Search

Sunday, May 6, 2018

তারুণ্যের সংকট - যত শিক্ষা তত বেকারত্ব

উৎপল রায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। ফলাফল প্রকাশের প্রায় সাত বছর পার হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েও তিনি এখনো বেকার। এই কয়েক বছরে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অসংখ্যবার লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা দিয়েও নিজেকে উৎরাতে পারেননি তিনি। ইচ্ছা ছিল মেধা ও যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হবেন। পরিবারে হাসি ফোটানোর পাশাপাশি দেশ সেবায় নিয়োজিত করবেন নিজেকে। কিন্তু এখন তিনি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। 

গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট থেকে কিছুদিন পর পর ইন্টারভিউ দিতে ঢাকায় আসেন। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আর সরকারি চাকরির আশায় অন্য চাকরির প্রতি এতটা ঝোঁক ছিল না। তবে, এই কয়েকবছরে দু’ একটি বেসরকারি প্রতিষ্টানে চাকরি পেলেও সম্মানী খুবই কম হওয়ায় তা তার জীবনযাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিলনা। ফলে, সেই সব চাকরি ছাড়তে হয়েছে তাকে। কিছুদিন আগে সরকারি একটি প্রতিষ্টানে অডিটর পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছেন। বর্তমানে চরম হতাশ আলী আজম বলেন, সরকারি চাকরিতে এটাই আমার শেষ সুযোগ। এই কয়েক বছরে অনেক চেষ্টা করেছি। উচ্চশিক্ষিত হয়েও বেকার। আর বেকার বলে নানাজনের নানা কথা শুনতে হয়। চাকরি হয়েছে কি না, কেন হচ্ছেনা, কবে হবে- সবাই জানতে চায়। মাঝে মাঝে পরিবার স্বজনদের কাছ থেকে প্রচন্ড চাপ আসে। নিজেকে সবসময় ছোট মনে হয়। এ হতাশা বোঝানো যাবেনা। শুধু আলী আজমই নন। 

উচ্চশিক্ষার সনদ রয়েছে। কিন্তু চাকরি নেই। প্রতিবছর সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে সনদ নিয়ে বেকারত্বের বোঝা বয়ে ঘুরছেন দেশের লাখ লাখ উচ্চ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী। যাদের বেশির ভাগেরই অভিভাবক সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন বহু কষ্টে। সন্তানের পড়াশোনার জন্য অনেকেই যেমন জমানো অর্থ খরচ করেছেন, তেমনি অনেকেই ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে পারেননি। আবার কেউ সুদে টাকা ধার করে, জমিজমা বিক্রি করার পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনের ভোগ বিলাসিতা বিসর্জন দিয়েও সন্তানের পড়ার খরচ চালিয়েছেন। কিন্তু সন্তান উচ্চ শিক্ষিত হলেও বেকার হয়ে ঘুরছে দিনের পর দিন। কেউ কেউ হয়ে পড়ছেন পরিবারের বোঝা। এতে করে শিক্ষিত বেকারদের হতাশা ও মানসিক চাপ যেমন বাড়ছে, তেমনি পরিবারের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বেড়ে পারিবারিক বন্ধনও কমে আসছে। মেধা, যোগ্যতা থাকার পরও চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকে কেউ কেউ হয়ে পড়ছে মাদকাসক্ত, জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গিবাদ, ছিনতাইসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিচালিত সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ (২০১৬-২০১৭) প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এর মধ্যে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ। জরিপে দেখা গেছে, জাতীয় বেকারত্বের গড় হার ৪ দশমিক ২ ভাগ। আর মোট বেকারত্বের ১১ দশমিক ২ ভাগই শিক্ষিত। এরমধ্যে উচ্চশিক্ষিত বেকার রয়েছেন ১৫ দশমিক ১ ভাগ। বিবিএসের কর্মকর্তারা জানান, প্রবৃদ্ধি হলেও সেই তুলনায় দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ফলে, বেকারের সংখ্যাও বাড়ছে। বিবিএসের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সিপিডি (সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ) বলছে, বাংলাদেশে গ্র্যাজুয়েটধারী শিক্ষিতদের ৩৪ দশমিক ৩ ভাগই (এক-তৃতীয়াংশ) বেকার। আর যুব বেকার রয়েছে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। এইচএসসি পাস বেকার রয়েছে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ৩৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন পরীক্ষায় পাস করেছেন ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৪৬ জন। এর মধ্যে স্নাতক পাস পর্যায়ে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৫১ জন, স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে ১ লাখ ২৯ হাজার ৯৩৬ জন, কারিগরি স্নাতক পর্যায়ে ১৪ হাজার ৬৪ জন, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ২ লাখ ২ হাজার ১৯০ জন, কারিগরি স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ২ হাজার ৩০২ জন, বিভিন্ন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্সে ১ হাজার ৫৩৬ জন এবং এমফিল, পিএইচডি সমমান পর্যায়ে ১ হাজার ৩৬৭ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর দেশের ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ইউজিসি পরিচালিত বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০১৬ সাল) দেখা যায়, একাডেমিক কার্যক্রম চলছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে ডিগ্রি লাভ করেছেন ৬৫ হাজার ১৯২ জন শিক্ষার্থী যা ২০১৫ সালের তুলনায় ৩ হাজার ৭১০ জন বেশি। ২০১৬ সালে উত্তীর্ণ ৬৫ হাজার ১৯২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে স্নাতক, কারিগরি ও প্রযুক্তিতে ১৭ হাজার ৬৪৬ জন এবং মাস্টার্স কারিগরি ও প্রযুক্তিতে ৫৬২ জন শিক্ষার্থী ডিগ্রি লাভ করেছেন। 

অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষকরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ কর্মক্ষম মানুষ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। এর মধ্যে ৫ লাখের বেশি উচ্চ শিক্ষিত। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই চাকরি পাচ্ছেন না। অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের মতে সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের বিপরীতে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই শিক্ষিতদের বেশ বড় একটি অংশ প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। একই সঙ্গে সরকারি শূন্যপদগুলোও নিয়মিতভাবে পূরণ হয় না। আর বেসরকারি খাতে বর্তমানে বিশেষজ্ঞ, কারিগরি ও প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিতদের চাহিদা বেশি। যে কারণে প্রচলিত ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের বেসরকারি খাতে চাকরি পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে শিক্ষিত বেকাররা চাকরি না পাওয়ায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। একদিকে চাকরি না পাওয়ায় এসব শিক্ষিত জনবলকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যুক্ত করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকে বেকারদের একটি অংশ জড়িয়ে পড়ছে নানা সামাজিক অপরাধে। আর চাকরি না পাওয়ার আশঙ্কা ও হতাশা থেকে উচ্চ শিক্ষিত মেধাবীদের একটি অংশ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। ফলে, তাদের মেধা ও সেবা দেশের কাজে লাগানো যাচ্ছে না। 

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশই বেকার। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা গড়পড়তা বেকারের তুলনায় অনেক বেশি। আর যুব বেকার ও গ্র্যাজুয়েট বেকারের সংখ্য আরো বেশি। সার্বিকভাবে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে যারা স্বল্পশিক্ষিত তাদের মধ্যে বেকারত্বের সংখ্যা কম। কিন্তু যখন উচ্চ শিক্ষিতের হার বাড়ে তখন বেকারত্বের হারও বাড়ে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষিত বেকারত্বের স্বাভাবিক কারণ হচ্ছে, যে পরিমান জনগোষ্ঠী প্রতিবছর কর্মবাজারে প্রবেশ করছে, সেই পরিমাণ কর্মসৃজন হচ্ছে না। আর শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত পেশাদারিত্বের যে চাকরি, সেই চাকরি সৃষ্টির সংখ্যা কম। ফলে, বেকারত্বের সংখ্যাটা আরো বড়ভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি। 

শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তবে, এ বিষয়ে খুব নির্ভরযোগ্য কোনো গবেষণা এখন পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে এবং নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে যা দেখছি তাতে বেকারত্বের সমস্যা আছে এবং তা ভালোভাবেই আছে। তবে, এখন শিক্ষিতদের অনেকেই বিভিন্ন কাজে যুক্ত হচ্ছে। এমনকি অনেকে মাছ চাষও করছেন। ফলে বেকার সমস্যা কিছুটা কমে আসছে বলে আমার মনে হয়। আর বেকারত্ব নিয়ে নতুন করে যদি গবেষণা হয় তাহলে সঠিক তথ্য জানা যাবে। অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কোনো জাতীয় পরিকল্পনা নেই। সরকারের উন্নয়নের কথা বলা হলেও বেকার সমস্যা নিরসনের কথা কেউ তেমনভাবে বলছে না। 

অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান ‘বিডিজবস’র জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মো. শামীম হাসান মানবজমিনকে বলেন, চাকরি প্রার্থীরা প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ জীবনবৃত্তান্ত আমাদের প্রতিষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করে। গত এক মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার সিভি জমা পড়েছে। 

তিনি বলেন, একটি চাকরির বিজ্ঞাপন দিলেই প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার সিভি জমা পড়ে। যাদের বেশির ভাগই উচ্চশিক্ষিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ব্যাংকের চাকরিতে। দেখা গেছে, একটি ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে অন্তত ১ লাখ ৫০ হাজার সিভি আসে। 

বাংলাদেশ বাংকের সাবেক গভর্ণর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নতুন করে আরো যোগ হচ্ছে। বেকারত্বের এই সমস্যাটি মারাত্মক। এটি মোটেও আমাদের জন্য ভালো ব্যাপার নয়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও এটি বিরাট ব্যাপার। 

তিনি বলেন, তরুণরা লেখাপড়া শিখে যদি চাকরি না পায়, তাহলে তারা পরিবারকে সাপোর্ট দিতে পারে না। এতে করে তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করে। আর হতাশা থেকে তারা বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ ও বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়ছে। 

তিনি বলেন, আমাদের অনেক তরুণ রয়েছে। তারা উৎসাহী। তাদের প্রডাকটিভিটি আছে। তাদের দিয়ে কাজ করানো যায়। কিন্তু তারা শিক্ষিত হলেও তাদের মেধা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অনেক তরুণ বিদেশে চলে যাচ্ছে। ফলে, এই সুযোগটি আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য বিরাট ক্ষতি। এ নিয়ে এখন থেকেই গুরুত্ব দিতে হবে। তবে, আমাদের যে শিক্ষা ব্যবস্থা এটা যেন প্রায়োগিক ক্ষেত্রে আরো কার্যকরি হয়। কারিগরি শিক্ষার প্রতি আমাদের আরো গুরুত্ব দিতে হবে। কারিগরি শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে বেকারত্ব নিরসনে ক্ষুদ্র ও মাঝরি শিল্পের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। 

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের যে পরিসংখ্যান বলা হচ্ছে তা আমার কাছে সঠিক বলে মনে হয়। প্রতিবছর যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পাশ করে বেরুচ্ছে তাদের বড় অংশই বেকার। পাশ করার পর অনেকের পাঁচ বছরেও চাকরি হয় না। পদ যদি থাকে ২০টি, আবেদন জমা পড়ে ২০ হাজার। এরপর চাকরি ক্ষেত্রে থাকে নানা শর্ত। চাকরি না পেয়ে অনেকের বয়সও পেরিয়ে যায়। 

তিনি বলেন, যে পরিমাণ চাকরির সৃষ্টি হওয়া দরকার সেই হারে যদি চাকরি বা কাজ সৃষ্টি না হয় তাহলে তো বেকারের সংখ্যা বাড়বেই। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিএ, এমএ পাস করাবে। কিন্তু যেকোনো কাজ তো তারা করতে পারবে না। ভবিষ্যতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় মাপের পরিবর্তন আনতে হবে বলে মত দেন ড. আবুল বারাকাত। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের কী ধরনের চাকরির চাহিদা তৈরি হবে এবং কী ধরনের শিক্ষিত মানুষ প্রয়োজন সে বিষয়ে পরিকল্পিতভাবে এগুতে হবে। প্রয়োজনে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। 

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেখা যাচ্ছে আমাদের গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ছেলে মেয়েরা যত বেশি লেখাপড়া শিখছে তত বেশি বেকার বেড়ে যাচ্ছে। তাই, শিক্ষার যে মান সেটা কিন্তু আমাদের বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি দিতে পারছেনা। বাবা মায়েরা ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার পিছনে লাখ লাখ টাকা খরছ করছেন। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে শুধু সরকারি চাকরির আশায় এম এ, বিএ পাশ করলে তো হবেনা। 

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মান বাড়াতে হবে। কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর আরো গুরুত্ব দিতে হবে। বেকারত্ব নিরসনে কর্মসংস্থানের প্রয়োজন এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বলে উল্লেখ করেন আহসান এইচ মনসুর। 

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে চাকরি ক্ষেত্রে বিশেষ করে বেসরকারিখাতে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তণ যেভাবে হচ্ছে, তাতে আমাদের বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি যদি আরো ভাল না হয় তাহলে আমরা আরো পিছিয়ে যাবো। আর কারিগরি শিক্ষার মান ও সামাজিক মর্যাদা বাড়াতে হবে।
  • manobzomin/may 6, 2018


Violence in the Hills

Address the moot problem


The spate of violence in the hill tracts is distressing. The killing of an Upazila Chairman on May 3 was followed by the gruesome shooting that killed five and injured seven other indigenous people in Naniarchar of Rangamati. In the last six months 17 people were killed and many more injured in the CHT. It beggars rationale that nearly 600 members of various factions were killed in factional rivalries since the Peace Accord was signed in December 1997.

Reportedly, the violence appears to be the result of factional and even intra-faction rivalry. But we feel that the apparent may not quite reveal the real reasons for these clashes and deaths. The political angle notwithstanding, we believe that there is also a criminal angle stemming from economic compulsions.

Most of the violence and resultant deaths involve members of the erstwhile Shanti Bahini and the many factions that had emerged during the nearly two decades of the turmoil in the region. And the peace agreement we feel has not been able to provide gainful employment to many of the cadres who spent their prime virtually in the wilderness, in spite of the huge investment in the region, due to the lack of real economic activity. Rent-seeking and extortion are the only means of sustenance for them, and what we see today are the consequences of turf war for control of the area.

We would call upon the government to address this aspect seriously. Unless the economy of the region is geared up to provide jobs for the indigenous people, a good part of the peace agreement, we fear, would remain unfulfilled. 

  • Courtesy: Editorial, The Daily Star/May 06, 2018

Economic zones face delay as land dev in slow lane

Jasim Uddin Haroon and Jubair Hasan



Land development and the construction of embankment have emerged as the most challenging task, raising fear about missing deadlines for the country's major economic zones.

The problems pushed the builders of the economic zones into troubles because most sites are located on char, low-lying and hilly areas.

This situation requires strenuous efforts and also demand enough filing materials like sand to prepare the builders well for sitting of industrial units of different types.

Though utility service-providers in many sites could make some progress, the slow land development work in the zones put the agencies in tight spot.

The Financial Express correspondents got such an impression during recent visits to some of the most priority economic zones such as Mirsarai and Anawara in Chittagong, Sabrang Tourism Park and Naf Tourism Park in Teknaf and the proposed zones at Moheskhali in Cox's Bazar and Shreehatta at Sherpur in Moulovibazar.

The scarcity of filling materials and related equipment, incomplete approach roads in some zones as well as legal complexities over the land ownership were the hurdles that might result in missing the implementation deadline, the developers and local people told the FE correspondents.

Experts were also doubtful over implementing too many clusters in time due to the limited capacity of the state-run Bangladesh Economic Zones Authority (BEZA), the regulator.

Although some local and foreign investors have signed agreements with the BEZA to lease the land for 50 years from the investment-promoting agency, much time is required for the plots to be suitable for industrial structures.

Meanwhile, a few privately-owned economic zones are in operation on a limited scale.

The BEZA with a vision for becoming a world-class investment promoter is pushing ahead with building 100 zones across the country by 2030 to maximise benefits from fast-paced, modern industrial development.

Currently, the BEZA, which was formed in 2010 as an agency to establish zones, has made progress in six to seven zones including the Mirsarai zone.

The rest of the zones remain stuck in either land lease or acquisition process. Of the zones, development activities at Mirsarai zone are visible.

The work on a 10 kilometre-long approach road connecting the site with the Dhaka-Chittagong highway, construction of administrative buildings, a power plant having capacity of 150 megawatts and part of the 18.6 kilometre-long embankment was in progress.

That said, the Mirsarai Integrated Industrial City has so far achieved less than 10 per cent of its development work that is now proceeding on 2,000 acres out of the planned 30,000 acres of land stretching from Mirsarai of Chittagong to Sonagazi of Feni.

Talking to the FE, BEZA assistant engineer Wahiduzzaman said that the authorities have been working hard to finish the land development work as quickly as possible.

The contractor is assigned to complete land filling of 880 acres of land in one and a half years, but only its one-third has been filled through dredging beginning from the middle of March.

Developers under the government and the World Bank funds are filling the land by marine sediments through dredging by pipes having diameter of 28-inch from the Sandwip channel.

Though the initial plan was to use three dredgers to expedite work, the contractor is using a single dredger due to the unavailability of required logistics like the 28-inch pipes.

The Mirsarai zone needs to construct a 20 kilometre-embankment to protect the land from erosion and only 700 metres are in progress, according to developers.

In case of Sabrang Tourism Park, which encompasses an area of 1,027 acres of land at Teknaf in Cox's Bazar, it is struggling to collect earthen materials required for its newly-built embankment.

Dird Group, a sub-contractor of Chittagong Dry Dock Limited, will have to construct over five-kilometre embankments with geo-textile but so far it has built less than one kilometre on the beach area, near Shahporir Dwip, a tourist attraction at Teknaf.

A crane of the developer was found carrying sands from the sea and many "Jhau" trees (tamarisk), which protect the beach, were seen uprooted.

SM Wahiduzzaman, executive director at the Dird Group, told the FE that they have been building embankment with geo-textile but the scarcity of sand to fill the low-lying area and the lack of approach roads badly affected the work.

"We're now bringing sands from the beach. Monsoon is also approaching, which is our serious concern. I think we'll not be able to carry out work in the rainy season," he said.

While land development at the Mongla zone was done but further progress was stalled because of a High Court ruling.

The similar situation is evident at the Naf Tourism Park at Jhaliardwip on the Naf River. The park is facing the shortage of sands to fill some 271 acres of the island.

This is considered as one of the potential sites because of its location on the Naf River and it proximity with the Saint Martin's Island. This is also a bordering area with Myanmar's Rakhhine state.

The developer, which collects sand from the Naf River, has already missed its February deadline.

"We don't get the expected level of sands, which is delaying our progress," site manager Chunnu Mian told the FE.

Anowara Economic Zone, a specialised zone exclusively for the Chinese investors, remains at its initial phase and the developer has completed some 100-meter approach road. The fencing encompassing the approach road is going on but the key task of levelling the hilly lands is yet to start.

This is a hilly area that nestles 33 kilometres off the Shah Amanat International Airport in Chittagong.

Local people said that since the law does not allow anyone to level hills, the authorities concerned are now in a quandary: Building industries on such high lands breaking the law or stopping development.

On the other hand, the Shreehatta zone is yet to erect fencing, let alone land development, due to legal complexities. This site is located mostly on the agricultural land.

Contacted, BEZA executive Chairman Paban Chowdhury said that the authorities have advanced with the zones despite complexities in various forms to make the planned industrialisation a reality.

"Yes, land development and embankment are key challenges for us. In some parts, we could not start development because of land shortage," he said. "But we're taking different measures to cope with that".

He didn't elaborate on the measures.

In some areas, the country should have gone for large-scale dredging, he added.

Talking about the developments at the Mirsarai zone, he said apparel makers had already paid Tk 1.0 billion out of Tk 5.0 billion to get 500 acres in the garment village inside the SEZ, while Asian Paints will start the construction work on 22 acres of land to set up its base there soon.

Mr. Chowdhury said that the authorities have planned to develop another eco-tourism park on 10,000 acres of land on Sonadia and Ghotivanga of Moheskhali islands and the work will start by this month (May).

The BEZA has so far received investment proposals worth about $17 billion, including $8.0 billion from overseas investors.

The investors submitted the proposals, paying 1.0 per cent of the proposed investment, according to the BEZA's regulations.

The BEZA also received around Tk 5.0 billion from about 80 investors in lease money, though it called the amount 'rent in advance'.

And until today, it spent Tk 3.95 billion on land and infrastructure development.

Formed in 2010 to facilitate the economic zones, the BEZA has been struggling to develop the land despite the provision for direct purchase method, which is considered to be the fastest procurement process.

Mahbubul Alam, president of the Chittagong Chamber of Commerce and Industry (CCCI), also said there were many challenges for building the on-site infrastructure.

"We must overcome the challenges," Mr. Alam, a member of the BEZA governing board, told the FE without elaborating.

Executive Director of the think-tank Policy Research Institute of Bangladesh Ahsan H Mansur told the FE that the BEZA will not achieve the desired success if it concentrates on too many projects. "It (BEZA) should prioritise some sites and put in all-out efforts to make these happen," he said.

Mr. Mansur, a former senior executive of the International Monetary Fund (IMF), said if the promoter had started the Mirsarai zone with 5,000 acres of land, then it would been able to build the industrial base there.

The capacity to carry out physical infrastructure development work is lower in Bangladesh than that of other countries, he said. Even the country does not have adequate logistics required to develop the land, he added.

  • Courtesy:The Financial Express/May 06, 2018

দুর্নীতি ও খেলাপি ঋণের কারণে বাড়ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য

আইসিএবির সেমিনারে বক্তারা


উচ্চমাত্রায় দুর্নীতি ও অস্বাভাবিক হারে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের মধ্যে অস্বাভাবিক ব্যবধান, জনগণের অর্থের সদ্ব্যবহার না করা, নিম্নমজুরি ও কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ার মতো বিষয়গুলোও বৈষম্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

গতকাল দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ধরন বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইসিএবি প্রেসিডেন্ট দেওয়ান নুুরুল ইসলাম এফসিএ ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাউন্সিল মেম্বার শাহাদাত হোসেন এফসিএ। সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন কাউন্সিল মেম্বার আনোয়ারউদ্দিন চৌধুরী এফসিএ। সমাপনী বক্তব্য রাখেন আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসান খসরু এফসিএ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার শাহাদাত হোসেন সরকারি তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, দারিদ্র্য দূরীকরণ, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও আয়বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে আসন্ন জাতীয় বাজেটে সরকারের সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্বারোপ করেন। দেশের প্রায় ৫২ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যারা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এজন্য নূ্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দে জোর দেয়া হয়।

স্বাগত বক্তব্যে দেওয়ান নুরুল ইসলাম এফসিএ বলেন, সম্প্রতি আমরা উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন করেছি। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির কারণেই এটি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এ অর্জন ধরে রাখতে হলে আমাদের পণ্যের বৈচিত্র্যতা আনার মাধ্যমে রফতানি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দেশের বিপুলসংখ্যক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়ার কারণে বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে। ১৬ কোটি জনসংখ্যার বিশাল চাপ নিয়ে ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পারাটা চ্যালেঞ্জিং। 

প্রতি বছরই দেশে নতুন শ্রমশক্তি যোগ হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। এজন্য বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সর্বোপরি আমাদের সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সুশাসন ছাড়া কোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব হবে না।

  • Courtesy: BanikBarta/May 06, 2018

As Gazipur and Khulna polls near, some concerns remain

Badiul Alam Majumdar


Bangladesh is now on the election highway. Aside from the national election, seven city corporation elections are to be held this year. However, because of the ineptness of the Election Commission (EC), the elections of Dhaka North and South have already been postponed, in violation of the Constitution and taking away our voting rights. In the meantime, the schedules of Gazipur and Khulna city corporation elections have been declared, and they will be held on May 15. The results of these two elections would have a far-reaching significance not only for the two major parties Awami League and BNP but for the nation as well. The experiences of Gazipur and Khulna will also have important implications for the upcoming general election.


In the last few weeks, I have had the opportunity to interact with over 1,500 non-partisan individuals in several meetings throughout Bangladesh. I asked a common question in these meetings: if the national election is held under the present circumstances, do they expect it to be free, fair and credible? Their response, with the exception of one or two, was that they did not see, under the present circumstances, any possibility of a credible election. In addition, in two other meetings with about 40 Upazila-level political and civil society leaders, I asked the same question. Surprisingly, the participants of these meetings, including leaders belonging to the ruling party, also expressed the same view.

Clearly, such negative views of a large number of socially conscious opinion-makers about the credibility, or lack thereof, of the coming national election present serious challenges for the EC, the government, political parties, the media and the civil society important stakeholders of all elections. Clearly, an appropriate role by these stakeholders is essential for a credible election. However, the commission's role is most important in this regard, although its neutrality and effectiveness are necessary, but not sufficient for ensuring a free and fair election. In other words, even the strongest and most neutral EC will not be able to hold credible elections unless the government that is, the bureaucracy and the law enforcement agencies behaves neutrally and the ruling party acts responsibly during elections.

It may be recalled that the elections of four city corporations Khulna, Barisal, Rajshahi and Sylhet were held on July 15, 2013. In these elections, the incumbent mayors, all of whom belonged to the ruling party and most of whom were successful as mayors, lost by big margins to their BNP rivals. In the subsequent Gazipur city corporation election also, held on July 6, 2013, the AL candidate lost by more than 100,000 votes, although Gazipur is traditionally considered an AL stronghold.

It should be noted that all the city corporation elections held in 2013 were more or less free and fair. Although the ruling party put all their efforts and energy into winning these elections, they did not try to unduly influence election results. This was because the AL tried to, in the background of enacting the 15th Amendment discarding the Caretaker Government, create an impression that they could be trusted and credible elections could be held under the party government. However, with the AL's consecutive losses in five city corporation elections, the fate of the subsequent national election became pre-determined. As a result, the EC, despite holding credible elections in those five city corporations, could not do so during the parliamentary election of January 5, 2014.

The coming Gazipur and Khulna city corporation elections again represent a challenge for the AL. If these two elections turn out to be fair and credible and the AL loses, it will send a clear message about their popularity. On the other hand, if they win through fraudulent means, it will only stoke popular concerns about the credibility of the coming elections.

The Gazipur and Khulna elections have also created a serious challenge for the EC in that although the commission gained credibility by holding the Rangpur city corporation election in a free, fair and peaceful manner last December, it lost public confidence during subsequent local elections held on December 28, 2017 and March 29, 2018. The recent Union Parishad and Paurashava elections were marred by violence, death, fake voting and ballot box snatching. According to an editorial by Prothom Alo (March 31, 2018), “These elections were just the opposite of what are considered as free and peaceful elections. Now the elections of Bangladesh have become competition between muscle powers.”

The upcoming elections pose another challenge: after the one-sided national election of 2014, many observers claimed that if the election is competitive, the media can freely report foul play, and if election observers are present in polling centres, the election is likely to be free, fair and credible. However, the post-2014 electoral experiences, particularly of the last Dhaka and Chittagong city corporation elections, have proven this to be a myth. These elections have clearly shown that credible elections depend mainly on the will of the government and the ruling party. But the commission, if it wants, can prevent rigged elections. If the environment for a free and fair election does not prevail, the EC can refrain from holding it. The commission's responsibility is not to hold election using anyone's prescription. It can even cancel the election results, subject to inquiry, if there are suspicions of unfair means during elections. According to our Supreme Court judgment, the EC has the inherent power, even to “add to statutory rules”, to ensure free and fair elections. Thus, the EC's responsibility is to use this power justly and fairly in order to gain public trust and confidence in the electoral system.

To gain public confidence in the electoral system, the undesirable elements must be kept out of the electoral arena. The affidavit, the declaring of education qualifications, criminal records, profession, income, assets and liabilities of candidates and their dependents, can be an important tool for this purpose. It may be recalled that the legal requirement for declaring the antecedents of candidates through affidavits was established and institutionalised through the incessant efforts of SHUJAN. As per law, if a candidate hides information and declares false information in the affidavit, his/her nomination is liable to be cancelled. If elected with false declaration, his/her election is to be declared void. Some important examples are already set in this regard.

In addition, swearing a false affidavit is a criminal offence. We feel that if the information disclosed in affidavits and tax returns submitted by the candidates are scrutinised, our electoral arena could largely be cleaned up. We have been urging the commission to do so for a long time, with no success. We hope that in view of the serious accusations recently raised about submitting false affidavits by some mayoral candidates of Gazipur and Khulna city corporation elections, the commission would be convinced, in the interest of cleaning up our electoral and political arenas, to seriously scrutinise the affidavits submitted by the candidates.

  • Courtesy: The Daily Star/May 06, 2013

Restore democracy thru free, participatory polls: discussants



Politicians, academics, lawyers and professionals on Friday at a views exchange programme in Dhaka said that all opposition political parties should unite to restore democracy in the country.

At the programme on ‘Rule of law and democracy’ organised by Supreme Court Bar Association at its Shmsul Haque Chowdhury Hall, they said that democratic rule had been absent after the ‘unilateral and voterless’ national election held on January 5, 2014.

Ganaforum president Kamal Hossain, also a jurist, called on opposition parties to unite to wage a movement to compel the government to hold a free, fair and inclusive national election.     

The government seized the voting rights of the people in the national election in 2014 and the people would allow no repetition of such ‘farcical polls,’ Kamal said.

The government also failed to ensure good governance and initiated autocratic rule.

Supreme Court senior advocate Khandker Mahbub Hossain said that the government had destroyed the rule of law. He called on the opposition parties to unite under a platform of ‘Jukta Front’ on the basis of minimum programmes to wage movements.

Zafrullah Chowdhury of Gonoshasthaya Kendra said that the country was being ruled undemocratically in the name of democracy. He called on all the political parties to form a united opposition political platform on the basis of minimum issues.

Senior journalist Mahfuz Ullah said that the Awami League government failed to ensure good governance, introduced the culture of fear and captured the democratic rights of the people. They have also destroyed the judiciary, he added.

Nagarik Oikya convener Mahmudur Rahman Manna said that the government would hold no inclusive, free and fair election and the opposition parties must wage strong movements.

Jurist Shahadeen Malik demanded enactment of a law on appointment of the Supreme Court judges.

Dhaka University law professor Asif Nazrul said that the government did not ensure the democrat rights of the people.

Ganaforum executive president Subrata Chowdhury, also a Supreme Court lawyer said that the democracy in the country would not be reinstated so far the people would not be able to exercise their voting rights.

Lawyer Abdur Razzak Khan, Abdul Matin, among others, took part in the programme, chaired by Supreme Court Bar Association president Zainul Abedin and conducted by its secretary AM Mahbub Uddin Khokan.
  • Courtesy: New Age/May 06, 2018

‘অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সিকিউরিটি সিস্টেমের দুর্বলতায় অশান্ত পাহাড়’

অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সিকিউরিটি সিস্টেমের দুর্বলতার কারণে পাহাড়ে অশান্তি ও সহিংসতা হচ্ছে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। 
আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, পাহাড় অশান্ত ও সহিংসতার কারণ তাদের নেতৃত্বের ইন্টারন্যাল ক্রাইসিস। পাহাড়ে এখন যে সিকিউরিটি সিস্টেম রয়েছে তার দুর্বলতা। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মারামারি চলছে। একে অপরকে এলিমেনেট করছে।

তিনি আরও বলেন, পাহাড়ের সিকিউরিটি তো এখন আর সেনাবাহিনীর সিকিউরিটির মধ্যে নেই। সেনাবাহিনীকে তো বিভিন্ন জায়গা থেকে উইথড্র করে নেওয়া হয়েছে। এখন যারা সিকিউরিটি অ্যারেঞ্জমেন্টে রয়েছেন তারা কতখানি পাহাড় সম্পর্কে, পাহাড়ে সিকিউরিটি দেওয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞতা রাখে সেটা দেখার বিষয় । কারণ চিটাগং-হিলট্রেক্স অত্যন্ত ডিফিকাল্ট এরিয়া। সোজা কথায় যারা ওই অঞ্চলের সিকিউরিটি দেয় তারা কতটুকু ক্যাপাবল।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, উপজেলার একশ গজের মধ্যে পুলিশ, সেখানে এসে মেরে গেল উপজেলা চেয়ারম্যানকে। মৃত এই মানুষটির লোকটির শেষকৃত্য হবে তা তো জানত প্রশাসন। সেখানে কি কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না? এই প্রশ্নটা থেকেই যায়।

তিনি বলেন, আমি যখন ছিলাম, ওই অঞ্চল সম্পর্কে আমি ভালো জানতাম। কিন্তু এখন যে সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন রয়েছে তাদের তো জানার কথা। কারণ এখন তো মিলিটারি ইনভলবমেন্ট নেই। আগে যেমনটি ছিল সেনাবাহিনী রাস্তা পাহাড়া দিত, চেকপোস্ট বসাত, অস্ত্র খোঁজাখুঁজি করত। এখন এত অস্ত্র কোথা থেকে আসছে, কে আনছে, কে কে দিচ্ছে তা বের করতে হবে বলেও মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
  • Courtesy: Amader Shomoy/May 6, 2018

Potato prices go thru' the roof

Potato in Dhaka markets has turned 41 percent pricier in a month as a large portion of the tuber was kept in cold storages leaving supplies tight.

Each kilogramme was going for Tk 20-24 yesterday, up from Tk 15-16 a month ago, according to the Trading Corporation of Bangladesh. A week ago the price was Tk 18-22.

“A large amount of potatoes has been kept in cold storages. As a result, supply has fallen,” said greengrocer Emon of Shankar, Dhanmondi. Bangladesh Cold Storage Association estimates that production dropped to 80-85 lakh tonnes this year from, what the Bangladesh Bureau of Statistics (BBS) says, 1.02 crore tonnes last year, as low price-induced losses prompted farmers to shift to other crops.

Of the production, nearly 40 lakh tonnes went to cold storages, said Qamrul Hussain Chowdhury Gorkey, the association's first vice president. Reasoning this for a scarcity in the market, he said prices went up for the recent rains.

“It appears that demand for potato has risen as a section of consumers are buying more of it for prices of other vegetables have increased,” he said, adding, “The recent rainfall has affected various vegetables in the fields.”

Farmers grew potato on 4.92 lakh hectares during the 2017-18 production year, according to the Department of Agricultural Extension. Acreage was 1.4 percent less than the 4.99 lakh hectares of fiscal 2016-17, shows the BBS data.

  • Courtesy: The Daily Star/ May 06, 2018

৯০০ পরিবারের ফ্ল্যাটের স্বপ্ন এখনো অধরা

হেলেমুল আলম

ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন এমন প্রায় সবারই স্বপ্ন থাকে এই শহরে নিজের একটি ঠিকানার। এই স্বপ্নেরই নাগাল পেতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বামী বেতন থেকে ও নিজে টিউশনির আয় থেকে অল্প করে টাকা জমিয়েছিলেন মওদুদা ইয়াসমিন। প্রায় দুই দশক ধরে এভাবেই সঞ্চয়ের পর ভেবেছিলেন স্বপ্নের সেই ঠিকানাটা হয়ত তাঁরা পেতে চলেছেন।

মোহাম্মদপুরের এফ ব্লকে লটারির মাধ্যমে ২০১০ সালে ৯০০ পরিবারের কাছে ফ্ল্যাট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা ছিল এর জন্য ১৫টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এক হাজার বর্গফুটের প্রতিটি ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ করা হয় ৩৫ লাখ টাকা। লটারিতে এক হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের জন্য নাম ওঠে মওদুদার। দুই ভাগে বিভক্ত স্কিমে মওদুদাকে প্রথমে চার কিস্তিতে ১৮ লাখ টাকা দিতে হয়। বাকি ১৭ লাখ টাকা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা।

ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানত তুলে ও এক আত্মীয়ের কাছে ঋণ নিয়ে শেষমেশ গত বছর নভেম্বরে ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেন মওদুদা দম্পতি। তিনি জানান, চুক্তিতে ছিল ১৮ লাখ টাকা পরিশোধের পরই জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ তাদের হাতে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিবে।

কিন্তু এমনটা হয়নি।
গ্রাহকদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ওই ফ্ল্যাটের দাম বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বক্তব্য, ফ্ল্যাটের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। সে কারণেই তাদেরকে দাম বাড়াতে হয়েছে।

এই অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন মওদুদা ইয়াসমিনের মত অন্য সব গ্রাহক। পূর্ব নির্ধারিত ফ্ল্যাটের দাম পরিশোধ করতেই তাদের অনেকেই গ্রামের জায়গা-জমি বিক্রি করতে হয়েছে। এখন একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে সাবলেট ভাড়া নিয়ে বাড়তি টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মওদুদাকে।

গ্রাহকদের প্রতিবাদ

হঠাৎ করে ফ্ল্যাটের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বরাদ্দ পাওয়া গ্রাহকরা সম্প্রতি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন। এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে চিঠিও দিয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।

মোহাম্মদপুর ব্লক এফ ফ্ল্যাট মালিক সমিতির আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান সেলিম বলেন, সাত বছর পার হয়েছে তবুও আমাদের কাছে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়নি। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এই ফ্ল্যাটগুলো হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখন ৩৫ লাখ টাকার এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের জন্য ৫৯ লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। বর্গফুট প্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা দাম হিসাবে ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ লাখ টাকা।

কিন্তু জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এখন প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ করেছে ৪ হাজার ৪০০টাকা। তারা বলছেন, অন্যান্য খরচের পাশাপাশি সিঁড়ি, লিফট ও লবির জন্য বাড়তি খরচ হওয়ার কারণেই ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে। কিন্তু ফ্ল্যাট মালিক সমিতির ওই নেতার বক্তব্য, এসব ‘গোপন খরচ’-এর কথা আগে কোথাও উল্লেখ ছিল না।

তিনি আরও বলেন, গত বছর আমাদের চতুর্থ কিস্তি জমা দিতে বলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, ১৫টির মধ্যে পাঁচটি ভবনের কাজ শিগগিরই শেষ হবে। ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যেই ফ্ল্যাট হস্তান্তর হবে এমন কথা অনুযায়ী আমরা টাকা জমা দিয়েছিলাম।

এখন তাদের অভিযোগ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সেই কথা না রেখে এখন ফ্ল্যাটের জন্য বাড়তি দাম চাইছে।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

যোগাযোগ করা হলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশলী ও সমন্বয়ক) এসএএম ফজলুল কবির বলেন, সরকার নির্ধারিত ফ্ল্যাটের দর অনুযায়ী তারা দাম বাড়িয়েছেন।

তিনি দাবি করেন, ঠিকাদাররা পাইলিং সংক্রান্ত একটি সমস্যার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেননি। এটাকে কেন্দ্র করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ আইনি লড়াই হয়েছে, এতেও প্রকল্পের কাজ পিছিয়েছে। সেই সাথে নতুন নকশা ও নতুন ঠিকাদার নিয়োগ হওয়ায় খরচ বেড়ে গেছে। এর মধ্যে সরকার ফ্ল্যাটের জন্য নতুন দর নির্ধারণ করায় তাদেরকেও দাম বাড়াতে হয়েছে।

ফজলুল কবির আরও বলেন, এবছরের জুনের মধ্যে পাঁচটি ভবনের কাজ শেষ হবে। আর বাকি ভবনগুলোর কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে। সেই সাথে ফ্ল্যাটের দাম কমানোর জন্য তারা শিগগিরই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবেন।

  • Courtesy: The Daily Star/Bangla/May 05, 2018


পরিস্থিতি অন্য সময়ের চেয়ে ভিন্ন — বিনিয়োগ স্থবির

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর


খেলাপি ঋণই বাংলাদেশের ব্যাংকব্যবস্থার সংকটের মূল কারণ। কেন ঋণখেলাপি বাড়ছে এবং সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ পরিস্থিতি উত্তরণে কতটুকু কার্যকর হবে, তা আলোচনা করা দরকার। ব্যাংকব্যবস্থায় কেন খেলাপি ঋণ হয়? এ বিষয়ে কতগুলো ব্যাখ্যা হাজির করা হয়। এর মধ্যে একটি ব্যাখ্যা কেতাবি অর্থনীতিবিদেরা হাজির করেন। এর মূল বক্তব্য হলো: ব্যাংক ঠিকভাবে গ্রাহক নির্বাচন করতে পারছে না। সে জন্য গ্রাহক যথাযথভাবে কার্যক্ষমতা দেখাতে পারছে না। অতএব ব্যাংকের কৌশলে ভুল আছে। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি যৌক্তিক মনে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরোপুরি ব্যাখ্যা করে না।


আস্থাহীনতাই স্থবিরতা ও পাচারের কারণ

লক্ষ করা যাচ্ছে, খেলাপি ঋণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তাহলে কী কারণে তা ঘটল? এর একটি ব্যাখ্যা যে বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন। অন্যদিকে লক্ষ করা যায়, মোট দেশজ উৎপাদনের তুলনায় ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির থাকলেও ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে এবং আমদানি বেড়েছে অনেক হারে। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ছিল ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধ্বের মুদ্রানীতিতে ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আমদানি ব্যয় গত বছরের একই সময় থেকে ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে ৩৫ দশমিক ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে লেনদেনের ভারসাম্যে ৯৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যেখানে গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে লেনদেনের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ছিল ২ হাজার ৪৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।


এর সঙ্গে পুঁজি পাচারের বিষয়টি মেলালে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা সহজতর হয়। তার মানে পরিষ্কারভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির মূল কারণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সংকোচন (বিনিয়োগ স্থবির হওয়া) এবং রাজনৈতিক কারণে আস্থাহীনতা। সাম্প্রতিক সময়ের হিসাব, বিশেষ করে গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) বলছে, বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পুঁজি বা অর্থ পাচার হচ্ছে এবং ক্রমাগত এর পরিমাণ বাড়ছে। তার মানে, অভ্যন্তরীণ খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না, কিন্তু বিদেশে চলে যাচ্ছে। আবার অন্যদিকে বিভিন্ন প্রকল্পে, বিশেষ করে মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এরই মধ্যে ৩ হাজার ৫৪৬ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়েছেন। শুধু মালয়েশিয়ার নয়, সিঙ্গাপুর, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্য দেশে বাংলাদেশিদের পাচারের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুইস ব্যাংকের সাম্প্রতিক হিসাব একই কথা বলছে। তার মানে, যখন আস্থাহীনতা থাকে, তখন ব্যাংকব্যবস্থা থেকে যেমন একধরনের পুঁজির পাচার ঘটে ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ে এবং অন্যদিকে নতুন বিনিয়োগকারী তৈরি হয় না আর ব্যাংক থেকে ঋণও নিতে চায় না। অর্থাৎ দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে ঋণযোগ্য টাকার (তারল্য বা অলস টাকা) বেড়ে যাওয়ার সংকটও দৃশ্যমান হয়। কাজেই এটা পরিষ্কার যে এখানে আস্থাহীনতা অন্যতম কারণ। আস্থাহীনতার কারণে যেহেতু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনিশ্চয়তা থাকে, সে জন্যই ব্যাংকব্যবস্থার এই সংকট হয়েছে। তখন লুটপাটও বেড়ে যায়, বেড়ে যায় প্রকল্প খরচও। এসবই দৃশ্যমান। 


পরিস্থিতি অন্য সময়ে চেয়ে ভিন্ন

অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলে থাকেন, দেশে ব্যাংকের আধিক্য আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। ছোট ও দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণের মাধ্যমে ব্যাংকের সংখ্যা কমানো সমস্যা নিরসনে সহায়ক হবে বলে তাঁরা মত দেন। কিন্তু এ কথা ভুলে যাচ্ছেন, ব্যক্তি খাতে এমন কোনো আহাম্মক নেই, যিনি লাল বাতি জ্বলা ব্যাংক কিনতে যাবেন। সারা পৃথিবীতে ‘বেল আউট’ সরকারকেই করতে হয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে ছোট ও দুর্বল ব্যাংককে ‘বেল আউট’ না করে বন্ধ করে দেওয়াই সমীচীন।


তাঁরা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ব্যক্তিমালিকানায় আনা গেলে খেলাপি ঋণের সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটবে। কারণ, রাজনৈতিক বিবেচনায় বেশিসংখ্যক লোক পরিচালনা পর্ষদ বা ব্যবস্থাপনায় থাকতে পারবে না। একসময় তাঁদের কথামতোই বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ করে বড় বড় সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছিল। আর্থিক খাতের সংস্কারে বলা হয়েছিল, ব্যক্তি খাতে ব্যাংক বাড়লে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সুদের হার কমে যাবে। কিন্তু প্রতিযোগিতায় সুদের হার তো কমছে না; এটি না কমার অন্যতম কারণ খেলাপি ঋণের বেশি পরিমাণ। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি থাকলে সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং বেশি রাখতে হয়। ব্যাংকের ব্যয় আরও বেড়ে যায়। এ কারণেও সুদের হার কাঙ্ক্ষিত হারে কমছে না। এই দুটি ব্যাখ্যার কতক অংশ ঠিক বটে, কিন্তু কোনোভাবেই বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণে সহায়ক নয়। তাহলে এমন কী হলো, যে জন্য দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অন্য সময় ও অবস্থানের চেয়ে ভিন্ন মাত্রার?


প্রাতিষ্ঠানিক সংকট ও পরিবারতন্ত্র

প্রাতিষ্ঠানিক সংকটাপন্নতাই সুদের হার বেশি হওয়ার মূল কারণ। ব্যক্তি খাতের ব্যাংকগুলোতেও রাজনৈতিক কায়দায় পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হচ্ছে। ব্যাংক স্থাপনে রাজনৈতিক লোকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নিয়মনীতির ক্ষেত্রেও বড় ধরনের অসুস্থ সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশেষ করে পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনীর মাধ্যমে এক পরিবারের দুজনের পরিবর্তে সর্বোচ্চ চারজন সদস্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন। এর মধ্য দিয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় পারিবারিক কর্তৃত্ব আরও সংহত করা হয়েছে। আরও বেশি সময় পদ ধরে রাখারও সুযোগ পাবেন তাঁরা। টানা দুই মেয়াদে ছয় বছরের বদলে কোনো পরিচালক টানা তিন মেয়াদে নয় বছর পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন। আর সঙ্গে সঙ্গে যোগ হয়েছে, একই পরিবারের বহু ব্যাংকের মালিকানা। ওই পরিবারগুলো আবার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণের ঋণগ্রহীতা। ঝুঁকির এ ধরনের বড় নজির পৃথিবীতে নেই।


ব্যাংকে তথাকথিত মালিকানা বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক ধারণা প্রচলিত আছে। বিষয়টি খোলাসা করা যাক। নিঃসন্দেহে ব্যাংক একটি কোম্পানি। কিন্তু তা যেকোনো সাধারণ কোম্পানির মতো নয়। সাধারণ কোম্পানিতে পুঁজির জোগান উদ্যোক্তারা ও শেয়ারহোল্ডাররা দিয়ে থাকেন। শুধু কার্যকর পুঁজি (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটা ব্যতিক্রম। এখানে উদ্যোক্তা বা শেয়ারহোল্ডারদের পুঁজির তুলনায় ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ দেয় বা বিনিয়োগ করে, তার অংশ খুবই কম। আমানতকারীরা অধিকাংশ অর্থের জোগান দেন। তার মানে, ব্যাংকের মালিকানা যার হাতেই থাকুক না কেন, এটি আসলে আমানতকারীর প্রতিষ্ঠান। মূলত, সে জন্য রেগুলেশন বা পরিচালনের ধরন ভিন্ন হওয়ার দাবি রাখে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষণীয় যে পরিচালনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যর্থতা বিদ্যমান। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকগুলোকে আমানতকারীর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারেনি। ব্যাংকব্যবস্থার বিভিন্ন দোষ-ত্রুটি উপস্থাপন করলেও গণমাধ্যমও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এখনো জনমনে এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি যে ব্যাংক আর দশটি প্রতিষ্ঠানের মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়; এটি আমানতকারীর প্রতিষ্ঠান। কাজেই আমানতের খেয়ানত করার অধিকার কারও নেই। সে জন্যই ব্যাংকের ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা যুক্তিসংগত। কিন্তু তা বর্তমানে দৃশ্যমান নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকেই এখনো ব্যক্তি খাতে ব্যাংকগুলো ছেড়ে দিলে খেলাপি ঋণ ও সুদের হার কমে যাবে—এ ধরনের ভ্রান্ত তত্ত্বের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

  • ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেয়ারপারসন, উন্নয়ন অন্বেষণ
  • কার্টেসি — প্রথম আলো/ এপ্রিল ৬, ২০১৮।