Search

Sunday, December 9, 2018

নির্বাচন ও মামলা - আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের কাজে আইনের অপপ্রয়োগ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনের সময় এই কথাটা আমরা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই। কারণ, দেশবাসী যখন চাইছেন আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে ও ন্যায্যতার সঙ্গে সম্পন্ন হোক, তখন সরকারের প্রতিপক্ষ দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনের অপপ্রয়োগ আগের চেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এর ফলে বিরোধী দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভোট গ্রহণের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের ওপর মামলাজনিত আইনি দুর্ভোগ বাড়তে থাকলে খোদ নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

নরসিংদী-১ সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী খায়রুল কবিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের কাজে আইনের অপপ্রয়োগের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর পুলিশ নাশকতার অভিযোগে বিএনপির ২৭ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬(২) ধারায় একটি মামলা করে। মামলাটির এজাহারে খায়রুল কবিরের নাম ছিল না। গত ২৫ নভেম্বর পুলিশ ওই মামলায় ২৭৩ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র পেশ করে, সেই অভিযোগপত্রে খায়রুল কবিরের নাম যুক্ত করে। ২৯ নভেম্বর তিনিসহ তিন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে অন্য দুজনের জামিন মঞ্জুর হয়, কিন্তু খায়রুল কবিরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, মামলাটি করা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইনের যে ধারায়, তা আজ থেকে ২৭ বছর আগেই বাতিল করা হয়েছে। খায়রুল কবিরের বিরুদ্ধে আইনের এই অপপ্রয়োগের কারণ খুব সম্ভব এই যে তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী।

বিএনপি থেকে মনোনীত তিনজন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা আছে। ঢাকা-১২ আসনের বিএনপির প্রার্থী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা আছে ২৬৭টি। এই দল থেকে মনোনীত অন্তত পাঁচজন প্রার্থীর প্রত্যেকেই শতাধিক মামলার আসামি। খোদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধেই রয়েছে ৪৬টি মামলা।

কেউ অপরাধ করলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি কোনো রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে শত শত মামলা দায়ের করা হয়, এমনকি ৫০টি মামলাও দায়ের করা হয়, তাহলে অবশ্যই তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। সংবাদমাধ্যমগুলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে কীভাবে অনেক গায়েবি মামলা করা হয়েছে। থানার পুলিশ যদি সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা করে, মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কিংবা দিনের পর দিন হয়রানি করে, তাহলে আইন প্রয়োগব্যবস্থা তার নৈতিক শক্তিই হারিয়ে ফেলে। আমাদের দেশে সেই চর্চা জোরেশোরে চলছে বলেই প্রতীয়মান হয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রধানত বিএনপি অংশ নেয়নি বলে সেটি দেশে-বিদেশে কোনো মহলেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে মিলে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে, তারা ইতিমধ্যে ২০৬ আসনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এই প্রার্থীদের অধিকাংশই একাধিক মামলার আসামি, নির্বাচনের ঠিক আগে এসে যদি এসব মামলার অজুহাতে তাঁদের হয়রানি করা হয়, তাহলে জনগণের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে। ক্ষমতাসীন মহলে যদি আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পরাস্ত করার দুরভিসন্ধি জেগে থাকে, তবে তা এখনই পরিত্যাগ করা ভালো। 
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮

No comments:

Post a Comment