Search

Sunday, December 9, 2018

সাত বছর শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা পেল বিদ্যুৎ কোম্পানি - ব্যক্তিখাত নয়, পিডিবিকে সুবিধা দেয়া হোক

সম্পাদকীয়

দ্রুত উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুৎ নিশ্চিতে দেশে বিদ্যুৎ খাতে ব্যক্তিখাতকে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল। সাময়িক সংকট কাটাতে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল বেসরকারি কোম্পানির ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের। বর্তমানে বেসরকারি কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৯। সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফার মার্জিন প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। ব্যবসায় লগ্নিকৃত মূলধন ও ব্যবহূত সম্পদের বিপরীতে রিটার্নেও এগিয়ে রয়েছে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র। যদিও বেসরকারি এসব কোম্পানিকে আরো সুবিধা দেয়ার নীতি অব্যাহত রাখা হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ খাতের এসব কোম্পানির জন্য কর অবকাশ সুবিধার মেয়াদ বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিদ্যমান তিন বছরের পরিবর্তে সাত বছর শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সংস্থাটি। প্রাথমিক অবস্থায় এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণে এ ধরনের সুবিধার প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবসায় যুক্ত প্রতিটি বেসরকারি কোম্পানিই এখন মুনাফার ধারায় রয়েছে। সেই বিবেচনায় এসব কোম্পানির জন্য এ মুহূর্তে কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার কোনো উপযোগিতা ও যৌক্তিকতা নেই। কাজেই আমরা চাইব, অযৌক্তিক সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনাপূর্বক লাভজনক প্রতিষ্ঠানের কর অবকাশ সুবিধা প্রত্যাহারে কার্যকর উদ্যোগ নেবে সরকার। এক্ষেত্রে পিডিবিকে সুবিধা জোগানো যেতে পারে। তাহলে এর সুবিধা গ্রাহক সরাসরি পাবে। আর কোম্পানিকে এ সুবিধা দিলে তাদের মুনাফাই স্ফীত হবে।

আমরা দেখছি বিদ্যুৎ খাতে সরকার অব্যাহতভাবে ভ্রান্ত পথে হাঁটছে। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে উপেক্ষা করে দ্রুত ও সহজে স্থাপন করা যায় বলে ব্যয়বহুল হলেও তরল জ্বালানিভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যুৎ সংকটের সাময়িক সমাধান ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে স্থায়ী রূপ নিয়েছে। প্রতি বছরই দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বাড়তি উৎপাদন ব্যয়ের অজুহাতে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে পিডিবিকে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে বিদ্যুৎ। ফলে লোকসান বাড়ছে সংস্থাটির, যার পরোক্ষ প্রভাব ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি। মূলত সরকারের অদক্ষতার দায়ই এখন জনগণকে বহন করতে হচ্ছে।

এদিকে জনগণ প্রত্যাশিত সুফল না পেলেও বিদ্যুৎ খাত বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য হয়ে উঠেছে লাভজনক ক্ষেত্র। বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবসায় তাদের মুনাফা বাড়ছে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠান লাভজনক হলে কর অবকাশসহ সরকারি ভর্তুকি প্রত্যাহার করা সমীচীন। কিন্তু বাংলাদেশে বিরাজ করছে উল্টো চিত্র। চলতি বছর থেকেই ২০ শতাংশ হারে আয়কর প্রদানের কথা থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্তে বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কর অবকাশ সুবিধা আবার বাড়ানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি তাহলে একচোখাভাবে বেসরকারি খাতের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে আরো বাড়তি মুনাফা উপার্জনের সুযোগ করে দিতে আগ্রহী? এমনটি হলে তা স্পষ্টত রাষ্ট্রীয় সমতা নীতির পরিপন্থী।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ 

No comments:

Post a Comment