সম্পাদকীয়
দেশের বিমানবন্দরগুলোয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একচেটিয়া অধিকার ছিল। তবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার মান নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সেবার মানোন্নয়নে এবার এ কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি কোম্পানিকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় লাগেজসহ পণ্য ওঠানামার কাজ অর্থাৎ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে অব্যবস্থাপনা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, ব্যাহত হচ্ছে ফ্লাইটের সূচি। ফলে বিদেশী বিমান পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো আমাদের তিনটি আন্তর্জাতিক বন্দরের ব্যবস্থাপনার মান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছে।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য বাংলাদেশ বিমান শতকোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনেছে। কিন্তু তাতেও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে যাত্রীদের লাগেজ পেতে বিড়ম্বনাসহ উড়োজাহাজে পণ্য ওঠানামা, জ্বালানি ভরা, পরিচ্ছন্নতাসহ নানা কারণে অবতরণ করা সব বিমান সংস্থাকেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিমানের অভ্যন্তরীণ এক তদন্তে এ খাতে বড় ধরনের দুর্নীতির প্রমাণও মিলেছে। তাই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রদানের সিদ্ধান্ত-সংবলিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে বেবিচকের পক্ষ থেকে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মাধ্যমে তা গেজেট আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে চিঠিতে।
অতীতে একাধিক বিদেশী প্রতিষ্ঠানের উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে ত্রুটির কারণে। এতে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে কর্তৃপক্ষকে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং একটি জরুরি ও স্পর্শকাতর কাজ। এর সঙ্গে দেশের সুনাম ও প্রশংসারও একটি যোগসূত্র রয়েছে। ফলে নীতিমালা প্রণয়নের সঙ্গে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে এর ব্যবস্থাপনার কাজ দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে চুক্তি যেন যথাযথ হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কাউকে কাজ পাইয়ে দেয়া হলে তা পরিস্থিতিকে আরো সঙ্গিন করবে। এমনিতেই আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক রেটিংয়েও আমাদের বিমানবন্দরগুলোর অবস্থান তলানিতে। কয়েকটি উন্নত দেশ তো বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞাও জারি করে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে দক্ষ কোম্পানিকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ দিতে হবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সেবার অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বেসরকারি কোম্পানিকে দেয়ার উদ্যোগকে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এতে সার্বিক সেবার মান উন্নত হলে উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসিত হবে। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা জাতীয় নিরাপত্তার বিবেচনায় অতি গুরুত্বপূর্ণ। বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ এমন, যেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর স্থানগুলোয় অবাধ প্রবেশাধিকার থাকে। কোনো বেসরকারি কোম্পানিকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ দেয়া হলে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে, তা একটি বড় প্রশ্ন। সাম্প্রতিক বিশ্বপরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদী তত্পরতার কারণে বিভিন্ন দেশের জাতীয় বিমানবন্দরগুলোয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোরতর করা হচ্ছে। আমাদেরও এ বিষয়ে চিন্তা করা উচিত। প্রক্রিয়াটি হওয়া উচিত সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, সব ধরনের প্রভাবমুক্ত। উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান ও বিধিমোতাবেক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সব বিবেচনায় সবচেয়ে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানকেই কাজটি দেয়া উচিত। দরপত্র প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ বিমানসহ সফল ও প্রফেশনাল কোম্পানিসহ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কোম্পানির অংশগ্রহণের যেন সুযোগ থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
- কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ ১০ ডিসেম্বর ২০১৮