Search

Sunday, August 19, 2018

ক্ষমা চাইছি আঠারোর কাছে

শিক্ষার্থী আন্দোলন

নিশাত সুলতানা

বেশ কিছুদিন আগে লেখক–শিক্ষাবিদ হায়াৎ মামুদের ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রথম আলোতে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছিলেন বর্তমানে ক্ষয়ে যাওয়া মূল্যবোধের কথা। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হায়াৎ মামুদ বলেছিলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে খুব ভালো কিছু ঘটবে না।’ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মা-বাবাদের প্রতি তিনি অনুরোধ করেছিলেন, তাঁরা যেন ছেলেমেয়েদের প্রতি লক্ষ রাখেন আর চলতে বলেছিলেন সেভাবে, যেভাবে চললে আগামী প্রজন্ম পরার্থপর হয়। শুধু নিজের নয়, সবার কথা ভাবে।’

আমি খুব মন দিয়ে পড়েছিলাম তাঁর সাক্ষাত্কারটি। আমার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার প্রতিফলন পেয়েছিলাম সেদিন তাঁর এই সাক্ষাত্কারে। তবে রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন কলেজ শিক্ষার্থীর প্রাণ হারানোর সূত্র ধরে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে কেবলই মনে হচ্ছে কোথায় যেন হিসাবে বড় একটা ভুল হয়ে গিয়েছে আমাদের । আমরা কখনো উপলব্ধি করিনি উদীয়মান প্রজন্মের দৃঢ়তা, ন্যায়নিষ্ঠা আর আত্মপ্রত্যয়ের বিষয়টি। আমরা বুঝিনি, তারা হার না মানা, সত্যের প্রতি অবিচল আর পাহাড়ের মতো অটল। ভেবে দেখিনি রাত-দিন মোবাইলের স্ক্রিনে ডুবে থাকা একটি প্রজন্ম অন্যায়ের প্রতিকারে সব তুচ্ছ করে প্রয়োজনে গর্জেও উঠতে পারে। আমরা তোমাদের সক্ষমতার প্রতি উদাসীন ছিলাম, অন্ধ ছিলাম। তাই তোমাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পারার অপরাধে অপরাধী। আজ তোমাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো শিক্ষাজীবনে সাক্ষী হয়েছিলাম বেশ কিছু ঘটনার। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা, শামসুন নাহার হলে মধ্যরাতে পুলিশি নির্যাতন ইত্যাদি। ঘটনার প্রতিবাদে সেসব আন্দোলন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রায় অকার্যকর করে ফেলেছিল। শামসুন নাহার হলের ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে গড়ে তোলা আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত পতন ঘটেছিল তৎকালীন উপাচার্য আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর। 

মনে পড়ে নিয়ম অমান্য করে ছুটে আসা এক বেপরোয়া বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছিল শামীমা আক্তার (হ্যাপি) নামের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী। সে ঘটনার রেশ ধরে বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সে আন্দোলনকে আমরা তোমাদের মতো বেগবান করতে পারিনি। সে আন্দোলনে আমরা সম্পৃক্ত করতে পারিনি সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে। মানুষের বিবেককে আমরা তোমাদের মতো করে নাড়া দিতে পারিনি। আমরা তোমাদের মতো অনমনীয় অবস্থান নিতে পারিনি। এমনকি আমরা সেভাবে রুখে দাঁড়াইনি তারেক মাসুদ কিংবা মিশুক মুনীরের মৃত্যুর পরও। সেদিন আমরা যদি তোমাদের মতো অনড় অবস্থান নিতাম, তাহলে হয়তো আজকে তোমাদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামতে হতো না। আর অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর মৃত্যুর তালিকাটাও হয়তো এতটা লম্বা হতো না।

এত দিন আমরা শুধু চুলচেরা বিশ্লেষণ করে চলেছি, তোমরা কী করো না, কী জানো না, কী পারো না, কী শিখতে চাও না ইত্যাদি নিয়ে। এই নেতিবাচক বিশ্লেষণের আড়ালে ঠিকমতো করা হয়ে ওঠেনি তোমাদের ইতিবাচক দিকগুলোর বিশ্লেষণ। বুঝতে পারিনি তোমাদের শিক্ষার আর তোমাদের জ্ঞানের পরিধির স্কোরকার্ড নিয়ে বসে থাকা এই বড়রাই আসলে এক-একটি কূপমণ্ডূক, নিরেট মূর্খ। আমরা বড়রা যেমন সব সময় চোখে আঙুল দিয়ে তোমাদের শেখাতে আসি, তোমরা কিন্তু তেমনটি করোনি মোটেই। বরং সুনিপুণভাবে তোমরা আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিবেকের কাঠগড়ায়। প্রশ্ন করেছ আমাদের আদর্শ, সততা আর মূল্যবোধ নিয়ে। প্রশ্ন করেছ রোজ অন্যায় করা আর অন্যায় সয়ে যাওয়া এই মানুষগুলোর অনুভূতির কাছে। প্রতিবাদের মার্জিত ভাষা যে এতটা শক্তিশালী হতে পারে, তা কি এই দেশে আগে কেউ জানত! প্রতিবাদের এই অনন্য ভাষা তোমরা কোথায় শিখলে? বইয়ের পাতায় তোমাদের যা শিখিয়েছি, তা আমরা নিজেরা বাস্তব জীবনে করে দেখাইনি। তাই আদৌ তোমাদের শিক্ষা দেওয়ার কোনো যোগ্যতা কি আমাদের আছে?

শৈশবে আমরা পড়েছি, ‘অ তে অজগর ওই আসছে তেড়ে।’ এ যুগের শিক্ষাবিদেরা বলেন, শিশুদের অজগরের ভয়ে ভীত না করাই ভালো। ভয় নাকি শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকর। তাই অজগরের পরিবর্তে অজ অর্থাৎ ছাগলকে বইয়ের পাতায় নিরাপদে আমরা গাছেও তুলেছি। আর ওদিকে বেপরোয়া গতির বাস-মিনিবাসসহ হাজারো রকম আতঙ্ক, যৌন হয়রানি আর প্রতারণার মরণফাঁদ যে প্রতি মুহূর্তে অজগরের চেয়ে হাজার গুণে শক্তিশালী হয়ে আমাদের সন্তানদের তাড়া করে ফিরছে, তা কি শিক্ষাবিদসহ দেশের নীতিনির্ধারকেরা কখনো ভেবে দেখেছেন!

তথাকথিত ডিজিটাল বাংলাদেশকে শাসকগোষ্ঠী বাহবা দেয়। আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করি, চাঁদে পা রাখার স্বপ্নের কথা বলি জোর গলায় আর ওদিকে বাস্তবায়নযোগ্য হাজার হাজার স্বপ্ন রয়ে যায় অধরা। এত সব বৈসাদৃশ্য তরুণ রক্ত মানবে কেন? তাই আমাদের মরচে পড়া, হার মানা অস্তিত্বের কোনো যোগ্যতা নেই তরুণ রক্তকে নতুন কিছু শেখানোর। আমরা পরাজিত, লজ্জিত ও ধিক্কৃত। আমরা বড়রা শুধু জানি কীভাবে তোমাদের নিখাদ সত্যের সংগ্রামে ভেজাল মেশাতে হয়। তোমাদের শেখানোর সব যোগ্যতা আমরা হারিয়েছি। তাই তোমরাই আমাদের নেতৃত্ব দাও, আমাদের পথ দেখাও।

কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ১৯,২০১৮ 

Saturday, August 18, 2018

আন্দোলনকৃত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি

  • খেতে বেরিয়েছিলেন সাবের আহমেদ
  • পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছিলেন আমিমুল এহসান
  • রাজনীতি করতেন না সাখাওয়াত
  • ক্লাস করে কক্ষেই ছিলেন তারিকুল
  • টিউটরিয়াল শেষে ফিরছিলেন রেদওয়ান

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র দাইয়ান নাফিসের মা ১৯৭৯ সালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর মামা জেলার আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী ঘরানার পরিবারের সন্তান দাইয়ানকে ৮ আগস্ট গুজব ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশে সোপর্দ করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

দাইয়ানের মা নছিবা বেগম পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের ডেমনস্ট্রেটর। বাবা নজরুল ইসলাম দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান। দাইয়ানের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা বলছেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন দাইয়ান। ফেসবুকে নিজের প্রোফাইল পিকচার বদলে তিনি একটি পোস্টারের ছবিও দিয়েছিলেন।

নছিবা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই তাঁর ছেলে পড়ুয়া। স্কুলে রোল সব সময় এক-দুইয়ের মধ্যে ছিল। নটর ডেম কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার পর বুয়েটে ভর্তি হন। কখনোই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল না।

দাইয়ান ছাড়াও ৬ আগস্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ২২ শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল, তাঁদের কারোরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে তাঁদের পরিবার। দুই তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই জুলহাস মিয়া ও ভাটারা থানার এসআই হাসান মাসুদ প্রথম আলোর প্রশ্নের জবাবে বলেন, তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

দাইয়ান গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এবং অন্যরা পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে এখন কারাগারে। দাইয়ানসহ গ্রেপ্তার ২৩ ছাত্রের মধ্যে ২০ জনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে প্রথম আলো। এর মধ্যে ৩ জনের পরিবার বলেছে, তাঁরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। অপর একজনের বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন আর একজনের দাদা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। বাকি ১৪টি পরিবার ও তাদের এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা নেই। একজনের বাবা একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। বাকি তিন শিক্ষার্থী সীমান্ত সরকার, মাসাদ মর্তুজা বিন আহাদ ও রেজা রিফাত আখলাকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ২৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছয়জনের ছবি প্রথম আলো পেয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের স্বজনদের দাবি, তাঁদের সন্তানেরা সংঘর্ষে অংশ নেননি। ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময়, কেউ দুপুরের খাবার খেয়ে বেরোনোর পর, কেউ পরীক্ষা দিয়ে বেরোনোর পর গ্রেপ্তার হন। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর মেসে ফেরার পথেও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা কাউকে কাউকে রাস্তা থেকে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন।

খেতে বেরিয়েছিলেন সাবের আহমেদ

এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাবের আহমেদের বাড়ি টাঙ্গাইলের করটিয়া ইউনিয়নের মীরের বেতকা গ্রামে। তাঁর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, সাবের ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির ছেলে। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। তাঁর বাবা আবু সাঈদ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি মারা যান। তাঁর মা মির্জা শাহীনা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার দিন কাজের বুয়া না আসায় সাবেরদের মেসে রান্না হয়নি। তাই বিকেলের দিকে খেতে বের হন। এ সময় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছিলেন আমিমুল এহসান

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র আমিমুল এহসান ওরফে বায়োজিদ পরীক্ষা দিতে সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। বাবা আজাহার আলী অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসাশিক্ষক। বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার তালোড়া বাইগুনি গ্রামে। সেখানে মা বিলকিস বেগম বলেন, আমিমুল পরীক্ষা দিয়ে বসুন্ধরা এলাকায় তাঁর কক্ষে ফিরছিলেন। রাত ১০টার দিকে তাঁরা গ্রেপ্তারের খবর পান। তাঁদের পরিবার ও সন্তানেরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে জানান তিনি।

নূর মোহাম্মদের গ্রামের বাড়িতেও গিয়েছিল পুলিশ

সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩৪ ব্যাচের ছাত্র নূর মোহাম্মদ সাবেক সেনা কর্মকর্তার ছেলে। তাঁদের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদীর চরতারাকান্দী গ্রামে। ৬ আগস্ট গ্রেপ্তারের দুই দিন পর পুলিশ তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এলাকাবাসী বলেন, পরিবারটির কেউই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁর বাবা মো. সিরাজুদ্দীন এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটির কাজ করেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের জন্য অনেক ছাত্রই তো পথে নেমেছিল। আমার ছেলেও নাকি সেখানে ছিল। আমি অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছি। এমন অবস্থায় কী করব বুঝতে পারছি না।’

মুশফিককে পুলিশে ধরিয়ে দেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মুশফিক ৬ আগস্ট পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় নিজের বিভাগের কক্ষেই থাকার কথা বাবাকে জানিয়েছিলেন। ঘটনা শেষে মেসে ফেরার পথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে পুলিশে ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন বাবা মাহবুবুর রহমান। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বলেন, মুশফিক কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তাঁর বাবা বলেন, সংঘর্ষের সময় মুশফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলায় বিভাগের কক্ষে দরজা-জানালা বন্ধ করে বসে ছিলেন। পরে তিনি জানতে পেরেছেন, কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে মেসে ফেরার পথে বাড্ডা থানার কাছে গলায় ঝোলানো আইডি কার্ড, পিঠে ব্যাগ দেখে বাড্ডা এলাকার ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা ধাওয়া করেন। তাঁরা সাত-আটজন দৌড়ে পাশের এক বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েও রক্ষা পাননি। হাতিবান্ধা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর খান বলেন, ‘তাঁকে কোনো রাজনীতি করতে দেখিনি। কোনো দিন কোনো মিছিল-মিটিংয়েও দেখিনি। এই ছেলে থানা কিংবা পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে পারে, এটা আমার বিশ্বাস হয় না।’

রাজনীতি করতেন না সাখাওয়াত

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। তাঁর মা শেফায়া বেগম রংপুরে একটি সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছিলেন রংপুর সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস। তিনি তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

রাশেদুলের পরিবার আ.লীগের সমর্থক

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র রাশেদুল ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দলের যুক্ত ছিলেন না বলে তাঁর পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তাঁর বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ধুঞ্চি গ্রামের গোদার বাজার এলাকায়। তাঁর বাবা আব্বাস আলী কবিরাজ বলেন, ‘আমার ছেলে রাজনীতি করে না। কোনো মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নেয় না।’

ক্লাস করে কক্ষেই ছিলেন তারিকুল

সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর চার বছর ধরে বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে মা গ্রামের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। এক বছর পরই ছেলে তারিকুল ইসলাম পরিবারের হাল ধরবেন এমনটাই ধরে রেখেছিলেন মা তাছলিমা ইসলাম। কিন্তু ছেলের জন্যই তিনি এখন বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। ধরনা দিচ্ছেন পুলিশ, আদালত আর আইনজীবীর কাছে।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র তারিকুল ইসলামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার দীঘলী ইউনিয়নের পূর্ব দীঘলী গ্রামে। দীঘলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (পূর্ব দীঘলী গ্রামের) মো. জাহের বলেন, তারিকুল খুবই ভালো ছেলে।

আওয়ামীপন্থী চেয়ারম্যানের ছেলে ইখতেদার

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র ইখতেদার হোসেনের বাবা ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর ও তারাকান্দা) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ হায়াতুর রহমানের একান্ত সচিব ছিলেন। বাবা এবাদত হোসেন প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলার সময় কেঁদে ফেলেন। বলেন, ‘মনটা খুব অস্থির। আমার ছেলে কোনো কিছুতেই ছিল না। প্রতি ঘণ্টায় আমি তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। সে কোনো দিন মিছিলেও যায়নি। অযথাই পুলিশ তাঁকে নিয়ে গেছে।’

টিউটরিয়াল শেষে ফিরছিলেন রেদওয়ান

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রেদওয়ান আহমেদ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করেছে পরিবার। শুধু তা-ই নয়, ঘটনার দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টিউটরিয়াল পরীক্ষা শেষে বের হতেই বাড্ডা থানার পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায় বলে জানায় পরিবার।

রেদওয়ানের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাটাইয়া ইউনিয়নের শ্রীনদ্দি গ্রামে। স্থানীয় লোকজন বলেন, পারিবারিকভাবে রেদওয়ানদের পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক। তাঁর বাবা আবুল কালাম আজাদ চাঁদপুরের কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকেন তিনি। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার দিন দুপুর পর্যন্ত রেদওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউটরিয়াল পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষা শেষে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে রাস্তায় এলে পুলিশ তাঁকে আটক করে।

লাইব্রেরিতে যাচ্ছিলেন বায়োজিদ

পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে যেতে বাসা থেকে রওনা দিয়েছিলেন ইস্ট ওয়েস্টের পরিসংখ্যান বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র মো. বায়োজিদ। পথেই তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। বায়োজিদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বুধাইরকান্দি গ্রামে। তাঁর বাবা আবদুল বাতেনের বইয়ের দোকান রয়েছে। মা মরিয়াম বেগম বুধাইরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বাবা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

রাজনীতি করেন না আজিজুল করিম

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএর ছাত্র আজিজুল করিম কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে জানিয়েছে পরিবার। বাড়ি কুমিল্লা নগরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ঠাকুরপাড়া এলাকায়। তাঁর বাবা আবদুল করিম শিপিং কোম্পানিতে কাজ করতেন। এখন অবসরে আছেন। মা সুফিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। একেবারেই নিরীহ গোছের। আমি ছেলের মুক্তি চাই।’

ক্যাম্পাস থেকে ধরে নিয়ে যায় জাহিদুলকে

সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির ফার্মাসি বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের জাহিদুলের বাসা কুমিল্লার দক্ষিণ ঠাকুরপাড়া এলাকায়। পরিবার বলছে, ঘটনার দিন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নাম দিতে তিনি ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন। তখন পুলিশ তাঁকে আন্দোলনকারী ভেবে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বাবা জাকিরুল হকের কুমিল্লা শহরে ওষুধের দোকান রয়েছে। মা জাহানারা হক গৃহিণী। প্রিজন ভ্যানের গ্রিল ধরে জাহিদুলের কান্নার একটি ছবি ১০ আগস্ট প্রথম আলোয় ছাপা হয়। রিমান্ড শেষে ওই দিন গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের আদালতে এনেছিল পুলিশ। জাহিদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা সেই পত্রিকাটি পাশে নিয়ে কাঁদছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে নিরপরাধ।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ একরাম হোসেন বলেন, ‘কুমিল্লার দুটি ছেলেই কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। এলাকায় তাদের কোনো বদনাম নেই। যতটুকু শুনেছি, ঘটনার দিন তাদের ক্যাম্পাস থেকে ধরে নিয়ে যায়।’

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান মেহেদী হাসান

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এ এম মেহেদী হাসান খানের বাড়ি যশোরের অভয়নগরের এক্তারপুর গ্রামে। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, তাঁর দাদা এম এ ফাত্তাহ খান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। পরিবারের সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। তবে তাঁরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। মেহেদী হাসানের বাবা মাসুদ খান অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব কর্মকর্তা।

মেহেদীর মা লিলিনা খাতুন বলেন, ওই দিন হোটেল থেকে খেয়ে বের হয়েছিলেন তাঁর ছেলে। এরপর পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে দেখছিলেন। এ অবস্থায় পুলিশ আটক করে বলতে থাকে, মুঠোফোনে ছবি তুলছিলেন মেহেদী। এরপর তাঁকে থানায় নিয়ে যায়।

ক্লাস শেষে ফেরার পথে গ্রেপ্তার হন রিসালাতুল

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির জেনেটিক অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র রিসালাতুল ফেরদৌস কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। রিসালাতুলের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর পৌর এলাকার আঙ্গারিয়া এলাকায়। তাঁর বাবা দেওয়ান জিল্লুর রহমান ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার সময় আফতাবনগর এলাকায় পুলিশ তাঁর ছেলেকে আটক করে। উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এবং জেলা পরিষদের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, ওই ছেলেকে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে দেখেননি। কোনো দলের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততাও নেই।

মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে তর্ক, গ্রেপ্তার

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির (আইইউবি) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমদ আদনানের পরিবার বলছে, তিনি ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন না। তিনি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত নন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে আদনান ও তাঁর দুই বন্ধুর কাছ থেকে পুলিশ মুঠোফোন কেড়ে নেয়। এ নিয়ে তর্কাতর্কি করায় পুলিশ তাঁদের আটক করে।

আদনানের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সদর ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামে। তাঁর বাবা সৌদিপ্রবাসী ব্যবসায়ী জামিল আহমদ। মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা ছাতক সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুহিবুর রহমান বলেন, একসময় জামিল আহমদের বাবা আওয়ামী লীগ করতেন। এরপর পরিবারের কেউ আর রাজনীতিতে জড়িত হননি। ছেলে হিসেবে আদনান খুবই ভদ্র ও শান্ত বলেই তাঁরা জানেন।

ইফতেখারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই

গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থী ইফতেখার আহম্মদ প্রীতমের বাড়ি ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের গজারিয়া কান্দি ফকিরবাড়ি। তাঁর বাবা আবু তাহের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ইফতেখারের বাড়ির পাশের স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ পরিবারের কেউ প্রকাশ্য কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না, এখনো নেই।

রেজার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পায়নি পুলিশও

এইচ এম খালিদ রেজার বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামে। তাঁর বাবা সিদ্দিকুর রহমান ওরফে খসরু এলাকায় ব্যবসা করেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন।

বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, খালিদের পরিবারের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে তিনি ঢাকায় কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আরেক শিক্ষার্থী মো. হাসানুজ্জামান ওরফে ইমনের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের বকশির চর এলাকায়। তাঁর বাবা মো. ওয়াহিদুজ্জামান ওরফে দুলাল আগে আদমজী জুট মিলে চাকরি করতেন। অবসর যাওয়ার পর তিনি পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে গ্রামের বাড়িতে থাকেন।  তিনি একসময় চাঁদপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে ২০০৬ সালের পর তিনি রাজনীতিতে আর সক্রিয় নন।

ক্যাম্পাস থেকে বেরোনোর সময় গ্রেপ্তার জন শিহাব

শিহাব শাহরিয়ারের বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের গুনভড়ি গ্রামে। তাঁর বাড়িতে গেলে বড় ভাই সজল মিয়া বললেন, ঘটনার দিন গন্ডগোল দেখে শিহাব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই ছিলেন। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে বের হওয়ার সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিশোর ও তরুণদের আন্দোলনটা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, স্বচ্ছ ও দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন। তারা যে শৃঙ্খলাবোধ দেখিয়েছে, তা ট্রাফিকের লোকেরাও দেখাতে পারেনি এত দিন। অথচ নির্দলীয় এই আন্দোলনের ওপরই কিছু সশস্ত্র লোক হামলা চালাল। এরাই তো অপরাধী। শাস্তি তো এদের হওয়া উচিত। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা হলো না। এটা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক ও দুঃখজনক।

প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ মনে করেন, গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে তারা যে কাজটি করে দেখিয়েছে, তার জন্য তাদের প্রশংসা করা উচিত।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ১৮, ২০১৮ 

Bangladesh must end crackdown on student protests: AI


Nearly 100 arrested till yesterday, it claims



The Bangladeshi authorities must end the crackdown on protests that has seen nearly 100 people arrested till yesterday, Amnesty International has said.

“The Bangladeshi authorities must end this crackdown and release all protestors who were peacefully exercising their human rights,” Amnesty International’s Deputy South Asia Director Omar Waraich said in a press release issued yesterday (August 17).

“The students were overwhelmingly peaceful, and only a tiny minority of people were involved in violence. Their actions must not become a pretext for an attack on civil society where dissent is punished and people live in fear that they will be arrested next,” he added.

Two weeks after thousands of school students took to the streets of Dhaka, demanding safer roads after two students were killed by a speeding bus, protesters are being subjected to intense online surveillance and arbitrary arrests.

In a series of public statements, officials of the Bangladeshi government have sought to portray the student protests as an attempt by the political opposition – Bangladesh Nationalist Party (BNP) and the Jamaat-e-Islami – to destabilise the government ahead of general elections later this year, the human rights body claimed.

Students and other activists say that they are being subjected to intensive surveillance, both online and offline, leaving them fearful of commenting on the protests on social media or even seeking medical help for injuries sustained during the protests, Amnesty International said.

“Police are using CCTV footage to identify students and pick them up. Many students who suffered injuries after the police fired rubber bullets are not even going to the hospital to receive treatment out of fear of arrest. They are still living in a lot of fear and trauma. We do not know what may happen,” Amnesty International reports quoting a student at a private university in Dhaka, who was hit by rubber bullets fired by the police on August 6.

To date, 97 students are known to have been arrested, the press release said.

At least 51 cases were filed between July 29 and August 18 this year, charging 5,000 unnamed people for a range of offences under draconian laws inconsistent with international human rights law and standards, including an arbitrary ban on “unlawful assembly”, reports Amnesty International.

“By contrast, no action has been reported to investigate and prosecute police officers that used unnecessary and excessive force against the largely peaceful protestors, or members of the pro-government student outfit Bangladesh Chhatra League, who were allegedly using machetes, tree branches and metal rods to attack students and journalists, as reported by victims and eyewitnesses,” the report added.

Photographer Shahidul Alam still detained

The authorities have also arrested three other people under Section 57 of Information and Communication Technology (ICT) Act.
These include photographer Shahidul Alam, who was arrested after giving an interview on Al-Jazeera English and remains in jail; Quazi Nawshaba Ahmed, an actress; and Faria Mahjabin, owner of a café.

“The government has itself conceded that Section 57 of the ICT Act is flawed, and yet it persists with its use,” said Omar Waraich.
“Shahidul Alam, Quazi Nawshaba Ahmed, Faria Mahjabin and all of the students who were arrested solely for peacefully exercising their human rights are prisoners of conscience. They must be released immediately and unconditionally,” added Waraich.

  • Courtesy — thedailystar.net 

একটি অন্যরকম প্রতিবাদ


মারুফ কিবরিয়া 


এটা হয়তো অন্যরকম এক প্রতিবাদ। বর্তমান শাসনব্যবস্থা, বাকস্বাধীনতা হরণ ও প্রশ্নবিদ্ধ গণতন্ত্রের প্রতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুশফিক মাহবুব ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখে গেছেন কষ্টের কথা। ক্ষোভের কথা। গত ১৫ই আগস্ট নিজ বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার পর তার এ ফেসবুক স্ট্যাটাসকে অনেকেই দেখছেন সুইসাইড নোট হিসাবে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেমুশফিকের সেই স্ট্যাটাস এখন ‘ভাইরাল’।

সর্বত্র এ নিয়ে চলছে আলোচনা। 

ঢাবির সংগীত বিষয়ের এই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করার প্রায় দশ ঘণ্টা আগে ফেসবুকে লেখেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত  শাসন ব্যবস্থায় কিছু বলার ন্যূনতম অধিকার থাকে না। এখন এটা বোঝার সময় হয়েছে যে, তোমার কণ্ঠস্বরের কোনো মূল্য নেই। তাই কথা বলা বন্ধ করুন ও সরকারের ভৃত্য হিসেবে তাদের প্রশংসা করা শুরু করুন। কি করতে হবে এবং কি করা যাবে না, শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদেরকে তা বলে দেয়। যেন সমাজ আমাদেরকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যে সমাজ আমাদেরকে জেলে পাঠানো বা হত্যা করার ক্ষমতা রাখে। এমনকি আমাদের মৃতদেহ এমন জায়গায় ছুড়ে ফেলার ক্ষমতা তাদের আছে, যেখান থেকে কেউ তা খুঁজে পাবে না। এ বিষয়ে আপনাদের অনুভূতি কি? কে তাদেরকে এই ক্ষমতা দিয়েছে? গণতন্ত্র? নাকি এটা গণতন্ত্রের নামে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ, যেখানে আমাদেরকে ক্ষমতাসীনদের প্রশংসা করতে হবে, তাদেরকে মেনে চলতে হবে। এটা কি শুধু আপনাদের হাতে বন্দুক আছে বলে? এটাই বিশ্বের সব ক্ষমতা না। বাংলাদেশি হিসেবে আমি স্বাধীনতা চাই। এমনকি এই চাওয়ার জন্য তারা যদি আমাকে হত্যা করে, তাও আমি এটা চাই’। আত্মহত্যার পর নিহত মুশফিকের বন্ধুমহলও বলেছে, মৃত্যুর আগে প্রায়ই দেশ নিয়ে, দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে নানা আড্ডায় কথা বলতো। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অনেকটাই অসন্তুষ্ট ছিল ২৪ বছর বয়সী এ শিক্ষার্থী। কিছুতেই অন্যায় দুঃশাসনকে সমর্থন করতেন না মুশফিক।  তবে এসবই যে তার আত্মহত্যার মূল কারণ হতে পারে তা ভাবতে নারাজ বন্ধুরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন্ধু বলেন, আমি মুশফিকের সঙ্গে পড়াশোনা করেছি। ওর এমন চলে যাওয়াটা মোটেও মেনে নিতে পারছি না। মুশফিক আমাদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী ছিল। যেকোনো বিষয় নিয়ে খুব গভীরভাবে ভাবতো। আমাদের অন্য বন্ধুদের চেয়ে ওকে দেখেছি খুব ভিন্ন ধাঁচের। ক্যাম্পাসে আসতো যেতো। পড়াশোনায় বেশ মনোনিবেশ করতো সে। আড্ডায় খুব কমই বসতো। হ্যাঁ এটা ঠিক যে আড্ডার মাঝে দেশ নিয়ে, দেশের নানাদিক নিয়ে খুব গভীরভাবে আলোচনা করতো। তবে এটা নিয়ে খুব বেশি যে হতাশায় ভুগতো তা বলা যাবে না। মুশফিক সংগীতের শিক্ষার্থী হলেও ব্যবসার দিকে তার খুব মনোযোগ ছিল। যতদূর জানি, স্বেচ্ছায় সংগীতে পড়তে আসেনি। তার ইচ্ছা ছিল ব্যবসা নিয়ে পড়াশোনা করার। এ নিয়ে অনেক পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু সেসব কখনো খোলাসা করে বলেনি মুশফিক। মুশফিকের এ বন্ধু আরো বলেন, আমি ওর কাছের বন্ধু হলেও জীবনের অনেক ব্যক্তিগত কথা আড়ালেই রাখতো। যতটা জানি ওর পার্সোনাল কোনো কথা স্কুল কিংবা কলেজের বন্ধুরাও জানতো না। শিক্ষাজীবনে অনেকেরই প্রেমঘটিত কোনো ঝামেলা থাকে। এসব মুশফিকের ছিল না। তাই সব দিক চিন্তা করে আমরা মুশফিকের আত্মহত্যার বিশেষ কোনো কারণ বলতে পারছি না। এটা ধারণা করছি, হয়তো পারিবারিক কোনো কারণে হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছে মুশফিক। কিন্তু তারা বন্ধুর আত্মহত্যা নিয়ে অনেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুশফিকের আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহপাঠী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সে অনেক হাসিখুশিতে থাকতো। তার কোনো আর্থিক সমস্যা ছিল না। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, সে তার বাবার সঙ্গে কথা বলে রুম থেকে বের হয়েছিল। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তার মধ্যে ক্ষোভ ছিল। সেটা আমরা আড্ডার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে কী কারণে সে আত্মহত্যা করেছে তা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যান্টনমেন্ট থানার এক কর্মকর্তা জানান, এটি আত্মহত্যা। তাছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আর কোনো অভিযোগ আসেনি। আর এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইএসপিআর-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একজন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো এখনও কোনো অবস্থা হয়নি।

আত্মহত্যার আগে দেয়া স্ট্যাটাসটি মুশফিকের প্রথম স্ট্যাটাস নয়। এর আগেও অনেকবার দেশের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সদ্য শেষ হওয়া নিরাপদ সড়কের দাবিতে নামা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তার ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট ছিল। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘অভিনন্দন, আন্দোলন মানেই যে শুধু সরকারের দোষ তা না। আন্দোলন আত্মসমালোচনার একটি উপায়। প্রায় ১০ বছর আগে আমরাই ২২৩ আসন দিয়ে এই সরকারকে এনেছিলাম, এখন ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য যদি পদক্ষেপ নেয়া হয় সেটার দায় কোনো না কোনভাবে আপনার আমার সবার। আজ আওয়ামী লীগ যা করছে বিএনপি হলে তার থেকে কম করতো না এটুকু আমি নিশ্চিত। বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে যেকোনো আন্দোলনে বিএনপি তাদের বাম হাত দিবে যাতে ক্ষমতার কিছুটা ক্ষতি তারা করতে পারে। আর আওয়ামী লীগ এই কারণটাকে পুঁজি করে আন্দোলন বন্ধ করবে। যা দেখছি তা সত্য না, যা শুনছি তাও বিশ্বাসযোগ্য না। সব গুজব। অভিনন্দন বাংলাদেশের রাজনীতিকে, গণতন্ত্রের পোস্টমর্টেম রিপোর্টও গুম করে দিয়েছে।’  


  • কার্টসি — mzamin.com 

বিক্ষোভ দমন বন্ধ ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি অ্যামনেস্টির


শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেয়ার আহবান জানিয়েছে লন্ডন ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। 

সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের সরকারকে অবশ্যই বিক্ষোভ দমন অভিযান বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে মানবাধিকার চর্চা করার দায়ে আটক বিক্ষোভকারীদের মুক্তি দিতে হবে। বাংলাদেশে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার অভিযানের কারণে ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে বলেও মন্তব্য করে সংস্থাটি। শুক্রবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। 

বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে প্রায় ১০০ মানুষকে আটক করা হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা সেখানে গণগ্রেপ্তারের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। অনলাইন জগতে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। এতে নাগরিক সমাজে ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। 

বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সহকারি পরিচালক ওমর ওয়ারেছ বলেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এই অভিযান বন্ধ করতে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে মানবাধিকারের চর্চা করার দায়ে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সিংহভাগই ছিল শান্তিপূর্ন। গুটিকয়েক কিছু মানুষ সেখানে সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত ছিল। নাগরিক সমাজের ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য এসব গুটিকয়েক মানুষের কর্মকান্ড কোন অজুহাত হতে পারে না। মানুষ আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছে যে, পরবর্তীতে তারাও গ্রেপ্তার হতে পারেন। 

অ্যামনেস্টি বলেছে, সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও শাসক দলের সমর্থকদের সংঘর্ষের পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৯৭ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৯শে জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৫ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করে অন্তত ৫১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমন একটি আইনের অধীনে এসব মামলা করা হয়েছে যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মূলনীতি ও মানদন্ডের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ন।

শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করলেও আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংসতা চালানোর দায়ে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি। বলেছে, সহিংসতায় ছাত্রলীগের ভূমিকা ও পুলিশের অতিরিক্তি বল প্রয়োগের ঘটনা তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কোন পদক্ষেপ নেয় নি কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদেরকে কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এতে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারছেন না। গ্রেপ্তার আতঙ্কে শারিরীক অসুস্থতার জন্যও কারো সহায়তা নিতে পারছেন না।  

৫৭ ধারায় আইসিটি আইনে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমদ ও ঢাকা ক্যাফের মালিক ফারিয়া মেহজাবিনকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। সংস্থাটি ওই আইনকে অস্পষ্ট, ব্যাপক বিস্তৃত ও কঠোর বলে অভিহিত করেছে। 

ওমর ওয়ারেছ বলেন, সরকার নিজেই মেনে নিয়েছে যে, ৫৭ ধারার আইসিটি আইন ত্রুটিপূর্ণ। এর পরেও তারা আইনটির প্রয়োগ করছে। শান্তিপূর্ন মানবাধিকার চর্চার দায়ে শহিদুল আলম, কাজী নওশাবা ও ফারিয়া মেহজাবিনসহ যেসব শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদেরকে ভিন্নমত পোষণ করার দায়েই গ্রেপ্তার করা হয়েছে (প্রিজনার অব কনশেন্স)। তাদেরকে অবশ্যই অবলিম্বে নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/আগস্ট ১৮,২০১৮ 

Release them before Eid

Families of students arrested over road safety demo urge govt


Retired army officer Shafiqul Islam knocked on every possible door in the last one and a half months, hoping someone would help his son Tariqul Islam get bail.

He appointed a lawyer after his son, a law student of Dhaka University, was arrested on July 3 during the quota reform demonstrations.

The 60-year-old has been travelling from home in Comilla to the capital hoping to be able to do something. But Tariqul, also a member of Chhatra League in DU, was denied bail twice.

The grieving father attended a human chain formed by the families of students detained during the quota reform and road safety demonstrations in front of Jatiya Press Club.

They demanded release of the students before the coming Eid and urged the prime minister to intervene. Rights activists and civil society members also attended the programme.

Shafiqul's son was arrested in a case filed over vandalism at the VC's residence on DU campus.

Shafiqul added that he too was a member of the Awami League in Comilla.

“I don't know where I should go None of the ruling party men I have contacted helped me,” he said, adding he had also contacted the DU authorities to no avail.

Saleha Begum, mother of arrested quota reform leader Muhammad Rashed Khan, said, “Please release my son before Eid. Let me celebrate the Eid with him.”

Since Rashed was arrested on July 1, she has been travelling from Jhenidah to Dhaka to join public events and demand his release.

Saleha said her son was never against the government.

Rights activist Nur Khan said “arbitrary” detention and arrest of students caused widespread fear. “The nation needs to be free from the fear.”

Eastern University teacher Rezaur Rahman Lenin said around 200 students were picked up and nearly 100 cases filed during the two widespread demonstrations.

Saiful Azam, a final year student of the University of Asia Pacific, said he and several other students of the university were attacked on August 5 while demonstrating on Green Road for road safety.

But instead of finding out the attackers, police picked up some of the students that evening and released them later.

Nur Khan, who helped organising the human chain, said some families of the arrestees did not attend the programme fearing reprisal.

Nagorik Oikya Convener Mahmudur Rahman Manna said no political slogan was chanted during the road safety demonstrations.

“Yet, the government was afraid of their agitation,” he said.

He also pointed out that those who attacked the students and journalists during the demonstrations remained untouched.

Gonoshasthaya Kendra founder Zafrullah Chowdhury said students being tied with ropes was not the sign of a civilised society.

“Attempts are on to keep people mum,” he said.
  • Courtesy: The Daily Star/ Aug 18, 2018

Businesswoman held, remanded

Sued under Sec 57 for 'spreading rumours, sharing provocative posts' on Facebook


Rab has arrested a woman entrepreneur in a case filed under the controversial section 57 of the ICT Act for “spreading rumours and sharing provocative posts” on social media over the recent student protest.

A Dhaka court placed her on three-day remand yesterday.

Faria Mahjabin, 28, owner of Nerdy Bean Coffee Haus in Dhanmondi, was picked up by a Rab-2 team from her home in Hazaribagh area around 10:45pm on Thursday, said Senior ASP Mizanur Rahman, assistant director (media and legal wing) of the force.

Two persons, including Faria, were accused in the case filed with Hazaribagh Police Station, sources at the police station said, without disclosing the name of the other accused.

Since the student demonstration for road safety measures began on July 29 bringing Dhaka to a standstill, more than 100 people, mostly students, have been rounded up in 53 cases in the capital alone over “causing violence and spreading rumours”, according to Dhaka Metropolitan Police.

Yesterday afternoon, Sub-inspector Majedul Islam of Hazaribagh Police Station produced Faria before Metropolitan Magistrate AKM Mainuddin Siddiqui with a seven-day remand prayer. The magistrate placed her on three-day remand.

No lawyers appeared on her behalf.

According to Rab, Faria, who had expressed solidarity with the student movement, shared some “provocative and false contents” on Facebook for “diverting the demonstration to a different direction and deteriorating law and order”.

Rab, however, did not specifically say what those contents were.

“Even after the government agreed to accept the demands of the protesters, Faria and her aides continued to try to create unrest,” Rab said in a press release yesterday.

Members of the force seized Faria's mobile phone, collected a printout of her Facebook profile and recovered an “audio clip” during the arrest, according to the release.

The other accused in the case has been shown fugitive.

This correspondent visited Faria's home on Haji Afsar Uddin Road for comments but none of her family members was there. Asked, the caretaker said they were outside.

Contacted over phone, Faria's husband Mohammad Reasat said he was not in a position to make any comment on the matter.

Hailing from Khulna, Faria did her graduation in computer science and engineering from North Western University in the district.

With Faria, at least 26 people have been arrested under the section 57 of the ICT Act on charges of spreading rumours, propaganda and fake news centring the nationwide student movement.

They were shown arrested in 12 cases -- nine filed with different police stations in Dhaka and one each with police stations in Chittagong, Sirajganj and Bogra.

Noted photographer Shahidul Alam is among the arrestees. He is now in jail.

Police said they have gathered details about a hundred social media accounts which “incited violence” centring the movement.

Another 81 people, including 22 private university students, were arrested in 43 cases filed under Code of Criminal Procedure (CrPC) and Special Powers Act over violence during the road safety protest.

The 22 students have been repeatedly denied bail by courts.

Apart from all these arrestees, many road safety and quota reform protesters were detained, interrogated and then released upon taking undertakings.

On July 29, school and college students began an unprecedented movement demanding concrete government steps to improve road safety measures following the deaths of two of their peers in a road crash in the capital.

Since then, students took to the streets for eight days in a row blockading streets for hours before things rolled over to violence.

The protesters came under attacks by the police and alleged ruling party activists on August 4 and 5.

The government and the ruling Awami League claim some vested quarters tried to capitalise on the student protests and create unrest by spreading rumours.

However, police have failed to arrest any of those who beat up and injured dozens of students and journalists during the movement.

Victims and eyewitnesses said the attackers belong to the ruling Awami League and its affiliated organisations, including Chhatra League -- something the AL has denied.   

In many cases, such attacks happened in front of the police, as seen in videos and photos published in the media. In other cases, police and the attackers, some wearing helmets and carrying sticks, metal bars and machetes, were seen launching joint attacks on the protesters.
  • Courtesy: The Daily Star/ Aug 18, 2018

Home trips begin with hassles

Eid holidaymakers start leaving city; insufficient ferry service, huge number of vehicles cause tailbacks


With the Eid-ul-Azha only four days away, homebound people have already started leaving the capital. But like every year, most of them were caught up in tailbacks on highways, although the exit points were fairly clear yesterday.

Bus and launch terminals and railway stations in the city were heavily crowded with holidaymakers, with transport operators struggling to cope the pressure. The pressure is expected to rise further from today, and with it the ordeal on the highways.

This year's biggest headache seems to be inadequate ferry service at both the ferry terminals. Ferry service on Shimulia-Kathalbari route was partially suspended last week as water level fell in some parts of the Padma river. This has created an immense pressure on the Paturia-Daulatdia ferry terminal in Manikganj.

People from about 20 districts use Shimulia-Kathalbari and Paturia-Daulatdia routes.

Normally during Eid holidays, 21 ferries operate on Shimulia-Kathalbari route, carrying around 4,500 vehicles every day. But since last week, just 10 small ferries are in service, carrying only small and light vehicles such as private cars and bikes.

"We're working to assess the situation. But it seems that the route is not ready for big ferries to operate," said Shah Md Khaled Newaz, assistant general manager of BIWTC, the river port authority.

As a result, long-haul vehicles are taking the Paturia-Daulatdia route. At around 2:00pm yesterday, more than 600 vehicles were stranded on either side of the Padma. 

Apart from heavy traffic, strong current in the river is posing as another big challenge, forcing ferries to wait or take a detour, requiring double the time to cross the river.

Abdus Sattar, manager (marine) of the BIWTC's Paturia office, said usually ferries took 35-40 minutes to cross the river. Now they are taking around 80 minutes.

As a result, the number of trips has decreased, contributing to the tailback on the highway. Hundreds of people heading for southern districts were seen stuck in tailback yesterday. 

SM Ashikuzzaman, general manager (commerce) of the BIWTC, said 20 ferries were in operation on the Paturia-Daulatdia route now. Two more are expected to join the existing fleet in a couple of days.

Dhaka-Chittagong highway saw one of the worst tailbacks, stretching about 20km from Kanchpur Bridge to Megnha Bridge.

Our Comilla correspondent took a bus at Sayedabad in the capital at 10:00am yesterday and it took him a full one hour to cross the Kanchpur Bridge. He reached the Meghna Bridge around 2:00pm. 

But as the home rush is expected to increase, Eid travellers are likely to face even more ordeal on the road if the authorities fail to control vehicular movement at some key points of the highways.

Narrow roads and bridges, unplanned intersections, toll plazas and weight bridges, illegal roadside markets and the authorities' inability to control so many vehicles are responsible for the situation.

The government has chalked out a number of measures to maintain discipline on the roads. Additional police will be deployed on different highways as well as bus and ferry terminals. Also, a control room will be set up at the Road Transports and Highways Division in Dhaka to ensure smooth traffic.

The Police Headquarters at a meeting with leaders of transport owners on Thursday decided to prevent unfit vehicles from plying the roads and control reckless driving.

Train journey was relatively hassle-free. Most trains, except for two in the morning, left the Kamalapur Railway Station on time.

Private launch owners will start a 15-day special launch services from Dhaka starting today.
Under the service, 30 triple-deck private launches will ply Dhaka-Barisal route till September 1, said Saidur Rahman Rintu, vice-president of Barisal Launch Owners Association.

DHAKA-CHITTAGONG HIGHWAY

People were subjected to a 23km-long tailback between Kanchpur and Meghna Bridge on the highway, considered the economic lifeline of the country.

Buses that left the capital's Sayedabad for Chittagong around 10:00am reached Mugrapara area of Sonargaon after two hours, our Comilla correspondent reports.

Another 3km-long tailback was caused between Meghna-Gumti toll station and Daudkandi, said Abul Kalam Azad, officer-in-charge of Daudkandi Highway Police Station.

The rush of Eid holidaymakers and freight trucks has caused the tailbacks, he added.

DHAKA-MYMENSINGH HIGHWAY

Workers of a garment factory blocked the highway in Hotapara area of Gazipur for around seven hours from 9:00am demanding Eid bonus and holidays.

Tailbacks on either side reached nearly 10km, causing immense suffering to travellers.

"I got stuck in traffic in Rajendrapur area around 11:00am and had barely moved since," Alamgir Hossain, a bus passenger told this newspaper at 2:30pm.

The road was cleared around 4:00pm.

DHAKA-TANGAIL-RANGPUR HIGHWAY

A number of bottlenecks are feared to cause suffering on the road. Vehicles have to slow down at several points between Chandra and Elenga Bazar amid road expansion work.

Roads and Highways Department officials said expanded parts of the road and overpasses at intersections that were opened to traffic would ease congestion.

Authorities will deploy 700 policemen to control traffic on the highway that connects the north-western districts with Dhaka, said Sujit Kumer Roy, superintendent of police in Tangail.

Around 15,000 vehicles use the highway every day. But during the Eid, the number increases to 30,000 to 40,000, according to highway police.

DHAKA-SYLHET HIGHWAY

Holidaymakers leaving for Sylhet may suffer in tailbacks while leaving Dhaka and its outskirts.

Among the dreaded points is Narayanganj's Bhulta intersection where a flyover is being constructed.

Courtesy: The Daily Star /Aug 18, 2018

Haggling beneath the surface yields nothing fruitful

ELECTION 2018 & POST-EID SPECTACLES

Shahid Islam


Beyond the pale of the ordinary folks, haggling of an inordinate vintage has been on to bring the country’s ‘extra-parliament’ main opposition party, the BNP, into an accommodative electoral fold, according to reliable sources. This months-long beneath the surface haggling yielded no substantive result, making the top brass of the ruling party perturbed by the outcome; due mainly to what one of the sources said “the BNP being adamant and unyielding on two major counts.”

The very first demand of the BNP was that the party leader Khaleda Zia must be released from prison and make it unfettered and unconditional for her to contest the polling. The second tier of the BNP demand was to reverse to some sort of caretaker mode during the electoral interregnum, and hold the election with the constitutionally apolitical military’s umpire-ship, in order to make it fair and inclusive.

Options of the incumbent

The Holiday had learnt that, during the haggling, the option A broached by the ruling party has been to hold the election with a faction of the BNP—minus Khaleda Zia and her son Tarek Rahman, and those who chose to stick to the BNP mainstream—joining the poll.  That option has seen no light of reality, and, seems unlikely to meet its goal before an election schedule is pronounced by the EC sooner, pursuant to the electoral rules and guidelines.

The option B has been to strike a deal with the BNP as it is, Khaleda and Tarek joining the polls or not, as the law may or may not allow their participation while their convictions by the court are in execution.  The inducement to have the BNP partake into such a setup was contingent upon two dividends.

The first dividend was to offer the BNP and its allies 120 seats in total, so that the party (BNP) could return to the next parliament; preserve its registration as a political party by not boycotting two consecutive elections; and, offer the much needed legitimacy to the incumbent regime by enabling it to claim to have had an inclusive, participatory election.

Sword of Damocles

The above-cited option(s) A and B has been tried in secret by the regime and its interlocutors for good old six months; more forcefully since Khaleda Zia’s imprisonment early this year, said a source seeking anonymity. With the approach of the penultimate months of the election year, and the post-Eid crucibles to wrap a deal sooner, or hold another election without the BNP during the constitutionally-stipulated deadline, the necessity to strike a deal that has visible public acceptance and credibility has dawned upon the incumbent regime like a Sword of Damocles.

For public digest, Sword of Damocles is an opt allusion to the imminent and ever-present peril faced by those in power; like that of Damocles who was an servile courtier in the court of Dionysius II of Syracuse, a 4th-century BC tyrant of Sicily.

Unseen instability

Amidst this reality, those who think the BNP and its electoral allies can compel the government to craft and offer a caretaker/national government model—like that of the one Pakistan had devised—are wrong on two counts. First: existing Bangladesh constitution has no such model inscribed, and, amending the constitution needs very sincere, patriotic intent of the regime, which is very much amiss.  Secondly: an interim, transitional auto-mode during the interregnum that comes naturally after every five years’ interval has been tried with mixed success and much controversy since the early 1990s.

The best option for now is to arrive at a consensus first; to hold the election under the commandeering of the EC that has constitutional mandate to call for support from any quarter to execute its mission; with the help of the military, which too it’s (EC) empowered to summon under existing laws and guidelines.

As the BNP and its allies do not believe that the EC can fulfill its constitutional obligations with trust and tenacity, the BNP now, and the AL in the past, had hammered for something neutral to do that job.  That very paradigm had given birth to unseen instability first, and, emotional, explosive outburst in the streets later.

Balance of power

The governments by nature tend to be blinded by the texture and taste of power. In the end, the balance of power will decide whether the upcoming election will be held under the so called national/caretaker government, or under the incumbent one as the amended constitution prescribes, or, no election at all during the stipulated deadline for reasons that are yet to emerge due to the fear that the government had instilled in the minds of the people by indiscriminately kidnapping, killing, bashing and bulldozing its dissenters since coming to power in 2009.

During this time, the administration and the law enforcers have been recalibrated intoa partisan mode; the military remains apparently apolitical, as expected; the civic society has been induced with a fear psychosis following ‘high dose of persecutions’ meted out to many of their renown members. These ‘pockets of power’ having been neutralized, the government thinks it can sail through another electoral jaunt without much hassle. But, can it?

History shows, lack of democracy, human rights and justice stood at the root of anarchy sweeping nation-states throughout the ages. Latest examples are Iraq, Libya, Syria, Somalia, and many others. Earlier examples are turbulent revolutions that had swept France, the USA, and many other nations; including a religious revolution sweeping Iran in 1979.Only genuine leaders can stop or stir such turbulences.

One of the main differences between a genuine leader and a demagogue is that the former looks at the broader picture, grasps its content and the contours, and makes a decision to preserve or puncture the status quo as per the desire of the masses. A demagogue, on the other hand, only thinks of his or her personal and coterie interest and makes a decision to be heavy handed to preserve an otherwise untenable status quo.

The days ahead will decide whether our nation has produced true leaders; or, dreadful, despised demagogues. Any deterioration of the country’s existing social, political, economic and cultural fortifications due to an electoral ‘dog-fight’ between the ruling and opposition parties will expose their true nature to the mass, and, the indomitable thrust of the mass will decide what the tomorrow’s Bangladesh will look like. Eid Mobarak.
  • Courtesy: Weekly Holiday /Aug 17, 2018

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন - মুক্তি নেই, চলছে ধরপাকড়

এবার ঢাকার বাইরে মামলা ও গ্রেপ্তার। মোট ৫২ মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৯৯ স্বজনেরা মুক্তি চেয়ে মানববন্ধন করেছেন। 


এক মা তাঁর ছেলের সঙ্গে ঈদ করতে চান। আরেক মা চান তাঁর মেয়ে সুস্থভাবে ফিরে আসুক। রিকশাচালক বাবা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চান। বড় বোনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বদলে তাঁর মুক্তি চান ছোট বোন। এভাবে নিরাপদ সড়ক এবং সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের ঈদের আগে মুক্তি চেয়েছেন তাঁদের স্বজনেরা।

তবে স্বজনেরা মুক্তি চাইলেও কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সরকার আরও কঠোর হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানির অভিযোগে ঢাকা ও খুলনা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আন্দোলন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও যাঁরা মন্তব্য করেছেন, তাঁদেরও খুঁজছে পুলিশ। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোর ভেতরেও রয়েছে আতঙ্ক।

জানতে চাইলে পুলিশের জনসংযোগ শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে যারা মিথ্যা রটিয়েছিল, গুজব ছড়িয়েছিল, পুলিশ শুধু তাদের বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই আইনি প্রক্রিয়া যথাযথ অনুসরণ করা হচ্ছে।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় নিহত হয় দুই কলেজশিক্ষার্থী। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ওই আন্দোলনে সহিংস ঘটনা ও উসকানির অভিযোগে দায়ের হওয়া ৫২টি মামলায় এখন পর্যন্ত ৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ আগস্ট ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়সহ হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ অজ্ঞাতনামা কয়েক শ ব্যক্তিকে আসামি করে তিনটি মামলা করে। এসব মামলায় ৫ আগস্ট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের ১২ জনই বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কারও বিরুদ্ধেই পুলিশের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তাঁদের মধ্যে ১৩ আসামিকে গত বৃহস্পতিবার থেকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। এ ছাড়া কোটা আন্দোলনকারী সাত শিক্ষার্থী কারাগারে আছেন।

নারী উদ্যোক্তা আটক

ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে ফারিয়া মাহজাবিন নামের এক নারী উদ্যোক্তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-২। ফারিয়া খুলনার বেসরকারি নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি ধানমন্ডির একটি কফি হাউসের অন্যতম মালিক।

র‍্যাব-২-এর গণমাধ্যম শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-২-এর একটি দল গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে অভিযান চালিয়ে ধানমন্ডির আফসার উদ্দিন রোডের নিজেদের বাসা থেকে ফারিয়া মাহজাবিনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর কাছ থেকে একটি মুঠোফোন সেট, এক পাতা করে ফেসবুক আইডি প্রোফাইলের প্রিন্ট কপি ও অডিও ক্লিপের প্রিন্ট কপি জব্দ করা হয়।

ফারিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানায় র‍্যাব।

এবার ঢাকার বাইরে গ্রেপ্তার

খুলনা প্রতিনিধি জানান, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন থেমে যাওয়ার ১৩ দিন পর বুধবার রাতে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেছিল পুলিশ। এতে ১৩ জনের নামসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০ থেকে ২০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে চারজন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন স্থাপত্য বিভাগের ছাত্র আবদুল্লাহ আল নোমান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের মো. নাবিদ হাসান, ফার্মেসি বিভাগের মো. নাহারুল ইসলাম এবং ইংরেজি বিভাগের মো. ইমরান হাসান। ঢাকার বাইরে খুলনাতেই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হলো।

সোনাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অচিন্ত্য হালদার মামলাটি করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আন্দোলন চলার সময় ২ আগস্ট বেলা একটার দিকে নগরের শিববাড়ি মোড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে এজাহারভুক্ত আসামিসহ অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলে। তারা সাধারণের ওপর হামলা, পুলিশের গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহন ভাঙচুর, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের খেপিয়ে আন্দোলন উসকে দিয়ে ক্ষতি সাধন করে। এ ছাড়া তিন পুলিশ সদস্যকে লাঞ্ছিত করে এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে সরকারি কাজে বাধা দেয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ এই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইবনে খালিদকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আগামী রোববার রিমান্ডের শুনানির দিন ধার্য করে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

ঘটনার ১৩ দিন পর মামলা করা হলো কেন জানতে চাইলে নগরের সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের নাম-ঠিকানা, তথ্য বের করতে দেরি হয়েছে। তাই মামলা করতেও দেরি হয়েছে।

ঈদের আগে মুক্তির দাবি

‘নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ করো, গ্রেপ্তার করা শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাও’—এ ব্যানারে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় ইডেন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লুৎফুন্নাহারের মা রাশিদা খাতুন ‘আমার মেয়েকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করছি’—এটুকু বলে কান্নার দমকে বক্তব্য শেষ করতে পারেননি।

পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগের একটি দল সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার গ্রামের বাড়ি থেকে লুৎফুন্নাহার ওরফে লুমাকে তুলে আনে। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

লুৎফুন্নাহারের বোন কেয়া সরকার বলেন, ‘আমার বোন কিছু করেনি। কোনো অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত না। ইচ্ছাকৃতভাবে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এই পৃথিবীতে আমাদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই।’

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার রিকশাচালক মজিবর রহমানের ছেলে মশিউর রহমান দেড় মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মশিউর কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা। মজিবর রহমান বলেন, ‘রিকশা চালিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করাইছি। বহু কষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাইছি। আমার ছেলে কোনো অন্যায়ে জড়িত ছিল না।’

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের মা সালেহা বেগম বলেন, ‘আমার বাবা কোনো অপরাধ করেনি। আমার বাবাকে ছেড়ে দিন। বাবাকে ছাড়া আমি ঈদ করতে পারব না। ঈদের আগে বাবাকে ছেড়ে দিন।’

গতকালের মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘হাতে দড়ি বেঁধে ছাত্রদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এটা সভ্য সমাজের লক্ষণ না।’ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘মন্ত্রী, সাংসদ সবাই বলছেন, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। অথচ সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।’ আন্দোলনের সময় দায়িত্বরত সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের বিচার দাবি করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান।

দাবি না মানলে আন্দোলন

কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া সব নেতার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচার ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে ৩১ আগস্টের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে আবারও রাজপথে আন্দোলন শুরু করা হবে বলে জানান পরিষদের নেতারা। তাঁদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউল্লাহ। এ সময় যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন বলেন, ‘গুজবে কান দেবেন না’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নামে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এসব তথ্য আমলে নিয়ে ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছেন। এই পেজটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ১৮,২০১৮