Search

Wednesday, July 18, 2018

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নারীর সংগ্রাম

ফরিদা আখতার 


কিছু বিষয় আছে, যা মেয়েদের খুব গভীরে আহত করে, যা মেয়ে না হলে বোঝা কঠিন।

সালেহা বেগম, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানের মা। তিনি ঢাকায় ছুটে এসেছেন ছেলের ওপর আক্রমণ এবং তাকে রিমান্ডে নেয়া থেকে মুক্তি দিতে। ছেলের জীবন বাঁচানোর জন্য কতখানি অসহায় হলে হাত জোড় করে একজন মা বলতে পারেন, ‘আমার মণিকে তোমরা মাফ করে দাও। শুধু মুক্তি দাও। ও আর চাকরি চাবে না গো। ওকে ভিক্ষা দাও। আমার মণিকে আমি ঢাকায় আর রাখব না গো। গ্রামে নিয়ে চলে যাব।’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাত পেতে তিনি সন্তান ভিক্ষা চাইছেন। যে আন্দোলন সারা দেশের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে, আজ সে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীর মায়ের ক্ষমা চাওয়ার ভাষা সব মায়ের মাথা নুইয়ে দিয়েছে। এ লজ্জা কার?

মা বুঝতে পারছেন সন্তানের প্রাণ রক্ষার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি, অধিকার ও ব্যবস্থাগুলো বাংলাদেশে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ভিক্ষা ছাড়া জননীর পক্ষে সন্তানের প্রাণ রক্ষার আর কোনো উপায় নেই। প্রাণ ভিক্ষার এ কাতরতা অন্যদের বুকে যত বেজেছে, তার চেয়ে শতগুণ বেজেছে মেয়েদের বুকে।

রাশেদের মা ঝিনাইদহ থেকে এসেছেন এবং দিন-রাত ধরনা দিচ্ছেন রাজধানীর ডিবি অফিস, ডিএমপি, শাহবাগ থানা, সিএমএম কোর্টে। রাশেদকে দুই মামলায় দুই দফা রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ছেলেকে রিমান্ডে নিচ্ছে— এ কষ্ট তিনি সইতে পারছেন না। তিনি রাশেদকে মুক্ত করার আর্জি জানাচ্ছেন।


সবাই জানে, রাশেদ সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অধিকার সংরক্ষণের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিজেদের জন্য শুধু নয়, সব শিক্ষার্থীর পক্ষে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়ে নুরুল হক নুরু, ফারুক হাসান, মাসুদ রানা ও অন্যদের সঙ্গে আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রাশেদ এসে পড়েছেন। তাদের ডাকে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। অথচ আজ তরুণদের আত্মত্যাগের ওপর গড়ে ওঠা স্বাধীন বাংলাদেশে রাশেদদের ওপর নিপীড়ন নেমে এসেছে। অসহায় মাকে বলতে হচ্ছে, ‘ও আর চাকরি চাবে না গো। ওকে ভিক্ষা দাও।’

রাশেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে তৈরি ছাত্রদের মঞ্চ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। একজন মেধাবী শিক্ষার্থী, সরকারি চাকরিতে কোটার কারণে সৃষ্ট বৈষম্য দূর হলে যার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, তার মা আজ রিমান্ডের নির্যাতনের ভয়ে বলছেন, ‘আমার মনির আর চাকরির দরকার নাই। আমার মনি দেশে গিয়ে ভ্যান চালায় খাবে। আমার মনিরে যেন রিমান্ড থেকে মুক্ত করে।’

তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন এবং বাবা রাজমিস্ত্রি; ছেলে মেধাবী বলে ছোটবেলা থেকে বৃত্তি পেয়ে এতদূর এসেছে। সঙ্গে মা-বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগ। খেয়ে না-খেয়ে ছেলের পড়ার খরচ চালিয়েছেন। রাশেদ একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেলে তাদের দুঃখ লাঘব হবে। 

রাশেদ একা নন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন হাজার হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা কষ্ট করে পড়াশোনা করছেন, কিন্তু চাকরি পেতে গিয়ে কোটার কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাই তারা রাস্তায় নেমেছেন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য।  
তাদের দায়িত্ব আছে যেন জনগণের করের টাকায় লেখাপড়া করে দেশের সেবা করতে পারেন। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেলে তারা সেই কাজ করতে পারবেন। কোটার মাধ্যমে চাকরি নিয়ম হয়ে গেলে মেধা ও যোগ্যতার কোনো মূল্য থাকে না। যোগ্য ও মেধাবীদের তখন চাকরি পাওয়া বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এখন রাশেদের মায়ের যদি বলতে হয়, ‘ও আর চাকরি চাবে না গো’, ভ্যান চালাবে, তাহলে এত লেখাপড়ারই আর দরকার ছিল না। এ ছেলেকে লেখাপড়া করানোর জন্য তার অবদান তো কোনো অংশে কম নয়। কিন্তু ছেলের চাকরির চেয়ে ছেলের জীবন তার কাছে বেশি। মনে হচ্ছে, সারা দেশ জিম্মি হয়ে হাতজোড় করে প্রাণভিক্ষা চাইছে।


কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানকে যখন ছাত্রলীগ পিটিয়ে মারছিল, তখন একটি মেয়ে এগিয়ে এসেছিলেন, তার নাম মরিয়ম মান্নান ফারাহ। মরিয়ম তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী। কোটা আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ফারুক হাসানের ওপর হামলা দেখে থাকতে না পেরে প্রতিবাদ জানান এবং সেটা করতে গিয়ে নিজে লাঞ্ছিত হয়েছেন। 

আক্রমণকারীরা তাকে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় শারীরিক নির্যাতন করেছে। তার ভাষায়, এটা ছিল প্রথম জাহান্নাম এবং পরে শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে আরেকবার মরিয়মকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে, যা তার ভাষায় ছিল দ্বিতীয় জাহান্নাম। পুলিশ তাকে ‘বেশ্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে এবং তার বিরুদ্ধে ইয়াবা আসক্তির মিথ্যা অভিযোগ এনেছে। কাউকে সামাজিকভাবে হেয় করতে হলে এর চেয়ে বড় হাতিয়ার আর কী হতে পারে! একটি মেয়েকে বেশ্যা বলে তাকে ছোট করার এটা পুরনো কায়দা। অথচ থানায় পুলিশই তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে, তাকে লাঞ্ছিত করেছে। এখন মরিয়ম বাংলাদেশের সংগ্রামী মেয়েদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন, চারটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে—

এক. সংবাদ সম্মেলনে মরিয়ম ‘ভিকটিম’ বা অসহায় নারীর নতমুখ নিয়ে দাঁড়াননি, তিনি দাঁড়িয়েছেন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দৃষ্টান্ত হিসেবে। বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি লড়াকু মেয়ে। পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে মরিয়ম নতুন জেনারেশনের প্রতিনিধি। সম্ভবত বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ গুণগত রূপান্তরের নির্দেশনা আমরা দেখছি। 

সবচেয়ে বেশি সবাইকে আকৃষ্ট করেছে সেখানে উপস্থিত সব মেয়ের শক্তিশালী ঐক্য, সংবেদনা এবং একাত্মতা। এ সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশে নারীদের ঐক্য ও সংহতির বিরল উদাহরণ। মরিয়মের সংবাদ সম্মেলন বোনদের মধ্যে সংহতি নির্মাণের উজ্জ্বল ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।


দুই. মরিয়ম বুঝিয়ে দিয়েছেন, বেশ্যা গালি দিয়ে পুরনো পুরুষতান্ত্রিক কৌশলে মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ ও দমন করা বাংলাদেশে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। সেই কাল দ্রুতই এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গত হচ্ছে। এর আগে অনেক সংগ্রামী মেয়েকে এভাবে দমনের কিংবা সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা হয়েছে। কাজ হয়নি।

তিন. এ আন্দোলন সব শিক্ষার্থীর, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। যদিও নেতৃত্বে আমরা ছাত্রদের দেখতে পাই, কিন্তু যখনই প্রয়োজন হয়েছে, নারী শিক্ষার্থীরা সামনে এসে গেছেন। কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের মেয়েরা ভেতরে ও বাইরে আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। মাঝরাতে তারা মিছিলে এসে যোগ দিয়েছেন, যা দেখে প্রধানমন্ত্রী ‘টেনশন’ করেছেন। কিন্তু সেই মিছিলে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে আমরা শুনিনি। অথচ দিনদুপুরে মরিয়মের ওপর চড়াও হয়েছে, তিনি একজনকে বাঁচাতে চেয়েছেন বলে। কোটা আন্দোলনে মেয়েদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে খাটো করে বলা হচ্ছে, ‘মেয়েদের ব্যবহার’ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন বক্তব্য নারী অধিকার অস্বীকার করার শামিল। 

বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন— কোনো আন্দোলনেই নারীরা পিছিয়ে থাকেননি। এসব কথা সবাই জানেন, জানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও। তাদের হঠাৎ মেয়েদের নিয়ে চিন্তা হয়ে গেল কেন? অথচ মেয়েরা নির্যাতিত হলে কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না!

চার. এর মধ্যে ‘বোনদের মধ্যে দৃঢ় সংহতির’ শক্তি দানা বেঁধেছে। সব মেয়ের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির শক্তি আমরা দেখছি। এর মর্ম যদি বুঝে থাকি, তাহলে সামাজিক-রাজনৈতিক লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আন্দোলনে সক্রিয় ভাইদের প্রতি বোনদের সংহতির অর্থও বুঝব। মরিয়ম যে ভাইকে নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করতে দুঃসাহসী হয়ে ছুটে গিয়েছিলেন, তাকে তিনি চেনেন না। অথচ তিনি সংগ্রামের মাঠে ‘ভাই’। তার মুখে ‘ভাই’ কথাটা মেয়ে হিসেবে আমার নিজের মধ্যেও গভীরভাবে বাজল।


মরিয়মের সংবাদ সম্মেলন এ দিকগুলো বুঝতে আমাদের খুবই সহায়ক হয়েছে। তিনি অনেক কিছুই খোলাসা করে বলেছেন। সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। সবাই যতটা শিউরে উঠেছেন, ততটাই আশাবাদীও হয়ে উঠেছেন। কারণ আসলেই আমরা আমাদের সামনে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একপাল তরুণ নেতৃত্বের আবির্ভাব দেখছি, আগামী দিনে বাংলাদেশকে সব জুলুম ও নিপীড়নের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে যারা নির্ধারক ভূমিকা রাখবেন।

পুলিশের আচরণ মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এক পর্যায়ে; মরিয়ম বলেছেন, ‘এ দেশ আমার নয়।’ কিন্তু এটা সত্য নয়। এ দেশ অবশ্যই আমাদের। তারা এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করার জন্যই তারা তৈরি হচ্ছেন। আজ তারা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য যখন আন্দোলন করছেন, তখন তাদের ওপর হামলা হচ্ছে এবং চরিত্র হনন করা হচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে আন্দোলন থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। মরিয়মের কথার মধ্যে ভয়াবহ আর্তনাদ ছিল, সন্দেহ নেই। কিন্তু মরিয়ম নিজেই বরং সাহসী হয়ে সবার সামনে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে হাজির হয়েছেন। অতএব, এ দেশ অবশ্যই মরিয়মদের।

লাকি আখতার, যাকে বিভিন্ন সংগ্রামে আমরা দেখি, তিনিও হামলার শিকার হচ্ছেন। তার অপরাধ, তিনি কোটা সংস্কারের অন্যতম নেতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র এবিএম সুহেলকে তার বাসায় থাকতে দিয়েছিলেন। সুহেল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। সম্প্রতি তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকারও হয়েছিলেন। তাকে ১২ জুলাই ভোরে লাকি আখতারের বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এখানেই শেষ নয়, লাকির ওপর নানাভাবে, অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ চলছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করি। খুশির কথা, লাকি জানিয়েছেন তিনি ভীত নন। 

একদিকে মা হিসেবে সালেহা বেগম, অন্যদিকে শিক্ষার্থী মরিয়ম— কোটা আন্দোলনে নিপীড়নের বিরুদ্ধে উভয়ে ভিন্নভাবে প্রতীক হয়ে উঠেছেন। এরই মধ্যে যারা গ্রেফতার হয়েছেন, যারা ছাত্রলীগের পৈশাচিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন, হাতুড়ির আঘাতে জর্জরিত হয়েছেন, তাদের কথা মিডিয়ায় খুব একটা আসছে না। তবু যতটুকু আসছে, তাতে দেখা যায়, নারী শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে মুখপাত্রের কাজ করছেন। এ নারীরা স্রেফ ভিকটিম হিসেবে নয়, প্রতিরোধের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও কর্তা হিসেবে আন্দোলন-সংগ্রামে হাজির হয়েছেন। সেভাবেই তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা তাদের কথা না বললে আজ সমাজ জানত না। সালেহা বেগম আপাতদৃষ্টিতে ক্ষমা চাইছেন, কিন্তু তার কথা দিয়ে তিনি পুরো প্রশাসন ও রাষ্ট্রকে প্রশ্নবোধক করে দিয়েছেন। যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের অপরাধে একজন মাকে এভাবে কাতর হয়ে সন্তানের জীবন ভিক্ষা চাইতে হয়, সেই রাষ্ট্রের ভিত্তি বড়ই দুর্বল। কোটা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’, জঙ্গি বা বেশ্যা আখ্যায়িত করে সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত করার সুবিধাও কমে যাচ্ছে।


এখন আমাদের কাজ হচ্ছে, সালেহা বেগম, মরিয়ম মান্নানসহ সব নির্যাতিত ও নিপীড়িত ছাত্রছাত্রীর পাশে দাঁড়ানো। তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ এবং তাদের দাবি ন্যায্য। সালেহা বেগম বাংলাদেশের জনগণকেও লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন, আমাদের সন্তানদের আমরা আর রক্ষা করতে পারছি না। কিন্তু পারতে হবে। এ ব্যবস্থা বদলাতে হবে। মরিয়ম এবং তার মতো হাজার হাজার মেয়ের নেতৃত্বের ভূমিকাকে আমাদের স্বাগত ও অভিনন্দন জানাতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যে নেতৃত্বের স্ফুরণ ঘটেছে, তাকে আরো বিকশিত করতে হবে।

মেয়েদের যা গভীরভাবে আহত করে, তা একইভাবে শক্তিও জোগায়। উজ্জ্বল বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন আমাদের আরো বাড়ছে। সব নারীর এখন ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়। তাহলে সেই বাংলাদেশ স্বপ্ন হয়ে থাকবে না। বাস্তব হয়ে উঠবে।

  • লেখক: নারী নেত্রী ও নির্বাহী পরিচালক উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)
  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ জুলাই ১৮,২০১৮ 

গুদামের খাদ্যশস্য রাস্তা থেকে উধাও!


দেশের এক গুদাম থেকে আরেক গুদামে খাদ্যপণ্য পৌঁছাতে বড়জোর দুই সপ্তাহ লাগে। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সরকারি গুদামের হাজার হাজার টন ধান, চাল ও গম এক গুদাম থেকে আরেক গুদামে পাঠানোর পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ২৭ বছরেও গন্তব্যে পৌঁছেনি। 

তাহলে রাস্তা থেকে এসব খাদ্যপণ্য যায় কোথায়? জানা গেছে, গত ২৭ বছরে পরিবহনের সময় ৪০-৫০ হাজার টন খাদ্যপণ্য উধাও হয়ে গেছে। দীর্ঘদিনেও এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে পৌঁছেনি ওইসব খাদ্যপণ্যের চালান। বছরের পর বছর সংশ্নিষ্ট গুদামের নথিপত্রে সেগুলো চলাচলরত (পথ খাতে) দেখানো হলেও বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। 

সূত্র জানায়, দেশের খাদ্যগুদামগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগসাজশ করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে খাদ্যপণ্য আত্মসাৎ করছেন। আত্মসাতের তথ্য-প্রমাণও রয়েছে সরকারের হাতে। খাদ্য বিভাগের অবহেলা ও উদাসীনতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সংকট মোকাবেলায় মজুদ করা খাদ্যসামগ্রী লোপাট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে খাদ্যপণ্য আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এরপরও মজুদ, পরিবহন ও সংরক্ষণে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, হিসাব রক্ষায় ডিজিটাইজড পদ্ধতি চালু ও নিরাপত্তায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। 

সচিবালয় সংলগ্ন খাদ্য অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে মহাপরিচালক মো. আরিফুর রহমান অপুর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বিভিন্ন সময়ে গুদাম থেকে ও পরিবহনের সময় খাদ্যপণ্য উধাও হওয়ার ঘটনা স্বীকার করেন। তিনি সমকালকে বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ৪০-৫০ হাজার টন খাদ্যপণ্যের হিসাব কাগজে থাকলেও বাস্তবে নেই। সেগুলো কোথায়, কার কাছে গেছে তা খুঁজে বের করার কাজ চলছে। যাদের বিরুদ্ধে সরকারি খাদ্যপণ্য আত্মসাতের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুদাম থেকে ধান, চাল ও গমের চালান বের হওয়ার নথিপত্র রয়েছে। তবে চালানগুলো অন্য গুদামে গ্রহণ করার প্রমাণ নেই। খাদ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী কিছু চালান ২৭ বছর, কিছু চালান ২০ বছর, কিছু চালান ১৫ কিংবা ১০ বছর ধরে চলাচলের মধ্যে রয়েছে। অধিদপ্তরের এই হিসাব অবিশ্বাস্য, অস্বাভাবিক। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, চলাচলে আটকে থাকার কথা বলা হলেও ওইসব খাদ্যপণ্য বাস্তবে নেই। ১৯৯১ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ২৭ বছরে ৪০-৫০ হাজার টন খাদ্য রাস্তা থেকে উধাও হয়েছে। ওই খাদ্যসামগ্রী কখন, কোথায়, কার কাছে গেছে তার কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে। 

রাস্তা থেকে ওইসব খাদ্যপণ্য কোথায়, কার কাছে গেল- তা খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক পরিচালক ফরিদুর রহমানের নেতৃত্বে বিশেষ একটি টিম ২০০৭ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ১১ বছরের চলাচলের হিসাব অনুসন্ধান করছে। 

এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, দুদক চাইলে তারও আগের ১০ বা ১৬ বছরের হিসাব অনুসন্ধান করতে পারে। দুদকের অনুসন্ধানে অধিদপ্তর থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। এ-সংক্রান্ত যা যা নথিপত্র চাওয়া হবে তা সরবরাহ করা হবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক পদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এক গুদাম থেকে আরেক গুদামে খাদ্যপণ্য না পৌঁছিয়ে সেগুলো আত্মসাৎ করা হয়েছে। রেকর্ডপত্র অনুযায়ী সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারদের খুঁজে বের করা হবে। উধাও হওয়া ওইসব পণ্যের চালান পাঠানোর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও অভিযোগের আওতায় আনা হবে। সংশ্নিষ্ট ঠিকাদার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে খাদ্যপণ্য আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। 

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, খাদ্যপণ্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত কতিপয় ঠিকাদার, খাদ্য অধিদপ্তর ও বিভিন্ন গুদামের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী আঁতাত করে এসব খাদ্যপণ্য আত্মসাৎ করেছেন। ঠিকাদাররা গুদাম থেকে খাদ্যের চালান নিয়ে তা খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন। ফলে ওইসব খাদ্যপণ্য যেসব গুদামে পৌঁছানোর কথা ছিল সেখানে পৌঁছায়নি। 

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মূলত সড়ক, রেল ও নৌপথে দেশের এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে ধান, চাল ও গম পরিবহন করা হয়। পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারদের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী পরিবহন করা হয়। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে একটি চালান পৌঁছাতে এক সপ্তাহ বা বড়জোর দুই সপ্তাহ সময় লাগে। ফলে ২৭, ২০, ১৫ কিংবা ১০ বছরেও তা গন্তব্যে না পৌঁছানো অস্বাভাবিক। 

দুদক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ায় সংশ্নিষ্ট শাখা বা বিভাগ থেকে কোনো কোনো কর্মকর্তা অবসরেও গেছেন। তবে উধাও হওয়া ওইসব চালানের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। 

খাদ্য অধিদপ্তরের চলাচল সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগের পরিচালক চিত্তরঞ্জন বেপারি সমকালকে বলেন, চলাচলে আটকে থাকা খাদ্যপণ্যের হিসাব বের করা, গুদাম ও খাদ্য পরিবহনের সব ধরনের কার্যক্রম ডিজিটাইজড করতে ২০১৪ সালে টেকনো হেভেন কনসোর্টিয়াম নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। গত ৩০ জুনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। কাজটি শেষ করতে না পারায় তারা সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। 

জানা গেছে, টেকনো হেভেন খাদ্য পরিবহনের সব ধরনের কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনার বিশেষ সফটওয়্যার জমা দেবে। এরপর থেকে পরিবহন, সংরক্ষণের কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় চলবে। তখন খুব সহজেই মজুদ, চালান প্রদান, চলাচল, গ্রহণের আপডেট তথ্য পাওয়া যাবে। 

অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, গুদামে খাদ্য মজুদ ও চলাচলের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কিছু ঘাটতির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত এক আদেশে বলা হয়, চাল, গম গুদামে ছয় মাস মজুদ রাখার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ, একই সময় পর্যন্ত ধান মজুদের ক্ষেত্রে দশমিক ৭৫ শতাংশ ঘাটতির হিসাব স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া হবে। একই সঙ্গে খাদ্যপণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ১২৫ শতাংশ ঘাটতি মেনে নেওয়া হয়। 

অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত মে মাস পর্যন্ত ১২১ টন ধান ও ৮৭ হাজার ৬৪০ টন গম চলাচল অবস্থায় ছিল। অর্থাৎ ৩০ মে পর্যন্ত ওই পরিমাণ মালামালের চালান সংশ্নিষ্ট গুদামে পৌঁছায়নি। এ সময় বেশ আগের চালানের ২০ হাজার ১৯ টন অতিরিক্ত চাল পৌঁছেছে বিভিন্ন গুদামে। তবে বছরের পর বছর ধরে 'চলাচলে আটকে থাকা' ৪০-৫০ হাজার টন খাদ্যপণ্য রাস্তা থেকে কখনও গুদামে পৌঁছবে কি-না- সংশ্নিষ্ট কেউ তা স্পষ্টভাবে বলতে পারছেন না।

খাদ্য গুদামে সাম্প্রতিক লুটপাটের চিত্র

বস্তায় কম চাল : ২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল রাজধানীর তেজগাঁওয়ের খাদ্য গুদামে অভিযান চালিয়ে ট্রাকভর্তি বস্তার চাল মেপে পরিমাণ কম পায়। ৩০ কেজির বস্তায় ছিল ১২, ১৪ ও ১৬ কেজি। ঢাকা-৪ আসনের সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ৩০ টন চাল গুদাম থেকে সরবরাহ করা হচ্ছিল। পুরো চাল মেপে সাড়ে ২০ টন পাওয়া গিয়েছিল।

একই সময়ে গুদামের নথিপত্র যাচাই করে ঢাকা জেলা আনসারকে ২৫৮ টন চাল সরবরাহের তথ্য পাওয়া যায়। ম্যাজিস্ট্রেট ওই সময় আনসার কমান্ডার মো. আমিন উদ্দিনকে ফোন করে তিনি কী পরিমাণ চাল পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি ৭৫ টন চাল পাওয়ার কথা জানান। 

চট্টগ্রামের গুদাম থেকে ২ হাজার টন চাল-গম উধাও : ২০১৭ সালের ২০ জুলাই চট্টগ্রামের হালিশহর ও দেওয়ানহাটের গুদাম থেকে ২ হাজার টনেরও বেশি চাল-গম উধাও হয়েছিল। সরকারি ডিও (ডিমান্ড অর্ডার) ছাড়া ভুয়া কাগজপত্রে ছাড় করিয়ে ওই পরিমাণ চাল খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় সহকারী ম্যানেজার ফখরুল আলম মানিকসহ চারজনকে আসামি করে হালিশহর থানায় একটি মামলা হয়। 

চালের বদলে বস্তাভর্তি তুষ, মাটি, বালি, কয়লা : ২০১৩ সালের ২১ অক্টোবর খাদ্য বিভাগের এক তদন্তে দেশের পাঁচ জেলার গুদামে বস্তাভর্তি তুষ, মাটি, বালি ও কয়লা পাওয়া যায়। অথচ গুদামের কাগজপত্রে সেগুলোতে চাল দেখানো হয়। এভাবে আত্মসাৎ করা হয় ৭৬০ টন চাল। ওই সময় এই চালের বাজার মূল্য ছিল প্রায় চার কোটি টাকা। সে সময় তদন্তকালে বেশ কয়েকটি জেলার গুদামে কাগজপত্রের হিসাবে ও প্রকৃত মজুদে গরমিল পাওয়া যায়। 

নারায়ণগঞ্জের গুদাম থেকে চাল আত্মসাৎ : গত জুনে নারায়ণগঞ্জ বন্দর সংলগ্ন গুদাম থেকে প্রায় ১০০ (৯৯.৮৮) টন চাল আত্মসাৎ করা হয়। এ ঘটনায় দুদক উপপরিচালক একরামুর রেজা বাদী হয়ে ৫ জুন গুদামের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করে বন্দর থানায় মামলা করেন। 

কিশোরগঞ্জে চাল আত্মসাতের : সরকারি চাল আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সাবেক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল জলিল ও গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী হাসিবুল হাসানকে গ্রেফতার করে দুদক। ২০১২ সালে গুদামের ৬০ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তখন ওই চালের বাজারমূল্য ছিল ২০ লাখ ২২ হাজার টাকা। 

কুমিল্লায় ৭ কোটি টাকার চাল আত্মসাৎ : গত বছরের জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত তিন বছরে কয়েকটি ধাপে কুমিল্লার দৌলতগঞ্জ খাদ্য গুদাম থেকে ১ হাজার ৮০০ টন চাল আত্মসাৎ করা হয়। তখন ওই চালের বাজারমূল্য ছিল প্রায় সাত কোটি টাকা। এই অপরাধের তথ্য-প্রমাণ থাকার পরও 'শাস্তি' হিসেবে তৎকালীন কুমিল্লা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুনুর রশীদকে কিশোরগঞ্জে বদলি করা হয়েছিল। লাকসাম থানা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা বেগমকে বদলি করা হয়েছিল চাঁদপুর গুদামে। 
  • কার্টসিঃ সমকাল/জুলাই ১৭,২০১৮ 

Return of encroachers


The gradual re-occupation of the Tejgaon-Satrasta Road by truck and covered van owners is set to foil a noble venture. Although viewed as an initiative by the Dhaka North City Corporation (DNCC), it finally emerged as an individual challenge taken up by the then DNCC mayor, late Annisul Haque. The daunting task of clearing the road of encroachment by a section of transport owners is still fresh in people's memories. For successfully accomplishing the job the mayor earned a lot of kudos. 

It also displayed his courage and unflinching commitment to accomplishing a goal. Before its reopening after dismantling the truckers' illegal terminal, it was an unspeakable ordeal for the commuters using the critical road for decades. The road is vital, as it connects the Farmgate-Karwan Bazar area to a vast tract comprising Mohakhali-Banani-Niketan.

That a great initiative undertaken by a venturesome city guardian turns futile after his demise beggars belief. It's a sad commentary on the state of the massive attempts by the authorities concerned to free public places from illegal occupants. The last three years stand witness to how scores of eviction programmes undertaken by the two city corporations go awry. Such drives sparked stiff resistance from the encroachers backed by unscrupulous quarters, and lingered as protracted face-offs. 

The repeated eviction drives by the Dhaka South City Corporation (DSCC) and the eventual return of the hawkers to the Gulistan area's footpaths tell a grim tale of encroachment.

Mayor Annisul had embarked on his task with an unwavering resolve to free Dhaka north of the scourge of encroachments. Apparently, he staked his security and safety in conducting the job. Beside freeing the Tejgaon truck stand from powerful occupants, he also focused on some other hazardous traffic joints in the city. 

The DNCC's successful drives to end unauthorised parking of buses on roads in front of the Gabtoli and Mohakhali bus terminals also proved to be two outstanding achievements. They were followed by freeing the stretches in Uttara-Abdullahpur and Pallabi of the menace of illegal bus-truck parking. The slow return of the arrogant truck and covered van owners to Tejgaon and illegal parking of buses in front of Mohakhali bus terminal cannot be taken casually. If the syndicates can get away with their attempts to stage a comeback, this may create a dangerous precedent for others to follow. 

The city's past record of seeing a civic venture operating for long is hardly comfortable. Scores of remedial drives are conducted and infrastructure built --- all followed by spectacular openings. At the end of the day, the members of the public find themselves hoodwinked, thanks to faulty planning, mismanagement and fund crunch.

Some projects are, however, effectively put in place. Implemented either by the city corporations or government agencies, few of them earn the ability to survive longer enough to benefit the city residents. Public disillusionment ensue. 

The spectre of return of the Tejgaon-Satrasta Road to its earlier plight is one of the many that characterise Dhaka. It stems from the fear of a venture's eventual failure. For a city looking to the days of emerging as an ideal one, such retrogression is unacceptable, and unfortunate.  Uncertainties over the duration of public welfare steps call for stringent preventive regulations.

  • Courtesy: The Financial Express /Editorial /Jul 18, 2018    

Urea supply crisis may hit next Boro crop

Jubair Hasan 
Severe urea fertiliser crisis is feared in the upcoming Boro season, as the authority concerned finds it difficult to handle the growing supply-demand mismatch of the key agro input, officials said.

To avert such an unpleasant situation during the production season of a major rice crop, the Bangladesh Chemical Industries Corporation (BCIC) has requested the Ministry of Industries (MoI) to take immediate measures for resumption of gas supply to the closed fertiliser producing units.

Seeking anonymity, an official of the MoI said they have received a number of letters from the BCIC during the last several days. The corporation warned the MoI of possible consequences in the coming Boro season.

Farmers usually start using urea in large quantities from early December and continue until March.

Quoting from the letters, he said production of urea in a number of units has been kept suspended for months due to the cut in supply of natural gas, which is the basic raw material of this particular organic fertiliser.

"The BCIC demanded immediate resumption of gas supply to its three urea-producing units on priority basis," he added.

The three units are Jamuna Fertiliser Company Ltd (JFCL), Shahjalal Fertiliser Company Ltd (SFCL) and Chittagong Urea Fertiliser Factory (CUFL).

The BCIC, in its recent letter issued on Monday, stated that the Ministry of Agriculture (MoA) had set a demand for 2.55 million tonnes of urea in this financial year (FY), 2018-19, and advised it to keep a buffer stock of 0.8 million tonnes to meet any exigency.

According to the projection, 1.6 million tonnes of urea will be imported, while 10 million tonnes will be produced domestically.

It said the national plan for fertiliser supply will not be implemented without domestic production.

Besides, 0.62 million tonnes of fertiliser will be needed in the current mini peak (July-September) season, while another 0.38 million tonnes will be required for October-November period.

The demand of 1.0 million tonnes for up to November cannot be met by the buffer stock, and then the peak cropping season will begin. So, it is mandatory to resume production at the state-owned fertiliser units to avoid the deficit, according to BCIC.

"The possible supply shortage could create an embarrassing situation for both the government and the BCIC," it stated.

Talking to the FE, BCIC Director (Finance) Md. Haiul Quaium said all the state-owned urea fertiliser factories have been shut since April due to gas supply shortage.

"We've no fertiliser now, except the buffer stock. We need uninterrupted supply of gas to the factories to resume production."

Terming the agro-input supply a sensitive issue, Mr. Quaium said it takes time to import fertiliser from abroad.

"It's not easy to import fertiliser. It's a lengthy process. It takes around six months from signing agreement to supply fertiliser to the farmers. So, we've to depend on domestic production."

He said the government highly prioritised the issue of food security, and the use of fertiliser is one of the keys to achieve that.

"I hope the government will take the matter seriously, and take urgent steps to this effect."

When contacted, MoI Secretary Muhammad Abdullah said they have taken the matter seriously and started talks with the agencies concerned.

"I personally talked with the energy secretary over the matter, and he seemed positive about resumption of gas supply."

Mr. Abdullah informed that gas supply to JFCL resumed Tuesday last, and it will start producing fertiliser within a couple of days.

"I hope we'll get also good news for SFCL soon," he added.

  • Courtesy: The Financial Express /Jul 18, 2018

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট!

জালিয়াত চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক


যেখানে বাংলাদেশের বহু নাগরিককেই পাসপোর্ট তৈরি করতে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়, সেখানে বাংলাদেশের নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিদের অনায়াসে পাসপোর্ট পেয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক বটে। কিন্তু বাংলাদেশে অস্বাভাবিক ঘটনার অভাব নেই।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করিয়ে দিতে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী, পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা এবং দালালদের নিয়েই চক্রটি গড়ে উঠেছে। দেশের একজন প্রকৃত নাগরিকও চাইলেই পাসপোর্ট পান না। এ জন্য তাঁকে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নানা তথ্য–প্রমাণ কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করতে হয়। এরপর সেই তথ্য-উপাত্ত সঠিক কি না, তা যাচাই করে থাকে পুলিশ বিভাগের বিশেষ শাখা। এই প্রেক্ষাপটে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পাওয়ার খবরটি আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, দুই থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে চলে গেছে। এদের বেশির ভাগই গেছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায়। ওই সব দেশে গিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাদের অনেকে নানা অপরাধকাজে লিপ্ত হচ্ছে, যার দায় পড়ছে বাংলাদেশের ওপর।

জালিয়াতির কারণে বাংলাদেশের হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন দেশে আপত্তি ওঠায় সরকার কয়েক বছর আগেই যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) চালু করে। কিন্তু তাতে জালিয়াতি যে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তার প্রমাণ রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট সংগ্রহ। পাসপোর্ট করতে গিয়ে কিংবা সীমান্ত পার হতে গিয়ে যেসব ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা ধরা পড়ছে, সেসব ঘটনাই কেবল গণমাধ্যমে আসছে। যারা ধরা পড়ছে না, তারা খাঁটি বাংলাদেশি হিসেবেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।

প্রথম আলোর খবরমতে, এমআরপি নিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় ৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অভিবাসন পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে ধরা পড়েন পাঁচ রোহিঙ্গা তরুণ। তঁারা কেউই বাংলাদেশের নাগরিক নন। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও স্বীকার করেছেন, ‘ভুল তথ্য দিয়ে রোহিঙ্গারা হরহামেশা পাসপোর্ট নিচ্ছে। এটা ঠেকানো যাচ্ছে না।’ আর এই কাজে তারা আঞ্চলিক অফিসগুলোই ব্যবহার করছে।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে থাকা নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬। তাদের নাম-ঠিকানা, ছবি ও আঙুলের ছাপ নিয়ে সরকার তথ্যভান্ডার তৈরি করেছে। কিন্তু নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের তথ্যভান্ডার এখনো পাসপোর্টের মূল সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত না করা রহস্যজনক। 

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর উপর্যুপরি হামলায় টিকতে না পেরে গত বছর প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সংখ্যায় কম হলেও এদের একাংশ বাংলাদেশের জনসমাজে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এর আগে আসা রোহিঙ্গাদের বেলায়ও একই ঘটনা ঘটেছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী? প্রথমত, রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব শরণার্থী শিবির করা হয়েছে, সেখানেই তাদের চলাচল সীমিত রাখা; তারা যাতে কোনোভাবেই বাইরে এসে নিজেদের বাংলাদেশি নাগরিক দাবি করতে না পারে। 

দ্বিতীয়ত, যেসব স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পাসপোর্ট অফিস ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। অন্যায় করে কেউ পার হয়ে গেলে নতুন অন্যায়ের পথ উন্মুক্ত হয়। তৃতীয়ত, সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বায়োমেট্রিক বা হাতের ছাপসহ পরিচয়পত্র দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা প্রত্যেক শরণার্থীর জন্য নিশ্চিত করা। সে ক্ষেত্রে কোনো শরণার্থী বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট করতে সক্ষম হবে না। 

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সম্পাদকীয়/ জুলাই ১৮,২০১৮

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ঢাবির শিক্ষকরাও


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানীর পদত্যাগ দাবি করেছেন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে তারা ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

এতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার স্থিরচিত্রসহ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ১৪ ছাত্রলীগ নেতার নাম উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়।

নিরাপদ ক্যাম্পাস ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে আলাদাভাবে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

এদিন দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান। ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষকরা।

এগুলো হল- বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশ; ২৩ জুলাই কলাভবনের সামনের বটতলায় নিপীড়নবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কাছে শিক্ষক লাঞ্ছনার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য অবিলম্বে পত্র প্রেরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্বতা রক্ষা, একাডেমিক মান সমুন্নত রাখা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের কাছে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের উদ্যোগে শিগগিরই স্মারকলিপি প্রদান। ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের অব্যাহত হামলা ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে ভিসি কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় প্রক্টরের পদত্যাগসহ কয়েক দফা দাবিতে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দেন তারা। স্মারকলিপি দেয়ার সময় সেখানে প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী উপস্থিত ছিলেন। স্মারকলিপিটি পড়ে শোনান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু রায়হান।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস করে এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটক ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে লাগাতার প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় ১৫ জুলাই শহীদ মিনারে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করা হলে সেখানে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা চালায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। বারবার হামলা ও নিপীড়নে অংশ নেয়া সন্ত্রাসীদের ছবি ও ফুটেজ গণমাধ্যমে এলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল টিমের অব্যাহত ব্যর্থতায় তাদের প্রতি আর বিন্দুমাত্র আস্থা রাখতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। তাই তারা অবিলম্বে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন। এতে আরও বলা হয়, প্রতিনিয়ত নিপীড়ক সন্ত্রাসী বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটরসাইকেল দিয়ে টহল দিচ্ছে। নানা জায়গায় ভয়ভীতি প্রদর্শন, হামলা ও লাঞ্ছিত করছে।

তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের পাঁয়তারা করছে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামহানি করছে। একই সঙ্গে এই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ধারাবাহিক নিষ্ক্রিয়তা শিক্ষার্থীদের সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশে নিরাপদে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা আশা করছি, নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ছাত্র-শিক্ষকদের অসন্তোষ ভবিষ্যতে পরিস্থিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে, ধারণা করছি।

শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন 

এদিকে শহীদ মিনারে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা।

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রাজ্জাক খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী প্রমুখ।
 
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক বলেন, শহীদ মিনারে সমাবেশের পরে হামলার বিষয়ে আমরা যখন প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তখন আমাদের বলা হল, আমরা কেন সমাবেশ করার আগে অনুমতি নিলাম না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩’র অধ্যাদেশের কোথাও ক্যাম্পাসে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি নিতে হবে- এমনটা বলা আছে বলে মনে হয় না। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমাদের সমাবেশের আগে আরও একটি সমাবেশ হয়েছে। তাদেরও কোনো অনুমতি ছিল বলে মনে হয় না। তানজীমউদ্দিন খান বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের আগে আমরা প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হামলা ও লাঞ্ছনার পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।

শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনে শিক্ষকদের কোনো ইন্ধন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা স্বাধীন। তাই যার ইচ্ছা হবে ক্লাস করবে, যার ইচ্ছা হবে না, সে করবে না। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। তাদের ক্লাস বর্জনে আমরা কোনো সমর্থন বা ইন্ধন দিচ্ছি না। আবদুর রাজ্জাক খান বলেন, ছাত্রলীগ কর্তৃক লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আমাদের খোঁজ নেয়নি।

উল্টো প্রক্টর আমাদের বিভিন্ন ব্লেম দিচ্ছেন। যারা আমাদের ওপর হামলা করেছে, তারা ছাত্রলীগের গুণ্ডা বাহিনী। তারা কোথায় পড়াশোনা করেছে, তা জানি না। তাদের ভাষা খুবই খারাপ। ছাত্রলীগ তাদের ঐতিহ্য জানে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে ছাত্রলীগ এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

যদি এখনই কিছু করা না যায়, তবে ছাত্রলীগের এমন গুণ্ডামি থামানো যাবে না। ছাত্রলীগের কমিটি নেই বলে যারা ছাত্রলীগের ওপর হামলার দায় দিতে চান না, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সামিনা লুৎফা বলেন, শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলন নিজেদের ইচ্ছামতোই করেছে। কিন্তু যখন তারা ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হল, তখন শিক্ষক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর যখন হামলা হয়েছে, তখন আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আমরাও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি। আমাদের বিভিন্ন ব্লেম দেয়া হয়েছে, গালাগাল দেয়া হয়েছে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরাই শুধু নয়, আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ সময় তিনি নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মানববন্ধন

এদিকে গত কয়েকদিন ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের অব্যাহত হামলা ও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকালে মোকাররম ভবন এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় তারা নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানান। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের লেখা সংবলিত প্লাকার্ড ধারণ করেন।
 
তারা বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যেসব অন্যায়-অত্যাচার হচ্ছে, তার বিচার দাবির অধিকার আমাদের আছে। সেই স্বাধীনতায় কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’ এ সময় এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘২ জুন আমাদের বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মিঠুকে শাহবাগ ওভার ব্রিজের ওপর থেকে ধরে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু সন্ত্রাসী পাবলিক লাইব্রেরির মধ্যে নিয়ে মারে। সে এখনও অসুস্থ। তার চিকিৎসার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় বহন করছে না।’

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এসএম শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে। তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। এমনকি তারা শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করতেও দ্বিধা করেনি। আমরা ক্যাম্পাসে অনিরাপদ বোধ করছি। আমরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের বিচার চাই।

  • কার্টসিঃ যুগান্তর/জুলাই ১৮,২০১৮ 

Bank's shady foreign exchange dealings

BB must act against money laundering

The Bangladesh Bank (BB) has found that a state-owned bank is openly skirting rules when it comes to foreign exchange transactions. Several major business houses which have been allowed to open letters of credit (LC) and transfer funds abroad, have not submitted bills of entry, which is a proof of goods entering country. 

This opens up the possibility of money laundering and that is a very serious matter. That BB has sent letters to the bank repeatedly which have gone unanswered merely reinforces the notion that certain bankers may be in on this scam and we are witnessing major flight of capital from the country.

That repeated BB warnings to a particular state-owned bank are being ignored is a warning sign about irregularities in the public banks where financial indiscipline is becoming the norm. 

The central bank's guidelines are straightforward enough. Banks must ensure that any importer that has bills of entry pending beyond the stipulated period of four months is not allowed to open new LCs. And it is here we see the flouting of rules, as repeat offenders get to open LCs, although they have failed to submit certified invoice of imported goods. 

The question here is really quite simple. Does the regulator have the powers to force banks to adhere to its rules or not? Unless BB rules are followed, the banking sector will continue to slip into disarray where political clout will keep plaguing an already troubled state-owned banking sector and merely aid in its downward spiral

  • Courtesy: The Daily Star /Editorial/ Jul 18, 2018

ইলিশের অভয়ারণ্যে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র!


বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনের ১২ ভাগ হলো ইলিশ। দেশের জিডিপির ১ শতাংশে রয়েছে এর অবদান। প্রায় ৫০ হাজার জেলে এই মাছের ওপর নির্ভরশীল।

ইলিশ কেবলমাত্র আমাদের জাতীয় মাছই নয় জাতীয় সম্পদও বটে। জাতীয় এই সম্পদ রক্ষায় ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ২,৪০০ মেগাওয়াট রূপপুর পরমাণু প্রকল্পের দ্বিতীয় বিদ্যুৎ প্লান্টের জন্য যে স্থানটি নির্বাচন করা হয়েছ, তা ইলিশের অভয়ারণ্য।

ইতোমধ্যে মেঘনা নদীর তীরে বরিশাল জেলার হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের মধ্যবর্তী স্থানে দুই হাজার একর জমি নির্বাচন করছে বাংলাদেশ আনবিক জ্বালানি কমিশন। স্থানটি। এলাকাকেই সরকার সম্প্রতি ষষ্ট ইলিশ অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছিল।

প্রকল্প পরিচালক এ এফ এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যুৎ প্লান্টটির জন্য আমরা তিন-চারটি জায়গা দেখেছি। পানির প্রাপ্যতা ও জনসংখ্যার বিচারে এটিকেই আমাদের কাছে সবচেয়ে ভালো মনে হয়েছে।’

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে ইলিশ উৎপাদনে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। 

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ সালে বাংলাদেশ বছরে ৪৯৬,৪১৭ টন ইলিশ উৎপাদন করেছে। রফতানির মাধ্যমে এ থেকে বৈদেশিক মুদ্রাও এসেছে। ধরা পড়া ইলিশের মধ্যে ৬৫ ভাগ সাগরের, বাকিটা নদীর।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র প্রিন্সিপাল রিসার্চ অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, ‘ইলিশ হলো বিশ্বের সবচেয়ে স্পর্শকাতর জলজ প্রাণির অন্যতম। এতে সতর্কভাবে পরিচর্যা করা প্রয়োজন। পরমাণু ও বিদ্যুৎচালিত বিদ্যুৎ প্লান্টের মতো ভারী শিল্প অভয়ারন্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

তিনি বলেন, ‘পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রচুর পানির দরকার হয়। নদী থেকে পানি তুলে এর টাওয়ারকে ঠাণ্ডা করে গরম পানি আবার নদীতেই ফেলা হয়। এই গরম পানি সাধারণত মাছসহ নানা জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে করে পুরো প্রতিবেশব্যবস্থাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

এ ব্যাপারে এ এফ এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের হাতে পাওয়া সেরা জায়গাটিই নির্বাচন করেছি। আমরা এখন পরিবেশগত মূল্যায়ন করব। যদি দেখা যায়, ইলিশ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তবে আমরা অবশ্যই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

  • কার্টসিঃ ব্রেকিংনিউজ/জুলাই ১৮, ২০১৮ 

Trace out missing quota reform leader

Police refusal to record GD incomprehensible


At the time of writing this editorial, there is still no sign of Tarek Rahman, a quota reform leader who has been missing since Saturday. What is so deeply worrying is that Tarek's mother has still not been able to file a general diary due to the alleged non-cooperation of the two police stations Motijheel and Shahbagh which gave excuses of a “lack of jurisdiction” and the requirement of “verifying” the complaint first.

These developments are disturbing to say the least, simply because of the contradictory statements issued by the said police stations when contacted by this newspaper. The OC of Shahbagh police station was not even aware of the matter and the OC of Motijheel police station denied outright that Tarek's family members had ever visited the station. These statements are hardly plausible.

Several quota reform leaders had similarly gone “missing” only to be found under police custody a few days later. And given the crackdown on quota reform activists by law enforcing agencies, Tarek's case merits special attention and cannot be swept under the rug by using flimsy excuses.

The law mandates the police to investigate the case and allow the family members to file a GD wherever appropriate. Access to justice and equal protection of the law are every citizen's constitutional right. That Tarek's mother has still not been able to file a GD due to various pretexts put forth by the police stations is a violation of this fundamental right. The DMP has now said that they are looking into Tarek's case and they should extend full cooperation to his family to ensure justice for him and his family. 

  • Courtesy: The Daily /Editorial/ Jul 18, 2018

Tuesday, July 17, 2018

গণতন্ত্র তো নৈতিকতাও

এমাজউদ্দীন আহমদ

গত দুই মাসে দুটি সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমটি খুলনা সিটি নির্বাচন শেষ হয়েছিল ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটিসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে। খুলনা সিটি নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশনের কাছে বিভিন্ন মহলের দাবি ছিল, খুলনায় উত্থাপিত অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার। এ কথাও বলা হয়েছিল, খুলনার তিক্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত করার সর্বাত্মক প্রয়াস যেন তারা রাখে। 

এসব দাবি নির্বাচন কমিশন আমলে নিয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়নি গাজীপুর সিটি নির্বাচনে। তারা তাদের সেই পুরনো রেকর্ডই বাজিয়েছে। গাজীপুরে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হলেও অনিয়মের অভিযোগ ছিল আরও বিস্তৃত। সামনে আরও তিনটি সিটিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা আশঙ্কা নিয়েই শুরু হয়েছে প্রচার কার্যক্রম। এই তিনটি সিটিতে কি বিগত দুই সিটির নির্বাচনেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে- এমন প্রশ্ন সঙ্গত কারণেই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন ও সুশাসনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। এ কথা তো সত্য যে, জনবান্ধব রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দক্ষ-নির্মোহ কর্মকর্তারাই সুশাসন নিশ্চিত করতে পারেন। এর সঙ্গে উন্নয়নের বিষয়টিও জড়িত। প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা যদি চাপমুক্ত থাকতে না পারেন কিংবা তারা যদি নিজেদের জনগণের সেবক মনে না করে দল কিংবা কোনো মহলকে তুষ্ট করতেই মনোযোগী হন, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব সমাজ ও রাষ্ট্রে পড়তে বাধ্য। আমাদের প্রশাসনের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রায় সব স্তরেই কমবেশি গলদ রয়েছে। এর জন্য ব্যবস্থা যেমন দায়ী, তেমনি ক্ষমতাসীনদের মানসিকতাও দায়ী। সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উচ্চারণসর্বস্ব অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি কোনোই ইতিবাচক ফল দিচ্ছে না। কেন দিচ্ছে না, এর পেছনের কারণ কী তা দেশের সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন। 

আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত মান নিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা-বিশ্নেষণ নিষ্প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা মোতাবেক সুশাসন নিশ্চিতকরণের পথে অন্তরায় কী তা যেমন সচেতন মানুষ মাত্রই জানা, তেমনি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নানা দুর্বলতার কারণে প্রশ্নমুক্ত, অবাধ, স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলোও অজানা নয়। খুলনার মতোই গাজীপুর সিটি নির্বাচনেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টরা কেন্দ্রে থাকতে পারেননি- এই অভিযোগ শুধু বিএনপির তরফেই উত্থাপিত হয়নি, গণমাধ্যমেও এই সংবাদ প্রকাশিত-প্রচারিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যালট পেপারে বলপূর্বক সিল মারার চিত্র চোখে পড়েছে গণমাধ্যমেরই কল্যাণে।

যে নির্বাচনে প্রার্থীর এজেন্টরা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে পারেননি কিংবা থাকতে দেওয়া হয়নি সেই নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত হয়েছে তা কী করে বলা সম্ভব? এ হলো অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার একটি দিক। এ ছাড়াও তো আরও নেতিবাচক চিত্র আমাদের সামনে রয়েছে। যে কোনো নির্বাচনে সমতল ভূমি নিশ্চিত করার বিষয়টি সর্বাগ্রে জরুরি। ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করাও সমভাবেই জরুরি। প্রার্থীর এজেন্ট কেন্দ্রে উপস্থিত আছেন কিনা, তিনি তার দায়িত্ব ভীতি বা চাপমুক্তভাবে পালন করতে পারছেন কিনা- এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দায়দায়িত্ব রয়েছে। নির্বাচনে অনিয়ম-অস্বচ্ছতার অভিযোগ উত্থাপিত হলে তা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে আমাদের গণতন্ত্রের জন্য তা শুভ হবে না। এর পরিণতি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াতে পারে। নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবার প্রতিই থাকবে নির্মোহ, এটিই তো স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই প্রত্যাশা বারবার হোঁচট খাচ্ছে। এই যখন অবস্থা তখন বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়ে নিরুদ্বিগ্ন থাকার অবকাশ আছে কি? সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব অন্তরায় বিদ্যমান সেসব নিরসনে নির্বাচন কমিশন কতটা আন্তরিক- এমন প্রশ্নের উত্তর প্রীতিকর নয়। সু

ষ্ঠু, অবাধ, প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনই সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতকরণের পথ সুগম করতে পারে। দায়িত্বশীলদের সব ক্ষেত্রেই সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠ থাকতে হবে- এই দাবি নানা মহল থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে বারবার উঠছে। আমরা আশা করি, দায়িত্বশীলরা এসব যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক হবেন।

জনমনে এই শঙ্কা সঙ্গতই এখন প্রকট যে, আসন্ন তিন সিটির নির্বাচনেও খুলনা-গাজীপুর মডেল বাস্তবায়ন করা হতে পারে। যদি এমন নির্বাচনই হয় তাহলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা আরও বাড়বে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশাটা মাঠে মারা যেতে পারে। অনিশ্চিত সংকটের মুখোমুখি হতে পারে দেশ। মানুষ চায় নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তারা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুক। সত্যিকারভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে একটি নির্বাচন করতে যেসব পূর্বশর্ত প্রয়োজন এর অনেক কিছুরই ঘাটতি ছিল খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে। 

খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আগে বিতর্ক ছিল এবং দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নির্বাচনের পর তা আরও পুষ্ট হয়। এ অবস্থায় হতে যাচ্ছে বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী সিটি নির্বাচন। নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এটি সত্য; কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাও অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারকে অবশ্যই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাইতে হবে। সরকার যদি সুষ্ঠু কিংবা প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন না চায় এবং এ জন্য যথাযথ সহযোগিতা না করে, তাহলে কোনোভাবেই প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সরকার হলো এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সহযোগী শক্তি এবং কমিশনকে যথাযথ সহযোগিতা দান করা সরকারের কর্তব্য। নানাভাবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হয়। এভাবে চললে সংকট বাড়বে। বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট সিটি নির্বাচনে যদি খুলনা-গাজীপুরের ঘটনাবলিরই পুনরাবৃত্তি ঘটে, তাহলে আমাদের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য তা শুভ হবে না।

এ কলামেই কয়েকদিন আগে লিখেছিলাম আমাদের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি ও বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে। দেশে ভিন্ন মতাবলম্বীদের সভা-সমাবেশ করাসহ অন্যান্য অধিকারের পথ যেন ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রক্তস্নাত বাংলাদেশের সংবিধানে সবার সমান অধিকারের কথা লেখা আছে। কিন্তু বাস্তবে কি এর প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়? সমাজ ও রাষ্ট্রে নাগরিকরা ভয়মুক্ত থেকে অধিকার ভোগ করবেন, এটিই তো স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতা যেন আর বিনষ্ট না হয়, সেটিই আমাদের দাবি। 

র্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে গণতন্ত্রের উপাদান কতটা আছে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এমন প্রশ্নও দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা এখানে নিয়ন্ত্রণমুক্ত নয়। আর এ কারণেই জবাবদিহি-দায়বদ্ধতার পাটও ক্রমেই চুকে যাচ্ছে। সাংবিধানিক সংকট আর রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। বিদ্যমান সংকট নিরসনে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, তারা মানুষের অধিকারের সমতল ভূমি নিশ্চিত করতে প্রতিবন্ধক নন। পরমতসহিষুষ্ণতা, সমান অধিকার নিশ্চিত করা, ভীতিমুক্ত পরিবেশে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়া ইত্যাদি হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ। 

এসব বিষয় আমাদের নাগরিক ও রাজনৈতিক মহলে কতটা নিশ্চিত- এ প্রশ্নের উত্তরও প্রীতিকর নয়। তারপরও আমরা প্রত্যাশা করি, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে দায়িত্বশীলরা আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন।

আসন্ন তিনটি সিটি নির্বাচন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য কি হবে? পারবেন কি ভোটদাতারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে? ভোট প্রার্থীরা কি পারবেন তাদের নির্বাচকমণ্ডলীর সঙ্গে নিরাপদে যোগাযোগ করতে? এসব প্রশ্নের সার্থক উত্তর দেওয়ার দায়দায়িত্ব যাদের, তারা যদি নিজ নিজ দায়িত্ব নির্মোহভাবে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পালনে ব্রতী হন, তাহলেই নেতিবাচকতার পথ সংকুচিত হতে পারে। গণতন্ত্র তো শুধু একটি শাসন ব্যবস্থা নয়, গণতন্ত্র এক ধরনের নৈতিকতা। এক ধরনের পরিশীলিত কর্মপ্রবাহ। আমাদের দায়িত্বশীলরা এসব বিষয় ভুলে না গেলেই মঙ্গল।

  • সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী
  • কার্টসিঃ সমকাল/ জুলাই ১৭,২০১৮