Search

Tuesday, March 27, 2018

অর্থনীতিতে অগ্রগতি সাম্য মেলেনি


মহান স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকী পালন করছে দেশ। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শোষণ-বঞ্চনার নাগপাশ ছিন্ন করে সদ্য ভূমিষ্ঠ রাষ্ট্রটি নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ প্রস্ফুটিত আলোর মধ্যগগনে। ৪৭ বছরের এই পথচলায় বহু অর্জনে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ। অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে বিশ্বের বুকে দেশের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছে এদেশের কর্মপাগল মানুষ। স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকীর ঠিক আগে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার যোগ্যতার স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।

নানা সূচকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের সামনে এখনো অর্থনৈতিক সমতা, সুশাসন ও কার্যকর গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি বৈষম্য বেড়ে চলেছে সমানতালে যা স্বাধীনতার মূল চেতনার পরিপন্থি। একইসঙ্গে সুশাসন ও জবাবদিহিতা পুরো নিশ্চিত না হলে মানুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা করাটাও কঠিন। কার্যকর গণতন্ত্র আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও সামনে নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়নের জন্য জরুরি বলে মনে করেন তারা। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন স্বাধীনতার এতো বছরে আমাদের অর্জন ও সম্ভাবনা অনেক। তবে স্বাধীনতার পর থেকে যে ধারাবাহিকতায় অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছিল তা এক সময় ধীর হয়ে যায়। বাংলাদেশের গত ৪৭ বছরের ইতিহাসে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বহুদূর এগিয়েছে দেশ। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এগুলো বড় প্রাপ্তি। তবে সামনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। 

তিনি বলেন, সব থেকে বড় দুচিন্তার বিষয় হলো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা জিইয়ে আছে। দেশের বড় দলগুলো আলোচনায় বসছে না। আর আলোচনায় বসবে- এমন সম্ভাবনাও খুব বেশি নেই। ফলে আগামীর দিনগুলো সুখকর নাও হতে পারে। অর্থনীতির উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একটি দেশের উন্নয়নের জন্য প্রথমে দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। যা আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। অন্য চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে আছি। এখন দরকার দারিদ্র্যবিমোচনে বেশি মনোযোগ দেয়া। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ গত কয়েক বছর ধরে একই জায়গায় স্থির রয়েছে। এই ধারা থেকে বের হতে হবে। এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। তিনি বলেন, আমাদের সুশাসনের অভাব রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হবে। সহজেই ব্যবসা করা যায় এমন তালিকায় বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১৭৭ নম্বরে। এতে বোঝাই যাচ্ছে দেশের ব্যবসার পরিবেশ কোথায়? এই জায়গা থেকে উত্তরণে আমাদের কাজ করতে হবে। এসব বিষয় আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশকে বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ি। ৪৭ বছর পর সেই বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নেই। অনেকে এগিয়েছে। ইতিমধ্যেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। এগুলো ভালো অর্জন। এটাকে ধরে রাখতে হবে। টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, এখন দরকার সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন। প্রয়োজন সমতাভিত্তিক উন্নয়ন। যেন সবাই সমান সুযোগ পায়। তিনি বলেন, দিন দিন বৈষম্য বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ লোকের অভাব। এগুলোকে দক্ষ করতে হবে। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। প্রশাসনকে রাজনীতি মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ক্ষমতার কাছাকাছি যারা আছে তারাই বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। এ কারণে টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার সমতাভিত্তিক কার্যকর উদ্যোগ। 

  • মানবজমিন/মার্চ ২৭,২০১৮

No comments:

Post a Comment