Search

Thursday, March 29, 2018

কারারুদ্ধ এক যুবকের কথা


ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম



নিরাপরাধ, নিরীহ যুবক! মিথ্যা মামলায় এখন কারাগারে। যদিও লেখাটি কারারুদ্ধ যুবক ও তার পরিবারকে নিয়ে, দেশের মানুষ কতটা নিপীড়ন, নির্যাতন,অন্যায়, অবিচার ও দুঃশাসনের মধ্যে আছে এই লেখাটির তার একটি চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস। যুবকটি পাঁচমাস বয়সী এক শিশুর পিতা, মাঝবয়সী এক নারীর স্বামী ও আশি বছর বয়সের এক বৃদ্ধা জননীর সন্তান!

কি তার অপরাধ সে বা তার পরিবার জানে না। কারাবাসী এই যুবকটি লুটেরা, অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, ইয়াবা ব্যবসায়ী, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী বা খুনি কোনও কিছুই নয়। সে রাষ্ট্র বা সমাজবিরোধী কোনো কাজের সাথেও জড়িত নয়! সে কখনও কারও উপকার না করতে পারলে ক্ষতি করেনি এটা জোর গলায় বলা যায়।

সে এখন কারাগারে থাকবে স্ত্রী-সন্তান ও মা-সহ পরিবার  ফেলে কোন দুঃখে? অবলা শিশু রক্তের সম্পর্কের কারণে মা-বাবাকে চিনে এবং তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে। হতভাগ্য যুবকের পাঁচমাসের শিশুটি এখনও কথা বলতে পারে না। বাবা ডেকে বাবাকে না পাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু প্রতিদিনই এখন একজনকে খোঁজে। জন্মের পর থেকে যে মানুষটাকে সবসময় দেখতো, যে মানুষটির বুক জুড়ে ঘুমাতো, যার সাথে খেলা করতো,যে  মানুষটি  তাকে আদর, স্নেহ ও ভালবাসা দিত, সেই মানুষটিকে কয়েকদিন থেকে আর দেখে না। কথা না বলতে পারলেও শিশুটি চোখের ভাষায় তার বাবাকে না পাওয়ার অনুভূতিটা প্রকাশ করে প্রতিনিয়ত।

শিশুর অপরাধ কি? কেনো সে বাবার আদর, স্নেহ-মমতা ও ভালবাসা থেকে বঞ্চিত কেউ কি বলতে পারেন?  কোনো গৃহবধুর নিরাপরাধ স্বামীকে অাচমকা কারাগারে নিক্ষেপ করা মানে গৃহবধুকে অথই সাগরে ফেলার শামিল। ৫ মাসের শিশু ও ১২ বছরের স্কুল পড়ুয়া ছেলে, বৃদ্ধা শাশুড়িসহ পরিবারের সকল সদস্য নিয়ে এই গৃহবধুর মানুষিক ও আর্থসামাজিক অবস্থা কি হতে পারে তা আমাদের কল্পনারও বাইরে। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম মানুষটি আজ মিথ্যা মামলায় কারাগারে। স্বামীর স্নেহ-ভালবাসার কথা বাদই দিলাম, এই পরিস্থিতিতে গৃহবধু পারিবারিক দৈনন্দিন কাজকর্ম নিয়ে কতটা কঠিন সময় অতিক্রম করছেন, তা যারা এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে তারাই শুধু বুঝতে পারবে। আশি বছর বয়সের এক বৃদ্ধা মায়ের স্নেহের সন্তান নিরাপরাধ ছোট ছেলে মিথ্যা মামলায় এখন কারাগারে। মা প্রহর গুনছে প্রতিনিয়ত কবে তার আদরের ছেলেটা তার কাছে ফিরে আসবে। মার প্রতীক্ষার আর শেষ হচ্ছে না, কবে শেষ হবে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অার কেউ জানে না। মিথ্যা মামলা ও যুবককে নিরাপরাধ বলার কারণ, তার বাসা রাজশাহীতে, কিন্তু পুলিশ ২০১৭ সালে ঢাকায় এক মিথ্যামামলায় তাকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পল্টন থেকে গ্রেপ্তার করেছে। ২০১৭ সালে যখন পুলিশ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্য এইমামলাটি করে তখন এই মানুষটি ছিল তার আবাসস্থল রাজশাহীর বাগমারাতে। পুলিশ মিথ্যা মামলায় শুধু গ্রেপ্তার করেই ক্ষান্ত হয়নি, জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ড নিয়েছে। বন্দিজীবন দীর্ঘায়িত করতে বারবার এই মিথ্যা মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে আদালতের বিচারক মামলার শুনানির তারিখ একের এক পরিবর্তন করছেন। অথচ আদালতে লুটেরা, অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, ইয়াবা ব্যবসায়ী, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী বা খুনিদের প্রতিনিয়ত জামিন হচ্ছে।

মিথ্যা মামলায় কারাবাসী এই যুবকের অপরাধ কি, কেনোই বা সে কারাগারে, আর কেনোই বা স্ত্রী-সন্তান, মা-সহ পরিবারের সদস্য থেকে দুরে? তার অপরাধ সে পাবরবারিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দেওয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নিজ জন্মস্থান রাজশাহী-বাগমারার জনগণের পাশে দাঁড়ানো ও নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করা। তার অপরাধ বন্যার সময় বন্যাদুর্গত ও বানভাসী অসহায় মানুষকে সহায়তা প্রদান, তীব্র শীতে দুস্থ ও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদান, রোজার সময় সর্বসাধারণের জন্য ইফতার পার্টি আয়োজন, স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। পারিবারিক সংগঠন দেওয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এসব স্বেছাসেবী কাজেরমধ্য দিয়ে কারাবাসী যুবকটি এলাকায় নাকি বিএনপিকে সংগঠিত করছে। শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র, মানুষকে ফ্রি চিকিৎসা, কুল-কলেজ ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবং বানভাসী অসহায় মানুষকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার সময় এই যুবক তাদের পরিবারিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শুধু কি বিএনপির লোকে সহযোগিতা করেছিল, নাকি ধর্ম-বর্ণ ও দল-মত নির্বিশেষ এলাকার সকল দুস্থ, অসহায় ও অতি দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করেছিল?  এই যুবকের সবথেকে বড় অপরাধ সে বিএনপি করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সর্ববৃহৎ, জনপ্রিয় ও গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বিএনপি ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠার পর জনপ্রিয় দল হিসেবে গত ৩৯ বছরে দেশের জনগনের সমর্থন নিয়ে পাঁচবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। বিএনপি তো দেশে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয় যে বিএনপি করা অপরাধ হবে? এ ছিল শুধু এক কারাবাসী যুবক ও তার পরিবারের উৎকন্ঠা, শঙ্কিত ও ভয়াবহ অনুভূতি, আকুতি ও অবস্থান। তারপরও যুবকের ৮০ বছর বয়সের বৃদ্ধ মাতা বলেছেন, যে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বৃহৎ জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় সাজানো রায়ে কারাগারে, সেখানে আমার নিরাপরাধ ছেলের কারাবাস নিয়ে আমি চিন্তিত নই।এত কিছু পরও আমরা চাই দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার ফিরে আসুক। গত তিন বছরে বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৭৮ হাজারের বেশি, আর তাতে আসামী করা হয়েছে ১৮ লক্ষ নেতা কর্মীকে। গত ৯ বছরে বিএনপির ১২ হাজার ৮৫০ জনের বেশি নেতা-কর্মী রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার এবং ৩০০ নেতাকর্মী গুম হয়ে এখনো ফিরে আসেনি।

বর্তমান অবৈধ সরকারের আমলে যারা গুম-খুন, হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাচ্ছেন তাদের পরিবার তাহলে কতটা ভীত, আতংকিত পরিস্থিতির মধ্যে আছেন একবার চিন্তা করুন। ২০০৭ সালের এক এগারোর সেনা সমর্থিত কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে জিয়া পরিবার ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে ধ্বংস এবং রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দুরে রাখার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে-বিদেশে জিয়া পরিবার ও বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে টার্গেট করে দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন কল্পকাহিনী তৈরির মাধ্যমে তাঁদের গ্রেপ্তার করিয়ে শারীরিকও মানসিক ভাবে নির্যাতন এবং  তাঁদের চরিত্র হনন করেন। তার ধারাবাহিকতায় ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার ও তার দোসররা জিয়া পরিবার ও বিএনপিকে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন ও ধ্বংস করার জন্য বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রীতিমতযুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধ একশ্রেণীর পত্রিকায় মিথ্যা ও বানোয়াট খবর  রীতিমতো উৎপাদন করা ও ছাপা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন অবৈধসরকার ও সরকারি দল দেশে আগে উন্নয়ন ও পরে গণতন্ত্র তত্ত্ব চালু করে রাষ্ট্র শাসনের নামে জনগণের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তথা বিএনপিকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা না করে সরকার মামলা-হামলা ও গুম-খুনের পথ বেছে নিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে হয়রানি করতে বানোয়াট মামলা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপিকে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হচ্ছে না।পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মিদের চার দেয়ালের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। শোনা যাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মিদের ওপর যেকোনো সময় ক্র্যাকডাউন চালানো হতে পারে। তাদেরকে ক্রসফায়ার, মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিএনপি ছাড়াতে বাধ্য করার চক্রান্তও করা হতে পারে। গত ১৬ই মার্চ ওবায়দুল কাদেরের বিএনপির হাজার হাজার লোক আওয়ামী লীগে যোগ দেবে এবং নির্বাচনে তাদের বিজয় আনুষ্ঠানিকতা এই বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়।

বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে তথাকথিত মিথ্যা দুর্নীতি মামলার সাজানো রায়ে ৫ বছরের জেল এবং দুই কোটি টাকা জরিমানা করে কারাগারে রাখা হয়েছে। বিএনপি ছাড়াও দেশের সাধারণ জনগণ, অরাজনৈতিক নাগরিকসমাজ, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালীরাষ্ট্র এ বিচারের বিশ্বাসযোগ্যতা ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং বেগম জিয়া ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করে। বেগম জিয়াকে রাজনীতিও নির্বাচন থেকে দুরে রাখার জন্য বর্তমান অবৈধ সরকার পরিকল্পিত ভাবে এটা করেছে। সরকার মনে করেছিল দলের চেয়ারপার্সনকে কারাগারে নিলে তার মুক্তির জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা জ্বালাও, পোড়াও এবং ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করবে এবং দলের ঐক্য বিনষ্ট হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের নির্দেশমত বিএনপি দলীয় নেতাকর্মিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বৈরী আচরণ সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধ ভাবে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে।বর্তমান অবৈধ সরকার ও সরকারি দল শত চেষ্টা করেও বিএনপিতে ভাঙন ধরাতে পারেনি।  বিএনপি এখন সারা দেশ অনেক বেশি সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ। অবৈধ সরকারের চক্রান্ত সফল হয়নি। পক্ষান্তরে, কারাবন্দি বেগম জিয়া আগের চেয়ে এখন আরও বেশি জনপ্রিয় ও শক্তিশালী। ৮ই ফেব্রুয়ারি মিথ্যামামলার সাজানো রায়ের পর বেগম জিয়া দেশনেত্রী থেকে দেশমাতাতে পরিণত হয়েছেন। তিনি দেশের সাবেক স্বাধীনতার ঘোষক ও রণাঙ্গনের যোদ্ধা এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী । দেশের জনগণের প্রত্যয়দৃপ্ত  বিশ্বাস তিনি জিয়ার আদর্শ স্বাধীনতা, দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতীক। শত বাধা-বিপত্তি, জেল-জুলুম, নিপীড়ন ও নির্যাতনের মধ্যে থেকেও তিনি যেটা অন্যায় মনে করেন তার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন। তিনি কখনও অন্যায়ের সাথে অাপস করেননি এবং করবেনও না-এটা মানুষের বিশ্বাস। দেশের মানুষের মনেপ্রাণে এটাও বিশ্বাস যে বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশমাতা বেগম জিয়া বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শকে সমুন্নত রাখবেন । মানষের ভোটাধিকার ও গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন জয়ী হবে।

  • লেখক - সিনিয়র সায়েন্টিস্ট। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাস্ট্র।  


No comments:

Post a Comment