Search

Wednesday, March 14, 2018

‘হাঁ আর না’- ভূবনের এমপিরা

বিশ্বজিত রায় 

তেসরা মার্চ প্রথম আলো’য় একটি গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে এমপিদের ভূমিকা হ্যাঁ ও না-তেই শেষ। আইন প্রণয়নে তাদের ভূমিকা নেই বললেই চলে। যদি থেকেও থাকে তা কেবলই নিমিত্ত মাত্র।  প্রতিবেদকের কথায় ঘুরেফিরে  ২০১৭ সালে শেয়ালের কাছে পোষানি দেওয়া কু‌মিরের পাঁচ ছানার মতো মাত্র নয়জন নেটিশ দিয়ে বিলের ওপর আলোচনা করেন । এদের মধ্যে সরকারি দলের কোনও এমপি নেই। মনে হয় এরা সব একমেবাদ্বিতীয়ম দর্শনে বিভোর। আলোচনা করেছেন দুজন স্বতন্ত্র এমপি। বাকিরা ‘কথিত’বিরোধী দলের। আর সবাই হাঁ/না করে দায় সেরে‌ছেন। এই নয়জন বিগত এক বছরে ৪ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।

এমপিদের ‌বিলের আলোচনায় সক্রিয় অংশ না নেওয়ার কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশ্লেষকরাও এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তাঁরা বলছেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী  বিলর ওপর আলোচনার জন্য নোটিশ বা সংশোধনীর জন্য নোটিশ দিতে এমপিদের ‌জন্য কোন বাধা নেই। তবু তারা সেটাও করেননি।

বিলের ওপর সাধারণত আলোচনা হয় সংসদীয় কমিটিতে। কিন্ত সেখানেও কমিটির দশ জন সদস্যের সবাই অংশ নেন না। কথা বলে বিতর্ক তুলে বাধা দেয় মূলত বিরো‌ধী দল [সেটা তাদের যথার্থ কাজও] আর সাধারণত সরকারি দল বিশেষ করে আমাদের দেশে বসে বসে জাবর কাটে আর নয় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ‘উন্নয়ন শুঁকে ‘আমিষের’ খোঁজে বেড়াতে ব্যতিব্যস্ত সময় কাটান সরকারি দলের এমপি মহাদয়গণ। তাই যেসব বিল সংসদে উপস্থাপিত হয় তাতে বড়ো একটা অদলবদল হয় না।

জাতীয় সংসদের কার্যক্রমের নিয়মিত পর্যালোচক ও গবেষক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যশনালের মুখপাত্র  ইফরতখারুজ্জজামান‌ের বক্তব্য হলো সংসদের কাঠামো এমনই হয়ে গেছে যেন আইন প্রণয়ণ অনেকটাই একদলীয় একচ্ছত্র বিষয়। এই অন্ধ গোলকধাঁধাঁ থেকে পরিত্রাণের পথে অন্তরায় হলো রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর গণতন্ত্রর চর্চা বলেছে টিআইবি। তবু ইফতেখারুজ্জামানের বক্তব্যে একথা পরিষ্কার তিনি ‌আসলে যেখানটায় আঘাত করা দরকার সেখানেটায়ই হাত দিতে ভয় পেয়েছেন। বা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছেন। অসির নিচে নাকটা ‌তিনি এগিয়ে দিতে পারেননি। সোজা সাপটা বলতে পারেননি দেশের গণতন্ত্র চর্চাটাই এখন ট্যাবু। 
তবে সে যাক।

আমরা এখন প্রায়োরিটি ‌নির্ণয় করতে গিয়ে গণতন্ত্রকে উন্নয়নের পিছে পিছিয়ে দিয়ে‌ছি।আমাদের দরকার আগে উন্নয়ন। কার উন্নয়ন। চিরবঞ্চিত মানুষের  জন্য  চোখের জন্য দেখনাই চিকনাই উন্নয়ন। উপরে কোঁচার উন্নয়ন আর (পেটের) ভেতরে ছুঁচোর কেত্তন।পরে সেজন্য ঝোপেঝাড়ে, পথে ঘাটে অঘাটে দেখছি মহতী বাণী : উন্নয়নের  মন্ত্র, ..... র গণতন্ত্র।

অর্ধশতক অাগে সচিত্র ভারত পত্রিকায় একটা নিবন্ধে কয় লাইনের একটা কবিতা দেখেছিলাম তার কয়েকটি ছত্র এখনও আমার মনে পড়ে রীতিমতো বিপ্লবী কবিতাই বটে ... ডাস্টবিন পাশে নরকঙ্কাল মাঝ দরিয়ায় ধরেছে হাল, ফিউডাল তুমি খেয়েছো গোল, ধনিকতন্ত্র তল্পি তোল।’ এখন বোধ হয় কবিতাটা একটু বদলে দিতে হবে ‘ গণতন্ত্র তুমি খেয়েছো গোল ধনিকতন্ত্র দিয়েছে  গোল!’ মাঝ দরিয়ার নাইয়া এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে মানুষকে সব পেয়েছির দেশের! দেশ চলেছে দুর্বার গতিতে অগ্রগতির পথে। বলগা-লাগাম ছাড়া উন্নয়নের জোয়ারে কি ফল যখন অর্থনীতিবিদরা হুঁশিয়ার করে দেখিয়ে দিচ্ছেন। যখন বলছেন তারস্বরে সরকার বাকশালী ফাঁদে ব্যবসায়ী-সরকার-আমলা ফাঁদে ‘মানুষ’কে বাদ দিয়ে কেননা ওরা তো অাজকের নব্য বাকশালী-আওয়ামী ‌কায়দায় ‘ফেসলেস’ মিউট‌েড মেজরিটি। অাসলে তো ভোকাল মাইনরিটি ওরাই তো সব! নেত্রীর এমন মোক্ষম বাণীতে সবাই এখন বিস্ময়বিমুগ্ধ। কেবল বিমোহিতদের বলতে বাকি,‘ আমাদের একমেবাদ্বিতীয়ম  উনিই তো আমাদের দেহিপল্লব মুদারম।

কি বলতে কি আসলে বলছিলাম সার্বভৌম জাতীয় সংসদ ও এমপিদের কথা। এরা সব বেকারার। বিল পাশ করছেন হাঁ/না দিয়ে। পোষা বিরোধী দল আছে, জোটের জট আছে। সংসদের ক‌য়েক হাজার কোটি টাকার সুরম্য প্রাসাদ আছে, কেবল সত্যিকার অর্থে নেই বিরোধী দল, নেই ছায়া সরকার । যদিও আছে বিকল্প ধরনের প্রেত সরকার যাদের ছায়াও পড়ে না মাটিতে। লজ্জা-শরমে অস্থির। কাজেই হাঁ/না ছাড়া উপায় কি?

তবে সংসদ বা জৌলুসের ভবন ছেড়ে আসি এর প্রাণভোমরা এমপিদের কথায় । কি করছেন তাঁরা দেশের বা জাতির জন্য? তার একটা খতিয়ান নেওয়া যাক। আজকের অসমান্য সংসদে আলোনাচয় ব্যয় হয় মিনিটে আশি হাজার টাকা। নবম সংসদে নষ্ট সময়ের লোকসান ছিল ১০৪ কোটি টাকা। এটাকে কি বলা হবে? টিআইবি এটাকে অপচয় বা দূর্নীতি বলেনি। আমরা একে কি বলবো জনগণের টাকার রাজসিক শ্রাদ্ধ? টিআইবি  পার্লামেন্টের ব্যয়ের হিসেবে কি কি ফ্যাক্টর হিসেবে নিয়েছে আমাদের জানা নেই। তবে একজন এমপি পান দামি গাড়ি, অফিস, কম্পিউটার, কর্মচারী, আবাস, গানম্যান নানা সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন কমিটিতে থাকার সম্মানী ও প্রভাব কি হিসেবে একজন লেজিসলেটর বা ব্যবস্থাপক হিসেবে। অথচ তাঁর এই বিষয়টিতে হাঁ না করলেই সারে। তার জন্য আরও আছে প্রজেক্ট। উন্নয়ন দেখা তাঁদের কর্ম নাহ‌লেও, তাঁরা তাদের নির্বাচনী ‌এলাকার মানুষের স্বার্থ দেখেন। এখানে একঢিলে দুই পাখি মারা সুযোগটি রয়েছে। কম লোভনীয় নয়। এহ বাহ্য। নগরে তাদের জন্য নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য আলাদা রাস্তা করে দিলে ভালো হয়।

কিন্ত নেপথ্য কাহিনী কি। বেশিরভাগ এমপির পুত্রকন্যারা দেশে থাকে না। বিদেশের এ লেভেল, ও লেভে‌লে পড়েন। মহোদয়েরা বিদেশে বাড়ি গাড়ি গড়েন। দেশে ভরসা নেই। আর আইনের খসড়া তৈরি করেন সচিব মহোদয়েরা। সচিব মহোদয়েরা সহায়তা নেন উপনিবেশিক আমলের আইন ও গেজেট থেকে। কারণ আবার আইন মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়েও তেমন রিসোর্স পার্সন নেই্। এমপি সাহেবদের বেশিরভাগই আর আগের মতো আইনজীবী বা বিশারদ নন। কেননা উঠতি যুবারা টুকটাক (বায়বীয়) ব্যবসায়ী বা হালের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। হেতুকভাবেই তাঁদেকে ব্যবসায়ের তদ্বিরে থাকতে হয়।

এখন এদের কর্মফল যদি সেই অতিকথার চারপেয়ে প্রাণীর ডিম্ব  হয় তাহলে যারা ভোটার ভুক্তভোগী মানুষ তাদের কি দশা হবে! তবে আমরা এ  পর্যায়ে আলোচনার পর্দা এই বলে টানতে পারি -বেচারারা তো ফেসলেস !কাকস্য পরিবেদনং।

No comments:

Post a Comment