Search

Sunday, February 3, 2019

খেলাপি ঋণে নাজুক দশা জনতা ব্যাংকের

এক বছরে বেড়েছে সাড়ে ৩ গুণ

সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু

বেশ নাজুক অবস্থায় চলে গেছে জনতা ব্যাংক। প্রায় এক বছর আগেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকটি মুনাফা করেছে। কিন্তু এখন লোকসান গুনছে জনতা ব্যাংক। খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত রাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ব্যাংকটির ভিত এখন অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। যাত্রার সূচনার পর এখনই সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে ব্যাংকটি। ফলে এক বছরের ব্যবধানে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে গত বছর (২০১৮) ডিসেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৩০৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ফলে এক বছরেই জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এই ঋণের পুরোটাই আবার দুইটি গ্রুপের কাছে। যাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই ঋণ প্রদান করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যাংকটির এমন উদ্বেগজনক খবরে রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার সরকারি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ‘বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি’র অগ্রগতিবিষয়ক এক আলোচনা সভায় জনতা ব্যাংক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যাংকটিকে দ্রুত তার খেলাপি ঋণ আদায়ের যাবতীয় কার্যকর ও আইনি পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

জানা গেছে, কর্ম সম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী জনতা ব্যাংকের জন্য চলতি অর্থবছরে বেশ কয়েকটি টার্গেট নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, খেলাপি বা শ্রেণীকৃত ঋণ থেকে নগদ আদায়, অবলোপনকৃত ঋণ থেকে নগদ আদায়, কৃষি ঋণ বিতরণ, এসএমই ঋণ বিতরণ, অন্যান্য বিনিয়োগ, পরিচালন মুনাফা অর্জন, লোকসানি শাখার সংখ্যা হ্রাস, রিট মামলা নিষ্পত্তি, অর্থঋণ ও অন্যান্য মামলা নিষ্পত্তি, বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি, শাখাগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ইত্যাদি।

ডিসেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সূচকে জনতা ব্যাংক টার্গেট পূরণ করতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। খেলাপি বা শ্রেণীকৃত ঋণ থেকে চলতি বছরের জন্য আদায়ের টার্গেট দেয়া হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর’২০১৮) আদায় করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ১৫৮ কোটি টাকা। টার্গেট অনুযায়ী এ সময়ে আদায় করার কথা ছিল ২৫০ কোটি টাকা। একইভাবে অবলোপনকৃত (ডেট রিট অফ) ঋণ থেকে আদায় করার টার্গেট ছিল ১৫০ কোটি টাকা। এই হিসাবে ছয় মাসে আদায় হওয়ার কথা ছিল ৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু এই সময়ে জনতা ব্যাংক আদায় করেছে মাত্র ১৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

জানা গেছে, জনতা ব্যাংকের মোট ১৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি খেলাপি ঋণের মধ্যে দুইটি গ্রুপের কাছেই রয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এই দুইটি গ্রুপ হলো- ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও অ্যাননটেক্স। অ্যাননটেক্সের প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণের প্রায় পুরোটাই প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ইউনুছ বাদল নিজেই নিয়েছেন। অ্যাননটেক্স তার কোম্পানির নামে বিভিন্ন সময়ে কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খুললেও টাকা পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে ব্যাংক নিজেই বাধ্য হয়ে বিদেশী রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পরিশোধ করেছে। গ্রাহককে তা পরিশোধের কথা থাকলেও তারা তা পরিশোধ করেনি। এসব দায়ের বিপরীতে ফোর্সড ঋণ তৈরি করেছে জনতা ব্যাংক। জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা থেকে এই গ্রুপটি অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে।

অন্য দিকে আলোচিত ক্রিসেন্ট গ্রুপ বিভিন্ন সরকারি তহবিল ও জনতা ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক সুবিধা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি চামড়ার ভুয়া রফতানি বিল তৈরি করে সরকার থেকে নগদ রফতানি সুবিধা নিয়েছে, পক্ষান্তরে রফতানি করেও দেশে টাকা ফেরত আনেনি। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে ক্রিসেন্টের পাদুকা বিক্রির দোকান রয়েছে। এখন বাধ্য হয়ে ৭৫ ভাগ ছাড়ে তারা জুতা বিক্রি করছে বলে জানা গেছে।

এই প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার রয়েছেন দুই ভাই। একজন এম এ কাদের এবং অন্যজন এম এ আজিজ। কাদের জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধানও। সম্প্রতি মুদ্রা পাচার আইনে এম এ কাদেরকে এনবিআরের দায়ের করা মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জনতা ব্যাংকও এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করার সবেমাত্র আইনি আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু খেলাপি ঋণের এই বিশাল অঙ্কের অর্থ শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারাকাত ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় জনতা ব্যাংক এসব ঋণ দিয়েছিল। ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ বছর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত এমডি ছিলেন এস এম আমিনুর রহমান। তাদের সময়েই এসব অর্থায়ন হয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়।

ব্যাংক খাতের যে শীর্ষ ১০০ ঋণ খেলাপি রয়েছে, তার এক-চতুর্থাংশই জনতা ব্যাংকের। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদে খেলাপিদের এই তালিকা প্রকাশ করেছিলেন। দেশের শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির মধ্যে জনতা ব্যাংকের গ্রাহকেরা হলো কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম, রেমিক্স ফুটওয়্যার, রুবাইয়া ভেজিটেবল ইন্ডাস্ট্রিজ, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্ট, চৌধুরী নিটওয়্যার, আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস, মুন্নু ফেব্রিকস, সিক্স সিজন অ্যাপার্টমেন্ট, রহমান স্পিনিং মিলস, ওয়ান ডেনিম মিলস, হিন্দোল ওয়ালী ট্রেডিং, গ্লোবাল মেটাল কমপ্লেক্স, অ্যাপেক্স নিট কম্পোজিট, আলী পেপার মিলস, ড্রেজ বাংলা লিমিটেড, গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ডায়িং, রেপকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও ফাইবার শাইন লিমিটেড।

জনতা ব্যাংক ২০১৭ সালে নিট মুনাফা করেছিল ৯৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ২৫১ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে ৪৬২ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছিল। যা ছিল সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু এ বছর ব্যাংকের অবস্থা অনেক নাজুক অবস্থায় রয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাষ্ট্রীয় এই ব্যাংকটিকে আগের অবস্থায় নিতে হলে এখনই ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চালানো, ব্যাংকটির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করা এবং খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করার পাশাপাশি সৃষ্ট খেলাপি ঋণের পেছনে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট লোকদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
  • সুত্র - নয়াদিগন্ত / ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  • https://goo.gl/wmWsg6

Saturday, February 2, 2019

মামলাগুলো গায়েবি, মানুষগুলো নয়

আলী রীয়াজ


ঘাটাইলের আজিজ মুনশিকে আমি চিনি না, আপনাদের অধিকাংশও চেনেন, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। তিনি বিখ্যাত হতে চাননি, তাঁর নাম পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সেই খবর তিনি পেয়েছেন কি না, জানি না। সম্ভবত পাননি। রাজধানী ঢাকায় তিনি আগে এসেছিলেন কি না, তা নিয়েও আমার মনে সংশয় আছে। কিন্তু সম্প্রতি তাঁকে আসতে হয়েছে। সেই সূত্রে আমি-আপনি তাঁর নাম জানতে পেরেছি। আমরা জানতে পেরেছি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শ্যামপুর গ্রামের বর্গাচাষি মিলন মিয়ার নাম। জানতে পেরেছি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে প্রায় অচল মানুষ, কানেও শোনেন না এমন একজন শামসুল হকের কথা। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কোনো গ্রামে। আপনাদের মতো আমিও এখন স্বস্তি বোধ করছি যে সুনামগঞ্জের অধিবাসী শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী তারা মিয়ার শেষ পর্যন্ত জামিন হয়েছে, ছয় সপ্তাহের জামিন। আতর বিক্রেতা ‘হাতকাটা’ ইউসুফের শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে, সেই খবর আমি জানি না। ১১টি মামলার আসামি মোহাম্মদপুরের ‘হাতকাটা’ ইউসুফের জামিনের ব্যবস্থা কে করবেন, তাঁর পরিবার তা পেরেছে কি না, সে খবর আমি কোথাও খুঁজে পাইনি, সম্ভবত ওই পরিবার আর তাঁর নিকটজনেরা ছাড়া আর কেউ জানার প্রয়োজন বোধ করছেন না।


এই যে এসব মানুষের কথা বললাম, তাঁরা সবাই রাষ্ট্রের চোখে অপরাধী, ৩০ ডিসেম্বরের ‘নির্বাচনের’ মাধ্যমে যাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন, সংসদে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আসন নিয়েছেন, তাঁদের প্রতিপক্ষ। আইনের ভাষায় যদি বলি তাহলে তাঁদের সরকারের প্রতিপক্ষ না বলে অন্য কিছু বলার উপায় নেই। কেননা, তাঁদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে, সেগুলো যেনতেন মামলা নয়। তাঁরা নাগরিকের ভোট দেওয়ার কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছেন, সন্ত্রাসী তৎপরতায় যুক্ত থেকেছেন। ভিন্ন ভিন্নভাবে এসব কথা আছে পুলিশের করা মামলায়। সংবাদপত্রের ভাষায় এগুলো হচ্ছে ‘গায়েবি’ মামলা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘গায়েবি মামলা বলতে কোনো কিছু আমাদের অভিধানে নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই আসামির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’ তাহলে কি আমাদের এমন অদ্ভুত অভিযোগ সত্য বলে মনে করতে হবে যে, ডান হাত অস্বাভাবিক চিকন, কোনো চেতনা নেই, বাঁ হাতেও সমস্যা, কোনো কাজ করতে পারেন না, সেই তারা মিয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী? মানতে হবে যে তিনি রামদা, হকিস্টিক ও রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেছেন—এই অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য?

মামলাগুলো ‘গায়েবি’; কিন্তু মানুষগুলো বাস্তবের, রক্ত–মাংসের মানুষ। তাঁদের অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ, কেউ কেউ চলতে পারেন না, চাষাবাদের কাজে যাঁদের দিন কাটে, যাঁরা জানেন না তাঁদের অপরাধ কী। কিন্তু এখন তাঁদের আসতে হয়েছে এবং হচ্ছে রাজধানীর হাইকোর্টে। তাঁদের চাওয়া একটাই, ‘জামিন’। এমন মানুষের সংখ্যা কত? গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে দেড় মাসে সারা দেশে ৪ হাজার ১৮২টি ‘গায়েবি’ মামলা হয়েছে বলে বলা হয়েছে। এসব মামলায় ৮৮ হাজার জনের নাম উল্লেখ আছে। আর আসামি করা হয়েছে পৌনে তিন লাখ ব্যক্তিকে। এই হিসাব তো নভেম্বরের আগের, তারপর নির্বাচন হয়েছে।

সরকার, ক্ষমতাসীন দল, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশন একটি ‘আন্তর্জাতিক মানের’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করেছে। বারবার বলা হচ্ছে যে এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নিহত ব্যক্তির সংখ্যা দেখে বলাই যায় শান্তিপূর্ণই ছিল নির্বাচন। কিন্তু তা–ই যদি হবে, তবে এই যে লাখ লাখ মানুষ অভিযুক্ত, এই যে হাজারে হাজারে মানুষ আদালতের দরজায় মাথা কুটে মরছেন, তাঁরা কারা? তাঁদের অপরাধ কী? অন্য যেকোনো সময়ে আমরা বলতে পারতাম যে এই সব মানুষ তাঁদের অভিজ্ঞতা ভুলে যাবেন না, ভবিষ্যতে তাঁরা এর রায় দেবেন। এখন যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেখানে এই সব ক্ষোভ–বিক্ষোভের তোয়াক্কা করার দরকার নেই।

হাইকোর্টের বাইরে যেমন জামিনপ্রত্যাশীদের ভিড়, তেমনি কারাগারের বাইরে অপেক্ষমাণ আত্মীয়স্বজনের ভিড়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আটক হয়েছেন ‘রাজনৈতিক’ কারণে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্রে জানতে পারি এক জননীর কথা; হেনা, সন্তানের নাম হাবিব। ‘(হাবিব) নভেম্বর মাসে ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে আসছিল। মুড়ি কিনতে বাসা থেকে বের হলে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এরপর আর খুঁজে পাইনি।’ হেনা জানান, নির্বাচনের আগে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ঘটে যাওয়া পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় হাবিবকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। হাবিব জামালপুরেই থাকেন। তাঁর মা হেনা বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। বাড়িতে থাকে। বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসছিল। পুলিশ শুধু শুধু মামলা দিয়েছে।’ তিনি জানান, গ্রেপ্তারের পর তিন মাস ধরে কেরানীগঞ্জ কারাগারেই আছেন হাবিব, (মানবজমিন, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯)।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শ্যামপুর গ্রামের বর্গাচাষি মিলন মিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাঁর নামে দেওয়া হয়েছে নাশকতার মামলা। আগাম জামিন নিতে ঢাকা এসেছেন তিনি। প্রথম আলো। 



পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায় আবিদ উল্লাহর কথা। আবিদ উল্লাহ বলেন, ‘আমার ভাইকে মামলা দেওয়ার বয়সই হয়নি। সে এখনো অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তাকে আটক করে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ছোট ভাইয়ের জামিন নিয়েও প্রতিদিন এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। প্রতিদিন কত নেতার কাছে ঘুরি। কোনো কাজ হয় না। একটা অবুঝ ছেলে, সে মামলার কী বোঝে। উকিল ধরছি, এখনো জামিন কবে পাইব জানি না।’ কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার বেশি মানুষ আটক আছেন। এই সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে নির্বাচনের অব্যবহিত আগের মাসগুলোতে। গত কয়েক বছরে আটক বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কথা তো আমরা প্রায় বিস্মৃতই হয়েছি। মানুষ গায়েব হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বছরের পর বছর ধরে। ২০১৮ সাল থেকে আমরা গায়েবি মামলার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি।

এসব গায়েবি মামলায় যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁদের অনেকেই এসব জামিনের ব্যবস্থা করতেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের মামলাগুলো তো বাতিল হচ্ছে না। সেগুলোর হাজিরা চলবে ভবিষ্যতে। কত দিন? কেউ জানে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা অব্যাহত আছে, নিয়মিতভাবেই তাঁদের হাজিরা দিতে হয় বলেই জানি। শুধু তা–ই নয়, সম্প্রতি পোশাকশ্রমিকেরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করলে আটক করা হয়েছে অনেককে, তাঁদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার উপায় কোথায়? এ নিয়ে কথা বললেই ষড়যন্ত্রের গল্প শোনানো হবে। শুধু তা–ই নয়, ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এই সব দেখে সবকিছুকেই ‘গায়েবি’ বলেই মনে হয়।

এই যে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে, তার উদ্দেশ্য একটাই—সবাইকে প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেওয়া যে তাঁদের কী পরিণতি হতে পারে। রাজনীতি না করলেও এই যদি অবস্থা হয়, তবে রাজনীতি করলে কী হবে, সেটা অনুমানের ব্যবস্থা করা। সাধারণ মানুষকে ভয়ের মধ্যে রাখা। এর একটা শ্রেণিবিভাজনও আছে। শহরের মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত এ নিয়ে চিন্তিত হচ্ছেন না, কেননা তাঁদের পরিচিত কাউকে তো এমন অবস্থায় পড়তে দেখছেন না। পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বাড়ল কি না, তাঁদের চাকরি থাকল কি না, ঘাটাইলের আজিজ মুনশির কী হলো, তা নিয়ে বাংলাদেশের নতুন মধ্যবিত্তের উদ্বেগের কিছু নেই। কেননা, শ্রেণিগতভাবে এটা তাঁদের জানাই আছে যে প্রবৃদ্ধির সিংহভাগ তাঁদের পাতেই আসবে। তাঁদের সম্ভবত করার আরও অনেক কিছুই আছে। সংবাদপত্রের পাতায় এসব খবর বড়জোর কতগুলো সংখ্যামাত্র।

রাষ্ট্র, সরকার, ক্ষমতাসীনেরা যে এই মানুষদের কথা ভাবছে না, তা দরিদ্র, সাধারণ মানুষ জানে। আদালতের কাছে ‘জামিনের’ জন্য এসেছেন, আসছেন, আসবেন—কিন্তু সেখানে বিচার পাবেন, এমন আশা তাঁদের নেই। সে কারণে আজিজ মুনশি বলেছেন, ‘দোয়ার দরখাস্ত রাখলাম। এক বিন্দু অপরাধ করি নাই। ওপরের উনি সব দেখছেন।’ (প্রথম আলো, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯)।

আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর

সূত্র — প্রথম আলো/ শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৯। 

Thursday, January 31, 2019

বেগম জিয়াকে মুক্ত করাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ — শামসুজ্জামান দুদু


কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু। বৃহস্পতিবার ৩১ জানুয়ারি, রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষকদলের বর্ধিত সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

দুদু বলেন, ‘আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করে আনা। বেগম জিয়াকে মুক্ত করা এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরে আনাই হলো গণতান্ত্রিক আন্দোলন। এই দুটি পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই কেবল মাত্র দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে আসবে।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন,‘আমাদের মাঝে হতাশা যেমন আছে, তেমনি সম্ভবনার পথও আছে। হতাশা থেকেই সম্ভবনার পথ উন্মুক্ত হয়। কৃষকদল সুশৃংঙ্খল সংগঠন, আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই, আমাদের এই ঐক্যকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে।’

বর্ধিত সভায় কৃষক দলের সহ-সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, নাজিম উদ্দীন আলম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তকদির হোসেন, মো. জসিম, জামাল হোসেন মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা গৌতম চক্রবর্তী, সহ-দফতর সম্পাদক এসকে সাদী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ সেলিম হোসেন, আলিম হোসেন, বংশাল থানা কৃষকদলের সভাপতি আব্দুর রাজি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে দুর্নীতির ভয়াবহ রূপ প্রকাশ হচ্ছে না — রুহুল কবির রিজভী


প্রকাশিত রূপের চেয়ে দুর্নীতির মাত্রা আরও ভয়াবহ বলে দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতির মাত্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত বলে সব তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে না। কেবল টিআই-ই নয়, ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি গত সোমবার বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে শুধু ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আর গত ১০ বছরে পাচার হয়েছে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই দুর্নীতির টাকা আওয়ামী ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকেরাই পাচার করেছে। সুতরাং তথ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমকে ডেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সত্যকে আড়াল করতে পারবেন না।’

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ৩১, সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রেসব্রিফিং এর পূর্ণপাঠ নিচে দেওয়া হল -

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন যে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মতোই আগামী উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে সাহায্য করে তিনি বড় ধরণের অপরাধ করার পরেও তাঁর ঐ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভোটারদের সঙ্গে সাম্প্রতিক কালের সেরা রসিকতা করলেন । প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার’রা নিজেদের জীবন কোন মূল্যবোধের ওপর গড়ে তোলেন নি। তারা নিজেদের জীবনে মনুষ্যধর্মকে বিসর্জন দিয়েছেন। তারা ভোটের আগের দিন রাতে জাল ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স পূরণের তদারকি করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কতিপয় কমিশনারবৃন্দ নিজেদের জীবন গড়ে তুলেছেন ভোটারবিহীনভাবে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার জন্য। তারা মূলত: আওয়ামী লীগের ইচ্ছায় নির্বাচন-ব্যবস্থা ধ্বংস করার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। মন্ত্রীসভা ও সংসদ বহাল রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে তারা দাবি করেছেন। অথচ এটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দুরে থাক, বরং এটি খানা-খন্দে ভরা মাঠ, সেই বিষয়টি দেখেও নির্বাচন কমিশন তা উপেক্ষা করেছে। তারা ন্যুনতম সুষ্ঠু একটি নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে উঠতে দিলেন না আওয়ামী সরকারের মোসাহেবী করতে গিয়ে। 

এদের দ্বারা অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রকৃত জনরায়ের প্রতিফলন ঘটানোর দিন শেষ হয়ে গেল। সুতরাং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে এটি সুষ্পষ্ট হলো যে, এই কমিশনের তদারকিতে উপজেলা নির্বাচনগুলোও ভুয়া ভোটের নির্বাচনেরই মহৌৎসবে পরিণত হবে। অর্থাৎ নির্বাচনের আগের রাতেই একই কায়দায় সরকার মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা হবে। এবারে নির্বাচন কমিশনের জন্যই ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রাণসংহারী হয়ে উঠেছিল, কারণ নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততায় মহাভোট ডাকাতিতে লিপ্ত পুলিশ প্রশাসন ও সরকারী দলের ক্যাডার’রা উৎসাহবোধ করেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রক্ত ঝরেছে ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকদের। সুতরাং নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে চেয়েছে কিন্তু সুষ্ঠু করতে নয়। ভোট ডাকাতির সাক্ষ্য-প্রমান তারা নিজেরাই রেখে দিয়েছে। 

সাংবাদিকবৃন্দ,
ঐতিহ্যগতভাবেই জনরায়ের প্রতি আওয়ামী লীগের অবজ্ঞা। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী দু:সহ অপশাসনের এমন একটি পরিস্থিতি তৈরী করে, যাতে তারা সবসময় প্রতিপক্ষের প্রতিশোধ আশঙ্কায় গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশকে বন্ধ করে দেয়। মূলত: আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মানবিকতার কোন স্থান নেই। ‘রক্তপাতময় রাজনীতি’ই এদের স্বভাবধর্ম। সব যুগেই এরা নির্বাচনে ভোট ডাকাতির সাথে সহিংসতা ও খুন জখমের পদ্ধতি অবলম্বন করে। দখল, হরণ ও প্রাণঘাতি প্রবণতাই আওয়ামী রাজনীতির অন্তর্নিহিত শক্তি। খোঁড়া অজুহাতের আশ্রয় নিয়ে তারা বিরোধী দলকে কারাগারে প্রেরণ করে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দিয়ে এরা বিচার ব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে ফেলেছে।

বন্ধুরা,
২৯ ডিসেম্বরের রাতের নির্বাচনে গঠিত ভুয়া ভোটের সরকার আরও জোরালোভাবে রাষ্ট্রের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগকে একই কেন্দ্রের অধীন করলো। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য ক্ষয় হতে হতে এখন ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিরোধী দল, মত ও বিশ^াসের ওপর চলছে টার্গেটেড দমন-পীড়ণ। নাগরিকদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সংকুচিত হতে হতে এখন নি:শেষিত হয়ে জনগণকে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্বে এসে উপনীত হয়েছে। রাষ্ট্রের মেশিনারিজ ভুয়া ভোটের সরকারের অনুকুলে এখন বিভৎস চেহারায় জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ‘এক ব্যক্তি, এক দল’ নীতির বেপরোয়া আস্ফালন জনগণকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। জনগণকে পরাধীন করে এখন আওয়ামী লীগ উপনিবেশ কায়েম করেছে। দেশে এখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, মানুষ নিজের ছায়া দেখলেই চমকে উঠে।

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
গতকাল তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন-ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)-এর রিপোর্ট বিএনপি’র আমলে সঠিক ছিল, এখন মনগড়া।’ আসলে তথ্যমন্ত্রী যেন তথ্যযন্ত্রী। তিনি তার তথ্যযন্ত্রের মাধ্যমে এমন তথ্য দেন, তাতে শুধু দেশবাসীই নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও স্ববিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়ে। টিআই এর রিপোর্টে বাংলাদেশের দুর্নীতি বেড়েছে, এটি স্বীকার করে নিলে তো তথ্যমন্ত্রীর মন্ত্রীত্ব থাকে না। এজন্য টিআই-এর রিপোর্টের বিরুদ্ধে তাকে অপ-তথ্য দিতে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতির মাত্রা ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত বলে সব তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে না। কেবল টিআই-ই নয়, ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি’ গত সোমবার বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে-শুধু ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আর গত দশ বছরে পাচার হয়েছে পাঁচ লাখ ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা দুর্নীতির টাকা এবং এই টাকা আওয়ামী লীগ ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকেরাই পাচার করেছে। সুতরাং তথ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমকে ডেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সত্যকে আড়াল করতে পারবেন না।

কর্মসূচিঃ-
‘গণতন্ত্রের মা’, বিএনপি চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে অন্যায়ভাবে কারান্তরীণ নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১৯ শুক্রবার বেলা ২টা সোহরাওয়াদী উদ্যানে বিএনপি’র উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারীর জনসভা সাফল্যমন্ডিত করার জন্য দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে প্রস্ততি গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।    
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

‘ওপরের উনি সব দেখছেন’


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শ্যামপুর গ্রামের বর্গাচাষি মিলন মিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাঁর নামে দেওয়া হয়েছে নাশকতার মামলা। আগাম জামিন নিতে ঢাকা এসেছেন তিনি। গতকাল হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে।  ছবি: আশরাফুল আলম

  • নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জেলায় গায়েবি মামলা হয়েছে 
  • জামিনের জন্য মানুষ এখন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন
  • মামলার আসামিদের অনেকের বয়স ষাটের বেশি
  • অভিযোগ—মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার


সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স চত্বরে ন্যায়বিচারের প্রতীক গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য ঘিরে দলে দলে ভাগ হয়ে জামিনের জন্য অপেক্ষা করছেন ‘আসামি’রা। একেক জেলার একেক দল। যশোর জেলার দল থেকে বেরিয়ে আবু বকর মোল্লা বললেন, ‘আমার বয়স এক কম আশি। আমি নাকি ভোটকেন্দ্র দখল করেছি।’

ওই দলে আবু বকর মোল্লা সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ। চোখে ভালো দেখেন না। শীতকালে বার্ধক্যজনিত কষ্ট বাড়ে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মামলার যন্ত্রণা। তবে বৃদ্ধ বয়সে ছেলেকে সঙ্গে পাচ্ছেন। কারণ, একই মামলায় তাঁর একমাত্র ছেলে আবু হানিফাও আসামি। আর সঙ্গে পাড়া–প্রতিবেশী আছেন অনেক। হয়েছিল কী? আবু বকর মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, কীভাবে কী হলো কিছুই বুঝতে পারছেন না। তিনি শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। যখন তিনি ভোটকেন্দ্রের কাছাকাছি, তখন হঠাৎ গুলির শব্দ শোনেন। ভোট না দিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে। হঠাৎ শোনেন, তিনি ও তাঁর ছেলে দুজনেই ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি।

হাইকোর্ট চত্বরে গতকাল আবু বকর মোল্লার কথা শেষ হতে না হতেই ষাটোর্ধ্ব আরও তিন–চারজন ব্যক্তি জটলা থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁদের একজন আবু তালেব খান। তাঁর বিরুদ্ধেও ভোটকেন্দ্রে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগ। বললেন, ‘এজাহারে সব অভিযোগই আছে। যেসব নিয়ে হামলা কইরেছি বলে বলছে, সেসব তো চোখে দেখিনি। এখন মামলার কাগজে দেখছি। ককটেল, গুলি আরও কী কী সব।’

এই মানুষগুলোর বড় অংশই এলাকায় চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকাছাড়া। তাঁদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত চটপটে ও অল্প বয়স্ক কয়েকজন জানান, যশোরের মনিরামপুর থেকে এক মামলায় ৪০ জন, যশোর সদরের দুই মামলায় ১৫০ জন, অভয়নগরে ৭৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শার্শা উপজেলাতেও একই ধরনের মামলায় আসামি অনেক। তবে তাঁরা সংখ্যা বলতে পারেননি।

এই ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা কতটুকু? যশোর জেলার পুলিশ সুপার মঈনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁদের সম্পৃক্ততা আছে বলে মনে হয়েছে। সে কারণেই মামলা হয়েছে। তদন্তে তাঁদের অপরাধ প্রমাণিত না হলে নাম বাদ যাবে।

যশোর জটলায় বৃদ্ধদের সঙ্গে আলাপের ফাঁকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোকজন এলেন। বাহাত্তর বছর বয়সী মো. আবদুল হাইয়ের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া। মামলা কিসের জানতে চাইলে বলেন, ‘কইতারি না গো। মামলার পরও বাড়িতেই রইসি। পুলিশের পাশ দিয়া গেছি। চিনছেও না। তাও আইসি। হগলে জামিনের কথা কইতাছে।’

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আবদুল আজিজ ওরফে আজিজ মুন্সি শুধু নিজেই মামলার ঝামেলায় জড়িয়েছেন তা নয়, সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে প্রায় অচল মানুষ শামসুল হককে। শামসুল কানেও ভালো শোনেন না। দু–একটি কথা চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করতে জবাব দেন তিনি, তারপর থেমে যান। তাঁর হয়ে আজিজ মুন্সিই কথা বলছিলেন। তাঁদের মামলায় আসামি ৫১ জন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঘাটাইলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে হামলার। যে মানুষ নড়তেচড়তে পারেন না, অত দূরে গিয়ে তিনি হামলা করবেন কীভাবে?

বৃহত্তর ময়মনসিংহ জটলা থেকে জানা গেল, আইনজীবীর খরচ, বাড়ি থেকে আদালতে আসা, থাকা–খাওয়ার খরচ সবাই মিলে বহন করছেন। কিন্তু শামসুল হকের জন্য খরচটা বেশি। তিনি বাসে যাতায়াত করতে পারেন না। তাঁর জন্য আট হাজার টাকা খরচ করে মাইক্রোবাস ভাড়া করতে হয়েছে। ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকসুদুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন বয়সের মানুষগুলোর মতো এই বৃদ্ধরা কয়েক দিন ধরে আদালত চত্বরে ন্যায়বিচারের আশায় ঘুরছেন। হাতে টাকা নেই, বেশির ভাগের পরনে জীর্ণ পোশাক, পায়ে চপ্পল, দিন কাটে মুড়িমাখা বা বাদাম খেয়ে। তবু আশা, জামিন নিয়ে বাড়ি ফিরে নিজের বিছানায় ঘুমাবেন। ফেরার সময় ঘাটাইলের আজিজ মুন্সি বললেন, ‘দোয়ার দরখাস্ত রাখলাম। এক বিন্দু অপরাধ করি নাই। ওপরের উনি সব দেখছেন।’
  • প্রথম আলো/ জানু ৩১, ২০১৯ 

আন্দোলনের শাস্তি ঢালাও ছাঁটাই!


সাভারের নিট এশিয়া কারখানার এক শ্রমিক কালের কণ্ঠকে যখন চাকরি হারানোর কথা বলছিলেন, তাঁকে দেখাচ্ছিল একই সঙ্গে হতাশ ও আতঙ্কিত। নিজের নাম প্রকাশ করতেও রাজি হননি সদ্য সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এই শ্রমিক। চাকরি খোয়ানোর সকালটির স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, “অফিসে গেলে আমাকে অফিসের গেটে আটকে দেওয়া হয় এবং দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়। তখন আমার সাথে আরো কয়েকজন ছিল। পরে আমাকে কিছু টাকা দিয়ে কার্ডটি রেখে দিয়ে বলে, ‘চলে যাও। আর কখনো কারখানায় আসবা না।’” 

একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান সাভারের আরেক কারখানা এআর জিন্সের অন্য এক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘শুধু ছাঁটাই নয়, আমাদের নামে মামলাও করেছে কারখানার মালিক। পুলিশ বাড়িতে গিয়ে গিয়ে খুঁজছে।’

চলতি মাসের শুরুতে ত্রুটিমুক্ত নতুন মজুরি ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনকারী হাজারো শ্রমিক এভাবেই চাকরি থেকে বরখাস্ত কিংবা হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে তথ্য মিলছে। তৈরি পোশাক শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে ফিরলেও বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের নোটিশ ঝুলছে বলে দাবি শ্রমিক নেতাদের। একজন নেতা দাবি করেন, এই পর্যন্ত সাভার-আশুলিয়ার ১২ থেকে ১৫টি তৈরি পোশাক কারখানায় প্রায় দেড় হাজার শ্রমিককে এই ছাঁটাইপ্রক্রিয়ায় কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। অনেক কারখানার গেটে ঝুলছে ছাঁটাইয়ের নোটিশ। 

কোনো কোনো সূত্র মতে, ছাঁটাই বা মামলার শিকার শ্রমিকের সংখ্যা সাত হাজারেরও বেশি। শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক সংগঠন এবং পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রও এমন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করছে। এমনকি আরো ছাঁটাই এবং কারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছে খাতসংশ্লিষ্টরা। গত মঙ্গলবার ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনেও বলা হয়, মজুরি নিয়ে আন্দোলনের পর বাংলাদেশের পোশাক খাতের পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক তাদের কর্মস্থল থেকে বহিষ্কার হয়েছে। দেশের শ্রমিক নেতাদের দাবি এই সংখ্যা সাত হাজারেরও বেশি। তাঁরা বলছেন, মালিকরা শ্রমিকদের ঠকাতে এই কৃত্রিম সংকট তৈরি করতেই দমন-পীড়ন-নির্যাতন ও ছাঁটাই করছেন। মালিকরাও অস্বীকার করছেন না ঘটনা, তবে তাঁরা বলছেন, ছাঁটাই নয়, সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে।

আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার এআর জিন্স প্রডিউসারের জেনারেল ম্যানেজার র‌্যাক লিটন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের ছাঁটাই করিনি। আমরা তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের প্রতিষ্ঠানে মোট ১৪৫ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে শ্রমিকদের কাছে ডাকযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশও পাঠানো হয়েছে। এই নোটিশের উত্তর পাওয়ার পর কোন শ্রমিক কাজ করতে পারবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং আইনিভাবে যে সিদ্ধান্ত হবে আমরা সে সিদ্ধান্তই  গ্রহণ করব।’

সাভার ও আশুলিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, এখন পযন্ত ১১টি পোশাক করাখানা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করেছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মতো আটক রয়েছে।

সাভার মডেল থানার ওসি আব্দুল আউয়াল বলেন, কোনো নিরপরাধ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়নি, হবেও না। কারখানা ভাঙচুর বা অন্য কোনো গুরুতর অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

গামেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, মালিকরা জুজুর ভয় দেখাচ্ছেন। মজুরি না বাড়াতে এই দমন-পীড়ন, ছাঁটাই ও নির্যাতন করছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিককে ছাঁটাই করেছেন মালিকরা। রাজধানীর লোমান ফ্যাশন ও লোপা গার্মেন্ট বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। অথচ অন্যদিকে মালিকদের রপ্তানি আয় বাড়ছে, বড় বড় কারখানার সংখ্যাও বাড়ছে। সিএম (কাটিং ও মেকিং) কমাতে না পারলেও শ্রমিকদের মজুরি কম দিতে নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে।

এদিকে রাজধানীর কাকরাইলের ইয়লক গার্মেন্টের অপারেটর রিনা আকতার কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো অনুসারে একজন হেলপারের বেতন আট হাজার টাকা হলেও তিনি গত ডিসেম্বর মাসে অতিরিক্ত কাজের মজুরিসহ মোট বেতন পেয়েছেন মাত্র সাত হাজার টাকা। সরকারের ঘোষিত মজুরি দেওয়ার দাবি জানালে মালিক তাঁকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।

রামপুরার লোমান ফ্যাশনে কাজ করেন চায়না আকতার। তিনি জানান, সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো অনুসারে বেতন দেন না কারখানার মালিক। নতুন কাঠামোতে মজুরি দাবি করলে মালিক কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন নিয়মিত।

শ্রমিক অধিকার নিয়ে সক্রিয় সংগঠন ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশের (আইবিসি) সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন স্বপন কালের কণ্ঠকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নিয়ে আন্দোলনের পর শ্রমিকরা কারখানায় ফিরে যেতে চাইলেও তা পারছে না। অনেক কারখানার ফটকে গিয়ে দেখে, তাদের ছবিসহ চাকরিচ্যুত কর্মীদের তালিকা টাঙিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আন্দোলনের সময় ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সাভার ও আশুলিয়া থানায় বিভিন্ন কারখানার পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলোয় আসামি করা হয়েছে হাজার হাজার শ্রমিককে।

নতুন মজুরি পোশাকশিল্প খাতে বড় চাপ সৃষ্টি করেছে মত দিয়ে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সংশোধিত নতুন মজুরি কাঠামো অনুসারে মজুরি দেওয়ার সক্ষমতা নেই অনেক পোশাক কারখানার মালিকদের। ফলে মালিকরা বিভিন্ন আগাম সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছেন, মজুরি নিয়ে যেন সামনে শ্রম অসন্তোষ তৈরি না হয়। এর ফলে কারখানা থেকে অতিরিক্ত শ্রমিক কমিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়াসহ শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে সবাইকে শ্রম আইন মেনেই তা করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

মামলার তথ্য দিয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু (কে এম মিন্টু) কালের কণ্ঠকে বলেছেন, কারখানায় ভাঙচুরসহ মারপিট করে ক্ষতিসাধন, চুরি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে বেশ কিছু কারখানা মালিক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের দেওয়া তথ্য মতে, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও উত্তরা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি শ্রমিক নেতা জয়নাল আবেদীন, উত্তরা আঞ্চলিক নেতা মাসুদ, সাজুসহ ৪০-৫০ জন শ্রমিক গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে সাভার-আশুলিয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছে ২০-২৫ জন। হাজার হাজার শ্রমিক গ্রেপ্তার অতঙ্কে আছে। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের অনেক নেতা পুলিশের নজরদারিতে আছেন বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে।
  • kalerkontho/ jan 31, 2019 

Wednesday, January 30, 2019

আওয়ামী লীগ নেতার সুদের ফাঁদে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার


সুদখোর আওয়ামী লীগের মৎস্যজীবী লীগ নেতার ঋণের জালে পড়ে নিঃস্ব গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর শতাধিক পরিবার। নিয়মিত সুদের টাকা না দেওয়ায় মারধর, মিথ্যা মামলা ও হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান রাসেলের ‘প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন’ সংস্থা নামে একটি সমিতি থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তাদের এ অবস্থা।  সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে তা বাড়ে।  সেই টাকা দিতে না পারলে ঘরের আসবাবপত্র, গরু, ছাগল ও ভ্যান যা পায় নিয়ে যায়। করা হয় মিথ্যা মামলাও।

পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুর ও নয়াবাজার গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিম্নআয়ের ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। স্থানীয়দের অভিযোগ, জীবিকার প্রয়োজনে তারা চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয় দাদন ব্যবসায়ী ও উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি রাসেলের  ‘প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন’ সংস্থার কাছ থেকে। এক হাজার টাকায় মাসিক ২০০ টাকা সুদ দিতে হয়। এই সুদ কেউ দৈনিক বা সপ্তাহে দিতে সম্মত হয়ে সাদা কাগজে সই করে। দিন বা সপ্তাহে কিস্তির টাকা দিতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়ে।

ভুক্তভোগীদের দাবি, টাকা পরিশোধ করলেও অনেক সময় নির্যাতন, অত্যাচার করা হয়। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন জানার পরও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাদের দৌরাত্ম  বেড়েছে।

তারা আরও জানায়, কিস্তি দিয়ে মাস শেষে টাকা পরিশোধ না করলে প্রথমে হুমকি দেওয়া হয়।এরপর ঘরের মালামাল, গরু-ছাগল নিয়ে যায়। এছাড়া মারধরসহ নির্যাতন করা হয়। সুদের টাকা দিতে না পেরে অনেকে ভিটেমাটি ছেড়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে গেছে। টাকা দিতে না পারায় মনিরুজ্জামান ও তার পরিবার কয়েকজনের নামে তাদের বাড়িতে ডাকাতির মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।








সুদখোর আওয়ামী লীগ নেতা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান রাসেল

ভুক্তভোগীদের কয়েকজনভুক্তভোগী সাহেদ মিয়ার অভিযোগ, ‘অভাবের কারণে রাসেলের কাছে দৈনিক কিস্তিতে ১০ হাজার টাকা নেই। কিছুদিন ঠিকভাবে কিস্তি দেওয়ার পর হঠাৎ কিস্তি দিতে পারিনি। কিস্তির টাকা না পেয়ে রাসেল নানাভাবে আমাকে হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে রাসেলের মা আমাকে আটক করে মারধর করে।’

মিজবুল আকন্দ নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রথমে রাসেলের কাছে ছয় হাজার টাকা নেই। দুই মাস কিস্তি দিয়ে ছয় হাজার টাকার লাভ দেই ১২০০ টাকা। পরে আবারও ছয় হাজার টাকা নেই। কিছুদিন কিস্তি দিতে না পারায় রাসেলের মা আরজিনা বেগম আমাকে বেদমভাবে মারধর করে আহত করেন।’

আঙ্গুরা নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘ব্যবসার জন্য রাসেলের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেই। সুদে আসলে মিলে তাকে প্রায় দেড় লাখ টাকা দেই। এরপর তার কাছে আর টাকা না নেওয়ায় বারবার রাসেল হুমকি দিয়ে বলেন, কেন টাকা নিবি না? টাকা নিলেও হুমকি দেয়, না নিলেও দেয়। তাদের অত্যাচারে ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে পারেন না।’ বিষয়টি দ্রুত প্রতিকারের দাবি করেন তিনি।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সমিতি বা দাদন ব্যবসার সঙ্গে আমি ও আমার পরিবার জড়িত নয়। মূলত আমার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং হেয় করতে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা।’

ভুক্তভোগীদের কয়েকজনএ বিষয়ে মহদীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মনীতি তোয়াক্কা না ভুয়া সমিতির নামে সুদখোর মহাজনের সুদ ব্যবসার বিষয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। নিরীহ মানুষকে ফাঁসাতে রাসেল বাড়িতে ডাকাতির মিথ্যা অভিযোগও করছেন। যা তদন্তে ইতোমধ্যে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে।’ তবে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ও প্রশাসনের নিকট দাবি জানান তিনি।

পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি বলেন,  ‘রাসেলের  সুদের ব্যবসার অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তের সত্যতাও পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত রাসেলের বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগও মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাউল হোসেন বলেন,  সমবায় সমিতির বাইরে এবং অনুমোদন ছাড়া কেউ ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। তারপরেও কেউ সমিতির নাম ব্যবহার করে বা ব্যক্তিগত সুদ ব্যবসা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • বাংলা ট্রিবিউন/ জানু ২৯, ২০১৯ 

গায়েবি মামলা — আতর বিক্রেতা ‘প্রতিবন্ধী’ ইউসুফের নামে নাশকতার ১১ মামলা!









আতর বিক্রেতা ইউসুফ আলী (ডানে)।

তালাবদ্ধ ছোট্ট কাঠের বাক্স। দৈর্ঘ্য দুই হাত, প্রস্থ এক হাত। বাক্সের পাশে রাখা একটা কাঠের টুল। লোহার শিকল দিয়ে বাক্সের সঙ্গে টুলটি বাঁধা। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের নিচতলায় প্রায় তিন মাস ধরে এভাবে পড়ে আছে বাক্স-টুল। এর মালিক ইউসুফ আলী (৫৪) নাশকতার ১১ মামলায় এখন কারাগারে। ২৫ বছর ধরে তিনি বায়তুল মোকাররম এলাকার হকার। আতরসহ নানা জিনিস বিক্রি করেন। ইউসুফের বয়স যখন ১০ বছর, তখন তিনি ট্রেন দুর্ঘটনায় বাঁ হাত হারান। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি ভাতাও পাচ্ছেন ইউসুফ।

ইউসুফের স্ত্রী মনোয়ারা বলেন, সেদিন ছিল শনিবার (৩ নভেম্বর, ২০১৮)। সকালে দোকানে যান তাঁর স্বামী। বেলা দুইটার পর মোবাইল ফোনে খবর পান, তাঁর স্বামী ইউসুফকে বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে ধরে নিয়ে গেছে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। থানায় যাওয়ার পর পুলিশ তাঁকে জানায়, নাশকতার মামলায় তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার অংশ হিসেবে সরকারবিরোধী নাশকতামূলক কার্যক্রম চালানোর অভিযোগের মামলায় ইউসুফকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ আদালতকে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে ইউসুফের নাম বলা হয়েছে—ইউসুফ ওরফে হাতকাটা ইউসুফ।

ইউসুফের স্ত্রী মনোয়ারা বলেন, আইনজীবীরা বলছেন, ১১টি মামলায় আলাদা আলাদা জামিন নিতে হলে অনেক টাকা লাগবে। একটি মামলায় জামিনের জন্য কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা, সে হিসাবে দুই লাখ টাকার বেশি লাগবে, যা খরচ করার সামর্থ্য তাঁদের নেই। তাই স্বামী কবে মুক্তি পাবেন, কিছুই বুঝতে পারছেন না।

নাশকতার একটি মামলায় [মোহাম্মদপুর ৫৪ (৯) ১৮] পুলিশ অভিযোগ করেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে মোহাম্মদপুর থানার বছিলার শাহজালাল হাউজিং ১ নম্বর রোডের মাথায় খালি জায়গায় ইউসুফ আলীসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ–সংগঠনের ২০০ থেকে ২৫০ জন নেতা-কর্মী জড়ো হন। নির্বাচন বানচাল করার জন্য নাশকতামূলক কার্যকলাপ ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্রে অংশ নেওয়ার জন্য গোপন সভার জন্য সেখানে তাঁরা একত্র হন।

বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের নিচতলায় পড়ে আছে ইউসুফের বাক্স-টুল।

আদালত ও আইনজীবী সূত্র বলছে, গত বছরের ৩ নভেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইউসুফকে মোহাম্মদপুর থানার ১১টি নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলাগুলো বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে করা।

ইউসুফের আইনজীবী মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ইউসুফের বাঁ হাত নেই। তিনি একজন অ্যাজমা রোগী। হাতে তাঁর সব সময় থাকে নেবুলাইজার। এমন একজন বয়স্ক শারীরিক প্রতিবন্ধী অসুস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ এতগুলো হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে জেলে ভরে রেখেছে। কোনো রাজনীতির সঙ্গে ইউসুফ জড়িত নন।

মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন জানান, ইউসুফ জামিন আবেদন করেছেন একাধিকবার। কিন্তু জামিন হয়নি তাঁর।

ইউসুফের মুক্তি চান 

ইউসুফ থাকেন মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লার বস্তিতে। গত শনিবার বিকেলে সেখানে গিয়ে পাওয়া গেল ইউসুফের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে। ছোট্ট ঘর। এই ঘরে স্ত্রী আর ছয় বছরের ছোট্ট মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে থাকেন ইউসুফ।

মনোয়ারা বললেন, তাঁর স্বামী ইউসুফ কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। দিন এনে দিন খান। তাঁর আয়ে সংসার চলে। অথচ পুলিশ বিনা দোষে তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করে একের পর এক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে। 

মনোয়ারা ইউসুফের দ্বিতীয় স্ত্রী। আগের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ১২ বছর আগে তিনি মনোয়ারাকে বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে আছে তিন ছেলে আর দুই মেয়ে। 

ইউসুফের মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার মোহাম্মদপুর থানার ২৯ নম্বর ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর বাবা ইউসুফ রাজনীতি করেন না বলে দাবি ইয়াসমিনের। তিনি বলেন, তাঁর বাবা বহু বছর ধরে বায়তুল মোকাররম এলাকায় ব্যবসা করেন। তিনি কোনো দিন দেখেননি, তাঁর বাবা ইউসুফ বিএনপির কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। মিথ্যা মামলায় তাঁর বাবাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইউসুফ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি ভাতা পান বলে জানান তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।

তবে একটি মামলার বাদী মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেজবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে যদি দেখা যায় ইউসুফ নির্দোষ, তাহলে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

ইউসুফকে অনেক আগে থেকে চেনেন চান্দু হাওলাদার। ইউসুফের মোহাম্মদপুরের বাসার সামনের চান্দুর দোকান। তিনি বলেন, ইউসুফ আওয়ামী লীগের সমর্থক। কোনো রাজনীতি করেন না। বায়তুল মোকাররম এলাকায় হকারি করেন। 

গত রোববার দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের নিচতলার গিয়ে ইউসুফের ছোট্ট দোকানের খোঁজ পাওয়া যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যবসায়ী এনামুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ বছর ধরে চেনেন ইউসুফকে। অনেক আগে থেকে ইউসুফ বায়তুল মোকাররম এলাকায় ব্যবসা করে আসছেন। তিন মাস হলো ইউসুফের দোকান বন্ধ আছে। শুনেছেন, রাজনৈতিক মামলায় ইউসুফ কারাগারে আছেন।

ইউসুফের দোকানের বাঁ পাশের দোকানদার মনির হোসেন। তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে তিনি চেনেন ইউসুফকে। তাঁকে তিনি ভালো মানুষ হিসেবে জানেন।

ইউসুফের স্ত্রী মনোয়ারা জানান, স্বামী জেলে যাওয়ার পর থেকে পরের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, যতবার তাঁর (স্বামী) সঙ্গে দেখা হয়েছে, ততবার স্বামী দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে তাঁকে বলেছেন, বিনা দোষে আর কত দিন তাঁকে জেল খাটতে হবে।

শারীরিক প্রতিবন্ধী ইউসুফের মুক্তি দাবি করেন মনোয়ারা। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে সুমাইয়া রোজ রাতে বাবার কথা মনে করে কান্নাকাটি করে।’

শারীরিক প্রতিবন্ধী ইউসুফের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ইউসুফের বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেবেন।
  • প্রথম আলো/ জানু ৩০, ২০১৯ 
  • https://goo.gl/yJx42w

বাংলাদেশের একটি কলঙ্কময় দিন আজ — ড. মঈন খান


একাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ায় আজকের ৩০ জানুয়ারি, বুধবার দিনটিকে বাংলাদেশের একটি ‘কলঙ্কময়’ দিন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। তিনি বলেন, এই দিনে এমন একটি সংসদ বসতে যাচ্ছে, যে সংসদের সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধি নয়, তারা বিনা ভোটের প্রতিনিধি।

বুধবার, ৩০ জানুয়ারি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘ভুয়া ভোটের’ সংসদের প্রতিবাদে বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু করার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপি।

মঈন খান বলেন, আমরা এটা বলবো না ৩০ তারিখে (৩০ ডিসেম্বর) নির্বাচন হয়েছে। এটা বলবো, ২৯ তারিখ রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আজকে এই সংসদ গঠন করা হয়েছে। এটা আমার কথা নয়, এটা বিশ্বের বড় বড় মিডিয়ার কথা। তারা বলেছে, বাংলাদেশে এটা কোনো নির্বাচন হয়নি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট ডাকাতি হয়েছে মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, একাদশ সংসদ কোনো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তারা ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ১১ ডিসেম্বর (২০১৮) প্রথম প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে এই সংসদ গঠন করা হয়েছে। যারা ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছে তারা জনগণের প্রতিনিধি নয়। তারা সন্ত্রাসের প্রতিনিধি। এই নির্বাচন দেশের ১৭ কোটি মানুষ মেনে নেয়নি, নেবেও না।

এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, আমরা দাবি করছি আগামীতে সত্যিকারের জনগণের ভোটের মাধ্যমে একটি সংসদ গঠিত হোক। এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে তার নেতৃত্বে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদের যৌথ সঞ্চালনায় মানববন্ধনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এছাড়া যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্তাজুল করিম বাদরু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রমুখ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।
  • জাগো নিউজ / জানু ৩০, ২০১৯ 

গণতন্ত্রকে ধংস করে ৭৫’র মতো দখলদারিত্বের সংসদ গঠন করেছে — মির্জা আলমগীর


বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দেশের জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে গণতন্ত্রকে ধংস করে দিয়ে এই রাষ্ট্রকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার সকল ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করেছে। ১৯৭৫ সালে তারা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ধংস করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। ঠিক একই কায়দায় আজকে তারা জনগণের সমস্ত অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একদলীয় দখলদারিত্বের সংসদ গঠন করেছে।’

বুধবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে প্রথম সংসদ অধিবেশন বসার প্রতিবাদে বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। 

নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচনের সাথে সাথে ফলাফল প্রত্যাখান করেছি। তখনই আমরা বলেছিলাম, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় একটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের রায়ের মধ্যে দিয়ে একটি সরকার গঠন করতে হবে। আজকে আমরা আবার তারই পুনরাবৃত্তি করছি। আমরা বলতে চাই, অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেখানে জনগণ যেন সুষ্ঠুভাবে তাদের রায় দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে একটা সংসদের অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। এই সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। গত ৩০ ডিসেম্বর একটি ভোট ডাকাতির ভুয়া নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণ ভোট ডাকাতির মধ্যে দিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করে দখলদারি সংসদ ও দখলদারি সরকার বসিয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই নির্বাচনের পূর্বে থেকেই জনগণ যেন অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছে। প্রায় এক বছর আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একইভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।’

দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ যাদের মিথ্যা মামলায় আটক রাখা হয়েছে তাদের মুক্তি দিতে দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমরা আহবান জানাতে চাই সকল দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের অধিকার, ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংসদকে বাতিল করে একটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন সরকার গঠনের আহবান জানাচ্ছি। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।’

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু, মোর্তাজুল করিম বাদরু, নুরুল ইসলাম নয়ন, আকরামুল হাসান, বিলকিস জাহান শিরিন প্রমুখ।

মানববন্ধন পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ।
  • ব্রেকিংনিউজ/৩০ জানুয়ারি ২০১৯ 
  • https://www.breakingnews.com.bd/bangla/type/politics/article/92724