Search

Tuesday, March 13, 2018

সব দলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হোক সভা–সমাবেশের অধিকার


সম্পাদকীয়


কয়েক দিন ধরে বিএনপি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা ও ধরপাকড়ের শিকার হয়েছে। অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে সভা করার আনুষ্ঠানিক অনুমতি চেয়েও তা মিলছে না।

আজ সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি চেয়ে বিএনপির তরফে যে আবেদন করা হয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তার অনুমতি মেলেনি। এই সরকারের আমলে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অভিজ্ঞতা বিএনপির জন্য এটাই প্রথম নয়। বরং সভা-সমাবেশ করার অনুমতি না পাওয়াই যেন তাদের সাধারণ অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়েছে।

আমাদের সংবিধানের ৩৭ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ সংবিধানপ্রদত্ত এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের; কিন্তু আমরা লক্ষ করছি উল্টো প্রবণতা।

সরকারের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলসহ বিরুদ্ধ মতাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের এই অধিকার প্রায়ই লঙ্ঘিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কোনো দল বা সংগঠন সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচির আয়োজন করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তাদের ওপর নির্দয়ভাবে বলপ্রয়োগ করে। এমনকি নারীরাও লাঞ্ছনাপূর্ণ নির্যাতনের শিকার হন। শনিবার কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের মিছিলেও পুলিশকে একই ভূমিকায় দেখা গেছে।

সম্প্রতি বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের হামলা ও পণ্ড করা প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে বেআইনিভাবে সমাবেশ করতে যাওয়ায় পুলিশ বাধা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ কোথাও রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশ করে না।

কিন্তু আমরা দেখেছি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাস্তায় সমাবেশ বা কর্মসূচি পালন না করলেও তাদের কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিতে হয় এবং তা ব্যাপক জনদুর্ভোগের কারণ ঘটায়। গত সাতই মার্চের কর্মসূচি তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। সেদিন সভাগামী মিছিল থেকে তরুণী লাঞ্ছনার অভিযোগে মামলা পর্যন্ত হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিক থেকেও এ ব্যাপারে পক্ষপাতমূলক আচরণ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো অথবা সরকারের সমর্থক অন্য কোনো দলের সভা–সমাবেশে পুলিশ সাধারণত বাধা দেয় না। তাদের সব বাধা শুধু সরকারবিরোধী দল ও সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতে। সরকারবিরোধী দলগুলোর ক্ষেত্রেই শুধু জনশৃঙ্খলার যুক্তি তুলে ধরা হয়। পুলিশের সদস্যরা প্রায়ই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেন।

এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সরকার একদিকে রাস্তায় বিরোধী পক্ষকে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না, আবার অন্যদিকে নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করার অনুমতিও দিচ্ছে না। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেছে, ওয়ার্কার্স পার্টি জনসভা করছে। বিএনপি কেন সেই সুযোগ পাবে না?

এটা ঠিক যে দল বা সংগঠনই সভা-সমাবেশ করুক না কেন, তাতে জনগণ দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। এ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করা দরকার। কোথাও রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করা হলে তার প্রভাবে আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচলে অচলাবস্থা দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তাসহ সব সড়কের জন্যই এ কথা প্রযোজ্য।

সমাবেশ ও জনসভার জন্য নির্ধারিত স্থান থাকা উচিত। কর্মদিবসে জনসভা না করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে করার বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোকেও একমত হতে হবে। সে ক্ষেত্রে যানজটে নাকাল নগরবাসী কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

  • Prothom Alo/Mar 12, 2018

No comments:

Post a Comment