গত ১৪ এপ্রিল রাতে সুন্দরবনের পশুর নদের হারবারিয়া এলাকায় ৭৭৫ টন কয়লাসহ ডুবে যায় লাইটার জাহাজ এমভি বিলাস। এ দুর্ঘটনার ৪১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো উদ্ধার করা যায়নি জাহাজটি ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আধুনিক উদ্ধারকারী জাহাজের অভাব ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এমভি বিলাস এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে সনাতন পদ্ধতিতে জাহাজটিকে টেনে তোলার চেষ্টা চলছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব না হলে আশা ছেড়ে দিতে হবে।
মালিকপক্ষের হয়ে জাহাজটি উদ্ধারের কাজ তদারকি করছেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মো. বাহারুল ইসলাম বাহার। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আধুনিক জলযানের অভাব, নদীর স্রোত আর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জাহাজটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। জাহাজটি দিন দিন নদীর তলদেশে আরো দেবে যাচ্ছে। জাহাজের উপরে প্রচুর পলি পড়ায় এখন আর কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বর্তমানে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। তবে এর আগে ডুবন্ত জাহাজ থেকে পানি ও পলিমাটি মিশ্রিত কিছু কয়লা পাম্পের মাধ্যমে উত্তোলনের পর ৪০০ টনের একটি বাল্কহেডে করে যশোরের নওয়াপাড়ায় নিয়ে গেছেন আমদানিকারকরা।
বাহার আফসোস করে বলেন, যদি খুলনায় বিআইডব্লিউটিএ কিংবা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো উদ্ধারকারী জলযান থাকত, তাহলে জাহাজটি উদ্ধারে এত দেরি হতো না। বর্তমানে জাহাজটিকে সনাতন পদ্ধতিতে দুই পাশে দুটি টাকবোট দিয়ে টেনে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরঞ্জামাদি আনা হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব না হলে আশা ছেড়ে দিতে হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এ কে এম ফারুক হাসান বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে উদ্ধারকারী জাহাজ কেনা জরুরি হয়ে পড়েছে। শিগগির উদ্ধারকারী জাহাজ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য আমরা একটি প্রকল্প তৈরি করছি।
এদিকে সুন্দরবনের নদীতে একের পর এক জাহাজডুবি এবং তা উদ্ধার না হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বন কর্মকর্তা ও পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থিত পশুর, শ্যালাসহ অন্যান্য নদীতে জাহাজডুবির ঘটনা নতুন নয়। গত সাড়ে তিন বছরে ডুবেছে সাতটি জাহাজ। এসব জাহাজে ছিল ফার্নেস অয়েল, সার, কয়লা ও সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল। তবে খুলনা অঞ্চলে উদ্ধারকারী কোনো জলযান না থাকায় দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয় না ডুবে যাওয়া জাহাজ ও পণ্য। ফলে এসব পণ্যের রাসায়নিক পদার্থে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জলজ জীববৈচিত্র্য। পানির মাধ্যমে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে বনের মাটিতেও।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, শ্যালা নদী দিয়ে এখন আর পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে না। তবে মোংলা বন্দরের কারণে পশুর নদ দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে। সে কারণে এটি বন্ধ করার সুযোগ নেই। জাহাজডুবির কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হয়। তাই জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনার সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, একের পর এক জাহাজডুবির ঘটনা উদ্বেগ তৈরি করেছে। আমরা এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তাভাবনা করছি।
- কার্টেসিঃ বণিক বার্তা/ মে ২৯,২০১৮
No comments:
Post a Comment