Search

Monday, November 26, 2018

A CEC statement that very much sounds ambiguous

EDITORIAL

THE chief election commissioner’s statement of Saturday that the Election Commission is now in control of the civil administration, which includes the police administration, before the next general elections posted for December 30 is nothing extraordinary. This is a matter-of-fact statement as it is the Election Commission which generally controls, and should control, the civil administration at the time of elections. The commissioner further said that the police were not arresting any innocent people and they were only carrying out the commission’s orders. Yet the statements that the chief election commissioner made altogether constitute an admission that the commission shoulders the responsibility for all what the police are doing these days. 

A Bangladesh Nationalist Party delegation, hours after the commission had met the police high-ups on November 22, handed over a letter to the chief election commissioner saying that the police arrested at least 21 of its leaders and activists. The political party, which is the political arch-rival of the incumbent Awami League, also held the commission responsible for the death of Abu Bakkar Abu, a vice-president of the Jashore BNP unit.

Abu Bakkar, who was found dead, on November 20, afloat in the River Buriganga in an area under the Dakkhin Keraniganj police jurisdiction, had gone missing at night on November 18. 

The Jashore unit BNP leader, who came to Dhaka to collect and submit nomination form, for the first time to stand as a candidate in the national elections, was reportedly held to ransom and the family paid Tk 1,70,000 in ransom to the people who had called them, but he was not freed. The incident smacks of the like of enforced disappearance, which has continued taking place apace. The delegation held the commission responsible as the party had earlier sought the commission’s assistance in this regard. If the arrests made and the incidents of disappearances like this continue under the police that are now supervised by the Election Commission, there is hardly any scope for the commission to shrug off the responsibilities. 

Even if after the chief election commissioner’s statement, the commission wants to shrug off the responsibilities or it fails to attend to the issues adequately, it is evident that the commission is not in control of the police. Besides, what does the commission mean when it says that the police were not arresting innocent citizens? Citizens, every of them, are innocent until they are found guilty by a court of law. The commission cannot decide who are guilty of a crime and who are not.

The arrest of leaders of the parties in the opposition also harms the level playing field for all the political parties now in the electoral fray. The Election Commission, under the circumstances, must stop ordering the police to harass and arrest opposition political leaders when the national elections are at hand. Unless the commission stops this and makes the police behave, it might risk the holding of the elections.

  • Courtesy: New Age /Nov 26, 2018

Sunday, November 25, 2018

ঠিকানাহীন ছয় আইজিডব্লিউ - বিটিআরসির পাওনা ৭৫০ কোটি টাকা

সুমন আফসার

মালিকানা নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা। নেই পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা। এ ধরনের ছয় ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) প্রতিষ্ঠানের কাছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা দাঁড়িয়েছে ৭৫০ কোটি টাকার বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকায় পাওনা আদায়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

বার্ষিক লাইসেন্স ফি ও আয় ভাগাভাগির অংশসহ অন্যান্য পাওনা নিয়মিত পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বড় অংকের এ বকেয়া পড়েছে।

বকেয়া পরিশোধ না করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— বেসটেক টেলিকম, রাতুল টেলিকম, কেএওয়াই টেলিকমিউনিকেশনস, টেলেক্স, ভিশন টেল ও অ্যাপল গ্লোবাল টেল কমিউনিকেশন। ছয় প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সই বাতিল করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

জানা গেছে, ছয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওনা রয়েছে ভিশন টেল লিমিটেডের কাছে ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। পাওনা আদায়ে ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি (পিডিআর) অ্যাক্ট, ১৯১৩ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। একই বছর নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট (এনআই) ও টেলিযোগাযোগ আইনেও আলাদা মামলা করা হয় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। আইসিএক্স লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান ক্লাউড টেল লিমিটেডের সহযোগী কোম্পানি ভিশন টেল।

তবে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের এক মেয়ে। তবে বিটিআরসির দায়ের করা মামলার বিবাদীরা হলেন— সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর ছেলে ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এসএম আসিফ শামস, পরিচালক রাসেল মির্জা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইরিন ইসলাম, মো. শরিফুল ইসলাম ও শেয়ারহোল্ডার জিয়াউর রহমান। এর মধ্যে আইরিন ইসলাম ও পরিচালক শরিফুল ইসলামকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতারও করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন তারা।

আরেক আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠান বেসটেক টেলিকমের বকেয়ার পরিমাণ ১৩০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পিডিআর আইনের আওতায় সার্টিফিকেট মামলা করে বিটিআরসি। এ মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে। একই বছরের জুনে গুলশান থানায় টেলিযোগাযোগ আইনেও মামলা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েত করিম ও পরিচালক মামুন-উর-রশিদ রয়েছেন মামলার বিবাদী হিসেবে।

অ্যাপল গ্লোবাল টেল কমিউনিকেশনসের কাছে পাওনার পরিমাণ ১২০ কোটি ১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পিডিআর আইনে মামলা করে বিটিআরসি। পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ আইনেও মামলা করা হয়েছে। অস্পষ্টতা রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নিয়েও। শুরুর দিকে অ্যাপল গ্লোবাল টেলের মালিকানায় ছিলেন সোহেল আহমেদ, মনির আহমেদ, ইকবাল বাহার জাহিদ ও ইমদাদুল হক মোল্লা।

আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠান টেলেক্স লিমিটেডের কাছে সরকারের পাওনা রয়েছে ১০৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি পিডিআর আইনে মামলা দায়ের করা হয় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। মামলা করা হয়েছে এনআই ও টেলিযোগাযোগ আইনেও। তিনটি মামলায়ই বিবাদীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। সঠিক নাম-ঠিকানাও পুনরায় দাখিল করতে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স পেতে সুপারিশ করেন ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা। টেলেক্স লিমিটেডের বর্তমান মালিক আবদুর রহমান ও মুজিবুর রহমান। বিটিআরসির মামলায় এ দুজনকে বিবাদী করা হয়েছে।

রাতুল টেলিকমের কাছে পাওনার পরিমাণ ১০২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর পিডিআর আইনে মামলা করে বিটিআরসি। এর আগেই টেলিযোগাযোগ আইনে বনানী থানায় মামলা করা হয়। আবাসন খাতে দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান রূপায়ণের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রাতুলের নামে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স নেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের মেয়ে সৈয়দা আমরিন রাখী প্রতিষ্ঠানটির ৫০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেন। এছাড়া রাতুল টেলিকমের আরো ২০ শতাংশের মালিক নানকের স্ত্রী সৈয়দা আরজুমান বানু। এ দুজনের পাশাপাশি মামলায় বিবাদী করা হয়েছে শেয়ারহোল্ডার মাসুদুর রহমান বিপ্লব, সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল, সাবেক পরিচালক আলী আকবর খান রতন, সাবেক পরিচালক মাহির আলী খান রতন, সাবেক শেয়ারহোল্ডার নওরিন জাহান মিতুল ও সাবেক শেয়ারহোল্ডার সাইফ আলী খান অতুলকে।

সরকারের পাওনা ১০৩ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করেনি কেএওয়াই টেলিকমিউনিকেশনস। এজন্য ২০১৪ সালের জুলাইয়ে পিডিআর আইনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করা হয়। একই বছর বনানী থানায় মামলা করা হয়েছে টেলিযোগাযোগ আইনেও।

শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় ছিলেন নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমান, ছেলে ইমতিয়ান ওসমান, শ্যালক তানভির আহমেদ, ঘনিষ্ঠ বন্ধু জয়নাল আবেদীন মোল্লা ও জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা। পরবর্তী সময়ে মো. শাখাওয়াত হোসেন, দেবব্রত চৌধুরী ও মো. রাকিবুল ইসলাম এটির মালিকানায় রয়েছেন বলে দেখানো হয়। যদিও মামলা করার পর তাদের কারো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের সঠিক ঠিকানা দাখিল করতে বলেছেন আদালত।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাওনা এ অর্থ আটকে থাকায় রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে এখনো আমার কাছে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। সচিব ও বিটিআরসিকে এ সম্পর্কে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই বিষয়টি সম্পর্কে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে উদ্যোগ নেয়া হবে।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিটিআরসির কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণাঙ্গ তথ্য চাওয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে পাওনা আদায়সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পর্যালোচনায় প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের নাম-ঠিকানাসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ বকেয়া অনেকদিনের উল্লেখ করে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, পাওনা আদায়ে এরই মধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সরকারের পাওনা এ অর্থ আদায়ের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, আইজিডব্লিউগুলো আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান করছে। আইজিডব্লিউর মাধ্যমে আসা কল গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছে অপারেটররা। দেশে আইজিডব্লিউ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৯টি। ২০০৮ সালে নিলামের মাধ্যমে চার প্রতিষ্ঠানকে এ লাইসেন্স দেয়া হয়। আর ২০১২ সালের এপ্রিলে নতুন ২৫টি প্রতিষ্ঠান আইজিডব্লিউ লাইসেন্স পায়। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় বর্তমানে কার্যক্রমে রয়েছে ২৩টি। সম্প্রতি আরো একটি প্রতিষ্ঠানকে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।

  • কার্টসিঃ বনিকবার্তা/নভেম্বর ২৫,২০১৮ 

গায়েবি মামলা গায়েবি আওয়াজ নয়

মাহবুব তালুকদার

[একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার লিখিত বক্তব্য দেন। তাঁর এ বক্তব্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।  পাঠকদের জন্য তাঁর বক্তব্য তুলে ধরা হলো]

আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ১৯৭০ সালে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকাকালে তৎকালীন জাতীয় নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলাম। নির্বাচন বিষয়ে সেটাই ছিল আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। নির্বাচন কমিশনে যোগদানের পর সেই অভিজ্ঞতা দিন দিন ফুলে-পল্লবে পল্লবিত হয়েছে, একই সঙ্গে তাতে আছে কিছু কাঁটার আঘাত। আজ আপনাদের সঙ্গে তা শেয়ার করতে চাই।

বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আমরা দুটি উল্লেখযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করেছিলাম। একটি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং অপরটি রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই দুটি নির্বাচনে আমরা সুনামের সঙ্গে উতরে গেছি বলে অনুমান করতে পারি। কারণ, এ দুটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ শোনা যায়নি। বলতে দ্বিধা নেই, এই দুটি নির্বাচনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনমানসে একটা আস্থার স্থান তৈরি করে নিতে পেরেছে।

পরবর্তী সময়ে খুলনা, গাজীপুর, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট—এই পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার অভিজ্ঞতা ছিল ভিন্ন। আমি খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে কোনো কথা বলব না। তবে যেহেতু আমি বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একক দায়িত্বে ছিলাম, সেহেতু এই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে তুলে ধরব। অন্যদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে অনুরোধ জানান। ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের “স্বরূপ সন্ধান”’ শিরোনামে আমি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তাঁকে সমর্পণ করি। অজ্ঞাত কারণে সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে আত্মবিশ্লেষণের তাগিদেই আমি গাজীপুর ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন দুটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। প্রথমেই বলে রাখা প্রয়োজন, কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নয়, কারও দায়িত্ব পালন অবমূল্যায়ন করার জন্য নয়, বিষয়গুলো উপস্থাপন করতে হচ্ছে আগের সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে পেতে এবং আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনুরূপ সমস্যা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেই পথ সুগম করতেই।

গাজীপুর নির্বাচনের বিষয়ে আমি তিনটি ঘটনার উল্লেখ করব। প্রথম ঘটনা হচ্ছে, গাজীপুর জেলা প্রশাসক ১৭৯ জনের একটি স্বাক্ষরবিহীন তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রেরণে করলে রিটার্নিং কর্মকর্তা তা গ্রহণে অসম্মতি জানান। পরে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে নিম্নোক্ত ফরোয়ার্ডিংসহ তালিকাটি পাঠানো হলেও তালিকায় কারও স্বাক্ষর নেই। ফরোয়ার্ডিং নিম্নরূপ:

‘বিষয়: প্রিসাইডিং অফিসারগণের নামের তালিকা প্রেরণ।

উপযুক্ত বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এ কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন পাওয়া গিয়েছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় প্রতিবেদনটি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগসংক্রান্ত। প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগসংক্রান্ত কার্যক্রম যেহেতু রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক সম্পাদিত হয়ে থাকে, বিধায় প্রতিবেদনটি পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে এতৎসঙ্গে প্রেরণ করা হলো।

সংযুক্ত: ০৮ (আট) ফর্দ।’

উল্লেখ্য, স্বাক্ষরবিহীন তালিকাটিতে কোনো শিরোনাম নেই। ফরোয়ার্ডিংয়ে জেলা প্রশাসক অফিসের নিম্নপর্যায়ের একজন কর্মকর্তার নাম ও স্বাক্ষর রয়েছে। আমি জানি না প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কোনো অযাচিত সহায়তার প্রয়োজন আছে কি না।

দ্বিতীয় বিষয়টিও পুলিশের কার্যক্রম–সম্পর্কিত। রিটার্নিং কর্মকর্তা মৌখিকভাবে বলেছেন, বিরোধী দলের মেয়র প্রার্থীর কোনো অভিযোগপত্র প্রেরণ করা হলে পুলিশ অফিস থেকে তা গ্রহণের স্বীকৃতিপত্র দেওয়া হতো না। অনেক অনুরোধের পর চিঠি গ্রহণ করা হতো। বিরোধী দলের মেয়র প্রার্থীর পুলিশি হয়রানি, গণগ্রেপ্তার, ভীতি প্রদর্শন, কেন্দ্র দখলসংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে। এসব অভিযোগসংবলিত পত্রের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রেরিত ১১টি অভিযোগপত্রের মধ্যে মাত্র ৪টির উত্তর পাওয়া গেছে, যা অনেকটা দায়সারা গোছের। পুলিশ বাকি ৭টি অভিযোগের কোনো উত্তর প্রদান প্রয়োজন মনে করেনি।

তৃতীয় বিষয়টিও পুলিশকে নিয়েই। গাজীপুরে নির্বাচনকালে ইউনিফর্মধারী পুলিশ ও সাদাপোশাকের পুলিশ অনেক ব্যক্তিকে বাসা থেকে কিংবা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ আছে। অনেককে অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের একজন ছাড়া পুলিশ অন্যদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোনো স্বীকারোক্তি করেনি। নির্বাচনের পর তাঁদের বেশ কয়েকজনকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার না করলে তাঁরা কারাগারে গেলেন কীভাবে? এ প্রশ্নের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

এবার বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে আসি। এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে এককভাবে আমি ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল বরিশালের। সকালে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম বেশ ভালো ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে বিভিন্নমুখী অনিয়ম শুরু হয়। বেলা ১১টার মধ্যে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়, এভাবে ভোট গ্রহণ চলতে পারে না। মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারকে আমি জানাই, বরিশালের ভোট কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া প্রয়োজন। একপর্যায়ে কমিশনারদের সবাই ভোট বন্ধ করার বিষয়ে একমত হলেও নির্বাচন বন্ধ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে কি না এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবে কি না, ভেবে নির্বাচন বন্ধ করা থেকে আমরা বিরত থাকি। ইতিমধ্যে ছয়জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন এবং একজন প্রার্থীই প্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে বিজয়ী হন।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে পরে নির্বাচন কমিশনের যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, তার সামনে রিটার্নিং কর্মকর্তা যে বক্তব্য দেন, তার কিয়দংশ তুলে ধরছি: ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিরোধী প্রার্থীদের পুলিশ কর্তৃক অযাচিতভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আবার সরকারি দলের প্রার্থীর আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনায় পুলিশকে নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেছে। শুধু তা–ই নয়, উল্টো বিরোধী প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় পুলিশের অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে।’ অন্যদিকে নির্বাচনের সার্বিক পর্যালোচনায় তদন্ত কমিটির বক্তব্য: ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না এবং ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার এ বিষয়ে আন্তরিক ছিলেন না। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় কোনো পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেননি। ভোটকেন্দ্রসহ নির্বাচনী এলাকায় অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল নাজুক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুসরণ করেননি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রে ও ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রচুর বহিরাগতের অবস্থান ছিল।’

প্রায় ৫ হাজার পৃষ্ঠার সংযুক্ত ডকুমেন্টসহ টাইপ করা ৭১ পৃষ্ঠার মূল তদন্ত রিপোর্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি দুটি স্থান মাত্র উদ্ধৃত করলাম।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হলো, এসব নির্বাচনে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম সত্ত্বেও ভোটকেন্দ্রগুলোতে মোটামুটি শান্তি বজায় ছিল। শৃঙ্খলা কতটুকু বজায় ছিল, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। একই সময়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় নির্বাচনে ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। সেসব দিক বিবেচনায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ইতিবাচক বিষয়টি উপেক্ষা করা যায় না।

বর্তমানে বহুল প্রচলিত গায়েবি মামলা এখন আর গায়েবি আওয়াজ নয়। মাননীয় হাইকোর্ট পর্যন্ত এ ধরনের মামলায় পুলিশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয় বলে উল্লেখ করেছেন। ঢাকার পুলিশ কমিশনার মহোদয় পুলিশ বাহিনীকে গায়েবি মামলা না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও অনেক ক্ষেত্রে এরূপ মামলা চালু রয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো, শিডিউল ঘোষণার পূর্বে যে পুলিশ গায়েবি মামলা করেছে, শিডিউল ঘোষণার পর তার পক্ষে রাতারাতি পাল্টে গিয়ে নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা কতটুকু সম্ভব? এ প্রশ্ন মনে জাগে। পুলিশ বাহিনী নির্বাচনে সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি। তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।

কিছুসংখ্যক গায়েবি মামলার আসামিদের তালিকা বিরোধী দল থেকে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। যদিও অধিকাংশ পুরোনো মামলা। এসব মামলার অজ্ঞাতনামা আসামিদের অনেকের আদালত থেকে জামিন নেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। কোনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা থাকার কারণে তাঁরা নির্বাচনী প্রচারকাজ চালাতে ভয় পাচ্ছেন। এহেন ভীতি সর্বক্ষেত্রে অমূলক নয়। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাকে স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে নির্বাচনপূর্ব সময়ে প্রার্থীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এ সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে পরিপালন করা প্রয়োজন।

এ ক্ষেত্রে আরেকটি কথা বলতে চাই। ২০১৬ সালের ২৪ মে বাংলাদেশ সরকার বনাম ব্লাস্ট-এর মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় আপিল বিভাগ ‘গাইড লাইনস ফর ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিস’ শিরোনামে গ্রেপ্তার সম্পর্কে যে নির্দেশনাটি প্রদান করেছেন, তা কোথাও যথাযোগ্যভাবে পরিপালন করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আপিল বিভাগের নির্দেশনাটিতে মানবিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখার যে অভিব্যক্তি রয়েছে, তা পরিচালিত হলে পুলিশের আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা অনেক কমে যেতে পারত।

‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বলে একটা বিষয় নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রায়ই দাবি করা হয়ে থাকে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের আশ্বাস দিলেও সত্যিকার অর্থে এর তেমন কোনো কার্যকারিতা ছিল না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড একটি আপেক্ষিক কথা। এর কোনো নির্দিষ্ট পরিমাপক নেই। তবে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন বিধিবিধান সামনে রেখে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে বদ্ধপরিকর ছিল, এ কথা স্বীকার করতে হবে। কিন্তু নির্বাচনী এলাকার বাস্তব পরিস্থিতি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অনুকূল ছিল না। আমার মনে হয়, সরকার যদি সরকারি দলের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকে, তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পথ সুগম হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এককভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা সম্ভব নয়। তবু আমি মনে করি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে পুলিশের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। পুলিশ যদি সবার প্রতি সমান আচরণ করে, তাহলে সেটা সম্ভব হতে পারে।

আমি জানি, সিটি করপোরেশন নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক কথা নয়। আগেই বলেছি, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়গুলো উল্লেখ করেছি নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার জন্য। এটা কখনোই পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে অবমূল্যায়ন করার জন্য নয়। আমার বক্তব্য আত্মবিশ্লেষণ হিসেবেই গ্রহণযোগ্য।

আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি মিডিয়ায় যে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে তা হলো, নির্বাচন কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহে পুলিশ দুই মাস পূর্ব থেকে মাঠে নেমেছে। তারা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তাদের বিষয়ে নানারূপ তথ্য সংগ্রহ করছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পত্রিকামতে এই তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে পুলিশকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কমিশন নির্বাচন কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য কোনো নির্দেশনা দেয়নি। সুতরাং এসব কর্মকাণ্ড কে কী উদ্দেশ্যে করছে, তা রহস্যজনক। বলা বাহুল্য, অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্যের এই কর্মকাণ্ডে ব্যাপক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, যার দায় নির্বাচন কমিশনের ওপর এসে পড়ে।

প্রিয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ, আমি আগেও আপনাদের বলেছি, সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের নিমিত্ত আমরা যে শপথ গ্রহণ করেছি, আপনারা সেই শপথের অংশীদার। কারণ, নির্বাচন আমরা করি না, নির্বাচন আপনারাই করে থাকেন। আপনারা আমাদের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি। অতীতে যেসব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, আপনারা তাতে দক্ষতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আমি আশা করি, অতীতের মতো আপনাদের সার্বিক সহযোগিতায় এবারও নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তবু আমার বক্তব্যে আত্মবিশ্লেষণমূলক কথা বলতে হলো অধিকতর সচেতনতা সৃষ্টির জন্য।

এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসী আমাদের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যি বলতে কি, একাদশ জাতীয় নির্বাচন আমাদের আত্মসম্মান সমুন্নত রাখার নির্বাচন। আমরা কোনোভাবেই এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দিতে পারি না। আর এ কথা সত্য, আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হলে তার দায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর বর্তাবে এবং আপনারা প্রশ্নবিদ্ধ হলে আমরা দায় এড়াতে পারব না। সুতরাং আশা করি, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব।

  • মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনার
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ নভেম্বর ২৫,২০১৮ 

আবু বকর হত্যা - সিইসির নির্দেশ পালিত হবে কি?

সম্পাদকীয়

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবু বকর ওরফে আবু হত্যা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপির মধ্যে যে অভিযোগ পাল্টা–অভিযোগ চলছে, তা একেবারেই অনভিপ্রেত। তিনি একটি ইউনিয়ন পরিষদের চার দফা নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। একজন জনপ্রতিনিধি যে দলেরই হোন না কেন, তাঁর হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক কাম্য হতে পারে না।

পুলিশের ভাষ্য থেকে জানা যায়, আবু বকর বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের জন্য ঢাকায় এসে মেট্রোপলিটন হোটেলে উঠেছিলেন ১৫ নভেম্বর এবং ১৮ নভেম্বর সকালে তিনি হোটেলের ভাড়াও শোধ করেন। ওই দিন রাতে আবু বকর হোটেল থেকে বেরিয়ে যান এবং পরদিন বুড়িগঙ্গায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্রে বলা হয়, তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর অপহরণকারী পরিচয়ে তাঁদের কাছে টাকা চাওয়া হয় এবং পরে অপহরণকারীদের দেওয়া ১০টি বিকাশ নম্বরে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। আবু বকরের ভাতিজা জানান, ১৮ নভেম্বর রাত ৮টা ৫০ মিনিটে আবু বকরের কাছ থেকে ফোন আসে, যাতে তিনি তাঁকে কেউ মেরে ফেলতে চায় বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

যেকোনো হত্যাই মর্মান্তিক এবং তা নিয়ে রাজনীতি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। হত্যারহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধীদের ধরে বিচারে সোপর্দ করা সরকারের দায়িত্ব। থানায় অভিযোগ আসার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা তদন্ত করে কোনো তথ্য বের করতে পারেনি। তাদের এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। বিকাশের যে ১০টি নম্বরে টাকা পাঠানো হয়েছে, সেসব নম্বরের সূত্র ধরে অপহরণকারীদের চিহ্নিত করা কঠিন কাজ নয়। প্রশ্ন হলো, নির্বাচনকালীন সরকারের পুলিশ একজন বিরোধী দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর হত্যার ঘটনা উদ্‌ঘাটনে আদৌ আন্তরিক কি না। অথবা সে জন্য শ্রম ও মেধা খাটাতে রাজি আছে কি না। আমাদের পুলিশ বাহিনী এত দুর্বল নয় যে সুনির্দিষ্ট সূত্র থাকা সত্ত্বেও তারা অপরাধীকে চিহ্নিত করতে সমস্যার মধ্যে পড়বে।

আবু বকর হত্যার ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপির নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আমাদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেয়। বিএনপির দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে হোটেল থেকে তুলে নিয়ে গেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যে বলেছেন বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আবু বকর খুন হয়ে থাকতে পারেন, তার পক্ষেও তিনি কোনো তথ্য হাজির করেননি। একটি হত্যার ঘটনা নিয়ে এ ধরনের বাদানুবাদ পুলিশের তদন্তকাজকে যেমন ব্যাহত ও প্রভাবিত করতে পারে, তেমনি ঘাতকেরাও থেকে যেতে পারে লোকচক্ষুর আড়ালে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা আবু বকর হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য পুলিশ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও তদন্তের সাফল্য সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তফসিল ঘোষণার পর জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে যাওয়ার কথা থাকলেও তাদের কাজকর্মে এর ন্যূনতম প্রতিফলন টের পাওয়া যায় না। বরং নির্বাচন কমিশন যেসব কর্মকর্তাকে নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োগ করেছে, পুলিশ বিভাগ অযাচিতভাবে তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয়ের সন্ধানে ব্যস্ত। পুলিশের এসব তৎপরতা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির অন্তরায় বলে মনে করি।

আবু বকর হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটিত না হলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আরও বাড়বে, মানুষ ভয়ভীতিতে থাকবে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। বিএনপির পক্ষ থেকে আবু বকর ছাড়াও দলের কয়েকজন স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এর সবগুলো তদন্ত করে দেখা উচিত।

  • কার্টসিঃ প্রথমআলো/ নভেম্বর ২৫,২০১৮ 

‘ভোট করবে, জামিন নেবে, নাকি জেলে যাবে’

জেনুইন নির্বাচন না হলে বিপর্যয়

নির্বাচন ও ভোটাধিকার বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা প্রায় এক বাক্যেই বললেন, দেশবাসী একটি প্রকৃত নির্বাচন দেখতে চায়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যেটি হতে হবে ‘জেনুইন ডেমোক্রেটিক ইলেকশন।’ গোটা দুনিয়া বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে সহিংসতামুক্ত, অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখতে মুখিয়ে আছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, জনমতের সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটবে- এমন নির্বাচন সবাই চায়। যেখানে ভোট কারচুপি হবে না। রেফারি হিসেবে নির্বাচন কমিশন হবে পুরোপুরি নিরপেক্ষ। কমিশনের ভেতরে থেকে কেউ সিস্টেমেটিক ম্যানুপুলেশন বা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারবে না। সবার জন্য নিশ্চিত হবে সমান সুযোগ। কমিশন কারও আজ্ঞাবহ হবে না বরং মেরুদ- সোজা করে অর্পিত সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। প্রয়োজনে মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদলও আনবে।

কমিশন সেটি করতে ব্যর্থ হলে তারাই দায়ী থাকবে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, মানুষ যদি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা হারায় তবে জাতিগতভাবে বিপর্যয় নেমে আসবে। হানাহানির আশঙ্কাও করেন কেউ কেউ। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ নিয়েও কথা হয়। 

অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলেন, কোর্টে এখনও হাজারেরও বেশি লোক জামিন নিতে অপেক্ষায় আছে। এখন মানুষ নির্বাচন করবে, নাকি বেইল নেবে, নাকি জেলে যাবে? 

‘নির্বাচনের রাজনীতি ও জনগণের ভোটাধিকার’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্ট্যাডিজ। রাজধানীর ইস্কাটনস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাডিজ মিলনায়তনের ওই আয়োজনে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন- আইনজ্ঞ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, সামরিক ও বেসামরিক সাবেক কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, গবেষক, বিশ্লেষক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা। 

প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টার প্রাণবন্ত ওই আলোচনায় ছিল যুক্তি, পাল্টা-যুক্তি। সরকার, বিরোধী পক্ষ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের ত্রিমুখ বিতর্ক। সেখানে ঘুরে-ফিরে আসে বহুল আলোচিত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গ। ওই নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনরাও যে স্বস্তিতে ছিলেন না, সেটি স্বীকার করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সেখানে ২০১৪ সালের ওই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ না নেয়ার সমালোচনাও হয়। তবে সবাই এটা আশা করেন ৫ই জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না। আনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রফেসর ড. এম আতাউর রহমান। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। মুখ্য আলোচক ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম. হাফিজ উদ্দিন খান, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেটট শ ম রেজাউল করিম, বিএনপির সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, প্রফেসর আবুল কাশেম ফজলুল হক, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক পিএসও ও বিজিবির সাবেক ডিজি লে. জেনারেল (অব.) মইনুল ইসলাম, ব্যবসায়ী নেতা আবদুল হক, গবেষক ড. এনামুল হক, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ গ্রুপ ফেমার প্রেসিডেন্ট মনিরা খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইকারাস ইউএসএ ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মাহমুদ রেজা চৌধুরী এবং সেন্টার ফর গভর্নমেন্ট স্টাডিজের ভাইস চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ। 

চ্যানেল আই-এর তৃতীয় মাত্রার উপস্থাপক সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন মোটা দাগে কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করেন। বলেন, আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য হবে, নাকি ২০১৪ সালের মতোই ‘ত্রুটিযুক্ত এবং ব্যর্থ’ হবে, এটাই এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হলেও সেটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। 

প্রাক্তন ওই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশন মাঝে মধ্যে এমন সব কথা বলছে যা তারা নিজেদের বিতর্কিত করে ফেলছে। মনে রাখতে হবে বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে এই নির্বাচনের দিকে। সরকারের অধীনে এর আগে নির্বাচন হলেও এবারই প্রথম দলীয় সরকারের অধীনে সব দল অংশ নিচ্ছে। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ফ্রি ও ফেয়ার করা ইসির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে কমিশনকে সরকারই সব রকম সহযেগিতা করতে হবে। অবশ্য বক্তব্যে ড. সাখাওয়াত দেশে ‘প্রকৃত নির্বাচন’ই হবে আশা করে বলেন, এর ব্যত্যয় ঘটলে জাতীয়ভাবে ‘বিপর্যয়’ হবে। 

আলোচনায় অংশ নেয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ৩০শে ডিসেম্বরের ভোট হবে কি না? তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। অবশ্য তিনি এজন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন এবং এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমেদের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে দায়ী করেন। বলেন, তারা যেভাবে ভোট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন, তাতে আমাদের মধ্যে আশঙ্কার দিচ্ছে। তাদের বক্তব্যকে তো আমরা ফেলনা মনে করি না। সরকার বা তার দল প্রকৃত নির্বাচনই চায় দাবি করে হানিফ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন। যারা কমিশনে আছেন তারা যদি কারও আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করেন তবে সে দায় তাদের, সরকার কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। 

সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন। মিন্টু বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী সহিংতার জন্য ঢালাওভাবে বিএনপিকে দায়ী করা হয়। অথচ তার অভিজ্ঞতা হচ্ছে তিনি সে সময় ঘরের বাইরেই বের হননি। কিন্তু তার বিরুদ্ধেও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ২২টি মামলা দেয়া হয়েছে। ওই সহিংসতার নেপথ্যে কারণ খুঁজতে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি। মিন্টু অভিযোগ করেন, বর্তমানে যে অবস্থা চলছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব।

সরকার ও ইসির কঠোর সমালোচনা ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের। গোলটেবিল আলোচনায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশ নেয়া সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করেন। 
এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকা প্রবীণ ওই আইনজীবী বলেন, পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রশাসন রাজনৈতিক দলের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের এখানে আইনের শাসন অনুপস্থিত। এক্সিকিউটিভ পাওয়ার পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে এবং এর কোনো একাউন্টিবিলিটি বা দায়বদ্ধতা নেই। নির্বাচনের এই সময়েও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কোর্টে এখনও গেলে আপনারা পাবেন হাজারেরও বেশি লোক জামিন নিতে অপেক্ষায় আছে। এখন মানুষ নির্বাচন করবে, নাকি বেইল নেবে, নাকি জেলে যাবে? এখন মানুষকে ঘরছাড়া করে ফেলা হচ্ছে। ‘হয়রানিমূলক’ মামলা ও ধরপাকড়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তফসিল ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপেও ‘গায়েবি’ মামলা বন্ধের দাবি ওঠে ছিল। দলীয় ব্যক্তিদের নির্বাচনের দায়িত্ব না দেয়ার দাবির পাশাপাশি ভোটগ্রহণে ইভিএমের ব্যবহার নিয়েও আপত্তি করছে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু এটি সরকার ও ইসি আমলে নেয়নি।

এই দুই প্রসঙ্গেও কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। তার ভাষায়- ‘পত্রিকায় দেখেছি সিইসি কালকে নাকি পুলিশকে বলেছে, আপনার সম্ভাব্য প্রিজাইডিং অফিসারদের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য তাদের বাড়িতে বাড়িতে কেন যাচ্ছেন, যা করবেন চুপচাপ করবেন। তাহলে কারা প্রিজাইডিং অফিসার হবে এবং হবে না সেটাও ওখানে সিদ্ধান্ত হচ্ছে? 

তিনি বলেন, ‘ইভিএম কি জিনিস আমি তো বুঝি না। ইভিএম কোম্পানিটা কোথাকার সেটাও জানি না। এটা কি এমআরআই মেশিনের মতো কোনো মেশিন নাকি? আমি এর সম্পর্কে কিছুই জানি না। ইভিএমের ডেমো করা হচ্ছে, এটা বিরাট প্রমোশন, আমি কোম্পানিটার নাম জানতে চাই।’ 

সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য আমীর-উল ইসলাম কয়েক দশক আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলেও তিনি এই নির্বাচনকে দেখছেন ‘মুক্তির পথ’ হিসেবে। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সাধারণ মানুষ কোনো রকম পুলিশি হয়রানিতে পড়বে না, সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি কি না? নিলে কেন তারা কোনো জামিন পাচ্ছে না, সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টে বেইল নিতে আসছে। পরিস্থিতি এখন এ রকম। ইতিহাস বলে, নির্বাচন হচ্ছে মুক্তির পথ। 

এই নির্বাচন জনগণকে উপভোগ করতে দিতে হবে।’ আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম বলেন, নির্বাচন ঘিরে যা ঘটছে তা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া আছে। যেমন সুপ্রিম কোর্টের সামনে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ আসছে জামিনের জন্য। তাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং অনেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি বাদ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আসতে হচ্ছে জামিনের জন্য। যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলো কী ধরনের মামলা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কোন দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর কোন দলের নেতাকর্মীরা আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন, এটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

নির্বাচন কমিশনের সাহস দেখাতে অসুবিধা কোথায়: মইনুল ইসলাম। বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মইনুল ইসলাম তার বক্তৃতায় বলেন, আমি যদি মনে করি হারি নাই। মরে গেলেও আমি হারিনি। আমরা হারতে পারি না। একাত্তরে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করেছি, কেউ এটা আমাদের দিয়ে দেয়নি, প্রেজেন্ট করেনি। এবারও আমাদেরটা আমাদের আদায় করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বলা হয়েছে তাদের সবই আছে। তাদের পাওয়ার এমন যে এটা বাঘের মত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- বাঘটা কী খাঁচার, না বনের। খাঁচার বাঘ হলে ভিন্ন কথা। নির্বাচন কমিশন যদি বনের বাঘের মত হয় তাহলে তাদের সাহস দেখাতে অসুবিধা কোথায়? ভোট সুষ্ঠু করার জন্য যদি ৬৪ জেলার ডিসি বদলাতে হয়, প্রয়োজন মনে করলে তারা বদলি করবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধবে কে? ভোটের পরে কি হবে? এই চিন্তায় তারা যদি ভয় পান, তাহলে একজন প্রিসাইডিং অফিসার কী সাহস করবে? তারা তো নিগৃহীত হওয়ার ভয়ে থাকবে। কমিশন সাহস না করলে তারা সহসী হবে না। এটা অসম্ভব। 

ইভিএম নিয়ে আপত্তি

অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম. হাফিজ উদ্দিন বলেন, ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের হঠাৎ সিদ্ধান্ত, বিপুল ব্যয় এবং অনমনীয় অবস্থান প্রশ্নের উদ্রেক করে। নির্বাচন কমিশন যদি প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকা- করে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। যেটা নির্বাচন কমিশনের বলার কথা, সেটা আগেই সরকার কিংবা সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক বলে দিচ্ছেন। এগুলো মানুষের মনে প্রশ্নের জš§ দেয়। 

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা ভয়াবহ সংকটে আছি। সংকটের কারণেই অনেক দিন পর সবগুলো দল নির্বাচনে অংশ নিলেও সেই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যেহেতু দলীয় সরকার এবং সংসদ বহাল রয়েছে, সে কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমতল ক্ষেত্র তৈরি হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। আরও সন্দেহ ভোটগ্রহণ ঠিকমতো হলেও ভোট গণনা সঠিকভাবে হবে কি না। তিনি বলেন, এত সন্দেহের সৃষ্টি হতো না যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এত বিভেদ, অনাস্থা, অবিশ্বাসের সম্পর্ক না থাকত। তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে। অনুষ্ঠানে শ ম রেজাউল করিম প্রতি পাঁচ বছর পর শুধু নির্বাচন নিয়ে না ভেবে রাজনীতিতে স্থায়ী গুণগত পরিবর্তনের বিষয়টি ভাবার তাগিদ দেন।

বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন তার নিজের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরও নির্বাচনের নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়াটা রাজনীতিবিদদেরই ব্যর্থতা। স্থপতি মোবাশে^র হোসেন বলেন, যে রাজনীতিবিদরা তাদের সন্তানকে বিদেশে পাঠিয়ে লেখাপড়া করান এবং বিদেশের নাগরিক হতে উদ্বুদ্ধ করেন তাদের এদেশে এমপি-মন্ত্রী হওয়া কতটা নৈতিক এবং উচিত তা বিবেচনা করা জরুরি। যারা বিদেশের নাগরিকত্বকে প্রাধান্য দেন, যতই দেশ নিয়ে কথা বলুক, তারা দেশের উন্নয়ন করতে পারেন না। কারণ, তাদের সত্যিকারের টান দেশের জন্য নেই। মনিরা খান বলেন, বিগত সময়ে যত নির্বাচন কমিশন হয়েছে তার মধ্যে দু-একটা ছাড়া বাকি সবকটিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে করা যায় না উল্লেখ করে বলেন, তিন স্তরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে হয়। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে পর্যবেক্ষণ ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ইভিএম কেনার জন্য চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে, অথচ চারশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকায় ২০টি ইউলুপ নির্মাণ করা হলে যানজট অধিকাংশই নিরসন সম্ভব। মানুষ আজ যানজটে অতিষ্ঠ। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ২৫,২০১৮ 

EC role so far not satisfactory

Space for opposition very restricted, seminar told


Political and security experts yesterday said credibility of the upcoming parliamentary election depended on the Election Commission, but its performance so far was not satisfactory.

The EC is adamant about introducing controversial electronic voting machines (EVMs) in the polls without adequate preparations. It procured the EVMs hurriedly that created doubts among the voters over their proper use, they said at a seminar in the capital.

On the other hand, the commission is reluctant to respond to complaints raised by the opposition parties and is not providing them with adequate space, they added.

The Centre for Governance Studies, an organisation working for good governance, organised the seminar on “Electoral Politics and People's Right to Vote” at the auditorium of Bangladesh Institute of International and Strategic Studies.

Presenting the keynote paper on the topic, former election commissioner Brig Gen (retd) M Sakhawat Hussain said, “The pre-electoral phase seems to be dominated by the party in power providing, in recent days, a very restricted space to opposition.”

This would spill over into the next phase, the electoral period, and put a huge stress on the EC, he said.

“… the ball is now in the EC's court which is mandated by the constitution to hold a 'free', 'fair', 'credible' and 'genuine', election,” he added.

Also a security expert, Sakhawat said the “pre-electoral period” was dominated by the ruling party because the government, which is mainly responsible for maintaining equilibrium, “failed to do so”.

He said the election would pose unprecedented challenges to the EC for various reasons. Both the government and the EC would have to act maturely.

Sakhawat also criticised the state of electoral politics of forming alliances, terming it “confusing”.

“The electoral politics has assumed a new but confusing state as various types of political travellers are jostling to accommodate themselves in what is known as alliances, divorcing ideology if there were any,” he added.

Former caretaker government adviser M Hafizuddin Khan said the EC's role and government support were crucial in holding a credible election.

He also doubted whether the EC was aware of its responsibility and power.

“The Election Commission can recommend dissolving parliament if the EC deems it necessary for a fair election. It did not do so yet,” he told The Daily Star over the phone after the seminar.

Hafizuddin added that the EC's urgency for procuring the EVMs raised doubts among the people over their proper use. EVM is a modern technology. However, its acceptability to the people has to be confirmed first.

Badiul Alam Majumdar, secretary of Sushashoner Jonno Nagorik, said there were many challenges for holding a fair election as it would be held under a partisan government, and parliament was not dissolved yet.

“It is a big concern whether these [the prevailing situation] will ensure a level-playing field.”

Concern also remains over competitiveness of the election though most political parties have vowed to participate, he added.

On the present EC, he said transparency had not been ensured while forming it and this was a “systemic manipulation”.

“Neutral and courageous people have not been chosen, but biased people were given priority,” he added.

A prerequisite for “genuine” polls is whether voters could cast their votes peacefully for their desired candidates and whether votes were counted properly, he said.

Iktedar Ahmed, former Supreme Court registrar, said the EC was empowered to deploy as much workforce as it needed. It could ensure a more credible election by doing so instead of using the EVM.

Fair Election Monitoring Alliance President Munira Khan said voters would have to be provided with a sense of security that they would not be harassed after casting votes for preferred candidates.

Noted jurist barrister M Amir-Ul Islam said while the election was nearing, some people were still fighting legal battles to be eligible for contesting the polls.

Prof Abul Quasem Fazlul Huq of Dhaka University said the EC will do the right thing if it does not use the controversial EVM in the election. 

BNP Chairperson Khaleda Zia's Adviser Abdul Awal Mintoo claimed that a credible election would not be possible under the current EC.

The EC has to depend on the administration for holding an election while the administration is under the present government, said Awal, also a former president of the Federation of Bangladesh Chambers of Commerce and Industries.

Awami League Joint General Secretary Mahbubul Alam Hanif said his party wanted a peaceful parliamentary election because they were respectful of people's mandate.

He added that the present EC has been formed with transparency and on the basis of recommendations of a search committee. 

  • Courtesy: The Daily Star /Nov 25, 2018

River-grabbing must stop

EDITORIAL

Can we save our rivers before it's too late?


The Daily Star yesterday revealed how a 158-acre area of Karnaphuli River in Chattogram was grabbed by individuals linked to the ruling party. The occupied area was then rented out to low-income families. But the local administration has failed to reclaim the land, let alone prevent fresh attempts to grab land. The day before yesterday, we also reported on how a mighty river in Nilphamari turned into a drain because of rampant grabbing.

Both the cases highlight the blatant failure of the authorities concerned to prevent our rivers from being occupied by powerful individuals—that too, in spite of the longstanding concerns of environmentalists and urban planners. The problem is so severe in Dhaka that 60 percent of wetlands in the city have disappeared in just 30 years.

Rivers are critically important to our environment and livelihood, as they transport water, provide habitat, support economic activities and enable transportation.

Had we been able to preserve our rivers, canals and wetlands, many of our urban woes would never have emerged. For instance, the grabbing of rivers and canals is widely blamed for the extreme waterlogging problem prevalent in big cities like Dhaka and Chattogram. Had our old waterways survived, our traffic congestion might not have been intolerable, as it is now, as the waterways could have served as an alternative route.

We ignore the danger of river-grabbing at our own peril. Unless we take this issue seriously, we risk more of our rivers, a lifeline for a sustainable city, being gradually occupied by influential individuals and, as such, inviting more troubles. For the sake of the environment and our very wellbeing, we need to take care of our rivers.

  • Courtesy: The Daily Star /Nov, 25, 2018

Pre-poll tax exemptions to weigh on collection

Over Tk 133b loss feared

Tax collection during the current fiscal year is set to face a big blow owing to what economists call "populist policy" of exemptions before the general elections. On the basis of official projection, the FE estimated around Tk 133 billion loss in tax collection this year as major revenue-generating sectors got the benefit after passing the Finance Bill-2018.

The National Board of Revenue (NBR) will even lose the taxes it received last year from those sectors, officials said.

In the first quarter of fiscal year (FY) 2019, the NBR experienced a Tk 114 billion shortfall in revenue collection against its target.

It has been found that tax exemption offers picked up momentum in the last few months, meaning the period ahead of December elections.

Economists termed the government measure "populist."

Dr Mirza Azizul Islam, a former finance adviser, said the tax exemptions usually given after persuasion from various pressure groups.

Tax exemptions appear to be offered for incentivising local industries but they act as a profit-maximising measure by businesses, he said.

Since businesses have political connections, they are getting the benefits, he added.

"Readymade garment is not an infant industry in Bangladesh. But it has been enjoying the incentives for a long," he said.

He argued fiscal incentives are not a big matter for investment, it has little impact if infrastructure, utilities and other factors remain favourable.

He said a large amount of tax incentives ahead of election may be termed 'populist policy" of the government. Tax exemption offers in three wings -- income tax, Value Added Tax and Customs -- were plenty this year.

The NBR officials counted Tk 110 billion revenue loss in collection, compared to that of the previous fiscal, for offering tax waiver to the Liquefied Natural Gas (LNG) sector alone.

The gas sector contributed around a quarter of the total VAT collection of Large Taxpayers Unit (LTU) last year.

The NBR also offered tax benefit to the export-oriented sectors by cutting tax at source rate to 0.60 per cent from 1.0 per cent. It also cut corporate tax rates for the readymade garments industries.

Income tax wing estimated Tk 15 billion loss, compared with its projected revenue income this year due to the exemptions.

Also, the NBR offered VAT exemptions from ocean-going ships, travel agents' commission, and taxes benefit for Dhaka Stock Exchange (DSE) share holders.

Officials of the Large Taxpayers Unit (LTU) under the VAT wing said the arm would need to achieve 100 per cent growth in collection to achieve the target for this year.The target of the wing has been set at Tk 600 billion for the current fiscal year against the last year's actual collection of Tk 450 billion.

Officials said such exemption proposals have remained shelved during the last three to four years due to the government's policy to discourage tax waiver culture.

Ferdaus Ara Begum, chief executive officer (CEO) of Business Initiative Leading Development (BUILD), said the tax-exemptions should be time-bound, not in perpetuity, to help some sectors grow.

"There must be a review of the tax incentives after a certain period to see the impact of the waiver," she said. In an analysis, BUILD has found that some 408 industries enjoyed tax holiday facilitates.

It has been found the government cannot phase out tax exemptions from particular areas like the readymade garment sector.

In the first quarter, the NBR faced a Tk 114 billion shortfall against its target.

Tax revenue collection grew by 5.2 per cent in July-September period against 20 per cent in the corresponding period of the last year, said a provisional data of the NBR.

All the three wings of NBR -- income tax, VAT and customs -- missed their respective targets for the period. VAT collection fell short of the target by Tk 51.52 billion followed by customs duty Tk 40.04 billion and income tax Tk 22.75 billion.

Asked about the impact of the exemptions on the current fiscal's tax revenue collection target, NBR chairman Mosharraf Hossain Bhuiyan said the board has not conducted any analysis of revenue loss yet.

He, however, declined to comment on this issue.

The government has set a Tk 2.96 trillion target for the NBR this current fiscal.

  • Courtesy: The Financial Express /Nov 25, 2018

Fire risk remains in half of Accord factories

Global campaign group finds in study


More than half of the Accord-inspected 1,600 garment factories have not installed adequate fire detection and prevention system yet, according to latest findings.

On the sixth Tazreen factory fire anniversary, advocacy group Clean Clothes Campaign (CCC) revealed this, findings urging the Bangladesh government to support the Accord's appeal to lift the restraining order.

Another rights group-Industriall Global Union-announced that the transition Accord signed by nearly 200 global fashion brands and retailers will run its activities from Amsterdam office in case of failure to operate in Bangladesh.

"Grave concerns remain, as for example 56 per cent of the factories without proper fire alarm still fail to have adequate systems in place," the campaign group said in a statement issued on Saturday.

Besides, Accord in its latest progress report, said some 45 per cent of its inspected factories have so far installed fire detection and prevention system.

Upon starting work in 2013, Accord engineers found that 97 per cent of the over 1,600 factories under its purview had no safe emergency exits and 91 per cent had no adequate fire detection or alarm system.

Five years later, 97 per cent of lockable or collapsible gates have been removed and in total 74 per cent of all found fire safety defects have been corrected, with another 12 per cent still pending verification, the campaign group noted.

The Accord, however, said until November 01, about 90 per cent of the initially identified safety flaws including fire, electrical and structural issues have been corrected.

Citing the deadly Tazreen factory fire that killed at least 112 workers, it said though workers eventually tried to flee, they found out that gates were locked, no emergency exits while windows on lower floor were barred.

"Bangladesh is moving fast towards a situation in which factories could quickly return to the death traps that they were in 2012," it noted.

The announced forced closure of the Bangladesh Accord's domestic office operations later this month threatens to undermine the positive developments of the last five years and to plunge the country back into a situation in which workers will have to fear for their lives when entering their workplace, the CCC said.

Ineke Zeldenrust of Clean Clothes Campaign said, "The progress reached on fire safety by the Bangladesh Accord is under severe threat now that its Bangladesh office operations might be closed after November 30."

This will impair the Accord's ability to inspect and monitor factories in Bangladesh and violates previous agreements that Accord would remain fully operational until domestic institutions have the technical capacity and the political will to perform inspections and ensure remediation, she explained.

"The risk of new factory tragedies looms large, which is a reputational and legal risk for brands, but in which workers pay the largest price of all: their lives," Ms Zeldenrust added.

If the Accord is prevented from having an office in Bangladesh, it will continue to run from Amsterdam. The legally-binding provisions for the transition Accord signed by almost 200 global fashion brands and retailers with unions will remain in place. Jenny Holdcroft, Industriall Global Union assistant general secretary said.

Despite immense progress, the work of the Accord is not complete, she said adding the Remediation Coordination Cell (RCC) is not ready to take on the rigorous safety monitoring system currently implemented by the Accord.

When asked, Md Siddiqur Rahman president of the Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association (BGMEA), said initially it was agreed that Accord would provide remediation completion certificate after fixing the flaws identified in initial inspection.

Accord engineers have been putting new findings in follow-up or verification inspections and the 45 per cent progress might be the result of such new recommendations or the platforms pending verification, he noted.

Echoing his business colleague, Md Hatem, vice president of the Exporters Association of Bangladesh, said operating from Amsterdam would create further hassle, which the platform might be doing to stay in Bangladesh.

They should hand over the activities to the cell and each buyer also then can follow up, he noted.

  • Courtesy: The Financial Express/ Nov 25, 2018

Ills of skewed policy supports

EDITORIAL

The observation made in this year's UNCTAD report on the least developed countries (LDCs) that policies in poor developing countries being biased towards some specific sectors create barriers to structural transformation and sustainable development of their economies is applicable to Bangladesh.  It is no secret that successive governments have been patronising some selected sectors, including readymade garments, textiles, plastics, food processing, through policy supports for more than three decades. Such supports were undeniably necessary to help these sectors make a place in the global market and earn substantial amount of foreign currency.

The policymakers have not, however, been equally mindful about locating some other potential and prospective sectors of the economy that deserve genuine policy supports. Despite strong pleas from the entrepreneurs, the government has not come forward to provide necessary support for the development of those sectors. Under such a skewed system of public policy supports, entrepreneurship development and structural transformation have suffered.

The negative implications of a biased policy of patronisation are quite evident. The country has become largely dependent on a very small number of items for its export earnings. Such dependence is unhealthy for the economy of the country. That is why the issue of diversification in export basket has been highlighted time and again by economists, and all domestic as well as multilateral stakeholders. The growth of other potential sectors is necessary not just to boost exports, but also to create new employment opportunities in the formal manufacturing sectors.

The UNCTAD (United Nations Conference on Trade and Development) report has also noted with concern that growth of smaller and younger firms in poor developing countries, including Bangladesh, face hurdles because of the absence of competitive policies. Similarly, higher startup costs and lack of access to formal sources of financing are thwarting the entry of small enterprises and informal firms into the market. Besides, factors such as higher tax rates, corruption and fear of harassment in the name of inspection do discourage entrepreneurs to get registered in LDCs.

It is a truism that unhindered growth of small enterprises in viable sectors is essential for economy and employment generation. This is an area where the government needs to extend adequate policy support. No matter what the official statistics say, the rate of unemployment in the country is very high. The actual number of unemployed people remains hidden under the term 'self employed'. Many vocations that unemployed people choose to make a living are not at all rewarding, financially, and dignified, socially. 

Bangladesh is poised to acquire the status of a middle income country soon, but there is no sign yet that hurdles to the development of entrepreneurship and enterprises, particularly the smaller ones, would be removed any time soon. But the fact remains that small enterprises hold the key to country's development and employment generation. It, thus, remains an important job for the government to devise appropriate policies that would ensure proper growth of small enterprises. Hopefully, the policymakers would not shy away from that task.

  • Courtesy: The Financial Express /Nov 25, 2018