Search

Tuesday, September 18, 2018

রূপগঞ্জে তিন খুন - পুলিশের এজাহারের বিবরণ প্রশ্নবিদ্ধ!

সম্পাদকীয়

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে গুলিবিদ্ধ তিন যুবকের লাশ উদ্ধার এবং এ ঘটনায় কারও গ্রেপ্তার না হওয়া উদ্বেগজনক ঘটনা। এই যুবকদের সামাজিক পরিচয় উদ্‌ঘাটিত হওয়ার পর সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে। তাঁদের পরিবার দাবি করেছে, তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তঁাদের জীবনে ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব এতটা প্রকট ছিল না, যাতে এ রকম লোমহর্ষ তিন খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনে রাখা দরকার, যে নাটকীয়তায় তিন ব্যক্তিকে ‘ডিবি পরিচয়ে’ তুলে নেওয়ার পর হত্যা করা হয়েছে, তা জনগণকে এর আগের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের কথা  স্মরণ করিয়ে দেবে।

কিছু বিষয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তদন্তের দাবি রাখে। প্রথমত, পরিবারগুলোর দাবি, এ ঘটনায় এজাহার দায়ের করতে পুলিশ উৎসাহ দেখিয়েছে। এ ধরনের অনেক ঘটনায় পুলিশ মামলা নিতে উদাসীন কিংবা শীতল মনোভাব দেখিয়ে থাকে। কিন্তু এ ঘটনায় তারা পরিবারগুলোর ‘বিলম্ব’ দেখে নিজেরাই একটি এজাহার দাখিল করেছে।

পুলিশের অতি উৎসাহ দেখানোর অভিযোগ রুটিনমাফিক হতে পারে। কিন্তু এটা খতিয়ে দেখতে হবে। তারা বলেছে, মৃত ব্যক্তিদের পক্ষে কেউ এজাহার দায়ের করতে এগিয়ে না আসায় পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এজাহার লেখা হয়েছে। কিন্তু ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের’ নাম প্রকাশ করা হয়নি।  

দ্বিতীয়ত, এজাহারের বিবরণে পুলিশ যে এতটা উদারতার সঙ্গে খুনিদের শুধুই ‘অজ্ঞাতনামা আসামি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে, তা–ও স্বাভাবিক নয়। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, পুলিশ এ ধরনের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী বা দুষ্কৃতকারীর মতো পরিভাষা ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এত বড় একটি ঘটনার বয়ানে তারা নিস্পৃহ।

তৃতীয়ত, পরিবারগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ এজাহারে বলেছে, ইমো, ফেসবুক ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যমে নিহত ব্যক্তিদের ছবি প্রকাশের পর তাঁদের আত্মীয়স্বজন এসে লাশ শনাক্ত করেছেন। অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্য স্বজনেরা দিয়েছিলেন, সেসব পুলিশ এজাহারে উল্লেখ করেনি। স্বজনেরা পুলিশকে বলেছেন, ১০ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা-যশোর রুটের পূর্বাশা পরিবহনের বাসে ওই তিনজনকেই তুলে দেওয়া হয়েছিল। ওই বাস দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট পার হয়ে পাটুরিয়া প্রান্তে এলে দুটি মাইক্রোবাস গাড়িটি ব্যারিকেড দেয়। সাদাপোশাকের ১৫-২০ জন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাস থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে যান। এই তিন হত্যার ঘটনার সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ও স্পর্শকাতর তথ্য ছিল এটি।

কিন্তু আমরা বিস্মিত যে এজাহারে কথিত ডিবি পুলিশ–সংক্রান্ত কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই। যদিও নিহত একজনের পকেট থেকে ‘৬০টি ইয়াবা’ উদ্ধারের তথ্য উল্লেখে তাদের ভুল হয়নি । এটাও লক্ষণীয় যে প্রাপ্ত তথ্য নির্দেশ করছে, নিহত ব্যক্তিদের কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়েরের রেকর্ড নেই।

এই ভয়ানক অপরাধের তদন্ত অনতিবিলম্বে ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। নিহত সোহাগ, নূর ও শিমুলের শরীরকে একাধিক বুলেট যেভাবে বিদীর্ণ করেছে, তাতেও এই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কেউ কেউ এই হত্যাকাণ্ডে অন্যান্য কারণের মধ্যে ‘সাত খুনের’ মতো কোনো বিষয় (নিশানা ভুল হতে পারে) থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত করেছেন।

আমরা আশা করি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রূপগঞ্জের এই তিন হত্যাকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ১৮,২০১৮

সবার মত অগ্রাহ্য, এবার আরও কড়া আইন

  • ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
  • বিতর্কিত ৫৭ ধারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হলো
  • ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ যুক্ত করে পরিধি আরও বড় করা হলো
  • পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা
  • সাংবাদিকদের উদ্বেগ ও প্রস্তাব উপেক্ষিতই থেকেছে
  • আইনটি পাস হলে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা হুমকিতে পড়বে
  • সম্পাদক পরিষদ ইতিমধ্যে আইনটি প্রত্যাখ্যান করেছে



সরকারের বিভিন্ন পর্যায় ও সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যে ধারাগুলো নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি ছিল, তার কয়েকটিতে কিছু জায়গায় ব্যাখ্যা স্পষ্ট করা, সাজার মেয়াদ কমানো এবং শব্দ ও ভাষাগত কিছু সংশোধন এনেছে সংসদীয় কমিটি। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারার বিষয়গুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চারটি ধারায় ভাগ করে এই আইনে রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই আইনের ব্যাপারে সাংবাদিকদের উদ্বেগ ও প্রস্তাব উপেক্ষিতই থেকেছে। আইনটি পাস হলে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে। সম্পাদক পরিষদ ইতিমধ্যে আইনটি প্রত্যাখ্যান করেছে।

গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮-এর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। নিয়ম অনুযায়ী, এখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বিলটি পাসের জন্য সংসদে তুলবেন।

সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রস্তাবিত আইনের বহুল আলোচিত ‘ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি’ শব্দটি বাদ দেওয়া হলেও সেখানে কার্যকর কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বরং এই ধারাটিতে ঔপনিবেশিক আমলের ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ অন্তর্ভুক্ত করে এর পরিধি আরও বড় করা হয়েছে। অর্থাৎ ডিজিটাল মাধ্যমে কেউ অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ভঙ্গ করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার সাজা হবে। এর সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছর কারাদণ্ড।

আইনে পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা বহাল আছে। এ ক্ষেত্রে শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালকের অনুমতি নেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ; মানহানিকর তথ্য প্রকাশ; ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত; আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো-সংক্রান্ত ধারায় আমূল কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত-সংক্রান্ত অপরাধের সাজা কমানো হয়েছে। মানহানিকর তথ্য প্রকাশ-সংক্রান্ত ধারায় সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগকে আমলে নেওয়া হয়নি। এই ধারায় সংশোধনী এনে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ শব্দের সঙ্গে প্রচার শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে।

আর ইতিবাচক পরিবর্তন বলতে মূলত এই আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে ‘তথ্য অধিকার-সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইনের বিধানাবলি কার্যকর থাকবে’ এই একটি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবিত এই আইনটিতে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী যেসব বিষয় ছিল, সেগুলো রয়ে গেছে। কোনো পরিবর্তন আসেনি। স্বাধীন সাংবাদিকতার সুযোগ আর রইল না। নব্বইয়ের প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে দেশের সংবাদপত্র এবং সংবাদমাধ্যমের যে প্রসার ঘটেছে, এই আইনে সেই অর্জন গুরুতরভাবে ব্যাহত হবে। গণতন্ত্রের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হবে।

অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টকে অন্তর্ভুক্ত করার সমালোচনা করে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, ঔপনিবেশিক এই আইন এখন আর ব্যবহৃত হয় না। আস্তাকুঁড় থেকে এই আইনটিকে আবার সামনে আনা হলো। তিনি বলেন, সংবাদপত্র, টেলিভিশনসহ সব ধরনের সংবাদমাধ্যমকে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করতেই হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগগতভাবে সব ধরনের গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষমতা রাখে।

গত ২৯ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন করেছিল মন্ত্রিসভা। তখন থেকে এই আইনের বেশ কয়েকটি ধারা নিয়ে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পক্ষ আপত্তি জানিয়ে আসছে। সম্পাদক পরিষদ এই আইনের ৮টি (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ) ধারা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানিয়েছিল। সম্পাদক পরিষদ মনে করে, এসব ধারা বাক্‌স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বাধা হতে পারে। এ ছাড়া ১০টি পশ্চিমা দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকেরা এই আইনের ৪টি (২১, ২৮, ৩২ ও ২৫) ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৮) পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিল।

আপত্তির মুখে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। এই প্রেক্ষাপটে গত ৯ এপ্রিল বিলটি সংসদে তোলা হয়। পরে বিলটি পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। সাংবাদিকদের তিনটি সংগঠন সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বিলটি নিয়ে দুই দফা বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল।

সংসদীয় কমিটি প্রতিবেদন দিতে তৃতীয় দফায় ১১ সেপ্টেম্বর এক মাসের সময় নিয়েছিল। কিন্তু এর পরদিনই তারা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে এবং গতকাল তা সংসদে পেশ করে।

বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, সংসদীয় কমিটির সঙ্গে তাঁদের তৃতীয় বৈঠকটি না হওয়ায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ফারাক রয়েছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে তৃতীয় বৈঠকের মাধ্যমে আইনের সংশোধনী চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি, এটা হতাশার বিষয়। দুঃখজনক হলো, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের জন্য এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাঁরা একটি সুরক্ষা চেয়েছিলেন। আইনমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা প্রথমে প্রেস কাউন্সিলে যাবে। এটি না হওয়াটাও হতাশার। আরেকটি হতাশা ও উদ্বেগের জায়গা হলো, ৫৭ ধারার মতো এই আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়ানোর জায়গাটা থাকল।

‘গুপ্তচরবৃত্তি’র জায়গায় সিক্রেটস অ্যাক্ট

মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া অনুমোদনের পর থেকে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে ৩২ নম্বর ধারা (কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ) নিয়ে। সংসদীয় কমিটি এ ধারায় পরিবর্তন এনেছে। ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি শব্দটি বাদ দিয়ে এই ধারায় ঊপনিবেশিক আমলে ১৯২৩ সালে করা আইন অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই আইনটি যুক্ত করার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদ ও সাংবাদিক নেতারা সংসদীয় কমিটির বৈঠকেই আপত্তি জানিয়েছিলনে। কারণ, আইনটি তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এখন ৩২ নম্বর ধারায় ‘ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি’ শব্দ বাদ দিয়ে সংসদীয় কমিটি বলেছে, ‘সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধ ও দণ্ড’। তাতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হবে।

পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, গ্রেপ্তার

প্রস্তাবিত আইনের ৪৩ ধারায় পুলিশকে পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ ধারায় সামান্য পরিবর্তন এনেছে সংসদীয় কমিটি। তারা পুলিশ তল্লাশির জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালকের অনুমোদন নেওয়ার বিধান যুক্ত করেছে। এখন এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে কোনো স্থানে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা হচ্ছে বা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বা সাক্ষ্যপ্রমাণ হারানো, নষ্ট হওয়া, মুছে ফেলা, পরিবর্তন বা অন্য কোনো উপায়ে দুষ্প্রাপ্য হওয়ার বা করার সম্ভাবনা আছে তাহলে তিনি এরূপ বিশ্বাসের কারণ লিখে মহাপরিচালকের অনুমোদনক্রমে ওই জায়গায় তল্লাশি চালাতে পারবেন। ঢুকতে বাধা পেলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তল্লাশির সময় অপরাধ সংঘটনে ব্যবহার্য কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, তথ্য-উপাত্ত এবং অপরাধ প্রমাণে সহায়ক কোনো দলিল জব্দ করতে পারবেন। ওই স্থানে উপস্থিত যেকোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি করতে পারবেন এবং ওই জায়গায় কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ করেছেন বা করছেন বলে সন্দেহ হলে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, এজেন্সির মহাপরিচালক হবেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। তাঁর অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি হবে একেবারে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া। সব মিলে ভয়াবহ একটি কালো আইন হতে যাচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। নানা আশ্বাস আর আলোচনার নামে সরকার ধোঁকাবাজি করেছে। আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন করার জন্য সরকার তাড়াহুড়া করে এই আইন করতে যাচ্ছে।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত-সংক্রান্ত ২৮ নম্বর ধারায় অপরাধের সাজা কমানো হয়েছে। তবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের সঙ্গে উসকানি দেওয়াকেও অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে এমন কিছু কেউ প্রকাশ বা প্রচার করলে তা অপরাধ হবে। সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। আগে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডের প্রস্তাব ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

এই ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের (প্রোপাগান্ডা) সঙ্গে জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে অপপ্রচারকে অপরাধ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে কেউ এসব বিষয়ে অপপ্রচার চালালে ১০ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই অপরাধে আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছিল।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ১৮,২০১৮ 

সড়ক দুর্ঘটনা আবার বাড়ছে

সম্পাদকীয়

আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি


দেশে সড়ক দুর্ঘটনা যেমন কমছে না, তেমনি সড়ক-মহাসড়কে এখনো শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এবার এত বড় একটা আন্দোলন হলো, তারুণ্য নতুন উপমা সৃষ্টি করল; তা ছাড়া দীর্ঘ দিন যাবৎ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলছে; তার পরও সড়কে মৃত্যুর হার কমছে না। বরং দেশজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে।

সড়ক দুর্ঘটনার সাথে যে কান্না জড়িয়ে আছে, তার প্রতি কারো যেন কোনো ভ্রক্ষেপও নেই। নগরজীবনে কোনো মানুষ একবার ঘর থেকে বেরুলে আবার নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবেন কি না, সেই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেন না। এটা ঠিক যে, সড়কে দুর্ঘটনাকে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ যন্ত্রদানবের কাছে মানুষ অসহায়। অনেক সময় যান্ত্রিক কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এসব দুর্ঘটনাকে আসলেই ‘দুর্ঘটনা’ বলা যেতে পারে। অথচ বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে তার কারণ যান্ত্রিক ত্রুটি নয়। আনকোরা ড্রাইভার অথবা তার ড্রাইভিংয়ের যোগ্যতার নিদারুণ অভাব। ফিটনেসহীন গাড়ির কারণেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে। বহু দুর্ঘটনা ঘটছে অনেকটা ওভারটেকিং বা বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের কারণে। যাত্রী ওঠা-নামার সময় ধাক্কা দিয়ে তাকে চাকার নিচে ফেলে দেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ছোট গাড়ি বড় গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। মোদ্দা কথা, গত ক’দিনে দেশজুড়ে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে, এর সব ক’টি বিশ্লেষণ করলে যা উপসংহার পাওয়া যায়, তাতে বলা চলেÑ এগুলো কোনোটিই নিছক দুর্ঘটনা নয়, অনেকগুলো ঠাণ্ডা মাথায় ঘটানো হয়েছে। অসম প্রতিযোগিতার কারণে, অন্য গাড়িকে ট্রাফিক সিস্টেম না মেনে ইচ্ছাকৃতভাবে অতিক্রম করার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে এবং নির্দোষ যাত্রী বা পথচারী হচ্ছে হতাহত।

আমরা যা পর্যবেক্ষণ করেছি, যতটা গবেষণা হয়েছে, তার উপসংহার টানা যায় একটাই : কোনো ড্রাইভার ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালাতে অভ্যস্ত নয়। অনেক সময় বেআইনি জেনেও চালক মোবাইল ফোনে কথা বলছে, আবার গাড়িও চালাচ্ছে। তা ছাড়া অনেক মাদকসেবী ড্রাইভার নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি ড্রাইভ করতে দেখা যায়। এর ফলে যত্রতত্র দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। ট্রাফিক আইনের শিথিল প্রয়োগ এবং পুলিশের উদাসীনতাও অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণ। এর সহজ অর্থ, আইনের শিথিল প্রয়োগ কিংবা অকার্যকারিতা অনেক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণে যে মানুষটি মৃত্যুবরণ করলেন, তিনি রেখে যান তার পরিবারের বুকফাটা কান্না। তা ছাড়া অনেক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাই সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ করার জন্য সব পরামর্শ ও সুপারিশ কাজে লাগানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। এ ব্যাপারে পুলিশ ও আইনের শৈথিল্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ সেপ্টেম্বর ১৮,২০১৮ 

একের পর এক গুপ্তহত্যা

আবু সালেহ আকন


আপন দুই ভাই তারা। একজন ফারুক হোসেন (৫০), অন্যজন আজিজুল হক (৪৫)। বাবার নাম জেহের আলী। বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার সামটা গ্রামে। একই দিনে দুই ভাই নিখোঁজ হন। গত রোববার তাদের লাশ উদ্ধার হয় যশোরেরই দুই উপজেলা থেকে। পুলিশ বলেছে, কারা এ হত্যা করেছে তা তারা জানে না; যে কারণে সবাই এটিকে বলছেন গুপ্তহত্যা। কেউই জানেন না; কারা ও কেন এ হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। এভাবেই একের পর এক ঘটছে গুপ্তহত্যার ঘটনা। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে এই গুপ্তহত্যার ঘটনায় উদ্বিগ্ন মানুষ। এমনকি রাজধানীর পাশের রূপগঞ্জে ট্রিপল খুনের ঘটনাও ঘটেছে।

গত রোববার শার্শা উপজেলার পশ্চিমকোটা গ্রামের একটি মেহগনি বাগান থেকে আজিজুলের এবং কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি-চিংড়া সড়কের ধর্মপুর গ্রামের রাস্তার পাশ থেকে ফারুকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের আরেক ভাই সাইদুল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আজিজুল ও তার বড়ভাই ফারুক একসাথে বাজারের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। রাত ১০টা পর্যন্ত বাড়িতে না ফেরায় তারা খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে থানায় বিষয়টি জানান। এরপর রোববার ফোন পেয়ে শার্শা উপজেলার পশ্চিমকোটা গ্রামের একটি মেহগনি বাগানে গিয়ে আজিজুলের লাশ শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নেয়া হলে দুপুরে পরিবারের লোকজনও সেখানে গ্রণ। এর কিছু সময় পর কেশবপুর থেকে আনা অজ্ঞাত আরেকটি লাশ দেখে তারা সেটি ফারুকের বলে শনাক্ত করেন।

শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, নিহত আজিজুল ওরফে হাতকাটা আজিজুল একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সাত-আটটি মাদক মামলা রয়েছে। শার্শার বাগআঁচড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আবদুর রহিম হাওলাদার জানান, উপজেলার পশ্চিমকোটা গ্রামের একটি মেহগনি বাগানে আজিজুলের মাথায় গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ সকাল ৯টার দিকে লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। দুই দল মাদক কারবারির বিরোধের জেরে তিনি খুন হতে পারেন। 

কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিন বলেন, নিহতের গলায় একটি দাগ রয়েছে। 

নিহতদের ভাই সাইদুল অভিযোগ করেন, তার ভাই আজিজুল মাটি বিক্রির ব্যবসা করতেন। অনেক আগে বোমা বিস্ফোরণে তার দু’টি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফারুকও মাদক কারবারি ছিলেন না। পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

গত শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলো রাজধানীর মহাখালী এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে মো: সোহাগ (৩২), মুগদা এলাকার মো: আবদুল মান্নানের ছেলে শিমুল (৩১) ও ওই এলাকার আবদুল ওয়াহাব মিয়ার ছেলে নুর হোসেন বাবু (৩০)। এরা তিনজন একে অপরের বন্ধু ও ঝুট ব্যবসায়ী। শিমুল ও বাবু পরস্পর ভায়রা। তাদের স্বজনদের দাবি, গত বুধবার বেড়াতে যাওয়ার পথে দৌলতদিয়ায় ডিবি পুলিশ পরিচয় সাদা পোশাকের লোকজন তাদেরকে যাত্রীবাহী বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন। ওই বাসের সুপারভাইজার তাদের ফোন করে অপহরণের বিষয়টি জানান। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে পূর্বাচল উপশহরের আলমপুর এলাকার ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকায় সড়কের পাশে লাশ তিনটি পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ লাশ তিনটি উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। কে বা কারা এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে গতকাল পর্যন্ত কোনো তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ।

গতকাল বুড়িগঙ্গা নদী থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। বুড়িগঙ্গার দক্ষিণ তীরে তেলঘাট এলাকায় গতকাল লাশটি ভেসে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহতের বয়স ৪০ বছর বলে পুলিশ জানায়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কেরানীগঞ্জের তরিকুল্লাহর ডকইয়ার্ড-সংলগ্ন বেড়িবাঁধ থেকে আরেক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন, এগুলো গুপ্তহত্যার শিকার। কে বা কারা এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কেও পুলিশের কাছেও কোনো তথ্য নেই।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ২৭ জন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য গতকাল বলেছেন, তাদের আশঙ্কা তাদের স্বজনেরা গুপ্তহত্যার শিকার হতে পারেন।

  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮ 

Monday, September 17, 2018

বাংলাদেশে ৫ লাখ বিদেশী কর্মজীবী: নেপথ্যের দুর্বলতা

আবু তাহের খান

বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রের তথ্য ও শিল্প খাতে জড়িত উদ্যোক্তাদের মতামত উদ্ধৃত করে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ লাখের মতো বিদেশী বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোয় এ সংখ্যা আরো বাড়বে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৫-১৬ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছে শিক্ষিত বেকার। তদুপরি আরো প্রায় সাড়ে তিন লাখ তরুণ প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরোচ্ছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছে মাদ্রাসা থেকে বেরোনো ডিগ্রিধারীরাও।

এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, এত বিপুলসংখ্যক মানুষ বিশেষত শিক্ষিত তরুণ বেকার থাকা সত্ত্বেও পাঁচ লাখ বিদেশী কেন বাংলাদেশে কাজ পাচ্ছে, যারা প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা নিজ নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে? বিষয়টি উত্কণ্ঠার হলেও এর মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। বরং অপ্রিয় হলেও সত্য, উপযুক্ত দক্ষ লোক দেশে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই চাকরিদাতারা বাধ্য হয়ে বেশি বেতন দিয়ে বিদেশীদের নিয়োগ করছেন এবং তা করতে না হলে অর্থাৎ স্থানীয়দের দিয়ে এ কাজ চালানো গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় বা ব্যবসায়ের খরচ আরো কম পড়ত। 

কিন্তু তা না করে তারা যে বেশি বেতন দেয়ার ঝুঁকি নিয়ে বিদেশীদের নিয়োগ করছেন, সেটি তারা নিরুপায় হয়েই করছেন— এ ব্যাপারে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। আর তাই মানতে হবে, শিক্ষার বর্তমান ব্যবস্থা ও ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোয় বিদেশীদের নিয়োগ দেয়ার এ হার আরো বাড়বে বৈ কমবে না। অন্যদিকে উৎপাদন ও ব্যবসায় খাতে উৎপাদনশীলতার উচ্চহার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে এ নিয়োগকে নিয়ন্ত্রণ করাটাও সমীচীন হবে না। কারণ বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উৎপাদন ও কর্মপ্রক্রিয়ায় উচ্চতর দক্ষতা সংযুক্তির কোনো বিকল্প নেই, যে দক্ষতার সরবরাহ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কিছুতেই করতে পারছে না। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশের কর্মবাজার কি তাহলে ক্রমে বিদেশীদের হাতেই চলে যাবে?

শেষোক্ত এ প্রশ্নটিকে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা অনেকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে নিচ্ছেন বলেই মনে হচ্ছে। অন্তত এ বিষয়ে নানা উদ্বেগজনক খবরাখবর পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরও এ ব্যাপারে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে আপাতত তা-ই মনে হচ্ছে। জাতীয় সংসদে কত গুরুত্বহীন মামুলি বিষয় নিয়ে কথা বলে কত মূল্যবান সময় ব্যয় হয়। অথচ পাঁচ লাখ বিদেশী বাংলাদেশে কাজ করে (যাদের চার-পঞ্চমাংশই আবার বৈধ কর্মানুমতি ছাড়া) বছরে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা বাইরে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করা হবে, সে বিষয়ে জাতীয় সংসদে একটি টুঁ শব্দও উচ্চারিত হয়নি। বরং প্রাসঙ্গিক নানা তত্পরতা দেখে এটাই মনে হচ্ছে, রাষ্ট্র বরং এক্ষেত্রে উল্টো পথে হাঁটছে। কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি খোলাসা করা যাক।

একটু পুরনো হিসাবে দেশে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৭ (সর্বশেষ হিসাবে আরো বেশি হতে পারে)। এর মধ্যে গোটা দশেকের কথা বাদ দিলে বাদবাকিগুলোয় যে মানের পড়াশোনা করানো হয়, তাকে আর যা-ই বলা যাক, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা বলা যাবে না কিছুতেই। এখানে শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান তো দূরের কথা, বাংলাদেশ মানের সাধারণ স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার স্তরও রক্ষিত হয় না। এখানকার অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষার মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনি প্রশ্ন রয়েছে এখানে ছাত্র ভর্তির যোগ্যতা নিয়েও। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় নামমাত্র জিপিএ নিয়ে পাস করতে পারলেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনায়াসে ভর্তি হওয়া যায়, যাদের অধিকাংশেরই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যক্রমের সঙ্গে নিজেদের আত্মস্থ করার সামর্থ্য নেই। 

অথচ বাণিজ্যিক স্বার্থে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ছাত্র ভর্তি দেদার চলছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। যাদের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাদানের যোগ্যতাও নেই, তারাই পড়াচ্ছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে। ফলে এরূপ দ্বিবিধ (মানহীন শিক্ষক ও ছাত্র) মানহীন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বের হওয়া স্নাতকরা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে চাকরি পেয়ে যাবেন বা চাকরিদাতারা অবলীলায় তাদের নিয়োগ দেবেন— এরূপ আশা করাটা একেবারেই অবান্তর। এবং অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কারণেই তা ঘটছেও না এবং তা ঘটছে না বলেই তথাকথিত শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

একটি বহুল প্রচলিত ধারণা, দেশে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কারিগরি শিক্ষার প্রসার না ঘটে সাধারণ শিক্ষার বিস্তার ঘটার কারণেই শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। ধারণাটি পুরোপুরি সত্য নয়— আংশিক সত্য মাত্র। কারিগরি শিক্ষার বিস্তারে অবশ্যই ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবং তা অবশ্যই সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও দ্রুততার সঙ্গে পূরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু অব্যক্ত বাকি সত্যটি হচ্ছে, কর্মবাজারে সাধারণ শিক্ষিত স্নাতকদের যে চাহিদা রয়েছে, মানসম্পন্ন স্নাতকের অভাবে চাকরিদাতারা সে জায়গাগুলোও প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ করতে না পেরে ওইসব পদে হয় বিদেশী নিয়োগ করছেন অথবা নিরুপায় হয়ে নিম্নমানের স্থানীয়দেরকেই নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। 

আর সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মানসম্পন্ন স্নাতক না পাওয়ারই একটি ফলাফল হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ‘নির্বাহী এমবিএ’ কোর্স খোলার ধুম পড়ে যাওয়া। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাস করা মানহীন বা নিম্নমধ্যম পর্যায়ের স্নাতকদের ঘষেমেজে ন্যূনতম পর্যায়ের কার্যোপযোগী করে তোলাই হচ্ছে এসব নির্বাহী এমবিএ কোর্সের মূল উদ্দেশ্য।

অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষার মানও যে এখানে যথেষ্ট উন্নত— এমনটি বলা যাবে না। কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক চাহিদার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি খাতে রাতারাতি বহুসংখ্যক পলিটেকনিক ও অনুরূপ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সেগুলোর মান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার মানের মতোই গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। ফলে কারিগরি শিক্ষার অভাবেই শুধু দেশে বেকারত্ব বাড়ছে— এমনটি বলা যাবে না। 

বরং কারিগরি ও অকারিগরি উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে যে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, সেটাই শিক্ষিত তরুণদের বেকারত্বের মূল কারণ। তবে হ্যাঁ, সাধারণ শিক্ষার তুলনায় কারিগরি শিক্ষাকে আমাদের অবশ্যই অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। সেসঙ্গে আরো একটি বিষয়ের প্রতি এখানে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন, তথাকথিত এসব মানহীন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ অর্জনের পর একজন ডিগ্রিধারী স্বভাবতই ভাবতে শুরু করে, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সে চাকরি পাচ্ছে না। অথচ চাকরি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা যে তার নেই, অধিকাংশ তরুণই তা বুঝতে না পেরে এক ধরনের হতাশায় ভোগে এবং এ ধারণার ভিত্তিতেই সামাজিকভাবেও তা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে, কর্মের অভাবেই মূলত দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, শিক্ষা ও ব্যবসায় খাতের দ্রুত প্রসারের ফলে দেশে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কর্মের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও যোগ্যতার অভাবে আমাদের তরুণরা এসব পদে নিয়োগ লাভে সক্ষম হচ্ছে না এবং সে পদগুলোতেই পরে এসে নিয়োগ পাচ্ছে বিদেশীরা।

অতএব দেশ থেকে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমাতে হলে বিশ্ববাজারের সর্বশেষ প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দক্ষ ও আধুনিক প্রযুক্তির চাহিদা পূরণে সক্ষম জনবল গড়ে তুলতে হবে, যা গড়ে তোলার সামর্থ্য দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেই। 

অথচ সত্য এই যে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বহুমাত্রিক ও ব্যাপক বিস্তারের ফলে দেশে নতুন নতুন কর্মের সুযোগ দিন দিন বাড়ছে এবং ক্রমে তা বাড়তেই থাকবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অভাবে, যদি না সে যোগ্যতা তৈরির আশু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তাহলে সেসব সুযোগ আমাদের তরুণদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, এ ধরনের কর্মের সুযোগ বিশ্ববাজারেও দিন দিন বাড়ছে, যা বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণদের জন্যও সমানভাবে উন্মুক্ত। ইউরোপ ও আমেরিকার উদ্যোক্তারা এসব পদে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে এশীয় তরুণ-তরুণীকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তুলনামূলকভাবে কম বেতনে নিয়োগদানের সুবিধা বিবেচনা করে। ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশের তরুণরা এ সুযোগ ব্যাপক হারে গ্রহণ করছে বা প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকার কারণে তারা তা গ্রহণ করতে পারছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত জ্ঞান ও ইংরেজি ভাষা না জানার কারণে বাংলাদেশের তরুণরা এ সুযোগের অতি সামান্য অংশও ভোগ করতে পরছে না। আর তা করতে না পেরে দোষ দিচ্ছে রাষ্ট্র ও সরকারকে। অবশ্য ত্রুটিপূর্ণ নীতিমালার দায় রাষ্ট্রেরও রয়েছে বৈকি! শখানেক মানহীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন, শত শত মানহীন বেসরকারি কলেজের রাতারাতি সরকারীকরণ, ১৯৭০ সালের ২ হাজার ৭২১টি মাদ্রাসাকে ১৪ হাজার ১৫২টিতে উন্নীতকরণ— এসব তো রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও সিদ্ধান্তেরই প্রতিফলন বৈকি! শোনা যাচ্ছে, শিগগিরই প্রতি জেলায় ন্যূনতম একটি করে মডেল মাদ্রাসা স্থাপন করা হবে, যা স্পষ্টতই সরকার কর্তৃক গৃহীত সর্বশেষ শিক্ষানীতির পরিপন্থী ও অন্যদিকে বর্ধিত কর্মসংস্থান নীতিমালার সঙ্গেও অসঙ্গতিপূর্ণ। 

অতএব, দেশে একটি প্রকৃত কর্মোপযোগী শিক্ষিত তরুণ শ্রেণী গড়ে তুলতে হলে অবিলম্বে চলতি ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে চোখ-কান খুলে বিশ্ববাজারের চাহিদা ও প্রয়োজনের দিকে তাকিয়ে নতুন ধারার জনবল তৈরির প্রতি মনোযোগী হতে হবে। নইলে বাংলাদেশে কর্মরত পাঁচ লাখ বিদেশীর সংখ্যা যদি আগামী ১০ বছরে বেড়ে ১৫ লাখে উন্নীত হয়, তাতে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কথাগুলো শুনে মন খারাপ হলেও এটাই বাস্তবতা।

  • লেখক: পরিচালক, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার /ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ সেপ্টেম্বর ১৭,২০১৮ 

Job creation, fiscal stability to be hurdles

Creating enough jobs, improving investment climate and ensuring financial stability would be major challenges for Bangladesh to meet her post-LDC (least developing country) requirements, opined economists and businesses.

For a sustainable transition to the developing country status, the country must seriously focus on ICT (information and communication technology) sector, as the apparel sector's advantage would expand for at least two decades, they said.

At the same time, they suggested enhancing intra-regional trade by taking advantage of a huge consumer base of 1.7 billion people in South Asia.

The observations and suggestions were made at an institutional dialogue, titled "Policy framework for post-LDC graduation of Bangladesh: business perspective", at a city hotel on Monday.

Federation of Bangladesh Chambers of Commerce and Industry (FBCCI) and Friedrich Naumann Stiftung, a German foundation, jointly organised the dialogue.

Commerce Minister Tofail Ahmed was present in the programme as the chief guest.

Presenting a keynote paper on the topic, former governor of Bangladesh Bank (BB) Dr Atiur Rahman said the country needs to create 1.6 million jobs annually until 2020, which public sector cannot create alone.

"Private sector is the solution. So, we should create a congenial atmosphere here, especially for SMEs (small and medium-sized enterprises)."

In this regard, he cited the example of how 0.3 million agents create around 0.9 million jobs in the remote areas.

Terming ICT sector a new game-changer in the coming years, the commerce minister said the economy largely depends on RMG industry, and its advantage can continue for the next two decades.

Senior Research Fellow of Bangladesh Institute of Development Studies (BIDS) Nazneen Ahmed emphasised training and skill development to utilise the advantage of demographic dividend of the country properly.

  • Courtesy: The Financial Express /Sep 17, 2018

Expert suggests Ctg port takeover by int'l operators

The same mooted for air cargo handling


The management of the country's main sea port Chittagong should be handed over to an international port management entity to increase its efficiency, an international expert has said.

Similar approach should be adopted in handling air cargo as well as building of warehouse facilities at the land port, the expert noted.

"Over the next five years, the number of ships arriving at the Chittagong port will increase by 100 per cent. How would the port handle it", Dr. Forrest Cookson, sought to know while speaking at a seminar on 'Logistical Challenges and Opportunities of Business' in the capital on Sunday.

International Business Forum of Bangladesh (IBFB) organised the seminar.

"There is a compelling case for the selection of an international port management organisation that will provide modern apolitical management of the port", Cookson said at the event.

"If the port is to meet the demand of a rapidly growing economy, the politicisation of the port management should be stopped and a professional organisation should be engaged in its day-to-day operation", he added.

Apart from privatisation of port management, Cookson also emphasised speeding up of customs procedure at the sea port.

"The simple way to speed up customs is to shift more and more of the inspection of the off-docks and allow containers to be moved out of the port to the off dock for customs clearance", he said.

Noting that the number of ships arriving at the Chittagong port will double in the next five years, Cookson also emphasized on increasing the capacity in proportion of that future outlook.

"At present, there are 16 berths for container ships. Out of those, three have been operating gantry cranes. Three more cranes are being installed", he observed.

"However, if all 16 berths have gantry cranes, then the time for loading and unloading will be reduced to less than two days. At the same time, the number of ships that can be handled will increase to about 2200", he added.

In this context, he recommended that 10 more cranes be installed immediately to cover all 16 berths. At the same time, plans should be laid out immediately for a bayside terminal with sufficient capacity to install 16 berths, he added.

Cookson also called for privatisation of air cargo handling.

"As air cargo volume rises, the cargoes kept inside the airport waiting for clearance grows and grows. It has reached a breaking point now with customers dissatisfied with the service", he observed.

"The handling of the air cargo, therefore, should be given to a private company and taken away from Biman", he said, adding "Biman has failed and should not be allowed to continue to manage such a critical logistical area in an awful way".

"At the same time, proper warehousing should be constructed serviced by forklifts and modern warehouse management procedures", he added further.

The target should be to reduce the time between the air cargo landing and the customer taking it out of the airport to one day from the five to six days it currently takes, he said.

Cookson also observed that the flow of container traffic along the Dhaka-Chittagong highway will grow by 60 per cent in five years and by 155 per cent in 10 years.

In this context, he called for reducing the side friction from vehicles parked along the highway and banning of slow-moving vehicles such as CNG, rickshaws and vans on the highway.

He also recommended establishing reduced access to the main highway and controlling of crossing points by traffic lights.

To establish discipline, the control of the Dhaka-Chittagong highway should be handed over to the army for 18 months, he said.

When it comes to land port, he said that the authorities should involve the private sector to build warehouse facilities and to operate the warehouse and manage documents.

Speakers at the function also called for strengthening the railway and inland waterway routes for increasing the efficiency of transport and logistics in the country.

They also emphasized on establishing a bonded warehouse facility for the air bound export products and establishing customs house at the Mongla seaport.

"Lack of functionality of the concerned authorities, conflicting interest of the vested groups and lack of political will are the main reasons for our failure to develop our logistical facilities", said Khondaker Golam Moazzem, Research Director of the Center for Policy Dialogue (CPD).

He also called for linking waterway and railway networks with the Special Economic Zones that are under construction.

Speaking on the occasion, Shipping Minister Shajahan Khan said that bureaucratic efficiency is essential for implementing any mega project.

"Another crucial thing for the development of the country is political stability", Khan said.

"As part of boosting the shipping and other transport logistics in the country, we have already increased the number of berth at Chittagong port from 6 to 16 while the number of cranes will be increased to 10 this year", he said.

"We have turned Mongla port into a profitable organization while new sea ports are going to be established at Maheshkhali".

"A total of 10 new land ports have been established in last nine years while we have plan to establish 12 more land ports", the minister said.
  • Courtesy: The Financial Express/ Sep 17, 2018

Trade deficit rises 12pc in July

AKM Zamir Uddin

Trade deficit jumped 12.14 percent in July in continuation of the trend seen throughout last fiscal year on the back of higher import payments against slow exports.

The gap stood at $1.17 billion in the first month of the current fiscal year, up from $1.04 billion in July last year, according to the latest data from the central bank. The country's trade deficit hit $18.25 billion in fiscal 2017-18, the highest in its history.

Bankers and experts called for diversifying export basket and exploring new markets in a bid to contain the rising trade deficit.

Imports stood at $4.7 billion in July, up 17.44 percent year-on-year. At the same time, exports rose 19.32 percent to $3.52 billion.

AB Mirza Azizul Islam, a former finance adviser to the caretaker government, said the government should take measures to boost export earnings in order to ease the tight situation in the balance of payments.

Export earnings in July rose but it was not up to the mark, given the large trade gap in the recent times, he said. “Exports should be diversified as the country is largely reliant on garments.”

Export earnings from garment items accounted for 86 percent of the total export income in July.  New export markets should also be explored since Bangladesh's items have long been going to some selected countries, said Islam.

The former adviser said some unscrupulous people might be laundering money in the name of imports through over-invoicing, which has also increased import payments. The central bank should strengthen its monitoring and supervision to rein in the practice of over-invoicing, he said.

Syed Mahbubur Rahman, chairman of the Association of Bankers, Bangladesh, a platform of the managing directors of private banks, said import payments have continued to rise to meet the need of the ongoing mega infrastructure projects.

Imports of unessential products should be discouraged to reduce the trade deficit, said Rahman, also the managing director of Dhaka Bank.

The trade gap negatively impacted the current account deficit, which slightly came down in July but was still high mainly because of the higher import payments.

  • Courtesy: The Daily Star /Sep 17, 2018

যশোরে নিখোঁজ ২ ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

যশোরের শার্শা উপজেলার সামটা গ্রামের ফারুক হোসেন (৫০) ও আজিজুল হক (৪৫) নামের দুই ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহ দু’টি গতকাল সকালে যশোরের শার্শার সামটা গ্রামের মেহগনিতলা ও কেশবপুর উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন। নিহত ফারুক ও আজিজুল সামটা গ্রামের মৃত জোহর আলীর ছেলে।

গতকাল দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে মরদেহ দুটি শনাক্ত করেন তাদের অপর ভাই সাইদুল ইসলাম। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে শার্শা উপজেলার সামটা ধানতারা এলাকার একটি মেহগনিবাগান থেকে আজিজুল হক নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের  দাবি, দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হতে পারেন। শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শার্শার বাগআঁচড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আবদুর রহিম হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, আজিজুল একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। সম্ভবত মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারা যেতে পারেন। নিহত আজিজুলের বিরুদ্ধে শার্শা থানা ও বেনাপোল পোর্ট থানায় মাদক সংক্রান্ত ৭-৮টি মামলা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।তবে নিহতের ভাই সাইদুল দাবি করেন, তার ভাই আজিজুল মাটি বিক্রির ব্যবসা করতেন। অনেক আগে বোমা বিস্ফোরণে তার দুটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

অপরদিকে, একইদিন সকালে যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি-চিংড়া সড়কের ধর্মপুর এলাকা থেকে ফারুক হোসেন নামে অপর এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের গলায় একটা দাগ রয়েছে। এটি গুলির দাগ কি না সেটা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না।

ঘটনাস্থলে থাকা কেশবপুর থানার এসআই ওহিদুজ্জামান জানান, ধর্মপুর থেকে উদ্ধার লাশটির পরিচয় স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ কেউই নিশ্চিত করতে না পারলেও পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিহতদের ভাই সাইদুল লাশটি শনাক্ত করেন। 

নিহতদের আরেক ভাই শহিদুল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে আজিজুল ও তার বড় ভাই ফারুক একসঙ্গে বাড়ি থেকে বাজারের উদ্দেশ্যে বের হন। রাত দশটা পর্যন্ত বাড়িতে না ফেরায় তারা খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। পরে স্থানীয় লোকজন জানায়, পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা দুই ভাইকে সামটা বাজারের কাছ থেকে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে গেছে। এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই ভাইয়ের খোঁজে অন্য দুই ভাই সাইদুল ও শহিদুল শার্শা থানায় যান। কিন্তু শার্শা থানা পুলিশ এই ধরনের কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানান। 

পরে বাগআঁচড়া পুলিশ ক্যাম্প ও বেনাপোল পোর্ট থানায়ও খোঁজ খবর নেয়া হয়। কিন্তু দুই ভাইয়ের কোনো খবর না পেয়ে নির্ঘুম রাত কাটে পরিবারের সদস্যদের। রোববার সকালে  গ্রামের পাশের একটি মাঠে প্রথমে আজিজুলের এবং পরে কেশবপর উপজেলার চিংড়ি বাজার সংলগ্ন ধর্মপুর গ্রামের মাঠ থেকে ফারুকের লাশ উদ্ধার দেখায় পুলিশ। নিহতের স্বজনদের দাবি পুলিশ পরিকল্পিত ভাবে দুই ভাইকে গুলি করে হত্যার পর লাশ দুটি প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরবর্তী দুই এলাকায় ফেলে রেখে পরে উদ্ধার নাটক সাজিয়েছে। তারা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। 

তবে পরিবারের এই দাবি ভিত্তিহীন বলে দাবি করে পুলিশ জানিয়েছে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মাদক সংক্রান্ত বিরোধে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ সেপ্টেম্বর১৭,২০১৮ 

কূটনৈতিক উদ্বেগ নিরসনে যৌথ প্রচারণা চালাবে সরকার-আওয়ামী লীগ

মিজানুর রহমান

নির্বাচন প্রশ্নে কূটনৈতিক অঙ্গনে বিএনপির দৌড়ঝাঁপের প্রেক্ষিতে সম্ভাব্য বৈশ্বিক চাপ ও উদ্বেগ নিরসনে সরকার ও আওয়ামী লীগ যৌথভাবে পাল্টা প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নীতিনির্ধারকরা বলছেন, যদিও ‘অসত্য’ তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিরোধী মহল বিশ্বব্যাপী প্রচারণায় নেমেছে তারপরও এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ হিসেবে তারা যেটা বলার চেষ্টা করেন তা হলো- বিরোধী মহল সব সময়ই সরকারের বিরুদ্ধে নানা কথা ছড়ায়। কিন্তু সরকারের শেষ সময়ে অর্কেস্ট্রেইটেড ক্যাম্পেইন বা ধারাবাহিক প্রচার-প্রপাগাণ্ডায় ‘বহুমুখী বৈশ্বিক’ চাপ তৈরি হতে পারে।

এ আশঙ্কা থেকে এখনই আটঘাট বেঁধে বিশ্বব্যাপী জোর কদমে যৌথভাবে পাল্টা প্রচারণা চালাবে সরকার ও আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে সরকারের বিদেশ নীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীল এক প্রতিনিধি বলেন, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্র্থীদের দিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এটা যে বিরোধীদের ‘কাণ্ড’ ছিল সেটি দফায় দফায় ব্রিফ করে দুনিয়ার সামনে তুলে ধরা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের সবেচেয়ে সাড়া জাগানো ওই দুই মুভমেন্ট নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে খানিক উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল।
সরকার তা অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবিলা করেছে।

কেবল ঢাকা নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়া এবং উন্নয়ন অংশীদার দেশগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে এ নিয়ে রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা ব্রিফ করেছেন। ঢাকার বিশেষ নির্দেশনায় মিশন প্রধানরা স্ব স্ব দেশের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে দেখা করে সেই উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করেছেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট, বর্ধিত জোট বা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া যে নামেই একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে মহল বিশেষ তৎপরতা চালাক না কেন সেটি প্রতিবেশী, কাছের এবং দূরের উন্নয়ন অংশীদার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোতে উদ্বেগ তৈরি করবে।

এ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে কথা হবে। প্রশ্ন আসবে। এটি মোকাবিলায় জোর প্রস্তুতি থাকতে হবে। সূত্র মতে, এ নিয়ে আজ তেজগাঁওয়ে একটি বৈঠক হবে। সেখানে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কিছু নির্দেশনা স্পষ্ট করা হবে। সরকারের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকাস, ইউরোপ, ইস্ট ইউরোপ এবং বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের প্রধানরা আমন্ত্রিত। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ঘনিষ্ঠ এবং প্রভাবশালী প্রতিবেশী ভারতের তরফে কোনো বক্তব্য আসেনি। বরং গত সপ্তাহেই ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, নির্বাচন একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দিল্লি এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চায় না। সর্বতোভাবে তারা (দিল্লি) এ অবস্থান ধরে রাখতে চায়। তবে ঢাকায় দায়িত্বপালনকারী জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী চলতি মাসের সূচনাতে যে নিবন্ধ লিখেছেন তা নিয়ে সরকারের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। এটি কোনোভাবেই দিল্লির অবস্থান হতে পারে না মন্তব্য করে এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতের বিদেশনীতিতে সাবেক বা প্রাক্তনদের খুব একটা পোক্ত অবস্থান নেই। তারা অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন, লিখতে পারেন। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে ব্যাপক পরিচিত বা ঢাকায় দায়িত্ব পালনকারী কোনো কূটনীতিক বললে বা লিখলে এটি ব্যাপক প্রচার পায়।

তা নিয়ে অল্প বিস্তর আলোচনাও হয়। এ নিয়ে সরকারের তরফে যথাস্থানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা দিল্লি সফর করতে পারেন। সরকারি, বেসরকারি এবং অ্যাকাডেমিক আলোচনায় তিনি সরকারের অবস্থান তুলে ধরবেন। এটি খানিকটা হলেও বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বুঝতে দিল্লির জন্য সহায়ক হবে বলে আশা করেন কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, কেবল ভারত নয়, সরকারের তরফে যখন যেখানে সুযোগ আসবে সেখানেই প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিরোধীদের প্রচারণার পাল্টা প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সাব-কমিটির পক্ষ থেকেও বিভিন্নভাবে এটি মোকাবিলার কৌশল রয়েছে। 

গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এ নিয়ে কথাও হয়। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, জাতিসংঘের আমন্ত্রণ এবং তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করেছে। দলটি নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছেÑ যা গণতান্ত্রিক আচরণের মধ্যে পড়ে না। এ সময় বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে প্রকৃত ঘটনাগুলো এবং ইতিহাস তুলে ধরতে আহ্বান জানান তিনি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সভায় বেশ কয়েকজন সাবেক রাষ্ট্রদূত তাদের মতামত তুলে ধরেন। তারা বলেন, সরকারের ইতিবাচক কর্মকা- বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে বিদেশে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিতে এলিট শ্রেণির লোকদের আনতে হবে। পরে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, দলের কোনো সংকটের সময় এলিটরা কেটে পড়ে। হঠাৎ করে তারা দলনিরপেক্ষ হয়ে যান। কিন্তু দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন তারা নানাভাবে ফায়দা হাসিল করেন। যারা চরম দুঃসময়েও আওয়ামী লীগকে ছেড়ে যায় না বা যাবে না তাদের দিয়েই দলের কমিটি গঠন করতে হবে। 

শাম্মী আহমেদ আরো বলেন, ’৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের এলিট হিসেবে যারা পরিচিত ছিল তারা রাতারাতি সুর বদল করে ফেলেছিল। দীর্ঘ ২১ বছর আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময়ে সাধারণ নেতাকর্মীরা রাজপথে আন্দোলন করেছে। এক এগারো সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরাই শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেছে। তখন আমরা এলিটদের খুঁজে পাইনি। কর্মশালায় আরো বক্তব্য রাখেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, ওয়ালিউর রহমান, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ প্রমুখ।

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ সেপ্টেম্বর১৭,২০১৮