Search

Tuesday, May 22, 2018

ক্রসফায়ার বনাম আইন-বিচার



ড. রমিত আজাদ 



একজন ব্যাক্তিকে দোষারোপ করা হলেই তিনি অপরাধী নন। তাকে আসামী না বলে অভিযুক্ত বলাই ঠিক। অভিযুক্ত ব্যাক্তিটি দোষী কি নির্দোষ সেটা প্রমাণ সাপেক্ষ। আর এ জন্যই রয়েছে আদালত। সেখানে তার পক্ষ-বিপক্ষ হয়ে ডিবেট করেন মিনিমাম দুজন আইনজ্ঞ। সেই ডিবেট শোনেন একজন আইনজ্ঞ বিজ্ঞ বিচারক। ডিবেটের ফল হিসাবেই বিচারক রায় ঘোষণা করেন, অভিযুক্ত দোষী কি নির্দোষ, দোষী হলে তার শাস্তির মাত্রা কি হবে। বিচার মাত্র একদিনে হয় না। 




জ্ঞানী সক্রেটিসের বিচার হয়েছিলো মাত্র একদিনে, আর তিনি তার প্রতিবাদ করেছিলেন, যথেষ্ট সময় নিয়ে অনেকগুলো দিনে ধাপে ধাপে বিচার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিলো অভিযুক্ত যেন আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সময় পায়, আইনজ্ঞরা যেন তথ্য-প্রমাণ হাজির করার ও আলাপ-আলোচনা করার যথেষ্ট সময় পান এবং সর্বোপরি বিচারকও যেন চিন্তা-ভাবনা করার পর্যাপ্ত সময় পান। মাত্র একদিনে সম্পাদিত সক্রেটিসের বিচারের রায় মানব জাতির জন্য একটা বিপর্যয় ছিলো। তবে ঐ থেকে মানুষ শিক্ষা নিয়েছিলো ও বিচার প্রক্রিয়াকে সংশোধন করেছিলো। পরে বিচার প্রক্রিয়ার আরও উন্নতি হয়েছে। আধুনিক যুগে বিচারও হয় কয়েকবার, কয়েকটি আদালতে। নিম্ন আদালতে বিচারের রায় সঠিক হয়নি অভিযুক্ত এমন মনে করলে, তিনি আপ‌িল করে উচ্চ আদালতে নতুন করে বিচারের আবেদন করতে পারেন, এতে আদালত অবমাননা হয় না। এরপর উচ্চ আদালতে অধিকতর জ্ঞানী ও দক্ষ আইনজ্ঞ এবং বিচারকরা নতুন করে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এমন উদাহরণের কোন অভাব নাই যে, নিম্ন আদালত যেই অভিযুক্তকে অপরাধী বলে সাব্যস্ত করেছিলো ও তীব্র শাস্তি দিয়েছিলো, উচ্চ আদালত সেই একই অভিযুক্তকে নির্দোষ বলে খালাস দিয়েছিলো। এই সব মিলিয়েই তো বিচার ব্যবস্থা।





কিন্তু একজন অভিযুক্তকে কোনরূপ বিচারের আওতায় না এনে সরাসরি ক্রসফায়ারে দিয়ে তার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে ফেললে আইন, আদালত, বিচার ও শাস্তি এই সবকিছু কি অর্থহীন হয়ে যায় না?


  • লেখক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক । 

No comments:

Post a Comment