Search

Thursday, May 17, 2018

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট — আকাশে অশ্বডিম্ব প্রেরণ (পার্ট - ৩)


 জিয়া হাসান 



‘একটি পারিবারিক লেনদেনের গল্প’  — এই স্টোরিটা ডেভিড বারগম্যান প্রকাশ করেছেন, নিউ এজ - পত্রিকায়। আজকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের যে ধোলাই জাতি খাচ্ছে সেই প্রেক্ষাপটে বিষয়টা আবার আমরা একটু দেখি এবং এখানে যে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে সেটা খুব ক্লাসিক একটা স্টাইল - আওয়ামী মাস্টারপিস।

এবং এখানে দেখবেন, সরকার কিভাবে, টেন্ডার ডকুমেন্টসে সামান্য পরিবর্তন এনে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেন, সরকারের চিহ্নিত কোম্পানিটিই ফাইনালি, টেন্ডারে টিকতে পারে।

ঘটনাটা জুলাই ২০১২ সালের।

নিউ এজ জানায় যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কন্সাল্টেন্সির কাজ যে কোম্পানি পায়, সেই কোম্পানিটির মালিকানা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়ার সদস্যের ।

স্পেস পারটনারশিপ ইন্টারনেশনাল নামের যে কোম্পনিটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কন্সালটেন্সির কাজ করতে ৮০ কোটি টাকার চুক্তি করে, তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছে শফিক এ চৌধুরী।

এই শফিক এ চৌধুরী হচ্ছেন আবার ফরিদ খানের ব্রাদার ইন ল এবং ফরিদ খান হচ্ছেন বাংলাদেশের পাওয়ার সেক্টরের বিগত কয়েক বছরে একচেটিয়া ব্যবসা করা সামিট গ্রুপের আজিজ খান এবং সরকারের প্রভাবশালি মন্ত্রী ফারুক খানের ভাই।

স্পেস পারটনারশিপের বাংলাদেশ পার্টনার আবার হচ্ছে, সামিট কমিউনিকেশান যার প্রধান হচ্ছেন আবার ফরিদ খান।

তো ফরিদ খানের সরাসরি ইন্টেরেস্ট আছে, স্পেস পারটনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল যেন কাজ পায়, কারণ, স্প্রেস পারটনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছে ওনার ইন ল, শফিক এ চৌধুরী।

এই শফিক এ চৌধুরী আবার প্রায় ৩০ বছর এরোনেটিকাল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন। এবং স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালে, ওনার নিজ বক্তব্য অনুসারে, উনি ২০১১ থেকে কাজ করছেন।

বাংলাদেশে এই ভাই বন্দি নতুন কিছু নয় বা এখানে দুর্নীতি হয়েছে একথা আমরা বলতেও পারবোনা বা এখনও বলছিও না। কিন্ত নিউএজের রিপোর্টে দেখা যায়, স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল তাদের টেন্ডার ইভালুয়েশানে অনেক কম মার্ক পেয়েছে এবং তারা টেন্ডারের মিনিমাম রিকয়ারমেন্ট পুরা করতে পারেনি, কিন্ত , নিউ এজ-এর  তথ্য মতে, তারা এমন একটা শর্তে কোয়ালিফাই করেছে যেই শর্তটা অার কোনো  বড় কোম্পানি পুরণ করতে পারেনি।

সেই শর্তটা হচ্ছে, এই ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারে যে সব যে সব কোম্পানি পারটিসিপেট করবে , তাদের কন্সাল্টেন্টের দশ সদস্যের একজিকিউটিভ কমিটিতে অন্তত একজন বাংলাদেশি থাকতে হবে, যার এরনটিকাল ইন্ডাস্ট্রিতে ১৫ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। মজার ব্যাপার, শফিক চৌধুরি একজন একাউন্টেট, এরনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নন।

তো, বলেন তো এই ইন্টারন্যাশনাল কন্সাল্টেন্সি খোঁজার টেন্ডারে কোন কোম্পানি এই শর্ত পুরা করতে পেরেছে  -- সেটাই স্পেস পারটনারশিপ ইন্টারনাল। 

পেরেছে কেন?

কারণ , তাদের প্রতিষ্ঠানে আছে সামিট গ্রুপের আত্মীয় একজন বাংলাদেশি যার এরনটিকাল ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরির বয়স ৩০ বছর।

কিন্ত আর কোন কোম্পানি এই ধরনের বাংলাদেশি কাউকে খুঁজে পায়নি বলে তারা বিডে বাদ পড়েছে। 

এবং এই ধরনের শর্ত যখন ইন্টারন্যাশনাল বিডে আসে তখন বড় কোম্পানিগুলো বুঝে যায় যে এই বিড ডকুমেন্টস কাউকে ফেভার করার জন্যই সাজানো হয়েছে তাই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এথিকালি কমপ্লায়েন্ট কোম্পানিগুলো তৃতীয় বিশ্বে এই ক্রিপ্টোক্র‍্যাসি এভয়েড করে যায়।

তাই টেন্ডারের অনেকগুলো শর্ত পুরা করতে না পেরেও, এবং ইভালুয়েশানে অনেক কম মার্ক পেয়েও স্পেস পারটারনশিপ টেন্ডারে এতো বড় একটা কাজের কন্সাল্টেন্সির কাজ পেয়ে যায়। 
বলতেই হয়,কি চমেৎকার দেখা গেল!

  • — লেখক সাড়া জাগানো ব্লগার ও তরুন উদ্দ্যোক্তা। 


No comments:

Post a Comment