Search

Tuesday, March 27, 2018

জনগণের আমানত ঋণের নামে লুটপাট

আবুল কাশেম


নথি নেই, ঋণের আবেদন নেই, নেই কোনো স্বাক্ষরও; জামানত তো দূরের কথা। তবু হলমার্ককে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। আর এতেই ঘটে গেছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি। বেসিক ব্যাংক গত কয়েক বছরে কোন প্রতিষ্ঠানকে কত টাকা দিয়েছে, তার হিসাব নেই খোদ ব্যাংকের কাছেই এবং যথারীতি ঘটে গেছে সেই টাকা লুটপাটের ‘উৎসব’। এভাবে ভুয়া প্রতিষ্ঠান, ভুয়া নথিপত্র দেখিয়ে অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ঋণের নামে জনগণের আমানত লুটেপুটে নিচ্ছে ব্যাংক থেকে। কারখানা নেই, অফিস নেই, বন্ধকি জমিও নিজের নয়, এমন অনেক গ্রাহকের ঋণ আবেদনও মঞ্জুর করছে ব্যাংক। সরকারি সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণের নামে টাকা নিয়ে যাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান; এমনকি কবরস্থানের জমি বন্ধক রেখেও ব্যাংক থেকে অর্থ নিতে পারছে তারা। পর্যাপ্ত জামানত ছাড়াই প্রাপ্য টাকার দ্বিগুণ-তিন গুণ ঋণ দিয়ে দিচ্ছে ব্যাংক। আবার শুধু নিজে ঋণ দিয়ে খেলাপি হওয়াই নয়, গ্রাহক বানানোর জন্য অন্য ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পর্যন্ত কিনে নিচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক। প্রভাবশালী লুটেরাচক্র একটু বেকায়দা দেখলেই আইন-আদালতের ফাঁক গলে বেরিয়ে এসে বহাল তবিয়তে, কখনো কখনো দ্বিগুণ উৎসাহে লুটপাটে লিপ্ত হয়। এভাবে ব্যাংকঋণ লেনদেনের নামে টাকা লুটপাটকারীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশ।

অন্যদিকে জালিয়াত গ্রাহকদের প্রতি ব্যাংকগুলোর বিশেষ প্রীতি থাকলেও নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী হিসেবে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণের জন্য ঘুরতে হয় দ্বারে দ্বারে। উপযুক্ত জামানতের নথি নিয়ে ঘুরলেও প্রয়োজনীয় ঋণের জোগান নিশ্চিত হয় না তাদের। দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি শিল্প গ্রুপকে দেশে বৃহত্তম জ্বালানি তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠা করতে ছয় হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নিতে হচ্ছে ২৪টি ব্যাংক থেকে। এই রিফাইনারিতে উৎপাদিত পণ্য কিনবে সরকার, ফলে ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা রয়েছে; তা সত্ত্বেও ঋণ পেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে ওই কম্পানিকে।

অথচ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে ব্যাংক। ব্যাংক খাত বিপর্যস্ত হলে দেশের সমৃদ্ধি-উন্নয়নও মুখ থুবড়ে পড়বে। এ দেশের সামনে এখন সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ—স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীলে উত্তরণের চূড়ান্ত স্বীকৃতি অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেও ব্যাংক খাতকে মজবুত রাখা অতি জরুরি। অথচ বিশ্লেষকদের ভাষ্য, বাস্তবে ব্যাংক সুরক্ষার শক্ত ব্যবস্থা দেশে নেই—না আইনে, না ব্যবস্থাপনা-পরিচালনায়। উল্টো পাকাপোক্তভাবে আছে ব্যাংক থেকে জনগণের আমানতের টাকা লুটপাট করে ব্যাংক ফাঁকা করে দেওয়ার ‘সুব্যবস্থা’।  

গত কয়েক বছরের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঋণের জামানতের কাগজপত্র ভুয়া জেনেও রাজনৈতিক চাপে কিংবা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংকগুলো ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে দিচ্ছে, ঋণের এসব টাকা কোনো দিন ফেরত পাওয়া যাবে না জানার পরও। মাত্র ছয় বছরে এ্যাননটেক্স নামের একটি গ্রুপকে জনতা ব্যাংক নিয়মনীতি ভঙ্গ করে পাঁচ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা দিয়েছে নির্বিঘ্নে। সোনালী ব্যাংক হলমার্ককে যে দুই হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা দিয়েছে, তার বেশির ভাগ ঋণের কোনো আবেদনপত্রও ছিল না। কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে আবেদনপত্র থাকলেও তাতে হলমার্কের এমডি তানভীর আহমেদের কোনো সই-স্বাক্ষরও ছিল না। তবু প্রতি রাতে মাইক্রোবাস ভরে সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখা থেকে টাকার বস্তা চলে যেত হলমার্কের অফিসে। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির সময় কাকে, কত টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে তার কোনো হিসাব এখন পর্যন্ত নেই ব্যাংকটির কাছে।

কেবল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকই নয়, বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোও অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে ব্যাংক ফাঁকা করে ফেলছে। এসব ঋণ জালিয়াতিতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ছেন ব্যাংকের পরিচালক ও মালিকরা। ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারিতে ব্যাংকটির মালিকদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাঁরা কমিশন নিয়ে, ঘুষ নিয়ে জনগণের আমানতের টাকা ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছেন, নিজেরাও তুলে নিয়েছেন। এমনকি ব্যাংক রক্ষার দায়িত্বে থাকা সরকারের নীতিনির্ধারকরাও ব্যাংকের ভক্ষক হয়ে উঠেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নীলফামারী-৪ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি শওকত চৌধুরী একই জমি বন্ধক রেখে দুটি ব্যাংক—বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। নিজের তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে কমার্স ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে নিয়েছেন ৯৩ কোটি টাকারও বেশি। ঋণ জালিয়াতির দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে।  

শিল্প মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন ঢাকার হাজারীবাগের নর্থ ইস্ট ট্যানারির ৪৫ শতাংশ জমি বন্ধক রেখে অগ্রণী ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্রোমভেজ ট্যানারি লিমিটেড। কিন্তু ঋণের একটি টাকাও পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংক বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তোলার বিজ্ঞাপন দিয়েছে সংবাদপত্রে। ওই বিজ্ঞাপন দেখার পর বিস্মিত শিল্প মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখে বলেছে সরকারি সম্পত্তি বন্ধক রেখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে দুই দফা চিঠি দেওয়ার পরও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আইন-আদালতের ফাঁক গলে... : ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণ করা বেশির ভাগ ঋণই আর আদায় হয় না। আবার কোনো কোনো খেলাপি গ্রাহক উল্টো ব্যাংকের বিরুদ্ধেই মামলা ঠুকে দেন, যাতে তাঁকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করতে না পারে ব্যাংক। বড় আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খেলাপিমুক্ত থাকার আদেশ বের করে আনেন আদালত থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) কর্মকর্তারা জানান, কোনো কোনো খেলাপি গ্রাহককে নিয়ে দুদক যাতে তদন্ত না করে এমন বিষয় উল্লেখ করেও আদালত থেকে রায় নিয়ে আসে কোনো কোনো ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান। ফলে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নতুন করে আরো ঋণ নেওয়ার সুযোগ পায়, ঋণের টাকা পরিশোধ না করেও খেলাপির তকমা থেকে রেহাই পায়। এ ধরনের অনেক খেলাপি গ্রাহক বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকও থাকেন।

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ছিলেন আবদুল আউয়াল পাটোয়ারি। তাঁর প্রতিষ্ঠান পাটোয়ারি পটেটো ফ্লেক্স লিমিটেডের কাছে অগ্রণী ব্যাংকের পাওনা ছিল প্রায় ৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পেত ৩০ কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধ না করায় এসব ব্যাংকে খেলাপি হন তিনি। খেলাপি চিহ্নিত হলে ব্যাংকের পরিচালক থাকতে পারবেন না। তাই উচ্চ আদালতে রিট করে গত বছরের শেষ দিকে নিজের পক্ষে রায় নিয়ে আসেন তিনি। বর্তমানে তাঁর পরিচালক পদ নেই।

একজন-দুজন নয়, উচ্চ আদালতে এভাবে রিট করে ৬০০ খেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ ধরনের রায় নিয়ে এসেছে বলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির। তিনি বলেছেন, ‘ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) ঋণখেলাপি প্রদর্শনের পরও কোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। এ রকম প্রায় ৬০০টি মামলা আছে, যেখানে ঋণখেলাপি স্ট্যাটাস প্রদর্শন বন্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।’

গভর্নর বলেন, আদালতের রায়ের ফলে খেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সিআইবিতে খেলাপি হিসেবে দেখানো যায় না। আর খেলাপি না দেখানো হলে ওই গ্রাহকের একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হয় না। ঋণখেলাপিরা উচ্চ আদালতে রিট করে একাধিক ব্যাংক থেকে যখন আরো বেশি ঋণ নিচ্ছে, তখন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ঋণের জন্য ঘুরছেন ব্যাংকের দরজায় দরজায়। উচ্চ আদালতের এসব রিট বছরের পর বছর ধরে চলে, নিষ্পত্তি হয় না। ঋণখেলাপিরাই প্রভাব খাটিয়ে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হতে দেয় না। আর যত দিন মামলা নিষ্পত্তি না হয়, তত দিন অর্থ পরিশোধের কোনো ঝামেলাও নেই। বিভিন্ন সময় ব্যাংকগুলোর তরফ থেকে উচ্চ আদালতে ঝুলে থাকা এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য পৃথক বেঞ্চ গঠনের দাবি উঠলেও, তা হচ্ছে না। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একাধিকবার আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেও পৃথক বেঞ্চ গঠন করাতে পারেননি।

অর্থঋণ আদালতে মামলায় দীর্ঘসূত্রতা : বাংলাদেশে অর্থঋণ আদালত আইনের আওতায় মামলা করে আদালতের নির্দেশে তার বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে ব্যাংক অর্থ আদায় করে। তবে অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তি দীর্ঘতর প্রক্রিয়া। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, অর্থঋণ আদালতে মামলা রয়েছে প্রায় দুই লাখ। এসব মামলায় জড়িত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। তবে অবলোপন করা ঋণ, গত ডিসেম্বরে পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাস করা ঋণের হিসাব আমলে নিলে এর পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকারও অনেক বেশি হবে।

ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অনেক ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালত থেকে মামলার ওপর স্থগিতাদেশ নিয়ে থাকে।  আবার অর্থঋণ আদালতের রায়ে বন্ধকি সম্পত্তি ব্যাংক নিলামে তুললে তার ওপরও স্থগিতাদেশ পাওয়া যায় উচ্চ আদালত থেকে। সোনালী ব্যাংক হলমার্কের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর বাকিগুলোর নিলাম উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত হয়ে যায়। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তোলা হলেও তাতে কেউ অংশগ্রহণ করে না। হলমার্কের কয়েকটি কারখানা নিলামে তুলেও কোনো দরদাতা পাওয়া যায়নি। ফেনীর সোনা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন রূপালী ব্যাংক থেকে ৯৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছেন না। ব্যাংক টাকা আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা করে আনোয়ার হোসেনের একটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান নিলামে তোলেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি দেওয়া বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, কিন্তু কোনো দরদাতা পাওয়া যায়নি।

লুটেরা রক্ষার ‘সুব্যবস্থা’... : বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে পরিশোধ না করে পার পাওয়া যায় সহজে। আদালত থেকে রায় নিয়ে খেলাপিরা আবারও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঋণ নিতে পারে। ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা ও পর্ষদের সদস্যরা যত সহজে ঋণের নামে আমানতের টাকা অসৎ ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেন, তা আদায়ে তার কিঞ্চিৎ পরিমাণ চেষ্টাও থাকে না। খেলাপি ও ব্যাংক লুটপাটকারীদের জন্য এত উদার ব্যবস্থা আর কোনো দেশে নেই। ভারতে কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের আয়ত্ত নেওয়ার চেষ্টা করে। সে ক্ষেত্রে ভারতে ব্যালান্সশিট বেসড ব্যবসা বিদ্যমান। কিন্তু বাংলাদেশের কম্পানিগুলোতে এ ধরনের করপোরেট সংস্কৃতি নেই। যখন বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের আর কোনো ঋণসীমা থাকে না, সব ক্ষেত্রেই যখন তারা খেলাপি হয়, তখন মালিকানায় থাকা ব্যক্তিরা আর অর্থ পায় না। কিন্তু ওই সব খেলাপি লোকের ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে। নেপালে কোনো ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হওয়ার ভয়ে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হওয়ার প্রবণতা দেশটিতে কম। সেখানে খেলাপি ঋণের হার ২ শতাংশেরও কম।

নিলামে দরদাতা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রদীপ কুমার দত্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রথমত যে সম্পত্তি নিলামে তোলা হয়, তার গুরুত্বের ওপর এটি নির্ভর করে। আবার অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে নিলামে তোলা হয় বেশির ভাগ সম্পত্তি। সে ক্ষেত্রে মানুষ মনে করে, আদালতের মাধ্যমে টাকা দিয়ে জমি বা সম্পদ কিনলে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তা বুঝে পাওয়া যাবে না। আবার আদালতের মাধ্যমে জমি কিনলে প্রকৃত দর মেনে তাকে কোর্ট ফি, রেজিস্ট্রেশন খরচসহ সব ধরনের খরচ বহন করতে হয়। তখন টাকার উৎস দেখানো নিয়েও চিন্তায় পড়তে হয়। সাধারণভাবে জমি কিনলে এসব খরচ অনেক কম দেখানো যায়। তবে ব্যাংক আদালতের মাধ্যম ছাড়া সরাসরিও নিলামে তুলতে পারে। তাতে সময় লাগে না। কিন্তু বাড়তি খরচ ও প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতার রোষানলে পড়ার ভয়েও অনেকে তাতে আগ্রহী হন না।

বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ আদায় পরিস্থিতিতে হতাশ অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বিভিন্ন ফোরামে খেলাপি ঋণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেই। অথচ বিদেশে খেলাপি হলে ওই প্রতিষ্ঠানের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন অন্যরা সতর্ক হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো ‘বেল আউট’ দিয়েও টাকা আদায় করছে। আমাদের দেশে কোনো টাকা আদায় হচ্ছে না।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে। না হলে খেলাপির সংস্কৃতি কমবে না। এ জন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। খেলাপি ঋণ বাড়লে ভালো গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়ে। খেলাপি যত বাড়ে ব্যাংক ভালো গ্রাহকদের ওপরে সুদহার তত বাড়ায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ডিউ ডিলিজেন্স না করার কারণে খেলাপি বাড়ছে। উদ্যোক্তারা কেমন, এদের ট্র্যাক রেকর্ড কী, সেসব তথ্য সঠিকভাবে খতিয়ে দেখছে না ব্যাংকগুলো। এদের অনেকেই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। এদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। সে কারণে খেলাপি ঋণ না কমে উল্টো বেড়েই চলেছে। ব্যাংকগুলোর উচিত ভালো আইনজীবী দিয়ে এদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা পরিচালনা করা।’

  • কালেরকণ্ঠ/মার্চ ২৭,২০১৮

ফেসবুক বিতর্কে বাংলাদেশের নির্বাচন

কামাল আহমেদ


দিন দশেক আগে লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান-এর সহযোগী সাপ্তাহিক অবজারভার-এ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক অপব্যবহারের বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে বিশ্বের নানা প্রান্তে এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। ওই খবরের মূল কথা হচ্ছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি ব্রিটিশ কোম্পানি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মনোবিদের কাছ থেকে ফেসবুকের পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর মনস্তাত্ত্বিক গঠন প্রকৃতির তথ্য-উপাত্ত কিনে তা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে কাজে লাগিয়েছে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা (সিএ) অন্যান্য দেশেও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একই ধরনের কাজে যুক্ত ছিল এবং আছে বলে খবরটিতে বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তো বটেই, বিতর্কে আমাদের প্রতিবেশী ভারতও পিছিয়ে নেই। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাসহ যেসব দেশে সিএর কার্যক্রমের কথা উঠেছে, সেসব দেশে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। তবে বাংলাদেশ হচ্ছে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম-আগামী নির্বাচনে তাদের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনার খবর নিয়ে কোথাও কোনো কথা নেই।

অবজারভার-এর প্রথম খবরটি প্রকাশের এক দিন পর ১৯ মার্চ ভারতীয় পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমস দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সিএর তৎপরতা নিয়ে খবর প্রকাশ করলে ভারতের প্রধান দলগুলো এ বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র ও আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সিএকে কাজে লাগানোর অভিযোগ করেন। যদিও পরে জানা যায় যে কংগ্রেস নয়, সিএকে কাজে লাগাতে চেয়েছে বিজেপি। এর আগে রাজ্যপর্যায়ের নির্বাচনে বিহারে ক্ষমতাসীন জনতা দল ইউনাইটেড সিএর সাহায্য নিয়েছিল।

হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, সিএ ও তার ভারতীয় শরিক ওভেলানো বিজনেস ইন্টেলিজেন্স (ওবিআই) প্রাইভেট লিমিটেড ২০১৯ সালের নির্বাচনের বিষয়ে বিজেপি ও কংগ্রেস উভয়ের সঙ্গেই কথা বলেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে ওয়াকিবহাল একজনকে উদ্ধৃত করে তারা জানায়, প্রতিষ্ঠানটি শ্রীলঙ্কার ২০২০ সালের নির্বাচন নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের সঙ্গে এবং বাংলাদেশের ২০১৯ সালের নির্বাচন (নির্বাচনটি চলতি বছরের শেষেও হতে পারে) নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছে। ওই ব্যক্তি আরও জানিয়েছেন যে কোনো কিছু এখনো চূড়ান্ত হয়নি, এগুলো ছিল প্রাথমিক আলোচনা।

সিএ তার ওয়েবসাইটে বলেছে যে ভারতের বিহার রাজ্যের নির্বাচনে তারা যতগুলো আসন বাছাই করেছিল, তার ৯০ শতাংশে সফল হয়েছে এবং তাদের গ্রাহক ভূমিধস বিজয় পেয়েছে। সিএ বলেছে, তাদের কাজ ছিল মত বদলাতে পারে এমন ভোটারদের চিহ্নিত করা। তা ছাড়া গ্রাম পর্যায়ে দল সংগঠিত করায় প্রচারকৌশল ঠিক করার দায়িত্বও ছিল তাদের। সিএর ভারতীয় শরিক ওবিআইয়ের প্রধান নির্বাহী অমরিশ ত্যাগি ভারতীয় জনতা দল ইউনাইটেডের জ্যেষ্ঠ নেতা ও রাজ্যসভার সাবেক সদস্য কেসি ত্যাগির ছেলে। অমরিশ ত্যাগি এরপর ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশে কাজ করেছেন বিজেপির নিতিন গড়কড়ির জন্য। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের মধ্যে ট্রাম্পের পক্ষেও প্রচারকাজ চালিয়েছেন। তবে অমরিশ ত্যাগি ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো কাজ করার কথা অস্বীকার করেছেন। প্রযুক্তিবিষয়ক ভারতীয় পোর্টাল বিবকম ডটকম জানিয়েছে, সিএ ও তার ভারতীয় অংশীদার নিশ্চিত করেছেন যে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা আইন ভাঙার জন্য দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশে নির্বাচনগুলোতে তাদের সহযোগিতামূলক কাজ চালিয়ে যাবে। ওবিআইয়ের অমরিশ ত্যাগি বিবকমকে বলেছেন যে সামাজিক মাধ্যমের বিষয়ে বিভিন্ন দেশের আইনে ভিন্নতা আছে।

ওবিআই কিংবা সিএ ছাড়াও এ ধরনের কৌশলগত সেবা আরও অনেক কোম্পানিই দিয়ে থাকে। সিএর অভিভাবক কোম্পানি হচ্ছে স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনস ল্যাবরেটরি (এসসিএল)। এর বিশেষত্ব হচ্ছে ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীর আচরণের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ (বিহেভিয়ারিওল সায়েন্স) কাজে লাগিয়ে জনমত প্রভাবিত করা। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এর তথ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার বা উইপোনাইজেশন অব ইনফরমেশন বলে অভিহিত করে থাকেন। এসসিএলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, তারা শতাধিক দেশে নানা ধরনের বিষয়ে জনমত সমীক্ষা, প্রচারকৌশল ঠিক করা এবং সরাসরি প্রচারকাজ পরিচালনার মতো কাজ করেছে। তারা পাশ্চাত্যের সামরিক জোট ন্যাটো এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা দপ্তরের হয়েও বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করে থাকে। এসসিএলের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আছে আফগানিস্তানের মতো যুদ্ধপীড়িত এলাকায় জনমত সংগঠিত করার অভিজ্ঞতা। নেপালে মাওবাদী বিদ্রোহীদের আচরণ বদলানোর ক্ষেত্রেও তারা কাজ করেছে বলে তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।

নির্বাচন প্রভাবিত করার কাজটি তারা যেসব দেশে করেছে, সেসব জায়গায় তারা যে শুধু তাদের নিয়োগকারী দল বা প্রার্থীর বার্তা প্রচার করেছে তা নয়, তারা জাতিগত বিরোধ কাজে লাগিয়ে বিরোধ তীব্রতর করা, প্রতিপক্ষের ভোটারদের মনে ভীতি ছড়ানোর মতো অপকর্মও করেছে। নাইজেরিয়ায় তারা প্রেসিডেন্ট জনাথন গুডলাকের পক্ষে নির্বাচনী সমাবেশের আয়োজন করে। প্রতিপক্ষের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে আসা নিরুৎসাহিত করতে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালানোর পরোক্ষ স্বীকারোক্তি রয়েছে তাদের। লাটভিয়ায় তারা জাতিগত উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়েছে। এখন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে এসব কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর খোদ ব্রিটিশ সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। একদিকে ব্রিটিশ সরকার ওই সব দেশে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার এবং গণতন্ত্র শক্তিশালী করায় অর্থ ব্যয় করেছে, আর অন্যদিকে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেও তারা সেসব দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বেআইনি প্রভাব বিস্তার করেছে। ভারতসহ বিশ্বের অন্তত বারোটি দেশে তাদের অফিস রয়েছে। তবে নির্বাচনবিষয়ক কার্যক্রম আলাদাভাবে পরিচালনার লক্ষ্যেই তারা সিএর রাজনৈতিক শাখা প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে এমন কোনো ভূমিকা কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিতে পারে কি না। নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা কী হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো নীতি অথবা বিধিমালা তৈরি হয়নি এবং বিষয়টিতে জাতীয় পর্যায়ে মতৈক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও লক্ষণীয় নয়। নির্বাচনী আইনে বিদেশি প্রচার বিশেষজ্ঞ নিয়োগে বাধা না থাকলে অতীতে সে রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, সেই প্রশ্নও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনো বক্তব্য আসেনি। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা গত চার দিনেও প্রথম আলোর ই-মেইলের কোনো জবাব দেয়নি। বলে রাখা ভালো, চ্যানেল ফোরে প্রচারিত গোপনে ধারণকৃত এক আলোচনায় সিএর প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন যে তাঁরা প্রোটনমেইল নামের এমন ই-মেইল ব্যবহার করেন, যা নির্দিষ্ট সময়ের পর আপনা-আপনি ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তাঁদের কার্যক্রমের ডিজিটাল ছাপ তদন্তকারীরা কতটা ধরতে পারবেন বলা মুশকিল। ট্রাম্পের নির্বাচন এবং ব্রেক্সিটের গণভোটে তাঁদের ভূমিকা সম্পর্কে যেসব বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো প্রথমে তাঁরা অস্বীকার করলেও পরে স্বাধীন তদন্ত অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। এ নিয়ে আলাদা একাধিক তদন্ত শুরুও হয়েছে। ফেসবুকও কাঠগড়ায় এবং দুঃখ প্রকাশের পর জাকারবার্গকেও এসব তদন্তে হাজির হতে হবে।

বাংলাদেশে ফেসবুক, টুইটার এবং নতুন নতুন অনলাইন পোর্টালে রাজনীতিকদের পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারণা যে নতুন মাত্রা পেয়েছে, তা আর নতুন কোনো খবর নয়। সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইনের প্রচারযুদ্ধে সরকারবিরোধীরা যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তার একাধিক দৃষ্টান্তের কথা আগেও আলোচনা করেছি (ভুয়া খবর, ফেসবুক, টুইটার ও নির্বাচন, প্রথম আলো, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮)। বিদ্যমান ৫৭ ধারা অথবা প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিধানগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে দলনিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এমন আলামত একেবারেই অনুপস্থিত। সরকারি দলের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সমালোচনার ক্ষেত্রে ৫৭ ধারার যথেচ্ছ ব্যবহার এবং কথিত মানহানি মামলার নজির ভূরি ভূরি। বিপরীতে বিরোধী নেতা-নেত্রীদের চরিত্র হননকারী ভুয়া তথ্য বা অভিযোগের প্রতিবাদ গণমাধ্যমে যেমন যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না, ঠিক তেমনি আদালত থেকে তাঁদের আইনগত প্রতিকার পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

আমাদের নাজুক গণতন্ত্রে সরকারি দল ও তার সহযোগীরা এক মাসে চার-পাঁচটি জনসমাবেশের সুযোগ পেলেও বিরোধীদের অনুরোধ-আবেদন দিনের পর দিন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার নজির সবারই জানা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দলগুলোর সবাই কি সোশ্যাল মিডিয়ায় সমান সুযোগ পাবে? আলামতগুলো অবশ্য ভিন্ন বার্তা দেয়। একইভাবে নির্বাচনী প্রচারকাজে সহায়তার জন্য বিদেশি পরামর্শক কিংবা স্ট্র্যাটেজিস্ট নিয়োগের ভালো-মন্দ ও প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের বিষয়েও দ্রুতই বাস্তবসম্মত নীতিমালা দরকার। সেই নীতিমালা হতে হবে ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন।

  • প্রথম আলো/ মার্চ ২৭, ২০১৮ 

অর্থনীতিতে অগ্রগতি সাম্য মেলেনি


মহান স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকী পালন করছে দেশ। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শোষণ-বঞ্চনার নাগপাশ ছিন্ন করে সদ্য ভূমিষ্ঠ রাষ্ট্রটি নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ প্রস্ফুটিত আলোর মধ্যগগনে। ৪৭ বছরের এই পথচলায় বহু অর্জনে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ। অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে বিশ্বের বুকে দেশের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছে এদেশের কর্মপাগল মানুষ। স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকীর ঠিক আগে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার যোগ্যতার স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।

নানা সূচকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের সামনে এখনো অর্থনৈতিক সমতা, সুশাসন ও কার্যকর গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি বৈষম্য বেড়ে চলেছে সমানতালে যা স্বাধীনতার মূল চেতনার পরিপন্থি। একইসঙ্গে সুশাসন ও জবাবদিহিতা পুরো নিশ্চিত না হলে মানুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা করাটাও কঠিন। কার্যকর গণতন্ত্র আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও সামনে নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়নের জন্য জরুরি বলে মনে করেন তারা। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন স্বাধীনতার এতো বছরে আমাদের অর্জন ও সম্ভাবনা অনেক। তবে স্বাধীনতার পর থেকে যে ধারাবাহিকতায় অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছিল তা এক সময় ধীর হয়ে যায়। বাংলাদেশের গত ৪৭ বছরের ইতিহাসে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বহুদূর এগিয়েছে দেশ। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এগুলো বড় প্রাপ্তি। তবে সামনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। 

তিনি বলেন, সব থেকে বড় দুচিন্তার বিষয় হলো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা জিইয়ে আছে। দেশের বড় দলগুলো আলোচনায় বসছে না। আর আলোচনায় বসবে- এমন সম্ভাবনাও খুব বেশি নেই। ফলে আগামীর দিনগুলো সুখকর নাও হতে পারে। অর্থনীতির উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একটি দেশের উন্নয়নের জন্য প্রথমে দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। যা আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। অন্য চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে আছি। এখন দরকার দারিদ্র্যবিমোচনে বেশি মনোযোগ দেয়া। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ গত কয়েক বছর ধরে একই জায়গায় স্থির রয়েছে। এই ধারা থেকে বের হতে হবে। এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। তিনি বলেন, আমাদের সুশাসনের অভাব রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হবে। সহজেই ব্যবসা করা যায় এমন তালিকায় বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১৭৭ নম্বরে। এতে বোঝাই যাচ্ছে দেশের ব্যবসার পরিবেশ কোথায়? এই জায়গা থেকে উত্তরণে আমাদের কাজ করতে হবে। এসব বিষয় আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশকে বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ি। ৪৭ বছর পর সেই বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নেই। অনেকে এগিয়েছে। ইতিমধ্যেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। এগুলো ভালো অর্জন। এটাকে ধরে রাখতে হবে। টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, এখন দরকার সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন। প্রয়োজন সমতাভিত্তিক উন্নয়ন। যেন সবাই সমান সুযোগ পায়। তিনি বলেন, দিন দিন বৈষম্য বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ লোকের অভাব। এগুলোকে দক্ষ করতে হবে। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। প্রশাসনকে রাজনীতি মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ক্ষমতার কাছাকাছি যারা আছে তারাই বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। এ কারণে টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার সমতাভিত্তিক কার্যকর উদ্যোগ। 

  • মানবজমিন/মার্চ ২৭,২০১৮

Monday, March 26, 2018

Digital Security Act - EU and 10 countries express grave concern


The European Union and 10 countries including the US and the UK have expressed concern over several sections of the proposed Digital Security Act-2018 at a meeting with Law Minister Anisul Huq at his secretariat office in Dhaka Sunday, March 26.

After the meeting for over an hour, German Ambassador Thomas Prinz said, “We came here today [Sunday] as representatives of 11 embassies and high commissions [in Dhaka] to express our concern over the new draft of Digital Security Act as we know at this moment.

“The new act would suppress freedom of expression in multiple ways. We are particularly alarmed about the threat of severe punishment for merely expressing a belief or opinion, about the imprecise terminology which could lead to misinterpretation of law, non-availability of bail for certain offences and the empowerment of the security agency to detain a citizen without warrant by court.

The minister later said he assured them of considering their concern, and if necessary, changes or clarification would be made in the proposed act.

Already, local rights activists and journalists have raised voice against the draft act, saying they were frightened by the proposed law.

The cabinet on January 29 approved the draft act, which has to be passed in parliament.

The diplomats came up with concerns specifically over section 21, 25 and 28 of the draft law, which will deal with defamation, hurting religious sentiments or negative propaganda against the Liberation War or the Father of the Nation, using digital devices, respectively.

The 10 counties are - Germany, Sweden, the US, Denmark, France, Canada, the UK, Spain, Norway and Switzerland. 

SECTIONS IN QUESTION

Section 21  
Section 21 says anyone who spreads negative propaganda against the Liberation War or the Father of the Nation, using digital devices, or instigates such acts will risk being sentenced up to 14 years' jail or a fine of up to Tk 1 crore or both.

He or she will face up to life imprisonment or Tk 3 crore fine or both for committing the offence for the second time, it said.

Section 25
Section 25 of the proposed law says a person may face up to three years in jail or Tk 3 lakh fine or both if he or she is found to have deliberately published or broadcast in a website or electronic form -- something which is attacking or intimidating or which can make someone dishonest or disgruntled; if he or she knowingly publishes or broadcasts false and distorted (full or partial) information to annoy or humiliate someone, or to tarnish the image of the state or to spread rumour.

A person will face up to five years in jail or Tk 10 Lakh or both for committing the offence for second time, it said.

Section 28 
Section 28 says a person may face up to seven years in jail or Tk 10 lakh fine or both if he or she is found to have deliberately published or broadcast something in a website or in electronic form or get it done to hurt one's religious sentiment and values.

A person will face up to ten years in jail or Tk 20 lakh or both for committing the offence for the second time, it said.

Section 32
Section 32 says a person may face up to 14 years in jail or Tk 20 lakh fine or both on the charge of spying if he or she illegally enters the offices of government, semi-government and autonomous bodies to gather information and uses electronic device to record something secretly.

If that person commits the crime again, he or she will face life imprisonment or a maximum fine of Tk 1 crore or both.

The Ghost of ICT ACT 

The draft Digital Security Act came at a time when rights activists and journalists have been demanding repeal of section 57 of Information and Communication Technology Act for its “widespread misuse”.

Demand for repealing section 57 got momentum after around two dozen journalists were sued under the controversial provision last year. Some 701 cases filed under section 57 are pending with the lone cyber tribunal of the country till January.

Although it was said that section 57 of the ICT act would be revoked once the draft is passed in parliament, journalists and right activists felt duped by the government as the provision was kept in the proposed law with some changes.

Section 57 deals with defamation, hurting religious sentiments, causing deterioration of law and order and instigating against any person or organisation through publishing or transmitting any material in websites or in electronic form.

It stipulates maximum 14 years in prison for the offences.

The draft of Digital Security Act-2018 splits these offences into four separate sections (21, 25, 28 and 29) with punishment ranging from three to 10 years' jail term.

The proposed law describes some crimes as “non-bailable” and allows a police official to search or arrest anyone without a warrant in special circumstances.


  • Resource - The Daily Star/March 25, 2018

Sunday, March 25, 2018

আবার বিতর্কিত নির্বাচন হলে পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর - সুজন


আগামী সংসদ নির্বাচন যদি বিতর্কিত হয় তাহলে দেশ ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন সুজন সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, বিতর্কিত নির্বাচন যাতে না হয় সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে ভূমিকা রাখতে হবে। 

রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে হবে। তিনি দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় সকল অশুভ শক্তিকে মোকাবিলা করতে সবাইকে সর্বশক্তি নিয়োগ করার আহ্বান জানান। 

গতকাল শনিবার সিলেটে সুজনের বিভাগীয় পরিকল্পনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। 

নগরীর একটি হোটেল আয়োজিত বিভাগীয় পরিকল্পনা সভায় সুজন সম্পাদক বলেন, এক সময় সুজন দুর্বল ছিল। আমরা ভয় পেতাম। এখন আমরা শক্তিশালী। আমাদের দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতা দখলকারীরা ভয় পায়। আর সকলেই সহযোগিতা করে। সুজন সম্পাদক বলেন, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে সকলের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি বলেন, নাগরিক সমাজ যদি সোচ্চার হয়, তাহলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়ার ক্ষেত্রে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। তিনি দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ রোখার আহ্বান জানান। 

সুজন সিলেট কমিটির সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট হোসেন তৌফিক চৌধুরী, মৌলভীবাজার সভাপতি ছাদিক আহমদ, সিলেটের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাধারণ সম্পাদক একেএম শিবলী, সুনামগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহিনা আক্তার, সিলেট সদরের সভাপতি মিছবাউল বারী লিটন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সভাপতি রাধিকা রঞ্জন তালুকদার, সুনামগঞ্জ সদরের নুরুজ আলী, বিশম্ভরপুরের শেখ এটিএম আজরফ, তাহিরপুরের সাইফুল কিবরিয়া, জামালগঞ্জের মিছবাহ উদ্দিন, বিশ্বনাথের মধু মিয়া, ফেঞ্চুগঞ্জের খন্দকার মমতাজ বেগম, আব্দুল হালিম প্রমুখ। 

পরিকল্পনা সভায় প্রত্যেক জেলা কমিটির নেতারা ২০১৮ সালের কার্যক্রমের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। সভার শুরুতে নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত এবং সুজনের প্রয়াত সদস্যদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়।
  • দিনকাল/ মার্চ ২৫,২০১৮  

উন্নয়নশীল না নিম্ন-মধ্যম আয়ের এলডিসি, তা নিয়ে বিভ্রান্তি

ফখরুল ইসলাম

বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ কি না, তা নিয়ে সাধারণ্যে বিভ্রান্তি আছে। শিক্ষিত সমাজও বিভ্রান্ত।



নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে তিন বছর আগেই। ২০১৫ সালের ১ জুলাই এ ঘোষণা দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। আর চলতি মাসে বাংলাদেশ অর্জন করেছে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা। এই ঘোষণা জাতিসংঘের।

কিন্তু নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ কী, আর উন্নয়নশীল দেশইবা আসলে কী? বাংলাদেশ যে নিম্ন আয় থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে, তা শতভাগ নিশ্চিত। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ এখনই হয়ে যায়নি। ‘বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ’—এ ঘোষণা আসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। ঘোষণাটি দেবে জাতিসংঘ। তার পরের তিন বছর, অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে একটি কৌশলপত্র তৈরি করে বাংলাদেশ তা বাস্তবায়ন করবে।

বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি আছে এমনকি শিক্ষিত সমাজেও। তাও আবার কয়েক ধরনের বিভ্রান্তি। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ কি এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হয়ে গেছে, না হতে যাচ্ছে? নাকি বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ? মধ্যম আয়ের দেশেরও যেহেতু ভাগ রয়েছে দুটি, বাংলাদেশ তাহলে কোনটি-নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ, না উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ?

এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী-আমলারাও প্যাঁচে রয়েছেন। মন্ত্রীরা প্রায়ই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ বলে বক্তৃতা দিচ্ছেন, কিন্তু খোলাসা করে বলছেন না যে তা নিম্ন-মধ্যম, না উচ্চ-মধ্যম আয়ের? আরেকটা প্রশ্নও উঠছে নতুন করে। ১৯৮০ বা ১৯৯০ দশকেই যে স্কুল-কলেজে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ বলা হতো, সেটা তাহলে ভুল ছিল? আসলে তখন আমরা জাতিসংঘের হিসাবে এলডিসি এবং বিশ্বব্যাংকের হিসাবে নিম্ন আয়ের দেশ ছিলাম। একটু আগ বাড়িয়ে তখন কেউ কেউ উন্নয়নশীল বলে ফেলতেন।

‘এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের অভিযাত্রায় বাংলাদেশ’ নামে গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশব্যাপী নানা অনুষ্ঠান চলছে। তা আরও চলবে। গত বৃহস্পতিবার অন্যদের মতো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রায় সব কর অঞ্চলই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। দেখা যায়, ব্যানারগুলোতে প্রায় একই লেখা, ‘নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনে সাফল্য উদ্‌যাপন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা’।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন অবশ্য মনে করেন, কেউ কেউ গুলিয়ে ফেললেও অনেকে ইচ্ছা করেও বাড়িয়ে বলছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাস্তবে বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্যম আয়ের এলডিসি, আরও ছয় বছর তা-ই থাকবে। ২০২৪ সালে জাতিসংঘ যদি ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশ তখন হবে নিম্ন-মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ।

জাতিসংঘের হিসাব

জাতিসংঘের হিসাবে বিশ্বে তিন ধরনের দেশ রয়েছে-উন্নত, উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত (এলিডিসি)। জাতিসংঘ হিসাবটি করে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা বা সংকট সূচক অনুযায়ী। জাতিসংঘের ১৯৭১ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে এলিডিসি ছিল ২৩ টি, বর্তমানে ৪৭। বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত হয় ১৯৭৫ সালে।

মাত্র পাঁচটি দেশ গত ৪০ বছরে এলডিসি থেকে বের হতে পেরেছে। এর মধ্যে বতসোয়ানা ১৯৯৪, কেপ ভার্দে ২০০৭, মালদ্বীপ ২০১১, সামোয়া ২০১৪ এবং ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ২০১৪ সালে বের হয়। ২০১১ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এলডিসিবিষয়ক চতুর্থ জাতিসংঘ সম্মেলনে ২০২০ সালের মধ্যে এলডিসির সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। সামনেই ২০২০। অর্থনীতিবিদেরা আপাতত এ লক্ষ্য পূরণের সম্ভাবনা দেখছেন না।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব

কোন দেশ কতটা ধনী বা গরিব, সেটাকে বিশ্বব্যাংক নিজের মতো বিবেচনা করে। মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় দিয়ে বিবেচনা করা বিশ্বব্যাংকের ভাগগুলো এক হিসাবে তিনটি, আরেক হিসাবে চারটি। তিনটি ভাগ এ রকম—নিম্ন আয়, মধ্যম আয় এবং উচ্চ আয়ের দেশ। মধ্যম আয় আবার দুই রকম—নিম্ন-মধ্যম আয় এবং উচ্চ-মধ্যম আয়। সে হিসাবে বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্যম আয়ের মধ্যে আছে।

বাংলাদেশ যে নিম্ন আয় থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, সে ঘোষণা বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ২০১৫ সালের ১ জুলাই। যেসব দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৫ ডলার বা তার নিচে, বিশ্বব্যাংকের বিবেচনায় সেগুলোই হচ্ছে নিম্ন আয়ের দেশ। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৫ সালের ১ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ ছিল। নিম্ন আয়ের দেশকে সহজ বাংলায় বাঙালিরা গরিব দেশ বা দরিদ্র দেশ বলে আসছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার পর্যন্ত সবাই মধ্যম আয়ের দেশ। এর মধ্যে আয় ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে ৪ হাজার ১২৫ পর্যন্ত হলে তা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ, আর ৪ হাজার ১২৬ থেকে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার পর্যন্ত হলে সেটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ। মাথাপিছু জাতীয় আয় এর চেয়ে বেশি হলেই হবে উচ্চ আয়ের দেশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ ডলার।

বিশ্বব্যাংকের ২০১৭ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে নিম্ন আয়ের দেশ ৩১টি, নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ ৫২টি, উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ ৫৬টি এবং উচ্চ আয়ের দেশ ৮০টি।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মাথাপিছু আয় ২০২৮ সালে দ্বিগুণ হলেও আমরা নিম্ন-মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশই থাকব। কারণ, ১০ বছরেই তো মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ১২৬ ডলারে নিয়ে যেতে পারব না।’

  • প্রথম আলো/মার্চ ২৫, ২০১৮

যানজটে বছরে ক্ষতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা


যানজটের কারণে রাজধানীতে একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে ৫ কিলোমিটার। ১২ বছর আগেও এই গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকার ফলে যাত্রীদের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এই চাপ আবার কাজ করছে অন্যান্য রোগের উৎস হিসেবে।

পাশাপাশি যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যানজটের পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও যে বাড়বে, তা বলা বাহুল্য।

গতকাল শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীর যানজট: আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বৈঠকের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বুয়েটের এআরআই-আইটিএন ভবনের সেমিনার হলে।

বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এআরআইয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। তাতে যানজটের আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যানজটের কারণ, যানজট থেকে উত্তরণের উপায়সহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।

আর্থিক বিষয়

২০১৫ সালের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, ঢাকায় দৈনিক প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ যাত্রা (ট্রিপ) হয়। একজন মানুষ কোনো একটি বাহনে উঠে নির্ধারিত গন্তব্যে নামলে একটি যাত্রা বা ট্রিপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে যানজটে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।

যানজটের আর্থিক ক্ষতি নিয়ে একাধিক গবেষণায় ভিন্ন ভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক ক্ষতি হচ্ছে। এ থেকে বলা যায়, গড়ে বছরে যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। তবে সড়ক খাতে বিনিয়োগ, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও যানজট নিরসনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই ক্ষতির অন্তত ৬০ শতাংশ বা ২২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা যেত।

স্বাস্থ্যগত সমস্যা: যানজটের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যে বড় প্রভাব পড়ছে বলে গোলটেবিল বৈঠকে জানানো হয়। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, যানজট ৯ ধরনের মানবিক আচরণকে প্রভাবিত করছে। দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব থেকে শুরু করে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মতো বিষয়গুলো যানজটে প্রভাবিত হচ্ছে।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (নিটোর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মুহম্মদ সিরাজ-উল-ইসলাম বলেন, যানজটে বসে থাকলে মানসিক চাপ তৈরি হয়। নানান রকম দুশ্চিন্তা ভর করে। এই মানসিক চাপ সব ধরনের রোগের উৎস। চাপের ফলে নাগরিকদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, যুদ্ধংদেহী মনোভাব চলে আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারাহ্‌ দীবা বলেন, যানজটের কারণে মানসিক অশান্তি তৈরি হয়, যার প্রভাব পড়ে পরিবারসহ বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্কে। ব্যক্তির কর্মদক্ষতা, কর্মস্পৃহা নষ্ট হয়ে যায়। যে চালকেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটানা গাড়ি চালান, তাঁদের দুর্ঘটনা ঘটানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। আর উচ্চমাত্রার শব্দদূষণের ফলে দীর্ঘস্থায়ী বধিরতা তৈরি হতে পারে।

হেঁটেই পৌঁছানো যাবে আগে: এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ।

২০১৬ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ‘নগর পরিস্থিতি-২০১৬: ঢাকা মহানগরে যানজট, শাসন ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় গাড়ির গতিসীমা ছিল গড়ে ২১ দশমিক ২ কিলোমিটার। যানবাহনের পরিমাণ যদি একই হারে বাড়তে থাকে এবং তা নিরসনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম।

বুয়েটের এআরআই-আইটিএন ভবনের সেমিনার হলে গতকাল ‘ঢাকা মহানগরীর যানজট: আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বক্তব্য দেন এআরআইয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ। 

যানজটের পেছনের কারণ: মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ঢাকায় বড় সড়কের সংখ্যা হাতে গোনা। ট্রাফিক মোড়গুলো শহরের বিষফোড়া। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সড়কে অবৈধ পার্কিং, ফুটপাতের অবৈধ দখল, ভাসমান বিক্রেতাদের সড়ক দখল, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো, খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কের প্রশস্ততা কমে যাওয়া অন্যতম। তা ছাড়া দুই শতাধিক কোম্পানির অধীনে শহরের বাস সেবা পরিচালিত হওয়ার ফলে যাত্রী ওঠানো নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর দায়িত্বহীনতাও যানজটের অন্যতম কারণ।

আবার বৈঠকে একাধিক আলোচক বলেন, ঢাকা বর্তমানে নাগরিকদের শহর নয়, ‘গডফাদারদের’ শহর। ঢাকার কয়েক লাখ অনিবন্ধিত রিকশা এবং ফুটপাতের কয়েক হাজার অবৈধ হকারের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন গডফাদাররা। বাস, লঞ্চ টার্মিনালগুলো গডফাদারদের দখলে থাকায় যাত্রীসেবার বদলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

সমন্বয়হীনতা: বৈঠকে আলোচকেরা সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সমালোচনা করেন। তাঁদের মতে, সরকারি সংস্থাগুলো শহরকে বসবাস উপযোগী করে গড়ে তোলার পরিবর্তে শহরকে ধ্বংসের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, সরকারি এক সংস্থার সঙ্গে অন্য সংস্থার কাজে সমন্বয় নেই।

এআরআইয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, সব পেশার, সব বয়সী মানুষ যানজটের ফলে ভুক্তভোগী। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যানজট নিরসনে কাজ করছে। কিন্তু তাদের কার্যক্রমে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। যানজট নিরসন একক কোনো সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয়। সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, বিভিন্ন সংস্থা সমন্বয়হীনভাবে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করায় যানজট বাড়ছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা একটি সড়ক দিনের বেলায় ভালো দেখে এসেছেন, রাতের বেলায় সে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, শহরে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও অনেককেই যানজটের কারণে সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। যানজট কমানো গেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও কমানো যেত।

সমাধানের পথ: বৈঠকে আলোচকেরা ঢাকার যানজট কমাতে বাস সেবা আরও বিস্তৃত ও উন্নত করা, রেলে যাত্রী পরিবহন বাড়ানো, ব্যক্তিগত গাড়ি কমানো, ঢাকায় জনসংখ্যার চাপ কমাতে বিকেন্দ্রীকরণসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন।

বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক সরওয়ার জাহান বলেন, ২০১৫ সালে করা আরএসটিপি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। যাঁরা এ পরিকল্পনা করেছেন, তাঁরা ঢাকার সমস্যা কতটা মাথায় রেখে করেছেন তা ভাবনার বিষয়। ঢাকার যে আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, তাতে বাস সেবা মূল সমাধান। ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিষিদ্ধ না করলে এ শহর অকার্যকর হয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, যানজট সমস্যাটি বহুমাত্রিক। ঢাকায় যদি জনসংখ্যা বাড়তেই থাকে, তাহলে পরিকল্পনা করে সমাধানে পৌঁছানো যাবে না। ঢাকায় জনসংখ্যার চাপ কমাতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা গড়তে হবে।

যানজট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে হবে বলে মনে করেন এআরআইয়ের পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, পৃথক বাস লেন তৈরি, ট্রাফিক মোড়গুলোর বিষয়ে পরিকল্পিত ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

  • প্রথম আলো/মার্চ ২৫, ২০১৮ 

Editorial - Elusive tale of comprehensive freedom fighter list



A COMPREHENSIVE list of freedom fighters still remaining elusive, 47 years after Bangladesh’s independence, as the government has suspended the latest move in this direction citing irregularities in the process is worrisome on a couple of counts. While the nation needs to know who fought in the war for the national independence of Bangladesh, in matters of paying them due respect, such a list is also of utmost importance in the interest of historical records. Besides, being freedom fighters entails some benefits in recognition of their sacrifice, or the supreme sacrifice who laid down their lives.

With a flawed list being in place, it is highly unlikely for the government to properly afford them the honour that they deserve. The number of freedom fighters enlisted by successive governments in five lists vary greatly. In order to attend to the issue, the Awami League-led government in October 2014 took up an initiative to prepare the ‘authentic list of freedom fighters.’ The upazila-level scrutiny began in January 2017 but the government on March 11 this year suspended for an indefinite period the scrutiny of new names that came up for inclusion as freedom fighters over irregularities and guidelines not being properly followed.

The situation has only made the hopes for a comprehensive list of freedom fighters uncertain. The liberation war affairs minister is reported to have said that upazila scrutiny committees forwarding recommendations without following guidelines and without providing reasons for the inclusion of the names in the list of freedom fighters led to the suspension of the entire scrutiny process and argued that there have been some irregularities in the scrutiny process.

Irregularities in scrutiny and no adherence to the guideline by the committees cannot be a basis for the suspension of the process for an indefinite period. The nation needs the list and the government should have no reason to delay the process. Jatiya Muktijoddha Council, which is supposed to complete the scrutiny at 472 upazilas and at eight cities by May 20, is yet to receive scrutiny reports from 116 upazilas for cases against the scrutiny process. Besides, the government on January 17 lowered the age to twelve years and a half at the time of war for freedom fighters to be enlisted. The age limit had been 13 before that, since June 19, 2017 when the government reduced the age limit to 13 years from 15 years, which had been in place since 2014.

The uncertainty that looms large over the comprehensive list of freedom fighters, the suspension of the scrutiny process, delay in preparing the scrutiny report by a large number of upazila committees and the change in the definition of war-time age for freedom fighters to be included in the list have all left scope for further irregularities in other spheres of national life. People not taking part in the war but being listed could get entitlements that are solely meant for people who actually fought the war. The government must immediately look into the issues.

  • Courtesy - New Age/March 25, 2018

Democracy now in prison : Prof Emajuddin


Professor Emajuddin Ahmed, former vice-chancellor of Dhaka University, on Saturday equated jailing of Bangladesh Nationalist Party chairperson Khaleda Zia with confinement of democracy. ‘The country’s democracy is now confined in prison,’ he said.

Emajuddin said that the government had thought BNP would be crushed if its chairperson was sent to jail, but it ‘has emerged as the most united political party in the country’. 

He made the remarks while addressing a discussion meeting, arranged by pro-BNP social platform Public Voice: Working for Bangladesh, in a Sylhet hotel in the evening.

Terming the BNP founder Ziaur Rahman a pioneer of Bangladesh’s development, the senior academician said that former president Zia had not taken the country’s charge willingly, rather the responsibility was forced upon him. 

‘It is hard to say which course the nation would have taken, had Zia not accepted the responsibility of running the country at that time,’ he commented. 

Public Voice: Working for Bangladesh president Mifta Siddiquee chaired the meeting, also addressed by Sylhet mayor Ariful Haque Chowdhury, journalist union leaders Abdul Hai Shikder and Zahangir Alam Pradhan and Jatiyatabadi Samajik Sangskritik Sangstha president Mamun Ahmed.

  • Courtesy - New Age/ Mar 25, 2018

New scams hit Farmers Bank


AKM Zamir Uddin


BB probe finds Tk 500cr sanctioned flouting banking rules, procedures; Tk 367cr of the amount already becomes defaulted



Bangladesh Bank has unearthed another string of scams at the Farmers Bank involving loans of around Tk 500 crore that were sanctioned to 11 companies in violation of banking norms and procedures.

Of the amount, loans of more than Tk 367 crore that the bank's Motijheel branch gave to 10 of the companies from November 2013 to November last year have become defaulted. Some of the firms are either obscure or little-known.

The central bank has held the private bank's former chairman Muhiuddin Khan Alamgir and ex-chairman of its executive committee Mahabubul Haque Chisty largely responsible for the scams.

The irregularities are gross -- some of those outright fraud -- ranging from sanctioning loans without any application to taking loans and not using any of that for the purposes those were meant for.

The new findings came up in a BB probe in December last year, a couple of years after the central bank detected scams involving Tk 400 crore at the Farmers Bank's three branches in the capital's Gulshan, Motijheel and Shyampur.

The latest BB investigation found at least 11 counts of irregularities in disbursing the loans to the 11 companies. They are NAR Sweaters Ltd, Advanced Development Technologies, Abeda Memorial Hospital, Index Housing, Al-Faruque Bags, Nahar Farmers Group, Apollo Trade International, Mollik Aquaculture Farm, Messers Premjoy, Mac Trading and Bangladesh Development Company.


Except for NAR Sweaters Ltd, all these companies have become defaulters with the bank.

The private bank also concealed information on the defaulted loans to show inflated profit, breaching the Banking Company Act 1991.

The bank's Motijheel branch resorted to “unfair means” to show Tk 367 crore given to 10 companies as unclassified loans though those already became defaulted, according to the BB.

The branch showed only Tk 60 crore as defaulted loans till September last year. But the BB probe found that the amount was more than Tk 619 crore. The private bank had disbursed loans of Tk 1,038 crore between November 2013 and November last year, said the BB probe report.

Two ex-directors of the Farmers Bank -- Alamgir and Mahabubul -- approved a major portion of the loans, abusing their position and without taking consent from other board members, it mentioned.

The bank's Motijheel branch gave loans of Tk 130 crore to NAR Sweaters Ltd in different phases between 2016 and last year though its head office rejected the firm's credit proposals.

The branch disbursed the funds to settle back-to-back letters of credit (LCs) opened by NAR Sweaters. The RMG company's outstanding loans stood at Tk 34.39 crore when the BB carried out the investigation, said the report.

The private bank will have to pay for the LCs and create long-term loans against the firm if it fails to repay the loans in due time, it said.

NAR Sweaters already had defaulted loans of around Tk 50 crore at the Islami Bank Bangladesh Ltd (IBBL) when it opened LCs with the Farmers Bank early in 2016.

Though the Farmers Bank management knew that NAR Sweaters had overdue loans with the IBBL, it allowed the firm to open LCs, a Farmers Bank official told this correspondent.

Asked, Shahabuddin Ahmed, commercial manager of the firm, said they filed a writ petition with the High Court in 2016 for having regularised its defaulted loans with the IBBL.

The HC issued a stay order, asking the BB not to show the loans as classified, he said. 

Shahabuddin further claimed his firm paid the Farmers Bank Tk 15 crore out of its dues of Tk 34.39 crore between January 1 and March 22 this year.

The RMG company will again open LCs with the IBBL as it has recently paid the bank Tk 2.67 crore to have rescheduled its defaulted loans, he added.

Besides, Advanced Development Technologies, a realtor, got the Farmers Bank's approval to a Tk 45-crore loan as working capital within hours of opening an account with its Motijheel Branch on February 28, 2016, according to the BB.

Usually, it takes at least a couple of months for a new client to get a bank's approval to a loan.

Three months later, the Farmers Bank approved another Tk 20-crore loan to the firm though it didn't get back even part of the previous loan with repayment period of one year.

The bank gave the additional loan without verifying the realtor's repayment capability. Now, the bank is left with defaulted loans of Tk 69.34 crore that include interest.

Of the Tk 65-crore loans, the realtor and its concern Advanced Ready-Mix Concrete Industries embezzled more than Tk 20 crore through fake documents, said the BB report.

The two firms opened LCs against B&F Industrial Park, the beneficiary company, to buy stone.

In reality, no product was purchased, and the two firms misappropriated the depositors' funds with the help of some officials at the Motijheel branch.

Talking to The Daily Star, SM Anwar Hossain, chairman of Advanced Development Technologies, admitted that he is a defaulter with the Farmers Bank.

“I started repaying the loans from January this year. I am making payments twice a week. The entire loan amount will be paid back in the shortest possible time.”

He claimed he had not diverted any funds to other sectors and did not commit any wrongdoing. “I did not embezzle any funds from the bank in the name of LC.”

He also said the bank sanctioned the Tk 45-crore loan a month after he had opened an account with its Motijheel branch.

Talking to The Daily Star, an official of the Farmers Bank said Anwar had repaid only Tk 56.50 lakh from January 1 to March 13 this year.

In June 2015, the Farmers Bank board sanctioned a loan of Tk 22 crore to Abeda Memorial Hospital before the Tongi-based healthcare institute even submitted an application, according to the BB probe report.

In a bid to legitimise the loan disbursement, the branch later prepared a credit proposal, mentioning a previous date on the document.

The entire loan to the hospital became defaulted, and the amount went up to nearly Tk 27 crore with interest till November last year.

The documents on the sanctioned loans carry signatures of both Alamgir and Mahabubul, according to the BB.

Ismail Hossain Sirajee, managing director of Abeda Memorial Hospital, told this newspaper that he failed to repay the credit instalments in due time as he was abroad for the last seven to eight months.

“I repaid Tk 89 lakh in different phases between January and March. I will make further payments by this month for having the defaulted loans rescheduled,” he said.

However, one of the Farmers Bank officials said Ismail had repaid Tk 74 lakh from January 1 to March 13 this year. 

The BB probe also unearthed that the private bank approved Tk 17 crore to Index Housing, flouting the banking rules.

Mahabubul, ex-chairman of the bank's executive committee, sanctioned the loan without even placing the loan proposal before the board. The bank's head office initially rejected the proposal, but Mahabubul approved the loan anyway.

He also used the executive committee's stamp on the documents to legitimise the credit disbursement, found the BB.

As of November last year, Index's defaulted loans with the bank stood at Tk 20.37 crore. However, the bank showed the amount to be unclassified.

Rejaul Kabir, manager of Index, claimed that the company was not a defaulter. Rather, it was the bank which was at fault.

He said Index had to go through financial hardship as the bank failed to disburse the funds in full.

Seeking anonymity, a Farmers Bank official said the housing company repaid only Tk 4.50 lakh from January 1 to March 13 this year.

Apart from these firms, Al-Faruque Bags, a concern of Bogra-based Al-Faruque Group, got loans of Tk 36 crore from the Motijheel branch in January, 2016, though it was a defaulter with another bank.

In August last year, the branch disbursed an additional Tk 14 crore to the firm despite its poor record of repayment.

Al-Faruque's total defaulted loans stood at Tk 47.19 crore as of March 13 this year.

This correspondent recently visited the firm's corporate office in the capital's Green Road area where one of its officials told him that the company was not manufacturing any bags.

“I joined the company two months ago but I have not found any of our factories producing bags,” said the official, seeking anonymity.

Asked, one of the Farmers Bank officials said that before approving the loan, the bank did not inspect the company's factories to verify whether it produces bags.

Flouting the banking rules, the Farmers Bank also gave loans of Tk 72.42 crore to Nahar Farmers Group, Tk 54.79 crore to Apollo Trade International, Tk 16.79 crore to Mollik Aquaculture Farm, Tk 25.50 crore to Messers Premjoy, Tk 10.95 crore to Mac Trading and Tk 22.82 crore to Bangladesh Development Company, according to the BB report.

The loans given to these companies have become defaulted, it said.

BB DIRECTIVE
In mid-January this year, the BB directed the Farmers Bank to conduct a functional audit on its Motijheel branch's credit accounts with outstanding amount of Tk 1 crore each and above.

The BB asked the bank to submit the audit report by February 28 but it failed to do so.

Farmers Bank Managing Director Md Ehsan Khasru told this newspaper that the bank employed Artisan Chartered Accountants in mid-January to conduct the functional audit.

On January 4, Ehsan was appointed to replace AKM Shameem, who was sacked by the BB on December 19 for failing to protect the depositors' interests.

Ehsan said steps will be taken in line with the recommendations of the chartered accountancy firm.

A number of defaulter clients, including Advanced Development, Abeda Hospital and Index, applied to the bank for having their defaulted loans rescheduled, he said.

Contacted, ex-Farmers Bank chairman Alamgir, also an Awami League lawmaker, said he had not sanctioned any loans, using his executive power.

“The board of directors of the Farmers Bank officially sanctioned all the loans. The defaulted loans of the bank were below 4 percent when I was the board chairman.”

Asked why the branch concealed data on the defaulted loans, Alamgir, also ex-home minister, said the information was incorrect as the branch had no scope to hide data on non-performing loans.

Despite repeated attempts, Mahabubul could not be reached for comments.

The two resigned from the bank board in November last year after the BB asked them to quit over their alleged involvement in loan scams.

Asked whether the BB would take any punitive measures against the persons involved in the scams, BB spokesperson Debashish Chakraborty declined to comment.
  • The Daily Star/March 24, 2018