Search

Thursday, May 17, 2018

বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভালো উপায় ছিল — উইলিয়াম ক্রাউলি



বিবিসির সাবেক সাংবাদিক উইলিয়াম ক্রাউলি বলেন, বাংলাদেশের প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি ভালো উপায় ছিল। কিন্তু সেটি বর্তমান সরকার বাতিল করেছে। 

বুধবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতির কথা উঠে আসে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, ভারত বা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে দলীয় নীতির ভিত্তিতে নির্বাচন হলেও বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানকার রাজনীতি দুই পরিবারকে ঘিরে আবর্তিত। ফলে তৃতীয় কোনো রাজনীতিক দলের উত্থানের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধীদের অব্যাহতভাবে দেশের স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করার মাধ্যমে দেশের সুশীল সমাজকে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত হওয়ার ভয়ে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া কঠিন। খালেদা জিয়ার জেলদণ্ড, বিরোধী মত দমন এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে ডেভিড বার্গম্যান বলেন, যেকোনো উপায়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইবে।
পররাষ্ট্রনীতির প্রভাব বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডেভিড বার্গম্যান বলেন, ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন না করতে পশ্চিমা দেশগুলো সরকারকে চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু ভারতের একক সমর্থনের কারণে আওয়ামী লীগ ওই পরিস্থিতি গায়ের জোরে উতরে যায়।

‘দক্ষিণ এশিয়ায় সিদ্ধান্তের সময়: আসন্ন নির্বাচন ও গণমাধ্যম’ (সাউথ এশিয়া ডিসাইটস: আপকামিং ইলেকশন অ্যান্ড দ্য মিডিয়া) শীর্ষক ওই সেমিনারের যৌথ আয়োজক ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট মিনস্টার এবং শেভেনিং সাউথ এশিয়া জার্নালিজম প্রোগ্রাম। ‘ইনস্টিটিউট অব গভর্নমেন্ট’ হাউসে অনুষ্ঠিত হয় দিনব্যাপী এই সেমিনার।

আগামী দুই বছর দক্ষিণ এশিয়ায় অনেকটা নির্বাচনের মৌসুম। এ সময়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশগুলোয় ক্ষমতাসীন দলগুলোর কর্তৃত্ববাদী আচরণ, বিরোধী মত দমন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কারণে এ অঞ্চলের নির্বাচনী নিরপেক্ষতা আগাম আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে।

নির্বাচন ঘিরে সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থান, গণমাধ্যমের ভূমিকা, নির্বাচনে প্রবাসীদের প্রভাব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভুয়া সংবাদের প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার দৃষ্টি—এই চারটি ভিন্ন ধাপে চলে দিনব্যাপী আলোচনা।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট মিনস্টারের ‘মিডিয়া হিস্ট্রি’ বিষয়ের অধ্যাপক জেন সিয়াটন বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের অবক্ষয়ের প্রবণতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের অব্যাহত চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের চিফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স করেসপনডেন্ট গিডিয়ন রচম্যান বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো একসময় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য আদর্শ গণতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে সামনে ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে মনোরঞ্জনবাদী রাজনীতির উত্থান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন দেশে দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ভারতের নরেন্দ্র মোদি অনেকটা একই কৌশলে গণমাধ্যমগুলোকে এড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার ও ফেসবুকে সরাসরি ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এই পরিস্থিতি গণমাধ্যমগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
বিবিসির সাবেক সাংবাদিক ডেভিড পেইজ বলেন, সাংবাদিকদের অনেকেই রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ করেন। তাঁরা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কাজ করেন। এটা গণতন্ত্রের পথে বড় বাধা।
আলোচনা করে একমত হন যে গণতন্ত্র কেবল বেশি ভোট পেয়ে জিতে যাওয়া নয়; ন্যায়সংগত ও জবাবদিহিমূলক সরকার নিশ্চিত করাই আসল কথা। এ কাজে গণমাধ্যমগুলোকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।

চ্যানেল ফোরের বার্তাপ্রধান ডোরোথি বায়ার্ন বলেন, ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীদের চাপ মোকাবিলায় স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চা আরও বেশি বেগবান করতে হবে। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায় ও মিথ্যাচার মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, দেশে দেশে গণমাধ্যমগুলোর যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। পরিণতির ভয়ে কোনো সংবাদ গোপন না রেখে তা বিদেশি কোনো বন্ধু পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করতে হবে। গণমানুষের কাছে স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্ব তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে চ্যানেল ফোরের এই সাংবাদিক বলেন, মিয়ানমারে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু সাধারণ মানুষ গোপনে ভিডিও চিত্র ধারণ করে রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্ঠুরতার খবর ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে যুক্ত করে কাজ করলে প্রভাবশালীরা তথ্য গোপন রাখতে পারবে না।

অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বিবিসির হার্ডটকের উপস্থাপক ডেভিড লিয়ন, বিবিসি রেডিও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ফিল টিনলিন, ভারতীয় লেখক ও গবেষক ম্যানু পিল্লাই, লেখক ও প্রযুক্তিবিষয়ক ব্লগার জেমি বার্লেট, ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক নাইমুল করিম এলিন, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট মিনস্টারের শিক্ষক ইফশিতা বসু, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সহকারী অধ্যাপক রাজেশ ভেনুগোপাল প্রমুখ।

তথ্যসূত্র — প্রথম আলো/ বুধবার, মে ১৬, ২০১৮। 

অর্পিত দায়িত্ব পালনে ইসি ব্যর্থ হয়েছে

খুলনা সিটি নির্বাচন

খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন যে পুরোপুরি অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, সেটি বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর ও ছবিতেই অনেকটা পরিষ্কার। নির্বাচন নিয়ে জনমনে সন্দেহ-সংশয় ছিল। তবে ঘটনাগুলো যেভাবে ঘটেছে, তা খুলনাবাসীকে মোটেই অবাক করেনি। সুতরাং ভোটকেন্দ্রগুলোর বাইরের পরিবেশ দৃশ্যত শান্ত থাকা আর ভেতর-বাইরের সবটাই সরকারি দলের কবজায় থাকার মতো একটি পরিবেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন যে সম্ভব নয়, তা সহজপাঠের মতো বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেনি। এটা অশনিসংকেত। 

গাজীপুরসহ চারটি সিটি নির্বাচন ঘিরে এখন যে প্রশ্নটি জ্বলে উঠবে, তা হলো খুলনায় যে নির্বাচন হলো, সেসব স্থানেও আওয়ামী লীগ ও ইসির মতে ‘চমৎকার ও সুন্দর নির্বাচন’ হলে, এই রকম সিটি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হবে কি হবে না? আমরা সহজে যা বুঝি তা হলো জনসাধারণকে ফাঁকি দেওয়া কিংবা সত্য আড়াল করা যায় না। খুলনায় নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের পক্ষপাত এবং বিরোধী দলের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ প্রাক্-নির্বাচনী পর্বের কিছু ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। এরপর ভোটের দিনের যে বিবরণ আমরা পেয়েছি, তা কার্যত প্রাক্-নির্বাচনী পর্বেরই ধারাবাহিকতা। 

তবে নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্রের ‘দু-একটি বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা দর্শন করা নিশ্চয় খুলনাবাসীকে মর্মাহত করবে। কারণ, তারা দেখেছে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইসি ও আওয়ামী লীগ অস্বীকার করতে পারবে না যে বিএনপির ‘পরাজিত’ প্রার্থী এক লাখের বেশি ভোট পেয়েছেন। যে প্রার্থী এতটা বিপুল পরিমাণ ভোট পেতে পারেন, তাঁর পোলিং এজেন্ট দিতে লোকবলের অভাব পড়েছিল, সেটা বিশ্বাস করানো কঠিন। প্রথম আলোর অন্তত পাঁচজন সাংবাদিকের সরেজমিন পরিদর্শন করা ৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে তাঁরা ৬০টি কেন্দ্রে কোনো পোলিং এজেন্ট দেখেননি। এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তাঁর দলীয় প্রার্থীর মেয়র হওয়ার খবর শুনে স্মরণ করেছেন যে খুলনার এই এলাকাটিতে আওয়ামী লীগ আগে কখনো এত ভালো করেনি। 

নির্বাচন কমিশনকে নির্মোহ থাকতে হবে। ঢাকায় বিএনপির ফল প্রত্যাখ্যান ও সিইসির পদত্যাগ দাবি রাজনৈতিক। কিন্তু বিএনপি প্রার্থীর ১০৫ কেন্দ্রে ভোট ডাকাতির অভিযোগ এবং ৪৫ কেন্দ্রে পুনঃ তদন্তের দাবি আইনগত বিষয়। বিএনপি যদি সত্যি সত্যি প্রতিকার চায় তাহলে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে আসতে হবে। এটাও লক্ষণীয় যে বিএনপি ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলছে না। ‘পরাজিতরা’ কখনো যে আইনি লড়াইয়ে যেতে চায় না, সেই পরিস্থিতি ইসির জন্য অবমাননাকর। আর তা নির্বাচনী আইন সংস্কারের অপরিহার্যতাকেই নির্দেশ করে। আশা করব, বিএনপি মেঠো বক্তৃতার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালেও আসবে। 

ইসিকে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের হম্বিতম্বি গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণার জন্য সুখকর নয়। এই নির্বাচন সারা দেশের ভোটারদের মধ্যে একটা আস্থা তৈরির সুযোগ এনেছিল। কিন্তু তা হলো না। সিইসি ও কমিশনারদের নীরবতা হয়তো তাৎপর্যহীন নয়। 

এসব সত্ত্বেও আমরা আশা করব, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা নির্বাচনী বিভেদ ভুলে সবাইকে নিয়ে খুলনাবাসীর উন্নয়নে কাজ করবেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার যে মনোভাব ব্যক্ত করেছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাই।
  • Courtesy: Prothom Alo /সম্পাদকীয় /May 17, 2018

খুলনার ভোটের অনিয়ম তদন্তের তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকালে সংঘটিত অনিয়ম ও হুমকির ঘটনায় হতাশ যুক্তরাষ্ট্র। ওই নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, হুমকি-ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভাঙচুর ও অনিয়মের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। নির্বাচনটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করায় সব দলকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন- পরবর্তী নির্বাচনের জন্য খুলনার ঘটনাগুলোর তদন্ত হওয়া জরুরি। সেখানে অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

গতকাল বিকালে সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ওই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।

এদিকে, মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

খুলনা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমরা বারবার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের এ আহ্বান অব্যাহত থাকবে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসক ও দূতের বৈঠক

ঢাকা সফররত মার্কিন দাতব্য সংস্থা ইউএসএআইডির প্রশাসক মার্ক গ্রীণকে নিয়ে বুধবার বিকালে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে গ্রীণ ও বার্নিকাট উভয়েই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। এ সময় উপস্থিত এক জ্যেষ্ঠ কূটনৈতিক সংবাদদাতা পর্যবেক্ষক হিসেবে খুলনা নির্বাচনের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন জানতে চান।

জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন- এটা খুব উৎসাহজনক যে, অনেক রাজনৈতিক দল খুলনার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমি প্রত্যেককে অভিনন্দন জানাই। তবে ওই নির্বাচনে বল প্রয়োগ, ভোটারদের বাধা দান, ভাঙচুর এবং অনিয়মের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া জরুরি। জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

পরবর্তী নির্বাচনের জন্য এটি জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন- সেখানে অনিয়ম ও হুমকির যেসব ঘটনা ঘটেছে তা ‘খুব হতাশাজনক’। এ সময় আগামী নির্বাচনগুলোতে সব দল রাজনৈতিক দলকে আইনের সীমার মধ্যে থাকার আহ্বান জানান তিনি। 

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল ও প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টদের জোর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়াসহ দিনব্যাপী বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ মিলেছে। এ অবস্থায় রাতে চূড়ান্তভাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। 

  • Courtesy: Manabzamin /May 17, 2018

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাস্তব কাজ ও কল্পনাবিলাস

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব


বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে সরকারি মহল থেকে পর্যাপ্ত তথ্য প্রদান এবং সেসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের উপযুক্ত পরিসর না থাকায় এ বিষয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। বিভ্রান্তিও হয়েছে। বিশেষ করে প্রথম বাংলাদেশি কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর (বিএস-১) কাজ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন স্যাটেলাইটের ভিন্ন ভিন্ন কাজ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেক বিএস-১ দিয়ে সব ধরনের স্যাটেলাইটের কাজ করাতে চেয়েছেন। যোগাযোগের কাজের জন্য বানানো স্যাটেলাইট শুধু যোগাযোগের কাজই করবে। আবহাওয়া পূর্বাভাস, ভূতাত্ত্বিক জরিপ, ছবি তোলা, মানচিত্র তৈরি, জলবায়ু পরিবর্তনের সমীক্ষা ইত্যাকার কাজগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্যাটেলাইট দিয়ে করানো হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে কারিগরি দিক থেকে বিএস-১ সক্ষমতার দিকগুলো নিয়ে আলোচনার প্রয়াস পাচ্ছি।

বিএস-১-এর রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে হওয়া আলোচনাগুলোয় ট্রান্সপন্ডার বিক্রির ব্যাপারটির বহুল ব্যবহার লক্ষণীয়। প্রথমেই ট্রান্সপন্ডার সম্পর্কে খানিকটা জেনে নিই।

যোগাযোগে ট্রান্সিভার, রিপিটার ও ট্রান্সপন্ডার 


ট্রান্সপন্ডার (ট্রান্সমিটার-রিস্পন্ডার) কোনো উৎস থেকে সংকেত গ্রহণ করে এবং তাকে অ্যাম্পলিফাই বা বিবর্ধন করে আবার এমনভাবে ফেরত পাঠায় যাতে বহুসংখ্যক গ্রাহক ওই সংকেত বা সিগন্যাল গ্রহণ করতে পারে। ট্রান্সপন্ডার অনেকটা টিভি বা রেডিওর রিলে স্টেশনের মতো, যারা একই সঙ্গে বহু চ্যানেল সম্প্রচার করে। স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনে একটি ট্রান্সপন্ডার এক গুচ্ছ ভূ থেকে উপগ্রহে আপ লিংক তরঙ্গপথ গ্রহণ করে পৃথিবীর দিকে ডাউন লিংকে তাদের অপর আরেক গুচ্ছ ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি সেট সম্প্রচার করে। কী কাজ দেওয়া হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে ট্রান্সপন্ডার বিবিধ রকমের কাজ যুগপৎ করতে পারে। যেমন: লোকেশন সার্ভিস, দূরত্ব পরিমাপের মতো কাজ।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর কারিগরি বৈশিষ্ট্য


বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কারিগরি নকশা তৈরি, প্রস্তুতকরণ, পরীক্ষা এবং কক্ষপথে উৎক্ষেপণের দায়িত্বে ছিল ‘থ্যালেস এলেনিয়া স্পেস’ কোম্পানি। এর আয়ুষ্কাল ১৫ বছর এবং মূল কাজ হলো টিভি সম্প্রচার, ভিস্যাট ও ডিটিএইচ। 

বিএস-১ স্যাটেলাইটটি ২৬টি কে-ইউ ব্যান্ড এবং ১৪টি সি ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার সজ্জিত হয়েছে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথের অবস্থান থেকে। কে-ইউ ব্যান্ডের আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগরে তার জলসীমাসহ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া অঞ্চল। সি ব্যান্ডেরও আওতায় থাকবে এই সমুদয় অঞ্চল। উল্লেখ্য, যেহেতু বাংলাদেশ ৯০ দশমিক ৪ দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে, তাই ১১৯ দশমিক ২ পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথে থাকা ভূ-স্থির উপগ্রহের (জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট) সবচেয়ে অনুকূল আওতায় (অপটিমাম কভারেজ) বাংলাদেশের স্থল ও জলসীমা পড়ছে না; বরং এর খুব উচ্চমান সুবিধা পাবে ইন্দো-ফিলিপিনো অঞ্চল।

থ্যালিস বলছে, ইন অরবিট টেস্ট (আইওটি) সম্পন্ন হওয়া সাপেক্ষে বিএস-১ নিম্নোক্ত প্রান্তিক সেবাগুলো দিতে পারবে:

১. ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম)-মাল্টিপ্লেক্সড ডিজিটাল টেলিভিশন, রেডিও এবং সংশ্লিষ্ট ডেটা, যা সরাসরি খুব ছোট রেডিও অ্যানটেনাগুলোয় সরবরাহ করবে। 

২. ভিডিও ডিস্ট্রিবিউশন-মাল্টিপ্লেক্সড ডিজিটাল টেলিভিশন, রেডিও এবং সংশ্লিষ্ট ডেটা, যা মধ্যমান রেডিও অ্যানটেনাগুলোয় সরবরাহ করবে। 

৩. ভিস্যাট প্রাইভেট নেটওয়ার্ক-ভয়েস, ডেটা এবং ইন্টারনেট সার্ভিসযুক্ত প্রাইভেট নেটওয়ার্ক সরবরাহ করবে, যা ব্যাংক, গ্যাস স্টেশন ইত্যাদিতে মধ্যমান রেডিও অ্যানটেনার মাধ্যমে সরবরাহ করবে। 

৪. ব্রডব্যান্ড-রিমোট অ্যান্ড ইউজারকে (ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান) উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা দেবে। 

৫. কমিউনিকেশন ট্রাংক-ওয়াইড ব্যান্ড উচ্চ ক্ষমতার পয়েন্ট টু পয়েন্ট ডেটা সার্ভিস সরবরাহ করবে।

উপরিউক্ত ৪ ও ৫ নম্বর সেবার জন্য আলাদা একটি স্যাটেলাইট ফোন অপারেটর তৈরি করার প্রয়োজন পড়বে। এর ইউজার টার্মিনাল (যাকে আমরা মোবাইল বলি) ল্যাপটপ সাইজের বা তারও বড় হয়ে থাকে। বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক কোম্পানি মাত্র তিন বা চারটি স্যাটেলাইট দিয়ে সারা পৃথিবীতে এই জরুরি সেবা দিয়ে থাকে, সাধারণত দুর্যোগপূর্ণ কিংবা প্রত্যন্ত এলাকায় যা কাজে লাগে। ভূমিকম্প, সুনামি এমনকি প্রলয়ংকরী ঝড় ও বন্যার সময়ে বৈশ্বিক ত্রাণ সংস্থাগুলোকে এসব স্যাট ফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে যেহেতু বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট একটি জিওস্টেশনারি অরবিট স্যাটেলাইট (ব্যবহারকারী থেকে প্রায় ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করে) তাই এর ভয়েস ও ডেটা কমিউনিকেশনে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সময়ের পার্থক্য (ল্যাটেন্সি বা ডিলে) থাকে, যা দিয়ে উচ্চ ভয়েস ও ডেটা ধারণক্ষমতার স্বাভাবিক বাণিজ্যিক টেরেস্ট্রিয়াল টেলিসেবা দেওয়া যায় না। লো আর্থ অরবিট বা লিও স্যাটেলাইটের তুলনায় এখানে ব্যান্ডউইথ বেশি থাকলেও উচ্চ ল্যাটেন্সির কারণে ৬০ থেকে ৫১২ কেবিপিএসের টেকসই সেবাদান সম্ভব। ফলে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মূলত ডিজিটাল টিভি ব্রডকাস্টিং, রেডিও ব্রডকাস্টিং এবং ভি-স্যাট স্যাটেলাইট। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট একটি যোগাযোগ উপগ্রহ, যা দিয়ে কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে জরুরি টেলিকম সেবাও দেওয়া যাবে।

বহুবিধ কাজে ব্যবহৃত নানাবিধ কৃত্রিম উপগ্রহ


কৃত্রিম সম্প্রচার ও যোগাযোগ উপগ্রহের বাইরেও নানাবিধ স্যাটেলাইট রয়েছে, যা মহাশূন্য দর্শন (স্পেস অবজারভেশন, এস্ট্রনমি), আবহাওয়া পরিমাপ (ওয়েদার অ্যান্ড এটমোস্ফেরিক স্ট্যাডি), বিশেষ বিশেষ গবেষণা, বিশেষায়িত টেলিযোগাযোগ, নেভিগেশন, সার্চ অ্যান্ড রেস্কিউ, রিমোট সেন্সিং ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তবে কথা হচ্ছে, এর জন্য ওই বিশেষ কৃত্রিম উপগ্রহকে বিশেষ বিশেষ হার্ডওয়্যারে সজ্জিত করা হয়। যোগাযোগ স্যাটেলাইটে যেমন থাকে ট্রান্সপন্ডার, তেমনি আবহাওয়া উপগ্রহগুলোয় পে লোড হিসাবে থাকে রেডিও মিটার (রেডিয়েশন মাপার যন্ত্র), স্কেটারোমিটার (পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত বিভিন্ন গ্যাস, যেমন: কার্বন ডাই-অক্সাইড, ওজোন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি পরিমাপক), লাইটিং ইমেজার (বিদ্যুৎ চমকানো মনিটর করা) ইত্যাদি। এ ছাড়া গবেষণাকাজে নিয়োজিত উপগ্রহে স্পেকট্রেমিটার (তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ স্ট্যাডি মনিটর করা), আলটিমিটার (উচ্চতা ও স্পেস ডিসট্যান্স মাপা) ইত্যাদি নামক বিভিন্ন ধরনের মনিটরিং যন্ত্র ও ক্যামেরা থাকে।

যেহেতু বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে শুধু ট্রান্সপন্ডার নামক যন্ত্র আছে এবং এর বাইরে ওপরে বর্ণিত অন্য কোনো যন্ত্র বা ক্যামেরা নেই, তাই এটা মূলত ডিজিটাল টিভি ব্রডকাস্টিং, রেডিও ব্রডকাস্টিং এবং একটি যোগাযোগ স্যাটেলাইট। আশা করি, এই পর্যায়ে এসে বিভ্রান্তির কিছুটা অবসান হবে এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-কে জড়িয়ে রচিত কল্পকথা ছড়ানোর অতি উৎসাহী ব্যাপারগুলো কমে আসবে।

অন্যায্য প্রত্যাশার চাপ কিংবা অতি উৎসাহী প্রচারণা! 

১. বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশে ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) সেবায় ব্যাপক মাত্রা যোগ করবে। দেশে এখনো কেব্‌ল টিভির জয়জয়কার, এখানে স্যাটেলাইট টিভি বা ডিশ টিভির ব্যবসা ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়নি। যেহেতু কেব্‌ল টিভি শত শত কিংবা হাজার মাইলের কেব্‌ল ওয়্যার লাইন টেনে করা হয়, তাই নগরীর রাস্তার ওভার হেড কিংবা আন্ডারগ্রাউন্ড স্পেস ম্যানেজমেন্টে এটা প্রশাসনিক দিক থেকে জঞ্জালপূর্ণ, তাই কেব্‌ল সম্প্রচার বন্ধ হওয়া জরুরি।

যেহেতু বাংলাদেশ ৯০ দশমিক ৪ দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে, তাই ১১৯ দশমিক ২ পূর্ব দ্রাঘিমার অর্বিটাল পজিশনে থাকা জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের (ভূ-স্থির উপগ্রহ) অনুকূল আওতায় বাংলাদেশের স্থল ও জলসীমা থাকছে না। ফলে বাংলাদেশি টিভি সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষভাবে বৃষ্টি, কুয়াশা এবং ঝড়-বাদলের সময়ে সম্প্রচার কোয়ালিটি পাইলট করে প্রমাণ করে দেখানোর একটা বাধ্যবাধকতা থেকে গেছে। অন্যদিকে, যেহেতু বর্তমানে টিভি স্টেশনগুলো ইতিমধ্যেই বাইরের স্যাটেলাইট সম্প্রচার কোম্পানির সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ এবং টিভিগুলোর সঞ্চালনের সমুদয় কারিগরি যন্ত্রপাতি ডিটিএইচ পদ্ধতির নয়, তাই এখনই তাদের ওপর বিএস-১-এর ওপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রত্যাশাও অন্যায্য।

বিপরীতে যেহেতু খুব উচ্চমান কভারেজ পাওয়া যাবে ইন্দো-ফিলিপিনো টেরিটরিতে, নবগঠিত বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডকে (বিসিএসসিএল) ওই অঞ্চলে সম্ভাব্য গ্রাহক-ক্রেতা খুঁজতে হবে দ্রুত। অন্যান্য দেশে সাধারণ একটি যোগাযোগ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের আগেই এই ধরনের বাণিজ্যিক বন্দোবস্ত করে রাখা হয়। আমাদের বেলায় সেটা ঘটেনি।

পাশাপাশি বিএস-১ ‘ভিস্যাট’ভিত্তিক প্রাইভেট নেটওয়ার্ক তৈরির পথ উন্মুক্ত করবে। এটা ভয়েস, ডেটা ও ইন্টারনেট সার্ভিসযুক্ত প্রাইভেট নেটওয়ার্ক তৈরির পথ উন্মুক্ত করবে, যা বাংলাদেশের ব্যাংক, গ্যাস স্টেশন, বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদিতে অনুপস্থিত। আমরা আশা করব, বিসিএসসিএল দেশে ও দেশের বাইরে ফার ইস্টার্ন ইন্দো-ফিলিপিনো জোনে রাজস্ব আয়ের ভিস্যাট-কেন্দ্রিক এই নতুন দিকও সন্ধান করে দেখবে।

২. প্রলয়ংকরী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ করে মর্মন্তুদ বন্যা, ঝড় বা সিডরের মতো পরিস্থিতি মোকাবিলায়, কিংবা ভূমিকম্প পরিস্থিতিতে কীভাবে ত্রাণ ও উদ্ধারকর্মীদের যোগাযোগের জন্য বিএস-১-কেন্দ্রিক স্যাটেলাইট ইউজার অ্যান্ড টার্মিনাল ফোন বা ল্যাপটপ কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যেহেতু বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই স্থাপিত বিশেষ কৃত্রিম উপগ্রহ দিয়ে এই সার্ভিস দিচ্ছে, তাই সেখান থেকে খরচ সীমিত রেখে পর্যাপ্তসংখ্যক স্যাট ফোন বা স্যাট টার্মিনাল কেনা যেতে পারে (হাইতি, ক্রাইস্ট চার্চ, সিচুয়ানে কিংবা ইতালিতে এই কোম্পানিগুলো কাজ করেছে)। অন্যদিকে, এই কাজের জন্য বাংলাদেশের বাহিনীগুলোর ওয়াকিটকি সার্ভিসও ব্যবহার করা যেতে পারে। এর বাইরে টেলিকমের ইমার্জেন্সি সার্ভিস প্রভিশনের কাজও বাকি আছে। তাই অপ্রয়োজনীয় খরচের লাগাম টেনে সাশ্রয়ী এবং টেকসই সমাধানই কাম্য।

৩. বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে ছবি তোলা, ইমেজ প্রসেসিং, বন্যা পরিস্থিতি পরিমাপ, পানির উচ্চতা নির্ণয়, আবহাওয়া পূর্বাভাস, দূরত্ব পরিমাপ, নদীর নাব্যতা ও গতিপথ পর্যবেক্ষণ, জলাভূমির সংকোচন-প্রসারণ, রাস্তাঘাটের নিপুণ ডিজিটাল মানচিত্র, আর্থ অবজারভেটরি কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত কাজগুলো করা যাবে না। এর জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিশেষায়িত কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে।

  • ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব: প্রকৌশলী। সিনিয়র সফটওয়্যার সলিউশন আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন নেদারল্যান্ডস।
  • কার্টেসি — প্রথম আলো/ বুধবার, মে ১৬, ২০১৮। 

Wednesday, May 16, 2018

Biman now at financial risk

Debt-equity ratio goes up abnormally

Kamrun Nahar 


National flag carrier Biman Bangladesh Airlines is now at financial risk as its debt-equity ratio has gone up abnormally to 4:1 from the normal rate of 1.5:1, a Biman official said on Tuesday.

After receiving four state-of-the-art aircraft Dreamliner 787 from Boeing this year, he said, the amount of loan will reach about Tk 80 billion from the present amount of Tk 44 billion. Biman needs government investment, equity support and fund to augment its equity base, he added.

"The rate of property is not increasing same as the debt. We are at risk as the amount of our debt is much more than our capital," said general manager (public relations) Shakil Meraj at a workshop organised for aviation reporters.

He said, "We need government support to increase our capital or equity base."

A Biman official said there is no allocation for Biman in the national budget. The government has provided only Tk 1.5 billion as cash incentive for Biman in last 46 years.

The government converted Biman into a public limited company in 2007 when the amount of liabilities was over Tk 16 billion. Liabilities to the civil aviation authority and oil company were declared as equity by the government, not cash. Biman's property has increased insignificantly over the years after making it a company, an official said seeking anonymity. Seven secretaries own the shares of the company.

Mr Shakil said Biman has property worth over Tk 20 billion including own offices in different districts, and six aircraft. Four Dreamliners will be added to the fleet by this year and the amount of loan will increase by Tk 35 billion to Tk 80 billion, he added.

He said jet fuel cost has increased by 29 per cent compared to that of the last year. Biman also incurred a loss of Tk 1.04 billion due to depreciation of taka.

Despite being the state carrier, he said, Biman pays the same landing permit charges like those of foreign airlines to the civil aviation authority which should be rationalised.

Another Biman official said they buy jet fuel at 30 per cent higher rate which is not in practice for other airlines which get special rates in their own countries.

Few months back, Biman bought five cobus from Germany at a cost of Tk 25 million. But the National Board of Revenue (NBR) has charged them 500 per cent duty, considering those commercially-operated buses on the streets. This has created a row between the two organisations.

Industry experts said Biman is at financial risk as it has already a huge amount of debt although it is true that they have got the loan as the government has given them sovereign guarantee. Biman has lost credit worthiness in the credit market.

Biman has repaid loan of over Tk 53.41 billion since 2007 after it signed agreement to purchase 10 new aircraft from Boeing at a cost of Tk 20 billion. Biman has taken loan from Sonali Bank UK, Standard Chartered Bank (London) and HSBC (Hong Kong) through tender.

The major source of revenue is international ticket sale which is 65 per cent. Over 18 per cent of its revenue comes from ground handling. From Hajj flight operations, Biman earns 15 per cent revenue, and from domestic flights only 2.0 per cent revenue. Another 2.0 per cent comes from poultry complex, training centre and catering service.

  • Courtesy: The Financial Express /May 16, 2018

অসহায় অর্থমন্ত্রী!

ব্যাংকিং খাতকে বাঁচাবে কে?


বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক যা বলেছেন, তার সারমর্ম হলো ঋণখেলাপির দায় শুধু ক্ষমতাসীনদের নয়, এই সংস্কৃতির শুরু হয়েছিল বিএনপির আমলে। আমাদের প্রশ্ন হলো, বিএনপির আমলে শুরু হওয়া খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ আমলে এসে কমেছে না বেড়েছে? যদি বেড়ে থাকে তার দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে।

দুই দলের এই নালিশ-পাল্টা নালিশের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একটি নতুন তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ব্যাংকের পরিচালকেরা পরস্পর যোগসাজশ করে ঋণ দেওয়ার ফলেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। কিন্তু এসব তথ্যের চেয়েও উদ্বেগজনক হলো, অর্থমন্ত্রী অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছেন, ‘কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব জানি না।’ তিনি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন একটানা সাড়ে নয় বছর। এখন খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন, সেটি যদি না জানেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?

আমরা লক্ষ করছি, সরকার ফি বছরই জনগণের করের অর্থে মূলধন জোগান দিয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখছে। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকেরা তো ব্যাংকগুলোকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। সরকার বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের জবাবদিহির আওতায় না এনে একই পরিবারের চারজনকে ব্যাংকের পরিচালক এবং একনাগাড়ে নয় বছর পরিচালক পদে থাকার সুযোগ দিয়েছে। এ নিয়ে ব্যাংকার, বিশেষজ্ঞদের আপত্তিও সরকার আমলে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা খাত চলে আইনকানুনের ভিত্তিতে। সেই আইনটিই যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় কিংবা পরিচালকদের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার পথ প্রশস্ত করে, তখন আর কিছুই করার থাকে না।

অর্থমন্ত্রী আরও স্বীকার করেছেন, আগ্রাসী ব্যাংকিং হয়েছে। ব্যাংকিং আগ্রাসী হোক আর রক্ষণশীল হোক, ব্যাংক থেকে দেওয়া ঋণ তো ফেরত আনতে হবে। ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে ব্যাংকিং আইনের সংস্কার করতে হবে। কিন্তু সরকার আইন সংস্কারের নামে ব্যাংক পরিচালকদের পরস্পর পিঠ চুলকানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এখন নিরুপায় হয়ে অর্থমন্ত্রী আহাজারি করছেন। আইন প্রতিপালনের ক্ষেত্রে নজরদারি প্রতিষ্ঠান হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর মতো সেই প্রতিষ্ঠানও সম্ভবত অসহায়। তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে ফারমার্স ব্যাংকের কথা বলা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম ধরল, তখন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে হয়তো ব্যাংকটি এতটা দুরবস্থায় পড়ত না।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা এবং ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানো। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থ অনেক বড়। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকিং খাতকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি সরকার আগ্রাসী নীতি নিয়ে থাকে, তাহলে আদায়ের ক্ষেত্রে কেন নমনীয় হবে? প্রয়োজনে ঋণ আদালত আইন সংশোধন করতে হবে। অনেক ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে যেমন বিচারের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে, ঋণ আদালতের মামলায়ও সেটি করা হোক। তাতে কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতা আদালতে একটি মামলা ঠুকে বছরের পর বছর ঋণ আটকে রাখতে পারবেন না।

অর্থমন্ত্রী অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেই ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা কাটবে না; বরং তাঁকে এই অসহায়ত্ব থেকে বেরিয়ে এসে খেলাপি ঋণ আদায়ে একটি টেকসই কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। কার আমলে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি শুরু হয়েছে, সেই বিতর্কের চেয়েও জরুরি হলো খেলাপি ঋণটি আদায় করা। অন্যথায় ব্যাংকিং খাতের নৈরাজ্য চলতেই থাকবে। 
  • Courtesy: Prothom Alo /May 15, 2018


খুলনা সিটি নির্বাচনে পরিবেশ দৃশ্যত শান্ত, তবে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়নি। বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ছিল শান্ত, তবে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে। বিভিন্ন কেন্দ্রে জোর করে বুথে ঢুকে ব্যালটে সিল মারা, জাল ভোটের ঘটনাও ঘটেছে। তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশের বিরুদ্ধে দর্শকের ভূমিকায় থাকার অভিযোগ উঠেছে।

প্রথম আলোর পাঁচজন প্রতিবেদক ও তিনজন আলোকচিত্রী ৮০টি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে অন্তত ৬০টি কেন্দ্রেই ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের পাওয়া যায়নি।

বিএনপির অভিযোগ, আগে থেকেই ধরপাকড় ও হুমকি-ধমকিতে তাদের নেতা-কর্মীরা ছিলেন মাঠছাড়া। বেশির ভাগ কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ঢুকতে পারেননি কিংবা বের করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, জোর করে সরকারি দল জয় কেড়ে নিয়েছে। এটা ছিল কলঙ্কিত নির্বাচন। নির্বাচনের নামে যে প্রহসন হয়েছে, সে সম্পর্কে আজ বুধবার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়ার কথা জানান তিনি। 

তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা জানা গেছে, সেগুলো কাউন্সিলর প্রার্থীদের। সেটার দায় মেয়র প্রার্থী কেন নেবে।’


ভোট গ্রহণ শুরুর পরপর সকালে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি কেন্দ্রে জোরজবরদস্তি বা দখলের খবর এলেও বেশির ভাগ কেন্দ্রে বেলা ১১টা পর্যন্ত মোটামুটি ভালো ভোট হয়। ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল ভালো। কোথাও ধানের শীষের ব্যাজধারী কাউকে দেখা যায়নি। দুপুর ১২টার পর থেকে অনিয়ম ও জাল ভোটের প্রবণতা বাড়তে থাকে। কেবল গণমাধ্যমকর্মী কিংবা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ দল আসতে দেখলে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশকে শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয় হতে দেখা যায়। প্রথম আলোর সাংবাদিকেরা যেসব কেন্দ্রে গেছেন, প্রায় সব কটির প্রবেশপথে সরকারি দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মীদের শক্ত অবস্থান দেখা গেছে। রাস্তার মোড় থেকে ছিল তাঁদের পাহারা, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও ছিল তাঁদের সতর্ক দৃষ্টি।

সকাল সাড়ে ৯টায় খুলনা জিলা স্কুল কেন্দ্রে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ৪০টি ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষের নির্বাচনী পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকেরা। বিএনপির পোলিং এজেন্ট, সমর্থক ও ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে ঢুকতে না পারেন, এ জন্য ঘেরাও করে রেখে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।

সরেজমিন চিত্র

সকাল নয়টায় খুলনা জিলা স্কুল কেন্দ্রের একাডেমিক ভবন-১ ও একাডেমিক ভবন-২-এ গিয়ে দেখা যায়, ১২টি বুথের একটিতেও ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট নেই। অন্য সব প্রার্থীর এজেন্টরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জিলা স্কুল কেন্দ্রের (একাডেমিক ভবন-২) ২ ও ৪ নম্বর বুথে দুজনের জায়গায় নৌকা প্রতীকের পাঁচজন এজেন্ট পাওয়া যায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তিনজন ভুল হয়েছে বলে চলে যান। বিষয়টি অবহিত ছিলেন না বলে জানান ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আতিয়ার রহমান।

সকাল সোয়া নয়টার দিকে একাডেমিক ভবন-১-এর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাজী মো. ইব্রাহীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কেন্দ্রে ধানের শীষের চারজন পোলিং এজেন্টের একজনও পৌঁছাননি।’


খবর পেয়ে জিলা স্কুল কেন্দ্রের একাডেমিক ভবন-২-এ পৌঁছান নজরুল ইসলাম। তিনি ফোনে ওই কেন্দ্রের তাঁর নির্বাচনী এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি বাইরে গিয়ে একাডেমিক ভবন-২ কেন্দ্রের প্রধান পোলিং এজেন্ট সিরাজুল ইসলামকে সঙ্গে করে কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। এ সময় সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, সকালে তিনি কেন্দ্রে ঢুকতে গেলে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকেরা তাঁকে ভয় দেখান এবং চলে যেতে বলেন।

মঞ্জু যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন রেহানা মর্তুজা নামের একজন নারীসহ ছয়-সাতজন যুবক এসে হইচই শুরু করেন। রেহানা মর্তুজা নিজেকে একজন সাধারণ নাগরিক দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, মঞ্জু এই কেন্দ্রে একটা ভোটও পাবেন না। তাই তিনি মিথ্যা কথা বলছেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে মঞ্জু সেখান থেকে চলে যান।

জোর করে সিল, ভোট সাময়িক বন্ধ

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের বাড়ির পাশের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ফাতিমা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রেও বিএনপির প্রার্থীর এজেন্ট কেন্দ্রে যেতে পারেননি। এই কেন্দ্রের ১ নম্বর বুথে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ৪০ থেকে ৫০ জন যুবক জোর করে ঢুকে নৌকা ও ঘুড়ি প্রতীকের ব্যালটে সিল মারতে থাকেন। পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এই বুথে ভোট গ্রহণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখেন।

১ নম্বর বুথের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রীতেশ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সাহায্য চেয়েছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। তারা ৪৫টি ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়েছে।’

খবর শুনে মঞ্জু সেখানে আসেন। টেবিলের ওপর নৌকা প্রতীকে সিল মারা একটি ব্যালট তিনি সাংবাদিকদের দেখান। এ সময় ঘুড়ি প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে সরকারি দলের কর্মীরা কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে জটলা পাকান। সেখানে দাঁড়িয়ে আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছিল। উনি (মঞ্জু) এসে গ্যাঞ্জাম করছেন। নৌকায় সিল মেরে এখন সাংবাদিকদের দেখাচ্ছেন।’


দুপুর ১২টার পর নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে প্লাটিনাম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদের সঙ্গে বিদ্রোহী দুই প্রার্থীর মধ্যে হাঙ্গামা দেখা যায়। একপর্যায়ে সিবিএর সভাপতি কাওসার আলী মৃধাকে পুলিশ মারধর করে। এ ঘটনায় কিছু সময় ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। বেলা একটার পর আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক সেখানে যান। তিনি ওই কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

তালুকদার আবদুল খালেক কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার পরপরই প্লাটিনাম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ অংশের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শেখ আবু মো. মুশফেকুল মোর্শেদের উপস্থিতিতে দুটি বুথে ৮-১০ জন নৌকা-সমর্থিত কর্মীকে জাল ভোট দিতে দেখা যায়। কয়েকজন সাংবাদিক জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখলে ওই প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সরিয়ে দেন। 

বেলা সোয়া একটার দিকে প্লাটিনাম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উত্তর অংশের কেন্দ্র থেকে শিল্পী নামে ধানের শীষের এক নারী পোলিং এজেন্টকে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সুমন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুনেছি, পোলিং এজেন্ট চলে গেছেন।’

দুপুর ১২টার দিকে লবণচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায়, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে সিল মারছেন কয়েকজন নারী। সাংবাদিকের সামনেই নৌকার প্রতীকের পাশাপাশি ঝুড়ি প্রতীকেও সিল মারতে দেখা যায় তাঁদের। সেখানে থাকা সব ব্যালটেই সিল মারেন তাঁরা। পরে ওই কেন্দ্রটির ভোট গ্রহণও স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।

সাড়ে ১২টার দিকে ওই এলাকায় থাকা ইব্রাহীমিয়া এতিমখানা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তাকর্মীদের পাহারা নেই। নৌকার ব্যাজ পরা কয়েকজন পাহারা দিচ্ছেন সেখানে। বেলা দুইটার দিকে আবার ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো ভোটার নেই। বুথের সামনে রয়েছেন কয়েকজন নৌকার প্রতীক লাগানো যুবক। 

বিএনপি প্রার্থীর একজন এজেন্ট জানান, ব্যালট পেপার শেষ। কয়েকজন ভোটার অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ভোট দিতে না পেরে চলে গেছেন। তবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. শাহাবুর ইসলাম দাবি করেন, তাঁদের কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। ব্যালট পেপারও আছে।

কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার সময় গেটের সামনে নৌকার ব্যাজ লাগানো কয়েকটি ছেলে হাসতে হাসতে বলেন, এই এলাকার মানুষ খুব সচেতন। এ কারণে তাড়াতাড়ি ভোট দিয়ে বাড়ি চলে গেছেন।

ভোট স্থগিত

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোর করে ব্যালটে সিল মারার কারণে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।

ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক জোর করে ঢুকে পড়েন। তাঁরা কেন্দ্রের ৭ নম্বর বুথে ঢুকে ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মেরে ভোট বাক্স ভরতে থাকেন। পরে সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খলিলুর রহমান কেন্দ্রে ভোট স্থগিতের ঘোষণা দেন।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খলিল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। পুলিশ এসেছিল। কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটা তাঁর জানা নেই।

এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় কেন্দ্রে একদল যুবক ঢুকে ব্যালটে সিল মারতে থাকেন। তাঁরা আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানের নির্বাচনী প্রতীকে সিল মারতে থাকেন। প্রায় আধা ঘণ্টা তাঁরা ব্যালটে সিল মারেন। এরপর পুলিশ এলে তাঁরা চলে যান। পরে দুইটার দিকে কেন্দ্র স্থগিত করা হয়।

ভোট দিল দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে

নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নুরানি বহুমুখী মাদ্রাসা কেন্দ্রে অনেক জাল ভোট পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে জাকারিয়া নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষণ দলের এক সদস্যকে অপদস্থ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কেন্দ্রটিতে দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, এস এম মনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি শিশুপুত্রকে নিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের হচ্ছেন। বাবা-ছেলের দুজনের হাতের আঙুলে ভোট দেওয়ার সময় লাগানো অমোচনীয় কালি ছিল। কারণ জানতে চাইলে মনোয়ার বলেন, ‘আমার ছেলেও ভোট দিয়েছে।’ ছেলে স্থানীয় কিন্ডারগার্টেনের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র বলে জানালেন তিনি। 

ছেলেটি জানায়, ‘নৌকায় ভোট দিয়েছি। টিপু আঙ্কেলকে ভোট দিয়েছি (আওয়ামী লীগের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আলী আকবর টিপু)।’

ভোটার আছেন, ব্যালট শেষ

দুপুর ১২টা বাজে তখন। ভোটাররা ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে রূপসা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ভোট দিতে পারছেন না। ব্যালট পেপার ফুরিয়ে গেছে জানিয়ে তাঁদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।

এই প্রতিবেদক ওই কেন্দ্রে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাউকে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার নিয়ে আসতে দেখেননি।

ওই কেন্দ্রে নির্বাচন কার্যক্রমে থাকা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল যুবক কেন্দ্রে ঢুকে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টকে বের করে দেন। এরপর তাঁরা ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে সিল মেরে বাক্সে ভরে দেন। দুপুর ১২টার দিকে ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে তাঁদের বলা হয়, ব্যালট পেপার শেষ হয়ে গেছে। ব্যালট পেপার আনতে লোক পাঠানো হয়েছে। 

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. ইবনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কিছু বহিরাগত জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করে। অল্পসংখ্যক ব্যালট পেপারে সিল মেরে তারা বাক্সে ফেলেছে। এ জন্য সাময়িকভাবে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।

এদিকে, ভোট শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট আগে সকাল পৌনে আটটায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের রূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট সেলিম কাজীকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।

খালিশপুর এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ব্যস্ত ছিল সরকারি দলের কর্মীদের সহায়তা করতে। গণমাধ্যমকর্মী ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হলে তাঁরা সতর্ক করে দিচ্ছিল। সাংবাদিক প্রবেশ নিয়েও বাড়াবাড়ি করেছেন পুলিশের সদস্যরা। 

অন্য প্রার্থীরা যা বললেন

চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের মেয়র পদপ্রার্থী মোজ্জাম্মিল হক প্রথম আলোকে বলেন, এই নির্বাচন অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জাতীয় পার্টি (জাপা) এস এম শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে ভয়ভীতিসহ নানা রকম সমস্যা ছিল। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মেয়র পদপ্রার্থী মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে আক্ষেপ করে বলেন, এই নির্বাচনে তালুকদার খালেক মেয়র হবেন, কিন্তু হারালেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন।

  • (প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন টিপু সুলতান, সেলিম জাহিদ, মোর্শেদ নোমান, শেখ আল-এহসান ও উত্তম মণ্ডল)
  • প্রথম আলো/ মে ১৬, ২০১৮

Khulna city polls see irregularities in many centres

BNP candidate demands re-polling in 101 centres


Awami League mayor candidate Talukder Abdul Khaleque has won big in yesterday's Khulna City Corporation polls, marred by irregularities such as heavy showdown by the ruling party in and around polling stations, ballot stuffing and driving out polling agents of rival group.

As of 2:30am today, results from all the 286 polling centres show Khaleque got 1,74,851 votes while his rival from the BNP Nazrul Islam Monju bagged 1,09,251 votes, according to the unofficial results announced by Returning Officer Yunus Ali.

Voters' turnout was 62.19 percent, Yunus said.

With this wins, Khaleque, who resigned as an MP to contest the polls, has sweep back as the city mayor for a second time. In the last polls in 2013, the AL leader lost to BNP-backed candidate Moniruzzaman Moni, the incumbent mayor.

In the 2008 polls during the emergency rule, Khaleque won the mayor polls in Khulna city, considered a BNP stronghold. BNP leaders won three of the four mayoral polls there since the first election in 1994.


Soon after the voting ended, Monju alleged of "huge rigging" at 101 centres and demanded re-election there.

He made the call when Returning Officer Yunus Ali was announcing the unofficial results from the control room at Divisional Women's Sport Complex in the city's Sonadanga area.

Khaleque thanked the prime minister for his victory. "I will work for the development of the city people and resume the unfinished jobs on a priority basis."

SHOWDOWN, BALLOT STUFFING, INTIMIDATION 

No incident of major violence took place during the voting that lacked festivity because of an intimidating atmosphere created by the AL men soon after voting began at 8:00am.

Law enforcers were present in large numbers, but they mostly played the role of silent observers, as AL men in some stations violated election rules at will.










A man rips ballot papers from a ballot book at a polling booth at Fatima High School, around half a kilometre away from the home of Awami League mayoral candidate Talukdar Abdul Khaleque, during the Khulna city polls. The man later stuffed the ballot box. The photo was taken around 1:15pm yesterday. Photo: Amran Hossain

The day started high on hopes of a fair election. But before long, the optimism faded.

Four correspondents of The Daily Star visited at least 60 polling centres and saw how AL men exercised their power to influence voting in many of them.

Wearing badges of boat, the election symbol of Khaleque, the AL men took position outside, at the entrance and inside many polling stations. They barred voters from entering centres and openly asked them to vote for Khaleque.

At some stations, they snatched ballot papers from the voters and were seen casting votes on those. In some cases, presiding officers and assistant presiding officers helped them.

For example, at Platinum Secondary School centres in ward-11, a large number of people forcefully entered two voting booths around 12:45pm, and cast votes.

SM Morshed Ul Morshed, presiding officer of one of the voting centres, said, "We are trying to oust them. We informed the police about the matter."

One reporter of The Daily Star was present at Maulana Bhashani Bidyapith centre in Khalishpur Residential Area under ward-10 for more than one hour from 11:30am. Voter presence was very thin at the time.

But the presiding officer said 60 percent of the 1,508 voters had already cast their votes by noon.

Around 3:00pm, a large number of AL supporters were chanting slogans at Mollapara Government Primary School centre.

Some of the slogans were: "Vote only for boat”; “voters of BNP go back home"; and "there will be no existence of sheaf of paddy” (electoral symbol of Monju).

At the entrance to the centre, one youth was heard saying: "We will bring an end to Monju's politics in Khulna."

Pioneer Higher Secondary School centre in ward-25 was teeming with AL men inside and outside, which is a violation of the electoral code of conduct.

Two reporters of this newspaper saw seven to eight youths enter one booth and put seal on ballot papers.

Presiding Officer Ataur Rahman said he was outside the centre at the time. "Let me look into the matter."

Shamim Mahmud, presiding officer of another centre in the same school, was indifferent to the presence of AL men in large numbers. No agents of the BNP candidate were in sight.

Similarly, a huge number of AL supporters were present at Panchtala Bayashka Madrasa centre. But no BNP agent could be seen. Even the presiding officer was not found during a visit to this centre around 11:00am.

At Siddikia Kamil Madrasha vote centre premises, Mahmuda Rahman, aged over 60, lamented that she could not vote.

"Some people wearing badges of boat snatched away my ballot paper and cast my vote," she said.

At Darul Quran Siddikia Kamil Madrasha polling centre in ward-25, Presiding Officer Shayamoli Bepari herself cast ballots, voters alleged.

Asked, Shayamoli said, "It was nothing like that. Voters were having difficulties casting ballots and I just helped them."

Law enforcers were seen gesturing the ruling party men to move away in silence when journalists were visiting the centre. There was only one agent of the BNP candidate.

At Nurani Multipurpose Madrasa, also in ward-25, an election official caught one AL supporter putting seals on the ballot paper, said Presiding Officer Mizanur Rahman.

At Khulna Newsprint High School (girls section) polling station, male voters were seen taking female voters with them to female polling booths “to help them cast their votes” at 12:30pm. 

Suresh Chandra Gain, presiding officer, said they requested the male voters to leave the polling station.

"But they didn't leave the polling centre. Instead, they harassed us."

Voting at Rupsha Bahumukhi High School centre stopped around 11:00am as the presiding officer said they ran out of ballot papers.

Asked why and how so, he could not give a satisfactory answer.

Shariful Islam, a voter of the centre, said he went to vote in the morning but he was told that his vote was already cast. "I went there again at noon and they told me the same.”

In BK Union Institution polling station at Benibabu road, several people were seen wearing journalists' pass issued by the election commission and taking voters inside the polling booths around 2:00pm.

One of them was Anisur Rahman, who introduced himself as a reporter of Desh Songjog from Dhaka.

Pressed, he got angry and said, "Go outside the polling station, or you will be in trouble."

VOTING SUSPENDED IN 3 CENTRES

Voting was suspended in Iqbal Nagar Secondary Girls School, Lobonchora Govt Primary School (ground floor) and Lobonchora Govt Primary School (first floor) due to ballot stuffing allegedly by ruling party men, said Returning Officer Yunus Ali.

Khalilur Rahman, presiding officer of Iqbal Nagar Girls School, said some 25 to 30 youths stormed a booth and started stuffing ballots around 10:30am.

"Having failed to stop them, we had to suspend voting," he said.

Asked about the identity of the youths, he said they were wearing badges of boat.

The youths were stuffing ballots without the signature of the assistant presiding officer, he added.

“We have collected all the ballots and reported the incident to the election control room at the Election Commission.”

The presiding officer said he did not get any support from police despite seeking help.

Contacted, Sonali Sen, additional deputy commissioner of Khulna Metropolitan Police, said they would investigate the incident.

Around 12:00noon, people who were wearing badges of boat distributed sweetmeats at this centre following the suspension of voting.

The returning officer said that fresh voting in the three centres was not necessary as there are only 5,831 voters in these centres. “It will not be a decisive factor anymore.”  

FEW BNP AGENTS

Polling agents of Monju were not seen in many of the 60 polling centres The Daily Star visited.










Md Shafiqul Islam cannot cast his vote at Rupsha Bahumukhi High School polling centre as his vote had already been cast by someone else. Photo: Amran Hossain

The BNP alleged their agents were not allowed into the centres. In some cases, they were driven out by AL supporters.

Monju alleged "mass vote rigging" by the ruling party men.

"They [AL men] occupied most of the voting centres and drove out our men. The Election Commission is silent in this regard."

Within the first hour, ruling party men threw out BNP's agents from at least 30 polling centres, he alleged.

He demanded re-election in 101 polling stations.

AL candidate Khaleque claimed voting was held peacefully.

Meanwhile, ruling party men allegedly vandalised several election camps of Monju.

A group of 40-50 AL men vandalised Monju's tent near Sonapota Government Primary School on Sher-e-Bangla road around 10:30am, Hafez Abul Bashar, special secretary of BNP, Khulna unit, told The Daily Star.

In another incident, an observer of the Election Commission from Dhaka was assaulted by supporters of Khaleque at a polling centre.









Polling officials and agents of mayor and councillor candidates sit back as there are no voters at a polling booth at Khulna Zila School during the city polls around 9:30am yesterday. Photo: Amran Hossain

The EC official barely managed to come out of the Nurani Bahumukhi Madrasa Biddaloy polling centre after the assault, he told journalists at the spot around 9:50am.

The supporters also tried to vandalise the vehicle of the EC official, who requested anonymity, at the poling centre.

  • The Daily Star/May 16, 2018

Irregularities, power play mar KCC election


Mohammad Jamil Khan





It was a vote of the ruling Awami League in Khulna City Corporations Tuesday, May 15, exercising power play, as far as seen on the field throughout the city.

This correspondent was reporting the latest situation of the election around noon the day after visiting 12 voting centres across five wards in the city.

The morning started out calm and serene in Khulna city around 7:30am and there were only a handful of people when voting began at Coronation Higher Secondary School.

A while later, allegations of mass rigging by ruling party men surfaced at Pioneer school. The Daily Star found one man casting ballot when his face did not match that of the database.

Presiding Officer Ataur Rahman, a presiding officer of a voting centre in the school said such incident is happening everywhere. “We are looking into the matter.”

Sanjoy Saha, an assistant presiding officer, however, defended the incident by saying that “these people knew their ID card number”.

Presiding Officer of this centre, Shamim Mahmud, was indifferent to the Awami League men who were inside the polling rooms displaying agent identification cards. No opposition BNP polling agent could be seen in sight.

Serious allegations surfaced at Darul Alam Siddiquia Madrasa, also in Ward 25, where voters claimed the presiding officers were casting their votes.

Asked about it, Assistant Presiding Officer Shyamoli Bepari told The Daily Star: “It was nothing like that. The voters were having trouble casting the ballot, I just helped them.”

Also, the lawmen were seen gesturing to the Awami League men to move away in silence when journalists were visiting the centre. There was only one agent hanging the BNP identification in this polling centre, who could not give satisfactory answers about his identity.

In Nurani Multipurpose Madrasa, also in Ward 25, an election commissioner caught one Awami League supporter rigging votes and an altercation ensued. Presiding Officer Mizanur Rahman admitted to The Daily Star of such an incident.

However, ruling Awami League men drove out all journalists from the centre soon after any of them could learn of anything more. “Voting is peaceful here. You don’t need to stay here any longer,” said a group who were flexing muscles.

Oddly enough, this correspondent could not find the presiding officer at Panchtala Bayashka Madrasa when he moved on to Ward 11 next. The centre was teeming with ruling Awami League supporters, and not a BNP agent could be seen.

At Platinum Secondary School, under Ward 11, where there were two separate centres, a large number of people were seen trying to enter forcefully and cast votes. Some even succeeded.

Law enforcers managed to remove most of them.

SM Morshed Ul Morshed, presiding officer of one of the voting centres, admitted that the votes were being illegally and forcefully cast. “We are trying our best to hold peaceful polls.”

“Actually, general people are not coming to cast their votes and that is what is causing the problem. We are trying to remove outsiders best as we can,” said Bhashkar Saha, assistant commissioner of Khulna Metropolitan Police.

Surprisingly also, Presiding Officer Gosto Biswas said 60 per cent of the 1,508 voters had already cast their votes at Mawlana Bhashani Bidyapith at Ward 10 by noon. There was, however, found very thin attendance at the spot.

In total, this correspondent visited 12 voting centres across Ward 13, 25, 10, 11, and 19 and found two common trends: all of them were filled with ruling Awami League agents and not one of them had a genuine BNP agent during voting.

Source —  The Daily Star 

Tuesday, May 15, 2018

Three-fourths of BD workers employed in vulnerable jobs

Rising temperature to cut productivity: ILO report


About 75.2 per cent workers of Bangladesh's total labour force are employed in vulnerable jobs and the majority of them have own-account status, according to the latest International Labour Organization (ILO) report. The new ILO report titled 'World Employment and Social Outlook 2018: Greening with Jobs' launched Monday defines workers in vulnerable employment as the sum of 'own-account' workers.

Vulnerable employment is often characterised by inadequate earnings, low productivity and difficult conditions of work that undermine workers' fundamental rights.

They are less likely to have formal work arrangements, and are, therefore, more likely to lack decent working conditions, adequate social security and 'voice' through effective representation by trade unions and similar organisations.

Some 14 million new jobs would be created in Asia and the Pacific by 2030 if the right policies to promote a greener economy are put in place with gains in fields of renewable energies, construction, manufacturing and sustainable agriculture, it said.

The report's Employment and Environmental Sustainability Fact Sheets 2017: Bangladesh part revealed that as of 2017, the labour force participation rate is 62.3 per cent and the employment-to-population ratio is 59: 8.

Formal employment in Bangladesh is heavily reliant on agriculture and services and on medium-skilled occupations, it said.

Quoting ILO Deputy Director-General Deborah Greenfield, an ILO statement said "The findings of our report underline that jobs rely heavily on a healthy environment and the services that it provides. The green economy can enable millions of people to overcome poverty, and deliver improved livelihoods for this and future generations. This is a very positive message of opportunity in a world of complex choices."

Heat stress is another concern in the region, as rising temperatures impact the health of workers and reduce worker performance, the report said adding Southern Asia could face productivity losses equivalent to 4.8 per cent, corresponding to around 40 million full-time jobs as a result of rising temperatures. "Agriculture workers will be the most affected," it said.

According to the report, globally, action to limit global warming to 2 degrees Celsius will result in sufficient job creation to offset the expected job losses of 6.0 million in traditional energy sectors.

  • Courtesy: The Financial Express /May 15, 2018