Search

Sunday, December 2, 2018

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর ঝুঁকিতে — মুডি’স ইনভেস্টর্স সার্ভিসের রিপোর্ট

খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ভবিষ্যৎ অবস্থা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বৈশ্বিক রেটিং এজেন্সি-মুডিস। প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) তাদের ‘ব্যাংকিং সিস্টেম আউটলুক-বাংলাদেশি ব্যাংকস’ শীর্ষক রিপোর্টে বলেছে, ‘দেশটির অর্থনীতি অনেক ভালো হলেও ব্যাংকিং খাতের অবস্থা নাজুক।’

মুডি’স-এর বিশ্লেষক টেংফু লি বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক তৈরি গার্মেন্ট শিল্পের কারণে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়া ও রেমিট্যান্সের হার ফের বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশীয় ভোগ/ব্যয়ে সহায়ক হবে।’ তিনি বলেন, ‘তবে বেশ খণ্ড-বিখণ্ডিত ব্যাংকিং খাতে ‘অ্যাসেট কোয়ালিটি’ বা ঋণের মান অবনতিশীল। কর্পোরেট গভর্ন্যান্সে অন্তর্নিহিত দুর্বলতার (বিশেষ করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহে) কারণে খেলাপি ঋণের অনুপাত এ বছরের জুন নাগাদ ১০.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। অশ্রেণিভুক্ত পুনঃতফশিলকৃত ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকায় তা ‘অ্যাসেট কোয়ালিটি’র ওপর আরো ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।’

মুডি’স-এর এই বিশ্লেষণ সংস্থাটির ‘ব্যাংকিং সিস্টেম আউটলুক- বাংলাদেশি ব্যাংকস: হাই অ্যাসেট রিস্কস ড্রাইভ নেগেটিভ আউটলুক ডিসপাইট রোবাস্ট ইকোনমি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

মুডি’স-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পূর্বাভাস মূলত ৬টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট করে বললে, মুডি’স বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের পরিচালনা পরিবেশকে স্থিতিশীল, বিনিয়োগ ঝুঁকিকে অবনতিশীল, পুঁজি অবনতিশীল, মুনাফা অর্জন ও কার্যক্ষমতা অবনতিশীল, অর্থায়ন ও তারল্য স্থিতিশীল এবং সরকারি সহায়তাকে স্থিতিশীল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অ্যাসেট কোয়ালিটির অবনতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋণের ব্যয় (ক্রেডিট কস্ট) বৃদ্ধি পাবে। এ ধরনের পরিস্থিতি ব্যাংকগুলোর লাভ করার সক্ষমতা হ্রাস করবে, বিশেষ করে যখন সুদ থেকে প্রাপ্ত আয়ও সীমিত থাকবে।

পুঁজি তৈরির হার দুর্বলতর হওয়ায়, লাভকে পুঁজিতে রূপান্তরের হারও কমবে, যদিও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো আগামী বছর পুঁজি বাড়ানোর বাধ্যবাধকতা পূরণে আয় ধরে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর পুঁজি আগের মতোই অপর্যাপ্ত থাকবে। সরকারের পুঁজি-প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল থাকবে।

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে অবশ্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও তারল্য থাকবে। ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে আর্থিক পরিস্থিতি চাপের মধ্যে পড়লেও, অর্থ সংক্রান্ত কড়া নিয়মনীতি সহজ করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হওয়ায় এখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে। নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছে অগ্রিম অর্থ জমা রাখার অনুপাত সীমিত হওয়ায় (যা ২০১৯ সালের মার্চ থেকে কার্যকর হবে) অর্থায়নের ঝুঁকি আরো হ্রাস পাবে।

মুডি’স ধারণা করছে, বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকিং সিস্টেমের প্রতি আগের মতোই সহায়ক থাকবে। ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার রেকর্ড রয়েছে সরকারের। এমনকি প্রয়োজনের সময় ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেয়ার সামর্থ্য সরকারের রয়েছে, যেটা দেশটির তুলনামূলক কম সাধারণ ও বৈদেশিক ঋণের ভার দেখে বোঝা যায়। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/  ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

অন্য কেউ ভোট দিয়ে দিলেও আসল ভোটার ভোট দিতে পারবেন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজনের ভোট অন্য কেউ দিয়ে গেলেও আসল ভোটার তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা যদি এ ধরনের অভিযোগে আসল ভোটারকে চিহ্নিত করতে পারেন তাহলে ভোটারকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দিতে হবে। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জাস্ট অ্যালাউ হিম উইদআউট এনি কোয়েশ্চেন’। 

গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে অনেক সময়   দেখতে পাই ভোটার এসে অভিযোগ করে তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা যদি ঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন তাহলে এরকম হওয়ার কথা নয়। একজনের ভোট আরেকজনে দিতে পারার কথা নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইনে এরপরও আসল ভোটারের ভোট দেয়ার বিধান আছে।

প্রিজাইডিং কর্মকর্তা যদি সন্তুষ্ট হন যে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিই সত্যিকার ভোটার, তার ভোটটা অন্য কেউ দিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। প্রয়োজনে কর্মকর্তারা আইনটাকে ফলো করবেন। তাহলেই আর কেউ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারবে না।

তবে ভোটকেন্দ্রে প্রকাশ্যে কেউ ব্যালটে সিল মারতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন রফিকুল ইসলাম। জনসম্মুখে ভোট দেয়াকে বেআইনি উল্লেখ করে কর্মকর্তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড গ্রহণ না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। 

নির্বাচন কমিশনার জানান, অনেক ভোটার বলতে পারেন আমার ভোট আমি প্রকাশ্যে দিয়েছি এতে অসুবিধা কোথায়? যেহেতু আইনে এটা পারমিট করে না, কর্মকর্তারাও অ্যালাউ করবেন না। প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের প্রতিও নির্দেশনা থাকবে, প্লিজ ডোন্ট অ্যালাউ ইট। ভোট দেয়ার এমন প্রক্রিয়া বেআইনি ও এ ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।  

মাঠ পর্যায়ে থাকা কর্মকর্তাদের নির্বাচনের আসল কাণ্ডারি উল্লেখ করে রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন করেন আপনারা, ইলেকশনের পরিকল্পনা করে কমিশন ও সচিবালয়। আপনাদের কাছেই আমাদের সবকিছু, মান, সম্মান-ইজ্জত ন্যস্ত। আপনাদের ভূমিকার ওপরই নির্ভর করবে কমিশনের ইমেজ কেমন হবে? নির্বাচনী কর্মকর্তারা ব্যর্থ হলে কমিশনকে বলা হবে অপদার্থ, অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন কমিশন। তিনি বলেন, নির্বাচন মানেই কিন্তু একদিন। সূচিতে ৪৬-৪৫ দিন যাই থাকুক না কেন নির্বাচন মানে একদিন, ভোটের দিন। নির্বাচনের দিন কি হলো তার ওপরই নির্ভর করবে কমিশনের সফলতা-ব্যর্থতা। ভোটের দিন যদি আইনানুগ কাজ না হয়, তাহলে পরে কিন্তু আমরা সবাই প্রশ্নবিদ্ধ হবো। 

তিনি আরো বলেন, পত্রিকা খুললেই একটাই কথা, সবার  ভেতরেই শঙ্কা ভোট দিতে পারবেন কিনা? ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা? কর্মকর্তারা যদি ব্যালটটাকে ঠিকমতো সংরক্ষণ করেন, কেন্দ্রটাকে ঠিকমতো তৈরি করেন, সঠিকভাবে দায়িত্বপালন করেন তাহলে এরকম ভাবনা হওয়ার কথা নয়। আপনারা যদি কাউকে জোর করে বের করে না দিয়ে এজেন্টদের ঠিকমতো রাখেন তাহলে কোনোভাবেই একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবে না। কোনো ভোটারকে চিহ্নিত না করা পর্যন্ত তাকে ব্যালট পেপার দেয়া যাবে না। এসব নিশ্চিত করতে পারলেই কোনোভাবে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে কিনা- ভোটারদের এমন শঙ্কা আপনাদের দেখার বিষয় নয়। রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোটার কেন্দ্রে আসলে তার ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা আপনাদের কাজ। ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসার পরিবেশ তৈরি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করবেন। এরপরও কোনো অঘটন ঘটলে কমিশন সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। 

নির্বাচনী সরঞ্জাম ঠিকভাবে বুঝে নিতে এবং ভোটের পর যথাসময়ে ফেরত পাঠাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স পাবার পর তার দেখভাল করা কর্মকর্তাদেরই দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রয়োজনে ভোটের আগের রাতে নিজ সন্তানের মতো এসব পাহারা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের সিদ্ধান্তই সব। 

তিনি ভোটগ্রহণে যে সিদ্ধান্তই নেবেন সবাইকে তা মেনে চলতে হবে। নির্বাচনের আগে যেকোনো ধরনের অনিয়ম ঠেকাতে সারা দেশে নির্বাচনী তদন্ত কর্মকর্তা কমিটি করা হয়েছে। এসব কমিটির সদস্য ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রায় সাত লাখ নির্বাচনী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান তিনি। কর্মশালায় আরো বক্তব্য দেন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক। নয়টি জেলা থেকে আসা প্রায় চারশ’ কর্মকর্তা এই প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন।   

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/  ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

বেড়াতে গেছে আচরণবিধি

শাহদীন মালিক

হাইকোর্টে দু-তিনজন নিয়মিত বই বিক্রেতা আছেন। প্রায় সপ্তাহে একবার আইনের নতুন বই নিয়ে আইনজীবীদের রুমে রুমে যান। ‘স্যার, বইটা গতকালই বেরিয়েছে। দাম ছয় শ টাকা, কিন্তু আপনার জন্য চার শ টাকা।’ দুই শ টাকা বাঁচানোর আনন্দে কিনে ফেলি। তাঁদের বদৌলতে আইনি বইয়ের খোঁজে দোকানে যাওয়ার বিশেষ প্রয়োজন পড়ে না। দু-চার শ টাকার বই হলে সহজেই কিনে ফেলি। আর দাম যদি হাঁকে দশ হাজার টাকা, তখন ঢোঁক গিলে আমতা-আমতা করে বলি, দুই সপ্তাহ পরে এসো। বলা তো যায় না, এই দুই সপ্তাহে বড় মক্কেল পেয়েও যেতে পারি।

নির্বাচন কমিশনের ছাপানো ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল’-এর দুইটা কপি কিনে ফেলেছি গত সপ্তাহে। বইটিতে দাম লেখা নেই। ধরে নিচ্ছি, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট হরেক ধরনের কর্মচারী, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, এজেন্টসহ সবারই কাজে লাগবে। কিছু কপি নিশ্চয়ই বিলি করা হবে বিনে পয়সায়। এই সময়ের জন্য ম্যানুয়েলের ২৭৮-২৮৮ পৃষ্ঠায় ছাপানো ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আইন। এক অর্থে সাদামাটা বিধিমালা। নির্বাচনের আগে অর্থাৎ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের আগের দিন। অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক দল, মনোনয়নপ্রত্যাশী, প্রার্থী, সমর্থক এবং অন্যান্য ব্যক্তি কে কী করতে পারবেন বা পারবেন না, তার বেশ বিস্তারিত বৃত্তান্ত আছে এই বিধিমালার মোট ১৯টি বিধিতে। কিছু ফিরিস্তি অনেকেরই জানা হয়ে গেছে।

উক্ত বিধিমালার ৮ বিধি অনুযায়ী কোনো প্রকার ট্রাক, বাস কিংবা মোটরসাইকেল নিয়ে কোনোরূপ শোডাউন করা যাবে না এবং মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ও সকল প্রকার মিছিল বা শোডাউন করা নিষেধ। বিধি ১২তে বলা আছে, ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের শুধু তিন সপ্তাহ আগে থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করা যাবে। অর্থাৎ আজ ১ থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা চালানো নিষেধ। কিন্তু পত্রপত্রিকায় খবর দেখছি, কিছু কিছু জায়গায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে শোডাউন করা হয়েছে, কোথাও কোথাও জোরেশেরে নির্বাচনী প্রচারণামূলক কাজ শুরু হয়ে গেছে। যেমন প্রথম আলো ৩০ নভেম্বরের কাগজে ৫ পৃষ্ঠায় একটা খবরের শিরোনাম হলো ‘সাংসদ এনামুলের আচরণে বিধি মানার লক্ষণ নেই’।

অন্যদিকে এই খবরও দেখলাম যে বিধিমালার কোনো লঙ্ঘনই সিইসির নজরে আসেনি। তাই ভাবছি, নির্বাচনী আচরণ বিধিমালাটা দেশের বাইরে বেড়াতে চলে গেছে কি না। বিধিমালা বেড়াতে গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন লাটে উঠতে পারে। এখন থেকেই এই আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন কঠিনভাবে দমন না করলে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই বাড়তে থাকবে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন। নির্বাচন কমিশন এখন থেকেই কঠোর না হলে ১০ দিন পরে অনেক দেরি হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা এবং বহু মানুষ নিহত ও আহত হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন অনেক বড় বড় নেতা অনেকবার।

এই বিধিমালা লঙ্ঘনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিধি ১৭(৪) এ ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ গঠন করার কথা বলা হয়েছে। ভালো ব্যাপার হলো, নির্বাচন কমিশন ২৫ নভেম্বর একটা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সারা দেশে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, সহকারী জজ ইত্যাদি) সমন্বয়ে মোট ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রতিটি কমিটির এখতিয়ারভুক্ত এলাকাও এই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই নির্বাচনী তদন্ত কমিটির তালিকা শুধু ওয়েবসাইটে প্রকাশ মোটেও যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশনকে পত্রপত্রিকায় ফলাও করে বিজ্ঞাপন দিয়ে সবাইকে জানাতে হবে। দরকার হলে কুমিল্লা জেলার নির্বাচন তদন্ত কমিটির নাম-ঠিকানা কুমিল্লার সংবাদপত্রেও বিজ্ঞাপন দিতে হবে। অর্থাৎ জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে সবাইকে জানাতে হবে, যাতে আচরণবিধির লঙ্ঘন ঘটলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি জানতে পারেন, তিনি অভিযোগ নিয়ে কোথায় যাবেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৯১ক ধারায় বলা আছে যে নির্বাচনী তদন্ত কমিটিকে তদন্ত শেষ করতে হবে তিন দিনের মধ্যে। নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত নির্বাচন ম্যানুয়েলটি ভালো হয়েছে। অবিলম্বে অন্তত ১০টি কপি দেশের ৬৪টি জেলার বার লাইব্রেরিতে পাঠাতে হবে।

মোদ্দাকথা, নির্বাচন কমিশন চোখ-কান বন্ধ রেখে আচরণ বিধিমালাকে এখন বেড়াতে পাঠিয়ে দিলে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব হয়ে পড়বে। বিধিমালা, নির্বাচনী তদন্ত কমিটি আনুষঙ্গিক ব্যাপারে প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে বিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা আজ থেকেই নিতে হবে। এর দায়িত্ব শুধু এবং একমাত্র নির্বাচন কমিশনের ওপর।

  • ড. শাহদীন মালিক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের আইনের শিক্ষক।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত নির্ভয় ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। আগে যা–ই ঘটুক না কেন, তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা–কর্মী–সমর্থকদের আচরণ সংযত হবে, কাউকে ভয়ভীতির মধ্যে থাকতে হবে না, সেটাই প্রত্যাশা ছিল। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও সে রকম আওয়াজ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর বেশ কিছু দিন চলে গেলেও পরিবেশ-পরিস্থিতি যে খুব বদলায়নি, সেটাই জানা গেল সংবাদমাধ্যমের খবরে। বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এখনো দ্বিমুখী আক্রমণের শিকার। একদিকে গায়েবি মামলার কারণে তাঁদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা এখনো তাঁদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, হুমকি দিয়ে চলেছেন। 

বরিশালের গৌরনদীতে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হান্নান শরীফ ভয়ভীতির কারণে বাড়িতে থাকছেন না। এ অবস্থায় গত বুধবার রাতে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে গিয়ে তাঁর খোঁজ করেন। যখন তাঁরা জানতে পারেন তিনি বাড়িতে নেই , তখন তাঁরা হুমকি দেন যে ৩০ ডিসেম্বরের আগে যেন বাড়ি না ফেরেন। একই ঘটনা ঘটেছে উপজেলা যুবদল সভাপতি স্বপন শরীফের বাড়িতেও। এ ব্যাপারে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা সাফাই গাইতে গিয়ে যা বলেছেন, তা হাস্যকর। তাঁদের দাবি, বিএনপি ইস্যু তৈরি করার জন্যই এই কাণ্ড করে থাকতে পারে। যেখানে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, সেখানে এলাকায় না গিয়ে তারা ইস্যু তৈরি করবে, এ কথা বিশ্বাস করা কঠিন। আর পুলিশও অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে দায় এড়িয়ে গেছে। 

এর আগে গৌরনদী পৌরসভার মেয়র হুমকি দিয়েছিলেন যে বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন এলাকায় এলে তাঁকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়া হবে। স্বপন এখনো নিজের এলাকায় যেতে পারেননি। তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বরিশাল শহরে। প্রথম আলোয় এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর মেয়র পয়সা খরচ করে বিজ্ঞাপন দিয়ে খবরের প্রতিবাদ করলেও প্রতিবেদনের কোথায় ভুল তথ্য আছে, তা দেখাতে পারেননি। তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ রকম ভয়ভীতি বা হুমকির ঘটনা শুধু এই দুটি উপজেলায় ঘটেছে, তা নয়। আরও অনেক স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি গায়েবি মামলা, পুরোনো নাশকতার মামলায় বিএনপির নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের পর জামিন নেওয়ার জন্য তঁাদের স্বজনদের আদালত চত্বরে ঘোরাঘুরি করতে হচ্ছে। আবার মামলায় জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় বিএনপির একাধিক প্রার্থীকে কারাগারেও যেতে হয়েছে।

এ অবস্থায় কি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায়? প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা তফসিল ঘোষণার পর সবকিছুই নাকি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেছেন। এটাই কি নিয়ন্ত্রণের নমুনা?

নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু এসব ঘটনায় তার উল্টো চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছেন। এসব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিরোধী দলের প্রার্থীদের যাতে মামলা ও হামলার ভয়ে পালিয়ে না থাকতে হয় কিংবা ক্ষমতাসীন দলের কেউ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে শাসিয়ে আসতে না পারেন, এটা নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশন মুখেই শুধু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলে। বাস্তবে কিছুই করছে না। এই নিষ্ক্রিয়তা ও নিস্পৃহতার  সংস্কৃতি থেকে নির্বাচন কমিশন বেরিয়ে আসতে না পারলে, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে না পারলে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। আর নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং এসব অন্যায় আচরণ বন্ধ হোক।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

Saturday, December 1, 2018

ক্যাঙ্গারু কোর্ট ও নতজানু নির্বাচন কমিশন

তৈমূর আলম খন্দকার


১/১১ সরকার, এর কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি ছিল না এবং এখনো নাই। (তবে মাননীয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎসময়ে বলেছিলেন যে, ১/১১ সরকারের অবৈধ সরকারের সব কর্মকাণ্ডের তিনি বৈধতা দেবেন ক্ষমতা এসে) ওই অবৈধ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী (যিনি ঠুনকো মামলায় বর্তমানে কারারুদ্ধ) গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাঘা নেতা যারা ১/১১ সরকারের কাছে তখনো নতজানু হননি, তাদের গ্রেফতার করে সংসদ ভবনে কোর্ট বসিয়ে বিচারনামক প্রহসন করা হয়। তখন দুই প্রধানমন্ত্রীকেই কোর্টে সে হাজির করা হতো বিচারের জন্য। তখন ওবায়দুল কাদের এবং আমি নিজেসহ রাজনীতির মাঠে বিদ্যমান অনেকেই কারাগারে একত্রে ছিলাম, একজনের বাড়ির খাবার আরেকজন খেয়ে অনেক তৃপ্তি পেতাম। খোশগল্প এবং কার বিরুদ্ধে কী মামলা তৈরি হচ্ছে, এসব নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতো। ওবায়দুল কাদের ও আমি এক সাথেই ছিলাম। তখন দেখেছি কার কতটুকু সাহস, কে কতটুকু হিম্মত নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন।

তখন জাতীয় সংসদ ভবনে অবস্থিত আদালতকে আওয়ামী লীগ প্রধান ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট বলে সম্বোধন করতেন এবং সেই কোর্টের রায় দিয়েই প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের এখন ঘায়েল করছেন। আদালতে গিয়েও ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষ কোনো আশ্রয় পাচ্ছে না। মনে করা যায়, সেখানেও সরকারের ইশারা-ইঙ্গিতের বাইরে কিছুই হচ্ছে না। উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইদি আমিনের মতের বিরুদ্ধে রায় দেয়ার চার দিন পরে উগান্ডার প্রধান বিচারপতির লাশ ড্রেনে পাওয়া গিয়েছিল। একটি রায় পছন্দ মতো না হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ভাগ্যে কী জুটেছে তা ইতিহাসের পাতায় খুঁজতে হবে না, বরং সম্প্রতি চোখের সামনেই ঘটেছে। বিচারপতি সিনহার ভাষ্যমতে, তাকে লাথি মেরে বাংলাদেশ থেকে বিদায় করা হয়েছে।

অথচ তিনি ছিলেন সরকারি ঘরানার একজন পৃষ্ঠপোষক। তার কথায় ও আচরণে প্রধানমন্ত্রীর একজন ভাবশিষ্য হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। বিদায়ের লগ্নে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অসন্তোষের কারণে তার এই বিদায়ের সুর। আরো আশ্চর্যের বিষয়, যে রায়ে সিনহার কপাল পুড়ল সেই রায়ে আপিল বিভাগের সব বিচারপতিই স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু সিনহা যখন রক্তচক্ষুর আওতায় আসলেন তখন তারা একযোগেই বলে বসলেন যে, সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান সিনহা বাবুর সাথে নৈতিকতার প্রশ্নে আদালতে একত্রে আর বসবেন না। যারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত, সমাজ ও জাতির ভাগ্য বিধাতা, তারা অতিসুন্দর বাক্যে মনোভাব প্রকাশ করাই যুক্তিযুক্ত। বিষয়টি যদি খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের সমস্যা হিসেবে দেখা দিতো, তারা হয়তো (অশিক্ষিত খেটে খাওয়া মানুষ) এমনিভাবে বলত যে, ‘চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা’। দুদকসহ বিভিন্ন মামলায় বিচারপ্রার্থীদের নিজেকে Defend করার সুযোগ সঙ্কুচিত করে দিয়েছিলেন।

র প্রতিদান তিনি পেয়েছেন। কারণ সিনহাকে গলা ধাক্কা দেয়ার প্রতিবাদে তিনি নিজেকে ডিফেন্ড করার ফুরসতই পাননি। বরং পদত্যাগ করে তার দুর্বলতা প্রকাশ করেছেন। দুদকের মামলাগুলোতে বিরোধীদের তিনি নাজেহাল করেছেন, অথচ দুদকের মামলার ভয়েই তার এই আত্মসমর্পণ। বিচারপতি আবদুল ওহাব মিয়া জীবনভর বিচারপ্রার্থীদের রিলিফ দিয়েছেন, সরকারের তাঁবেদারি করেননি। অনেকে বলে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি থেকে স্থায়ী প্রধান বিচারপতি হওয়ার আশায় তিনি নি¤œ আদালতের বিচারকদের সরকারি আমলাদের কাছে দায়বদ্ধ করে গেছেন। তিনি বিদায়লগ্নে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী আইনজীবীদের কোনো সংবর্ধনা পেলেন না। এই বিচারপতিকে চিনি দীর্ঘ দিন। পেশাগত জীবনে তাকে পেয়েছি একজন সহকর্মী হিসেবে, যাকে একজন আদর্শ ও নীতিবান মানুষ হিসেবে জেনেছি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হিসেবে তার ভূমিকাকে শ্রদ্ধা করি। আইনজীবী নেতা শামছুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে জনাব ওহাবের সাথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। বিচারপতি সিনহাকে বিচারপতি ও আইনজীবী হিসেবে পেয়েছি। দুর্নীতি বা সরকারের পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে তুলনামূলকভাবে বিচারপতি ওহাবের মান ছিল অনেক ঊর্ধ্বে।

যা হোক, সরকারি বিরোধীদের শায়েস্তা করে সিনহা কতটুকু লাভবান হলেন? যার জন্য করা হলো চুরি, তারাই তো তাকে চোর বললেন। অর্থাৎ লাথি তাদের পায়েই খেয়েছেন যাদের স্বার্থ রক্ষায় সিনহা ছিলেন আবেগাপ্লুত। বিচারপতি সিনহা নিজে সাম্প্রদায়িক না অসাম্প্রদায়িক প্রমাণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রীয় খরচে একটি মূর্তি স্থাপন করেছেন, যে মূর্তি পাহারা দেয়ার জন্য দু’জন পুলিশ পালাক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। অসাম্প্রদায়িক এই বাংলাদেশে কোনো মূর্তি পাহারা দেয়ার জন্য পুলিশ লাগে না। তা হলে সিনহার মূর্তির জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে পাহারা কেন? যাদের খুশি করার জন্য ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশের সর্বোচ্চ বিচারাঙ্গনে তিনি মূর্তি স্থাপন করেছিলেন তারাও তো তার করুণ বিদায়লগ্নে অশ্রু ঝরাতে এলেন না। এরই নাম কি কর্মফল?

সংবিধান মোতাবেক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনকালে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে বলে নির্বাচন কমিশন বারবার ঘোষণা দিচ্ছে। নির্বাচন পর্যন্ত গ্রেফতার বন্ধ থাকবে বলে কমিশন ঘোষণা দিলেও জামিন নেয়ার জন্য আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি ফেরা হয় না। আগাম জামিন নিয়ে বাড়িতে যাওয়া মাত্র আরেকটি মামলা এসে হাজির। আইনি বর্বরতার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কোনো ‘রা’ নেই। তা ছাড়া বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি কি মানুষের এ দুর্দশার কথা জানেন না?

বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে যে, উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তি না হওয়া কোনো বিষয়কে চূড়ান্ত বলে ধরে নেয়া যাবে না, এটাই স্বীকৃত আইন। ক্যাঙ্গারু কোর্টের মামলা থেকে প্রধানমন্ত্রী ও তার সহকর্মীরা খালাস পেয়ে গেলেন, অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে দুদক কর্তৃক একই আইনে দায়ের করা মামলা চলমান রইল, এ কেমন বিচারের ব্যবস্থা? সার্চ লাইট দিয়ে খোঁজ করে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন সাবেক রাজকর্মচারীকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যেখানে সিনিয়র বিচারপতিরা সে দায়িত্ব পালন করতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। সরকারের চাহিদা/পছন্দমতো নিয়োগকৃত প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার মেরুদণ্ড কতটুকু সোজা রাখতে পারছেন, তা জাতি অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করছে। সব কিছুর পরও, বিচার বিভাগই মানুষের শেষ ভরসা। সে ভরসা থেকে যদি মানুষের মন উঠে যায়, তবে বুক ভরা বেদনাময় নিঃশ্বাস ত্যাগ করার জন্য মানুষের আর জায়গা থাকে না।

ক্যাঙ্গারু আদালত থেকে নির্বিচারে যারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, উচ্চ আদালতে সরকারি ঘরানার লোকজন খালাস পেলেও বিরোধীদের ললাট থেকে সেই সিলমোহর মোছা যায়নি। হাইকোর্ট যাদের সাজা স্থগিত করেছে, তারাও নাকি নির্বাচন করতে পারবেন না। যদি তাই হয় তবে সাজা স্থগিত করার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা মোতাবেক সাজা স্থগিত করার জন্য হাইকোর্টের যে রায় রয়েছে, সেই ক্ষমতা খর্ব করার জন্য আইন সংশোধন করতে হবে। হাইকোর্টের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাজা স্থগিত হওয়া ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন না।

বাংলাদেশের আইন এখন দুই ভাবে প্রযোজ্য। নির্বাচন কমিশনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের আইনও এখন দুইভাগে প্রবাহিত হচ্ছে। সরকারি দলের আইন ভঙ্গে যেন কোনো অপরাধ হয় না। আইনকে ব্যবহার করে চলছে নিপীড়ন এবং বিরোধীদের ওপর যে পুলিশ-আমলা যত বেশি নির্যাতন করতে পারবে তার সৌভাগ্য তত বেশি, এটাই এখন নাকি প্রমোশনের যোগ্যতা।

দেশবাসী অবশ্যই বিরোধী দলের ওপর এ নির্যাতনের খোঁজখবর রাখেন। বিষয়টি অবশ্যই সত্য যে, হাইকোর্ট আগাম জামিন দেয় বলেই নির্যাতিত দেশবাসী এখনো কিছুটা নিঃশ্বাস নিতে পারে। বিচার বিভাগ যদি তাদের বিচারিক সিদ্ধান্তে দু’পক্ষকে (সরকার-বিরোধী দল) সমভাবে দেখেন তবে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দুদকের যে মামলায় মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া খালাস পেয়েছেন, একই মামলায় তিনি বিএনপির আমলে মন্ত্রী হলে খালাস পেতেন কি-না তা জনমনে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। বিচার বিভাগ সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা। জনগণের নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ সম্মানিত বিচার বিভাগ করবেন, এটাই জাতির প্রত্যাশা।

  • লেখক : কলামিস্ট ও আইনজীবী (অ্যাপিলেট ডিভিশন)
  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/নভেম্বর ৩০,২০১৮ 

Thursday, November 29, 2018

লাশের নদী বুড়িগঙ্গা

  • এক বছরে ৪২ লাশ উদ্ধার 
  • অধিকাংশেরই পরিচয় মিলছে না


লাশের নদী বুড়িগঙ্গা। বুড়িগঙ্গায় এক সময় নানা জাতের মাছ পাওয়া গেলেও এখন আর তা মিলছে না। তবে প্রায়ই মিলছে লাশ। এর কোনোটি অজ্ঞাত, আর কোনোটির পরিচয় রয়েছে। এত লাশ কোত্থেকে বুড়িগঙ্গায় আসছে সে সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জ্ঞাত নন। থানা ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত এক বছরে বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধার হয়েছে ৪২টি লাশ। এর মধ্যে ১৭টির পরিচয় মিলেছে আর অজ্ঞাত রয়ে গেছে ২৫টি। বেওয়ারিশ হিসেবেই এগুলো দাফন হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত একটি লাশ হাসপাতাল মর্গে পড়ে ছিল।

হাসপাতাল মর্গ ও পুলিশ সূত্র জানায়, বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এই লাশ নিয়ে অনেকেরই অনেক সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। একের পর এক এভাবে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় অনেকে আতঙ্কিতও। ওয়াইজঘাটের এক শ্রমিক সিরাজ উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, আগে গোসল বুড়িগঙ্গা নদীতেই সারতেন। এখন পানিও যেমন নষ্ট হয়ে গেছে; আর প্রায়ই লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কও রয়েছে। ফলে এখন আর কেউ বুড়িগঙ্গায় গোসল করেন না। স্থানীয়দের ধারণা, অন্য কোনো এলাকায় মানুষ হত্যার পর লাশগুলো নিরাপদ স্থান বুড়িগঙ্গায় ফেলে রেখে যায়। নৌকা ডুবে কিংবা লঞ্চে উঠতে গিয়ে পড়ে নিহত হয়েও কিছু লোক লাশ হয়েছেন।

থানা সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধার হয়েছে ২টি লাশ। ফেব্রুয়ারিতে ৩টি, মার্চে ৩টি, এপ্রিলে ৫টি, মে মাসে ৩টি, জুনে ৩টি, জুলাইয়ে ৫টি, আগস্টে ৫টি, সেপ্টেম্বরে ৭টি, অক্টোবরে ৫টি এবং নভেম্বরের ২৭ তারিখ পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৫টি লাশ। যাদের লাশ উদ্ধার হয়েছে এবং পরিচয় জানা গেছে তার মধ্যে যশোরের কেশবপুর থানা বিএনপির নেতা আবু বকর সিদ্দিকও রয়েছেন। 

গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে তার লাশ উদ্ধার হয়। স্থানীয়রা লাশটি ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। পরে তার পরিবারের সদস্যরা লাশটি মর্গে গিয়ে শনাক্ত করেন। তিনি ঢাকায় এসেছিলেন দলীয় মনোনয়নের জন্য। ঢাকায় এসে একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন। ১৮ নভেম্বর তিনি হোটেল থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন। ওই রাতে তার পরিবারের কাছ থেকে অপহরণকারীরা এক লাখ ৭০ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেয়।

এর ৩ দিন পরে ২২ নভেম্বর অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়। কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের দাগ রয়েছে। তার হাত এবং পা ভাঙা। ধারণা করা হচ্ছে হাত-পা ভেঙে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে লাশটি বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেকে মারা যান। গত ১২ সেপ্টেম্বর একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য তারা লঞ্চে উঠতে গিয়েছিলেন। নৌকা দিয়ে লঞ্চে উঠতে গিয়ে দু’টি নৌযানের মধ্যে পড়ে তাদের নৌকাটি ডুবে যায়। ঘটনার পরপরই দু’টি লাশ এবং পরদিন একটি লাশ উদ্ধার হয়। 

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের নয়া দিগন্তকে বলেন, স্থানীয় ছাড়াও বিভিন্ন লোকের তথ্যের ভিত্তিতে বুড়িগঙ্গার বিভিন্ন স্পট থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ইউডি মামলা নিলেও পরে অভিযোগের ভিত্তিতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। আবার কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর পুলিশই হত্যা মামলা দায়ের করে। অনেক মামলায় আসামিও গ্রেফতার হয়েছে।

মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গ ইন চার্জ শ্যামল গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধারকৃত লাশের বেশির ভাগই আসে অজ্ঞাত হিসেবে। গত ২২ নভেম্বর উদ্ধারকৃত লাশটি এখনো মর্গে পড়ে আছে অজ্ঞাত হিসেবে। শ্যামল বলেন, অজ্ঞাত লাশগুলো বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দেয়া হয় দাফন বা সৎকারের জন্য।
  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত / নভেম্বর ২৯,২০১৮ 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে অত্যধিক ব্যয় : অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব রাখছে

সম্পাদকীয়

একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পরিবহন খাতের উন্নতিও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। অর্থনৈতিক অবকাঠামোয় পরিবহন ব্যবস্থা হলো ভিত্তিপ্রস্তর। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা বাণিজ্য ও শিল্পায়নকে দ্রুত এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। আর আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ, যারা কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের জন্য তো সুশৃঙ্খলিত পরিবহন ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো, ব্যবসা-বাণিজ্যে আমরা যতটা এগোতে পেরেছি, পরিবহন ব্যবস্থাকে সে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত করতে পারিনি।

পণ্য পরিবহনে নৌ ও রেলপথ ব্যবহার করা হলেও দেশের সিংহভাগ পণ্য পরিবহন করা হয় সড়কপথে। আর পণ্য পরিবহনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এ মহাসড়ককে বলা হয় বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন। 

দেশের আমদানি-রফতানির প্রায় ৯০ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয় এ পথে। কিন্তু গুরুত্ব বিবেচনায় এ মহাসড়ক যে ধরনের পরিকল্পনা দাবি করে, তা দেয়া যাচ্ছে কিনা, এটি ক্রমেই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠছে। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য পরিবহন ব্যয় বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ। এক্ষেত্রে কেবল আফ্রিকার কিছু দেশ এগিয়ে রয়েছে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, কিলোমিটারপ্রতি প্রতি টন পণ্য পরিবহনে ভারত, পাকিস্তানে আমাদের চেয়ে কম ব্যয় হয়। ফলে অবধারিতভাবে প্রশ্ন ওঠে, আমাদের এখানে ব্যয় বেশি কেন? অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতের পর সবাই, বিশেষ করে ব্যবসায়ীগোষ্ঠী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কারণ এর ফলে সড়কপথে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজ, দ্রুত, যানজটমুক্ত ও উন্নততর হয়। কিন্তু এ স্বস্তি বেশি দিন টেকেনি। দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত হয়েছে বটে, কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রামে যাতায়াতের সময় দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এজন্য প্রধানত দায়ী করা হচ্ছে যানজটকে। যানজটের কারণে পণ্য পরিবহনে দীর্ঘসূত্রতা, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির দুষ্টচক্র তৈরি হয়েছে, সার্বিকভাবে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজটের বিরূপ প্রভাব যে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনের খরচে পড়ে, সে অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের থাকলেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়। কিন্তু চালুর পর পরই নকশা ও পরিকল্পনার বিভিন্ন অসঙ্গতি সামনে আসে। পরিকল্পনায় লেভেল ক্রসিং, ফ্লাইওভার, সার্ভিস সড়ক, মহাসড়কের পাশে বাজারসহ সংশ্লিষ্ট বেশকিছু ইস্যুতে প্রয়োজনীয় নজর দেয়া হয়নি। এ ঘাটতিগুলো এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক নির্মাণের আগে সংশ্লিষ্ট সব দিক বিবেচনায় নেয়াই যুক্তিসঙ্গত ছিল। এবং অবশ্যই আগামী ১৫-২০ বছরের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় পরিকল্পনা সাজানোর দরকার ছিল। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এমনটা হয়নি। যথাযথ ও সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবেই এখন এ মহাসড়ক সামগ্রিকভাবে একটি বিশৃঙ্খল ও যানজটে আক্রান্ত মহাসড়কে পরিণত হয়েছে। এত অর্থ ও সময় ব্যয় করে নির্মিত চার লেনের কোনো সুফল বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না। এখন আবার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। একটি মহাসড়ককে নিয়ে বারবার প্রকল্প ও পরিকল্পনা গ্রহণ আমাদের মতো সীমিত সম্পদের দেশের জন্য বিলাসিতা নয় কি? এ বিষয়গুলোয় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর জবাবদিহি চাওয়া উচিত।

দেশের অর্থনীতির খাতিরেই মহাসড়কটি যানজটমুক্ত করতে হবে এবং এতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। তা না হলে পরিবহন ব্যয় স্বাভাবিক করা যাবে না। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বাজার, উল্টো পথে যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। হাইওয়ে পুলিশকে সুশৃঙ্খলভাবে যান চলাচল ও চালকদের আইন মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরো দক্ষ ও উন্নত করতে পদক্ষেপ নেয়া চাই। সড়ক-মহাসড়কের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে সার্বক্ষণিক তত্পরতা দেখাতে হবে। দায়সারা সংস্কার আর আমরা দেখতে চাই না।

  • কার্টসিঃ বণিকবার্তা/ নভেম্বর ২৯,২০১৮ 

অবসরের দুই বছরের মধ্যে স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগ দিলে শাস্তি

আইনের খসড়া প্রস্তুত

আয়নাল হোসেন

বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে চাকরি করছেন। চাকরিতে থাকাকালীন নিয়ন্ত্রণাধীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য নানা নীতিও তৈরি করছেন। অবসরে যাওয়ার পরপরই তারাই আবার স্বার্থসংশ্লিষ্ট সেই প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে যোগ দিচ্ছেন। এতে স্বার্থের সংঘাত দেখা দিচ্ছে। এ-সংক্রান্ত কোনো আইন না থাকায় সুযোগটি নিচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা।

এ সুযোগ বন্ধে আইন প্রণয়ন করছে সরকার। ‘স্বার্থ সংঘাত প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা আইন ২০১৮’ শীর্ষক একটি খসড়াও এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। তাতে অবসরের দুই বছরের মধ্যে কোনো সরকারি কর্মকর্তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগদানে নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনের লঙ্ঘন হলে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের মুখে পড়তে হবে অভিযুক্তকে।

শুল্ক খাতে অনেক নীতি ও বিধি প্রণীত হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্কনীতির সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিনের সময়। সরকারের সচিব হিসেবে গত বছরের ৩০ মার্চ অবসরে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি যোগ দেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা পদে। আর কয়েক বছর আগে অবসরে যান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক সেলিম বারামি। অবসরের পরপরই তিনি যোগ দেন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডে। এ-সংক্রান্ত আইন না থাকায় বাধাহীনভাবে অবসরের পরপরই স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পেরেছেন তারা।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর তফসিলভুক্ত একটি আইন হবে এটি। দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক এ আইনের অধীন অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তযোগ্য হবে। উপপরিচালকের নিচে নন, দুর্নীতি দমন কমিশনের এমন কর্মকর্তা অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত করবেন। আইনের খসড়া প্রণয়নের পর মতামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। খসড়ায় স্বার্থ সংঘাত কখন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্বার্থ সংঘাত তখনই হবে, যখন কোনো ব্যক্তি যদি একটি সরকারি দপ্তর থেকে অবসর গ্রহণের ১২ মাস পর বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত হবেন, যার সঙ্গে চাকরি থাকাকালীন তার যোগাযোগ ছিল। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এনবিআরে থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন এনজিওকে কর অবকাশ প্রদানের নিমিত্তে নীতিমালা প্রণয়ন করেন। অবসরের দুই বছরের মধ্যে যদি ওই কর্মকর্তা একটি এনজিওতে যোগদান করেন, যা তার আগে প্রণীত নীতিমালার মাধ্যমে কর রেয়াত পেয়েছে, সেক্ষেত্রে ওই নিয়োগে স্বার্থ সংঘাত বিরাজ করবে।

এনজিওতে না হলেও অবসরের পরপরই স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে যোগ দিচ্ছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত সংস্থাটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে সাবেক সদস্য হেলাল উদ্দিন উত্তরা মটরসে, এনায়েত হোসেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিটেডে, এইচএম সিরাজী আবুল খায়ের গ্রুপে ও মীর মোস্তাক আলী নিটল-নিলয় গ্রুপে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

যদিও এ ধরনের নিয়োগে সমস্যা দেখছেন না এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন। সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এ কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা দীর্ঘদিন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা দেয়ার পর অবসরে তার যোগ্যতা দিয়ে যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন। চাকরিতে থাকার সময় সরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই সীমিত আয়ে সাধারণ জীবনযাপন করেন। অবসরে যাওয়ায় জীবনযাপনের প্রয়োজনেই অনেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অনেক ক্ষেত্রে দক্ষতা ব্যবহারের বিষয়টিও থাকে। এ ধরনের আইন হলে তা হবে দুঃখজনক। নতুন নতুন আইন না করে পুরনো আইন বাস্তবায়নে বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনৈতিক চর্চা বন্ধের কথাও বলা হয়েছে আইনের খসড়ায়। এতে বলা হয়েছে, অনেক সময় চিকিৎসককে তার সব রোগীর পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাতে দেখা যায়। এর বিনিময়ে রোগীর পরীক্ষা ফির ৪০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার চিকিৎসককে প্রদান করে। এমনটা প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসক উভয়েই এ আইনের আওতায় অভিযুক্ত হবে।

আইন লঙ্ঘনের সর্বোচ্চ শাস্তি উল্লেখ করা হয়েছে তিন বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। সর্বনিম্ন শাস্তি হিসেবে আইন লঙ্ঘনকারীকে এক বছরের কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। এছাড়া কেউ আইন লঙ্ঘন করলে বা লঙ্ঘনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে বা লঙ্ঘনে সহায়তা করলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ব্যক্তিগত স্বার্থ সংঘাতসংক্রান্ত আইন অনেক আগেই প্রণয়ন করা জরুরি ছিল বলে জানান সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন, তাদের অবিলম্বে সরিয়ে দেয়া উচিত। সরকার ইচ্ছা করলে আইন ছাড়াই তাদের সরিয়ে দিতে পারে। আর এ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হলে তা আরো ফলদায়ক হবে।

  • কার্টসিঃ বণিকবার্তা/ নভেম্বর ২৯,২০১৮ 

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা

মনোনয়ন নিয়ে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে সঙ্ঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ ধরনের ঘটনা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর সমর্থকদের মধ্যে মূলত এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের মধ্যে এমন ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে, দলের মনোনয়ন পেলেই বিজয় নিশ্চিত। ফলে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপত্র দেয়ার পর থেকে দেশে ােভ-বিােভ বাড়ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ ও ঝাড়ুমিছিল করা হচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনেও বিুব্ধরা এসে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পে দলীয় মনোনয়ন দাবি করছেন। ২৫ নভেম্বর থেকে দলের মনোনীত প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া শুরু করে আওয়ামী লীগ। এ পর্যন্ত ২৩১ জনকে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করে চিঠি দেয়া হয়। এর মধ্যে কোনো কোনো আসনে দুইজন প্রার্থীকেও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। 

সারা দেশে অন্তত ৪০টি নির্বাচনী আসনে ােভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেেিত আশঙ্কা হচ্ছে, জোট-মহাজোটের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ােভ-বিােভ আরো বাড়তে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন যিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন, তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। তার দাবি জরিপের ওপর ভিত্তি করে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাই এবার বিদ্রোহী মানেই আজীবন বহিষ্কার। অতীতের কথা বাদ। এবার আর সে সুযোগ থাকবে না। কিন্তু এমন ঘোষণা মাঠে কতটা প্রভাব পড়বে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, অতীতে এভাবে ঘোষণা দেয়ার পরও বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার পর দলে নেয়া হয়েছে। 

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে বলে থাকেন বড় রাজনৈতিক দলে এমন সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চা ও শৃঙ্খলার অভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এ ধরনের সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মোটেও অনুকূল নয়। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখতে ক্ষমতাসীন দলকে এখন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ নভেম্বর ২৯,২০১৮ 

গুম, খুন ও গ্রেফতার আতঙ্ক নিয়ে ভোটের মাঠে বিএনপি

মঈন উদ্দিন খান

গ্রেফতার-মামলা-হামলার আতঙ্ক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে বিএনপি। গতকাল বুধবার সারা দেশে দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বেশ কিছু আসনে সশরীরে হাজির হয়ে প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। কিছু কিছু জায়গায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা জানিয়েছেন, কোনো ধরনের ঝামেলায় না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। মনোনয়ন শান্তিপূর্ণভাবে দাখিল করা হয়েছে। তারপরেও বেশ কয়েকটি স্থানে তাদের প্রার্থীরা হামলার মুখে পড়েছেন।

জানা গেছে, সব আসনেই বিএনপি একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন চিঠি দিয়েছে। এ জন্য একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে অর্থাৎ প্রতীক বরাদ্দের চিঠি কে পাবেন, তা নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম-স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ফের বৈঠকে বসবেন কয়েক দিনের মধ্যে। 

মনোনয়নের চিঠি পেয়ে দেশের প্রধান দুই দলের প্রার্থীরা এলাকায় গেছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগে পরে ভোটারদের সাথে কুশলবিনিময় করছেন। নিজ বাড়িতে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বৈঠক করছেন। নির্বাচনী ছক আঁকছেন। 

মনোনয়ন দাখিল করে বিএনপি অভিযোগ করেছে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। কয়েকটি জায়গায় সরকারি দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে দলটি। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ঢাকা-৯ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। 

৩০০ আসনে প্রায় ৮০০ প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। মনোনীত প্রার্থী তালিকা বিশাল হওয়া প্রসঙ্গে দলের সিনিয়র এক নেতা জানান, গত ১২ বছরে বিএনপি নেতাদের প্রায় প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। মামলায় অনেকের সাজাও হয়েছে। কেউ কেউ এখনো কারাগারে রয়েছেন। আবার নির্বাচন সামনে রেখে সরকার আদালতকে ব্যবহার করছে, অনেক নেতার নামে থাকা মামলাগুলোর শুনানি পিছিয়ে জামিন বাতিল করা হচ্ছে। ফলে নির্বাচনের আগে কোনো প্রার্থীর সাজা হলে বা কেউ কারাগার থেকে মুক্ত না হতে পারলে, সেখানে বিকল্প প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দেয়া হবে। এ ছাড়া কারও প্রার্থিতা ঋণখেলাপির কারণে বাদ পড়ে যেতে পারে। এসব বিবেচনায় নিয়ে এক আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। 

নেতারা আরো বলেছেন, প্রার্থী তালিকা বড় হওয়ার আরেকটি কারণ মন রক্ষা করা। এক যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির অসংখ্য নেতা আছেন যারা এই সময়ে দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন, কিন্তু সংসদ সদস্য হওয়ার মতো যোগ্য হয়ে উঠতে পারেননি। আবার অনেকে দলীয় কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না থাকলেও এমপি হওয়ার মতো যোগ্য। তাই মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে প্রত্যাশী বহু নেতাকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দিয়ে খুশি রাখা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে সবচেয়ে যোগ্য নেতাই পাবেন ধানের শীষ প্রতীক। 

গতকাল বেশ কয়েকটি স্থানে বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন। শরীয়তপুর-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এপিএস মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপুর ওপর গোসাইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের নামধারী সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। হামলায় বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এ বিষয়ে মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু বলেন, গোসাইরহাট উপজেলা থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাজাহান সিকদারের নেতৃত্বে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে ১৫টি মোটরসাইকেল ছিনতাই করা হয়। 

কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী শরিফুল আলম বলেন, প্রতিনিধির মাধ্যমে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি জানান, এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে আমি লিখিতভাবে এলাকার ভীতিকর পরিস্থিতির কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। 

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছেন বিএনপির প্রার্থী রাকিবুল করিম খান পাপ্পু। বেলকুচি উপজেলার সামনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারা এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন পাপ্পুর সাথে থাকা ছাত্রদল নেতা আরিফ সরকার। পাপ্পু বলেন, আমরা এক ধরনের আতঙ্ক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছি। যদি সুষ্ঠু ভোট হয় তাহলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত। 

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মাহমুদুর রহমান সুমন। তিনি বলেন, এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার উঠেছে, যা ক্ষমতাসীনরা মেনে নিতে পারছে না। আর এ কারণেই মামলা-হামলা দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে তারা। 

নোয়াখালী-২ আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কাজী মো: মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, দল চূড়ান্ত মনোনয়ন দিলে তিনি বিজয়ী হবেন। তবে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। মামলা-গ্রেফতার তো আছেই। 

রিজভীর অভিযোগ 

এদিকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন ঢাকা-৭ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মোশাররফ হোসেন খোকন মনোনয়নপত্র দাখিল করে বাসার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর থেকে তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই তাকে গ্রেফতার করেছে। গত দুই দিন ধরে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসা সার্বক্ষণিক ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত কয়েকদিন ধরে মির্জা আব্বাসের বাসায় প্রবেশ ও বেরুনোর সময় দুই দিনে ১৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, শরীয়তপুর-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলের উদ্দেশে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের দিকে রওনা হলে অপুর গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও বিএনপি নেতাকর্মীদের আহত করা হয়। 

এ ছাড়া মহানগর বিএনপি নেতা হাজী আদিল, নাজিবুল্লাহ, তারেক মাহমুদ, শহীদুল্লাহ, সোহেল, আরিফ ও কামাল, হবিসহ আরো অনেককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ নভেম্বর ২৯,২০১৮