Search

Tuesday, December 11, 2018

আইনের শাসনের নীতিতে অটল থাকুন - পরিবেশ উৎসবমুখর হোক

সম্পাদকীয়
নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই, বাতিল, আপিল, পুনর্বিবেচনা, প্রত্যাহার ইত্যাদির মাধ্যমে মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় শুরু হলো। এ পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের মনোনীত প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা চলবে, প্রার্থীরা নানা মাধ্যমে জনসংযোগ করবেন, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাবেন, তাঁদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো তুলে ধরবেন এবং ভোট চাইবেন। এই পর্যায়ে ভোটাররা অনুভব করবেন, এই প্রজাতন্ত্রে তাঁদেরও গুরুত্ব আছে; তাঁদের ভোটেই রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে।

এ পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রথমত, সব প্রার্থী যেন নির্বিঘ্নে প্রচারকাজ চালাতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, বিরোধী দল বিএনপির প্রার্থীদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে এবং অনেককে নতুন করে বিভিন্ন মামলার আসামির তালিকায় যুক্ত করা হচ্ছে। কেউ কেউ ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। যাঁরা গ্রেপ্তার হননি, তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কায় আছেন। এসব কারণে তাঁদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো দুরূহ হয়ে পড়বে।

শুধু প্রার্থী নন, তাঁদের কর্মী বাহিনীর সদস্যরাও গায়েবি মামলার অজুহাতে পুলিশি হয়রানির আশঙ্কায় রয়েছেন। তাঁরা যদি গ্রেপ্তারের ভয়ে নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হন, তাহলে তাঁদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো কঠিন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এভাবে নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে সব প্রার্থীর সমান সুযোগের ক্ষেত্র নষ্ট হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হবে।

নির্বাচনকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলাসহ ভিত্তিহীন নানা অভিযোগে যেসব মামলা করা হয়েছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে এখন সেগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া না করাই ভালো হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো প্রার্থী এ রকম হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করলে কমিশন সেসব মামলার অভিযোগ খতিয়ে দেখে ওই প্রার্থীকে অন্যায় হয়রানি থেকে রক্ষা এবং নির্বাচনী প্রচারকাজ চালিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করতে পারে। আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ভোটযুদ্ধে পরাস্ত করার অপকৌশল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন। এ জন্য শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সক্রিয় সহযোগিতার বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সরকারের নির্বাহী বিভাগের আওতায় কাজ করে। এবারের নির্বাচনের বিশেষত্ব হলো, এটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দলীয় সরকারের অধীনে। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। সুতরাং এ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে নির্বাচনকালে এমন নিরপেক্ষ আচরণ করতে হবে, যেমনটি নির্দলীয় সরকারের কাছে প্রত্যাশা করা হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কাজে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করা সরকারের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব। সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধের তাৎক্ষণিক আইনি প্রতিবিধানের জন্য আইন-বিধানের দ্রুত ও যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। আইনের শাসনের মূলনীতি সম্পর্কে সচেতন থাকলে এ রকম পরিস্থিতি সামাল দেওয়ায় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। শঙ্কা, ভীতি, অনিশ্চয়তা দূর করে একটা উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন, সরকার ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর সেই চেষ্টাই করা উচিত।

কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

No comments:

Post a Comment