(বাংলাদেশি ভয়েসেস ডেস্ক) — ওদের কারও ছেলে, কারও স্বামী, কারও ভাই, কারও বাবা গুমের শিকার হয়েছেন। চার বছর ধরে তাদের অপেক্ষার অার যেন শেষ নেই। নিখোঁজ হওয়া বাবা ফিরবেন- এমন আশায় নিত্যদিন ভোর হয় সন্তানের। বৃদ্ধ আর বাবার প্রতিটি সকাল আসে প্রিয় সন্তানের শূন্যতা নিয়ে। ঈদ যায়, ঈদ আসে। কিন্তু হারানো সন্তান আর ফেরে না।
শনিবার, মে ২৬, ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয়েছিল এমন কয়েকটি পরিবার। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই নিখোঁজ হওয়া স্বজনদের ফেরত চেয়ে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে তারা। নিখোঁজ হওয়া বিএনপি কর্মী সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী বলেন, এখানে আজ আমার মায়ের আসার কথা ছিল কিন্তু তিনি কাঁদতে কাঁদতে কুঁজো হয়ে গেছেন। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রিয় মানুষকে কাছে পেতে চাই। তাদের সঙ্গে ঈদ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আপনি তো আপনার স্বজনকে নিয়েই ঈদ করেন। তবে আমাদের কেন ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবেন?
শিশুকন্যা লামিয়া আক্তার মীম বলেন, আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। বাবা আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে। ঈদের জামা কিনে দেবে। অন্যদের মতো বাবার হাত ধরে আমিও হাঁটতে চাই।
আফরোজা ইসলাম আখি বলেন, হয় নিখোঁজ হওয়া সবাইকে ফিরিয়ে দিন, না হয় আমাদের সবাইকে মেরে ফেলুন। এভাবে তিলে তিলে মৃত্যু না দিয়ে একসঙ্গে মরে যেতে চাই। এত কষ্ট আর সহ্য হয় না।
এ সময় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রতি বছরই এই জায়গায় এসে মায়েদের কান্নার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও কাঁদতে হয়। আমাদের কারও কান্না প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়ে না। কারণ, নিখোঁজ হওয়া স্বজনদের কারো সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনো আত্মীয়তা নেই। এখানে ছাত্রলীগের তপুর মা সালেহা বেগম রয়েছেন। তিনি প্রায়ই বলেন, আমরা তো আওয়ামী লীগ করি, আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগে ভোট দেয় এবং আমার ছেলে রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিল। তাকে কেন গুম করা হলো? এর জবাব কী প্রধানমন্ত্রী জানেন? তিনি আরো জানান, বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর হিসেবে পরিচিত কুমিল্লার মতিনের ছেলে সেও যুবলীগ করতো। সেও নিখোঁজ। এ সময় মান্না বলেন, রমজান মাস নাকি সংযমের মাস। এই মাসেই মানুষ হত্যায় নতুন করে মেতে উঠেছে সরকার। আর সবকিছুর মূল আগামী একাদশ নির্বাচন। বিনা চ্যালেঞ্জে আবার ক্ষমতায় যাবার জন্য এসব টালবাহানা করছে। কিন্তু দেশবাসী আর ছাড় দেবে না। যেকোনো মূল্যে এই সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন - জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালাসহ নিখোঁজ হওয়া পরিবারের সদস্য সাইফুল রহমান সজীবের বাবা শফিকুর রহমান, আবদুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী, তরিকুল ইসলাম তারার স্ত্রী শামসুন্নাহার বেবী, মো. নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম, মাহবুব রহমান সুজনের ভাই জাহিদ খান, কাজী ফরহাদের ভাই আমান, ছাত্রলীগ রামপুরা থানার সভাপতি এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা আলহাজ সালেহা বেগম, ড্রাইভার কাওসারের শিশুকন্যা লামিয়া আক্তার মীম, মাহবুবুর রহমান রিপনের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান শিপন, আমিনুল ইসলাম জাকিরের ভাই আলমগীর হোসেন আলিক, আদনান চৌধুরীর মা কানিজ ফাতেমা, নিখোঁজ পিন্টুর ভাই মো. ইসলাম রেজা এবং নিখোঁজ আসাদুজ্জামান রানা, জাহিদুল করিম তানভীর ও আলামীনের পরিবারের সদস্যরা।
No comments:
Post a Comment