একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের গঠিত ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিইসি কেএম নূরুল হুদা। গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির বিচারকদের ব্রিফিংকালে এ অসন্তোষের কথা জানান সিইসি। এ সময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচার হবে বলেও বিচারকদের জানান তিনি।
নূরুল হুদা বলেন, ২৫শে নভেম্বর এই কমিটি গঠন করার পর প্রত্যেকটি কমিটি ১টি করে অন্তত: ১২২টি অভিযোগ তদন্ত করার কথা ছিল। তা না হলে অন্তত: ১০০ টা, ১০০টাও বাদ দিলাম, অন্তত: ২২টি তদন্ত করার প্রত্যাশা ছিল। তা হয়নি। কারণ, এখন পর্যন্ত আপনারা প্রস্তুতি নিয়ে গুছিয়ে উঠতে পারেননি। আজ থেকে, এখান থেকে, আপনাদের কি করণীয়, দায়িত্ব এবং কিভাবে এই কমিটি পরিচালিত হবে জেনে শুনে, ফিরে গিয়ে তদন্ত করবেন।
মানুষের অভিযোগগুলো শুনবেন, আমলে নেবেন এবং তাদের রিলিফ দেবেন। যাতে তারা এলাকা থেকে ঢাকা পর্যন্ত না এসে আপনাদের কাছে যায়। ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্য ২৪৪ জন যুগ্ম জেলা জজ ও দায়রা জজ এবং সহকারী জজ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য দিয়ে অভিযোগ দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিচার হবে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যিনি আপনাদের কথা শুনবেন না পেনাল কোডের ১৯৩ ধারা মতে তাদের ৭ বছরের জেল হবে, যদি মিথ্যা তথ্য দেয় এবং আপনাদের আদেশ না মানে পেনাল কোডের ২২৮ ধারা অনুসারে তাদের বিচার হবে।
তার মানে হলো কোড অব সিভিল প্রসিডিউর এর ১৯০৮ এর সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে আপনারা মাঠে অবস্থান করবেন। কেএম নূরুল বলেন, আপনাদেরকে ভিজিবল (দৃশ্যমান) হতে হবে। তার মানে আপনারা এখন পর্যন্ত কিন্তু ভিজিবল হননি। বাস্তবতা হলো সেটা। ভিজিবল যখন হবেন, আপনাদের কাজের মাধ্যমে যখন আস্থা রাখবে, আপনাদেরকে যখন চিনবে, তখন থেকে আপনাদের উপরে দায়িত্ব আসবে। তখন আর নির্বাচন কমিশনে শ’ শ’ অভিযোগ আসবে না। আমরা প্রতিদিন শ’ শ’ অভিযোগ পাই। কিন্তু অভিযোগগুলো আমাদের কাছে আসার কথা না। কারণ আপনারা সেখানে (মাঠপর্যায়ে) রয়েছেন। আমরা কি করবো? অভিযোগগুলো আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো। প্রজাতন্ত্রের যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের প্রত্যেকের উপরে কোনো না কোনোভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। এটা ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে।
কমিটির সদস্যদের প্রো-অ্যাকটিভ ও ভাইব্রেন্ট হওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটিকে প্রো-অ্যাকটিভ হতে হবে, ভাইব্রেন্ট হতে হবে এবং আপনাদেরকে জানাতে হবে যে, তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য আপনারা আছেন।
৩০০টি আসনের মধ্যে ১২২টি জায়গায় আপনারা তাদের কাছাকাছি আছেন। তারা যেন সমস্যার সমাধান পায় এটা আপনাদেরকে দেখতে হবে। ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির বিচারকদের সম্পূর্ণ শক্তি নিয়োগের নির্দেশ দিয়ে সিইসি বলেন, বিচারকদের সমন্বয়ে প্রতি জেলায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যাদের নির্বাচন আচরণবিধি প্রতিপালনসহ অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার কাজ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেই দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করতে হবে। প্রার্থীর অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য বিচারকদের আরও সক্রিয় হতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের করণীয় যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে মানুষের অভিযোগ শুনবেন, আমলে নেবেন। যেন অভিযোগ ঢাকা পর্যন্ত না আসে, এলাকায় বসে সমাধান পেতে হবে। অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ ইসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮
No comments:
Post a Comment