Search

Tuesday, May 29, 2018

ডুবছে কৃষি ব্যাংক

  • মূলধন ঘাটতি ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
  • বাজেটে ভর্তুকি চায় দেড় হাজার কোটি টাকা


রুকনুজ্জামান অঞ্জন


কৃষি খাতের উন্নয়নে নিয়োজিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এখন ডুবতে বসেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতি, সরকারের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা, কৃষি ঋণের সুদের হার কম ও তহবিল পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিশেষায়িত এই ব্যাংকটির অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে।  অর্থ মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি পাঠানো এক চিঠিতে ব্যাংকটি বলেছে, তাদের মূলধন ঘাটতি ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এত বেশি ঘাটতি নিয়ে ব্যাংকটির ব্যবসা পরিচালনা ও ঋণদান কর্মসূচি কঠিন হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী বাজেট থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে বিকেবি।

ব্যাংকটির এমডি মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া চিঠিতে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি বিশেষায়িত ব্যাংকের আর্থিক বিবরণীতে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে পরিচালনগত লোকসান এবং সমন্বিত মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দেশে-বিদেশে স্টেকহোল্ডারদের বিভ্রান্ত করে; এমনকি আমানতকারীদেরও নিরুৎসাহিত করে। যে কারণে ১০৩১টি শাখা সংবলিত একটি ব্যাংকের দীর্ঘ ৪৮ বছরের আমানতের পরিমাণ মাত্র ২২ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের জুন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী বিশেষায়িত খাতের এ ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৫৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুনে যার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। নিট লোকসানের পরিমাণ ৯৮১ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১ হাজার ৩১ শাখার মধ্যে ১৪৮টি শাখাই পরিচালিত হচ্ছে লোকসানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অন্য ব্যাংক যেখানে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়, সেখানে কৃষি ব্যাংক-কে ৯ থেকে ১০ শতাংশ সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করতে হয়। অথচ তাদের আমানত নিতে হয় বেশি সুদে। ব্যাংকটির তহবিল পরিচালন ব্যয়ের চেয়ে ঋণের সুদের হার কম হওয়ায় বছর বছর মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। এ ছাড়া ব্যাংকটির কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এতে কিছু টাকা ব্যাংকের বাইরে চলে যাচ্ছে। ব্যাংকটিকে বাঁচাতে চাইলে এগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিকেবির চিঠিতে বলা হয়েছে, কৃষি ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮২ শতাংশ সরাসরি কৃষি খাতের অন্তর্ভুক্ত। দেশের কৃষকদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় কৃষিঋণের ওপর অন্যান্য ব্যাংক ও ঋণ খাতের মতো বাজারভিত্তিক সুদ আরোপ না করে সরকার নির্দেশিত হ্রাসৃকত সুদ হারে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে, যা ব্যাংকটির তহবিল ব্যয়ের চেয়েও কম। আর এ কারণেই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কম সুদে ঋণ দেওয়ার কারণেই কৃষি ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হচ্ছে— তেমনটি নয়। ব্যাংকটির সামগ্রিক পারফরমেন্স খারাপ হওয়ার জন্য অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও দায়ী। কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে গতবছর বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির আওতায় গরু মোটাতাজাকরণের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত নিশ্চয়তার বিপরীতে কিছু কিছু শাখায় ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ ধরনের ৪৪৭টি ঋণের বিপরীতে বিতরণকৃত অর্থের প্রায় পুরোটাই চলে গেছে কর্মকর্তাদের পকেটে। কৃষি ব্যাংকের লোকাল প্রিন্সিপাল অফিস ও সাভার শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে মনো প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিকে প্রায় ৪৩ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে লেটার অব ক্রেডিট বা ঋণপত্রের (এলসি) পণ্য ছাড় করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই গ্রাহকের কাছে ব্যাংকের পাওনার বিষয়টি কোনো হিসাবে দেখানো হয়নি। কৃষি ব্যাংকের কক্সবাজার, বনানী করপোরেট শাখাতেও কোটি কোটি টাকা ঋণ দিয়ে সেই ঋণ ফেরত পায়নি ব্যাংকটি। এর বাইরে ভল্টের টাকা ও সঞ্চয়পত্রের টাকা আত্মসাতের মতো ঘটনাও রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকেবির এমডি আলী হোসেন প্রধানিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনিয়ম কোথায় নেই, সে তুলনায় কৃষি ব্যাংকে বরং কম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা ভুল ধারণা আছে। তারা বলছে, সোনালী, রূপালী ও জনতা ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে ব্যবসা করতে পারলে কৃষি ব্যাংক কেন পারে না। কিন্তু ওসব ব্যাংক ২ থেকে ৩ শতাংশ কৃষি ঋণ দেয়। আর আমাদের কৃষিঋণের পরিমাণ প্রায় ৮৪ শতাংশ। ঋণের পার্সেন্টেজ বেশি হওয়ায় আমাদের ক্ষতির পরিমাণও বেশি। এমডি জানান, ব্যাংকটিতে তহবিল পরিচালনায় ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ শতাংশ হারে। আর তারা ঋণ দিচ্ছে ৯ শতাংশ হারে। এ ছাড়া সময়মতো ভর্তুকির টাকা না পাওয়ার কারণেও তাদের মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। ব্যাংকটির পারফরমেন্স ভালো করতে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে এমডি বলেন, আগামী জুন থেকে আমাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হবে।

  • Courtesy: Bangladesh Protidin/ May 29, 2018

No comments:

Post a Comment