Search

Monday, March 19, 2018

লাশের নামটা - ‘জাকির হোসেন মিলন’

#ZakirHossainMilon

দিপক চন্দ্র 



ছেলেটাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। অভিযোগ আছে। পুলিশ তার হাত ও পায়ের বিশটা আঙুল থেকে নখ উপড়ে ফেলেছিলো। ছেলেটার একমাত্র অপরাধ , সে বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য সমাবেশে গিয়েছিলো। এদেশের একজন বুদ্ধিজীবীরও গতরাতে খাদ্য গিলতে কিন্তু কোনই সমস্যা হয়নি। আমার পরিচিত একজন য়ুনিফর্মওলার গতকাল সকালে য়ুনিফর্ম পরতে কোনো গ্লানি হয়নি। গত মাসে তাদের বেতন হয়েছে ঠিকঠাক। বাংলাদেশের সব য়ুনিফর্ম গতরাতে হ্যাঙ্গারে ঘুমাতে গিয়েছে এই আশ্বাসে যে সকালবেলা তারা প্রচুর প্রচুর আব্রু ঢাকবে। বিলকুল সব ঠিক। গাছের পাতাটিও নড়বে না। নড়বে কি?

শুধূ যাদের দু-বছরের একটা ছোট্টো মেয়ে আছে, তারাই হয়তো শুধু কাজ করতে পারছে না আজকে।

আপনারা দয়া করে লাশটার নামটা মনে রাখবেন।

জাকির হোসেন মিলন

জাকির হোসেন মিলন

জাকির হোসেন মিলন

লাশটার সত্যিই একটা মেয়ে ছিলো। মেয়েটার নাম আয়েশা। আয়েশা তার বাবার কোলে চড়তে পছন্দ করতো!  কী আশ্চর্য! সে তার বাবার কাছে যেতে চাইছে শুধু গত চারদিন ধরে। অথচ, এক সপ্তাহ পর পুরা বাংলাদেশ ভুলে যাবে, শুধু আয়েশা তার বাবার কোলে মাথা গুঁজতে পারবে না। অাজকের একুশ শতকে শোকের আয়ু একটা জিতে যাওয়া টিটোয়েন্টির সমান। হবে কি এর বেশি। হবে কি কালের কপোল তলে এক ফেঁটা জল।

আয়েশার বাবাকে য়ুনিফর্ম পরা মানুষেরা পিটিয়ে মেরেছে। তারা সময় নিয়ে, রেখে ঢেকে, রয়ে সয়ে - পয়লা সবক দিতে বেঁধে নিয়ে পিটিয়েছে একটা পিতাকে। খুবই ছাপোষা সাধারণ পিতা - এদেরকে মেরে ফেললে কিছু হয় না কারো - শুধু আয়েশা ছাড়া। আমাদের পুলিশের হাত ডিফেন্সলেস মানুষকে চুপিসারে  পিটিয়ে মেরে ফেলায় খুবই চমৎকার!

আমার বাবা ৭০ এর দশকে সৈনিক ছিলেন এদেশে। তাদের বিরুদ্ধে আজকের দিনের যেকোনো য়ুনিফর্ম-পরিহিত কেউ অভিযোগ করবেন যে তারা প্রফেশনাল ছিলেন না। অাদৌ!

অভিযোগ সত্য। তারা আসলেই প্রফেশনাল ছিলেন না। আমি যখনই আমার বাপ-চাচাদের কথা কল্পনা করি, কেন যেন মনে হয়, তাদের কেউ না কেউ, আয়েশার বাবার হত্যাকাণ্ড আজ সকালে মেনে নিতেন না। তাদের মধ্যে কেউ না কেউ আজ সকালে পুরোপুরি নন-প্রফেশনালই থাকতেন। তাদের মাঝে কেউ না কেউ তার দুই বছরের আয়েশার চোখে তাকিয়ে বাংলাদেশের সব বাবাকে দেখতে পেতেন।

অবশ্যই বাংলাদেশে ওরকম নন-প্রফেশনাল য়ুনিফর্ম আর নেই।

আজ রাতেও বাংলাদেশের সব য়ুনিফর্ম গত রাতের মতো ঘুমাতে যাবে এই ভেবে যে সকালবেলা তারা প্রচুর প্রচুর আব্রু ঢাকবে।

No comments:

Post a Comment