হাছান আদনান
দেশের অন্যতম সেরা ব্যাংকের তকমা ছিল বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংকের। কিন্তু সুশাসনের ঘাটতি, অনিয়ম-দুর্নীতি, খেলাপি ঋণের জাতাকলে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে ব্যাংকটি। ২০১৭ সালে মুনাফার দিক থেকেও বড় ধাক্কা খেয়েছে সিটি ব্যাংক। ক্রেডিট কার্ডসহ রিটেইল ব্যাংকিংয়েও দুর্বল হচ্ছে ব্যাংকটির অবস্থান। সিটি ব্যাংকের দৈন্যদশা উঠে এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানেও।
সিটি ব্যাংকের ২০১৭ সালের আর্থিক পরিস্থিতির ওপর সম্প্রতি বিশদ পরিদর্শন চালিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পরিদর্শনে উঠে এসেছে ব্যাংকটির অনিয়ম-দুর্নীতির নানা চিত্র। সিটি ব্যাংকের এ ধরনের অন্তত এক ডজন অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
১১ বছর ধরে ঋণ অবলোপনে অনিয়ম: ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত খেলাপি ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে সিটি ব্যাংক। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ব্যাংকটি খেলাপি ঋণের মধ্য থেকে আংশিকভাবে অবলোপন করেছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০০৩ সালের বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর-২-এর নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অনিয়মের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টিগ্রেটেড সুপারভিশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের (আইএসএমডি) কাছে ধরা পড়ে।
তখন সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ মর্মে নির্দেশনা দেয় যে, যেসব ঋণ আংশিকভাবে অবলোপন করা হয়েছে, সেসব ঋণ হিসাবের যে অংশ এখনো অবলোপন করা হয়নি (সিএল স্থিতি ২৭৪ কোটি টাকা) তা ২০১৭ হিসাব বর্ষসহ পরবর্তী পাঁচ বছরে অর্থাৎ, ২০২১ সালের মধ্যে আদায়ের মাধ্যমে সমন্বয় কিংবা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণের মাধ্যমে অবলোপন করতে হবে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ নির্দেশনা মান্য করেনি সিটি ব্যাংক।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসএমডির নির্দেশনা অনুযায়ী সিটি ব্যাংক ২০১৭ সালের শেষ দিন পর্যন্ত কোনো প্রভিশন সংরক্ষণ তো করেইনি, বরং প্রভিশন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা-সম্পর্কিত পরিদর্শন দলের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে। ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত কোনো প্রভিশন সংরক্ষণে রাজি নন বলে জানান। ব্যাংকের এ ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে পরিদর্শক দল মন্তব্য করে।
পরিদর্শক দল মনে করে, আংশিক অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করলে সিটি ব্যাংকের নিট মুনাফায় টান পড়বে। এজন্য ব্যাংকটিকে ২০১৮ সালের মুনাফা থেকে ১০০ কোটি টাকা পৃথকভাবে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রভিশন সংরক্ষণ করলে চলতি বছরে ব্যাংকটির সমপরিমাণ আয় কমে যাবে।
প্রভিশন সংরক্ষণে গড়িমসি: ২০১৭ সাল শেষে সিটি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেডের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটির অন্য সাবসিডিয়ারি মালয়েশিয়ায় সিবিএল মানি ট্রান্সফার এসডিএন-ও লোকসানে আছে। ২০১৭ সাল শেষে প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত লোকসান ছয় কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সিটি ব্যাংকের দুটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত লোকসান ৬৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত মূলধন ছিল ৩৫০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। মোট ৬৪ কোটি টাকা লোকসান হওয়ায় এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মূলধন কমে ২৮৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অথচ এ লোকসানের বিপরীতে সমপরিমাণ অর্থ প্রভিশন সংরক্ষণের কথা থাকলেও সেটি রাখেনি সিটি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৭ সাল শেষে সিটি ব্যাংকের মোট প্রভিশন সংরক্ষণের কথা ছিল ৮৬৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে একই সময় পর্যন্ত ব্যাংকটি ৬৬১ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে। এ হিসাবে সিটি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২০৪ কোটি টাকা। অথচ আর্থিক পরিস্থিতি ভালো দেখাতে প্রভিশন ঘাটতি দেখায়নি ব্যাংকটি।
শুধু প্রভিশন সংরক্ষণে অনিয়মই নয়, বরং খেলাপি ঋণ নিয়মিত দেখিয়েও ব্যাংকের অবস্থা ভালো দেখানো, ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে সিটি ব্যাংক। বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতীয়মান হয় যে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কৃত্রিমভাবে ব্যাংকের আর্থিক চিত্র ‘উত্কৃষ্ট’ এবং নিজেদের পারফরম্যান্স ‘অতি উত্তম’ দেখানোর জন্য যতটা আগ্রহী, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা এবং প্রযোজ্য আইন ও বিধিবিধান পরিপালনে ততটাই উদাসীন ও অনাগ্রহী। এর মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালো প্রদর্শন করা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে তা ব্যাংকের টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্তরায়।
আইন বিভাগে বেআইনি কর্মকাণ্ড: ২০১৬ সালের ১৬ মে সিটি ব্যাংকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শাফায়েত উল্যাহকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু মাত্র নয় মাসের মধ্যেই নীতিমালা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেয়া হয় তাকে। একই সঙ্গে বেতন বাড়ানো হয় ৬ শতাংশ। এরপর চলতি বছরের ২০ মার্চের মধ্যে আবারো শাফায়েত উল্যাহর ২৬ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের পদোন্নতি-সংক্রান্ত নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে লিগ্যাল বিভাগের প্রধান শাফায়েত উল্যাহকে দ্রুত পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে এ ধরনের পদোন্নতি প্রদান ও বিশেষ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ও যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটি ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবীদের তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শাফায়েত উল্যাহ ব্যাংকের লিগ্যাল ডিভিশনের প্রধানের দায়িত্বে নিয়োজিত। অথচ তার লিগ্যাল কনসালট্যান্সি ফার্ম ‘চৌধুরী অ্যান্ড উল্যাহ’ ব্যাংকটির প্যানেলভুক্ত আইনজীবী। এটি সম্পূর্ণভাবে বিধিবহির্ভূত এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এ অনিয়মের বিষয়ে সিটি ব্যাংকের প্রতি তিন দফা নির্দেশনা প্রদান করে পরিদর্শক দল। এর মধ্যে রয়েছে অনিয়মগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান, ভবিষ্যতে কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ ও শাফায়েত উল্যাহকে ব্যাংকের কর্মকর্তা অথবা প্যানেল আইনজীবী— যেকোনো একটি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে সিটি ব্যাংকের আইনসংক্রান্ত ব্যয় ছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৭ সালে তা ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বেড়ে ৫ কোটি ২ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। আইনি খাতে ব্যয় প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি হলেও ব্যাংকের আদায় অগ্রগতি যৎসামান্য। মামলার জন্য আইনজীবীদের ফি দেয়ার ক্ষেত্রেও অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
৩৩ কোটি টাকার জাল-জালিয়াতি: পরিদর্শক দলের কাছে সিটি ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের অভ্যন্তরে ৪০টি জাল-জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এসব জালিয়াতিতে সংশ্লিষ্ট অর্থের পরিমাণ ১৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে ব্যাংকে ১২টি জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এসব জালিয়াতিতে সংশ্লিষ্ট অর্থ ১৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সিটি ব্যাংকে ৩৩ কোটি টাকার জাল-জালিয়াতির ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়েছে।
চার বছরে ৯৬৬ কোটি টাকা অবলোপন: ব্যাংকের ব্যালান্স শিট ভালো দেখাতে ঋণ অবলোপনকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সিটি ব্যাংক। শুধু ২০১৪ সাল থেকে পরবর্তী চার বছরে ৯৬৬ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৩৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। বিদায়ী বছরেও ২৭০ কোটি ৫৩ লাখ টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকটি। স্বাভাবিক পন্থায় আদায় অযোগ্য হয়ে যাওয়ায় এ ঋণগুলো অবলোপন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ১ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে সিটি ব্যাংক।
চার বছরে ৮৮ কোটি টাকা মওকুফ: ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চার বছরে ঋণখেলাপিদের ৮৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা মওকুফ করেছে সিটি ব্যাংক। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৬ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়েছে ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালেও ঋণখেলাপিদের ১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মওকুফ করে দিয়েছে ব্যাংকটি।
পরিচালকরা নিয়েছেন ৩ হাজার ৯৪ কোটি টাকা: সিটি ব্যাংকের পরিচালকরাই ৩ হাজার ৯৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের পরিচালক ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে প্রত্যক্ষ ঋণ রয়েছে ২ হাজার ৫৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। পরিচালকদের প্রত্যক্ষ এ ঋণ সিটি ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণের ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর পরোক্ষভাবে পরিচালকরা ১ হাজার ৩৯ কোটি ৪২ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণগুলো নিয়মিত রাখার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের কাছে ৭০৭ কোটি টাকার ঋণ: সিটি ব্যাংক থেকে দেশের অন্য ব্যাংকগুলোর ৯ জন পরিচালক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৭০৭ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা নিয়েছেন। এর মধ্যে কিছু পরিচালকের ঋণ হিসাবে সীমাতিরিক্ত ঋণ সুবিধা রয়েছে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সীমাতিরিক্ত ঋণগুলো সীমার মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছে পরিদর্শন দল।
ঋণের সিংহভাগই ৪১ গ্রুপের কাছে: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকাই বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ৪১টি শিল্প গ্রুপের মধ্যে। পরিদর্শন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৪১টি গ্রুপের কাছে সিটি ব্যাংকের প্রত্যক্ষ ঋণ রয়েছে ৫ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ গ্রুপগুলোর কাছেই ৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকার পরোক্ষ ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি।
খেলাপি না দেখাতে পুনঃতফসিল: বিভিন্ন সময়ে সিটি ব্যাংক ১ হাজার ৪১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ৩৮টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ব্যাংকটি পুনঃতফসিল করেছে ১৭৮ কোটি টাকা। কিন্তু এসব ঋণ পুনঃতফসিল করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু শ্রেণীকরণ এড়ানো, অনাদায়ী সুদ আয় খাতে নেয়া এবং ব্যাংকের পারফরম্যান্স কৃত্রিমভাবে ‘উত্তম’ দেখানোর জন্যই প্রচলিত বিধিমালা ও ব্যাংকিং রীতি অনুশীলন বহির্ভূতভাবে ব্যাংকটি বিরূপমানের শ্রেণীকৃত/শ্রেণীকরণযোগ্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে আদায় অসম্ভব এমন ঋণ পুনঃতফসিল করে চলছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব ঋণ অনাদায়ে স্বল্প সময়েই আবারো খেলাপি হয়ে যাবে।
টাকা ফেরত দিচ্ছে না শীর্ষ খেলাপিরা: ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে পাওনা ছিল ৪৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অথচ এ শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে বিদায়ী বছরে ব্যাংকটির আদায় হয়েছে মাত্র ১১ কোটি টাকা। শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পরিদর্শক দল।
৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকাই আটকে গেছে মামলায়: সিটি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকাই মামলায় আটকে আছে। গত পাঁচ বছরেই ব্যাংকটি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ২৬৯টি মামলা করেছে। এসব মামলায় আটকা পড়েছে ৩ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকার ঋণ। সিটি ব্যাংকের বিরুদ্ধেও ১৯২টি মামলা করেছেন গ্রাহকরা। এসব মামলার বিপরীতে ঋণ রয়েছে ৬১৮ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে দ্য সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশদ পরিদর্শন প্রতিবেদনকে আমরা স্বাগত জানাই। যেকোনো অডিট বা পরিদর্শন প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সুশাসন কার্যকর হয়। প্রতিবেদনটি সিটি ব্যাংকের পর্ষদে তুলে ধরা হবে।
তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের বিষয়ে বেশকিছু আপত্তির কথা বলেছে। বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের অবস্থান এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, সেসব ক্ষেত্রে আমরা উন্নতি করার উদ্যোগ নেব।
লিগ্যাল ডিভিশনের প্রধান শাফায়েত উল্যাহর ক্ষেত্রে নীতিমালা লঙ্ঘনের বিষয়ে সোহেল আর কে হোসেন বলেন, তিনি আমার আত্মীয় নন। পর্ষদে কোনো পরিচালকের আত্মীয়স্বজন আছে বলেও আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। কাজের স্বীকৃতিই তিনি পেয়েছেন। তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তিগুলো আমরা পর্যালোচনা করব।
- Courtesy: Banikbarta/ Jan 08, 2019