Search

Sunday, December 2, 2018

আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ চাই

সম্পাদকীয়

নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা


ডিসেম্বর শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নির্বাচনী মাসে প্রবেশ করল। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ একান্ত প্রয়োজন। শুধু রাজনৈতিক দিক থেকে নয়, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা ধরনের সহিংস ঘটনার খবর আসছে। যেমন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত, নেত্রকোনায় জেলা কৃষক লীগের এক নেতা খুন, যশোরের বেনাপোলে আওয়ামী লীগের নেতা আমিরুল ইসলাম খুন, খুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ, শেরপুরে বিএনপির অফিসে ভাঙচুর ইত্যাদি। এ ছাড়া স্বামীর হাতে স্ত্রী খুনসহ আরও নানা ধরনের অপরাধ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটেছে।

নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক বিরোধের কারণে খুনোখুনিসহ নানা ধরনের সহিংস ঘটনা বেড়ে যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ যদি পক্ষপাতহীনভাবে পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকে এগুলো দমনে সচেষ্ট না হয়, ক্ষমতাসীন পক্ষ যদি আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ছাড় পায়, তাহলে এ পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। কারণ, আইন প্রয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তার ফলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোর মধ্যে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পরস্পরকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা জোরালো হতে পারে। তাই নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ধরনের সহিংস ঘটনা দ্রুত তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করাসহ আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে, দলনির্বিশেষে নির্বাচনের সব প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী–সমর্থকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে পক্ষপাত কিংবা নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নেই। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অন্যতম মৌলিক দিক এই যে সবার জন্য আইন সমানভাবে প্রয়োগ করা হবে। অর্থাৎ আইনের শাসনের মৌলিক নীতি থেকে সরে যাওয়া চলবে না।

একটি উদ্বেগের বিষয় হলো, কোনো দেশে যখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়, যখন রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যায়, তখন রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন পেশাদার অপরাধীরা আরও বেশি উৎসাহিত হয়ে উঠতে পারে। সহিংস অপরাধ সংঘটনে তাদের ব্যবহার করা অপেক্ষাকৃত সহজ হতে পারে; অর্থের বিনিময়ে তারা রাজনৈতিক স্বার্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। তা ছাড়া, তারা তাদের দৈনন্দিন অপরাধবৃত্তিতেও বাড়তি উৎসাহ–উদ্দীপনা বোধ করতে পারে।

নির্বাচনী সহিংসতার আড়ালে খুনখারাবিসহ গুরুতর অপরাধ করে পার পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ—এই ধারণা থেকে পেশাদার অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব সার্বিক নির্বাচনী পরিবেশেও পড়বে। তাই নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ধরনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রয়াস সব মহলেই থাকা একান্ত জরুরি। সে জন্য বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ভাবনা যদি কারও মনে থেকে থাকে, তবে প্রথমেই তা পরিত্যাগ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, যেকোনো সহিংস ঘটনা ঘটামাত্র তার আইনি প্রতিকারের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তৎপর হতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পরিচালিত হয় সরকারের নির্বাহী বিভাগের দ্বারা, নির্বাচনকালে একটি দলীয় সরকার দেশ পরিচালনা করছে, এ অবস্থায় আইন প্রয়োগকারীদের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশা করা কতটা বাস্তবসম্মত—এমন হতাশাবাদী প্রশ্ন না তুলে আমরা সরকারকে বলব, আইনকে তার নিজস্ব পথে চলতে দিতে হবে। নির্বাচনসংক্রান্ত সব অপরাধের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে, এ ক্ষেত্রে সরকারের বাধা দেওয়া নয়, বরং সহযোগিতা করাই সাংবিধানিক দায়িত্ব।

নির্বাচন কমিশন, সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবার আন্তরিক সহযোগিতায় নির্বাচনকালে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল থাকবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

No comments:

Post a Comment