Search

Wednesday, December 5, 2018

নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতা - ঝুঁকি দূর করতে ইসিকে সতর্ক থাকতে হবে

সম্পাদকীয়

নির্বাচনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই সহিংস ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। গত শনিবার রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সরকারদলীয় সাংসদ এনামুল হক ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদের সমর্থকদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষে যুবলীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন। এর আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন, নেত্রকোনায় জেলা কৃষক লীগের এক নেতা খুন হয়েছেন এবং যশোরের বেনাপোলে খুন হয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা।

রাজশাহীর বাগমারায় সংঘর্ষটি পুরোপুরি নির্বাচনকেন্দ্রিক এবং একই দলের দুটি পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে। এনামুল হক ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, আবুল কালাম আজাদও একই আসনে আওয়ামী লীগেরই মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে এর আগেও একাধিকবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের দ্বন্দ্ব-বিরোধ যে সহিংসতার রূপ নিতে পারে, এমন আশঙ্কা ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কোনো শান্তি-সমঝোতার পদক্ষেপ নেয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যাতে সংঘর্ষ এড়ানো যায়।

নির্বাচনের আগে এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটা প্রবণতা: বলপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা কিংবা নিজেদের পেশিশক্তির প্রদর্শনী করে ভোটযুদ্ধে জয়লাভের চেষ্টা বৃদ্ধি পেলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা দুরূহ হয়ে পড়বে। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা লক্ষ করা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নেতার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। আওয়ামী লীগের যেসব নেতার কর্মী-সমর্থকেরা কাউকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করবেন; ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি সহিংস কর্মকাণ্ডে অংশ নেবেন, সেসব নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এমন ঘোষণা দেওয়া আওয়ামী লীগের নিজের স্বার্থে এবং নির্বাচনী পরিবেশের জন্য প্রয়োজন।

আওয়ামী লীগের লোকজন নিজেদের মধ্যে যেমন সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছেন, তেমনি তঁাদের বিরুদ্ধে বিরোধীদের ওপর হামলার অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে। যেমন, গত শনিবারই সন্ধ্যায় নাটোর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বাড়িতে আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করেছে বলে দুলু অভিযোগ করেছেন, যদিও আওয়ামী লীগ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ফেনী-২ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল অভিযোগ করেছেন, সরকারি দলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাঁকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দিচ্ছে, তারা তাঁকে তাঁর বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তিনি বলেন, গত শনিবার সকালে ৮-১০টি মোটরসাইকেলে সন্ত্রাসীরা তাঁর বাড়ির সামনে এসে ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

আওয়ামী লীগের লোকজন কোনো নেতার পক্ষে মিছিল–সমাবেশ ইত্যাদি করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন, এমন খবরও আসছে। যেমন চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে গত শনিবার এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বিক্ষোভ-মিছিল, সড়ক অবরোধ করে যানজট সৃষ্টি করা এবং জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর ক্ষেত্রেও তাঁরা বিবেচনাবোধের পরিচয় দিচ্ছেন না।

এসব ক্ষেত্রে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি যত গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের সক্রিয় তৎপরতা। নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে দলনির্বিশেষে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারীদের অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে হবে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

No comments:

Post a Comment