Search

Saturday, May 19, 2018

‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ-সরকার’র অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে — জেএসডি




খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মতো জাতীয় নির্বাচন হলে দেশে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে মনে করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি।

শনিবার, মে ১৯,  দু’দিনব্যাপী জেএসডির স্টিয়ারিং কমিটির সভার শেষে দিনে এ কথা বলা হয়। জেএসডি সভাপতির উত্তরা বাসভবনে অনুষ্ঠিত সভায় এক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

স্টিয়ারিং কমিটির সভার প্রস্তাবে বলা হয়, খুলনার নির্বাচনে অধিকাংশ কেন্দ্রেই বেলা ১১টার মধ্যে ভোট প্রদান সমাপ্ত হয়ে যায় বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এভাবে আগেই সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে রাখা, বিরোধী পক্ষের এজেন্টদের বের করে দিয়ে একেক জনে একাধিক ব্যালট বইয়ে সিল মেরে বাক্সে ঢুকানো, কোথাও কোথাও গড়ে ৯৫ ভাগ ভোট প্রদান, পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের আগ থেকে হুমকি-ধমকি দিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসতে বারণ করা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে সরকার দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী দেখানো হয়েছে, যা গণতন্ত্রের জন্য একটি ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া। জাতীয় নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে দেশে বিপর্যয় নেমে আসবে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, এ অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, এম এ গোফরান, আতাউল করিম ফারুক, মো. সিরাজ মিয়া, তানিয়া রব, শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন

ঢাকার যানজটে বছরে ক্ষতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা



যানজটে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি টাকা বলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর  দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় উঠে এসেছে। ঢাকা মহানগরীতে যানজটে প্রতিদিন ৩৮ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়ে বলে ২০১৭ সালে বিশ্ব ব্যাংক হিসাব দেখিয়েছিল, এক বছর পর বুয়েটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই অঙ্কটি ৫০ লাখ কর্ম ঘণ্টা। এই হিসাবে  যানজটে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যা জাতীয় বাজেটের ১১ ভাগের এক ভাগ। ইনস্টিটিউটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলছেন, নগরের যানজট যদি ৬০ শতাংশ কমানো যায় তবে ২২ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব। 

শনিবার, মে ১৯, বুয়েটে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন গবেষণা প্রতিবেদনে যানজটের কারণে সময় নষ্ট এবং আর্থিক ক্ষতির হিসাব দেখিয়েছেন। ‘গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং যানজট নিরসনের পরিকল্পনা রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তি ও বাস্তবায়নে অঙ্গীকার’ শীর্ষক এই গোলটেবিলে তিনি আরো বলেন, ঢাকায় যানজটের কারণে পিক আওয়ারে গণপরিবহনগুলোর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে, যেখানে পায়ে হেঁটে চলার গড় গতিও ৫ কিলোমিটার। ফলে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যানজটে প্রতি বছর ৩৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকা শহরে গণপরিবহনগুলা প্রতিদিন ৩৬ লাখ ট্রিপে ৩৫ শতাংশ যাত্রীকে কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। 

খুলনা সিটি নির্বাচন — নরবানরের পিঠাভাগ!


— সৈয়দ কবির হুসেন 


খুলনায় নির্বাচন হয়ে গেল রিমোট কন্ট্রোলে —  পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, ম্যাজিস্ট্রেট, টহল সব ছিল । ছিল না সেনাবাহিনীর উপস্থিতি। খুলনায় নির্বাচনী প্রচারণাকালে বারবার  বিএনপি ‘সেনা মোতায়েন’ এর জন্য অাকুল অাবেদন জানালেও নাকচ করে দিয়েছে ঠুঁটো জগন্নাথ ন‌ির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে তাদের কর্মতৎপরতা ও পারঙ্গমতা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।  তবে সবকিছুর যেমন ব্যতিক্রম থাকে ‌নির্বাচন কমিশন পেরেছে জাতিকে উপহার দিতে যার বর্ণনায় দৈনিক প্রথম অালো বলেছে ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন।’ খুলনা সিটি নির্বাচনের ভাগশেষ হলো - বাংলাদেশে মানুষের ভোটাধিকার সুরক্ষায় একমাত্র জাতীয় সেনাবাহিনীই ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যসব বাহিনী তাঁদের ব্যর্থতা বারবার প্রমাণ করে চলেছে।  

বলাবাহুল্য, খুলনার মানুষ দেখেছে কম্যান্ডো স্টাইলের নির্বাচন। ক্লিন সার্জিক্যাল অপারেশন।  বেশির ভাগ ‌নেতা কেন্দ্রে অাসার সাথে বা রিমোট কন্ট্রোলের নি‌র্দেশে ‘জাল-ভোট-গ্যাং’ এসেছে অতর্কিতে ,কাজ সারতে দেরি হয়নি যদিও পুলিশ ফরজ কর্তব্য হিসেবে তাদেরকে সতর্ক করে করে বলেছে ‘সিল’ মারতে এতো দেরি! পুলিশের অালীগ-ছাত্রলীগের দোসর হিসেবে কাজ করতে ইন্ধন তো ছিলই এবং অাছে।

গ্যাং-এর  কম্যান্ডো ট্রেনিং তো  ছিলই। তারা প্রতিপক্ষের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে্,দল বেঁধে ঢুকে ব্যালটে সিল মেরে, বাবা-শিশু মিলে ভোট দিয়ে, দল বেঁধে জাল ভোট দিয়ে, কেন্দ্রে অাগত নিরীহ ভোটারদেরকে সিল মারতে বাধ্য করার সব কাজই করেছে। দুপুরের অাগেই ব্যালট শেষ হয়েছে। সবই ঘটেছে। পুলিশকে যখন খালেকের বিরোধী পক্ষকে ডেকেছে সাহায্যের জন্য তখন তারা  বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বোবা, অঙ্গপ্রতিবন্ধী। খবর পেয়ে এসেছে ওরা যখন শেষ পর্যন্ত এসেছে সম্ভবত রিমোটের নির্দেশ মাফিক তখন ‘ফেরেশতারা অলরেডি কাম করিয়া কোথায় জানি লুকাইছে’।
প্রথম অালোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাড়ে ১১টার পর ভোটের পরিবেশ বদলাতে থাকে। সোনার ছেলেদের কাম সারতে লেগেছে অাধ ঘণ্টারওকম। তারা ফিরে যাবার পরই কেবল শৃঙ্খলা বাহিনী এসেছে  তার অাগে নয়। ততোক্ষণে অাতঙ্কিত ভোটার কেন্দ্র  ছেড়েছে। অার এসব চলে মাহেন্দ্রক্ষণ সাড়ে ১১ টা থেকে সাড়ে ১২টা।

বেশিরভা‌গ ক্ষেত্রে সরকারি দলের কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর ব্যালটে ‌সিল মারে।  প্রথম অালোর টিপু সুলতার ও সেলিম জাহিদের বাই-লাইন ‌প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় সবকেন্দ্রের সামনেই  ছিল অাওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীর জটলা। এরা কার্যত কেন্দ্রের প্রবেশমুখ নিয়ন্ত্রণ করে। ভোটার, পর্যবেক্ষক যেই অাসুন তারা নজরদারি করে, যেটা করার কথা ছিল পুলিশের।

৫৪টি কেন্দ্রের অস্বাভাবিক ভোট পড়ে। এই অস্বাভাবিকতার একটাই অর্থ হতে পারে। নির্বাচন কমিশন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে পারেননি। নিয়ন্ত্রণ করেছে সরকারি দল। এর অন্যতম প্রমাণ প্রথম অালোর প্রতিবেদনেই অাছে। একজায়গায় বলা হচ্ছে, শহরের বসুপাড়ার নুরানি বহমুখী মাদ্রাসা কেন্দ্রে  নির্বাচন কমিশনের পর্য‌ৈবেক্ষক দলের একজন মাননীয় সদস্য অাওয়ামী লীগের স্থানীয় একজন নেতার হাতে অপদস্থ হয়ে বিষয়টি ঘটনাস্থল থেকে উর্ধ্বতন কর্তাদের জানিয়েছিলেন। কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি ভোট কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে রওনা দিলে পেছন থেকে তাকে একরকম ধাওয়া করা হয়। 

‘প্রায় সব ভোটকেন্দ্রের অনতিদূরে  নৌকা প্রতীকের একটি করে অস্থাযী নির্বাচনী কার্যালয় ছিল।সকা‌ল সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে নৌকাপ্রতীকের লোকজন সেখানে অবস্থান নেয়।’ ঠিক এর পরেই দেখা যাচ্ছে, রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ‘অনেক কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এ‌জেন্টরা সেখানে প্রথম বাধা পান।’ খুবই মজার ও কৌতুহলের বিষয় হলো এখানে কল‌মের খোঁচার অাভাস দেখা যাচ্ছে। তবে সেটা তেমন যুৎসই হতে পারেনি। কেননা, পাঠক যাদের বুদ্ধি অাছে তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করবেন যে অাগের বাক্যের একটি জায়গায় বলা হচ্ছে, ‘নৌকা’ প্রতীকের লোকজন সেখানে  অবস্থান নেয়। অর্থাৎ প্রতিবেদকের বক্তব্য ছিল,‌ এসব কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্টরা প্রথম বাধা পান। অনেকে শারীরিকভাবে অাঘাত পেয়ে বা অপমানিত-অপদস্থ হয়ে সেখান থেকে ফিরে গেছেন। প্রতিবেদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সকাল অাটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হবার ৩০ বা ৪৫ মিনিট অাগে এ ঘটনাগু‌লো ঘটে গণমাধ্যম কর্মীরা কেন্দ্রে পৌঁছানোর অাগেই। এরা কারা? হাঁসের মাঝে বক! আকলমন্দ বুঝিয়াা লন।

কি হয়েছে তাতে? নাগরিক চেতনায় যারা ভোট দিতে এসেছিল এসব ঘটনা দে‌খে বাড়ি ফিরে গেছে। অার কষ্ট না দিয়ে সরকার দলের কর্মীরা ব্যালটে বেদম সিল মেরেছে। এমনকি এও হতে পারে তারাই  ধানের শীষে সিল  মেরেছে তা না হলে মঞ্জু এতো ভোট পায়  কি করে?  কথাটা বলেছেন খুবই তাৎপযপূণভাবে। মাজেজা বুঝতে সুুরমা লাগাতেে  হবে চোখে। যারা বলেছেেন  ভোট কে দিল  তাদেের কাছেেই খবব আছেে। এদিকে বিবিসি  বলছেে, তারা অনেক  কেন্দ্রে দেখেছে নৌকার লোকেরা ধানের শীষ ব্যাজ পরে আছে।

কী দেখছি অামরা প্রতিবেদনে? বলা হচ্ছে, নির্বাচনী এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা গাড়ি ও মোটর সাইকেলে নৌকা প্রতীকের স্টিকার লাগিয়ে অবাধে চলাচল করেন। পুলিশ একটি মাত্র কেস ছাড়া কাউকেই এজন্য শাস্তি দেননি বা অর্থদণ্ড করেননি। তাইলে আলীগে ভোট দিছে মঞ্জুরে! 

খুলনা শহরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন বলেছেন, খালেক সেই ব্যক্তি যিনি ২০১৩ সালে মেয়র নির্বাচনে বিনা বাক্যব্যয়ে পরাজয় মেনে নিয়েছিলেন। এ বা‌রের এই নির্বাচনে  তাঁকে  ‌বিজয়ী দেখানো হলো প্রায় একই পরিমাণ ভোটের ব্যবধানে। তাঁর মতো ব্যক্তি রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, প্রতিদ্বন্দী লোকজনকে পুলিশ দিয়ে মাঠ ছাড়া করে  এভাবে জিতবেন অার তাতে তার সায় থাকবে তা অনেকে ভাবতেই পারেননি। শহরের মানুষ এই প্রথমবারের মতো দেখেছে নিয়ন্ত্রিত ভোট। গণতন্ত্রও নিয়ন্ত্রিত হতে পারে যেমন ফিল্ড মার্শাল এটা করেছিলেন। এ বিষয়ে তালুকদারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব এড়িয়ে যান। কীই বা করবেন তিনি। তিনি তো অার নাটের গুরু নন। তিনি কেবলই অাওয়ামী ভোটরঙ্গের নাচের পুতুলের এক পুতুল ‌বৈ আর কিছু নন। খুলনা সিটি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর দিকে শোনা গিয়েছিল, তালুকদার খালেক এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাননা।   দৃশ্যপট পরিস্কার —   অাওয়ামী লীগ ‘প্রার্থী-সংকটে' ভুগছে। নেতা অাসলে তেমন মিলছে না। কেন? জবার শুনতে হবে ইতিহাসের কাছে যে ইতিহাস লেখা হয় না।  

আর, ভোট-ডাকাত যখন স্বয়ং সরকার, তার প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, তখন মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় আমাদের জাতীয় সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিতে হবে। খুলনা নির্বাচন প্রমাণ করে দিল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীর কোন স্থান নেই।  

Friday, May 18, 2018

Bangladesh: Skirting the Issues at the UN


Periodic Rights Review Response Ignored Main Concerns

(Geneva) – The Bangladesh delegation to the United Nation’s Universal Periodic Review (UPR) in Geneva on May 14, 2018, failed to respond to pressing human rights concerns in the country, Human Rights Watch said today.

Tear gas is seen while police take their position in the street of Dhaka, Bangladesh on February 8, 2018.

The law minister, Anisul Huq, speaking for the government, highlighted only what the government considered to be positive steps and glossed over concerns about critical issues such as enforced disappearances, secret and arbitrary detention, extrajudicial killings, and a crackdown on freedom of speech and association. Bangladesh should show its commitment to human rights by giving full consideration to recommendations from other countries and accepting those that would significantly improve its compliance with international human rights standards.

“Bangladesh needs to stop ignoring and start addressing serious human rights violations, such as when its security forces engage in enforced disappearances, killings, torture, and arbitrary arrests, many of them politically motivated,” said Brad Adams, Asia director. “The Bangladesh government should use the Universal Periodic Review at the UN Human Rights Council as a time for reflection, not self-congratulation.”

A number of member countries rightly praised the government’s willingness to open the Bangladesh border and provide aid to hundreds of thousands of Rohingya fleeing atrocities by the Myanmar military. The Bangladesh delegation spoke at length about the progress on handling the influx of the Rohingya refugees but responded with silence and denial to questions and recommendations by several countries, including concerns about extrajudicial killings, enforced disappearances, and attacks on human rights defenders. Whether Bangladesh formally accepts or rejects the recommendations made by countries will not be known for some time.

Human Rights Watch and other groups have reported for many years about human rights concerns in Bangladesh, and many of these concerns were simply not addressed adequately by Bangladesh in the hearing. In one example, the government pledged during the previous periodic review in 2013 to thoroughly and impartially investigate and prosecute all allegations of human rights violations, in particular by the security forces. But it has ignored and denied reports of violations since then, including about violence by the security forces during the 2014 elections and against people who protested the conduct of the elections. The government delegation claimed that it is taking action against those responsible for abuse, but there is little evidence or transparency on this.

Human Rights Watch has also documented several cases in which members of the political opposition have been forcibly disappeared or secretly detained without charge. Scores of Bangladesh National Party (BNP) supporters were unlawfully detained and several remain disappeared.

The whereabouts or status of sons of two opposition Jamaat-e-Islami leaders has not been revealed since they were picked up by security forces in August 2016.

A former diplomat, Maroof Zaman, remains disappeared since December 2017. A Bangladeshi-British citizen, Hasnat Karim, remains in custody without charge following the July 1, 2016 attack by militants on the Holey Artisan Bakery in Dhaka.

Another key concern to which the government delegation responded inadequately is attacks against critical media and nongovernmental organizations. Many people have been and continue to be jailed or charged under Section 57 of the Information and Communication Technology Act, which includes vague and overbroad provisions to target free speech, and under the 2016 law regulating the use of foreign funding by nongovernmental groups. Section 57 has been used to target key civil society leaders and institutions. The government says it will revise Section 57 with its draft Digital Security Bill, but some of its provisions fall short of international standards. The government has also been using sedition and other criminal laws to target free speech.

Labor rights were also not adequately addressed. Although there has been some progress on safety concerns for workers, much remains to be done. Union leaders and those seeking to join unions face threats and opposition from factory owners and managers.
The government has also failed to keep a commitment to end child marriage. In February 2017, the government approved a law with a new exception that allows girls under 18 to marry under special circumstances, with no minimum age stipulated. A promised national action plan to end child marriage is now over three years late.

“Bangladesh says it remains committed to doing right by the Rohingya refugees, but it should embrace that same principle towards its own citizens,” Adams said. “With national elections next year, it is essential for the government to expand democratic space and provide room for debate and dissent.”

— Courtesy : hrw.org/ May 16, 2018 

সংসদে 'অশ্লীল’ শব্দ চলছেই — টিআইবি



ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, মাত্র ৩৫ মিনিটে একটি বিল পাস হয় বাংলাদেশের সংসদে।

টিআইবি নিয়মিতভাবেই সংসদ অধিবেশনগুলো পর্যবেক্ষণ করে 'পার্লামেন্ট ওয়াচ' নামে তাদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে গত কয়েক বছর ধরে। এবারের রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে চলতি সংসদের চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশন অর্থাৎ ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালের জাতীয় সংসদ তার অংশ।

টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, জাতীয় সংসদের অন্যতম মূল যে কাজ আইন প্রণয়ন করা, তার পেছনে মাত্র ৯ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে। এবং প্রতিটি বিল পাশ করতে গড়ে সময় লেগেছে মাত্র ৩৫ মিনিট। তিনি বলছিলেন, ভারতের লোকসভায় প্রতিটি বিল পাসের গড় সময় ২ ঘণ্টা ২৩ মিনিট।


'অশ্লীল শব্দ চলছেই...'

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ শাখার এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, `সংসদ সদস্যদের একাংশ কর্তৃক অশ্লীল শব্দের ব্যবহার অব্যাহত ছিল। এসব আলোচনায় সংসদের বাইরের বিষয়, সংসদ সদস্যদের অনুপস্থিত, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও নাগরিক সমাজের একাংশের বিরুদ্ধে এসব আক্রমণাত্মক অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।'

বর্তমান সংসদের আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য মো. দবিরুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, সংসদের এই সময়কালে জনগণের স্বার্থের বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে বরং বাইরের বিষয় নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে, যা দুঃখজনক। তবে এরমধ্যেও তারা স্থানীয় জনগণের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে পেরেছেন এবং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছেন বলে তিনি দাবি করেছেন।

কী করছে বিরোধী দল?

জাতীয় সংসদে সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় বিরোধী দলও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একজন সংসদ সদস্য সালমা ইসলামের কাছে জানতে চেয়েছিলাম বিরোধী দল হিসেবে কতটা ভূমিকা রাখতে পেরেছেন তারা?

তিনি বলছিলেন, সরকার যখন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে তখন তারা তাদেরকে সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। 

বলেন তিনি ‘ঝগড়া বা হৈ চৈ করলেই যে বিরোধী দলের নেত্রী হয়ে যায় সেই ধারণাটা সঠিক না'।

সংসদ সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করে সংসদীয় বিষয়ক কমিটিগুলো। টিআইবি বলছে, এসব কমিটির কার্যক্রম বর্তমানে খুব দুর্বল এবং তারা যেসব প্রতিবেদন দেয় এবং সুপারিশ করে সেসব অনেক ক্ষেত্রেই মানা হয় না।

কোরাম সঙ্কট

প্রতিবেদনে সংসদ অধিবেশনে অ-সংসদীয় ভাষার ব্যবহার ও কোরাম সংকট অব্যাহত থাকার বিষয়কে উদ্বেগজনক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতির একজন পর্যবেক্ষক এবং লেখক মহিউদ্দিন আহমদ বলছিলেন বর্তমান সংসদের কার্যক্রম একটি আদর্শ সংসদের ধারণাকে ধরে রাখতে পারে নি। তিনি বলেছেন, `তারা যদি সব সময় ছায়ার সাথে যুদ্ধ করে, যে প্রতিপক্ষ সেখানে অনুপস্থিত, যাদের তাদের কথার জবাব দেয়ার সুযোগ নেই- এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় না।'

তিনি আরো বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো সত্যিকার অর্থে যদি একটা বিরোধী দল সংসদে থাকত তারা হয়তো এক ধরনের ভূমিকা রাখতে পারতো এবং একটা জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি হতে পারতো; কিন্তু যেহেতু জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে সেই ভূমিকা রাখতে পারছে না, সুতরাং সেই জবাবদিহির জায়গাটা আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে গেছে'।

জাতীয় সংসদকে অধিক কার্যকর করার জন্য টিআইবি 'সংসদ সদস্য আচরণবিধি বিলে' প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, চূড়ান্ত অনুমোদন ও আইন হিসেবে প্রণয়নের মতো বেশ কিছু সুপারিশ করেছে।

  • কার্টেসি — বিবিসি বাংলা/ বৃহস্পতিবার, মে ১৭, ২০১৮। 

‘গুমবিষয়ক’ সনদ স্বাক্ষর প্রশ্নে ঢাকার অসম্মতি



গুম থেকে সবার সুরক্ষার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে বেশ কয়েকটি দেশের সুপারিশ গ্রহণে বাংলাদেশ সম্মত হয়নি। এ ছাড়া নির্যাতন ও অমানবিক শাস্তি বন্ধের স্বেচ্ছামূলক অঙ্গীকারের দলিল (অপক্যাট), অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারবিষয়ক অতিরিক্ত অঙ্গীকার এবং রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারবিষয়ক স্বেচ্ছামূলক অঙ্গীকারের দুটি দলিল স্বাক্ষরের বিষয়েও একই রকম সুপারিশ গ্রহণে বাংলাদেশ রাজি হয়নি। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড বিলোপবিষয়ক।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনা, যা ইউপিআর নামে পরিচিত, তার তৃতীয় দফা পর্যালোচনা সভায় এসব সুপারিশ উঠে আসে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে গত সোমবার জেনেভায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১০৫টি দেশের প্রতিনিধি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এসব সুপারিশ করেন।

সভায় উত্থাপিত সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় গতকাল বুধবার এগুলোর একটি খসড়া প্রকাশিত হয়।

প্রকাশিত খসড়ায় দেখা যায়, ১৬৭টি সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশের সম্মতি রয়েছে। ২৩টি সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশ তার মতামত জানানোর জন্য সময় নিয়েছে, যা ইউপিআরের পরবর্তী অধিবেশনের মধ্যেই জানাতে হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে ইউপিআরের পরবর্তী সভার কথা আছে। ৬১টি সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশের অসম্মতির কথা এই খসড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো সংখ্যায় অনেক হলেও বিষয় ও করণীয় বিবেচনায় অনেকগুলোই পুনরাবৃত্তি।

পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগগুলো তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়ে যে সুপারিশ এসেছে, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সে বিষয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় চেয়েছে। মতামত জানাতে সময় নেওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে আরও আছে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি আইনের খসড়া সংশোধন, সংখ্যালঘুদের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা, বাল্যবিবাহ নিরোধক আইনে বিশেষ ছাড় দেওয়ার বিধি, কিশোরদের অপরাধের জন্য দায়ী করার ক্ষেত্রে বয়সসীমা বাড়ানো, দাম্পত্য জীবনে ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, নারী-পুরুষের মজুরিবৈষম্য দূর করার মতো বিষয়গুলো। মীর আহমেদ বিন কাসেম এবং আমান আজমীর গুমের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের তথ্য জানানোসহ নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগ তদন্ত ও বিচারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপারিশের বিষয়েও বাংলাদেশ সম্মত হয়নি।

যেসব সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশ অসম্মতি জানিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে গুমবিষয়ক সনদ ও ওপরে উল্লেখিত স্বেচ্ছামূলক অতিরিক্ত অঙ্গীকারের দলিল ছাড়াও আছে ১৯৫১-এর উদ্বাস্তুবিষয়ক সনদ, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকারবিষয়ক আইএলও সনদ ১৩৮,১৩৯ ও ১৮৯, শিশুশ্রম নির্মূলবিষয়ক সনদ, নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য অবসানের আইন, নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এখতিয়ার বাড়ানো, মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করার লক্ষ্যে সব ধরনের ফাঁসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, মানহানির অভিযোগের ফৌজদারি দায় বাতিল, উদ্বাস্তু ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের বিচারলাভের অধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এসব সুপারিশ চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। 


  • তথ্যসূত্র —  প্রথম আলো/ বৃহস্পতিবার, মে ১৭, ২০১৮। 


Thursday, May 17, 2018

মাইনাস জনগণ সরকারের জন্য মাইনাস জনগণ নির্বাচন আর নয়

গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব ও সাংবিধানিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য চাই অবাধ নির্বাচন

মইনুল হোসেন

আজ আমাদের একথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করতে হবে যে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার অব্যবহিত পর ১৯৭২ সালে জনগণ প্রদত্ত গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রে মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন হচ্ছে না। বরং বাংলাদেশ স্বৈরতন্ত্র পরীক্ষা-নীরিক্ষার উর্বর ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে চরম অগণতান্ত্রিকভাবে দলীয় নেতারা দেবতার মতো পুজা পাচ্ছেন, তাদের বদলানো যাবে না। নেতৃত্বের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনকে দেখা হচ্ছে বিরাজনীতিকরণ হিসেবে। আমরা মোটের উপর সবাই নেতাপুজা মেনে নিয়েছি এমনকি উৎসাহ দিয়েছি, কিন্তু স্থায়ী নেতৃত্ব যে স্বৈরতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য সেকথা ভুলে গেছি।

আমাদের জনগণ কি ধরনের সমাজ সংগঠন করতে চায়, কোন ধরনের সরকার চায় তার রূপকল্প হচ্ছে আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র। কিন্তু আজ অত্যন্ত হতাশা ও বেদনা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমাদেরকে সেই শাসনতন্ত্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ধ্বংস প্রক্রিয়া দেখতে হচ্ছে। গণতান্ত্রিক সরকারের ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়েই দাপটের সাথে একের পর এক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে পঙ্গু ও অকেজো করা হচ্ছে। ঘড়ির কাটাকে পেছনে ঘুরানো হচ্ছে এমন ভারসাম্যহীন স্বৈরতন্ত্রকে প্রত্যবর্তনের জন্য যা এদেশের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিচার বিভাগ যেহেতু আমাদের মৌলিক অধিকারের রক্ষক তাই তার স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হচ্ছে, তার অস্তিত্ব বিনাশ করা হচ্ছে। আমরা নির্বাচনের নামে এক অদ্ভুত সংসদ এবং আরও অদ্ভুত এক বিরোধী দল পেয়েছি। সরকারের সৃষ্ট এবং সরকারের অনুগত থাকার দলই এখন বিরোধী দল। আমাদের ঘাড়ে এমন এক নির্বাচনী ইঞ্জিনিয়ারিং কাঠামো চাপানো হয়েছে যার মাধ্যমে নির্বাচনী ফলাফল পূর্ব নির্দ্ধারিত।

দেশটি যে বিপজ্জনক একদলীয় স্বৈরশাসনের দিকে ধাবিত হচ্ছে সেটা কেবল আমাদের কাছেই পরিস্কার নয়, বাইরের দুনিয়ার কাছেও স্পষ্ট। তবে আমাদের সে স্বৈরশাসনের, যদি কায়েম করা সম্ভব হয়, একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকবে এবং তা হলো এটা এক ব্যক্তির স্বৈরশাসন হবে না, হবে গ্রুপ বিশেষের স্বৈরশাসন, যা গ্রুপের স্বার্থ দেখ-ভাল করবে।

জাতীয় নির্বাচনে কে অংশ নিবে এবং কে অংশ নিবে না তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিরোধ হিসেবে বিষয়টিকে দেখবার কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে স্বাধীন জনগণকে স্বাধীনভাবে নিজেদের সরকার নির্বাচন করতে দেয়ার অধিকার। দেশটা আমাদের অথচ সরকার হবে অন্যদের এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে জীবন ধারণ করার চেয়ে অপমানজনক আর কিছুই থাকতে পারে না। তাই শাসনতন্ত্র নির্দেশিত জনগণের কাছে দায়বদ্ধ শাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে জনগণের দাবি হিসেবে অবাধ নির্বাচনের দাবি তোলা হচ্ছে।

সংসদীয় শাসনতন্ত্রের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি সকলের নিকট সুপরিচিত এবং সেভাবেই সর্বত্র সংরক্ষিত রয়েছে। বলা হয়েছে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সংসদীয় আসনগুলোকে শূন্য ঘোষণা করতে হবে। আর সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পর নির্বাচিত সরকার বলতে কিছু থাকে না তাই রাণী অথবা রাষ্ট্রপতি যিনিই রাষ্ট্র প্রধান থাকবেন তিনি সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার ঘোষণা প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনকালীন অর্ন্তবর্তী সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলবেন। বিরোধী দলের তার ওপর আস্থা থাকে বলেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালনে কারও আপত্তি থাকে না। তা না হলে ভিন্ন রকম হতো। 

ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনগণকে তাদের পছন্দমত সরকার নির্বাচনের সুযোগ থেকে বি ত করে আর একটি রাবার স্ট্যাম্প নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করা হলে তা অবশ্যই মারাত্মক হিংসা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিতে প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। তখন অগণতান্ত্রিক শক্তির হাতে বন্দী নির্বাচনী ব্যবস্থাকে মুক্ত করার দুর্বার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। জনগণ বড় বেশি ক্ষুব্ধ।

স্বৈরশাসনের ফলে সৃষ্ট অব্যবস্থাপনার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমার সঙ্গে এ প্রশ্নে কেউ যদি দ্বিমত পোষণ করেন তবে আমি তার সঙ্গে ঝগড়া করতে যাব না, কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি সরকার দ্রুত অচল হয়ে পড়ছে। চারদিকে আমি কেবল পুলিশকেই সক্রিয় দেখতে পাচ্ছি। জাতি হিসেবে আমাদের প্রাণশক্তি ও যা কিছু ভাল ও মহৎ গুণাবলী ছিল তা শ্বাসরোধী স্বৈরশাসনের মিথ্যাচার নিঃশেষ করে দিচ্ছে।

ভয়-ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করাকে স্বাধীনতা কিংবা সুশাসন বলা যাবে না। স্বাধীন দেশে অবাধ নির্বাচন হতে না দেওয়ার অর্থ জনগণের স্বাধীনতার সঙ্গে নিকৃষ্টতম বিশ্বাসঘাতকতা করা। আজ মানবাধিকার লংঘন করার ব্যাপারটি কেবল আমাদের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয় নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন।

যে প্রেক্ষাপট এতক্ষণ ব্যাখ্যা করা হলো তার আলোকে আমরা যদি একটি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনগণের সরকার পেতে চাই Ñ যে সরকার হবে সৎ এবং স্বচ্ছ তাহলে আপনাদের সামনে আপনাদের বিবেচনার জন্য আমি বিনীতভাবে তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকারের একটি সংশোধিত রূপরেখা বা সূত্র উপস্থাপন করতে চাই, যার দায়িত্ব হবে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করা - 

(ক)        নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে শাসনতান্ত্রিক কাঠামো যৌথভাবে সবগুলো দল কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছিল তাকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে সেখানে কিছু প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে।

(খ)        নির্বাচনের আগে সংসদ অবশ্যই ভেঙ্গে দিতে হবে যেমনটি সংসদীয় ব্যবস্থায় সর্বত্র ভেঙ্গে দেওয়া হয়।

(গ)        রাষ্ট্রপতি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবেন। যদি কোনো কারণে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি অর্পিত ক্ষমতাবলে নির্দলীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন অন্তবর্তী সরকার গঠন করবেন।

আমরা যদি দেশ ও জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালনের বোধ থেকে তদ্রাচ্ছন্নতা ঝেড়ে ফেলে জেগে উঠি তাহলে কোনো বিপদই অবশ্যম্ভাবী হতে পারবে না। ভালো লোকেরা দুর্বল এবং দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতাবান, এই ভুল ধারণা থেকে দেশ অবশ্যই মুক্তি পাবে।

সাধারণ নির্বাচনকে দেখতে হবে সরকার তথা রাষ্ট্রীয় কর্মকা-ে জনগণের সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ হিসেবে। মাইনাস জনগণ সরকারের জন্য মাইনাস জনগণ নির্বাচন অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে।

গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব ও সাংবিধানিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যে অবাধ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি তাকে অর্থবহ মুক্ত নির্বাচন করে তুলতে হবে।

অবাধ নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা শাসনতন্ত্রের অন্যতম মৌলিক কাঠামোর স্পষ্ট লংঘন করা। সংবিধান অমান্য করে ক্ষমতা দখল করা যে অসাংবিধানিক, চরম অপরাধ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হলে, নিরাপদ করতে হলে সরকারী কর্মকর্তা, পুলিশ এবং সকলকে দেশ ও জনগণের প্রতি উচ্চতর আনুগত্যবোধে অনুপ্রাণিত ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্বাধীন জীবন উপভোগের জন্য নিরাপদ দেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের সবাইকে নিতে হবে যাতে আমরা নিজেদের কাছে এবং সমগ্র জগতের সামনে প্রমান করতে পারি যে, আমরা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার নেতৃত্বদানে অযোগ্য নই, স্বাধীনতা ভোগের দায়িত্ববোধও আমাদের আছে।

এ কেবল কথার কথা হলে হবে না, বাস্তবে এ কথার রূপ দিতে হবে।
সময়ের ডাকে সাড়া দেবার জন্য আমি সেক্সপীয়ার থেকে বাণী ধার নিয়ে উচ্চারণ করতে চাই, “এটা সত্য যে আমরা মহা বিপদের মধ্যে আছি, আর সেজন্যই আমাদের অনেক বেশি সাহস দেখাতে হবে।”

  • গোলটেবিল আলোচনায় এশিয়া প্যাসিফিক হোটেল, ঢাকা (এপ্রিল ২৮, ২০১৮)।
  • লেখক আইনজীবী । 


No minus people election for minus people government


Free election for constitutional democracy and democratic leadership


By Mainul Hosein


Soon after independence of Bangladesh in 1972, the people gave unto themselves the democratic Constitution that must have been regarded as the embodiment of the spirit and goal of the liberation war. 

But that was not to happen. Bangladesh has become a fertile ground for experimenting autocracy. Most undemocratically, the party leaders are treated as permanent objects of worship not to be changed. The democratic change of leadership is stigmatised as depoliticisation. But permanent leadership is autocracy and we, by and large, have acquiesced even encouraged, leader-worshiping politics.

Our democratic Constitution is our people’s vision about the form of government, and the kind of society they wish to organise for them. 

But to our great pain and frustration, we have been watching the annihilating process of all the democratic institutions. The scheme is to demolish, with a show of arrogance, the checks and balances of a democratic government for turning the clock back to the past autocracy of unchecked power so dreadfully rejected by the people. To end the judiciary its independence is to deny the guarantee of our fundamental rights. We have a dubiously elected parliament with a more dubious opposition cravenly loyal to the government. We are saddled with an election mechanism where results are engineered to be predetermined. 

It is clear to us and clear to the world outside that the country is heading dangerously towards one-party autocracy. Only difference is our autocracy, if it succeeds, is not to be a one-person autocracy, but a group autocracy in the service of group interests.

There is no scope for treating a national election as a dispute between political parties or who will participate and who will not. What is to be ensured is the right of a free people to elect their government freely. Nothing is more ignominious than to live in a situation where the country is ours but the government is theirs. The demand of free election is the people’s demand for accountable governance as required under the Constitution. 

Under parliamentary constitution the structure of national election is well-known and well-preserved. The parliament is to be dissolved to declare the seats of the parliament vacant. As after dissolution of the parliament there remains no elected government to continue, the Queen or the President whoever is the head of state, while announcing the dissolution of the parliament asks the Prime Minister to continue as the interim government. 

Another rubber-stamp election, for depriving the people of their right to vote to get people’s government will certainly be a huge provocation to incite violence and anarchy for freeing the election from captivity of the undemocratic forces. 

The mismanagement of arbitrariness in governance has no end. Those who disagree, I have no quarrel with them, but I find the government collapsing. I see only police all around. Tyranny of lies is suffocating our potential to be good and great as a nation. 

To live in fear and insecurity of life is neither freedom nor good governance. Denying free election is the worst kind of betrayal with the freedom of the people that can be conceived in a free country. The violation of human rights is a great concern not only for us but also for international human rights bodies outside.  

In the backdrop, as explained, and to have a government of the people and by the people, honest and transparent, let me submit most humbly before you for your consideration, a revised formula of the caretaker / interim election time government for arranging the next general election free and fair : 
(a) The constitutional structure of election time caretaker government as jointly agreed by all parties should be taken as the basis but with necessary changes; 
(b) The parliament must be dissolved before the election as is done everywhere under the parliamentary system;
(c) The President in consultation with major political parties will form the election time interim or caretaker government. In case no consensus can be reach then the President will be vested with the authority to form the caretaker / interim government from among non-party eminent persons.   
The worst is not inevitable if we are ready to wake from the slumber of doing nothing about our responsibility towards the country and the people. 

The country must be cured of the delusion that corruption is power and the good people are powerless. 

The challenge is to establish the sovereign dominance of the people in public affairs. The minus people election for minus people government must be ended. 

The free election we are demanding has to be meaningfully free for constitutional democracy and democratic leadership. 

Subverting free election is violation of a basic structure of the Constitution and grabbing power through such no election is manifestly unconstitutional with consequences grave for an uncertain future. (Articles 7, 21 and 65)  

In order to make our freedom safe and secure we must have our government servants, police and all, permeated by a fervour of higher loyalty to the people and the country. To enjoy freedom and build our country safe for freedom must be the responsibility of all. 

We must talk the talk and walk the walk to prove to ourselves and the world that we are not incapable of challenging leadership or unworthy of freedom.  

About the need of the time, let me borrow words from Shakespeare, “It is true that we are in great danger; 

The greater therefore should our courage be.”   

***
  • The paper was presented at a round table discussion on election held at Asia Pacific Hotel, Dhaka on 28 April, 2018.

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট — আকাশে অশ্বডিম্ব প্রেরণ (পার্ট - ৪ এবং শেষ)

জিয়া হাসান 




তাহলে প্রশ্ন করতে পারি , এই স্যাটেলাইট কি কাজে আসবে , কার কাজে আসবে? এটা কি শুধু শুধু? মোটেও নয়। এই স্যাটেলাইট আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ একটা কাজে আসবে।

কিন্ত সেটা আমরা কাজে লাগাতে পারবো নাকি তার গুড়টা অন্য কেউ খেয়ে নেবে, সেটা সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

শেষ পর্বে আমরা একটু সামারি করি, স্যাটেলাইটের উল্ল‌িখিত বেনেফিটগুলো নিয়ে সরকারের দাবি কি এবং আমরা কি পাচ্ছি।

১। দাবী --- ২৬ টা কিউব্যান্ড এবং ১৪ টা সিব্যান্ডের ট্রান্সপন্ডার দেশীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল ব্যবহার করবে। এবং তার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা‌র সাশ্রয় হবে।

বাস্তবতা - একাত্তর টিভির প্রধান মোজাম্মেল বাবুরা পর্যন্ত স্বীকার যাচ্ছেন যে এই স্যাটেলাইট তার অরবিটাল স্লটের অবস্থান দেশীয় চ্যানেলগুলির জন্যে একটা চ্যালেঞ্জ কারণ কিউব্যান্ডে এই অ্যাঙ্গেলে বৃষ্টির কারণে খুবই ডিজরাপশান হয় এবং তাদের আলোচনা থেকেই আমরা জেনেছি, তাদের জন্যে আরো উল্লম্ব (vertical) খাড়া অবস্থানে (৯০ডিগ্রি বা কাছাকাছি) যে সব স্যাটেলাইট আছে তাদের কাছ থেকেই স্লট নিয়ে বরং চ্যানেল পরিচালনা সহজ।

ফলে সরকার যদি তাদেরকে বাধ্য না করে, বা সিব্যান্ডের প্রযুক্তি কনভার্ট করতে জোর না করে, বা তাদের পুরনো কন্ট্রাক্টের জন্যে কম্পেনসেট না করে - এই চ্যানেলগুলো কিউব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার না-ও করতে পারে।

২। দাবী ---  বিদেশী কোম্পানিকে বিক্রয় করা হবে।


বাস্তবতা ---  এই স্যাটেলাইটের জোনে যে দেশগুলো আছে তাদের মধ্যে মিয়ানমার ২০১৯ এ স্যাটেলাইট ছাড়বে। শ্রীলঙ্কার ইত‌িমধ্যে আছে, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এদের আছে। ভারতের মার্কেটে ডিটিএইচ অপারেটরদের কাছে কিউ ব্যান্ডের চাহিদা আছে, কিন্ত সেখানেও অ্যাঙ্গেল খারাপ। এবং সেইখানে রেগুলেটরি এমবারগো আছে । এবং এশিয়ান সাউথ ইস্ট এশিয়ান বাজার খুব দুর্বল। 

তবে যদি একদম নামমাত্র মুল্যে দেওয়া হয়, সেটা অন্য কথা। কিন্ত স্যাটেলাইটের কম্পিটিটিভ মার্কেটে এই ট্রান্সপন্ডার বিক্রি সরকার রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট আনতে পারবে - এটা নিয়ে খুবই সন্দিহান থাকতে হবে আমাদের।

৩। দাবী ---  দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে ।

বাস্তবতা  --- আমরা বলেছি, বাংলাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল বলে কিছু নাই। তবুও যদি থেকে থাকে, তবে স্যাটেলাইট দিয়ে যে খরচে, ন্যারোব্যান্ড ডাটা পাওয়া যাবে এবং তার যে দাম পড়বে লাইন অফ সাইট রেডিও লিংক দিয়ে তার চেয়ন ১০০ গুন সস্তা ব্রড ব্যান্ড পাওয়া যাবে। 

এবং বলেছি, ফোর জি নেটওয়ার্ককে, রেন্ট সিকিং করে অতিরিক্ত চার্জ করার কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাইস্পিড ডাটা সম্প্রসারণে টেলিকমগুলো পিছিয়ে পড়েছে - এটা কমার্শিয়াল সিদ্ধান্ত,  টেকনলজিকাল নয়।

সো অ্যাভেইলেবল এবং সস্তা টেকনলজিকে ফেলে রেখে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে দূরবর্তী অঞ্চলে ইন্টারনেট কানেকশান দেয়ার বিষয়টি একটা প্রপাগান্ডা মাত্র।

একই সাথে টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে বলেছি এটা এক ভয়ংকর মিথ্যাচার। কারণ স্যাটেলাইট দিয়ে টেলিযোগাযোগ দিতে পারে, বিশ্বের মাত্র ৮টি কোম্পানি যেমন ইরিডিয়াম, ইন্মারসেট- ইত্যাদি।

কারণ স্যাটেলাইট দিয়ে আপ লিঙ্ক এবং ডাউনলিঙ্ক করা যাবে কিন্ত এই টেলিযোগাযোগ স্থাপন করতে গ্রামীন বা রবির চেয়ে বিশাল বড় একটা টেলিকম কোম্পানি তার, সার্ভার, তার পেমেন্ট সিস্টেম, নাম্বার মাচিং সুইচ, রাউটিং সব বসাতে হবে। 

তাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে টেলিযোগাযোগের গল্প প্রতারণামুলক দাবী।

এবং এদের এক একটা সেট ফোনের দাম এক লাখের কাছাকাছি এবং চাইলেই সরকার এই সেটগুলো কিনে সরবরাহ করতে পারে। এবং র‍্যাব, ইউএন বা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নিযোজিত সংস্থা গুলো ইতিমধ্যেই এই সেটফোন ব্যবহার করছে। এর জন্যে নতুন করে, আরেকটা টেলিকম কোম্পানি বসানো,আর একটা স্যাটেলাইট লাগে না।

৪। দাবী ---  দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলার করা হবে। 


এই বিষয়ে আমরা বলেছি, এই স্যাটেলাইট একটি কমিউনিকেশান স্যাটেলাইট। এর কোন ধরনের ইমেজিং, সেন্সিং ক্যাপাসিটি নেই।এবং দুর্যোগ মোকাবেলার মূল ইস্যুই হচ্ছে, ইমেজিং এবং সেন্সিং। মনে করেন, কোন নদীতে পানি বেড়েছে কিনা বা একটা জলোচ্ছ্বাসের পরে কোন কোন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হলো কোথায় ত্রাণ বেশি লাগবে এই তথ্য গুলো যাচাই করা।

যেহেতু এই স্যাটেলাইটে এই ধরনের কোন সেন্সর এবং ক্যামেরা লাগান হয়নি, তাই এই সার্ভিস গুলো দেয়ার প্রশ্নই আসেনা।

এবং আমরা আরো বলেছি, এই ডাটা এবং ইমেজগুলো জাতিসঙ্ঘের ইউনিসেফ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই পাওয়া যায় কিন্ত সরকার এটা বিগত চল্লিশ বছরে ব্যবহার করেনি, তাই , স্যাটেলাইট দিয়ে এইগুলো হবে, সেটা জাস্ট একটা কল্পবাস্তবতা।

তাহলে এই স্যাটেলাইট কি কাজে আসবে ? এই ২৪টা কিউব্যান্ডের ট্রান্সপন্ডার কি সরকার ফেলে রাখবে ?

নাহ, এই স্যাটেলাইটের বিশেষ একটা ‘গোল’ আছে। এই স্যাটেলাইট দিয়ে, আল্টিমেটলি যেটা করা হবে, সেটা হচ্ছে ডিটিএইচ বা ডাইরকেট টু হোম সার্ভিস দেয়া হবে। এই সার্ভিসে আপনি একটা সেট টপ বক্স কিনবেন এবং সেইটা দিয়ে আপনি সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ডিশ কানেকশান নিবেন - পাড়ার কেবল টিভি অপারেটর থেকে লাইন আর নিতে হবে না।

বাংলাদেশে দুইটি কোম্পানি ১। বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিয়েল ভিউ । এবং বায়ার মিডিয়া ইতিমধ্যেই এই সারভিসের লাইসেন্স পেয়েছে। এর মধ্যে রিয়েল ভিউ ইতোমধ্যেই ডিটিএইচ সম্প্রচার করছে এবং সার্ভিস বিক্রি করছে। আমি কয়েকটি ফ্যামিলিকে দেখেছি এই সার্ভিস নিতে।

ডাইরেক্ট টু হোম বোঝার সহজ উপায় হচ্ছে, টাটা স্কাই, যেটা গ্রামে বা মফস্বলে যেখানে কেবল টিভি নাই সেই ধরনের কিছু এলাকায় দেখা যায়। টাটা স্কাই যদিও বাংলাদেশে অবৈধ কিন্ত অনেকেই এটা এখন ব্যবহার করছেন।

এই ডাইরেক্ট টু হোম স্যাটেলাইট চ্যানেল সার্ভিসের বাংলাদেশের বাজার অনেক বড় বাজার। এইটা সরাসরি সারা দেশের কেবল টিভি নেটওয়ার্কের সাথে কম্পিট করবে, যারা অনেকে দাম বাড়িয়েছে। এদের অনেকের সার্ভিস খারাপ এবং  অনেক জায়গায় এখনো অ্যাকসেসিবলও  নয়।

এবং ডিটিএইচ প্রযুক্তি অনেক ম্যাচিওর প্রযুক্তি। ভারতে ২০০৪ সাল থেকেই ডাইরেক্ট টু হোম সার্ভিস আছে।

পাকিস্তান, বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি অনেক পরে এসেছে। পাকিস্তান, ২০১৭ সালে ডাইরেক্ট টু হোমের অকশন করে, এবং তাতে তাদের টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি ডিটিএইছ স্পেক্টরাম বিক্রি করে ১৫০০ কোটি রুপি আয় করে।

কিন্ত বাংলাদেশে ডাইরেক্ট টু হোম সার্ভিস দেয়ার পারমিশান দেয়া হয়েছে যে দুইটা কোম্পানিকে তারা , নিউইয়র্কে তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিটিআরসি চেয়ারম্যানের দেওয়া  সাক্ষাতকার মতে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি অনুমতি নিয়ে এই সার্ভিস চালু করা হয়েছে।

ইউটিউবে এই সেমিনারের একটি ভিডিও আছে যেখানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন যে এই প্রতিষ্ঠান দুইটিকে কোন পদ্ধতিতে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ডাইরেক্ট টু হোম সার্ভিস স্থাপনের জন্যে, সেইটা তিনি জানেন না। 

অাপনি বলতে পারেন, দুটি কোম্পানিতো ডাইরেক্ট টু হোম ইতিমধ্যেই চালু করেছে, তবে, তাদের আবার কেন এই স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করতে হবে?

এই কোম্পানি দুটো এখনো বাংলাদেশে ব্রেক ইভেনে যেতে পারেনি। এখনো তাদের খরচ অনেক হাই, যেহেতু, অল্প কিছু কাস্টমারের জন্যেও তাদেরকে হয় ট্রান্সপন্ডার ভাড়া করতে হয়েছে বা কারো সাথে শেয়ার করতে হচ্ছে। ফলে তাদের এখন অনেক লস দিতে হচ্ছে।

কিন্ত যদি সরকারের নিজস্ব স্যাটেলাইট থেকে কোন কম্পিটিশান ছাড়া মনোপলি আকারে ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নেয়া যায় এবং সেই খানে যদি কম্পিটিশান না থাকে তবে ইনিশিয়াল খরচটা কমে আসবে।
এবং এই খানে সমস্যা মনোপলির ।

একটা ডিটিএইচ কোম্পানিকে, ১০ থেকে ২০ টি ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করতে হয়। তাহলে ২৪ টি কিউট্রান্সপন্ডার যদি এভেলেভেল থাকে, দুইটি কোম্পানির জন্যেই এই সুযোগ খোলা, ফলে এই কোম্পানি দুইটি দেশের টাকায় মনোপলি ব্যবসা করতে পারবে। এবং তাদের ইনভেস্টমেন্টের রিস্ক কাভার হবে।

এভাবে আমাদের দেশের মালিকেরা কইয়ের তেলে কই ভেজে, সেই কইটি খেয়ে আপনার কাছ থেকে আবার কই কেনার পয়সা আদায় করে নেয়।

এটাই আমি যত দূর বুঝতে পেরেছি, অ্যাভেইলেবেল তথ্য ব্যবহার করে --- এটাই স্যাটেলাইট গেম-এর গোমর ফাঁক।

এটা যদি সরকার সৎ ভাবে ব্যবহার করে, তবে এখনো ডিটিএইচ অপারেটরদেরকে বেচে লাভ করে আনতে পারতেও পারে। কিন্ত এখানে নিয়ত, ক্রিপ্টোক্রেসি এবং অতিরিক্ত পলিটিক্সের লোভটাই সব চেয়ে বড় অবস্টাকল। 

তাই সময় বলবে, এই স্যাটেলাইট শ্বেতহস্তি হবে নাকি সরকার এই স্যাটেলাইটের সার্ভিসকে ঠিক মত সেল করে প্রফিট আনতে পারবে।

তবে রিয়ালিটি হচ্ছে, আমাদের অপারেশান কস্ট কিন্ত উঠা শুরু হয়েছে এবং কার সাথে কি ডিল হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত স্যাটেলাইট আকাশে উঠে গেলেও কোন বিক্রয় চুক্তি কমপ্লিট হওয়ার কথা সরকার স্বীকার করে নাই, ফলে প্রতি দিনই কিন্ত লস শুরু হয়ে গেছে।

এটা আমার শেষ বিশ্লেষণ। 


— লেখক সাড়া জাগানো ব্লগার ও তরুন উদ্দ্যোক্তা। 


বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট — আকাশে অশ্বডিম্ব প্রেরণ (পার্ট - ৩)


 জিয়া হাসান 



‘একটি পারিবারিক লেনদেনের গল্প’  — এই স্টোরিটা ডেভিড বারগম্যান প্রকাশ করেছেন, নিউ এজ - পত্রিকায়। আজকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের যে ধোলাই জাতি খাচ্ছে সেই প্রেক্ষাপটে বিষয়টা আবার আমরা একটু দেখি এবং এখানে যে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে সেটা খুব ক্লাসিক একটা স্টাইল - আওয়ামী মাস্টারপিস।

এবং এখানে দেখবেন, সরকার কিভাবে, টেন্ডার ডকুমেন্টসে সামান্য পরিবর্তন এনে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেন, সরকারের চিহ্নিত কোম্পানিটিই ফাইনালি, টেন্ডারে টিকতে পারে।

ঘটনাটা জুলাই ২০১২ সালের।

নিউ এজ জানায় যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কন্সাল্টেন্সির কাজ যে কোম্পানি পায়, সেই কোম্পানিটির মালিকানা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়ার সদস্যের ।

স্পেস পারটনারশিপ ইন্টারনেশনাল নামের যে কোম্পনিটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কন্সালটেন্সির কাজ করতে ৮০ কোটি টাকার চুক্তি করে, তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছে শফিক এ চৌধুরী।

এই শফিক এ চৌধুরী হচ্ছেন আবার ফরিদ খানের ব্রাদার ইন ল এবং ফরিদ খান হচ্ছেন বাংলাদেশের পাওয়ার সেক্টরের বিগত কয়েক বছরে একচেটিয়া ব্যবসা করা সামিট গ্রুপের আজিজ খান এবং সরকারের প্রভাবশালি মন্ত্রী ফারুক খানের ভাই।

স্পেস পারটনারশিপের বাংলাদেশ পার্টনার আবার হচ্ছে, সামিট কমিউনিকেশান যার প্রধান হচ্ছেন আবার ফরিদ খান।

তো ফরিদ খানের সরাসরি ইন্টেরেস্ট আছে, স্পেস পারটনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল যেন কাজ পায়, কারণ, স্প্রেস পারটনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছে ওনার ইন ল, শফিক এ চৌধুরী।

এই শফিক এ চৌধুরী আবার প্রায় ৩০ বছর এরোনেটিকাল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন। এবং স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালে, ওনার নিজ বক্তব্য অনুসারে, উনি ২০১১ থেকে কাজ করছেন।

বাংলাদেশে এই ভাই বন্দি নতুন কিছু নয় বা এখানে দুর্নীতি হয়েছে একথা আমরা বলতেও পারবোনা বা এখনও বলছিও না। কিন্ত নিউএজের রিপোর্টে দেখা যায়, স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল তাদের টেন্ডার ইভালুয়েশানে অনেক কম মার্ক পেয়েছে এবং তারা টেন্ডারের মিনিমাম রিকয়ারমেন্ট পুরা করতে পারেনি, কিন্ত , নিউ এজ-এর  তথ্য মতে, তারা এমন একটা শর্তে কোয়ালিফাই করেছে যেই শর্তটা অার কোনো  বড় কোম্পানি পুরণ করতে পারেনি।

সেই শর্তটা হচ্ছে, এই ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারে যে সব যে সব কোম্পানি পারটিসিপেট করবে , তাদের কন্সাল্টেন্টের দশ সদস্যের একজিকিউটিভ কমিটিতে অন্তত একজন বাংলাদেশি থাকতে হবে, যার এরনটিকাল ইন্ডাস্ট্রিতে ১৫ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। মজার ব্যাপার, শফিক চৌধুরি একজন একাউন্টেট, এরনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নন।

তো, বলেন তো এই ইন্টারন্যাশনাল কন্সাল্টেন্সি খোঁজার টেন্ডারে কোন কোম্পানি এই শর্ত পুরা করতে পেরেছে  -- সেটাই স্পেস পারটনারশিপ ইন্টারনাল। 

পেরেছে কেন?

কারণ , তাদের প্রতিষ্ঠানে আছে সামিট গ্রুপের আত্মীয় একজন বাংলাদেশি যার এরনটিকাল ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরির বয়স ৩০ বছর।

কিন্ত আর কোন কোম্পানি এই ধরনের বাংলাদেশি কাউকে খুঁজে পায়নি বলে তারা বিডে বাদ পড়েছে। 

এবং এই ধরনের শর্ত যখন ইন্টারন্যাশনাল বিডে আসে তখন বড় কোম্পানিগুলো বুঝে যায় যে এই বিড ডকুমেন্টস কাউকে ফেভার করার জন্যই সাজানো হয়েছে তাই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এথিকালি কমপ্লায়েন্ট কোম্পানিগুলো তৃতীয় বিশ্বে এই ক্রিপ্টোক্র‍্যাসি এভয়েড করে যায়।

তাই টেন্ডারের অনেকগুলো শর্ত পুরা করতে না পেরেও, এবং ইভালুয়েশানে অনেক কম মার্ক পেয়েও স্পেস পারটারনশিপ টেন্ডারে এতো বড় একটা কাজের কন্সাল্টেন্সির কাজ পেয়ে যায়। 
বলতেই হয়,কি চমেৎকার দেখা গেল!

  • — লেখক সাড়া জাগানো ব্লগার ও তরুন উদ্দ্যোক্তা।