- সিনান পাশা
বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৫, বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালন হলো । রাস্তায় এর বাহারী পোস্টার। বাজারে ওটা উধাও, ওটা নিখোঁজ। চড়া দাম। ভোক্তাদের ভোগ নয়, দুর্ভোগের অন্ত নেই। পাবলিক পারসেপশনকে থোড়াই তোয়াক্কা না করার যুগে বলতেই হবে, আরে! কেন ভোক্তারা ৬০/৭০টাকার চাল তো ভালোই খাচ্ছেন।এটা হলো উন্নয়নের দুর্বার গতির একটা পরিমাপ। দেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ প্রায়। তবে ভোক্তারা আশঙ্কা করছেন, ওটা ক্রিকেট ও পেয়াঁজের মতো অচিরেই সেঞ্চুরি করবে। চালের বাজার? ও কথা আর বলার নয়।
বাহারি দাবি করেছিলেন আমাদের কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রীরা। বাংলাদেশ চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ তো বটেই।ফাইন চালও রপ্তানি করছে। ভতুর্কি ও সার দেওয়া হচ্ছে প্রচুর। আর চালকলের মালিক তারা তো আহলাদে আটখানা। ভারতের চালের বাজারই তো বাংলাদেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। জানিয়ে দিয়েছেন অামাদের চাল ব্যবসায়ীরা। বলছে চাল কিনবেন অামাদের বলুন! খাদ্যমন্ত্রী , বাণিজ্য মন্ত্রী - চালব্যবসায়ীদের সাথে একাধিকবার বৈঠকে বসার কথা শুনেছি। তাতে কোনো ফল হয়নি। বরং চাল-পেঁয়াজ ও অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। খাদ্যমন্ত্রী মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া থেকে ‘চমৎকার’ আতপ চাল এনেছিলেন যা খেতে আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অভ্যস্থ নয়। সিদ্ধ চালের একটা সমস্যা হলো সে চাল ন্যায্যমূল্যে সরকার দিলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই বেচাল বাঁকাপথে চাল পলিশিং মিলে চলে যায়। মাঝখান থেকে যাদের যা কামানোর তারা কমিয়ে নিয়েছে। ভোক্তার কোনো উপকার হয়নি।
পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হবার বিরুদ্ধে ঘোষিত যুদ্ধে সরকার হার মেনেছেন। তারা বলেছেন এই ফাঁসাফাঁসি শেষ করার নয়। এমনকি পরীক্ষার হলে বই খুলে পরীক্ষা দেবার অত্যাভিনব পদ্ধতির কথাও ভাবছেন তারা। ডিজিটাল ব্যাপারটাই এ্খন শিক্ষাঙ্গনের কাল। যে ভাত রাঁধে সেই আগুন এখন শিক্ষাঙ্গন পোড়াচ্ছে। এখানেও সেই তিন অবস্থা হবে না তো!
গমের আটার ব্যাপারে সাধারণ ভোক্তাদের কাছ থেকেই শুধু নয়। নানা সরকারি-বেসরকরি প্রতিষ্ঠান থেকেও নানা অভিযোগ উঠেছে তবে সেসবের কোনো সহজ প্রতিকার হয়েছে বলে জানা যায়নি। বরং জাহাজ ভরা চাল বা গমকে দেশের ভেতরেই পশুখাদ্য নাম দিয়ে মানুষের বাজারেই বিক্রি হবার নানা অভিযাগ শোনা গেছে।
পেঁয়াজের মতো যেসব পণ্য আমদানি ও দেশের ভেতরের উৎপাদন মিলে উদ্বৃত্ত হলেও বাজারে দাম বাড়ার অস্বাভাবিক প্রবণতা দেখা গেছে। আর এসবই মধ্যস্বত্বের কারসাজি বলে প্রমাণিত। সরকার বাজার মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়নি। কেননা, ব্যবসায়ীরা রাজনীতির বিবেচনায় সবচেয়ে মূল্যবান বলে মনে হযেছে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা অশুভ আঁতাতের কথা এখন ওপেন সিক্রেট।
গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষ সরাসরি ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষা করছেন বলে মনে করার সঙ্গত কারণ আছে। তারা ভোক্তদের শত আপত্তি ও অভিযোগের মুখে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এতে যারা এলএনজি বাজারজাত করছেন সেই উদ্যোক্তাদের লাভ হবে। পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য আছে সেসবের বেলায় ইন্ধনশক্তি কমিশন যে গণশুনানির ব্যবস্থা করেছেন কোনোটাতেএ ভোক্তাদের বক্তব্য বিবেচনা লাভ করেনি। তাঁরাও মনে হয় আমাদের বিচার ব্যবস্থায় পাবলিক পারসেপশনকে অবহেলা করার ‘আইনি’ প্রবণতায় লিপ্ত হয়েছেন।
জ্বালানি তেলের ব্যাপারে এতোদিন আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুন্নত দেশগুলির অনকূলে থাকলেও এখন অার থাকছে না সেই অজুহাতে বাংলাদেশও জ্বালানি তেলের দাম বাড়াবে এমন আভাস প্রবল। ভোজ্য তেলের দামও বাড়ছে।
বিশ্ব ভোক্তা দিবসের প্রকাশিত ক্রোড়পত্রে আমরা জানছি আজকের দিবসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শ্লোগান হচ্ছে ‘ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণ’। এটা হয়ে থাকতে পারে তবে ভোক্তাসাধারণের গায়ে লাগেনি। তবে বাজারের আগুণে যে তাদের গায়ে জ্বর আসছে কি না ভোক্তারা তা বলতে পারবেন। তারাই ভুক্তভোগী।
No comments:
Post a Comment