রাক্ষস যেমন মানুষ খায়, তেমনি সরকার ও সরকারের লোকজন মানুষ খেয়ে ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহব্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেছেন, ‘কেঁদে কি হবে, এই কান্নাই কারো কোল ভিজবে না। যারা ক্ষমতায় আছেন, যারা কিছু করতে পারে আপনাদের জন্য, যারা দায়িত্বে আছে, তারা সবাই দায়িত্বজ্ঞানহীন। কোনো মানুষের জন্য কোনো দয়া নেই, দরদ নেই। ওরা রাক্ষসের ভূমিকায়। রাক্ষস যেমন মানুষ খায়, এই সরকার, এই সরকারের লোকজন তেমনি মানুষ খেয়ে ফেলছে। কোনরকম বিচার পাচ্ছে না।’
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ০৪, জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে গুম হওয়া পরিবারদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’র আয়োজনে এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত এরা ক্ষমতায় আছে, ততদিন পর্যন্ত আপনারা কোনো বিচার পাবেন না। অতএব লড়াই একটাই, এদের কবল থেকে মুক্তি চাই। তাহলে পরে আমরা স্বজনদের ফিরে পাব, এদের কাছ থেকে পাবেন না। সরকার কোনো কথা শুনবে না। আপনারা দেখছেন নির্বাচনের নামে সরকার কি কি করছে। যারা এই নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছে তাদের গ্রেফতার করছে, গুম হয়ে যাচ্ছে, মামলা দিচ্ছে একটা পর একটা। এমনকি এরকম পর্যন্ত হয়েছে, যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে তার কোন অস্তিত্ব নেই, তবুও মামলা হচ্ছে।’
‘গুম হওয়া সুমন ও হোম মিনিস্টার একই এলাকার মানুষ। পাঁচ বছর আগে সুমনের মা-বোনরা যখন তার কাছে গিয়েছিল তার কাছে, তিনি বলেছিলেন তিনি এ ব্যাপারে জবাব দিবেন। পাঁচ বছর পর্যন্ত কোনো জবাব দেননি। মনে করেছেন নির্বাচনের মধ্যে তিনি জবাব দিবেন, দেবেন না। তাই কাজ একটাই, এদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে হবে, ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করতে হবে। তাছাড়া পারবেন না। আর সেটার জন্য আপনারা নিজ-নিজ এলাকায় যান। বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজন যাকে পান, তাকেই বলেন- সামনের নির্বাচনে এদেরকে জবাব দিতে চাই। আপনি যদি গুমের বিচার চান, তাহলে ভোটের লড়াই করতে হবে, আপনার যদি ন্যায্য অধিকার চান, তার জন্য ভোটের লড়াই করতে হবে। সামনে ভোট ভোটের লড়াই একমাত্র লড়াই। অন্য কোনো লড়াই নাই।’
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘কান্না হাহাকার ও ভেতরের রক্তক্ষরণের মধ্যে আছি। রাষ্ট্র বাহিনী গঠন করে জনগণের নিরাপত্তার জন্য। এই যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ বা যেকোনো বাহিনী কাউকে বল প্রয়োগ করতে পারে, গ্রেপ্তার করতে পারে ও বিচারের মুখোমুখি করতে পারে একটি আইনের ওপর দাঁড়িয়ে। সংবিধান সে আইন দিয়েছে। সে আইনেরওপরে তারা বল প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাহিনী যখন সে আইন অমান্য করে জনগণের ওপর বল প্রয়োগ করে, কাউকে হত্যা করে কিংবা কাউকে গুম করে ফেলে, তখন তাদের আইন প্রয়োগ করার বৈধতা আর থাকে না।’
সরকারকে উদ্দেশে করে সাকি বলেন, ‘এই যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তারা বেছে-বেছে অনেক এর ওপরে আইন প্রয়োগ করেন এবং বিচার করেন। আপনারা নিজে আইন মানেন না, অন্যদের আইন মানার জন্য বাধ্য করতে চান। এটা টিকবে না, আপনাদের স্বৈরাচারী ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য যেভাবে মানুষকে গুম করছেন, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার লংঘন করছেন, তাতে আপনাদের ক্ষমতা তো থাকবেই না আপনাদের উদ্যোগে রাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়ে যাবে। এবং সে অধিকার এই সরকার কিংবা শাসকদের আমরা দিতে পারিনা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বলেছি, প্রতিপক্ষ দমনের নামে যেভাবে একটা রাষ্ট্রকে দৈত্যকার রাষ্ট্রে পরিণত করছেন, সেটা আপনাকে রক্ষা করবে না। যদি নিজের নিরাপত্তা চান, তাহলে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। আর সেই নিরাপত্তা জায়গা হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘গুম হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্য ধরনের অপরাধ। এটা খুনের চেয়েও জঘন্য অপরাধ। এবং পৃথিবীর বিভিন্ন আইনে যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে সেখানেও এটা জঘন্য অপরাধ হিসেবেই সংজ্ঞায়িত করা আছে। আমাদের আন্তর্জাতিক আইনে বলা হয়েছে, গুম বা কোন যখন পরিকল্পিত এবং ব্যাপক সংখ্যায় হয় তখন সেটাকে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধে সংজ্ঞায়িত করতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই দেশের যত খুনের গুমের ঘটনা ঘটেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিকার হয়েছে সরকার বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মী। কাজেই আমাদের ভাবার কারণ রয়েছে এই গুম হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। সংখ্যার দিক থেকেও এটি ব্যাপক সংখ্যায় হয়েছে। কাজে আমি মনে করি, গুমের শিকার যে সকল পরিবার রয়েছে, আপনারা যদি বিচার না পান তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে এই বিচার পাওয়ার জন্য দরকার হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চেষ্টা করবেন। আমাদের প্রশ্ন তোলার সময় হয়েছে। কারণ, দীর্ঘ বছর যাবত আপনারা রাষ্ট্রের কাছে বিচার চেয়েছেন কিন্তু বিচার পাচ্ছেন না।
‘আমাদের বাংলাদেশি সংবিধানে রয়েছে, যে কোনো নাগরিককে আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবে। এবং রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের ব্যবহার হবে আইন মোতাবেক। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, বাংলাদেশের কোন আইনে আছে একজনের বিচার না করে তাকে গুম করে ফেলবেন? কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে প্রশ্ন তোলার মতো মানুষ সমাজে কমে যাচ্ছে।’
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, তাবিদ আওয়াল। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন গত ৫ বছরে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা।
- কার্টসিঃ ব্রাকিংনিউজ বিডি / ৪ ডিসেম্বর ২০১৮
No comments:
Post a Comment