী বৃষ্টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিভিন্ন মাত্রার বৃষ্টিপাত নির্ধারণ করা হয় কিছু হিসাব মেনে। আবহাওয়া বিভাগ ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে বৃষ্টির ধরন নির্ধারণ করে। এ সময়ে ১০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১০ থেকে ১৯ মিলিমিটার পর্যন্ত মাঝারি, ২০ থেকে ৪৩ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিকে মাঝারি মাত্রার ভারী, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিকে ভারী এবং এর চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতকে অতি ভারী বৃষ্টি হিসেবে ধরা হয়। গত বছর আগস্টের ২২ তারিখ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে ঢাকার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। এর ঠিক দুই মাস পর নিম্নচাপের প্রভাবে ঢাকায় ২৪ ঘণ্টায় ১৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত একই অবস্থা তৈরি করেছিল। এই দুটির বাইরে গত বছর মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিতেই বেশ কয়েক দফা ঢাকা ডুবে গিয়ে অচল হয়ে পড়েছিল।

আমাদের বর্ষা মৌসুমের স্বাভাবিক মেয়াদ মে থেকে আগস্ট-এই চার মাস। এই সময়ের মধ্যে হালকা, মাঝারি, মাঝারি থেকে ভারী আবার কখনো ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। মৌসুম জুড়ে সব মাত্রার বৃষ্টি মিলিয়েই একটি স্বাভাবিক বর্ষা মৌসুম। আবার একটি বা দুটি নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ও বাংলাদেশে স্বাভাবিক। অক্টোবর, নভেম্বরেও সে কারণে কখনো টানা ও ভারী বর্ষণ হয়। এবারের বর্ষায় ডুবে যাওয়া থেকে ঢাকা নগরীকে রক্ষা করতে হলে বা জনগণ যদি সেই দুর্ভোগ পোহাতে না চায়, তবে অনেকটা বৃষ্টিহীন বর্ষার জন্যই স্রষ্টার কাছে হাত তুলতে হবে। স্বাভাবিক বর্ষার ধকল নেওয়ার ক্ষমতা ঢাকার নেই।

এখন দয়াময় স্রষ্টা যদি আমাদের ডাকে সারা দিয়ে সত্যিই বৃষ্টি কমিয়ে দেন, তাহলে ঢাকা না হয় ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচল এবং আমাদের দুর্ভোগও না হয় কমল, কিন্তু ঢাকাবাসী বাঁচবে তো? বৃষ্টি গ্রীষ্মের টানা গরম থেকে আমাদের স্বস্তি দেয়। শীত মৌসুম শেষ হতে হতে ঢাকা যে মাত্রায় ধূলিধূসর হয়ে ওঠে, বাতাস যে পরিমাণ দূষিত হয়ে পড়ে, তখন বৃষ্টি আসে আশীর্বাদ হয়ে। বৃষ্টি ঢাকার বায়ুদূষণ কমায়। ঢাকার গাছগুলো সবুজ হওয়ার জন্য বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকে। ঢাকার বৃষ্টি শহরটির চারপাশের দূষণে কালো হয়ে যাওয়া নদীগুলোকে প্রাণ দেয়। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় বৃষ্টিতে বিরতি মানেই এসির ব্যবহার বেড়ে যাওয়া ও বিদ্যুতে ঘাটতি এবং ঢাকার পানির স্তর নেমে যাওয়া, লোডশেডিংয়ের কারণে ওয়াসার পাম্প বন্ধ থাকা ও পানিসংকট। বৃষ্টিহীন একটি বর্ষা কি আমরা ঢাকাবাসী আসলেই চাই?

আমরা স্বাভাবিক বর্ষা চাই। যে বর্ষায় হালকা, মাঝারি, ভারী ও অতি ভারী সব ধরনের বৃষ্টিপাতই হবে। কিন্তু আমরা চাই, স্বাভাবিক বর্ষায় ঢাকা ডুববে না, আমরা দুর্ভোগে পড়ব না। এমন হওয়ার কথা ছিল না। কারণ, ঢাকা হচ্ছে চারদিকে নদী ও শাখা-প্রশাখার মতো ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য খালের এক দুর্লভ শহর। সমস্যা হচ্ছে, শহরের এই অনন্য বৈশিষ্ট্যকে ধরে রাখা যায়নি। বছরের পর বছর ধরে তা ধ্বংস করা হয়েছে। যাদের এসব দেখভাল ও রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল এবং আছে, তারা ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার প্রমাণ রেখে চলেছে। সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠানের যুক্ততা রয়েছে এর সঙ্গে। ফলে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে কারোরই আসলে কোনো দায় নেই।

১৯৯৬ সালের পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন আইন অনুযায়ী, ঢাকা শহরের পানিনিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। ফলে নর্দমাগুলো সচল রাখা ও পরিষ্কার করার দায়িত্ব ওয়াসার। এই নর্দমাগুলো বানানোর দায়িত্ব অবশ্য সিটি করপোরেশনের। ২০০০ সালের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড আইন অনুযায়ী, ঢাকার নদী, খাল ও জলাভূমি সংরক্ষণের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবোর। অন্যদিকে ঢাকার সব খালের মালিক ঢাকা জেলা প্রশাসন। এই অবস্থায় নর্দমা-খালও পরিষ্কার থাকছে না, খাল-জলাভূমিকে দখলমুক্তও রাখা যাচ্ছে না। যেকোনো সমস্যার জন্য এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায়ী করলেই তো হলো। ঢাকা ওয়াসা আর দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগই শোনা গেল দুই-তিন বছর ধরে। কাজের কাজ কি কিছু হলো!

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী গত বছর বলেছিলেন, ‘আমি প্রমিজ করছি, সামনের বছর থেকে আর এসব (জলাবদ্ধতা) দেখবেন না।আমরা জেনে গেছি যে এই প্রমিজ’-এর কোনো ফল এ বছর আমরা দেখব না। নর্দমা পরিষ্কার করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বরাদ্দ বাড়ায়নি। এ বছর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কারণ, অর্থের অভাবে ওয়াসা আপাতত নর্দমা পরিষ্কারের কাজে হাত গুটিয়ে রেখেছে। কবে অর্থ মিলবে আর কবে কাজ শুরু হবে! কথা ছিল, ঢাকা ওয়াসা এ বছর জমি অধিগ্রহণসহ পাঁচটি খাল পুনঃখনন ও কল্যাণপুর পাম্প স্টেশনে একটি রেগুলেটরি পুকুর তৈরি করবে। মন্ত্রণালয় সেই প্রকল্প একনেক থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর পেছনে নাকি রয়েছে ওয়াসা ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মান-অভিমান। বুঝলাম ঢাকার নাগরিকেরা আসলে কত অসহায়, কয়েকজন কর্মকর্তার মান-অভিমানের কাছে তাদের ভালো-মন্দের বিষয়টি কতটা তুচ্ছ!

নাগরিকদের দুর্ভোগ না হয় আমলারা বিবেচনায় নিলেন না। কিন্তু জলাবদ্ধতার আর্থিক ক্ষতির দিকটি? বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালের নভেম্বরে এক সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ২০১৪ সাল থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতি হবে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এটা স্বাভাবিক বর্ষার হিসাব। আর আবহাওয়া উল্টাপাল্টা আচরণ করলে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যা ঘটা অস্বাভাবিক নয়, এই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। জলাবদ্ধতা দূর করতে অর্থ খরচ, সেদিক থেকে দেখলে লাভজনক বিনিয়োগ। কারণ, এই বিনিয়োগ দেশের অর্থের ক্ষতি কমাবে।

ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার দিকে নজর দিতে হলে কী কী করতে হবে বা করা উচিত, তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের তরফে পরামর্শেরও অভাব নেই। সমস্যা হলো এ নিয়ে সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরি করা, ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন মেয়াদে তা বাস্তবায়ন করা এবং এ জন্য বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করা অথবা একটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা। এখানেও সেই পুরোনো প্রশ্ন-ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে দায়িত্ব নিয়ে এই কাজ করবে কে? দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, পাউবো, জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়-জলাবদ্ধতা নিয়ে সবারই যখন নানা দায়িত্ব, তখন কাজটি করার আসলে কেউ নেই। জলাবদ্ধতা ঢাকার অগুনতি সমস্যার একটি। এগুলোর কোনোটির দিকেই নজর দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, ঢাকাকে দেখভাল করার একক দায় কারও নেই। ৭ মন্ত্রণালয় ও ৫৪ সেবা সংস্থার জগাখিচুড়ি দিয়ে যে ঢাকার সেবা-শুশ্রূষা নিশ্চিত করা যাবে না, এই বাস্তবতা আমাদের নীতিনির্ধারকেরা কি আদৌ কোনো দিন বুঝবেন? ফলে ঢাকা ডুববে, অচল হবে, এটাই তো আমাদের নিয়তি।

  • সৌজন্যে - প্রথম আলো/ মার্চ ২৩, ২০১৮।  


ঢাকা মেডিকেলের চার কোটি টাকা গায়েব

নজরুল ইসলাম


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁরা রোগীদের কাছ থেকে ফরম ও টিকিট বিক্রি, ক্যানটিন ভাড়া ও হাসপাতালের কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের বিদ্যুৎ বিলের টাকাসহ বিভিন্ন খাতের টাকা হাসপাতালের ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি।


এই তিনজন হলেন হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এম এম আরিফুর রহমান, অফিস সহকারী কাম ক্যাশিয়ার মো. আলমগীর হোসেন ও জরুরি বিভাগের টিকিট ক্লার্ক (ইনচার্জ) আজিজুল হক ভূঁইয়া। টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ আজিজুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। কর্তৃপক্ষ আরিফুর রহমানকে তিন দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে।

হাসপাতালের নথিপত্র দেখে এবং কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরিফুর রহমান, আলমগীর হোসেন ও আজিজুল হক ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় করা টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি। আরিফুর আগে হাসপাতালের স্টোরকিপার ও আলমগীর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (এমএলএসএস) ছিলেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে আরিফুর হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এবং আলমগীর অফিস সহকারী কাম ক্যাশিয়ার হন। তিনজনই রোগীর কাছ থেকে ফরম ও টিকিট বিক্রির টাকা, ক্যানটিন ভাড়ার টাকা, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি কেনায় ঠিকাদারদের কাছ থেকে কেটে রাখা আয়করের টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। তাঁরা হাসপাতালের কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের বিদ্যুৎ বিলের টাকাও ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি।

আরিফুর রহমানের বাড়ি ঢাকা জেলার ধামরাই পৌরসভার মোকামটোলায়। সেখানে গেলে স্থানীয় দোকানদার জাহাঙ্গীর আলম ৮১ মোকামটোলার পাঁচতলার নির্মাণাধীন বাড়িটি দেখিয়ে বলেন, এটি আরিফুরের বাড়ি। বাড়িটির একতলা নির্মাণ শেষ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এলাকায় তাঁর মালিকানায় দুটি দোকান আছে।

২০১৭ সালের ৯ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আরিফুর রহমানকে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, ‘কার্যপরিধি অনুযায়ী অফিসের সব বিল তৈরিসহ অডিট আপত্তির জবাব ও নিষ্পত্তির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু আপনি তা করেননি। এতে প্রমাণিত হয়, আপনি নিজ দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করেছেন, যা সরকারি চাকরিতে সরকারি বিধিমালা পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগের বিষয়ে আরিফুর রহমান দাবি করেন, ‘আমি হাসপাতালের টাকা আত্মসাৎ করিনি। আমার পেছনে শত্রু ছিল। তারাই আমার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেছে।

হাসপাতালের ক্যাশিয়ার আলমগীর হোসেন দুদকের করা তদন্তের বিষয়ে জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘দুদক আমাকে ডাকেনি। হাসপাতালের টাকা আত্মসাতের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে টিকিট ক্লার্ক আজিজুল হককে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যোগ দেওয়ার আগের ঘটনা এটি। অভিযোগের বিষয়ে জানি আমি। ঘটনাটি দুদক তদন্ত করছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে আরিফুরসহ সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


দুদক সূত্র বলেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আরিফুর রহমানসহ তিন কর্মীর বিরুদ্ধে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার তথ্য পাওয়া গেছে।

সৌজন্যে - প্রথম আলো/মার্চ ২৩২০১৮ 

Thursday, March 22, 2018

গার্ডিয়ানের রিপোর্ট - 'ঢাকা অকার্যকর মেগা সিটি'


বর্ষা মৌসুম সমাগত। বাংলাদেশে এ সময় টানা বৃষ্টি হয়। এক মাসে কয়েকবার পানিতে নিমজ্জিত হয় ঢাকা শহর। ধারণক্ষমতার চেয়ে পানির চাপ বেশি থাকায় ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যায়। শহরের নিম্ন এলাকা পানিতে এমনভাবে সয়লাব থাকে যে, দেখে মনে হয় সেটা একটি বাথটাব। এ নিয়ে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো আক্ষেপ করে শিরোনাম করে ‘ঢাকা আন্ডারওয়াটার এগেইন’ (আবারো পানির নিচে ঢাকা)।

রাস্তার পাশে এ সময় নেমে পড়েন পয়ঃপ্রণালী পরিষ্কারকারীরা। তাদের কেউ কেউ ম্যানহোলের ভেতর বাঁশের লাঠি ঢুকিয়ে দিয়ে চেষ্টা করেন পানি চলাচলের পথ ঠিক করতে। অন্যরা তো অর্ধনগ্ন হয়ে তরল গাদে নেমে পড়েন। খালি হাতে তারা সেখান থেকে তুলে আনেন থলথলে আঁঠালো কাদার মতো ময়লা। গত বছর গলা পরিমাণ ময়লার ভেতর এসব শ্রমিক ডুবে কাজ করার ছবি ভাইরাল হয় বিশ্বজুড়ে। তখন এ কাজটিকে বিশ্বমিডিয়া বিশ্বের সবচেয়ে জঘন্য কাজ আখ্যায়িত করে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে দীর্ঘ এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছে লন্ডনের অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান। 


ইউএন হ্যাবিটেটের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ঢাকা। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করছে ৪৪ হাজার ৫০০ মানুষ। তার ওপর প্রতিদিন গ্রাম থেকে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এমন চাপের মুখে আক্ষরিক অর্থেই রাজধানী শহর ভেঙে পড়ছে। একই অবস্থা হচ্ছে পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালীর। এগুলো পরিষ্কার করেন যেসব শ্রমিক তাদের মাসিক আয় প্রায় ২২৫ পাউন্ড। তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে এসব পরিষ্কার করেন। আর বসবাস করেন নাজুক অবকাঠামোতে। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাচ্ছন্দ্যে কোনো স্থানে যে পরিমাণ মানুষ বাস করতে পারেন তার চেয়ে বেশি মানুষ যদি বসবাস করেন তাহলে তাকে ঘনবসতিপূর্ণ বা ‘ওভারপপুলেশন’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই হিসাবে ঢাকা হতে পারে পাঠ্যবইয়ের উদাহরণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের প্রজেক্ট পরিচালক প্রফেসর নুরুন নবী বলেছেন, বিশ্বে ঢাকার চেয়ে আকারে বড় অনেক শহর আছে। কিন্তু আপনি যদি ঢাকা শহরের চরিত্র ও প্রকৃতি সম্পর্কে কথা বলেন, সেক্ষেত্রে ঢাকা হলো দ্রুত বেড়ে ওঠা এক মেগাসিটি। এটা হলো জনসংখ্যার দিক থেকে।


গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজন পরিচ্ছন্নকর্মীর বিষয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়। তাদের একজন সুজন লাল রাউত। তিনি কয়েক দশক ধরে ঢাকায় সুয়ারেজ লাইন পরিষ্কার করেন। এ সময়ে অনেক বিপর্যয় দেখেছেন তিনি। তার মধ্যে ২০০৮ সালের ট্র্যাজেডি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। ওই সময় যথারীতি ভারি বৃষ্টিতে রাস্তা ডুবে যায়। তখন রামপুরায় আটকে থাকা পানি চলাচলের জন্য সুয়ারেজ লাইন পরিষ্কার করার দায়িত্ব দেয়া হয় সাত শ্রমিককে। সাধারণত শ্রমিকরা এসব কাজ করতে যখন নামেন তখন তাদের শরীর উপর থেকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়, যাতে পানির তীব্র স্রোত তাদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে না পারে বা ডুবে না যান। কিন্তু ওই গ্রুপটি কাজে ছিল নতুন। সুজন বলেন, তারা জানতেন না কীভাবে বিপদ মোকাবিলা করতে হয়। ওই পরিস্থিতিতে কীভাবে কাজ করতে হয়। সুয়ারেজের পানিতে ডুবে যান ওই শ্রমিকরা। পথযাত্রীরা হাতুড়ি আর শাবল দিয়ে রাস্তা খুঁড়ে তাদের তিন শ্রমিককে মৃত অবস্থায় বের করে আনেন। আরো চারজনকে পাওয়া যায় গুরুতর আহত অবস্থায়। তাদের মধ্যে একজন পরবর্তীতে হাসপাতালে মারা যান। সুজন বলেন, ওই দুর্ঘটনা আমাদের ভেতরে ভয় ঢুকিয়ে দেয়। কয়েক মাস ধরে আমরা ড্রেনের ভেতর তাকাতেও ভয় পেতাম। সুজন জানান, বাংলাদেশ সরকার ঢাকা শহর সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার চেষ্টা করছে। তবে এখন পর্যন্ত সে কাজে প্রত্যাশানুযায়ী সফল হয়ে ওঠতে পারেনি।

এই কাজ করতে আমি বাধ্য: বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম। ড্রেন বা নর্দমা পরিষ্কারকদের বেশিরভাগও মুসলিম। কিন্তু সুজন একজন হিন্দু। তার ওপর তিনি একজন দলিত। পুরো এশিয়াজুড়ে তারা ‘অচ্ছুৎ’ হিসেবেই পরিচিত। এই সমপ্রদায়ের বেশিরভাগকেই দাসোচিত কাজ করতে দেখা যায়। এমনিতে তাদের অবমাননা করে ‘মেথর’ (যারা বিষ্ঠা পরিষ্কার করে) বলেও ডাকা হয়। ৪০ বছর বয়সী সুজন জানান, তার পূর্বপুরুষরাও তার মতো একই কাজ করতো। একই ধারায় তিনিও এই কাজ করে চলেছেন। তিনি বলেন, আমার আর কোনো কাজ করার দক্ষতা নেই। আমাকে একটা পরিবার সামলাতে হয়। সন্তানদের শিক্ষার দিক দেখতে হয়। মাস শেষে বাড়ি ভাড়াসহ বিল পরিশোধ করতে হয়। আমি জানি যে, এই কাজ আমার জন্য অসম্মান ও মর্যাদাহানি বয়ে আনে। কিন্তু, আমি এই কাজ করতে বাধ্য।

এই কাজে কৃতজ্ঞতা নেই, আছে ঝুঁকি। সমপ্রতি একটি মলশোধনী ট্যাংক পরিষ্কার করার সময় ট্যাংকটি বিস্ফোরিত হয়ে সুজনের এক বন্ধু নিহত হয়। তাদেরকে কাজ করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করা হয় না। সুজন বলেন, আমাদেরকে শুধু কাজ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তাই আমরা লোকজন ঠিক করে যত দ্রুত সম্ভব তা শেষ করার চেষ্টা করি। এসবের পাশাপাশি স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকি তো আছেই। সুজন বলেন, নর্দমাগুলো পচা, বিষাক্ত ময়লায় ভর্তি থাকে। সেগুলো পরিষ্কার করতে গেলে স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা ১০০ ভাগ। বিশেষ করে, চামড়াজনিত সমস্যায় ভুগতে হয় পরিষ্কারকারীদের। বেশিরভাগ সময় তারা এই সমস্যা বোঝে না। তারা হয়তো স্থানীয় মদ কিনবে, গিলবে, কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন বোধ করবে, একসময় ঘুমিয়ে পড়বে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চিরতরে বিদায় নেবে। 

বসবাসের অযোগ্য শহর


বর্তমানে ঢাকার রাস্তায় খালি রাস্তা অনেকটা অমাবস্যার চাঁদের মতো হলেও সবসময় এমনটা ছিল না। অধ্যাপক নুরুন নবী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে, ’৬০-এর দশকে ঢাকার খালি রাস্তায় গাড়ি চালানো যেত। শহরের পুরাতন অংশে মোঘল আমলের খালগুলোতে মানুষজন গোসল করতে পারতো। তবে উন্নয়নের খাতিরে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। খালগুলো ভরাট হয়েছে। আর এতে করে নষ্ট হয়েছে নিষ্কাশনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসের। বিশ্বের অন্যান্য অংশের মতন, বাংলাদেশও দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়নের শিকার হয়েছে। সৌভাগ্যের খোঁজে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ রাজধানীতে পাড়ি জমিয়েছে। কিন্তু তাদের জায়গা দেয়ার মতন অবকাঠামো তৈরি হয়নি। আর ঢাকা ব্যতিত ভিন্ন শহরগুলোতে বিনিয়োগের তীব্র অভাব এই সংকট আরো প্রকট করে তুলেছে। নবী বলেন, আপনি ভারতে যান, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ। সেখানে আপনি কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদসহ বাস করার মতো অনেক শহর পাবেন। আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন। কিন্তু এখানে, আমাদের কাছে এখনো (বাস করার জন্য) কেবল ঢাকাই আছে।

নবী জানান, ঢাকায় বেশ কয়েকটি সংগঠন ব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী। আর এ কারনে ব্যবস্থাপনা মূলত বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব হচ্ছে প্রধান বাধাগুলোর একটি। ঢাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য বর্তমানে সাতটি ভিন্ন সরকারি বিভাগ কাজ করছে। এই সংগঠনগুলো একপক্ষ অপরপক্ষের ওপর দোষ চাপানোর এক হাস্যকর খেলায় মেতে থাকে। এদের মধ্যে রয়েছেন শহরের দুই মেয়রও। গত জুলাইয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন রাস্তায় হাটুপানিতে দাঁড়িয়ে বলেন, ওয়াসা(ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড সুয়েজ অথরিটি) এর জন্য দায়ী কিন্তু তাদেরকে তেমন একটাব কাজে দেখা যায়না। পালটা জবাবে, ওয়াসা খোকনের ওপর দোষ চাপায়। অন্যদিকে, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ক্রোধ নিয়ে এক সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করে বসেন, কেউ আমাকে বলুন সমাধান কি? 

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম খান বলেন, নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক উৎসের স্বল্পতা থাকায় সরকারকে কয়েক কিলোমিটার লম্বা পাইপলাইন ব্যবহার করে পানি শহরের বাইরে বের করতে হয়। এছাড়া তিনি জনবহুলতাকেও দোষ দেন। তিনি বলেন, আগে আমরা ৬০ লাখ মানুষের জন্য কাজ করতাম। কিন্ত এখন আমাদের ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। আর একারণে পানি ধারনের প্রাকৃতিক উৎস ও ড্রেন সিস্টেম ধংস হয়ে যাচ্ছে। সেখানে স্থাপিত হচ্ছে বসতবাড়ি। ২০১৩ সালে ঢাকায় খাল খননের একটি চুক্তি করা হয়। তবে সে কাজে এখন পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি দেখা যায়নি। 

এদিকে, বহুদিন ধরে ভুগলেও পরিবর্তন আসছেনা ড্রেন পরিষ্কারকের ভাগ্যে। এ থেকে বোঝা যায় যে, ঢাকা শহর যত বড় হচ্ছে এখানে অসমতাও ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুজনের জানান, তার সমপ্রদায় মুসলিম ও হিন্দু উভয় ধর্মের লোক দিয়েই ভরা। তিনি বলেন, কেউ আমাদের দুর্দশার কথা শুনতে আসেনা, সাংবাদিকরাও না। তার মেয়েরা স্কুলে পড়ে। অথচ তাদেরকে বন্ধুদের কাছে বাবার পরিচয় লুকিয়ে রাখতে হয়। সুজন বলেন, আমার সন্তানেরা স্কুলে যেতে পারে। কিন্তু তাদেরকে অবশ্যই তাদের আসল পরিচয় লুকিয়ে রাখতে হয়। নয়তো তারা অপমানিত হতে পারে বা তাদেরকে সবাই এড়িয়ে চলতে পারে। সুজন বলেন, ‘পুরো সিস্টেম আমাদের বিপক্ষে। আমাদের উন্নতির বিপক্ষে, আমাদের উন্নয়নের বিপক্ষে। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের সমপ্রদায়ের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি।’

  • সৌজন্যে - http://mzamin.com 


The dysfunctional megacity : Why Dhaka is bursting at the sewers

Poppy McPherson/ theguardian.com/March 21, 2018 

The sewerage system is so poor in Dhaka that it often overflows during monsoon season. Photograph: NurPhoto/Getty Images

After decades cleaning the sewers of Dhaka, Bangladesh’s crowded capital, Sujon Lal Routh has seen plenty of misery. But the tragedy of 2008 was the worst. After a day of heavy rainfall left the streets flooded – as usual – seven workers were assigned to clear a blocked manhole in Rampura, in the centre of the city. Normally, cleaners cling to ropes to stop them getting sucked in by surging water when they clear blockages. But this group were new to the job. “They didn’t know about the impending danger or how to work in that situation,” says Sujon. “So, sewer water swallowed them.”

Bystanders smashed the road open with hammers and shovels. Eventually, they dragged out three workers, dead. Another four were seriously injured; one later died in hospital. “The accident instilled fear in us, and for months we were even afraid to look into the sewers,” says Sujon.

During Bangladesh’s relentless monsoon season, Dhaka is submerged several times a month. The overburdened drains clog and the low-lying city fills with water like a bathtub. Newspapers such as the Dhaka Tribune bemoan the inundation with pictures of flooded buses and quotes from peeved commuters and despondent urban experts: “Dhaka underwater again”; “It’s the same old story.”
On the sides of the roads, in the blinding rain, the ragtag army of sewer cleaners goes to work. Some poke bamboo sticks into the manholes. Others are plunged, half-naked, into the liquid filth and forced to scoop out the sludge with their bare hands. “The world’s worst job”, global media declared last year after pictures of the workers neck-deep in waste went viral.

According to UN Habitat, Dhaka is the world’s most crowded city. With more than 44,500 people sharing each square kilometre of space, and more migrating in from rural areas every day, the capital is literally bursting at the seams – and the sewers. The cleaners, who make about £225 per month, risk their health and their lives to prop up infrastructure that is groaning under the weight of the population.

Dhaka floods throughout the monsoon season. Photograph: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

On the sides of the roads, in the blinding rain, the ragtag army of sewer cleaners goes to work. Some poke bamboo sticks into the manholes. Others are plunged, half-naked, into the liquid filth and forced to scoop out the sludge with their bare hands. “The world’s worst job”, global media declared last year after pictures of the workers neck-deep in waste went viral.

According to UN Habitat, Dhaka is the world’s most crowded city. With more than 44,500 people sharing each square kilometre of space, and more migrating in from rural areas every day, the capital is literally bursting at the seams – and the sewers. The cleaners, who make about £225 per month, risk their health and their lives to prop up infrastructure that is groaning under the weight of the population.

Too many people, too few resources


Overpopulation is usually defined as the state of having more people in one place that can live there comfortably, or more than the resources available can cater for. By that measure, Dhaka is a textbook example.

“There are cities bigger in size than Dhaka in the world,” says Prof Nurun Nabi, project director at the department of population sciences at the University of Dhaka (“They call me Population Man. Like Superman,” he says). “But if you talk in terms of the characteristics and nature of the city, Dhaka is the fastest growing megacity in the world, in terms of population size.”

Cities can be densely populated without being overpopulated. Singapore, a small island, has a high population density – about 10,200 per sq km – but few people would call it overpopulated. The city has grown upwards to accommodate its residents in high-rises, some with rooftop “sky-gardens” and running tracks.

Overpopulation happens when a city grows faster than it can be managed. 

‘I’m forced to do this job’

A sewer cleaner in Dhaka. Photograph: Zakir Chowdhury/Barcroft Images

“The government has been trying to manage Dhaka city well, but has not been as successful as expected,” says Sujon, the sewer cleaner, over a creamy cup of cha, Bangladeshi tea, in the modest flat he shares with his family in bustling central Dhaka. Outside, painted rickshaws tinkle through narrow, waterlogged streets.

While Bangladesh is majority Muslim, like many in his profession, Sujon is Hindu. Hindus were singled out for persecution during the country’s war for independence from Pakistan and remain subject to discrimination. He is also a dalit, belonging to the caste known throughoutsouth Asia as “untouchables” and consigned to menial jobs. In Bangladesh, they are called by the derogatory term methor – “those who clean shit”.

“I have inherited this from my forefathers and have no other work skills,” says Sujon, who is tall and in his early 40s, with a long, thin face and neat moustache. “I have a family to maintain, children to offer education and monthly bills to pay, including rent. I’m forced to do this job, although I know it brings me disrespect and disgrace.”

It is thankless, dangerous work. A friend of Sujon’s was killed when a septic tank he was cleaning exploded. Recently, Sujon’s brother, Sushil, had to hang on to a leaking gas pipeline while trying to clear a 10-foot-deep manhole. “If we had a washer or pump machine, the risk could be reduced,” he says. “We could use the pump to dry up the manhole before going down to clear it up. Also, we need to have a ladder to go down. But we just get an order to get the work done, so we manage people and try to finish it as quickly as possible.”

Dhaka is one of the most crowded cities in the world. Photograph: Mohammad Ponir Hossain/Reuters

Then there are the health effects. Sujon blames a mysterious skin rash on the hours spent submerged.

“The sewerage lines are acidic and poisonous due to rotten filth,” he says. “So cleaners are 100% sure to have health problems, especially skin problems. Often they don’t realise it at all. They’ll buy and drink some local liquor, feel dizzy and fall asleep. They’ll be out of this world by then. If they had their senses they would realise the damage being done slowly.”

Least liveable city


To live in Dhaka is to suffer, to varying degrees. The poor are crammed into sprawling shantytowns, where communicable diseases fester and fires sporadically raze homes. Slum-dwellers make up around 40% of the population. The middle and upper classes spend much of their time stuck in interminable traffic jams. The capital regularly tops “least liveable cities” rankings. This year it sat behind Lagos, Nigeria, and the capitals of war-ravaged Libya and Syria.

And that’s an improvement, jokes Nabi during an interview at his office at the University of Dhaka, whose lush tropical grounds provide the city with rare green space. Like many Bangladeshi academics grappling with the host of crises bearing down on the country, Nabi treats his subject matter with a mix of wry humour and optimism. “In the rankings, for a couple of years, we were No 1,” he says.

It wasn’t always like this. In the 1960s, before Bangladesh won independence from Pakistan in 1971, Nabi recalls, it was possible to drive down empty roads in Dhaka. People bathed in Mughal-era canals in the old part of the city, which is still home to centuries-old architecture, although much has been razed in pursuit of development. The canals have been filled in, cutting off a vital source of drainage.

Like much of the world, Bangladesh has undergone rapid, unplanned urbanisation. The economic opportunities conferred by globalisation, as well as climate-induced disasters in rural and coastal areas, have driven millions to seek better fortune in the capital, putting a strain on resources. “We can see a huge avalanche coming towards the city from the rural areas,” says Nabi. “People are pouring, pouring, pouring in. Do we have the housing infrastructure to accommodate them? Where are the facilities for poor people to live?”

Bangladesh’s reluctance to decentralise and invest in cities beyond Dhaka has compounded the problem, he says. “You go to India, just the neighbouring country, you will find Kolkata, Mumbai, Chennai, Hyderabad, so many cities where you can live,” says Nabi. “You can survive. Here, we only have Dhaka still.”
Cleaning sewers has been described as the world’s worst job. Photograph: KM Asad/Zuma Wire/Rex/Shutterstock

‘Poor-country urbanisation’

For most of modern history, cities grew out of wealth. Even in more recently developed countries, such as China and Korea, the flight towards cities has largely been in line with income growth. But recent decades have brought a global trend for “poor-country urbanisation”, in the words of Harvard University economist Edward Glaeser, with the proliferation of low-income megacities.

According to Glaeser’s research, in 1960 most countries with a per capita income of less than $1,000 had urbanisation rates of under 10%. By 2011, the urbanisation rate of less developed countries stood at 47%.

In other words, urbanisation has outpaced development, resulting in the creation of teeming but dysfunctional megacities such as Lagos, Karachi, Kinshasa and Dhaka.

Dense urban populations, Glaeser writes, bring benefits such as social and creative movements as well as scourges like disease and congestion. “Almost all of these problems can be solved by competent governments with enough money,” he writes. In ancient Rome, Julius Caesar successfully fought traffic by introducing a daytime ban on the driving of carts in the city. Baghdad and Kaifeng, China, meanwhile, were renowned for their waterworks. “These places didn’t have wealth, but they did have a competent public sector,” writes Glaeser.

In much of the developing world today, both are in short supply.


In Dhaka, management of the city falls to a chaotic mix of competing bodies. “The lack of coordination between government agencies that provide services is one of the major obstacles,” says Nabi.

Seven different government departments – including two separate mayors – are working to combat waterlogging, an arrangement that has led to a farcical game of buck-passing. In July, mayor of south Dhaka Sayeed Khokon stood knee-deep in water and said the Water Supply and Sewage Authority (Wasa) was liable but could not “be seen much at work”. Wasa subsequently blamed Khokon. Elsewhere, north Dhaka’s late mayor Annisul Huq, also visiting waterlogged areas, turned to a reporter in exasperation and asked: “Someone tell me what is the solution?”

Taqsem Khan, Wasa’s managing director, says that, since natural sources of drainage are scarce, the government has to pump water out of the city through several thousand kilometres of pipeline laid across the city.

“The reason why there is water congestion in Dhaka city is because it’s a megacity – its population growth is too high,” he says. “Wasa once worked for six million people, but today there are about 15 million people … That is the reason why the natural water bodies and water drainage systems have been destroyed and housing has been built up.”

In 2013, the city signed a deal to dredge some of the canals – following the example of Sylhet, another Bangladeshi city suffering from waterlogging – but there has been little sign of progress.

 A Bangladeshi woman holds a glass of contaminated water in Dhaka. Photograph: NurPhoto/Getty Images

‘Many stories will be written by the people of this nation’


But dysfunctional administrations have not always been an obstacle to getting things done in Bangladesh. The country has won praise for its adaptation-focused response to climate change.

And some urbanists are rethinking the prevailing negative view of slums, while urbanisation – which tends to bring declining birth rates – can be a partial solution to overpopulation.

Glaeser points out that social movements formed in the confines of urban areas can have the power to change and discipline governments.

“Many stories will be written by the people of this nation – forget about the political parties,” says Nabi. “Someday they will wake up and be forced to comply with their speech.”
In the meantime, however, the unchanged misery of the sewer cleaners serves as a reminder that, as cities grow, they tend to get more unequal.

Sujon says his community is shunned by both Muslims and Hindus. “Nobody comes to hear our plight, not even local journalists,” he says.

His daughters conceal their origins even from their friends. “Our children can go to school, but they must hide their background and real identity to avoid being ostracised and humiliated,” he says.

“The whole system is against us, against our progress and our development. Bangladesh gained independence in 1971, but our community’s conditions remain the same.”

  • Additional reporting by Rock Rozario




Murderers go unpunished

PBI examines 239 judgments; blames investigation, prosecution for failures


 Bishakha Devnath


In 2007, a villager was killed as two groups clashed over the theft of a cow in Companiganj upazila of Sylhet. It took one year to complete the investigation of the murder case. Another seven years was taken to finish the trial. The pursuit of delayed justice resulted in nothing; in the verdict delivered in 2015, no one was punished.

This is just one example of the 239 judgments of as many murder cases that the Police Bureau of Investigation (PBI) researched to find reasons behind acquittal of accused in murder cases.

The judgments studied were delivered in Sylhet in 2015 and Chittagong, Rangpur, Barisal, Mymensingh, Faridpur, Bogra and Khulna in 2016.

The Daily Star obtained a copy of the research findings which showed that more than 51 percent of the cases saw no conviction.

Sloppy investigations and medical reports, improper recording of confessional statements by magistrates and out-of-court settlements with prosecution witnesses, led to the acquittal of accused in 111 murder cases, the report stated.

“The honourable judges pointed out some of the mistakes in the judgments but didn't order any action against the police, investigation officer or any others responsible for them,” the PBI said in the report.

It cited loopholes in the investigation and in the way the prosecution presented their arguments in court.

In one instance, the allegations against an accused in a 2004 murder case filed with Kotwali Police Station, Chittagong, had been called into question in court because the magistrate didn't certify whether the confessional statement was voluntary and true. The defence drew the court's attention to the fact that the statement had not been signed in all designated places by the magistrate.

The accused in four cases were acquitted due to such incompetence. A court said the magistrate responsible might have made the error “due to his busy schedule” but didn't ask the authority to take action against him.  

In another case, an accused was caught red-handed with a gun by local people, but the investigation officer (IO) failed to mention whether the gun was loaded at the time.

The report said mistakes were also made in compiling lists of prosecution witnesses as well. The children and wife of a murder victim had been kept out of the list in a case. There were neutral witnesses who had been present at the place of occurrence when the murder took place but the IO in the charge sheet didn't mention any of them as witnesses.  

There was also inconsistent description of the murder weapon in the post-mortem report and the First Information Report in a case. The IO failed to present evidence and witnesses.

Many cases lost their validity for faulty post-mortem reports. In one case, the forensic expert who conducted the autopsy didn't mention if it was a suicide or murder. Asphyxia was noted as the cause of death, which could point towards either murder or suicide.

Apart from these reasons, courts had to discharge the accused in 45 cases because the witnesses had been tampered with, and so the allegations could not be proven using their “influenced” testimonies.

Witness tampering may happen when a trial takes too long, said Mostofa Kamal, special superintendent of the PBI. As time passes, the complainant and witnesses lose confidence in the judicial process, and they are willing to go for out-of-court settlements with the accused.

The PBI suggested quick trials so that perpetrators don't get away with committing crimes. 

It observed that some cases took as many as 21 years to get to the end of the trial, and the accused took advantage of the lengthy procedure to influence the outcome. 

Police and investigators should be trained on a regular basis and should face action for their mistakes, the PBI report said. Moreover, the failure of IOs to appear in court to testify and to bring witnesses to court should be addressed.  

According to the report, the IO of a case had not appeared in court at all, and in four other cases the IOs failed to bring adequate number of witnesses to court.

But the irony is that there wasn't a single order from the respective courts asking for action against the officials responsible -- be it the IO, medical officer or magistrate.

“But it was [action against them] necessary,” the PBI said in the report, adding that it was a significant step if the nation wants to come out of its culture of impunity.  

  •  Courtesy: The Daily Star Mar 22, 2018


Democracy 'in danger'

BNP tells foreign diplomats, presents 20 'major challenges' faced by the country


Mohammad Al-Masum Molla


The BNP yesterday presented a “grim picture of the country's democracy” before around a dozen foreign diplomats in Dhaka.

Democracy in Bangladesh is in peril, the party alleged, citing 20 “major challenges being faced by the country”.

According to the BNP, constitutional bodies and democratic institutions have been totally shattered, good governance is in exile, extrajudicial killings, enforced disappearance and political killings are rampant, absence of accountability and transparency is acute, freedom of expression is throttled, banking sector has been looted, and the judiciary is not independent, reads a statement.

Senior BNP leaders apprised the diplomats of the country's overall situation and updated them on the legal process of having party Chairperson Khaleda Zia out of jail, said party insiders.

The diplomats included representatives from the USA, Japan, European Union, Saudi Arabia, USAID, Switzerland, Spain, Australia, Turkey and the Netherlands.

A senior BNP leader, wishing not to be named, told The Daily Star that party Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir presented a power point presentation before the diplomats. The meeting, starting at 4:00pm, was held at the party chairperson's Gulshan office. The statement was distributed among the diplomats later.

In his presentation, the BNP leader described about the party's “peaceful” programmes and how the government tried to stop them.

“Despite serious provocation by the ruling party leaders and the partisan law enforcement agencies, BNP firmly upholds its stance on holding peaceful and democratic programmes…” reads the statement.

The party said it firmly believed that the only way to come out of the present “political impasse” was to hold a free, fair, neutral, acceptable and participatory election under a neutral election-time government.

“We also believe that it is very much possible to find out an acceptable solution through constructive dialogues among the stakeholders concerned. And it is the party in power that is to take the initiative,” the statement read.

It also said, “We would highly appreciate active and decisive role of the international community in the restoration of democracy and ensuring justice in Bangladesh.”

The BNP told the diplomats that the party had observed peaceful and systematic programmes since Khaleda  was sent to jail.

It also informed them that the government “obstructed” all of their programmes. Showing photos published in different newspapers, the BNP leaders told the diplomats that the government was “pushing the party into the path of confrontation”.

The diplomats wanted to know about the BNP's stance on the participation in the next parliamentary elections. In reply, the party leaders said they would join the polls if held under a non-partisan interim government.

This was the second time BNP leaders met diplomats since Khaleda was sent to jail in the Zia Orphanage Trust graft case on February 8.

On March 13, senior BNP leaders had a meeting with the representatives of around 15 countries at the same venue.

BNP standing committee members Khandaker Mosharraf Hossain, Moudud Ahmed, Abdul Moyeen Khan, Mirza Abbas, Amir Khasru Mahmud Chowdhury, vice chairman Abdul Awal Mintoo, advisers to the BNP chairperson Reaz Rahman, Sabihuddin Ahmed, Islmail Hossain Zabiullah, executive committee members Tabith Awal and Rumeen Farhana were present at yesterday's briefing.

  • Courtesy: The Daily Star Mar 22, 2018

দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার

এক বছরে বেকার বেড়েছে ৮০ হাজার



প্রবৃদ্ধি হলেও সেই তুলনায় দেশে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। ফলে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ।

এর মধ্যে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ। এক্ষেত্রে এক বছরে বেকার বেড়েছে ৮০ হাজার। উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিচালিত সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর পরিসংখ্যান ভবনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জপির প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, আইএমইডি সচিব মো. মফিজুল ইসলাম।

সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মো. আমীর হোসেন। অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক কবির উদ্দিন আহমদ।

জরিপে দেখা যায়, জাতীয় বেকারত্বের গড় হার অপরিবর্তিত রয়েছে। এ হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। অর্থাৎ মোট বেকারত্বের ১১ দশমিক ২ শতাংশ উচ্চ শিক্ষিত।

বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারী ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান। এছাড়া অর্থনীতির রূপান্তরের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশের কৃষি খাতে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা কমেছে, বিপরীতে বাড়ছে শিল্প ও সেবা খাতের শ্রম শক্তির সংখ্যা।

দেশের মোট শ্রমশক্তির ৫৬ শতাংশ কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিত রয়েছে, যা সংখ্যায় ৬ কোটি ৮০ লাখ। শ্রম শক্তির বাইরে রয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত এক বছরে দেশে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ৩৭ লাখ।

এর মধ্যে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ১৩ লাখ। মজুরি ছাড়াই কাজ করতেন (আনপেইড) এমন ১৪ লাখ মানুষ মজুরিভিত্তিক (পেইড) কর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছেন। আর প্রবাসের শ্রমবাজারে যোগ দিয়েছেন ১০ লাখ মানুষ।

তার আগের অর্থবছরে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছিল ১৪ লাখ। এ হিসেবে গত বছরে কর্মসংস্থান কমেছে ১ লাখ।’ এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘কর্মসংস্থান কমার কোনো কারণ নেই। তবে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থবির রয়েছে।

প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষ কর্মের বাজারে প্রবেশ করছে। সে তুলনায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘৬ কোটি ৩৬ লাখ শ্রমশক্তির মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৩৫ লাখ। আর নারীর সংখ্যা ২ কোটির মতো। ২০১৫-১৬ সালের জরিপে ৬ কোটি ২১ লাখ শ্রমশক্তির মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৩১ লাখ।

আর নারীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯১ লাখ। এ হিসেবে ২ বছরে শ্রমশক্তিতে নারীর হার বেড়েছে প্রায় ৯ লাখ। আর শ্রম বাজারে নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। ২০১৩ সালে ছিল ১ কোটি ৮২ লাখ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেড়ে ১ কোটি ৯১ লাখ হয়। গত অর্থবছরে সেটি আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটিতে।’ জরিপে দেখা যায়, ধীরে ধীরে শ্রমের রূপান্তর ঘটছে। এক সময় কৃষিনির্ভরতা থেকে বর্তমানে সেবা ও শিল্পের দিকে যাচ্ছে কর্মসংস্থান।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে কৃষি খাতে নিয়োজিত ছিল ২ কোটি ৫৪ লাখ মানুষ। সেখান থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমে গিয়ে শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪৭ লাখ। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সেবা খাতে।

গত অর্থবছরে সেবা খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ। তার আগের অর্থবছর এ সংখ্যা ছিল ২ কোটি ২০ লাখ। এছাড়া শিল্প খাতে গত অর্থবছরে নিয়োজিত ছিল ১ কোটি ২৪ লাখ, তার আগের অর্থবছরে এর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২২ লাখ।

প্রতিবেদন বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে. মুজেরি যুগান্তরকে বলেন, ‘যে হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে সেই হারে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এজন্য শুধু প্রবৃদ্ধি বাড়ালেই হবে না। কর্মসংস্থানের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। যাতে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থানের সংযোগ ঘটে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘দেশে মোট কর্মসংস্থানের ৮৫ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতের। প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের সংখ্যা মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। মোট কর্মসংস্থানের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের আনুষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই।

প্রায় ১ কোটি ৫৭ লাখ কর্মজীবী মানুষের সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত। ১ কোটি ৮৭ লাখ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুনো মানুষ। বাকিটা উচ্চ শিক্ষিত।

  • Courtesy: Jugantor 21, 2018

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৮৩ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতি




দেশ থেকে ভয়াবহভাবে অর্থ পাচার, রফতানি আয় কমে যাওয়া, রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়াসহ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি বিরাজ করছে। চলতি অর্থবছরের (জুলাই-জানুয়ারি) সাত মাসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। স্বাধীনতার পর অর্থাৎ ৪৭ বছরে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।  এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে ৯৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৩২ কোটি ডলার। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় রফতানি আয় না বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক এবং সেবা খাতের ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে চলতি হিসাবের ভারসাম্য। 

বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে চাপের মুখে পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দেশে সব সময় বাণিজ্য ঘাটতি থাকে। তবে এখন তা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এর মূল কারণ একদিকে রফতানি আয় বাড়ছে না, অন্যদিকে দীর্ঘদিন রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব। সম্প্রতি রেমিট্যান্স কিছুটা বাড়লেও যে হারে কমেছে সেই হারে বাড়েনি। প্রবীণ এ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, বাণিজ্য ঘাটতির এ নেতিবাচক ধারা সার্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। কারণ এটি অব্যাহত থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের (রিজার্ভ) ওপর প্রভাব পড়বে; এক্সচেঞ্জ রেট বেড়ে যাবে। ফলে টাকার অবমূল্যায়ন বাড়বে। সর্বোপরি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে দুই হাজার ১০৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ১১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় এক হাজার ১২ কোটি ৩০ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, প্রতি ডলার ৮২ টাকা হিসেবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। 

আলোচিত সময়ে আমদানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ হারে। অন্যদিকে রফতানি বেড়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি বড় হয়েছে। 

  • তথ্যসূত্রঃ dailydinkal.net/ মার্চ ১৭, ২০১৮।