Search

Thursday, May 31, 2018

এক কদম পিছু হটল নির্বাচন কমিশন

সিটি নির্বাচন বিধিমালা

সমালোচনার মুখে কিছুটা পিছু হটেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব সাংসদকে প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়ে বিধিমালা সংশোধন অনুমোদন করার পাঁচ দিনের মাথায় ইসি বলছে, স্থানীয় সাংসদেরা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না, তবে অন্য সাংসদেরা পারবেন।
মঙ্গলবার ইসির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা ইসির নতুন এই অবস্থানের কথা জানান। তবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া সিইসি ও আরেক কমিশনারের কথায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্য উঠে আসে।

কমিশন কবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সিইসির বক্তব্যে পরিষ্কার হয়নি। কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ইসির বৈঠকেও এই বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সিইসির বক্তব্যের দুই ঘণ্টা পরও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা পাননি। তাঁরা তখন পর্যন্ত জানেন, সব সাংসদ প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে গতকাল পর্যন্ত বৃহস্পতিবারের বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রস্তুত হয়নি। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের দাবির মুখে সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা সংশোধনী অনুমোদন করেছিল ইসি। সেদিন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, সব সাংসদই প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

ইসির এই সিদ্ধান্তের পর বিভিন্ন মহলে সমালোচনা তৈরি হয়। এর মধ্যে গতকাল এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেন, পর্যায়ক্রমে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধন করা হবে। তবে স্থানীয় সাংসদেরা (যে এলাকায় নির্বাচন হবে সে এলাকার সাংসদ) প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। বাকি সব সাংসদ অংশ নিতে পারবেন। তবে স্থানীয় সাংসদেরা তাঁর এলাকায় থাকতে পারবেন।

সমালোচনার মুখে ইসি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল সিইসি বলেন, তাঁরা পুনর্বিবেচনা করবেন না। ১৩ জুনের আগে সংশোধনী চূড়ান্ত হলে আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে সাংসদেরা প্রচারের সুযোগ পাবেন। না হলে নয়।

সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে সিইসি বলেন, এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়। তাই দলীয় কর্মীদের অংশগ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা আছে। সংবিধানের ৩৬-৩৭ অনুচ্ছেদে ‘ফ্রিডম অব মুভমেন্ট, ফ্রিডম অব অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রিডম অব অ্যাসেম্বলি’ দেওয়া আছে। একজন জনপ্রতিনিধি কোনো মিটিং বা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না, এটা ইসির কাছে সঠিক মনে হয়নি। সবচেয়ে বড় কারণ হলো, সংসদ সদস্যরা সরকারি সুবিধাভোগী নন। তাঁদের দপ্তর নেই। নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার তাঁদের সুযোগ নেই বলে মনে করেন সিইসি।

তাহলে স্থানীয় সাংসদেরা কেন সাংবিধানিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েও শেষ করতে পারেননি সিইসি। এ সময় তাঁর পাশে থাকা আরেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সাংসদের কিছু প্রভাব বিস্তার করার মতো ক্ষমতা রয়েছে। তাঁর হাতে কিছু ত্রাণ, অনুদান রয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তিনি কাজ করেন। সে জন্য তাঁরা সুপারিশ করেছেন যে স্থানীয় সাংসদ প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।

কমিশনের এই সিদ্ধান্তে একজন কমিশনার নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি নুরুল হুদা বলেন, একজন নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন, বাকি চারজন পক্ষে আছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সরকারের চাওয়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ইসিকে বলেছিল। ইসি দেখেছে যে এটা করা যেতে পারে। অন্য কোনো দল যদি এই প্রস্তাব করত, তাহলেও ইসি এভাবেই চিন্তা করত।

কিন্তু খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনে বিএনপি পুলিশ কমিশনারের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল। তা আমলে নেওয়া হয়নি—এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপির বিষয় না। পুলিশ কমিশনার কোথায়, কে থাকবে, না থাকবে বিএনপি আপত্তি করতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের। ইসির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে খুলনার পুলিশ কমিশনারকে নির্বাচনের আগে বদলি করা সমীচীন হবে না।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ৩১,২০১৮ 


No comments:

Post a Comment