Search

Wednesday, December 5, 2018

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্বাচনী সহায়তায় সরকারি কর্মচারীরা


মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্বাচনী কাজে সহায়তা দিচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যক্তিগত স্টাফসহ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও তাদের পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন। গতকাল সরজমিন কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের দপ্তরে গিয়ে এমন তথ্যের সত্যতা মিলেছে। 

ফেসবুকের মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখা যায়, গত ২৮শে নভেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তারা তাদের মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীর মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। নিজের নামে না পাঠিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এপিএসের নামে প্রেস রিলিজ সংবাদপত্রে পাঠান। এ ছাড়া কয়েক জন জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়মিত মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের নির্বাচনী এলাকায় সফর করছেন। নির্বাচনী এলাকায় সফরের সময় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে জনসংযোগ কর্মকর্তাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে।

জনসংযোগ কর্মকর্তারা স্থানীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দেখভাল করতে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। এ ছাড়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস)’রা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পরিদর্শনের চিঠি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর এলাকায় চলে যাচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন নির্বাচনী মতবিনিময় সভায়। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বাসায় এখন নিজের নির্বাচনী এলাকার লোকজনের ঠাসাঠাসি। অনেক ব্যক্তিগত স্টাফ মধ্যরাত পর্যন্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বাসায় রীতিমতো অফিস করেন। এজন্য ওই সময় মন্ত্রীদের বিভিন্ন নির্দেশনা পালন করেন তারা। গতকাল এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রুমে বসে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে টেলিফোনে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালানোর বিষয়টি দেখা যায়। 

ওই কর্মকর্তা ব্যাংকিং বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে বলেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন একজনের (বিএনপি প্রার্থী) ব্যক্তিগত ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এক পরিচালকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। কিন্তু এখনো সহায়তা পাইনি। প্রতিমন্ত্রী মহোদয় আমাকে বার বার বিষয়টি নিয়ে বলছেন। তোমরা উপকার করতে পারো কিনা দেখো। ব্যাংকিং নিয়মে ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন। এক মন্ত্রীর পিএসের রুমে গিয়ে জানা গেছে, তার মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পিএস একই ব্যাচের কর্মকর্তা। তাই যেকোনো বিষয়ে যোগাযোগ করতে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে না। ডিসিও তাকে বেশ সহায়তা করছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মন্ত্রীর পিএস ছিলেন এখন ডিসি পদে কর্মরত আছেন এমন কর্মকর্তাদের এলাকায় মনোনয়ন বাতিল নিয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে। ওই কর্মকর্তারা আগ বাড়িয়ে মনোনয়ন বাতিল সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এদিকে নির্বাচনের ২৫ দিন বাকি থাকলেও এখনো মন্ত্রীরা তাদের একান্ত সচিব নিয়োগ করছেন। গত ২৫শে নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর একান্ত সচিব পদে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকারকে নিয়োগ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএস নিয়োগ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী যতদিন এ পদ অলঙ্কৃত করবেন বা এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকারকে ওই পদে বহাল রাখার অভিপ্রায় পোষণ করবেন ততদিন এ নিয়োগ আদেশ কার্যকর থাকবে। এ ছাড়া এক মন্ত্রী গত দুইদিন আগে নিজের একান্ত সচিব নিয়োগ করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে।    
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮   

আপিল শুনানি নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে ইসি


রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় নির্বাচন কমিশনে আপিলের স্তূপ জমেছে। দুইদিনে ৩১৯ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। আজও আপিল আবেদন গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। কাল থেকে তিনদিন চলবে আপিল শুনানি। কমিশন সূত্র বলছে, রেকর্ড আবেদন পড়তে পারে শেষদিন পর্যন্ত। তিনদিনে এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে হিমশিম খেতে হবে ইসিকে। আপিল নিষ্পত্তির জন্য এজলাস স্থাপন করা হয়েছে। একক এজলাসে চলবে শুনানি।

ইসি সূত্র বলছে, আপিল নিষ্পত্তি করতে প্রার্থী প্রতি খুব বেশি সময় মিলবে না। এ নিয়ে প্রার্থীরাও রয়েছেন শঙ্কায়। তারা বলছেন, কিছু বিষয়ে আইনি যুক্তিতর্কের প্রয়োজন রয়েছে। আপিলে নির্বাচন কমিশনকে সে সুযোগ দিতে হবে।

প্রার্থিতা ফিরে পেতে গতকালও ২৩৪ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন গ্রহণের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন একজন সংক্ষুব্ধ প্রার্থী। আপিল আবেদনের প্রথম দিন সোমবার ৮৪টি আবেদন জমা পড়ে। আবেদন করাদের মধ্যে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। গতকাল আটটি বিভাগে মোট আপিল আবেদন জমা পড়ে ২৩৫টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৬৮টি আপিল আবেদন হয়েছে। বিভাগওয়ারি হিসেবে আপিল আবেদনের সংখ্যায় এর পরেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। সেখানে মোট ৫৬ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। এ ছাড়া সিলেট বিভাগে ১৫, রাজশাহী বিভাগে ২২, রংপুর বিভাগে ২৮, বরিশাল বিভাগে ১২, খুলনা বিভাগে ১৮ ও ময়মনসিংহ বিভাগে মোট ১৬টি আপিল আবেদন জমা পড়ে। সকাল থেকেই আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে অস্থায়ী বুথে আপিল আবেদন জমা দিতে আসেন প্রার্থীরা। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আপিল আবেদন জমা নেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

ঋণ খেলাপি, ত্রুটিপূর্ণ মনোনয়ন, ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া, হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকা, লাভজনক পদে থাকা, আয়কর রিটার্ন দাখিল না করা, সমর্থকদের স্বাক্ষর ও তালিকায় গরমিল এবং সরকারি সেবা সংস্থার বিল পরিশোধ না করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আপিল আবেদন করেন প্রার্থীরা। তবে ঋণখেলাপি, আয়কর রিটার্ন না দেয়া, স্বাক্ষরে গরমিল ও ফৌজদারি মামলায় সাজার কারণে সবচেয়ে বেশি আপিল জমা পড়ে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর ও তালিকায় গরমিল থাকায় আপিল আবেদন করেন অধিকাংশ প্রার্থী। তবে আপিল আবেদন জমা নেয়ার দ্বিতীয় দিন প্রথম দিনের তুলনায় অনেকটা সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়। মূলত কমিশন ভবনের সামনে প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা বুথ তৈরি করে দেয়ায় প্রথম দিনের তুলনায় অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে আপিল আবেদন জমা দেন প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা হওয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনে আপিল আবেদন করা প্রার্থীদের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীও ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে আপিল আবেদন করেন, নাটোর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। ফৌজদারি অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল করা হয় এই বিএনপি প্রার্থীর। পটুয়াখালী-১ আসনে ঋণখেলাপির অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় আপিল করেন জাতীয় পার্টির সদ্য পদচ্যুত মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। তার পক্ষে আইনজীবী নজরুল ইসলাম দুপুরে আপিল আবেদন জমা দেন।

তিনি জানান, মিথ্যা অভিযোগে রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছিল। এ ছাড়া হবিগঞ্জ-১ আসনে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক নবায়ন ফি জমা না দেয়ার কারণে মনোনয়ন বাদ পড়া গণফোরামের প্রার্থী ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়ার পক্ষে তার প্রতিনিধি শাহরিয়ার শুভ আপিল করেন। এ ছাড়া, বিকালে আপিল আবেদন জমা দেন যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) আসন থেকে মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা হওয়া বিএনপির প্রার্থী ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাবরিনা সুলতানা। দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তা। উচ্চ আদালতের স্টে অর্ডারের কপি সংযুক্ত করে শুনানির জন্য আপিল আবেদন করেন বিএনপির এই প্রার্থী। এ ছাড়া ঢাকা-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আমান উল্লাহ আমানের পক্ষে আপিল করেন তার ছেলে ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি।

ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় তার মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। সাজার কারণে বাতিল হওয়া ময়মনসিংহ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান চিকিৎসক নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন তার প্রার্থিতা ফিরে পেতে সকালে আপিল জমা দেন। এ ছাড়া, ৪১৪৭ টাকার পল্লী বিদ্যুতের বিল অপরিশোধিত থাকায় বরিশাল-২ আসনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া মহাজোটের প্রার্থী, চিত্রনায়ক ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী পারভেজ সোহেল রানা, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের দুই প্রার্থী মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে আপিল করেন। এরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. জাকির হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরান এইচ সরকার। চট্টগ্রাম-৫ আসনে আপিল আবেদন করেন বিএনপি নেতা মীর নাসিরউদ্দিনের ছেলে ও বিএনপি প্রার্থী মীর হেলাল। 

এদিকে মঙ্গলবার প্রার্থীদের আপিল গ্রহণ করা আট বিভাগের  ডেস্কগুলো পরিদর্শন করেন ইসি কমিশনার মাহবুব তালুকদার। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপিলকারীদের প্রতি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করা হবে না। গত ২রা ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন। যাদের মনোনয়নপত্র  বৈধ-অবৈধ হয়েছে, তাদের আপিলের শুনানি আগামী ৬ই ডিসেম্বর থেকে ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে আদালতের মতোই শুনানি করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন একটি আধাবিচারিক সংস্থা। নির্বাচন কমিশনারদের মর্যাদাও হাইকোর্টের বিচারপতিদের সমান। শুনানিতে আপিলকারীরা তাদের আইনজীবী নিয়ে আসতে পারবেন।

সেখানে আদালতের  বেঞ্চ’র মতো করেই তারা মুভ করবেন। সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনই আপিল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা পালন করে। সংক্ষুব্ধরা ইসির সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হলে আদালতেও যেতে পারবেন। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের ১১ তলায় শুনানি হবে। ২৮শে নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে ৩০৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা পড়ে মোট ২ হাজার ৫৬৭টি ও স্বতন্ত্র ৪৯৮টি। ২রা ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র বাছাই। ওইদিন ২ হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র  বৈধ ও ৭৮৬টি অবৈধ বলে  ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এগুলোর মধ্যে বিএনপির ১৪১টি, আওয়ামী লীগের ৩টি এবং জাতীয় পার্টির ৩৮টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩৮৪টি। আগামী ৯ই ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১০ই ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ এবং ৩০শে ডিসেম্বর ভোট হবে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

মামলা শত নয়, শত শত


৩ ডিসেম্বর ২০১৮, আশপাশের দোকান থেকে খাবার কিনে এসে হাইকোর্টের প্রাঙ্গণে বসে খাচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রায় ২০০ ব্যক্তি আদালতে হাজির হয়ে স্থানীয় থানায় দায়ের করা একটি মামলার অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন করেন। তাদের অনেকে জামিন পান। ছবি: আরমান হোসেন


পুলিশি হেনস্তার ভয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্ভয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন কী না সে নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

যেমন, পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে বিএনপি প্রার্থী সাইফুল আলম নীরব নিজের মনোনয়নপত্র নিজে জমা দিতে পারেননি। ঢাকা-১২ আসনের এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ২৬৭টির মতো মামলা। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তার কাঁধেই এতো বেশি মামলার বোঝা।

এমনকি, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ৩,০৬৫ সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি মামলার শিকার।

দলের সহযোগীদের মাধ্যমে পাঠানো নীরবের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা গ্রহণ করেছেন। ভোটের মাঠে এখন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

নীরব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বুঝতে পারছি না, প্রচারণা যখন শুরু হবে তখন আমি কীভাবে কাজ করবো। কেননা, পুলিশ নিয়মিত বাসায় হানা দেয়। শুধু আমিই না, আমার দলের কোনো নেতা-কর্মীই বাসায় থাকতে পারছেন না।”

২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপির শাসনামলে নীরব নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছিলেন। যুবদলের এই সভাপতি এখন জামিনে থাকলেও গত ২০১০ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তার হলফনামায় দেখা যায়, মামলাগুলোর অধিকাংশ হয়েছে সন্ত্রাসী কাজে অংশ নেওয়া, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, বোমাবাজি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর অভিযোগে।

নীরবের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৬৭টি মামলার মধ্যে ৯৯টি তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়াও, ৯৫টি মামলা রয়েছে বিচারাধীন। মামলাগুলোর অধিকাংশ দায়ের করা হয়েছিলো ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে।

কিন্তু, মজার বিষয় হচ্ছে, চলতি বছরে বিএনপি কোনো বড় ধরনের আন্দোলনে না নামলেও নীরবের বিরুদ্ধে নতুন করে ৫৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

একই আসনে বিএনপি বিকল্প প্রার্থী হিসেবে রেখেছেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কমিশনার আনোয়ারুজ্জামানকে। তবে নগর বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধেও রয়েছে ৭২টি মামলা। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো নীরবের মামলাগুলোর মতোই।

আনোয়ারুজ্জামানের ৭২টি মামলার মধ্যে ৩০টি মামলার চার্জ গঠনের শুনানি চলছে এবং ২৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তিনি এখন জামিনে রয়েছেন।

কিন্তু, নীরব বা আনোয়ারুজ্জামান ব্যতিক্রম নন।

আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির অধিকাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা। কারো কারো বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১০০টিরও বেশি।

যেমন, হলফনামা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৩৭টি মামলা। সেগুলোর মধ্যে ৪৮টি বিচারাধীন এবং ৫৭টি রয়েছে তদন্তাধীন। এছাড়াও, ২৬টি মামলায় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। আর একটিতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।

ঢাকা-১৮ আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া জাহাঙ্গীরকে লড়াই করতে হবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেত্রী সাহারা খাতুনের বিরুদ্ধে।

সব মামলায় জামিনে থাকা জাহাঙ্গীর ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমাকে গোপনে প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে। এছাড়া, আর কোনো পথ খোলা নেই।”

বিএনপির অপর নেতা নবীউল্লাহ নবীর বিরুদ্ধে রয়েছে ১০০টির বেশি মামলা। দলের ঢাকা দক্ষিণ শাখার সহ-সভাপতি নবী ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

নবীর ১২১টি মামলার মধ্যে ৫৬টি তদন্তাধীন এবং ৩৭টিতে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে।

তবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের ঘটনাটি আরও অদ্ভুত। কারাগারে থাকা এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ১০৮টি মামলা। তিনি পাবনা-৫ আসন থেকে নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

শিমুলের হলফনামায় রয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার ৬৪টি মামলায় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে।

বিএনপির পাবনা শাখার সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মান্নান বলেন, “শিমুল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তিনি ভুয়া মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন। দল যদি তাকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয় তাহলে আমরা তার প্রচারণার কাজে অংশ নিবো।”

পাবনায় শিমুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার।

ঢাকা-৪ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে রয়েছে ৮০টি মামলা। বিকল্প হিসেবে তার ছেলে তানভীর আহমেদকেও প্রার্থী করা হয়েছে। কিন্তু, তানভীরের বিরুদ্ধে রয়েছে ৭৫টি ফৌজদারি মামলা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দলের অন্তত ৫৩৭ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিএনপি আরও জানায়, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে দলটির ৮৫ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৪,১২৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আরও ৩ লাখ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪৬টি মামলা এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪২টি।

দলটির দেওয়া তথ্যে আরও জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপির ২৫ লাখ ৭০ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৯০ হাজারের মতো মামলা দেওয়া হয়েছে।

এসব মামলার অধিকাংশ দায়ের করা হয়েছে ২০১২ সাল থেকে ২০১৩ সালে মধ্যে এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে। সেসময় বিএনপি-নেতৃত্বাধীন জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছিলো। বিভিন্নস্থানে সেই আন্দোলন সহিংসতার রূপও নিয়েছিলো।

এছাড়াও, ২০১৫ সালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা দায়ের করা হয়। তখন দলটি সারাদেশে লাগাতার অবরোধ পালন করেছিলো। সেই অবরোধ প্রায় তিনমাস চলেছিলো।

২০১২ সাল থেকে দায়ের করা এসব মামলায় বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের অনেকে কারাগারে রয়েছেন। অনেকে আবার পলাতকও।
  • The Daily Star /Bangla/Dec 05,2018 

Tuesday, December 4, 2018

‘রাক্ষসী সরকার মানুষ খেয়ে ফেলছে’


রাক্ষস যেমন মানুষ খায়, তেমনি সরকার ও সরকারের লোকজন মানুষ খেয়ে ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহব্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেছেন, ‘কেঁদে কি হবে, এই কান্নাই কারো কোল ভিজবে না। যারা ক্ষমতায় আছেন, যারা কিছু করতে পারে আপনাদের জন্য, যারা দায়িত্বে আছে, তারা সবাই দায়িত্বজ্ঞানহীন। কোনো মানুষের জন্য কোনো দয়া নেই, দরদ নেই। ওরা রাক্ষসের ভূমিকায়। রাক্ষস যেমন মানুষ খায়, এই সরকার, এই সরকারের লোকজন তেমনি মানুষ খেয়ে ফেলছে। কোনরকম বিচার পাচ্ছে না।’

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ০৪, জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে গুম হওয়া পরিবারদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’র আয়োজনে এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত এরা ক্ষমতায় আছে, ততদিন পর্যন্ত আপনারা কোনো বিচার পাবেন না। অতএব লড়াই একটাই, এদের কবল থেকে মুক্তি চাই। তাহলে পরে আমরা স্বজনদের ফিরে পাব, এদের কাছ থেকে পাবেন না। সরকার কোনো কথা শুনবে না। আপনারা দেখছেন নির্বাচনের নামে সরকার কি কি করছে। যারা এই নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছে তাদের গ্রেফতার করছে, গুম হয়ে যাচ্ছে, মামলা দিচ্ছে একটা পর একটা। এমনকি এরকম পর্যন্ত হয়েছে, যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে তার কোন অস্তিত্ব নেই, তবুও মামলা হচ্ছে।’ 

‘গুম হওয়া সুমন ও হোম মিনিস্টার একই এলাকার মানুষ। পাঁচ বছর আগে সুমনের মা-বোনরা যখন তার কাছে গিয়েছিল তার কাছে, তিনি বলেছিলেন তিনি এ ব্যাপারে জবাব দিবেন। পাঁচ বছর পর্যন্ত কোনো জবাব দেননি। মনে করেছেন নির্বাচনের মধ্যে তিনি জবাব দিবেন, দেবেন না। তাই কাজ একটাই, এদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে হবে, ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করতে হবে। তাছাড়া পারবেন না। আর সেটার জন্য আপনারা নিজ-নিজ এলাকায় যান। বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজন যাকে পান, তাকেই বলেন- সামনের নির্বাচনে এদেরকে জবাব দিতে চাই। আপনি যদি গুমের বিচার চান, তাহলে ভোটের লড়াই করতে হবে, আপনার যদি ন্যায্য অধিকার চান, তার জন্য ভোটের লড়াই করতে হবে। সামনে ভোট ভোটের লড়াই একমাত্র লড়াই। অন্য কোনো লড়াই নাই।’

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘কান্না হাহাকার ও ভেতরের রক্তক্ষরণের মধ্যে আছি। রাষ্ট্র বাহিনী গঠন করে জনগণের নিরাপত্তার জন্য। এই যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ বা যেকোনো বাহিনী কাউকে বল প্রয়োগ করতে পারে, গ্রেপ্তার করতে পারে ও বিচারের মুখোমুখি করতে পারে একটি আইনের ওপর দাঁড়িয়ে। সংবিধান সে আইন দিয়েছে। সে আইনেরওপরে তারা বল প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাহিনী যখন সে আইন অমান্য করে জনগণের ওপর বল প্রয়োগ করে, কাউকে হত্যা করে কিংবা কাউকে গুম করে ফেলে, তখন তাদের আইন প্রয়োগ করার বৈধতা আর থাকে না।’

সরকারকে উদ্দেশে করে সাকি বলেন, ‘এই যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তারা বেছে-বেছে অনেক এর ওপরে আইন প্রয়োগ করেন এবং বিচার করেন। আপনারা নিজে আইন মানেন না, অন্যদের আইন মানার জন্য বাধ্য করতে চান। এটা টিকবে না, আপনাদের স্বৈরাচারী ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য যেভাবে মানুষকে গুম করছেন, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার লংঘন করছেন, তাতে আপনাদের ক্ষমতা তো থাকবেই না আপনাদের উদ্যোগে রাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়ে যাবে। এবং সে অধিকার এই সরকার কিংবা শাসকদের আমরা দিতে পারিনা।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বলেছি, প্রতিপক্ষ দমনের নামে যেভাবে একটা রাষ্ট্রকে দৈত্যকার রাষ্ট্রে পরিণত করছেন, সেটা আপনাকে রক্ষা করবে না। যদি নিজের নিরাপত্তা চান, তাহলে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। আর সেই নিরাপত্তা জায়গা হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘গুম হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্য ধরনের অপরাধ। এটা খুনের চেয়েও জঘন্য অপরাধ। এবং পৃথিবীর বিভিন্ন আইনে যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে সেখানেও এটা জঘন্য অপরাধ হিসেবেই সংজ্ঞায়িত করা আছে। আমাদের আন্তর্জাতিক আইনে বলা হয়েছে, গুম বা কোন যখন পরিকল্পিত এবং ব্যাপক সংখ্যায় হয় তখন সেটাকে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধে সংজ্ঞায়িত করতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই দেশের যত খুনের গুমের ঘটনা ঘটেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিকার হয়েছে সরকার বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মী। কাজেই আমাদের ভাবার কারণ রয়েছে এই গুম হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। সংখ্যার দিক থেকেও এটি ব্যাপক সংখ্যায় হয়েছে। কাজে আমি মনে করি, গুমের শিকার যে সকল পরিবার রয়েছে, আপনারা যদি বিচার না পান তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে এই বিচার পাওয়ার জন্য দরকার হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চেষ্টা করবেন। আমাদের প্রশ্ন তোলার সময় হয়েছে। কারণ, দীর্ঘ বছর যাবত আপনারা রাষ্ট্রের কাছে বিচার চেয়েছেন কিন্তু বিচার পাচ্ছেন না।

‘আমাদের বাংলাদেশি সংবিধানে রয়েছে, যে কোনো নাগরিককে আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবে। এবং রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের ব্যবহার হবে আইন মোতাবেক। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, বাংলাদেশের কোন আইনে আছে একজনের বিচার না করে তাকে গুম করে ফেলবেন? কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে প্রশ্ন তোলার মতো মানুষ সমাজে কমে যাচ্ছে।’

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাস‌দের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, তাবিদ আওয়াল। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন গত ৫ বছরে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা।
  • কার্টসিঃ ব্রাকিংনিউজ বিডি / ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

64% polling centres risky!

Dhaka div has highest number of such centres, say police


Sixty-four percent of the polling centres across the country are vulnerable to violence, with the highest number of such centres in Dhaka division, and police have finalised an elaborate security plan giving importance to those.

Out of the 40,273 polling centres for the December 30 national election, police have identified 25,827 as “important”, according to a police assessment.

“As a law enforcement agency, we don't use the word 'vulnerable' because it may send a negative message to the people about our security arrangement. So we have used the term 'important' and prepared our security plan giving importance to those centres,” a top police official said.

Five policemen will be deployed in each risky centre while three in each “normal” centre. Besides, there will be members of other law enforcement agencies, officials said.

Usually during polls, 20 members of the law enforcement agencies and Ansar are deployed in each vulnerable centre and 15 in each normal centre.

The police prepared the security plan and categorised the polling centres after taking opinion from the field level police and intelligence officials across the country.

As per the plan, 1.23 lakh policemen will carry out their duties at the field level while around 50,000 officials will be involved in election-related activities, officials involved in security planning told The Daily Star yesterday.

Besides, there will be 2,226 “mobile teams”, 767 “striking teams” and 356 “standby teams” to ensure peaceful atmosphere for the election.

The Election Commission estimated that around 6 lakh law enforcers would be deployed on election duties.

RISKY CENTRES

Of the 25,827 “important” centres, 24,195 are in plain land and 1,632 in “special” areas (remote and hilly areas and Chittagong Hill Tracts).

In Dhaka division, a total of 5,679 polling stations out of 9,872 are vulnerable and 28,395 police personnel will be deployed there.

Sohel Rana, assistant inspector general of police at the Police Headquarters, yesterday said, “Police have taken necessary preparations for a fair and peaceful election. We have special measures for 'important' polling centres.”

TWO MONITORING BODIES FORMED

As part of its security plan, the police have already formed two monitoring bodies to oversee the security arrangement during the election. The bodies are Law and Order Monitoring and Coordination Cell and Law and Order Monitoring and Coordination Committee.

Under the cell, eight top officials -- ranging from additional inspector general of police to superintendent of police -- will monitor and coordinate law and order, dividing the country into four zones.

On the other hand, the six-member committee, led by IGP Mohammad Javed Patwary, will monitor and coordinate the overall law and order in the country.

DRIVE AGAINST ILLEGAL ARMS ON

Police have already intensified its drive against illegal arms, listed criminals and wanted accused after the announcement of the polls schedule by the Election Commission on November 8, officials said.

The law enforcers didn't give the specific number of listed criminals. However, police statistics of June show that around 2.42 lakh GR warrants (cases filed with police stations), 1.49 lakh CR warrants (cases filed with the court) and 27,485 conviction warrants have been issued by courts.

Talking to The Daily Star yesterday, Chittagong Metropolitan Police Commissioner Mahabubor Rahman said, “Although we conduct drives against illegal arms and wanted accused and criminals round the year, drives have gained momentum after the announcement of polls schedule.”

Humayun Kabir, commissioner of Khulna Metropolitan Police, also made similar comments about their activities.

Besides, 100 police teams, formed in September to monitor social media to prevent rumours and fake news, recently started conducting “cyber patrolling”, a top official at the Police Headquarters said.

“The teams are actually monitoring whether anyone is spreading rumours and misleading information using the social media ahead of the election,” he said wishing anonymity.

A Social Media Monitoring and Cyber Crimes Prevention Committee at the Police Headquarters was closely working with the teams and giving necessary directives to them, the official added.
  • The Daily Star/Dec 04,2018 

বৈদেশিক বাণিজ্যের নথিতে জালিয়াতি : তদারকি আরো জোরদার করুন

সম্পাদকীয়
অর্থ পাচার, শুল্ক ফাঁকিসহ নানা অসদুদ্দেশ্যে বিল অব লেডিং, এয়ারওয়ে বিল, ট্রাক রিসিপ্টের মতো জরুরি নথি বা দলিল জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছেন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাংকে জমা দেয়া পরিবহন-সংক্রান্ত নথির ২৫ শতাংশের ক্ষেত্রেই মূল কপি ও অনুলিপির মধ্যে অমিল পাওয়া যায়। কার্গো ক্যারিয়ার বা পণ্য পরিবহন সংস্থার পরিচিতি নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে। ৮০ শতাংশ বিল অব লেডিংয়ের যথার্থতা নিয়ে চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয় ব্যাংকারদের। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বেড়ে ওঠার পাশাপাশি নানা ধরনের জালিয়াতির ঘটনাও বেড়ে উঠছে। এসব রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানা উদ্যোগ নিলেও জালিয়াতির ধরনে পরিবর্তন আসায় এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। অনেক সময় ব্যাংকারও সেসব জালিয়াতি সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যাশিত রাজস্ব আহরণ থেকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকারদের আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে বিল অব লেডিং, এয়ারওয়ে বিল, ট্রাক রিসিপ্টের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। বৈদেশিক বাণিজ্যে জালজালিয়াতি প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, শুল্ক বিভাগ, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার, শিপিং লাইন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেটিও আমলে নিতে পারে কর্তৃপক্ষ। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্রেডিট রিপোর্টের জন্য একটি সেন্ট্রাল তথ্যভাণ্ডার (ডাটাবেজ) তৈরি করতে পারলে ঝুঁকি ও খরচ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সেন্ট্রাল ডাটাবেজ থাকলে কোনো ভুয়া ক্রেডিট রিপোর্ট সরবরাহের সুযোগ থাকবে না। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাংক খাতের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে; কমবে অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনাও।

বৈদেশিক বাণিজ্য ঘিরে জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের প্রবণতা বেড়ে উঠছে দেশে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচারের ৮৩ শতাংশ হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে। ব্যাংক সতর্ক থাকলে কোনো অনিয়ম ঘটার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার কতটা বেড়েছে, তা আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতির পেছনেও অর্থ পাচার দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থ পাচারের সম্ভাব্য পথ অনুসন্ধান এবং তা বন্ধে সরকারের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগগুলো প্রত্যাশিত ফল লাভে সফল হয়নি। এর পেছনে অবশ্য নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগের অভাবই দায়ী। ব্যাংকগুলোর উচিত বৈদেশিক বাণিজ্যের যাবতীয় নথি পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করে দেখা। অধিকাংশ ব্যাংক ক্লায়েন্ট বেজড তথ্য যাচাই-বাছাই করে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী মিথ্যা বা ভুয়া তথ্যের আশ্রয় নিয়ে অর্থ পাচার ও শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছেন। এমন প্রবণতা বন্ধে ব্যাংকগুলোকে আরো সতর্ক হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত কেস টু কেস বা পর্যায়ক্রমিকভাবে ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্যের নথি পর্যালোচনার প্রতিবেদন খতিয়ে দেখা, কোথাও গরমিল দেখা গেলে অধিক যাচাইয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশ ব্যাংক বা ব্যাংকের একার পক্ষে বৈদেশিক বাণিজ্যের নথি ঘিরে জালিয়াতি ও অর্থ পাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বৈদেশিক বাণিজ্যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সুযোগও নিয়ে থাকেন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী। এক্ষেত্রে বৈদেশিক বাণিজ্যকে আরো মসৃণ করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও তদারকি জোরদার করা জরুরি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো কীভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যকে আরো গতিশীল ও স্বচ্ছ করেছে, তা অনুসরণ করতে পারে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। যাদের কাজ হবে বৈদেশিক বাণিজ্যের জালিয়াতির ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে তা বন্ধে সুপারিশ করা। তবে এসবের আগে প্রয়োজন সুশাসন নিশ্চিত করা। বৈদেশিক বাণিজ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের অপরাধপ্রবণতাও কমে আসবে বৈকি।
  • কার্টসিঃ বণিক বার্তা/  ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮

৪৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগেও মহাসড়কে যানবাহনের গতি কমছে!

শামীম রাহমান

দেশের সবচেয়ে ভালো মহাসড়কগুলোর একটি ঢাকা-চট্টগ্রাম। পরিবহন মালিক ও ব্যবসায়ীদের হিসাবে ২৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি বর্তমানে অতিক্রম করতে পণ্যবাহী একটি যানবাহনের সময় লাগছে গড়ে ১০ ঘণ্টা। এ হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় অতিক্রম করছে ২৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার পথ। অথচ আট-দশ বছর আগেও সড়কটি দিয়ে একটি পণ্যবাহী যান ঘণ্টায় ৩৮ থেকে ৪৪ কিলোমিটার গতিতে চলত। চার লেন হওয়ার পরও সড়কটিতে যানবাহনের গতি বাড়েনি, উল্টো কমেছে।

দেশে পণ্য পরিবহনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রুট ঢাকা-বুড়িমারী। সড়কটিতে পণ্যবোঝাই একটি গাড়ির গড় গতি ঘণ্টায় মাত্র ১৫ কিলোমিটার। একইভাবে ঢাকা-বাংলাবান্ধা রুটে চলাচলরত একটি পণ্যবোঝাই যানবাহনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় মাত্র ১৭ কিলোমিটার। অথচ কয়েক বছর আগেও এসব মহাসড়কে যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের উপরে ছিল।

সড়ক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে হারে যানবাহন বাড়ছে, সে অনুযায়ী সড়ক বাড়ছে না। উন্নত হচ্ছে না সড়ক অবকাঠামোও। এর বাইরে সড়কের পাশে হাটবাজার, টোল প্লাজার কার্যক্রমে ধীরগতি মহাসড়কে যানবাহনের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগারের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত এক যুগে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহনের গতি কমেছে ঘণ্টায় গড়ে ছয় কিলোমিটার। ২০০৪-০৫ সালে দেশের মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ৩৪ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার। ২০১৬-১৭ সালে তা ঘণ্টায় ২৮ দশমিক ৫৪ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। যদিও প্রতি বছরই বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়নে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের হিসাব বলছে, গত নয় বছরে নতুন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও উন্নয়নে বিনিয়োগ হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়কগুলোর নকশা করা হয় ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচলের সক্ষমতা বিবেচনায় রেখে। আঞ্চলিক মহাসড়কের ক্ষেত্রে এ সক্ষমতা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়কগুলোয় জরিপ চালিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগার। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মহাসড়কের সক্ষমতার অর্ধেক গতিতে যানবাহন চলছে।

কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগারের পর্যবেক্ষণ বলছে, ২০০৪-০৫ সালে দেশে ভারী ও মাঝারি ট্রাকের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। ২০১৬-১৭ সালে তা ৩১ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। ভারী ট্রাকের গতি কমেছে ঘণ্টায় নয় কিলোমিটার। ছোট ট্রাকের গতি কমেছে আরো বেশি। ২০০৪-০৫ সালে দেশে ছোট ট্রাকগুলো ঘণ্টায় গড়ে ৪২ কিলোমিটার গতিতে চলেছে, বর্তমানে নেমে এসেছে মাত্র ২৯ কিলোমিটারে।

মহাসড়কে ট্রাকের গতি কমে যাওয়ার বিষয়ে একমত ব্যবসায়ীরাও। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, যানবাহন বিশেষ করে পণ্যবাহী যানবাহনের গতি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ যানজট। এতে আমাদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের টোল প্লাজাগুলোর আধুনিকায়ন করতে হবে। কারণ, মহাসড়কটিতে যানজটের প্রধান কারণ টোল প্লাজা। পাশাপাশি রেল অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হলে সড়কে চাপ কমবে। সড়কও এতে গতি পাবে।

সড়কপথে দূরপাল্লায় চলাচলের প্রধান মাধ্যম বড় বাস। এক যুগের ব্যবধানে ঘণ্টায় আট কিলোমিটার গতি কমেছে বড় বাসের। ২০০৪-০৫ সালে দেশে বড় বাসের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার। বর্তমানে তা ৩৭ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। একইভাবে ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার গতি কমেছে মিনিবাসের। ২০০৪-০৫ সালে মহাসড়ক দিয়ে ঘণ্টায় গড়ে ৩১ কিলোমিটার গতিতে মিনিবাস চললেও এখন চলছে গড়ে ঘণ্টায় ২৬ কিলোমিটার গতিতে।

বড় বাসের গড় গতি কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক তালুকদার। গতি কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে যেভাবে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে, সেভাবে সড়ক-মহাসড়ক বাড়েনি। সড়ক অবকাঠামোও উন্নত হয়নি। সুতরাং এসব গাড়ি চলাচল ও গতিবেগ স্বাভাবিক রাখার জন্য যে ধরনের সড়ক অবকাঠামো দরকার, তা আমাদের নেই।

শুধু ট্রাক কিংবা বাস নয়, সড়ক-মহাসড়কে গতি কমেছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারেরও। তবে সবচেয়ে বেশি কমেছে মাইক্রোবাসের, প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ১৩ কিলোমিটার। ২০০৪-০৫ সালে মাইক্রোবাসের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ৪৯ কিলোমিটার। বর্তমানে তা ৩৬ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। একইভাবে ২০০৪-০৫ সালে প্রাইভেট কারের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ৩৯ কিলোমিটার। বর্তমানে গড় গতি ঘণ্টায় ৩৩ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।

মহাসড়কে যানবাহনের গড় গতি কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক গবেষণাগারের পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। ফলে সড়ক ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এর প্রভাবে আমাদের যে রোড নেটওয়ার্কটি আছে, তাতে চাপ পড়ছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সড়ক নেটওয়ার্ক বাড়ানো হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে, দুই লেনের সড়ককে চার লেন করা হচ্ছে। সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি হলে যেমন এক ধরনের সংকট তৈরি হয়, ঠিক এমনটাই হচ্ছে আমাদের সড়ক-মহাসড়কে।

বিভিন্ন সড়কে চলমান নির্মাণ ও উন্নয়নকাজও যানবাহনের গতি কমাতে ভূমিকা রাখছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অনেকগুলো প্রকল্প চলমান। এগুলো শেষ হতে আরো কয়েক বছর লাগবে। তখন সড়ক-মহাসড়কের চিত্রটি পাল্টে যাবে।

বিশেষজ্ঞ ও খাতসংশ্লিষ্টরা যানবাহনের গতি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলছেন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধিকে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, ২০১০ সালে সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহন ছিল প্রায় ১৫ লাখ। বর্তমানে এ সংখ্যা সাড়ে ৩৬ লাখে উন্নীত হয়েছে। দেশে যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়েনি সড়কের পরিমাণ, যদিও বছর বছর মোটা টাকা বিনিয়োগ করছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের হিসাব বলছে, গত নয় বছরে নতুন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও উন্নয়নে ৪৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ব্যয় হয়েছে আরো ১ হাজার ৭০৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

ভাঙাচোরা সড়ককে গতি কমার আরেকটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) তথ্য বলছে, দেশের ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের ২১ শতাংশের বেশি ভাঙাচোরা দশায় রয়েছে। একইভাবে ৪ হাজার ২০০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের ২৪ শতাংশ ভাঙাচোরা। আর ১৩ হাজার ২৪২ কিলোমিটার জেলা সড়কের মধ্যে ২৯ শতাংশই ভাঙাচোরা। সামগ্রিকভাবে দেশের রোড নেটওয়ার্কের ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশই ভাঙাচোরা দশায় আছে বলে এইচডিএমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

জানতে চাইলে পরিবহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, গত ২০ বছরে দেশে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। সে অনুপাতে সড়কের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা না হলে যান চলাচলের গতি কমবে, এটাই স্বাভাবিক। টোল প্লাজাও যানবাহনের গতি কমিয়ে দেয়ার আরেকটি কারণ। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টোল প্লাজায় একটা বড় সময় চলে যায়। আবার রাস্তা যদি খারাপ থাকে, তাহলে গতি এমনিতেই কমে যাবে। এর বাইরে বিভিন্ন স্থানে কনস্ট্রাকশন কাজ চলার কারণেও গতি কমতে পারে। আমাদের বেশির ভাগ মহাসড়কেই ডিভাইডার নেই। এতে যে গাড়িটি রাস্তার ডান পাশ দিয়ে চলার কথা, সেটি অনেক সময় বাম পাশে চলে আসে। এর প্রভাবে বাম পাশ দিয়ে চলা গাড়িগুলোর গতি কমে আসে। মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা এবং চালক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা মহাসড়কে যানবাহনের গতি কমিয়ে দেয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

  • কার্টসিঃ বণিক বার্তা/  ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮

‘দুটি প্রবাদ বাক্যের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, মনে হচ্ছে বাংলাদেশের দুটি প্রবাদ বাক্যের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। একটি প্রবাদ বাক্য হচ্ছে ‘ছলে বলে কৌশলে’। এটা হচ্ছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর। আর বিরোধী গোষ্ঠির প্রবাদ হচ্ছে ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে’। দুটি খুবই প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি প্রবাদ বাক্য। 

মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এই দুটি বাক্য এক অর্থে সার্বিক পরিবেশটাকে চিত্রায়িত করছে। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো পক্ষপাতিত্বমূলকভাবে ছল-বল এবং কৌশল তিনটিই ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ দেখলাম যে মানিকগঞ্জে একটি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।বলা হচ্ছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর মিলছে না। তার স্বাক্ষর কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের ভিক্তিতে মনোনয়ন বাতিল করে দেয়া হয়েছে। এই ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠির একটি প্রয়াস দেখছি। 

পিপিআরসি’র এই নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আর অন্য পক্ষের যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে এটাও খুবই স্পষ্ট। তাদের নির্বাচনি ময়দানে টিকে থাকার প্রচেষ্টা চলছে। এভাবে কে কতোদুর আগাতে পারে সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে আমাদের। এত কিছুর পরেও নির্বাচনটা আসলে কেমন হবে এটা বলাটা এখন কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে যেভাবে দেখছি সেখানে অনেক প্রশ্নের বিষয় থেকে যাচ্ছে। কিন্তু আল্টিমেটলি প্রতিযোগীদের টিকে থাকার প্রচেষ্টা চলছে। পক্ষান্তরে ভোটাররা যেটা চায় যে ভয়মুক্ত পরিবেশ। সেটা কেমন হবে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কাজেই কেমন নির্বাচন হবে এ বিষয়ে আপাতত আপেক্ষিক উত্তর দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। 

জোট-মহাজোটে নির্বাচন হচ্ছে এই নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতি আনবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতিটা একভাবে বোঝার চেষ্টা। আমরা চাই যে অংশগ্রহণমূলক একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ভিক্তিতে সার্বিকভাবে রাজনীতি এবং সুষ্ঠু দেশ শাসন এগুলো নিশ্চিত হবে। এর অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচন। সেটার অপেক্ষায় আমরা আছি। কিন্তু তার পরেও একটি চ্যালেঞ্জ থেকে যায়। জবাবদিহিতামূলক শাসন ব্যবস্থা। সেটা শুধু নির্বাচন করেই নিশ্চিত হবে না। এটার জন্য বাড়তি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।  

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮

রেকর্ড বাতিলকে অস্বাভাবিক বলছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা


জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়ন বাতিল হওয়াকে স্বাভাবিক মনে করছেন না নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এভাবে বেশি সংখ্যক প্রার্থিতা বাতিল নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনার অভাব বা অদক্ষতা হতে পারে। আগে থেকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন উঠায় বিতর্কে থাকা নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নের বিষয়ে আরো সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল বলেও মনে করেন তারা। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে বলেন, স্বাক্ষরের ভুলের জন্য সাধারণত প্রার্থিতা বাতিল হয় না। স্থগিত করা হয়। প্রার্থীকে বলা হয় আপনি এটা ঠিক করেন। তাছাড়া প্রার্থীতো একাধিক মনোনয়নপত্র দেয় যেটা সঠিক সেটা গ্রহণ করা হয়। এখন যদি প্রশ্নই তোলা হয় এটা মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর না ওইটা ওমুকের স্বাক্ষর না। বাতিল করে দিলাম। ক্ষমতা আছে তার মানে এটা আপনি (নির্বাচন কমিশন) করতে পারেন। কিন্তু এতে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়। তিনি বলেন, আমাদের সময় একজন রিটার্নিং অফিসারকে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি করা হয়েছিল।

অনুসন্ধান করে দেখা গেছে ওই রিটার্নিং অফিসার শুধুমাত্র তার অথরিটি দেখানোর জন্য এটা করেছিল। কথা হলো সবকিছু এখন নির্বাচন কমিশনের কাছে। তিনি বলেন, একটি পত্রিকায় পড়লাম বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন কমিশনকে বলেছেন যে আমার প্রার্থীদের মনোনয়নে আমার স্বাক্ষর রয়েছে। এরপর তো আর কোনো কথা থাকতে পারে না। এই ধরনের বাতিল করাতো ঠিক না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিএনপির কোনো প্রার্থীই রইলো না। এটাতো নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই আলামতে যদি নির্বাচন হয় তাহলে এই ধরনের নির্বাচনতো আসলে গ্রহণযোগ্য হবে না। যে সরকারই থাকবে বা আসুক তাদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। 

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মনোনয়নপত্র বাতিলের বিষয়টি তো প্রমাণের ব্যাপার। তবে অনেক বেশি বাতিল করা হয়েছে। আবার বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরটাও বাতিল হয়েছে। এদিক থেকে আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। জানি না সরকারি দলের সংখ্যাটা কত। এখন দেখতে হবে কি কারণে বাতিল হয়েছে। ঋণখেলাপি অনেক রাঘব বোয়াল রয়েছে যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়নি। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি নিয়েও মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন অনেকে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠার পরও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ ব্যাপারে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা তো ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ আগেই বলেছি। এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষ ভাবার কারণ নেই। 

স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন মনোনয়ন বাতিল হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিএনপি একভাবে দেখতে পারে। কিন্তু আমি বলবো ৮ তারিখ পর্যন্ত দেখতে হবে। কারণ এখনো তো আপিল করার সুযোগ আছে। ৮ তারিখের পরই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে। দেখা যাক কি হয়। যাদের বাতিল হয়েছে ধরা যাক রেজা কিবরিয়ার বিষয়টি, তার তো সামান্য  টাকার একটি বিলের বিষয়। এটা এমনিই ঠিক হয়ে যাবে। আবার অনেকের স্বাক্ষরের সমস্যা রয়েছে। সেগুলো ঠিক হতে পারে। তাই আপিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ইস্যুতে তিনি বলেন, এটা তো পুরনো অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনের যে বিচক্ষণতা, সাহসিকতা এবং আইন সম্পর্কে পরিষ্কার হয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ায় কিছুটা ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এটা নিরপেক্ষতার অভাব কিনা বলতে পারবো না তবে অদক্ষতা, অমনোযোগিতা, ভুল পরিকল্পনা হতে পারে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে দেয়া যাবে না

নির্বাচন কর্মকর্তারা ব্যর্থ হলে নির্বাচন ব্যর্থ হবে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আইনসিদ্ধ না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে উল্লেখ করে নির্বাচন কর্মকর্তাদের তিনি বলেছেন, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আমরা নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না। আপনাদের কেউ কলঙ্কের ভাগিদার হতে চাইবেন না জানি। ভোটকেন্দ্রের সকল অনিময় রোধ, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা আপনাদের দেয়া হয়েছে। এই সর্বোচ্চ শক্তি আপনাদের কতটুকু, তা আপনাদের প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে জেনে নেবেন। আপনাদের দায়িত্ব পালনে শিথিলতা কখনো বরদাশত করা হবে না। যুদ্ধক্ষেত্রে সম্মুখ সমরে সাফল্যের কোনো বিকল্প নেই। 

গতকাল আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করে তিনি বলেন, আপনারা নির্ভয়ে, সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।

আপনারা ব্যর্থ হলে নির্বাচন ব্যর্থ হবে। অন্যদিকে আপনাদের সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে সমগ্র জাতি।

তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, কখনো সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে, আবার কখনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। ফলে নির্বাচনী সংস্কৃতিতে কোনো ধারাবাহিকতা গড়ে ওঠেনি। এবার পূর্ণাঙ্গ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ধারাবাহিকতার ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। এই জন্য নির্বাচনকে আমরা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে দিতে পারি না। সেই লক্ষ্য পূরণে নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। 

মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন সম্পর্কে জনমনে আস্থার ক্ষেত্র তৈরি করবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী যেন আপনাদের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অতি সামান্য। তারা শুধু চান, ভোটের দিন যেন কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। তাদের এই সামান্য চাওয়াই রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশাল কর্মযজ্ঞে রূপান্তরিত হয়েছে ভোটের মাঠে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা। এই পূর্বশর্ত পালনে আইনানুগভাবে কর্তব্য পালনে আপনারা দৃঢ় ভূমিকা রাখবেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আইন যদি নিজস্ব গতিতে না চলে তাহলে কোনো কার্যক্রমই আইনানুগ হতে পারে না। সবার জন্য সমভাবে আইনের প্রয়োগ করা না হলে সেই আইন আইন নয়, আইনের অপলাপ মাত্র। 

মাহবুব তালুকদার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ২৬ দিন বাকি। নির্বাচনের মূল দায়িত্বপালন করেন প্রিজাইডিং অফিসার। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার থাকেন। সার্বিক বিবেচনায় তিনিই সঞ্চালক। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো নতুন সঞ্চালক তৈরির আপনারা কারিগর। সব অনিয়ম রোধ, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা আপনাদেরকে দেয়া হয়েছে। এই সর্বোচ্চ শক্তি সেটা কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বা সামরিক কর্মকর্তার থেকে কম নয়।

তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছি। আপনারা আমাদের শপথ গ্রহণের মূল অংশীদার। আপনাদের মাধ্যমেই আমরা নির্বাচন সম্পন্ন করি। এক্ষেত্রে আমাদের শপথ আপনাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয় এবং আপনাদের দায়িত্ব পালনের ওপর বর্তায়। আপনারাও মনে মনে শপথগ্রহণ করুন দেশ ও জাতির স্বার্থে নির্বাচনের এই দায়িত্ব পালনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, আগামী ৩০শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায় রচনা করবে। সেই সোনালি অধ্যায়ের রূপকার আপনারা। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে আমরা শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসীর নজরদারির সামনে। আমাদের কার্যকলাপ, প্রতিটি পদক্ষেপ সবাই প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সেদিক থেকে এই নির্বাচন আমাদের আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন। 

নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশের ২ হাজার ২৬ জন নির্বাচন কর্মকর্তাকে কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার নয় জেলার মোট ৪০৮ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক উপস্থিত ছিলেন। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮