সম্পাদকীয়
পদ্মা যে কত ভয়াল ও সর্বগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে, তা ভিটেমাটি হারিয়ে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছেন শরীয়তপুরের নড়িয়া অঞ্চলের বাসিন্দারা। এ বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর জুড়ে প্রবল ভাঙনে একের পর এক সেখানকার গ্রামগঞ্জ-হাটবাজার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিরাট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে কাটিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দু-তিনতলা পাকা বাড়ি, অনেক পুরোনো ঘরবাড়ি ও প্রাচীন গাছপালা গ্রাস করে নিয়েছে প্রলয়ংকরী পদ্মা। নড়িয়াসহ পাঁচটি উপজেলার ১০ হাজার পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বহু মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সর্বস্বান্ত হয়েছে।
এখন পদ্মা অনেক শান্ত। নতুন করে যাতে সর্বনাশা নেমে না আসে, সে জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভাঙনরোধ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। নড়িয়া ও জাজিরার পদ্মার ডান তীর রক্ষা প্রকল্প নামের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ করা হবে ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের ৫৪৭ কোটি টাকা দিয়ে তীর রক্ষা ও ৫৫০ কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা নদীর চর খনন করা হবে। বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো, একেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নে কোটি কোটি টাকা খরচ হয় ঠিকই। তার সুফল জনগণ খুব কমই পায়। দুর্নীতি এবং ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের যোগসাজশে নিম্নমানের কাজ করাই এর মূল কারণ।
নদীর ভাঙন ঠেকাতে যে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হলো, সেটি আর দশটা প্রকল্পের মতো নয়। এই প্রকল্পের ওপর লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করছে। একটি মহাসড়ক যদি ভালো করে তৈরি না করা হয়, তাহলে জনগণকে কষ্টভোগ করতে হয় ঠিকই কিন্তু তার জন্য হাজার হাজার মানুষের ভিটেবাড়ি বিলীন হয় না। কিন্তু একটি বেড়িবাঁধের কাজ বা নদী রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি অনিয়ম হয়, তাহলে তার জন্য অসংখ্য মানুষকে পথে বসতে হয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রকল্পের দিকে সতর্ক ও বাড়তি নজর রাখা দরকার।
এই প্রকল্পের অর্ধেক ব্যয় হবে চর খননে। অর্থাৎ ড্রেজিং করার পেছনে ব্যয় হবে ৫৫০ কোটি টাকা। পানির নিচের এই খননকাজ সাধারণ চোখে দৃশ্যমান হবে না। বিশেষজ্ঞরা ছাড়া কাজটি ঠিকমতো হচ্ছে কী না, সে সম্পর্কে কোনো আন্দাজও করতে পারবে না। ফলে সেখানে অনিয়মের ঝুঁকি অনেক। এ ছাড়া তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের বিষয়েও অনিয়ম ও দুর্নীতির ঝুঁকি আছে।
যেহেতু এই প্রকল্পটি সরকারের অন্য প্রকল্পগুলোর মতো নয়, যেহেতু এর সঙ্গে বহু মানুষের জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত, সেহেতু এখানে কোনো রকম দুর্নীতি যেন প্রশ্রয় না পায়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মনোযোগ ও নজরদারি প্রত্যাশা করছি।
কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১১ ডিসেম্বর ২০১৮
No comments:
Post a Comment