Search

Wednesday, March 14, 2018

‘অামি মরবো, তুমি বেঁচে থাকবে - ঈশ্বরই জানেন কোনটা উন্নততর’



আবুল হাসান 



চৈনিক দার্শনিক চুয়ান জু একদিন স্বপ্নে দেখলেন তিনি প্রজাপতি হয়ে গেছেন। স্বপ্ন থেকে জেগে মুহুর্তের জন‍্য তিনি ভাবলেন, `আমি চুয়ান জু কি আসলেই প্রজাপতি?' `এখন স্বপ্ন দেখছি, নাকি আমি আসলেই মানুষ? কিন্তু এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম যে প্রজাপতি হয়ে গেছি?'--- ঐ মুহূর্তটিতে  তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। এমন ক্ষণমুহূর্তের ভাবনাকে মহাত্মা সিগময়েড ফ্রয়েড আনকনশাস বা অজ্ঞানের ধারণা বলে অভিহিত করেন। চুয়ান জুর এমন একটি স্বপ্নের ধারণা নিয়ে চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগে জন্ম নেয়া সাড়া জাগানো সাহিত্যিক ফ্রানৎস কাফকা তাঁর রুপান্তর গল্পটি সাজিয়েছিলেন এমন ভাবে --- গ্রেগর সামসা নামক একজন সেলসম্যান স্বপ্নে দেখলেন যে তিনি তেলাপোকা হয়ে গেছেন, কিন্তু বেচারা তখনো ভেবে চলেছেন অফিসে যাওয়ার ট্রেনটি যেন আবার মিস না হয়ে যায়!! চুয়ান জু, ফ্রয়েড বা কাফকাদের মত আমার মাথাতো এত তীক্ষ্ণ নয় তাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নাজিমউদ্দিন রোডের জেলখানায় আর আমি আমার বিছানায়, নাকি আমি জেলখানায় আর বেগম খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসায়। যা দেখছি তার স্বপ্নে নেইতো আমি, এমন ভাবতে ভাবতে আমার দু'দিন কেটে গেছে। কেটে যাচ্ছে, রক্ত বেরুচ্ছে না। রক্ত বেরুচ্ছে কিন্তু দেখা যাচ্ছে না!! মহাকালের তুলনায় পৃথিবী, পৃথিবীর তুলনায় দেশ, দেশের তুলনায় দল আর দলের তুলনায় ব‍্যক্তিজীবন কতই না ক্ষুদ্র!!

কিন্তু ব‍্যক্তি তার কর্মগুনে মহাকালকেও অতিক্রম করতে পারে। চিহ্ন রেখে যেতে পারে মহাকালের বুকে। এমন চিহ্ন যা জাক দেরিদার মতই চিহ্ন মুছে ফেলতে চাইলেও চিহ্ন রয়ে যায়। বেগম খালেদা জিয়া কালের বুকে এমনই এক চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন। গ্রীসের নগর রাষ্ট্র এথেন্সে খৃষ্টপূর্ব ৩৯৯ অব্দে পৃথিবীর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ ভাববাদী দার্শনিক সক্রেটিসের বিচার যে ৫০০ জন বিচারক করেছিলেন তাদের ২৮০-২২০ ব‍্যবধানে তাঁকে দোষী সাব‍্যস্ত করে। কিন্তু তাঁর শাস্তি হবে হেমলক বিষ পানে মৃত‍্যুদণ্ড । এ সিদ্ধান্ত ছিল ৩৩০-১৭০ জন বিচারকের. অর্থাৎ যে মাত্রায় সংখ‍্যাগরিষষ্ঠ বিচারক তাঁকে দোষী সাব‍্যস্ত করেছিলো তার চেয়ে বেশী মাত্রায় তথা ৫০ জন বেশী বিচারক তাঁর শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে রায় দিয়েছিলো। যে ৫০ জন তাঁকে অপরাধীই মনে করে নাই, তারাই শাস্তি হিসেবে তাঁর মৃত‍্যুদণ্ডের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলো। এর কারণ সক্রেটিস আপস করেননি। তিনি তাঁর জীবনের বিনিময়ে আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন। 

শেখ হাসিনার অন‍্যায় আবদারের কাছে মাথানত না করে বা অন‍্যায়ের সাথে অাপস করে ভোটের মাধ‍্যমেও বেগম খালেদা জিয়া দেশ পরিচালনায় যেতে চান না। তিনি কারাগারকেই শ্রেয় মনে করেছেন। আইনবিজ্ঞান ও অপরাধ বিজ্ঞান যেমন জটিল ঠিক তেমনই সরল। কোন মানুষ অপরাধ না করলেও আপনি তাকে মেরে ফেলতে পারবেন, আবার তাকে মারার অপরাধে আপনার কোন প্রকার শাস্তিও হবে না। কোন ব‍্যক্তি যদি পাগল হয় আর সে যদি আপনাকে এমন ভাবে আক্রমণ করে যে, আপনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে যান তাহলে রাইট টু প্রাইভেট ডিফেন্স এর অধিকারে আপনি আত্মরক্ষায় তার মৃত্যু অবধি ঘটাতে পারেন। মানসিক বিকারগ্রস্ততার কারণে লোকটি কোন অপরাধ করেনি আর নিজের জীবন রক্ষার্থ তাকে মেরে ফেললেও আপনার কোন শাস্তি হবে না। আবার এমনও আছে যে অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা করলে শাস্তি হয় কিন্তু অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেলে আর শাস্তি হয় না। এ হলো আত্মহত্যার চেষ্টা করার মত অপরাধ। অপরাধী সাব‍্যস্ত হতে গেলে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সাথে  ঐ ব‍্যক্তির দুষ্ট মন থাকা অপরিহার্য। অর্থাৎ অপরাধ সংঘটনের মতলব তার থাকতে হবে। তাহলেই সে অপরাধী হিসেবে সাব‍্যস্ত হবে। কেবল অপরাধী সাব‍্যস্ত হলে পরে শাস্তির প্রশ্ন আসে। ইশারার আগেই হাজার হাজার কোটি টাকা পায়ে লুটিয়েপড়ে যে ব্যক্তির, সে ব‍্যক্তির দুই কোটি টাকা আত্মসাতের প্রশ্ন আসে কেমন করে? অপরাধের দুষ্টু মন পুরোপুরিই অবস্থা ও ঘটনার উপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রের এত বড় বড় সুযোগ থাকতে নিজের টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছেন, এমন আষাঢ়ে গল্প হাসিনার তোতাদের মুখেই মানায়। 

অতি রাগে মানুষের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা লোপ পায়। আমারও তাই হয়েছে, বেশী কিছু আর লিখতে পারছি না। শুধু মনে করিয়ে দেই বিচারক মোতাহের হোসেন মালয়েশিয়া পালিয়ে পিতৃপ্রদত্ত জীবনটি রক্ষা করেছেন আর সুরেন্দ্র বাবুকে হাসিনা ক‍্যান্সারের রুগী বানিয়ে প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের মিলিত মুক্তবায়ু সেবন করতে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়েছেন। তাই আখতারুজ্জামানকে কেউ দোষারোপ করবেন না। নিজের সুরক্ষা দেয়ার নৈতিক অধিকার তাঁর নিশ্চয়ই রয়েছে। 

ফ্রানৎস কাফকার একটি গল্পের সারার্থ দিয়েই ইতি টানবো। এক ব‍্যক্তি সারা জীবন আইনের দরজার বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে ভিতরে ঢোকার জন‍্য, তারপর যখন সে মারা যাচ্ছে তখন তাকে বলা হলো এই দরজাটা কেবল তার জন‍্যই বানানো হয়েছিলো। শেয়ার বাজারের দেড় লক্ষ কোটি টাকা,বাংলাদেশ ব‍্যাংক রিজার্ভের সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা, এক ব‍্যক্তির ঋণ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, বিসমিল্লাহ,হল মার্ক, ডেসটিনি সহ কোন কিছুই গত দশ বছরে আইনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো না। আর ডান হাতের টাকা বাম হাতে রাখা হলো কেনো,আবার যে টাকা আজ অব্দি সে স্থানেই রয়েছে,এ জন‍্য খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে জেলে নিতে হবে। 

কাফকায়েস্থ হাসিনা তুমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিনতে ভুল করেছো। বেগম খালেদা জিয়ার এই কারাবরণ গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় তাঁকে সীমাহীন মহিমায় উচ্চতায় সমাসীন করেছে। নিজেকে অমর করে রাখার এমন সৌভাগ্য একেবারেই বিরল। তাঁর এই কারাবরণে দেশে যে অশ্রুবন্যা বইছে, তার স্রোতে হাসিনার ভারত মহাসাগরে বিলীণ হয়ে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা।  পুরো জাতি আজ যন্ত্রণাক্লিষ্ট। আর বিশাল যন্ত্রণা বিশাল শুদ্ধতা এনে দেয়। 

মৃত্যুর পূর্বে সক্রেটিস বলেছিল,-"I will die, You will live. What is better God knows". অর্থাৎ- ‘আমি মরে যাব, তোমরা বেঁচে থাকবে। কোনটি শ্রেয়তর তা ঈশ্বরই ভাল জানেন।’ সত্তরোর্ধ অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া জালিমের কারাগারে বিনাদোষে বন্দী। প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বের ভালটা আজও মানুষ স্মরণে রেখেছে। বেগম খালেদা জিয়ার কারাবরণ পৃথিবীর বুকে চিহ্ন হয়েই রইবে, যেমনটা অমর হয়ে রয়েছে সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ড। হয়েছেন নিজে। বিচারকরা স্মরণের অাঁস্তাকুডে হারিয়ে গেছে।

No comments:

Post a Comment