Search

Monday, March 4, 2019

Gowher Rizvi criticised for doubting disappearance

Muktadir Rashid 


Families of the victims of enforced disappearance and rights activists criticised prime minister’s international affairs adviser Gowher Rizvi for doubting reported cases of disappearance in Bangladesh.

In reaction to Gowher Rizvi’s remark, Sanjida Islam Tulee, one of the spokespersons of Mayer Daak campaigning for return of their relatives gone missing before 2014 general elections, told New Age on Saturday that they approached all the government corners to find out their relatives
.
She said the advisor gave a wrong message by doubting over the incidents of enforce disappearances.

In Al Jazeera’s headtohead programme aired on Friday, Gowher Rizvi said that the Awami League government did not need to make people subjected to disappearances as it had the authority to arrest people.

Replying to a question on enforced disappearance, Gowher Rizvi did accept that it was ‘deplorable’ if it was taking place and that the government ‘will investigate’.

‘Using “if”, the adviser tried to bypass the truth,’ said rights activist Nur Khan Liton, adding, ‘that is why we have been calling the government to set up an independent and credible commission to investigate each of the cases in which the families have pointed fingers toward the law enforcers.’

European Parliament in its resolution on November 15, 2018 called on the Bangladesh government to conduct independent investigations into reports of extrajudicial killings and enforced disappearances.

Rights organisation Ain o Salish Kendra executive director Sheepa Hafiza also contradicted Gowher Rizvi and said the enforced disappearance continued to go unabated with the government continuing to deny the allegations over the years.

According to rights organisation Odhikar, at least 507 people were subjected to enforced disappearance between January 2009 and December 2018. Of them, 62 were found dead, 286 returned alive or were showed arrested or produced before courts. But, whereabouts of the 159 others are still unknown.

Odhikar secretary Adilur Rahman Khan said it was Gowher Rizvi’s political stance to hide the reality.

‘The fact is none of the families have got justice over the disappearance of their relative over the years,’ he said.

On August 8, 2018, dismissed but decorated army officer Hasinur Rahman was reportedly picked up by a group of people wearing ‘DB’ jackets on a microbus at Mirpur Defence Officers Housing Society on his way home.

His wife Shamima Akhter approached different authorities and filed a general diary with Pallabi police station. Both Rapid Action Battalion and police denied to have arrested Hasinur. ‘We do not know where else to go,’ said Shamima.

North South University faculty Mubashar Hasan, who went missing on November 7, 2018, returned home after 44 days in December and left the country.

National Human Rights Commission chairman Kazi Reazul Hoque said that bin many cases, victims, including Mubashar, returned home after the commission wrote to the government, but the whereabouts of some others, including former ambassador M Maroof Zaman, were still unknown.

He said that the commission would feel relieved if the perpetrators were identified.

The commission sent a letter to the home ministry on February 26, 2017 along with a list of 156 complaints against cops pending with the ministry for long.

On the allegations, 27 were of enforced disappearance, 24 of torture, 20 of police harassment, 12 of extrajudicial killings or ‘crossfire’, 4 of negligence in investigations, 4 of land grabbing, 4 of extortion and the rest were of bribery and other unlawful activities.

No response has been found so far, said one of the members of the commission.

Rehana Banu Munni, sister of Sutrapur unit Jatiyatabadi Chhatra Dal president Selim Reza Pintu who was picked up on December 11, 2013, approached the commission in 2015.

As of November 27, 2018, the commission sent 18 letters to the home ministry for investigation but no result came up.

Geneva-based rights group International Commission of Jurists in its reports in 2017 said following the Awami League government’s assuming power in 2009 there had been a surge in enforced disappearances, with reports of opposition political activists and human rights defenders going ‘missing’.

As of July 2017, the UN Working Group on Enforced and Involuntary Disappearances received at least 40 allegations from Bangladesh.

On October 18, 2018, UN General Assembly stood firm in denouncing enforced disappearances while Bangladesh ambassador Masud Bin Momen announced his country’s ‘firmed commitment to safeguarding the human rights’.

Bangladesh is a party to the Rome Statute of the International Criminal Court, which defines the widespread or systematic practice of enforced disappearance as a crime against humanity.

The Human Rights Watch reported in 2017 that Bangladesh law minister Anisul Huq in March 2017 acknowledged the UN Human Rights Committee that disappearances had taken place, but claimed that the number had been brought down to ‘a very low level’.

In its concluding observations following the initial review of Bangladesh’s implementation of the International Covenant on Civil and Political Rights in 2017, the UN Human Rights Committee expressed concern that ‘domestic law does not effectively criminalise enforced disappearances’ and recommended that Bangladesh ‘effectively criminalise enforced disappearance’.

  • Source — The New Age/ March 4, 2019
  • Link —   https://bit.ly/2TtLB2X


আল জাজিরার হেড টু হেড নিয়ে কিছু কথা


তাসনিম খলিল 



আল জাজিরার হেড টু হেডে আমার একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা হলো। মেহেদী হাসান এই শো’টির পাবলিক ফেইস হলেও এর পিছনে যে টীমটি কাজ করে তাদের কর্মনিষ্ঠা ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশ বিষয়ে তারা একটি এপিসোড করবে জানিয়ে তারা যখন প্রথম আমার সাথে যোগাযোগ করে তখন আমি আসলে বেশ স্কেপ্টিক্যাল ছিলাম কারণ শো’টির প্রযোজকদের বাংলাদেশের রাজনীতি বিষয়ক ধারণা ছিলো একেবারেই ভাসাভাসা। অনুষ্ঠানের রেকর্ডিংয়ে যখন দেখলাম মাত্র কয়েক মাসের প্রস্তুতি দিয়ে তারা মেহেদী হাসানের হাতে এমন একটা ওয়েল-রিসার্চড স্ক্রীপ্ট তুলে দিয়েছে তখন অবাক আর মুগ্ধ হয়েছি অবশ্যই।

মূল ইভেন্টটি কিন্তু ছিলো তিন ঘন্টার মতো, সেখান থেকে এডিট করে ৪৫ মিনিটের মতো নিয়ে এই এপিসোডটি ব্রডকাস্ট করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের রেকর্ডিংয়ের সময় অক্সফোর্ড ইউনিয়নে যারা ছিলেন তারা পুরোটাই দেখেছেন, শুনেছেন।

আল জাজিরার শো’টি ইন্টারন্যাশনাল অডিয়েন্সের জন্য, তারা সেটা মাথায় রেখে এডিট করবে তাই স্বাভাবিক। তবে আমার মনে হয়েছে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গাই কেটে বাদ দিয়েছে। গওহর রিজভীর সাথে আমার কিছু আলাপ তারা ব্রডকাস্ট করেনি। সেটা তাদের বিবেচনা। তবে আমি এখানে এই রেকর্ডটি রাখতে চাই — সেদিন যারা অক্সফোর্ড ইউনিয়নে ছিলেন তারা এর স্বাক্ষী।

১. বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাঁর স্মৃতিকথায় গওহর রিজভীর কথা লিখেছেন যে রিজভী জানতেন কিভাবে শেখ হাসিনা ডিজিএফআই লেলিয়ে দিয়ে বিচারপতি সিনহাকে দেশছাড়া করেছিলেন। আবার বিচারপতি সিনহা আমাকে ইন্টারভিউ দিয়ে বলেছেন যে বাংলাদেশে প্রায় সকল এনফোর্সড ডিজএপিয়ারয়েন্সের জন্য ডিজিএফআই দায়ী। আমি সরাসরি গওহর রিজভীকে এই রেফারেন্স দিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি কোনও সন্তোষ জনক উত্তর (স্বীকার বা অস্বীকার) দেননি — তবে বলেছেন যে বিচারপতি সিনহার স্মৃতিকথা এবং সিনহার সাথে আমার ইন্টারভিউ দুটিই তিনি পড়েছেন।

২. বিচারপতি সিনহা আমাকে ইন্টারভিউ দিয়ে দাবী করেছিলেন যে শেখ হাসিনা হেফাজতে ইসলামকে টাকা দিয়ে ঠান্ডা রাখেন। হেফাজতের আমীর আহমদ শফী নিজেও বলেছেন যে আওয়ামী লীগের লোকজন তাদের মোটা অংকের সাহায্য দেয়। আমি এই দুটি রেফারেন্স দিয়ে কমেন্ট করেছিলাম। আমার কমেন্টের একটা অংশ (“কওমী জননী”) রেখে বাকিটা কেটে দেওয়া হয়েছে। আমার এই কমেন্টের সূত্র ধরে মেহেদী হাসান গওহর রিজভীকে প্রশ্ন করেন যে “শেখ হাসিনা কি হেফাজতে ইসলামকে টাকা দেন”? রিজভী এই প্রশ্নটির উত্তরও নিজের প্রশ্ন দিয়ে দেন — মেহেদী হাসানকে বলেন “আপনাকে কেউ এরকম প্রশ্ন করলে কি করতেন?” মেহেদী তখন উত্তর দেন “ওহ! এটাতো খুবই সোজা। আমি বলবো: না আমি দেই না…” বলাই বাহুল্য, এই পর্বেও দর্শকরা উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করেন। এই অংশটিও ব্রডকাস্টে বাদ গেছে। 

আল জাজিরার হেড টু হেডে এই এপিসোডের টাইটেল ছিল: “বাংলাদেশ কি একটি এক-দলীয় রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে?” এর উত্তরটাওতো আমরা সবাই জানি। বাংলাদেশে এখন দল (আওয়ামী লীগ) কোথায় শেষ হয় আর রাষ্ট্র (বাংলাদেশ) কোথায় শুরু হয় তারতো আসলে কোনও ঠিক নেই। এর নমুনা বা প্রমাণতো আমরা দেখলাম চাক্ষুষ। হেড টু হেডে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গওহর রিজভী কোথায় শেষ হয়েছেন আর “বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত” সৈয়দা মুনা তাসনিম কোথায় শুরু হয়েছেন তারতো কোনও লাইন ছিলোনা — দুইজনই লকলকিয়ে শেখ হাসিনার বন্দনা করেছেন।

সৈয়দা মুনা যে আমাকে ব্যাক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছেন তাতে আমি একটুও অবাক হইনি। আমি কেন, কবে দেশ ছেড়েছিলাম সেটা তিনি খুব ভালো করেই জানেন, তারপরও নির্লজ্জভাবে মিথ্যাচার করেছেন অন ক্যামেরা। আমি তার কাছ থেকে ঠিক এই আচরণটিই এক্সপেক্ট করছিলাম। সেদিন যারা অক্সফোর্ড ইউনিয়নে ছিলেন তারা স্বাক্ষী যে এরপরেও আমি তাঁকে পূর্ণ সম্মান দেখিয়ে কথা বলেছি, এক্সেলেন্সি বলেই সম্বোধন করেছি পুরোটা সময়। সৈয়দা মুনা রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধি, তাঁর সাথে অক্সফোর্ড ইউনিয়নের মতো জায়গায় নোংরা বাদানুবাদে লিপ্ত হওয়াটা আমার সমীচীন মনে হয়নি।

আওয়ামী সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় আব্দুল গাফফার চৌধুরী সারাজীবন লন্ডনে বসে যদি ঢাকায় কলাম লিখতে পারেন বা আওয়ামী মুখপাত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যদি ডিসি/ভার্জিনিয়াতে বসে বাংলাদেশ নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিতে পারেন, টুইট করতে পারেন বা দশকের পর দশক ব্রিটেনে থেকে ব্রিটিশ নাগরিক শেখ রেহানা যদি আওয়ামী লীগের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হতে পারেন তাইলে আমি কেন সুইডেন থেকে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতে পারবোনা?

বাংলাদেশের মানুষেরতো দুর্ভাগ্য আর লজ্জা যে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে খোলামেলা আলাপ করতে যেতে হয় কাতারী আমীরের স্পন্সরড চ্যানেলে। এই যে এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ব্রিটিশ সাংবাদিক মেহেদী হাসানের প্রশংসা করছে আর বাংলাদেশের সাংবাদিকদের গালাগালি করছে এই লজ্জাটা কার আসলে?

শেষ করি ড. গওহর রিজভীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে। অক্সফোর্ড ইউনিয়নে তিনি যেভাবে প্রায় তিন ঘন্টা হাসির পাত্র হয়েছেন তাতে আমার আসলে খারাপই লেগেছে। এমনটি হবে তাতো জানাই ছিলো। তারপরও তিনি যে অক্সফোর্ডে গিয়ে মেহেদী হাসানের মুখোমুখি হয়েছেন সেটা তাঁর সাহসিকতারই পরিচয়। শেখ হাসিনাতো কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে লাইভ ইন্টারভিউ দেবেননা — সেই সাহসতো শেখ হাসিনার নাই।


  • লেখক ব্লগার ও  সম্পাদক-প্রকাশক,  ইন্ডিপেন্ডেন্ট ওয়ার্ল্ড রিপোর্টার। 
  • লিঙ্ক —  https://bit.ly/2UdbLUJ


Sunday, March 3, 2019

Editorial — Absence of voters speaks volumes


Lack of public confidence in the electoral system


It is clear from Thursday's experience that we have had a ritual of an election. The extraordinarily low turn-out of voters during the Dhaka North City Corporation election speaks volumes about the general apathy that has developed in people regarding the electoral process. Reports from the first few hours of voting indicated that there were hardly any voters at the polling centres around the city. And this indicated a disillusionment with the way elections have been held in the past.

During the voting hours the Chief Election Commissioner shrugged off responsibility of the low voter turnout saying that it rested on the shoulders of the candidates and the political parties. But that is just passing the buck. Of course it is the responsibility of the Election Commission to ensure that there is a high turnout at the polling centres. The low turnout is a reflection of the disappointment felt by the people during the 2014 national elections (with 150 unopposed seats) and more recently, the 2018 national elections when the EC did practically nothing in the wake of allegations of harassment of opposition candidates and their supporters before the polls, the absence of opposition party polling agents, stuffing of ballots, orchestrated long lines at polling centres, voter intimidation and so on. In fact the EC did not take any significant action before, during or after the national election to address any of these issues. Why would the public then suddenly develop enough confidence in the EC to come out to vote again in the mayoral election?

The DCC North elections are very important and we have seen in Annisul Huq what a committed mayor can achieve for the city for which he was very popular. His sudden demise put a halt to much of the crucial development work. That there were no major opposition candidates contesting does not bode well for the country's democracy. Compared to the last mayoral elections when candidates were very active in reaching out to the public, this time around the atmosphere was very dismal and it wasn't just the bad weather that resulted in the poor voter turnout that we saw on February 28 regardless of the Election Commission's claim of a 50 percent voter turnout.

Voting is a people's right and the fact that most voters chose not to exercise it gives a message of a lack of confidence in such a major component of the democratic process.

Let us therefore stop deluding ourselves and put our efforts in rebuilding people's confidence in the voting system in order to make democracy functional. And it is up to the ruling party and the EC to create the space for opposition parties to exercise their right to take part in politics and for the people to exercise their franchise in a free and fair manner. If we want our democracy to survive that is the only way to go.

  • The Daily Star/ March 02, 2019 

DNCC Election — The alternative facts and life imitating art

Ali Riaz 

PHOTO: PALASH KHAN/The Daily Star

Oscar Wilde wrote in his 1889 essay “The Decay of Lying” that, “Life imitates Art far more than Art imitates Life.” Little did he know that a century and a few decades later his words would be true in the most literal sense. The events around us often seem so dramatic that we ask: Is it true? On the other hand, perceptive authors of creative genres such as novelists and poets, foresee what could be a reality. George Orwell's novel 1984, although an imitation of life under totalitarian regimes, particularly the then Soviet Union, has now become true in various countries all around the world. The notion that the ministry which deals with war and defence can be named Ministry of Peace, the ministry in charge of rationing and starvation can be called the Ministry of Plenty, the Ministry of Love will oversee torture and brainwashing and the Ministry of Truth will be engaged in propaganda under the guise of news, entertainment, education and art, do not seem very outlandish any longer. They might not be named as such, but many are acting in similar ways. The essence of these labels is that official narratives are just the opposite of the reality on the ground. In recent years, it has assumed a new name: alternative facts.

The term alternative facts entered the public discourse in January 2017 after US President Donald Trump's Counsellor Kellyanne Conway used it to defend a blatant falsehood about the size of the crowd at Trump's inauguration. But this Orwellian term is far from a slip of tongue or a matter of interpretation of facts; it is a political stance about truthfulness and creating an impression that truth is of little significance. Extensive discussions about “alternative facts” in the past two years in media and academia have clearly underscored that “alternative facts” is not only absence of truth or simple falsehood, but instead a tool of those who shun democracy and steps toward authoritarianism. Kellyanne Conway's statement was an early sign of the trajectory of the Trump administration as anyone in the US now can testify. But unfortunately, the Trump administration does not have the sole monopoly over constructing “alternative truths”—there are others who are equally apt in this regard.

Official narrative about the Dhaka North City Corporation (DNCC) election held on Thursday, is the latest example in this regard. The news and accompanied picture that the state television BTV crew had created fake ques of voters in front of a polling station during election to show the presence of voters in a live report was nothing short of a blatant effort to create “alternative facts”. As the state television, it was BTV's responsibility to produce the narrative that it was a successful election. But truth be told, the DNCC election, boycotted by all major opposition parties, drew little attention of the voters. The result was a foregone conclusion: the ruling party's candidate will win big. The voters didn't bother to show up and it became evident from the early morning. Polling officials were seen napping at some centres, according to media reports. Yet, the Home Minister claimed during the day that “voters are teeming at polling centres,” and “it is false that the voters have lost their enthusiasm for the polls”. The Chief Election Commissioner (CEC), somewhat acknowledging the low turnout, shrugged off any responsibilities saying, the commission cannot take responsibility for low voter turnout; instead he laid the blame squarely on the feet of the political parties. However, at the end of the day, the Election Commission Secretary estimated a 50 percent turnout. The pictures and reports through the day do not add up to such a high percentage. EC's account of votes secured by candidates, especially the ruling party candidate Atiqul Islam, provides an impression that at least one-third of voters cast their votes.

The statements regarding the voter turnout is not the first instance of constructing “alternative facts” in Bangladesh. It has become the norm where the powers that be has established an exclusive monopoly of deciding what is truth and what is not. Recently, the government, purportedly clamping down on “porn site” blocked a major Bengali blog and, lo and behold, Google Books. That is the state of politics or the absence of it, as I have alluded to in my recent column “Politics Gone Missing” (The Daily Star, February 25 2019).

The non-existence of enthusiasm about the election and then a low turnout clearly sends a message of no confidence on the current arrangements of elections. The voters voted by their feet, we can assume. Interestingly, the scenario seemed very much like the Nobel Laureate Jose Saramago's novel Seeing, sequel to his famous novel, Blindness. The novel is set in the city which had experienced a mass epidemic of blindness four years ago. All except one citizen became blind. The novel starts with the election day in the capital, it was a rainy day—pretty much like Dhaka on Thursday, and in the morning no voters show up—none. That made the elections officials and politicians jittery and suspicious of the situation. The rain stopped at three o'clock in the afternoon, voters showed up at four o'clock “as if they had been ordered to do so”. When it came down to counting the ballots, election officials found 70 percent were blank. It triggered a panic and a new election in four days was announced. The next Election Day was bright and sunny, and the voters turned out from the early morning. When time came to count the ballot—the result was astounding—83 percent blank. Subsequently, a state of emergency was declared, and the president proposed to build a wall around the city to contain the revolution, but eventually left the city.

The weather followed by an unusual way of making their antipathy known were the uncanny similarities between Saramago's novel and what happened in Dhaka on Thursday. The absence of voters is as much a protest as is in case of the characters of Seeing: “the simple right not to follow any consensually established opinion.” Silence is not always a consent. Terrence Rafferty, in her review of the book in The New York Times, pointed out that Saramago turned repression into farce. Interestingly, the title of Rafferty's review was “Every Nonvote Counts” (The New York Times, April 9, 2006). Those in charge of elections and in power should understand in earnest that the message is clear.

In following the DNCC election, it appeared to me that Saramago's perceptive novel has come to life, or as Oscar Wilde wrote: Life imitates Art.

  • Ali Riaz is a distinguished professor of political science at the Illinois State University, USA.
  • Courtesy   — The Daily Star
  • Link  — https://bit.ly/2XxZegM

Friday, March 1, 2019

ডিএনসিসি নির্বাচন — আস্থা হারানোর প্রকাশ এই নির্বাচন

এম সাখাওয়াত হোসেন


এই নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ ও বিজয়ীকে দেখে আমি অবাক হইনি। যেভাবে নির্বাচনটি হয়ে গেল, তাতে এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। তবে দেশের নির্বাচন কমিশন ও তাদের ব্যবস্থাপনার ওপর মানুষের আস্থা উঠে যাওয়ার একটি প্রকাশ ছিল এই নির্বাচন।
নির্বাচন কমিশন যত যা-ই বলুক না কেন, এই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলো বেশির ভাগ সময় খালি থেকেছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ ভোট দিতে যায়নি। কারণ, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মানুষ নির্বাচনী ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের ওপরে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। জনগণ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের ছায়া হিসেবে দেখেছে। ফলে তারা ভোটকেন্দ্রে যায়নি।

আমাদের দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা যতটুকু দাঁড়িয়েছিল, তা খারাপ হতে হতে এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে ভোটাররা আর এর ওপর কোনো আস্থা রাখতে পারছে না। ভোট মানেই যে একটি উৎসাহ ও উদ্দীপনার ব্যাপার, তা কিন্তু দেশ থেকে নষ্ট হয়ে গেল। এটা কারও জন্যই মঙ্গলজনক হলো না।

সরকারি দল থেকে যিনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁর পক্ষ থেকেও নির্বাচনটিকে জমিয়ে তোলার কোনো আগ্রহ দেখিনি। নিজের পক্ষে ভোট চাওয়ার জন্য তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা চালাতেও তাঁকে দেখা যায়নি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যখন এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, তখন প্রায় সব দলের পক্ষ থেকে এতে অংশ নেওয়ার ঘোষণা এসেছিল। কিন্তু আদালতে একটি রিটকে কেন্দ্র করে তা বন্ধ হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশন যদি একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চাইত, তাহলে তাদের উচিত ছিল তখনই আপিল করা। কিন্তু তারা তা করেনি। তারা হয়তো চেয়েছে এটি জাতীয় নির্বাচনের পরেই হোক। কিন্তু তত দিনে মানুষের নির্বাচনের ওপর থেকে আগ্রহ চলে গেছে।

এ ধরনের পরিস্থিতি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকারক। নির্বাচনে বিজয়ী ব্যক্তি হয়তো দায়িত্ব বুঝে নেবেন, শপথ নিয়ে নিয়মিত দায়িত্বও পালন করবেন। কিন্তু দেশের যে মৌলিক ক্ষতিটি হয়ে গেল তা হচ্ছে সামগ্রিকভাবে সিস্টেম বা ব্যবস্থার প্রতি একধরনের অদৃশ্য অনাস্থা থেকে যাবে। এটা একটি দেশের জন্য বিপজ্জনক। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও ভালো না।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি আমাদের দেশে সঠিকভাবে না চলে, তার পরিণতি খুব খারাপ হয়। বিশ্বের অনেক দেশে তার খারাপ উদাহরণ আছে। আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে গেলেও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমাদের মতো দেশে গণতন্ত্র আর উন্নয়ন একসঙ্গে চলতে হবে। নইলে এর কোনোটাই টিকবে না।

  • এম সাখাওয়াত হোসেন: সাবেক নির্বাচন কমিশনার


Wednesday, February 27, 2019

যে বাড়িতে কেউ হাসে না


আলতাফ পারভেজ



মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদন ২০১৮-এ ধর্ষণের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে ৭৩২টি। ‘অধিকার’-এর নথিতে পাওয়া গেল ৬৩৫টির কথা। এগুলোর কতটিতে মামলা হয়েছে এবং কতটির অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, সে তথ্য পাওয়া কঠিন। তবে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ঘটনাটিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি, হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে।

২০১৮ সালে বাংলাদেশে ধর্ষণের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটেছিল নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। ধর্ষণের শিকার চার সন্তানের একজন মা। গত ৩০ ডিসেম্বরের ওই ঘটনা দেশবাসীকে বিক্ষুব্ধ করেছিল। তাই মানুষ এর বিচারের অপেক্ষায় আছে।

দেশ-বিদেশে নোয়াখালীর সবচেয়ে পরিচিত জনপদ চৌমুহনী। সেখান থেকে সুবর্ণচরের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। সেখানে জুবলি ইউনিয়নের সিরাজ ড্রাইভারের বাড়িতে গেলে প্রথমেই নজরে আসে, কেউ যেন চিরতরে হাসি কেড়ে নিয়েছে বাড়ির মানুষদের। বাইরে থেকে কোনো আগন্তুকের আসা মানে এই বাড়ির গভীর ক্ষতে যন্ত্রণার বাড়তি আলোড়ন।

বাংলাদেশে ধর্ষণের আধিক্য গা-সওয়া হয়ে গেছে। এটা সমাজের গভীর এক নির্মমতার দিক। তবে সমাজের আরেক নির্মমতা টের পাওয়া যায় ধর্ষণের শিকার মানুষটির বেঁচে থাকার দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে। জুবলি ইউনিয়নের মধ্য বাগ্‌গায় রাতারাতি আলোচিত হয়ে পড়া পরিবারটি এখন সেই অসহ্য অবস্থায় বেঁচে আছে।

শিশু-কিশোর বয়সী চার সন্তান রয়েছে এই পরিবারে। সবচেয়ে ছোট দুজনের বয়স ১৩ ও ১০। চারজনই মায়ের বিষণ্নতায় প্রায় নির্বাক। বাড়ির বাইরে বের হলেই নানা রকম ফিসফাস আর মন্তব্যে ওরা টের পাচ্ছে রাষ্ট্র ও সমাজের জান্তব রূপ। আছে মামলা সম্পর্কে প্রচ্ছন্ন হুমকিও। কিছু করার নেই ওদের, বাড়িতে এসে মন খারাপ করে বসে থাকা ছাড়া। ঢাকা থেকে সিরাজ ড্রাইভারের বাড়ি অনেক অনেক দূর। না হলে এই পরিবারের ক্ষোভ আর হতাশার আগুনে বহু আগেই উদাসীন রাজধানী পুড়ে যেত। পরিবারের বড় ছেলেটির একটা চাকরির সন্ধান মিললেও মাকে রেখে সে এখন যেতে চাইছে না। অন্যরাও ১৮ বছর বয়সী বড় ভাইটিকে ছাড়তে চাইছে না আর।
চর জব্বার থানায় এই ঘটনায় যে মামলা হয়েছে (নম্বর ১২; ৩১-১২-১৮; জিআর ২৬৪৫/১৮) তার চার্জশিট না হওয়ায় শুনানিও শুরু হয়নি। অভিযোগের শুনানি, অভিযোগপত্র গঠন, রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির পর শুরু হবে ‘আসল অধ্যায়’ আসামিপক্ষের জেরা। সেসব পর্যায়ে গৃহবধূ ও তাঁর স্বামীকে আরেক দফা মানসিক হেনস্তার মুখে পড়তে হবে বলেই শঙ্কা চলছে। সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারার কল্যাণে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যেন লক্ষ্যই থাকে ভিকটিমকে ‘দুশ্চরিত্রা’ প্রমাণ করা। ৩০ ডিসেম্বর দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এই নারীকেও অন্য সব ধর্ষিতার মতোই অপ্রীতিকর সেসব জেরার মধ্য দিয়েই যেতে হবে। বহু আরজি সত্ত্বেও ১৮৭২ সালে প্রণীত সাক্ষ্য আইনের এই ধারার সংশোধন হয়নি আজও স্বাধীন বাংলাদেশে।

এ রকম প্রায় অনিবার্য মানসিক অত্যাচার পেরোতে গিয়েই নিপীড়িত পরিবারগুলো আইনি যুদ্ধের মনোবল হারিয়ে ফেলে। তারপর যদিও-বা আসামিদের সাজা হয়, ৩৫ বছর বয়সী এই নারী কি পুরোনো স্বস্তির জীবন ফিরে পাবেন? উপরন্তু রয়েছে হাইকোর্ট পর্যায়। এখনই তিনি নির্যাতন ও সামাজিক চাপে গভীর স্নায়ুরোগে ভুগছেন। স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে। ব্যাপক কাউন্সেলিং দরকার তাঁর। বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের নোয়াখালী সদর হাসপাতালে যেতে যেতে ইতিমধ্যে তিনি ক্লান্ত। ১৭ দিন পর যখন তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তখনো পুরো সুস্থ ছিলেন না।

লাঞ্ছনার ক্ষতিপূরণ একখণ্ড জমি

বিশ্বব্যাপী নারী অধিকারকর্মীরা প্রায়ই বলেন, ‘ধর্ষণ হলো যুদ্ধাস্ত্র’, যা রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংঘাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। সুবর্ণচরের ঘটনার ৮৫ দিন আগে ২০১৮ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ধর্ষণ-যুদ্ধাস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা ইরাকের নাদিয়া মুরাদ এবং কঙ্গোর ডেনিস মুকওয়েজকে। ৮ অক্টোবর ওই পুরস্কার ঘোষণার পর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশেও নাদিয়া ও ডেনিসকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ভাষায় অনেক প্রতিবেদন লেখা হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, এই রকম প্রচারণা স্থানীয় সমাজে ধর্ষণের বিরুদ্ধে জনমতের লক্ষণ। কিন্তু কার্যত তা নয়।

নাদিয়া মুরাদের মতোই সুবর্ণচরের মধ্য বাগ্‌গার ওই নারীও রাজনৈতিক সংঘাতের অংশ হিসেবেই যৌন সহিংসতার শিকার। সে কাহিনি ইতিমধ্যে দেশবাসীর জানা। তিনি ছিলেন বাংলাদেশে ওই মুহূর্তের ভোটযুদ্ধের নিরীহ এক বলি। তবে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের জন্য সুবর্ণচর এখন অনেক দূরের জনপদ। হয়তো রাজনৈতিকভাবেও এই মোকদ্দমা সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের জন্য অস্বস্তিকর। ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় কিছু ‘রিপোর্ট’ হলেও পরিবারটির চলমান বিষণ্নতার প্রতি ইতিমধ্যে মনোযোগ হারিয়ে গেছে অনেকের।

হাসপাতালে ভিকটিমকে ক্ষতিপূরণস্বরূপ রাষ্ট্রীয় তরফ থেকে এক একর খাসজমি দিতে চাওয়া হয়েছে। হয়তো এতে শুভ ইচ্ছাই কাজ করেছে। 

তবে কীভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা ধর্ষণের মতো ভয়াবহ নিগ্রহের পুনর্বাসন উপায় হিসেবে এক একর জমি সাব্যস্ত করতে পারলেন, সেটা গভীর বিস্ময় হয়েই থাকছে।

দলবদ্ধ ধর্ষণের ব্যাপকতা

ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে নোবেল পাওয়া ইরাকের নাদিয়া মুরাদের সংগ্রাম বিশ্বজুড়ে নারী অধিকারকর্মীদের কাছে সাহসের প্রতীক। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাংলাদেশে নারী আন্দোলনকর্মীদের সুবর্ণচরের এই জননীকে সামনে রেখে ধর্ষণ-যুদ্ধাস্ত্রের বিরুদ্ধে কোনো দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবাদ আন্দোলন সংঘটিত করতে দেখা যায়নি। মধ্য বাগ্‌গায় জানা গেল, কেবল ‘নিজেরা করি’ নামের একটি সংগঠন থেকে নেতারা দেখতে গিয়েছিলেন ভিকটিমকে। পাংখা বাজারে সমাবেশও করেছেন তাঁরা। সেই সমাবেশে ধর্ষণকারী হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিকটাত্মীয়রাও ঘটনার বিচার চেয়েছেন। এই সমাবেশকালেই জানা গেল, পারুলের ধর্ষণকারীদের এটাই এ রকম প্রথম অপরাধ নয়। ক্ষমতার দাপটেই তারা অপরাধ করে বেড়াতে পারছিল এবং অনেক ভিকটিম অভয় পেলে মুখ খুলতে চান এখন।

তবে ৩০ ডিসেম্বরের এই গণধর্ষণের পরও আশপাশের আরও তিনটি দলবদ্ধ ধর্ষণ হয়ে গেছে। ধর্ষিতাদের মধ্যে আছেন তিন সন্তানের জননী থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু। অত্র অঞ্চলে ক্ষমতাবানদের ধর্ষণ-প্রবণতার লাগাম যে টেনে ধরা যায়নি তা স্পষ্ট।
শুধু আইনের শাসন ধর্ষণ রুখতে পারে না

বহু বছর শুধু কঠোর আইনকে ধর্ষণের প্রতিকার ভাবা হয়েছে। এ–ও বলা হয়েছে, আইনের শাসন এ সংকটের সমাধান দেবে। কিন্তু ধর্ষণসহ নানা সামাজিক অপরাধের সঙ্গে রাজনীতি ও ক্ষমতার যোগ ছিন্ন না হলে শুধু আইনি পথে যে এসবের ব্যাপকতা থামানো যাবে না, নোয়াখালীর ধর্ষণ-আতঙ্কিত সমাজ তার সাক্ষী। সুবর্ণচরের ধর্ষণ মামলায় একজন আসামির নাম ‘কুড়াইল্যা’ বাসু। এই তথ্যটিই হয়তো এই ধর্ষণের সঙ্গে ক্ষমতা সম্পর্কের প্রবল ইঙ্গিত দেয়।  একে শুধু বিচার দিয়ে মোকাবিলা করা যায় না।

এখন সামগ্রিক বিচারহীনতার সংস্কৃতিই ধর্ষকদের ক্ষমতাবান হয়ে ওঠাকে উৎসাহিত করছে। যদিও টক শোগুলোতে একে স্রেফ ‘নৈতিক অবক্ষয়’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও জারি আছে। সুবর্ণচরের ওই নারীর সৌভাগ্য যে মেডিকেল রিপোর্ট তাঁর অভিযোগ সমর্থন করেছে।

স্থানীয় আইনজীবী রবিউল হাসান পলাশের কাছে জানা গেল, নয়জন আসামির দুজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু আশপাশের পরের 

দলবদ্ধ ধর্ষণগুলোর ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। এর কারণ স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয়ের সঙ্গে ক্ষমতার যোগাযোগ। তারপরও বাংলাদেশের প্রচার সাম্রাজ্যের মুরব্বিরা ধর্ষণকে ক্ষমতার বিকার আকারে দেখতে অনিচ্ছুক। ফলে আরও বহুকাল ধর্ষণের আলামত শুধু কাপড়চোপড় ও হাসপাতালেই খোঁজা হবে।

  • আলতাফ পারভেজ : গবেষক


কার্টসি — প্রথম আলো/ বুধবার, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯। 
লিঙ্ক —  https://bit.ly/2EA2y3g 

Tuesday, February 26, 2019

এ শব মিছিলের শেষ কোথায়?

মো. আদনান আরিফ সালিম


সাভারের রানা প্লাজা থেকে ঢাকার নিমতলী— যানজটের শহর হিসেবে দূরত্বটা অনেক। তবে ভয়াবহ হতাহতের সংখ্যা বিচার করতে গেলে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। নিমতলী থেকে এবার চুড়িহাট্টা, দশক পেরোনোর আগেই আরেক দফা অগ্নিকাণ্ড। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের লেলিহান শিখায় অঙ্গার হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত আশির কাছাকাছি প্রাণ। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের কাছে সারি বেঁধে সাজিয়ে রাখা মরদেহ দেখে অশ্রুজলে সিক্ত মানুষগুলোও হয়তো বুঝতে পারছে না, কী এক নারকীয় তাণ্ডব বয়ে গেছে চুড়িহাট্টায়! দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া একটা গাড়ির কাছে ঝলসে যাওয়া পা, বাঁকা হয়ে যাওয়া চাকা আর অবয়ব থেকে বোঝা যায় রিকশার মতো দেখতে একটা বস্তু, সেখানেও ভেজা কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে তিন-তিনটা মরদেহ। বোঝা যায় রিকশার দুই আরোহীর সঙ্গে অঙ্গার হয়ে গেছেন তার চালকও। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, এ রিকশায় যাচ্ছিল এক দম্পতি এবং তাদের শিশুসন্তানটি। পুরোপুরি পুড়ে গিয়ে ভুতুড়ে রূপ নেয়া চুড়িহাট্টার ধ্বংসস্থলে দাঁড়ালে সবার মনে পড়বে নিমতলীর কথা। ২০১০ সালের ৩ জুন। সন্ধ্যার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি সেদিনের ওই লেলিহান শিখা নেভাতে পারেনি। স্থানীয় একটি গুদামে রাখা রাসায়নিকের আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল সেদিনের নিমতলী। বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গিয়েছিল, ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ১২৪ জন। ক্ষণিকের তাণ্ডবে গোরস্তানে রূপ নেয় ঘনবসতিপূর্ণ নিমতলীর ওই এলাকা।

২০১০ সালের ৩ জুন দুর্ঘটনায় যখন সবাই চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা মরদেহগুলো দেখেছিল, হয়তো শয়নে-স্বপনে-প্রার্থনায় একটাই আর্জি হয়ে উঠেছিল, এমন অঘটন আর না আসুক ঢাকাবাসীর জীবনে। নাগরিক অধিকারের কথা থোড়াই জ্ঞান করে পুরান ঢাকার নানা স্থানে অগোছালো গলিপথের সংকীর্ণ ঘিঞ্জি এলাকায় গড়ে উঠতে দেখা যায় শত শত কারখানা। এমন অপরিসর গলির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক ব্যবসা তো বটেই, শিল্প-কারখানা স্থাপন যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা আট বছর আগের নিমতলী তাণ্ডবে দেখেছিল দেশবাসী। তবে এ অঘটন আর প্রাণহানি শুধু কয়েকদিন অশ্রু ঝরিয়েছে, তার থেকে শিক্ষা নিতে পারিনি আমরা। সরকারের কাজ তখন সরকার করেছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তদের রুখতে পারে সাধ্য কার! ভয়াবহ নিমতলী দুর্ঘটনার পর তালিকা করে ৮০০ রাসায়নিক গুদাম ও বিপজ্জনক কারখানাকে পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে আরেক প্রান্তে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। অসাধু চক্রের নানা হুমকি-ধমকি, গড়িমসি আর ব্যক্তি-গোষ্ঠীস্বার্থের কাছে হার মেনেছে সরকারের ওই শুভ উদ্যোগ। শেষ পর্যন্ত একই ভয়াবহতার পুনরাবৃত্তি। বিভিন্ন দৈনিকের খবরে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও মরদেহ গণনা এখনো শেষ হয়নি।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত মহান একুশের প্রভাতফেরিতে অংশ নেয়ার জন্য ভোরের আলো ফুটতেই বাসা থেকে রওনা হয়েছি। পথিমধ্যে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন পাতায় পড়লাম— ‘রাজধানীর চকবাজারে রাজ্জাক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৬৫ জনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৭ জন পুরুষ। পাঁচজন নারী। তিনজন শিশু। নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় সকাল সাড়ে আটটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়নি। অগ্নিদগ্ধ ১০ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। অগ্নিদগ্ধ কয়েকজন মিটফোর্ড হাসপাতালে ও কয়েকজন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।’ হুট করে স্মৃতির আয়নায় গিয়ে প্রচণ্ড আঘাত লাগে। অজান্তেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। তখন আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। খুব সম্ভবত একটা টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ছিল সেদিন। সাতসকালে ঢাকা থেকে রওনা হলেও ক্যাম্পাসে পৌঁছনো হয়নি আর। সাভার বাজারের সঙ্গে প্রায় লাগোয়া রানা প্লাজা ধসে পড়েছিল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টা নাগাদ। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আগে থেকে নিষিদ্ধ হলে শ্রমিকরা সেখানে প্রবেশে সায় দেননি। তবু তাদের চাকরিচ্যুতির হুমকি দিয়ে হ্যান্ডমাইকে ডেকে ডেকে ঢোকানো হয়েছিল সেদিনের মৃত্যুকূপে। বলতে গেলে প্রায় চোখের সামনে দেখেছি রানা প্লাজার এই কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড।

ক্রিকেটের স্কোরবোর্ডে রান উঠতে থাকলে তো সবারই ভালো লাগে। তাই বলে যত যাই হোক, সেখানে উপস্থিত যারা অধরচন্দ্র স্কুলের বারান্দার কাছে বসানো মরদেহের স্কোরবোর্ড দেখেছেন, ওই দিনটি ভুলে যেতে চাইবেন নিঃসন্দেহে। ক্লাস-পরীক্ষার চিন্তা বাদ দিয়ে দৌড়ে ঢুকেছিলাম সেদিনের রানা প্লাজায়। একটু পর খেয়াল করে দেখলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বন্যার তোড়ে বাঁধ ভেঙে আসা পানির মতো ছুটে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তারপর শবযাত্রার সেই মিছিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, শিক্ষার্থী আর সাধারণ মানুষ। প্রচেষ্টা প্রার্থনায় তখন একটাই সুর, একটাই চাওয়া— এমন ঘটনা আর ফিরে না আসুক। কিন্তু ঘুরেফিরে এমন অঘটনই হয়ে যাচ্ছে আমাদের নিত্যসঙ্গী। রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারেনি বলে পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়ে গেছে অনেকটাই স্বাভাবিক। কারখানা মালিকদের ভাবখানা এমন যে শ্রমিকদের জন্মই হয়েছে মরার জন্য, তারা দু-একজন মারা গেলে তেমন কিছুই এসে যায় না; বরং নতুন শ্রমিক এসে যায় দ্রুতগতিতে।

মৃত্যুতাণ্ডবের ধোঁয়া উঠেছে চুড়িহাট্টায়। এটি ২০১০-এ ঘটে যাওয়া নিমতলীর পুনরাবৃত্তি। রিকশা থেকে ভ্যান কিংবা কার, বাদ পড়েনি কিছুই। ২০-২৫টি পোড়া রিকশার কাঠামো ছড়িয়ে ছিটিয়ে চারপাশে। একটি দৈনিকে প্রকাশিত ছবি থেকে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে দুটি পিকআপ ভ্যান, দুটি প্রাইভেটকার, কয়েকটি মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার কাঠামো। বোমারু বিমান থেকে আক্রমণ চালালে যেমন দশা হয়, তেমনি  এ ধ্বংসস্তূপ থেকে নানা স্থান থেকে ভয়াবহ ধোঁয়া উঠছে। আর অশ্রুঝরা চোখ নিয়ে আত্মীয়স্বজনরা আতিপাতি করে এর মধ্যেই খুঁজছেন প্রিয়জনের মরদেহ নামের অঙ্গার। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্থানীয় মানুষ। তারা মরদেহের অংশবিশেষ পেলে সেটা মসজিদ থেকে সুতি কাপড় ভিজিয়ে এনে ঢেকে দিচ্ছে।

প্রচলিত প্রবাদে চোর পালানোর পর নাকি বুুদ্ধি বাড়ে। আসলে বুদ্ধি কমে-বাড়ে যা-ই হোক, কোনো ক্ষয়ক্ষতির পর সেখানে বিদ্যমান ত্রুটি নিয়ে নানা কথা নানাজন বলতে পারেন। চুড়িহাট্টার দুর্ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন পুড়ে যাওয়া মানবদেহের অবশিষ্টাংশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন, ঠিক তখনই বিভিন্ন দৈনিকের অনলাইন ভার্সন থেকে পাওয়া যাচ্ছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। তবে সবাই কমবেশি যেটি জানে তা হচ্ছে, চকবাজারের এ এলাকা বিখ্যাত হয়েছে নানা প্রসাধনী ও প্লাস্টিকপণ্য তৈরির কাঁচামাল বিক্রিবাট্টার কারণে। আমার জনৈক ম্যাজিস্ট্রেট বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছিলাম, তারা নাকি এ এলাকায় বেশ কয়েকবার রেইডও দিয়েছে নকল প্রসাধনী বিক্রির অভিযোগে। বাংলাদেশের নানা স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসতেন খুব কম দামে নকল প্রসাধনী কিনে নেয়ার জন্য। বিশেষ করে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডস্থল রাজ্জাক ভবনের মধ্যেও দাহ্য রাসায়নিক রাখার গুদাম ছিল বলে অনেক আগে থেকেই সবার জানা। দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ পেয়েছে, চুড়িহাট্টা মসজিদের উল্টো দিকের বাড়িটির বেজমেন্টসহ একতলা ও দোতলায় ছিল আসল-নকল সুগন্ধির বিশাল মজুদ। এ সুগন্ধির বোতলগুলো ভয়াবহ দাহ্য পদার্থে পরিপূর্ণ ছিল। ভয়াবহ ঘটনা হচ্ছে, আগুন লাগার প্রকৃত কারণ কেউ বলতে পারছে না। বিশেষত এ সুগন্ধির গুদাম থেকে আগুন গিয়ে পুরো রাস্তাকে গ্রাস করেছে, নাকি রাস্তার আগুন ছুটে গিয়ে ওই কারখানায় লেগেছে, এ নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও সংবাদকর্মীদের রয়েছে ভিন্ন মত। কেউ কেউ একটি প্রাইভেটকারের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে মনে করলেও ঘটনাস্থলে যে দুটি গাড়ি দেখা যায়, তার একটির সিলিন্ডার অক্ষত অবস্থায়ই রয়েছে। অন্যদিকে তার পাশে যে হাইব্রিড টয়োটা অ্যাকুয়া গাড়িটি দেখা যায়, তার ভেতরে কোনো সিলিন্ডার ছিল না।



নিমতলী, রানা প্লাজা কিংবা তাজরীন ফ্যাশনসের দুর্ঘটনায় পুরো জাতি আঁতকে উঠলেও শেষ পর্যন্ত এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়নি। সাময়িক শোকের ছায়া ধীরে ধীরে দীর্ঘায়িত হয়, তারপর সেই শোকের ছায়াকে গ্রাস করে নিচ্ছে আরো বড় কোনো শোক। শেষ পর্যন্ত এমন দুর্ঘটনা কিংবা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডে শব মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতম হচ্ছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, পুরান ঢাকার আরো অনেক এলাকায় এমনভাবে অপরিসর গলিপথের কোথাও রয়েছে শত শত রাসায়নিকের মজুদ। নানা স্থানে দাহ্য পদার্থের কারখানায় নিশ্চিন্তমনে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে শ্রম দিচ্ছেন শ্রমিকরা কিংবা এমন নানা বিপজ্জনক স্থানের লাগোয়া কোনো দেয়ালে ছোট্ট টং ঘরে ভাজা হচ্ছে শিঙ্গাড়া-সমুচা কিংবা বিক্রিবাট্টা চলছে গরম চা-কফির। ফলে সেখান থেকে কোনো একদিন আবারো এমন দুর্ঘটনার শঙ্কা যে রয়েছে, তা অনেকটা নিশ্চিত করে বলা যায়। চুড়িহাট্টার এ অগ্নিকাণ্ডে হতাহত মানুষগুলোর ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। মহান সৃষ্টিকর্তা তাদের শোকতপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধরার শক্তি দিন। পাশাপাশি এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে এখনই। কেউ কেউ বলতে পারেন, দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই, এর থেকে মুক্তির পথ নেই। সেক্ষেত্রে বলতে হয়, দুর্ঘটনা থেকে মুক্তির পথ না থাকলেও আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা গেলে কিছু না হোক, তার ক্ষয়ক্ষতি আর প্রাণহানি কমিয়ে আনা সম্ভব বহুলাংশে। তাই আমরা দুর্ঘটনা প্রতিরোধ না-ইবা করতে পারি, তবে এটা অন্তত নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাই, যাতে অবকাঠামোগত কোনো দুর্বলতা ও পরিকল্পনার অভাবে এমন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা আর না ঘটে। 

  • লেখক: ইতিহাসের শিক্ষক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। 
  • কার্টসি  — বণিকবার্তা। লিঙ্ক — https://bit.ly/2GZKame 

Monday, February 25, 2019

আজ ভয়াল পিলখানা হত্যার দশ বছর


আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি। পিলখানা হত্যার দশম বছর। বিদ্রোহের নামে ২০০৯ সালের এই দিনে রাজধানীর পিলখানায় সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস অফিসারকে হত্যা করা হয়। যাদের মধ্যে বিডিআর’র (বর্তমান বিজিবি) তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদও ছিলেন। উচ্ছৃঙ্খল কিছু জওয়ান তৎকালীন ডিজির স্ত্রীসহ সামরিক-বেসামরিক আরো ১৭ জন মানুষকে হত্যা করে। বিপথগামী জওয়ানরা সেদিন যে তাণ্ডব চালায় আজও তা মানুষের মনে রক্ত ঝরায়। মানুষ এখনো সেই তাণ্ডব ভুলতে পারেনি।

শুধু হত্যাই নয়, অফিসারদের স্ত্রী-সন্তান এবং বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনকে আটকে রেখে যে নির্মম নির্যাতন চালায় উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা; তা মনে উঠলে মানুষ এখনো শিউরে ওঠে। কর্মকর্তাদের বাড়ি-গাড়ি, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সম্পদ আগুনে পুড়ে ছাই করে দেয় উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা। লুটপাট করা হয় কর্মকর্তাদের সম্পদ। সেনা কর্মকর্তাদের শুধু হত্যা করেই ক্ষ্যন্ত হয়নি ঘাতকরা। আলামত নষ্ট করতে প্রথমে তাদের লাশগুলো পুড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। ব্যর্থ হয়ে লাশগুলো মাটিচাপা দেয়। ম্যানহোলের মধ্যে ফেলে দেয়। 


যা ঘটেছিল সেদিন 


২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকর্তা ও জওয়ানরা বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সপ্তাহ উপলক্ষে এসেছিলেন পিলখানায়। আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিলখানায় বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে অংশ নেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত সদস্যদের মাঝে ভালো কাজের জন্য পদক প্রদানের কথা ছিল। দরবার হলের সেই অনুষ্ঠানে প্রায় আড়াই হাজার বিডিআর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত শেষে বাংলা অনুবাদ যখন শেষ হয় ঠিক তখনই সিপাহি মইন দরবার হলের রান্নাঘরের পাশ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মেজর জেনারেল শাকিলের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। অতিরিক্ত ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারিসহ অন্য কর্মকর্তারা মইনকে আটক করেন। মইনকে আটকের সাথে সাথে ‘জাগো’ বলে বিডিআর জওয়ানরা দরবার হল ত্যাগ শুরু করে। ডিজি তখন তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের দাবি-দাওয়া শুনবেন তিনি। কিন্তু মুহূর্তেই দরবার হল শূন্য হয়ে যায়। একপর্যায়ে জওয়ানদের সবাই যখন দরবার হল ত্যাগ করে তখন বাইরে থেকে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু হয়। কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। জওয়ানরা কর্মকর্তাদের যাকে যেভাবে পেয়েছে তাকে সেভাবে হত্যা করেছে। অনেকে ভেতরেই কোথাও গোপন স্থানে অবস্থান নেন। সেসব স্থান থেকে তাদেরকে খুঁজে খুঁেজ বের করে হত্যা করা হয়। বিডিআর ঢাকা সেক্টরের তৎকালীন কমান্ডার কর্নেল মজিবুল হককে ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের চারতলার এক কক্ষে হত্যা করে তার লাশ ফেলে দেয় নিচে। এভাবে একে একে হত্যা করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের। লুটপাট অগ্নিসংযোগসহ নানা অপকর্মে মেতে ওঠে বিডিআর জওয়ানরা। 




এসবই করেছে অস্ত্রাগার থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে। শুরুতেই তারা কোত ভেঙে অস্ত্র এবং ম্যাগাজিন ভেঙে গুলি তাদের হেফাজতে নিয়ে নেয়। ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। আতঙ্কে আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন।

তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনসহ অনেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সামরিক-বেসমারিক বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তারা ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের সামনে তারা ছিলেন পুরোপুরি অসহায়। বিদ্রোহীদের তাণ্ডবে প্রাণের ভয়ে পিলখানার আশপাশেও কেউ যেতে পারেননি। বিকেলে দূর থেকে হ্যান্ড মাইকে বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেন তৎকালীন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। মাইকে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করবেন। তিনি সবাইকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বলেন। সন্ধ্যার দিকে ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে বিডিআরের ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক শেষে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা ও তাদের দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস নিয়ে তারা পিলখানায় ফিরে যান। এর পরও তারা অস্ত্র সমর্পণ ও বন্দীদের মুক্তি দেয়নি। মধ্যরাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুনের সাথে বৈঠক করে বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ শুরু করে। কিন্তু পর দিনও থেমে থেমে গুলির শব্দ আসতে থাকে। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, পরিস্থিতি শান্ত, সবাই অস্ত্র সমর্পণ করেছে। 

এ দিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় লাশ উদ্ধার। একের পর এক উদ্ধার হতে থাকে সেনা কর্মকর্তাদের লাশ। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত উদ্ধার হয় ১৫টি লাশ। এভাবে উদ্ধার হয় ৫৭ সেনাকর্মকর্তা ও সামরিক-বেসামরিকসহ মোট ৭৪ জনের লাশ।



বিচারকাজ


নৃশংস এই ঘটনার পর বিডিআর আইনে মোট ৫৭টি মামলা দায়ের হয়। মামলায় অভিযুক্ত অনেকেই ইতোমধ্যে সাজাভোগ করে বেরিয়ে গেছে। ঘটনার ব্যাপারে নিউ মার্কেট থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দু’টি মামলা হয়। হত্যা মামলায় নি¤œ আদালতে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ছাড়াও আরো ৪২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। আসামিরা এ ব্যাপারে আপিল করেন উচ্চ আদালতে। পরে গত বছরের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখা হয়। আটজনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেয়া হয়। নি¤œ আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময়ে কারাগারে থাকাবস্থায় দু’জনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ জন আসামি। নি¤œ আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ যে আপিল করেছিল, তার মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

এ ছাড়া সাত বছর করে চারজনকে কারাদণ্ড এবং ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রাখা হয়। এ মামলার সাড়ে ৮০০ আসামির মধ্যে আরো ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন জজ আদালত। এর মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, আটজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড, চারজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ২৯ জনকে খালাস দেন হাইকোর্ট।
  • নয়াদিগন্ত/ ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯। 

Sunday, February 24, 2019

জনমত, গুজব ও নির্বাচন

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা




সাধারণ মানুষের মুখে মুখে যেসব কথা প্রচলিত থাকে, তা-ই জনশ্রুতি। তবে সব জনশ্রুতিই সত্য হয় না, বরং ক্ষেত্রবিশেষে গুজবও জনশ্রুতি পায়। অনেক ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় জনশ্রুতি বা গুজবের। জনশ্রুতিতে যে বাস্তবতা থাকে না তা নয়, বরং যে সত্য জনশ্রুতি পায় তা অনেকটা অপ্রতিরোধ্য। অসত্য জনশ্রুতি বা গুজব কখনো স্থায়িত্ব পায় না। কিন্তু তার সাময়িক প্রভাব ভোগায় মানুষকে। এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্রেও এর প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু যখন সত্য প্রকাশিত হয়, তখন তা শুধরে নেয়ার মতো সময় থাকে না। বরং সংশ্লিষ্টদের এর পরিণাম ভোগ করতে হয়।

ইদানীং দেশে গুজব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কান দেয়ার বিষয়ে প্রাজ্ঞজনেরা নিষেধ করলেও গুজবকে আমলি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এর বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করা হয়েছে সম্প্রতি। গুজব সৃষ্টিকারীদের দণ্ডবিধির আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণ, মামলা, গ্রেফতার ও রিমান্ডের ঘটনাও ঘটেছে। গুজব নামের উৎপাত সৃষ্টির জন্য আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বলা যায়, গুজব সৃষ্টিকারীরা এখন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রতিরোধের সম্মুখীন। কিন্তু বিপত্তিটা সৃষ্টি হয়েছে গুজবের সংজ্ঞা নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে মহল বিশেষ সুবিধাজনক ব্যাখ্যা, আইন ও দণ্ডবিধির অপপ্রয়োগ করছে কি না সে প্রশ্ন উঠেছে। কথিত গুজব আসলে গুজব না বাস্তবতা এটা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে নানা বিতর্ক।

জনশ্রুতি বা গুজব অতীতে ছিল, আছে এবং থাকবে। তবে এর গতি-প্রকৃতিতে পরিবর্তন এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে। জানা যায়, ১৭৫০ সালে প্যারিসের রাজপথ থেকে শিশুদের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছিল। তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে, রাজা লুই (পঞ্চদশ) কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই রাজার রোগ মুক্তির জন্য শিশুদের অপহরণ করা হচ্ছে। জনশ্রুতি ছিল, শিশুদের রক্তে গোসল করাই হচ্ছে কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তির অদ্বিতীয় উপায়। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা ছিল ভিন্ন। রাস্তায় অনাথ শিশুদের পাওয়া গেলে তাদের রাজকীয় ব্যবস্থায় সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন রাজা। এই মহতী কাজকেও গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে বিতর্কিত করা হয়েছিল।

তবে রাজার বিরুদ্ধে এমন গুজব ছড়ানোর পরও গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কারণ, গুজব সৃষ্টি নিন্দনীয় হলেও কোনো কালেই এটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়নি। তবে আমাদের দেশে গুজবকে শুধু শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছে না, বরং ‘সত্য ঘটনাকে গুজব’ তকমা লাগিয়ে প্রতিপক্ষদের হেনস্তার অভিযোগও বেশ জোরালো।

সম্প্রতি আমাদের দেশে বহুল আলোচিত-সমালোচিত একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। বিরোধী দলগুলো অনেক সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও এতে অংশগ্রহণ করায় নির্বাচন অর্থবহ হওয়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সে সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে প্রশ্নাতীত হয়নি, বরং বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আগের রাতে সরকারদলীয় প্রার্থীর অনুকূলে ব্যালট বাক্স ভর্তির অভিযোগও পাওয়া গেছে। এমন অভিযোগে বিরোধী দলগুলো এক হলেও ক্ষমতাসীনেরা তা অস্বীকার করছেন এবং এসব অভিযোগকে ‘গুজব’ বলেই নিজেদের দায়মুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন।

নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে সরকারের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ক্ষমতাসীনেরাও অন্যদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তাই নির্বাচন নামের প্রতিযোগিতার ফলাফল ভালো করার জন্য সবাই সব চেষ্টাই করাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অনিয়মগুলোর দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। যদি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দায়িত্ব শুধুই সরকারের হতো, তাহলে নির্বাচনের কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হতো না। তাই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ‘আমড়া কাঠের ঢেঁকি’ মার্কা নির্বাচন কমিশনকে দায়মুক্তি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, সংবিধানে নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য তাদের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কমিশন সে ক্ষমতা প্রয়োগের মতো সাহস ও যোগ্যতা দেখাতে পারেনি।

প্রতিষ্ঠানটি অতীত বৃত্তেই আটকা পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে যে নির্বাচনকে ‘নির্বাচন’ বলেই স্বীকৃতি দেয়া হয়নি, বর্তমান কমিশন সেটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে দাবি করে আসছে। দেশে যে প্রকৃত গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূলবোধ্যের চর্চা হচ্ছে না, তা এখন তেমন বিতর্কিত বিষয় নয়। এবারের নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্রের নিরপেক্ষতাহীনতা, দুর্বলতা, নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বহীনতা ও দলীয় মনোবৃত্তি পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকেই বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।

বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা বেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অভিযোগ আন্তর্জাতিক বলয়েও স্থান করে নিয়েছে। অভিযোগ আছে, বিগত রকীব কমিশনই আমাদের দেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র ও মূল্যবোধকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। 

এরপর হুদা কমিশন গঠিত হলে মনে করা হয়েছিল, হয়তো মন্দের ভালো কিছু একটা হবে। কিন্তু সে আশায়ও গুড়ে বালি পড়তে সময় লাগেনি। হুদা কমিশন তাদের পূর্বসূরিদের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে বেশ করিৎকর্মা বলেই মনে হয়েছে।

৫ জানুয়ারি নির্বাচন করার পর কমিশন যেভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিল, এবার সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। নির্বাচন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো মহলেই গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও কমিশন সে নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য বলেই দাবি করছে। তবে এর বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে পশ্চিমা বিশ্ব। বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা, অব্যাহত সন্ত্রাস ও ভোট কারচুপির সুষ্ঠু তদন্ত এবং এর সুরাহার তাগাদা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসঙ্ঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইইউ।

এ অবস্থায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় মার্কিন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি। প্রভাবশালী গণমাধ্যম রয়টার্স তাদের এক প্রতিবেদনে ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনে কারচুপি ও সংহিসতার তথ্য তুলে ধরেছে। বাংলাদেশে কোনো সঠিক নির্বাচন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ইতিবাচক দিক বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর সংলাপে বসার গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি। গুতেরেস বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন সঠিক হয়নি, এ বিষয়টা এখন স্পষ্ট’। এটা নির্বাচন কমিশনের দাবিকে অসার ও হাস্যকর প্রমাণ করেছে।

সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই ঢাকা সিটি উত্তরের উপ-নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ডামাডোল শুরু হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগে এবং নির্বাচন কমিশনের উপর্যুপরি ব্যর্থতায় বিরোধী দলগুলো এসব নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন বর্জনের কারণ অনুসন্ধান এবং তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সিটি করপোরেশন ও উপজেলা নির্বাচন এবারো একতরফা হতে যাচ্ছে। এটা একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য মোটেই গ্রহণীয় নয়।

সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একটি বক্তব্য নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোও অবাধ ও নিরপেক্ষ করা হবে। যে নির্বাচন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো মহলই গ্রহণযোগ্য মনে করছে না, সে নির্বাচনী মানদণ্ডে আবার নির্বাচন করার ঘোষণা কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে জনমনে নেতিবাচক ধারণা আরো জোরালো করে দিচ্ছে।

কমিশন সম্পর্কে শ্লেষাত্মক মন্তব্য এখন সবার মুখে মুখে। শুরুর দিকে নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে একতরফা সরকারকে দায়ী করা হলেও এখন অভিযোগের তীরটা নির্বাচন কমিশনের দিকে। কেউ কেউ বর্তমান কমিশনকে ‘প্রসহন কমিশন’ আখ্যা দিতে শুরু করেছেন। তাদের এ দাবি আরো জোরালো ভিত্তি পাচ্ছে সিইসির বক্তব্যে। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রেকর্ডে রাখার মতো সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে হয়েছে। এটা আমি দাবি করতে পারি প্রকাশ্যে’।

নির্বাচন নিয়ে জনমত নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। জনমনে এ ধারণা বদ্ধমূল যে, নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। পক্ষান্তরে কমিশন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের দাবি এবং জনমতের ৯৮ শতাংশকেই গুজব হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে। তাই নির্বাচনে অনিয়মবিষয়ক অভিযোগগুলো গুজব, না নির্বাচন কমিশনের দাবিই গুজব, তা এখন বিচার্য। ইতিহাসের মূল্যায়ন বড়ই নির্মম!
  • নয়াদিগন্ত / ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯। 

Thursday, February 21, 2019

‘যারা চলে গেলেন, ক্ষমা করবেন’


তানজিনা আকতারী মৌমী

“মধ্যরাতে এসেছে আজ একুশে ফেব্রুয়ারি
এদিকে যে বেড়েই চলেছে পোড়া লাশের সারি! 
হায়রে আমার দেশ,
অপরিকল্পিতভাবে সেজেছো তুমি বেশ!”



মৃত্যু, কান্না, আহাজারি, পোড়া গন্ধ, ধোঁয়া, আর্তনাদ, আকুতি, চিৎকার সব মিলেমিশে একাকার হয়ে আছড়ে পড়েছে চকবাজারের চুড়িহাট্টায়। কিন্তু কীভাবে ঘটেছে এমন অঘটন?

স্থানীয় জনসাধারণ জানান- যানজটে আটকে থাকা একটি পিকআপ-ভ্যানে প্রথমে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন ধরে যায়। আগুন ধরে পাশের একটি সিএনজি অটোরিকশায়, মোটরসাইকেলে। এরপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের চুড়িহাট্টা এলাকার পুরো চৌরাস্তায়। একে একে বিস্ফোরিত হতে থাকে গাড়ির সিলিন্ডার। পাশের দুটি রেস্টুরেন্টের গ্যাস সিলিন্ডারগুলো বিস্ফোরিত হয়। বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফর্মারও বাদ যায় না। যারা ছিলেন গাড়িতে, মোটরসাইকেলে, অটোরিকশা, রিক্সা বা অন্য কোন বাহনে অথবা বাড়ি ফিরছিলেন পায়ে হেঁটে, আশেপাশের দোকানে, হোটেলে কেউ রক্ষা পাননি। আগুনের নির্মম হাত ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। আগুন ছড়িয়ে গেল ভবনে, দোকানে, নেলপালিশের কেমিক্যালের গোডাউন থেকে শুরু করে পারফিউমের কেমিক্যালে, লাইটার রিফিলের গ্যাসের ছোট ছোট জারে। তারপর আর সব আগুন লাগার ঘটনায় যা দেখা যায়, তারই পুনরাবৃত্তি। দিনের আলো ফুটলে দেখা গেল কয়লা, মানুষের...। 

৯ বছর আগের নিমতলীর পোড়া ছাই বসন্তের বাতাসে উড়ে গিয়ে গতরাতে বসেছিল চুড়িহাট্টায়। নিমতলীর ঘটনা আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়। সে সময় পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকা থেকে এসব বিপজ্জনক কেমিক্যাল গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নেয়ার জোরালো দাবি উঠেছিল এবং সরকারও এসব কারখানা ২ মাসের মধ্যে সরিয়ে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল। কিন্তু, বাস্তবতা হলো এত বছরেও সরকারের সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। প্রতিবছরই এখানে কোন না কোন কেমিক্যাল গুদাম বা কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটছে। এই এলাকার বাড়িগুলোতেও মজুদ রাখা হয় উচ্চমাত্রার দাহ্য বিস্ফোরক রাসায়নিক। ন্যূনতম নিরাপত্তা সতর্কতা বা অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থাপনা না থাকায় এই এলাকার বাড়ি একেকটা বিস্ফোরকের গুদামের মতই মহাবিপজ্জনক।

নিমতলী ট্র্যাজেডি, তাজরিন গার্মেন্টস ট্র্যাজেডি, রানাপ্লাজা ধ্বস ট্র্যাজেডি, গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডসহ প্রায় প্রতিটা ঘটনার পরই ফায়ার সার্ভিসের দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতার খতিয়ান বেরিয়ে এসেছে। চোখের সামনেই শত শত মানুষের জীবন ও সর্বস্ব হারানোর আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়েছে। পরিবেশের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের উৎস এসব গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নিয়ে আধুনিক নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত স্থানে স্থানান্তর করার জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। দেশবাসী আরও তাজরিন, নিমতলী, চুড়িহাট্টার ট্র্যাজেডি দেখতে সত্যিই প্রস্তুত নয়। তবু দেখতে হচ্ছে। কিন্তু, আমরাই বা কতটা নিরাপদ? প্রতিনিয়ত যে গাড়িটাতে চড়ছি, সেটার সিলিন্ডার কতটা নিরাপদ আমাদের জন্য? গ্যাস সিলিন্ডারের এই শহর, কতটা ভয়ঙ্কর মরণফাঁদ নিয়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য? যে বাসায় বাস করছি, সেখানে কতটুকু আছে আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা? যেখানে কেনাকাটায় যাচ্ছি, ছেলেমেয়ের শিক্ষাগ্রহণের স্থানে কি আছে প্রাণ বাঁচানোর, আগুন থেকে রক্ষা পাবার উপায়?

বসবাসের অযোগ্য শহরের উন্নয়নের ধারা দেখতে দেখতে আমরা আজ শুধু অভ্যস্তই নই, ক্লান্তও বটে। যে উন্নয়নের সাথে নিরাপত্তা, অগ্নি নির্বাপক ট্রেনিং বা ক্যাম্পেইন, অসুস্থ ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা, পর্যাপ্ত ওষুধ, ড্রেসিং ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, এ্যাম্বুলেন্স ও আগুন নেভানোর যানবাহন দ্রুত চলাচলের জরুরি পথ না থাকে, যানজট ও সরু পথের কারণে যাতায়াতের পথেই মানুষের পরিচয় হয় “লাশ”, সেই উন্নয়ন আমাদের জন্য কতটুকুই বা কাজের?

প্রায়ই কতোই না বস্তি উচ্ছেদ হয়, কিন্তু, কেন হয় না পুরানা ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদ? কেন দেখা হয় না গাড়ির ও রান্নায় ব্যবহৃত সিলিন্ডারের মান ও মেয়াদ? আমাদের ক্লান্তির অবসান ঘটবে তখন, যখন আমরা আসলেই এক নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাব। আসলেই কোন একদিন কি পাবো সেই কাঙ্ক্ষিত আশ্রয়টুকু?

যারা চলে গেলেন, তারা ক্ষমা করবেন আমাদের। আর কত মানুষ পুড়লে বিবেক জাগবে আমাদের? প্রশ্নটা আবারও রেখে গেলাম...।

  • গণমাধ্যম কর্মী ও সংবাদ পাঠক, বাংলাদেশ বেতার