ধসে পড়া ব্যাংকব্যবস্থা ও উন্নয়নে বিষম দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতে রোগের চিকিৎসা করার পরিবর্তে আমরা উপসর্গের পেছনে দৌড়াচ্ছি। ব্যাংক খাতে যে তারল্য সঙ্কটের কথা বলা হচ্ছে, সেটি তো রোগ নয়, সমস্যাও এটি নয়। সমস্যা হলো সুশাসনের অভাব।
একইভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অতি উচ্চ ব্যয়ের বিষয়টি তারা গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছে। সময় বাড়িয়ে নেয়া বিশাল প্রকল্প এবং উচ্চ ব্যয়ের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি। সিপিডির এমন পর্যবেক্ষণ স্বাভাবিক। ব্যাংক খাতের দুরবস্থা সবার জানা। বর্তমান সরকারের আমলের সব মেগা প্রকল্প নিয়ে কথা উঠেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সরকার এসব বিষয়ে নিজের মত অনুযায়ী চলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের গুণগত মান এবং ব্যয় নিয়ে সরকার কোনোভাবে চিন্তা করতে রাজি নয়।
সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ব্যাংকব্যবস্থার দেখভাল করার কথা বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের। তারাই নষ্টভ্রষ্টদের পক্ষে কাজ করছে। ব্যাংক খাত নিয়ে আমাদের বক্তব্য হলো এখন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে যা হয়েছে তা হলো, রোগের চিকিৎসা করার চেয়ে তার উপসর্গের পেছনে ছুটেছি। উপসর্গ হলো তথাকথিত তারল্য সঙ্কট। তারল্য সঙ্কট তো কোনো সঙ্কট নয়। সঙ্কট হলো পুরো ব্যাংক খাতের ভেতর সুশাসনের অভাব।
আমি আগেও বলেছি, ব্যাংক খাত এতিম হয়ে গেছে। যাদের এই খাত দেখভাল করার কথা ছিল, তারাই এখানে অত্যাচার করেছে।’ আরো পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, আমদানি ব্যয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের মতো ঘটনা ঘটছে, নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসে তখন টাকা পাচারের ঘটনা বেড়ে যায়। দেশের পুঁজিবাজার খুবই বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন করতে হবে বলে তিনি পরামর্শ দেন। ব্যাংকের প্রধান কারবার ঋণ নিয়ে। এ ব্যাপারে মূল প্রবন্ধে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান আইন দিয়ে ঋণখেলাপিদের আটকানো যাবে না। ফলে মন্দঋণের পরিমাণ বেড়েই যাবে। দেশের ব্যাংকিং খাতে এখন মন্দঋণ ৯ শতাংশের ওপরে আছে। পুরনো ঋণগুলোকে অবলোপনের পরও এই অবস্থা দাঁড়াচ্ছে। তা করা না হলে মন্দঋণের মাত্রা আরো বেশি হতো। যেসব বুদ্ধিমান লোক ঋণকে খেলাপি করার পেছনে কাজ করছেন বা কারসাজি করছেন, তাদের সাথে পাল্লা দেয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের এই আইনে নেই। তাই ২০০৩ সালের মানি লোন কোর্ট অ্যাক্ট এবং ১৯৯৭ সালের দেউলিয়াবিষয়ক আইনটি সংস্কার করে যুগোপযোগী করার সুপারিশ করেন তিনি।
বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে চলা তোড়জোড় উন্নয়ন নিয়েও কথা বলা হয় সিপিডির পক্ষ থেকে। বাংলাদেশে এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের চেয়েও অনেক বেশি খরচ হয়। তারা জানান, বাংলাদেশে আরো বড় তিন-চারটি মেগা প্রকল্প চলছে, তার ব্যয় বিশ্লেষণ করলেও একই তথ্য পাওয়া যাবে। আমরা যতটা না উন্নয়ন ব্যয় নিয়ে চিন্তিত থাকি, তার চেয়ে বেশি চিন্তার বিষয় এর গুণমান। এটি এখন প্রকাশ্য, যে ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেটি দীর্ঘ সময় ধরে বাস্তবায়নের ফলে তার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে; কিন্তু প্রকল্পগুলো অতি মূল্যায়িত হয়েছে।
ব্যাংকিং খাত ও উন্নয়ন নিয়ে আগে থেকেই কথা উঠেছে। এসব বিষয়ে সিপিডির মূল্যায়নকে স্বাগত জানানো উচিত। সরকারের উচিত ব্যাংক খাতকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করা। একইভাবে মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন গুণমান নিশ্চিত করা এবং উন্নয়ন খাতে দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ করা।
- Courtesy: Daily Nayadiganta Editorial /June 05, 2018