Search

Tuesday, January 8, 2019

দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড - উৎকৃষ্ট ব্যাংকের অপকৃষ্ট কাজ

হাছান আদনান 
দেশের অন্যতম সেরা ব্যাংকের তকমা ছিল বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংকের। কিন্তু সুশাসনের ঘাটতি, অনিয়ম-দুর্নীতি, খেলাপি ঋণের জাতাকলে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে ব্যাংকটি। ২০১৭ সালে মুনাফার দিক থেকেও বড় ধাক্কা খেয়েছে সিটি ব্যাংক। ক্রেডিট কার্ডসহ রিটেইল ব্যাংকিংয়েও দুর্বল হচ্ছে ব্যাংকটির অবস্থান। সিটি ব্যাংকের দৈন্যদশা উঠে এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানেও।

সিটি ব্যাংকের ২০১৭ সালের আর্থিক পরিস্থিতির ওপর সম্প্রতি বিশদ পরিদর্শন চালিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পরিদর্শনে উঠে এসেছে ব্যাংকটির অনিয়ম-দুর্নীতির নানা চিত্র। সিটি ব্যাংকের এ ধরনের অন্তত এক ডজন অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

১১ বছর ধরে ঋণ অবলোপনে অনিয়ম: ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত খেলাপি ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে সিটি ব্যাংক। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ব্যাংকটি খেলাপি ঋণের মধ্য থেকে আংশিকভাবে অবলোপন করেছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০০৩ সালের বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর-২-এর নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অনিয়মের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টিগ্রেটেড সুপারভিশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের (আইএসএমডি) কাছে ধরা পড়ে।

তখন সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ মর্মে নির্দেশনা দেয় যে, যেসব ঋণ আংশিকভাবে অবলোপন করা হয়েছে, সেসব ঋণ হিসাবের যে অংশ এখনো অবলোপন করা হয়নি (সিএল স্থিতি ২৭৪ কোটি টাকা) তা ২০১৭ হিসাব বর্ষসহ পরবর্তী পাঁচ বছরে অর্থাৎ, ২০২১ সালের মধ্যে আদায়ের মাধ্যমে সমন্বয় কিংবা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণের মাধ্যমে অবলোপন করতে হবে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ নির্দেশনা মান্য করেনি সিটি ব্যাংক।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসএমডির নির্দেশনা অনুযায়ী সিটি ব্যাংক ২০১৭ সালের শেষ দিন পর্যন্ত কোনো প্রভিশন সংরক্ষণ তো করেইনি, বরং প্রভিশন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা-সম্পর্কিত পরিদর্শন দলের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে। ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত কোনো প্রভিশন সংরক্ষণে রাজি নন বলে জানান। ব্যাংকের এ ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে পরিদর্শক দল মন্তব্য করে।

পরিদর্শক দল মনে করে, আংশিক অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করলে সিটি ব্যাংকের নিট মুনাফায় টান পড়বে। এজন্য ব্যাংকটিকে ২০১৮ সালের মুনাফা থেকে ১০০ কোটি টাকা পৃথকভাবে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রভিশন সংরক্ষণ করলে চলতি বছরে ব্যাংকটির সমপরিমাণ আয় কমে যাবে।

প্রভিশন সংরক্ষণে গড়িমসি: ২০১৭ সাল শেষে সিটি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেডের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটির অন্য সাবসিডিয়ারি মালয়েশিয়ায় সিবিএল মানি ট্রান্সফার এসডিএন-ও লোকসানে আছে। ২০১৭ সাল শেষে প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত লোকসান ছয় কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সিটি ব্যাংকের দুটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত লোকসান ৬৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত মূলধন ছিল ৩৫০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। মোট ৬৪ কোটি টাকা লোকসান হওয়ায় এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মূলধন কমে ২৮৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অথচ এ লোকসানের বিপরীতে সমপরিমাণ অর্থ প্রভিশন সংরক্ষণের কথা থাকলেও সেটি রাখেনি সিটি ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৭ সাল শেষে সিটি ব্যাংকের মোট প্রভিশন সংরক্ষণের কথা ছিল ৮৬৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে একই সময় পর্যন্ত ব্যাংকটি ৬৬১ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে। এ হিসাবে সিটি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২০৪ কোটি টাকা। অথচ আর্থিক পরিস্থিতি ভালো দেখাতে প্রভিশন ঘাটতি দেখায়নি ব্যাংকটি।

শুধু প্রভিশন সংরক্ষণে অনিয়মই নয়, বরং খেলাপি ঋণ নিয়মিত দেখিয়েও ব্যাংকের অবস্থা ভালো দেখানো, ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে সিটি ব্যাংক। বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতীয়মান হয় যে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কৃত্রিমভাবে ব্যাংকের আর্থিক চিত্র ‘উত্কৃষ্ট’ এবং নিজেদের পারফরম্যান্স ‘অতি উত্তম’ দেখানোর জন্য যতটা আগ্রহী, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা এবং প্রযোজ্য আইন ও বিধিবিধান পরিপালনে ততটাই উদাসীন ও অনাগ্রহী। এর মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালো প্রদর্শন করা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে তা ব্যাংকের টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্তরায়।

আইন বিভাগে বেআইনি কর্মকাণ্ড: ২০১৬ সালের ১৬ মে সিটি ব্যাংকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শাফায়েত উল্যাহকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু মাত্র নয় মাসের মধ্যেই নীতিমালা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেয়া হয় তাকে। একই সঙ্গে বেতন বাড়ানো হয় ৬ শতাংশ। এরপর চলতি বছরের ২০ মার্চের মধ্যে আবারো শাফায়েত উল্যাহর ২৬ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের পদোন্নতি-সংক্রান্ত নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে লিগ্যাল বিভাগের প্রধান শাফায়েত উল্যাহকে দ্রুত পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে এ ধরনের পদোন্নতি প্রদান ও বিশেষ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ও যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটি ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবীদের তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শাফায়েত উল্যাহ ব্যাংকের লিগ্যাল ডিভিশনের প্রধানের দায়িত্বে নিয়োজিত। অথচ তার লিগ্যাল কনসালট্যান্সি ফার্ম ‘চৌধুরী অ্যান্ড উল্যাহ’ ব্যাংকটির প্যানেলভুক্ত আইনজীবী। এটি সম্পূর্ণভাবে বিধিবহির্ভূত এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এ অনিয়মের বিষয়ে সিটি ব্যাংকের প্রতি তিন দফা নির্দেশনা প্রদান করে পরিদর্শক দল। এর মধ্যে রয়েছে অনিয়মগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান, ভবিষ্যতে কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ ও শাফায়েত উল্যাহকে ব্যাংকের কর্মকর্তা অথবা প্যানেল আইনজীবী— যেকোনো একটি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে সিটি ব্যাংকের আইনসংক্রান্ত ব্যয় ছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৭ সালে তা ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বেড়ে ৫ কোটি ২ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। আইনি খাতে ব্যয় প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি হলেও ব্যাংকের আদায় অগ্রগতি যৎসামান্য। মামলার জন্য আইনজীবীদের ফি দেয়ার ক্ষেত্রেও অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে।

৩৩ কোটি টাকার জাল-জালিয়াতি: পরিদর্শক দলের কাছে সিটি ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের অভ্যন্তরে ৪০টি জাল-জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এসব জালিয়াতিতে সংশ্লিষ্ট অর্থের পরিমাণ ১৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে ব্যাংকে ১২টি জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এসব জালিয়াতিতে সংশ্লিষ্ট অর্থ ১৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সিটি ব্যাংকে ৩৩ কোটি টাকার জাল-জালিয়াতির ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়েছে।

চার বছরে ৯৬৬ কোটি টাকা অবলোপন: ব্যাংকের ব্যালান্স শিট ভালো দেখাতে ঋণ অবলোপনকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সিটি ব্যাংক। শুধু ২০১৪ সাল থেকে পরবর্তী চার বছরে ৯৬৬ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৩৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। বিদায়ী বছরেও ২৭০ কোটি ৫৩ লাখ টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকটি। স্বাভাবিক পন্থায় আদায় অযোগ্য হয়ে যাওয়ায় এ ঋণগুলো অবলোপন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ১ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে সিটি ব্যাংক।

চার বছরে ৮৮ কোটি টাকা মওকুফ: ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চার বছরে ঋণখেলাপিদের ৮৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা মওকুফ করেছে সিটি ব্যাংক। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৬ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়েছে ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালেও ঋণখেলাপিদের ১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মওকুফ করে দিয়েছে ব্যাংকটি।

পরিচালকরা নিয়েছেন ৩ হাজার ৯৪ কোটি টাকা: সিটি ব্যাংকের পরিচালকরাই ৩ হাজার ৯৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের পরিচালক ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে প্রত্যক্ষ ঋণ রয়েছে ২ হাজার ৫৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। পরিচালকদের প্রত্যক্ষ এ ঋণ সিটি ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণের ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর পরোক্ষভাবে পরিচালকরা ১ হাজার ৩৯ কোটি ৪২ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণগুলো নিয়মিত রাখার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের কাছে ৭০৭ কোটি টাকার ঋণ: সিটি ব্যাংক থেকে দেশের অন্য ব্যাংকগুলোর ৯ জন পরিচালক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৭০৭ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা নিয়েছেন। এর মধ্যে কিছু পরিচালকের ঋণ হিসাবে সীমাতিরিক্ত ঋণ সুবিধা রয়েছে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সীমাতিরিক্ত ঋণগুলো সীমার মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছে পরিদর্শন দল।

ঋণের সিংহভাগই ৪১ গ্রুপের কাছে: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকাই বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ৪১টি শিল্প গ্রুপের মধ্যে। পরিদর্শন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৪১টি গ্রুপের কাছে সিটি ব্যাংকের প্রত্যক্ষ ঋণ রয়েছে ৫ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ গ্রুপগুলোর কাছেই ৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকার পরোক্ষ ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি।

খেলাপি না দেখাতে পুনঃতফসিল: বিভিন্ন সময়ে সিটি ব্যাংক ১ হাজার ৪১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ৩৮টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ব্যাংকটি পুনঃতফসিল করেছে ১৭৮ কোটি টাকা। কিন্তু এসব ঋণ পুনঃতফসিল করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু শ্রেণীকরণ এড়ানো, অনাদায়ী সুদ আয় খাতে নেয়া এবং ব্যাংকের পারফরম্যান্স কৃত্রিমভাবে ‘উত্তম’ দেখানোর জন্যই প্রচলিত বিধিমালা ও ব্যাংকিং রীতি অনুশীলন বহির্ভূতভাবে ব্যাংকটি বিরূপমানের শ্রেণীকৃত/শ্রেণীকরণযোগ্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে আদায় অসম্ভব এমন ঋণ পুনঃতফসিল করে চলছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব ঋণ অনাদায়ে স্বল্প সময়েই আবারো খেলাপি হয়ে যাবে।

টাকা ফেরত দিচ্ছে না শীর্ষ খেলাপিরা: ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে পাওনা ছিল ৪৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অথচ এ শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে বিদায়ী বছরে ব্যাংকটির আদায় হয়েছে মাত্র ১১ কোটি টাকা। শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পরিদর্শক দল।

৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকাই আটকে গেছে মামলায়: সিটি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকাই মামলায় আটকে আছে। গত পাঁচ বছরেই ব্যাংকটি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ২৬৯টি মামলা করেছে। এসব মামলায় আটকা পড়েছে ৩ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকার ঋণ। সিটি ব্যাংকের বিরুদ্ধেও ১৯২টি মামলা করেছেন গ্রাহকরা। এসব মামলার বিপরীতে ঋণ রয়েছে ৬১৮ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে দ্য সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশদ পরিদর্শন প্রতিবেদনকে আমরা স্বাগত জানাই। যেকোনো অডিট বা পরিদর্শন প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সুশাসন কার্যকর হয়। প্রতিবেদনটি সিটি ব্যাংকের পর্ষদে তুলে ধরা হবে।

তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের বিষয়ে বেশকিছু আপত্তির কথা বলেছে। বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের অবস্থান এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, সেসব ক্ষেত্রে আমরা উন্নতি করার উদ্যোগ নেব।

লিগ্যাল ডিভিশনের প্রধান শাফায়েত উল্যাহর ক্ষেত্রে নীতিমালা লঙ্ঘনের বিষয়ে সোহেল আর কে হোসেন বলেন, তিনি আমার আত্মীয় নন। পর্ষদে কোনো পরিচালকের আত্মীয়স্বজন আছে বলেও আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। কাজের স্বীকৃতিই তিনি পেয়েছেন। তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তিগুলো আমরা পর্যালোচনা করব।

  • Courtesy: Banikbarta/ Jan 08, 2019

শপথগ্রহণের বৈধতা নিয়ে স্পিকার-সিইসিকে আইনি নোটিশ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণের বৈধতা নিয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

মঙ্গলবার, জানুয়ারি ৮, দুপুরে ডাকযোগে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এ নোটিশ পাঠানো হয়। 

এতে তিনি বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩(৩) ও ১৪৮(৩)-এর পরিপন্থী।

এতে উল্লেখ করা হয়, ১৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে এ নোটিশের জবাব না দিলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।

নোটিশে বলা হয়, ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ সালে শুরু হওয়া দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার কথা আগামী ২৮ জানুয়ারি। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তারা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন সম্পন্ন করে শপথ অনুষ্ঠান করেছেন।

‘বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন না হলে অংশগ্রহণমূলক হয়েও লাভ নেই’ — মাহবুব তালুকদার


গত ৩রা জানুয়ারির নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের(ইসি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ অনুষ্ঠানে নিজের দেয়া বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, ‘আমি যে বক্তব্য রেখেছি তাতে কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এমন কথা বলেন মাহবুব তালুকদার। লিখিত বক্তব্যে এই কমিশনার বলেন, অনেক সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করেছেন। আমি আমার অবস্থান পরিবর্তন করেছি কিনা! এ সর্ম্পকে বিভ্রান্তির অবসান ঘটাতে বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন।

আমি বক্তব্যে বলেছি, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিয়েছি।’ ইতোপূর্বে ১৭ই ডিসেম্বর বক্তব্যে আমি বলেছিলাম , ‘সব দল অংশগ্রহণ করলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে এর সর্ম্পক নেই। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া একটা প্রাথমিক প্রাপ্তি। আসল কথা হচ্ছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হচ্ছে কিনা এবং বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে কি না? নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে অংশগ্রহণমূলক হলেও কোন লাভ নেই।’ নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে আমি কোন কথা বলিনি।

কেমন নির্বাচন হয়েছে সাংবাদিকদের এহেন প্রশ্নের জবাবে আমি পূর্বে বলেছি, ‘নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন, তাহলে এ প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন।’ এখনও আমি সে কথাই বলি। আমার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। 

বিগত ৩রা জানুয়ারির অনুষ্ঠানটি ছিল ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠান। কাউকে প্রশংসাসূচক কথা বলে ধন্যবাদ জানাতে হয় এবং সেটাই সৌজন্যের প্রকাশ। আমার ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা ঠিক হবে না। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ৮, ২০১৯ 


‘নতুন সরকার গঠন হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়’ — মির্জা আলমগীর


নতুন সরকার গঠন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যে নির্বাচনের ফলাফল আমরা প্রত্যাখান করেছি যে নির্বাচনের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই, জনগণ পুরোপুরিভাবে এটাকে বর্জন করেছে বলা যেতে পারে। এই নির্বাচনের ফলাফল কখনোই মেনে নেয়নি৷ সেই নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে কোনো পার্লামেন্ট গঠন বা সরকার গঠন এটা নিয়ে মন্তব্য করার তো হাস্যকর ছাড়া কিছু না। 

মঙ্গলবার, জানুয়ারি ০৮, দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাকর্মীদের সাথে অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করেছি, পার্লামেন্ট গঠন প্রত্যাখ্যান করেছি, এবং সরকার গঠন পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখান করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের কোনো অধিকার নেই যে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের উপর তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করার৷ এই জন্য এটা কখনোই জনগণের ভোট করে নাই, জনগণ ভোট দিয়ে এদেরকে নির্বাচিত করে নাই। 

২০১৪ সালে এই প্রেক্ষাপটই ছিলো এবং এরপরও ৫ বছর তারা শাসন করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পাকিস্তান থাকে নাই? থাকছে তো। বিভিন্ন জায়গায় থাকছে না? জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক নাই কিন্তু সরকার আছে। সরকার তো থাকেই, একটা কিছু না কিছু থাকতে হবে। তার সঙ্গে এটাকে মিলিয়ে লাভ নাই।

আপনি এটা চিন্তা করেন না কেন যে আপনার গোটা জাতি ডেপ্রাইব (বঞ্চিত) হয়ে গেছে। একবারও ভাবেন না গোটা বাঙালি জাতিটাকে আজকে প্রতারণা করলো৷ একবারও ভাবেন মনের মধ্যে আপনাদের মনের মধ্যে আবেগ আসে না যে আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি, যে চেতনার ভিত্তিতে সেই চেতনাকে আমি ধূলিস্যাৎ করে দিয়ে কিছু লোকের দখলদারিত্বের জন্য আপনি সরকার গঠন করেছেন দেশ পরিচালনার জন্য। আবার আপনারা রেফারেন্স টানবেন। 

বিএনপি এখন কি করবে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, বিএনপি এখন যা করার তা করবে৷ জনগণের দল, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি৷ গণতান্ত্রিক আন্দোলন করবে, গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করবে জনগণের সরকারের জন্য।

এক ব্যাংকের পর্ষদ থেকেই দুই মন্ত্রী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বেসরকারি খাতের যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম ও গোলাম দস্তগীর গাজী। নির্বাচিত হয়ে দুজনই পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন নতুন মন্ত্রিসভায়। মো. তাজুল ইসলাম পেয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আর গোলাম দস্তগীর গাজী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। গতকাল বিকালে বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তারা।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে মো. তাজুল ইসলাম কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন। আর গোলাম দস্তগীর গাজী একই প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে।

একই ব্যাংকের দুজন পরিচালকের মন্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তির বিষয়ে মো. তাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ব্যবসায়িক সম্পর্কের দিক থেকে আমরা দীর্ঘদিন থেকে যমুনা ব্যাংকের পরিচালক। তবে একই ব্যাংক পর্ষদের দুজন পরিচালক মন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি কাকতালীয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে আমাদের দুজনেরই দীর্ঘ পরিচিতি রয়েছে। দুজনই পৃথক দুটি আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করেছেন। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।’

দেশের গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ, কাগজ, বোর্ড, ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে মো. তাজুল ইসলামের। ফেবিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তিনি। দশম জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে যমুনা ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজী ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা তিনবার নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত গোলাম দস্তগীর গাজী বর্তমানে বেসরকারি চ্যানেল গাজী টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে যমুনা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

সংসদে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি একেএম এনামুল হক শামীম। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদে রয়েছেন স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে।

নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাসহ একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছেন দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের মোট ১৭ জন পরিচালক। এর মধ্যে ১৫ জন বেসরকারি ব্যাংকের আর ২ জন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের পর্ষদে রয়েছেন। বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদে দায়িত্ব পালন করা সংসদ সদস্যরা হলেন ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচএন আশিকুর রহমান, যমুনা ব্যাংকের পরিচালক গোলাম দস্তগীর গাজী ও তাজুল ইসলাম, প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী ও বিএইচ হারুন, মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক শেখ ফজলে নূর তাপস ও দিদারুল আলম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক মোর্শেদ আলম, এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক আবদুল মান্নান, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক এনামুল হক শামীম, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক আনোয়ার হোসেন খান ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালকদের মধ্যে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন এবং জনতা ব্যাংকের পরিচালক সেলিমা আহমাদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

  • Courtesy: Baninkbarta /Jan 08, 2019

মালিকের কৌশলে শ্রমিকের ক্ষোভ

  • পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম বা ৭ নম্বর গ্রেডে মজুরি বেড়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা
  • মূল মজুরি ১ হাজার ১০০ টাকা
  • একই হারে অন্যান্য গ্রেডের মজুরিও বেড়েছে
  • সরল এই অঙ্কের মধ্যেই রয়েছে গলদ
  • ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের অনেক শ্রমিক ঘোষিত নতুন কাঠামোর সমপরিমাণ মূল মজুরি এখনই পাচ্ছেন



নতুন মজুরিকাঠামোতে পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম বা ৭ নম্বর গ্রেডে মজুরি বেড়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ১ হাজার ১০০ টাকা। একই হারে অন্যান্য গ্রেডের মজুরিও বেড়েছে। সরল এই অঙ্কের মধ্যেই রয়েছে গলদ। কারণ, প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। সে জন্য ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের পুরোনো অনেক শ্রমিক ঘোষিত নতুন মজুরিকাঠামোর সমপরিমাণ মূল মজুরি এখনই পাচ্ছেন। প্রায় প্রতিটি কারখানায় এই তিন গ্রেডেই সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করেন।



মূল মজুরি কম হারে বাড়ানোর পুরোনো কৌশলটি মালিকপক্ষ এবারও নিয়েছে। তার কারণে শেষ পর্যন্ত নতুন কাঠামোতে শ্রমিকের একটি বড় অংশের মূল মজুরি প্রকৃতপক্ষে বাড়েনি। ফলে  ওভারটাইম ও উৎসব ভাতাও বাড়বে না তাঁদের। পাঁচ বছর পর নতুন মজুরিকাঠামোতে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কারণেই শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন, এমনটিই জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিকনেতা।

আট হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করে গত ২৫ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম মন্ত্রণালয়। চলতি মাস থেকে নতুন কাঠামো অনুযায়ী মজুরি পাবেন শ্রমিকেরা। তবে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে সেই মজুরিকাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের শ্রমিকেরা। নির্বাচনের আগে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হলেও গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর এয়ারপোর্ট, উত্তরা, আজমপুর, আবদুল্লাহপুর এলাকায় পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে দীর্ঘসময় বিক্ষোভ করেন। সাভারের হেমায়েতপুরেও শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।

মজুরি নিয়ে শ্রম অসন্তোষের বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব মো. তৌহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অতীতের সব মজুরিকাঠামোতেই বেসিক (মূল মজুরি) কম বাড়ানোর কৌশল নিয়েছিল মালিকপক্ষ। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ভাতা বৃদ্ধি করে মূল মজুরি কমানো হয়েছে। মালিকদের এই কৌশলই শ্রম অসন্তোষের অন্যতম কারণ। গতবারের মজুরিকাঠামো বাস্তবায়নের পর থেকে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বেসিক বেড়েছে।

তৌহিদুর রহমান বলেন, নিম্নতম মজুরি আট হাজার টাকা নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে ওপরের গ্রেডে, যেখানে দক্ষ শ্রমিকেরা কাজ করেন। সেসব গ্রেডে যে হারে মজুরি বাড়ানো দরকার ছিল, সেটি  হয়নি। সে জন্য শ্রমিকেরা খুশি হতে পারেননি।

অবশ্য মালিকপক্ষ কোনো কৌশল করেনি বলে দাবি করেছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো কৌশল করা হয়নি। প্রত্যেক শ্রমিকের মোট মজুরি ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়েছে। বেসিক (মূল মজুরি) কমতেই পারে। মোট মজুরি যত বাড়বে, বেসিক তত কমবে। তিনি বলেন, মজুরি যথেষ্ট বেড়েছে। অন্যবারের চেয়ে এবারই সবচেয়ে বেশি মজুরি বেড়েছে।

মজুরির বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন কারখানা–মালিকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, ৪ নম্বর গ্রেড বা অপারেটর পদেই বেশি শ্রমিক কাজ করেন। নতুন কাঠামোতে এই গ্রেডের মূল মজুরি ৪ হাজার ৯৩০ টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হওয়া আগের মজুরিকাঠামোতে গ্রেডটির মূল মজুরি ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা। তবে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট হওয়ায় এই গ্রেডে কর্মরত পুরোনো শ্রমিকের মূল মজুরি বেড়ে গত বছরই ৪ হাজার ৬১৫ টাকা হয়েছে। এবার নতুন কাঠামোর পরিবর্তে ইনক্রিমেন্ট হলে সেই মজুরি ৪ হাজার ৮৫১ টাকায় দাঁড়াত। তার মানে নতুন কাঠামোতে গ্রেডটিতে থাকা পুরোনো শ্রমিকদের মূল মজুরি বেড়েছে মাত্র ৭৯ টাকা। একইভাবে হিসাব করলে দেখা যায়, ৫ নম্বর গ্রেডের মূল মজুরি বেড়েছে ১৬৪ টাকা। তবে ৩ নম্বর গ্রেডে উল্টো মূল মজুরি কমে গেছে ৪৪ টাকার মতো।

নিচের দিকের গ্রেডের মতো ওপরের গ্রেডের শ্রমিকের মজুরি প্রকৃতপক্ষে বেশি না বাড়ায় মালিকেরা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। গাজীপুরের এক কারখানার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সপ্তম গ্রেডে ৫১ শতাংশ মজুরি বেড়েছে। সেই হিসাবে আমাদের খরচ ৪০-৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল। তবে বেড়েছে ২৫-২৬ শতাংশ। কারণ হচ্ছে, ওপরের গ্রেডের শ্রমিকের মজুরি প্রকৃতপক্ষে খুব বেশি বাড়েনি। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের এক কারখানার মালিক জানান, মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁর কারখানার শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ব্যয় বেড়েছে ১৪-১৫ শতাংশ।

জানতে চাইলে শ্রমিকনেতা জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালে নিম্নতম মজুরি বোর্ড হয়েছিল। এবার হয়েছে পাঁচ বছর পর। সেই হিসাবে শ্রমিকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মজুরি বাড়েনি। ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডেই সমস্যা আছে। এই গ্রেডগুলোর মজুরি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। সরকার, মালিক ও শ্রমিক—তিন পক্ষ বসে পুরো বিষয়টি সমাধান করার পরামর্শ তাঁর।

Courtesy: Prothom Alo Jan 08, 2019

Mob beats 'extortionist' to death in Chattogram


Angry traders and locals yesterday morning beat a former Bangladesh Chhatra League (BCL) leader to death, for alleged extortion, at Pahartali Railway Bazar in the port city.

The dead was identified as Md Mohiuddin Sohel, 35, son of Abdul Barek, from Chandpur, police sources said.  His father was a former sub-assistant engineer of the Bangladesh Railway east zone.

During the incident, agitated traders of the market, the second largest wholesale market in the port city, torched what they claimed was Sohel's “torture cell”. They also protested by keeping their shops closed for two hours, demanding an end to extortion.

Sohel was a former general secretary of BCL Chittagong Government Commerce College unit and was also a member of the BCL's central committee, Hasan Murad Biplob, a former vice president of the college's student union, told this correspondent. He added that Sohel had later gotten detached from political activities.

AKM Mohiuddin Selim, officer-in-charge (OC) of Double Mooring Police Station, said the incident took place around 10:00am. A chase and counter chase took place between the traders of the market and Sohel's followers.

He also said that police rescued Sohel and one of his aides around 11:00am. Sohel was taken to Chittagong Medical College Hospital (CMCH) where he succumbed to his injuries, the OC said, adding that the traders claimed the incident was a protest against extortion.

A murder case would be lodged in this connection, the OC said.

Two other people, including local trader Osman Khan, who is also the joint secretary of the Chattogram unit Jatiya Party, were injured during the incident. They were also being treated at CMCH, Jahir Hossain, inspector (investigation) of Double Mooring Police Station, said.

According to witnesses and traders, Sohel had been extorting money from the traders and also the market-bound trucks with the help of several of his aides for the past year and a half.

He had allegedly grabbed several railway quarters in the adjoining area of the market and built an office there called MN-IP Foundation. Traders also alleged that Sohel used to take people into his “office” and torture them.

They added that several of Sohel's aides around 9:00am picked up a vegetable vendor and took him to the office.

On information, some traders, led by Osman, went to the office at 9:30am to rescue the vendor.

As soon as they arrived, Sohel's aides attacked them with sharp weapons injuring Osman. A chase and counter chase then took place, said Nur Nabi Talukder, former joint secretary of Pahartali Railway Bazar Traders' Welfare Association.

After the attack, Osman immediately went to the traders' association office and made an announcement on loudspeakers informing people about the incident.

Infuriated traders then took to the street and surrounded the office. Agitated locals, who were also agitated by Sohel's unruly activities for long, joined the traders.

The angry mob entered the office and set it ablaze from the inside, said Arif Khan, a trader, adding that the people took Sohel and one of his aides out of the office and beat them up.

Former leaders of the traders' association, after a meeting with police officials, announced that they would open the shops at 12:30pm after a two hour-long shut-down.

Speaking to The Daily Star the traders said they were angry as their association's convener, also local ward councillor, Saber Ahmed did not appear at the scene.

Contacted, Saber said there was previous enmity between Sohel and Osman. He, however, admitted that Sohel had been engaged in extortion in the area and that Saber himself had filed complaints to the local administration several times in this regard.

Shamsul Alam Chowdhury, a former joint secretary of the association, said that the traders had become enraged as Sohel's extortion and other unruly activities had increased over the last six months.

  • Courtesy: The Daily Star/ Jan 08, 2019

দু’টি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা সমাচার


  • একটির মহাসচিব, আরেকটির নির্বাহী পরিচালক একই ব্যক্তি
  • একটির অফিস ও ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি
  • আরেকটির চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা আ. লীগ এমপি
  • টাকা আসে নগদে ও বিকাশে
  • নামের আগে ‘সার্ক’ থাকলেও, ‘সার্ক’-এর সঙ্গে সম্পর্ক নেই


এই আবাসিক ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের কার্যালয়। ছবি: স্টার

সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। অনেক বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসতে পারেননি। ভিসা জটিলতা না সরকারের সহায়তা না করা, বিতর্ক হয়েছে বিস্তর।

এবারের নির্বাচনে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী আলোচিত দুটি সংস্থা ‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ এবং ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম’।

এই দুটি সংস্থা গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, “একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অতীতের চেয়ে অনেকাংশে ভালো, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, “সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের ৫ হাজার ৭৬৫ জন সদস্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন।”

বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা তিনটি দলে ভাগ হয়ে রাজধানীর ২৪টি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও, ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম দেশের ২১৪টি আসনের ১৭ হাজার ১৬৫টি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কানাডার লেবার মার্কেট প্ল্যানিংয়ের সিনিয়র অ্যানালিস্ট তানিয়া ডন ফস্টার, মানবাধিকার কর্মী চ্যালি ডন ফস্টার, নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী হাকিমুল্লাহ মুসলিম, নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজির মিয়া, নেপালের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদীন আলী, কলকাতা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক কমল ভট্টাচার্য, কলকাতা জজকোর্টের আইনজীবী ড. গৌতম ঘোষ এবং শ্রীলঙ্কার সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের বিশেষ প্রতিনিধি এহসান ইকবাল।

কানাডা থেকে আসা পর্যবেক্ষক তানিয়া ডন ফস্টার নির্বাচনের দিন বলেছিলেন, “...কানাডার মতোই ভোটের পরিবেশ এখানে।” (প্রথম আলো, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮)

‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ এবং ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম’-এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হয়েছে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের পক্ষ থেকে।

সংস্থা দুটির নাম আগে শোনা যায়নি। দেশের অন্য কোনো পর্যবেক্ষকরাও তাদের বিষয়ে জানেন না। এই সংস্থা দুটি এর আগে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার পর্যায়ের কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়নি।

খোঁজ করতে গিয়ে ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম’-এর কার্যালয় ও ওয়েবসাইট পাওয়া যায়নি। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’-এর নাম অনুযায়ী ধারণা করা যায় আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক সংস্থা। মাওলানা মোহাম্মদ আবেদ আলী নামক একজন ব্যক্তিই দুটি সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি একটির মহাসচিব এবং অন্যটির নির্বাহী পরিচালক।

অনুসন্ধান করতে গিয়ে ‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’-এর ওয়েবসাইটের (https://sarchumanrights.org/) সন্ধান পাওয়া গেল। ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, সংস্থাটি সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ-ভিত্তিক। ‘সার্ক’-এর সঙ্গে সংস্থাটির কোনো সম্পর্ক ওয়েবসাইটের তথ্যে নেই। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় তাদের একজন করে প্রতিনিধির নাম ও ছবি ওয়েবসাইটে দেওয়া রয়েছে। অফিসের ঠিকানা বা প্রতিনিধিদের ফোন নম্বরও ডেইলি স্টার অনলাইনকে দিতে পারেননি সংস্থার মহাসচিব আবেদ আলী।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা হিসেব রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক এমপি। ‘তারা প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ সহায়তাও দিয়ে থাকেন’ দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য জানিয়েছেন মহাসচিব আবিদ আলী।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালার ৪.৩ ধারায় লেখা রয়েছে, “’নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সহিত সরাসরি জড়িত ছিলেন বা আছেন কিংবা নিবন্ধন লাভের জন্য আবেদনকৃত সময়ের মধ্যে কোন নির্বাচনের প্রার্থী হইতে আগ্রহী এইরূপ কোন ব্যক্তি যদি পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদনকারী কোন সংস্থার প্রধান নির্বাহী কিংবা পরিচালনা পর্ষদের বা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হইয়া থাকেন, তাহা হইলে উহা যে নামেই অভিহিত হউক না কেন উক্ত সংস্থাকে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন করা হইবে না।”


গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে নৌকার প্রতিকৃতি তুলে দিচ্ছেন আবেদ আলী (ডান থেকে দ্বিতীয়)। সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে ছবিটি গত ২২ নভেম্বর প্রকাশ করা হয়।

কিন্তু, তারা নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছেন নির্বাচন কমিশন থেকে। রাজনীতিবিদদের চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা রেখে কী করে নিবন্ধন পেলো ‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন?’- দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের এই প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব বলেন, “এদের ব্যাপারে এতো বিস্তারিত আমার জানা নেই।”

ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুসারে, সংস্থাটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মো. রুহুল আমিন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি শিকদার মকবুল হক, সাবেক মন্ত্রী নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম, পার্বত্য খাগড়াছড়ি আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. সোলায়মান আলম শেঠ।

সংস্থাটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ও মানিকগঞ্জ দরবার শরীফের খলিফা মো. আব্দুস সালাম এবং মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী।

‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’-এর ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ ঘেঁটে শুধু মহাসচিব  মোহাম্মদ আবেদ আলীর কর্মকাণ্ডই নজরে এসেছে বেশি। কখনও তিনি বিভিন্ন মানবাধিকারবিষয়ক সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন, কখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আঞ্চলিক কমিটির সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।

সর্বশেষ গত ২২ নভেম্বরের একটি ফেসবুক পোস্টে দেখা গেছে, গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে নৌকার প্রতিকৃতি তুলে দিচ্ছেন আবেদ আলী ও ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাসহ অন্যান্যরা।

সংস্থাটির ফেসবুক পেজে গত ২৫ সেপ্টেম্বর একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে আবেদ আলীর ভাষ্য, “সরকারের অধীনেই সকল ধরণের সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সময়ের সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়। আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ারও পরিবর্তন হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, পরিবর্তন হলে আমরা মেনে নিতে পারবো না। যে পরিবর্তন আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে সহায়ক, সে নিয়মকে, পরিবর্তনকে স্বাগত জানাই। এ সরকারের নির্বাচন কমিশন ছোট বড় ৬ হাজার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেছে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হোক। ইতোমধ্যে তাদের নির্বাচন পরিচালনার দক্ষতা আমাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করে।”

ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া অফিসের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার অনুযায়ী চলল অনুসন্ধান। টিএন্ডটি-র নম্বরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চেষ্টা চললো, কিন্তু কেউ ফোন ধরলেন না। ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া কার্যালয়ের ঠিকানার (প্লট-৭, রোড-৪/৩, ব্লক-বি, এভিনিউ-১, মিরপুর-১২) উদ্দেশে বের হলাম।


সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন-এর উপদেষ্টা প্যানেলে রয়েছেন র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি, মো. রুহুল আমিন এমপি এবং বিচারপতি শিকদার মকবুল হক। ছবি: সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন-এর ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর একটি ছয়তলা আবাসিক ভবনের গেটে ‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ লেখা একটি সাইনবোর্ড চোখে পড়ল। আবাসিক ভবনের গেট বন্ধ, ফুটো দিয়ে উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। এক যুবক এসে গেট খুলে বললেন, “আপনি কে, কাকে চাই?”

সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর ভেতর থেকে তেড়ে এলেন বয়স্ক একজন। রাগত স্বরে প্রশ্ন করলেন, “কেন এসেছেন?”

‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ সম্পর্কে জানতে এসেছি। তিনি বলেন, “এখানে কারো কাছে কোনো তথ্য পাবেন না, চলে যান। খুব বেশি প্রয়োজন হলে মহাসচিব আবেদ আলীকে ফোন দেন।” বলেই- আবেদ আলীর নম্বর দিয়ে, কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি ভেতরে চলে গেলেন।

হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেই ভেতর থেকে গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন সেই যুবক। বললেন, “ইনিই সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’-এর সভাপতি মো. আব্দুস সালাম। কিছু মনে করবেন না, বয়স হয়ে গেছে তো, তাই স্যারের আচরণ এমন হয়ে গেছে।”

যুবকের নাম জাহেদুল ইসলাম। তিনি এই বাড়ির কেয়ারটেকার বলে জানান। “সভাপতির সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই” বললে গেট খুলে ভেতরে যেতে দিলেন। গিয়ে দেখি, ছোট্ট একটি রুম। দুটি টেবিল, চারটি চেয়ার, একটি সোফা ও একটি আলমারি। নিচতলার এই রুমটিই ‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

“অফিস কি সবসময় বন্ধই থাকে?”- এমন প্রশ্নের উত্তরে যুবকটি জানালেন, “মাঝে-মধ্যে লোকজন আসেন। আবেদ আলী স্যার আজ বিকালে বা রাতে আসতে পারেন। সবে তো নির্বাচন শেষ হলো, তাই সবাই সেসব নিয়েই ব্যস্ত আছেন।”

নির্বাচনের আগে বা পরে এই কার্যালয়ে কোনো বিদেশি লোক আসেনি বলেও জানান জাহেদুল।

দুই দিনে কয়েকবার ফোনে কথা হলো মাওলানা মোহাম্মদ আবেদ আলীর সঙ্গে। ‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’-এর হয়ে কতোজন বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলেন?- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আটজন এসেছিলেন। আরও বেশি আসার কথা ছিলো, কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাদের অনেকেই আসতে পারেননি।”

বাংলাদেশে এসে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা ছিলেন কোথায়?- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “বিদেশি পর্যবেক্ষকরা সবাই গুলশান-২ এর ‘হোটেল এক্সিকিউটিভ ইন’-এ ছিলেন।”

‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা হিসেবে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির এমপিরা রয়েছেন। দলীয় এমপিদের সঙ্গে নিয়ে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ করা যায়? মহাসচিব আবেদ আলী বলেন, “উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের কোনো প্রভাব আমাদের এখানে পড়ে না। কারণ এখানে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টির একজন রাজনীতিক রয়েছেন। অপর একজনের নিজেরই একটি দল আছে।”

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আপনাদেরকে অর্থায়ন করেছে কারা?- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “যেহেতু এটা আন্তর্জাতিক সংগঠন, বিশেষ করে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আমাদের কমিটি আছে এবং কানাডা থেকে যারা এসেছেন তারাও আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে এসেছেন। আমরা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থায়নে সংগঠন পরিচালনা করি। নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের একটি বাজেট ছিলো। আমাদেরকে সরকার অর্থায়ন করেনি, এমনকি নির্বাচন কমিশনও করেনি।”

“আমাদের পরিচালনা কমিটি আছে, বাইরের যারা শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন, তাদেরকে আমরা প্রস্তাব দেই যে এই কাজ হচ্ছে, তোমরা আমাদের সাপোর্ট দেবে কী না? তারা যদি ভালো মনে করে, তাহলে তারা আমাদের সহযোগিতা করে,” যোগ করেন তিনি।

বাইরের শুভাকাঙ্ক্ষী কারা? কীভাবে অর্থ দেন তারা?- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দেশের বাইরে আমাদের বাঙালি কমিউনিটির লোকজন আছেন। তাদের অনেকেই আমার ও আমার কাজের প্রতি সম্মান দেখিয়ে টাকা পাঠান। বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে বা আত্মীয়দের সহযোগিতায় তারা আমাদের কাছে টাকা পৌঁছে দেন।”

চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টারা আর্থিকভাবে সহায়তা করেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে আবেদ আলী জানান, “আমরা চাইলে উনারা নিজেদের থেকে আমাদের অর্থ সহায়তা দেন বা উনাদের বন্ধু সম্প্রদায়কে সহায়তা করতে বলেন।”

এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আপনাদের বাজেট কতো ছিল?- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা তো কাউকে টাকা দিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করাইনি। যারা কর্মী আছে, তারা নিজেদের উদ্যোগে করেছে এবং তারা এই কাজটিকে উপভোগ করেছে।”

“তবে নির্বাচনের দিন যাতায়াতসহ অন্যান্য কাজে খরচ হয়েছে ৫ লাখ টাকার মতো। সবকিছু মিলিয়ে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

বিদেশি পর্যবেক্ষকের জন্য আপনাদের বাজেট ছিলো কতো?- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মাত্র তারা গেলেন। আর আমরা এখনও বাজেটটি শেষ করিনি। এখানে কী খরচ হয়েছে না হয়েছে, দেখতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নিজেরাই টিকিট করে এসেছেন। আমরা শুধু তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আর যে হোটেলে তারা ছিলেন, সেটি আমারই চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী বড় ভাইয়ের হোটেল। সেখানে তাদের জন্য সর্বোচ্চ কনসিডার করা হয়েছিলো।”

বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ তৈরি হলো কীভাবে? আপনাদের প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষক হওয়ার জন্য তারা টিকেট কেটে চলে এলেন?- এ প্রশ্নের জবাবে আবেদ আলী বলেন, “বিদেশি পর্যবেক্ষকরা সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমগুলো ফলো করে থাকেন। এছাড়াও, কানাডাতে আমাদের যে বাঙালি কমিউনিটির লোকজন রয়েছেন, তারাই পর্যবেক্ষকদের আসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।”

বলা হচ্ছে- আপনারা অর্থ দিয়ে তাদের এনেছেন। তাদের পর্যবেক্ষক হিসেবে কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।- এর জবাবে আবেদ আলী বলেন, “অভিজ্ঞতা অবশ্যই তাদের আছে। এর আগে ভারত ও নেপাল থেকে কমল ভট্টাচার্য, গৌতম ঘোষ, নাজির মিয়া বাংলাদেশে এসেছিলেন। আর যাদের অভিজ্ঞতা নেই, তারা ২৮ ডিসেম্বর এসে অভিজ্ঞতা নিয়েছেন, সবাই একসাথে সমন্বয় করেছেন।”

আপনি দাবি করেছেন যে এটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, কেন?- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমরা তো মাত্র ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার থেকে অনুমোদন পেয়েছি। এছাড়াও, সব জায়গাতেই আমাদের সংগঠনের প্রোফাইল দিয়ে প্রস্তাবনা জমা দিয়ে রেখেছি। ২০১৮ সাল তো চলে গেলো, আশা করছি ২০১৯ সালের মধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়ে যাবো।”

কোথায় কোথায় আপনাদের সংগঠনের কার্যক্রম রয়েছে?- এমন প্রশ্নে আবেদ আলী জানান, “দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে তাদের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এসব দেশে মূলত সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকরা সংগঠিত হয়ে নিজেরাই কমিটি গঠন করেছেন। তারপর কেন্দ্র থেকে তাদের সমর্থন দেওয়া হয়েছে।”

এর আগে সার্ক হিউম্যান রাইটসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন কী না?- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “না, করিনি, কারণ- আমরা তখন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ছিলাম না।”

পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও কোন যোগ্যতায় আপনারা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) থেকে অনুমোদন পেলেন?- এই প্রশ্নের জবাবে আবেদ আলী বলেন, “এখানে প্রায় ১১৮টি সংগঠন অনুমোদন পেয়েছে। সেখানে এমন সংগঠনও আছে, যাদের নির্বাচন সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। আসলে প্রতিষ্ঠানের কোনো ধারণা থাকে না, ধারণা থাকে ব্যক্তির।”

সার্কভুক্ত দেশগুলোতে আপনাদের কোনো কার্যক্রম আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। নামে কেনো ‘সার্ক’ যুক্ত করেছেন?- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সার্কের বর্তমান মহাসচিব আমজাদ হোসেন সিয়ালের সঙ্গে আমরা বসেছি। উনি আমাদের অভয় দিয়ে বলেছেন, যেহেতু সার্কের কোনো মানবাধিকার সংগঠন নেই, আপনারা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করুন। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, সার্কের আগামী মহাসম্মেলনে তারা আমাদের অনুমোদনের ব্যাপারটি ঘোষণা দেবেন।”

গত ৩ জানুয়ারি রাত পর্যন্ত ‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’-এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা গেলেও, এরপর থেকে সেটিতে আর প্রবেশ করা যাচ্ছে না।

ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম’ এবং ‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই জানিয়ে সুশাসনের জন্যে নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আমরা তো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করি না, আমরা নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করি। তারপরও এই দুটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। আমি দেশের অনেকগুলো নির্বাচন পর্যবেক্ষকারী প্রতিষ্ঠানকে চিনি। তবে এদের সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নেই।”

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতী-র নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, “আমরা এদেরকে সত্যিই চিনি না। ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম নামে এর আগে কোনো প্রতিষ্ঠান ছিলো না। তবে, আমার ধারণা এবার এরকম একটি মোর্চা তৈরি করা হয়েছে। এরা নিজেদেরকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক বলছে, কিন্তু এরা আর কোথাও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে কী না সেটি আমার জানা নেই।”

এই দুটি সংস্থার ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, “আমার জানা মতে, তারা এবারই বোধহয় প্রথম বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে। এর আগে যদি তারা পর্যবেক্ষণ করতো, তাহলে আমাদের সঙ্গে দেখা হতো।”
  • কার্টসিঃ The Daily Star /Bangla/Jan 8, 2019 

BoP deficit rises to $837m in July-Nov

Bangladesh's overall balance of payment (BoP) recorded US$ 837 million deficit during the July-November period of this fiscal year (FY), 2018-19, over the corresponding period of the previous fiscal. The overall deficit in BoP was $479 million during the same period of FY 2017-18, according to the central bank's data.

Sharp fall in the country's financial account and capital account surplus were primarily responsible for the BoP widening.

The volume of financial account surplus almost halved to nearly $2.06 billion during the first five months of the current fiscal from $4.09 billion in the matching period of last fiscal, the Bangladesh Bank (BB) data revealed.

Besides, the amount of capital account surplus dropped to $49 million during July-November of FY 19 compared to $94 million in the same period of last FY, according to the BB figures.

Meanwhile, the country's overall trade deficit narrowed down further to $6.66 billion during the first five months of the current fiscal. The trade deficit was nearly $7.61 billion during the July-November period of FY 18, the BB data showed.

Higher growth in the country's merchandise exports than that of imports reduced the country's overall trade deficit during the July-November period of FY 19.

Bangladesh's aggregate exports grew by 16.75 per cent to $16.77 billion during the first five months of FY 19 compared to $14.36 billion in the corresponding period of last FY.

On the other hand, the country's overall imports posted a 6.64 per cent growth to reach $23.43 billion in the first five months of the current fiscal against $21.97 billion in the same period of last fiscal, according to the BB data.

The country's service trade gap was $1.26 billion against in the said period of FY 19 compared to that of $2.0 billion in the matching period of last FY.
  • Courtesy: The Financial Express /Jan 08, 2019

Tax-GDP ratio concerning

EDITORIAL

Country's declining tax-GDP ratio, practically since 2017, has been   paradoxical  and   concerning    but is  not   inexplicable, to be sure. On the face of it, this   appears   ironic and defiant of conventional wisdom that the rising gross domestic product (GDP) growth rates have not yielded increased   tax revenue. This only goes to show that economic growth  does not  automatically  generate tax  revenue; it requires  serious  mobilisation   efforts  backed by an efficient    tax administration  dedicated  to collect  revenue from a  widely  cast   tax-net. At present, the direct tax regime, potentially the biggest source of revenue collection, is weak.

The focus is on the introduction of wealth and property tax on the one hand, and VAT Act and Customs Act, on the other. Since many people now block their wealth in real estate properties and lands, the rationale for wealth and property tax commends itself. It will also help bridge rising income inequalities, something which have been brought to the fore by the latest household income-expenditure survey. Now coming to the two laws in animated ferment for a long time viz. the VAT Act and Customs Act, they have been much-talked-about but not acted on, apparently for lack of political will. Many now expect to see them through with election having saddled the new government with a landslide mandate. The VAT Act of 2013 estimated a potential earning of TK. 200 billion (20,000 crores).       

Tax evasion,  flight of capital  and  inflated   Swiss account   point  to  lost  wealth  for the nation, but  not wasted  because  the   potential  remains  to encourage   them to plough  back  some of those   resources  into  productive  investments. This can be linked to non-resident Bangladeshi (NRB) initiative or to programme for poorer Bengali diaspora uplift. The declining tax-GDP ratio  is  taking place at a time  when  mobilisation of domestic resources  is  pivotal to achieving the sustainable development goals (SDGs). It is really a wake-up call  inasmuch as  on certain SDGs we  are  lagging behind  in the face of the  deadline  to meet a whole lot of  the goals  by 2030. The outlook  is  also concerning  overall  because  the  targeted  increase in  tax-GDP ratio up to  5.4 per cent  by 2020 --in the seventh five-year plan period  --  stood at 2.7 per cent in 2018 at  the halfway mark. So  a  key macro-economic indicator  of   internal  resource  mobilisation  stagnates  and an inherent  potential   for wealth creation  remains  untapped.

The underlying causes of the failure to mobilise internal resources are revealed in a glaring light. Bangladesh   is   the   second   fastest growing  economy   in  Asia, priding itself  on a low-middle  per capita  income  bracket,  with   a high-income upper  five-ten  per cent  people  the size of some East European  countries, and yet  it is   among   the least  tax-paying nation in the world. By some account, at least 30 per cent of the   population can be brought under effective income tax network. That would have greatly facilitated faster progress well   beyond the basic needs regime. It would not only befit our status as low-middle income country but also help with the transitional adjustments that entail a parting cost. 

  • Courtesy: The Financial Express/ Jan 08, 2019