Search

Saturday, September 21, 2019

জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির চোখে বাংলাদেশ






সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটিতে (ক্যাট) বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় গত ৩০ ও ৩১ জুলাই। সেখানে গুম, আটক, হেফাজতে নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগ তোলে কমিটি এবং এর জবাব দেয় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। এরপর ৯ আগস্ট নিজেদের পর্যবেক্ষণ ও কিছু বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং সঙ্গে বিভিন্ন সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কমিটি। সেই প্রতিবেদনের অনুবাদ। 


বাংলাদেশের প্রাথমিক প্রতিবেদন নিয়ে চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ, কমিটির ৬৭তম অধিবেশনে অনুমোদিত  ——     

সূচনা  ——     

বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী সনদে স্বাক্ষর করেছে। সনদের ১৯ আর্টিকেলের প্রথম প্যারাগ্রাফ অনুযায়ী, দেশটি ১৯৯৯ সালের ৪ নভেম্বরের মধ্যে তার প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করতে নীতিগতভাবে বাধ্য ছিল। ২০০০-১৮ সাল পর্যন্ত যেসব রাষ্ট্রপক্ষ তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়নি, সেসব রাষ্ট্রপক্ষের তালিকায় ছিল বাংলাদেশ; যা কমিটির বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপক্ষ ও সাধারণ পরিষদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর কমিটি এক চিঠিতে রাষ্ট্রপক্ষকে তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয় এবং প্রতিবেদন ছাড়াই কমিটি তার পর্যালোচনার কাজ এগিয়ে নিতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ বাংলাদেশ কমিটিকে জানায়, দেশটি তার প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করবে ও পাঠাবে। ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ কমিটির চেয়ারপারসন প্রাথমিক প্রতিবেদন বিবেচনা করার তারিখের বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। দেশটির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ৩০ ও ৩১ জুলাই গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। দেশটির প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ২৩ জুলাই ২০১৯ গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ তার প্রাথমিক প্রতিবেদন ২০ বছর পর জমা ও প্রতিবেদনটি বিবেচনা করার মাত্র এক সপ্তাহ আগে তা গৃহীত হওয়ায় কমিটি দুঃখ প্রকাশ করে। তবে দেশটির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা এবং কমিটির সভায় বিভিন্ন জিজ্ঞাসার মৌখিক ও লিখিত জবাব দেওয়াকে স্বাগত জানায় কমিটি।

ইতিবাচক বিষয়সমূহ  ——    

আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক নিম্নলিখিত সনদ ও প্রটোকলগুলো রাষ্ট্রপক্ষের স্বাক্ষর এবং অনুমোদন করার বিষয়টিকে কমিটি স্বাগত জানায়:

ক. ১৯৯৮ সালে, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ;

খ. ১৯৯৮ সালে, গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও সাজাবিষয়ক সনদ;

গ. ১৯৯৮ সালে, বিবাহের ক্ষেত্রে অনুমতি, বিবাহের ন্যূনতম বয়স ও বিবাহ নিবন্ধনবিষয়ক ১৯৬২ সালের সনদ;

ঘ. ২০০০ সালে, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ;

ঙ. ২০০০ সালে, নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য অবসান সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল;

চ. ২০০০ সালে, শিশুদের বিক্রির ওপর শিশুর অধিকার, শিশু পতিতাবৃত্তি ও শিশু পর্নোগ্রাফি বিষয়ক সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল;

ছ. ২০০০ সালে, সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের যুক্ত করা নিয়ে শিশু অধিকারবিষয়ক সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল;

জ. ২০০৭ সালে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারবিষয়ক সনদ;

ঝ. ২০০৮ সালে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারবিষয়ক সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল;

ঞ. ২০১০ সালে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতবিষয়ক রোম বিধি;

ট. ২০১১ সালে, সব অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার সুরক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ;

নিম্নলিখিত আইনগুলো অনুমোদন করা ছাড়াও সনদের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রগুলোতে নিজস্ব আইন পর্যালোচনায় রাষ্ট্রপক্ষের উদ্যোগকে স্বাগত জানায় কমিটি: 

ক. ২০০০ সালের নারী ও শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইন;

খ. ২০০০ সালের লিগ্যাল এইড সার্ভিস অ্যাক্ট (আইনি সহায়তা সেবা আইন);

গ. ২০১০ সালের পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন;

ঘ. ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন;

ঙ. ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (প্রতিরোধ) আইন;

চ. ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন;

ছ. ২০১৩ সালের শিশুদের ওপর যেকোনো ধরনের শারীরিক নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণবিষয়ক শিশু আইনে সংশোধনী;

জ. ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইন।

সনদ কার্যকর করতে রাষ্ট্রপক্ষের নীতিমালা, কর্মসূচি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপে সংশোধনীর উদ্যোগ স্বাগত জানায় কমিটি; যার মধ্যে রয়েছে:


ক. ২০০৮ সালে নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন; নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ করা বহুপক্ষীয় কর্মসূচি (মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন/ এমএসপিভিএডব্লিউ); এবং ৫৯১৬ নম্বর রিট আবেদনে কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সুরক্ষা পদক্ষেপসংবলিত নির্দেশনার উল্লেখ;

খ. ২০০৯ সালে, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠন;

গ. ২০১০ সালে, ৫৬৮৪ নম্বর রিট আবেদনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব ধরনের শারীরিক শাস্তি বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা;

ঘ. ২০১৬ সালে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার, আটক, রিমান্ড ও গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ অনুসরণ বিষয়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া ১৫টি নির্দেশনা; এবং গ্রেপ্তার, আটক, তদন্ত ও অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতি আচরণ বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা;

ঙ. প্রধান উদ্বেগের বিষয়সমূহ ও সুপারিশমালা

১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী সনদে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। পরের বছর ৪ নভেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল। প্রায় ২০ বছর পর সেই প্রতিবেদন বাংলাদেশ উপস্থাপন করেছে গত জুলাই মাসে। এরপর এই প্রতিবেদন ধরে এবং বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের উপস্থিতিতে আলোচনা হয়েছে জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটিতে। অনেক বিষয়ে কমিটি সন্তুষ্ট হতে না পারলেও বাংলাদেশ যে শেষ পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে, সেটাকেই আপতত অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করে একে স্বাগত জানানো হয়েছে।

নির্যাতনের ব্যাপক ব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ  ——    

নির্যাতন বা নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর শাস্তি বা আচরণ থেকে যে কাউকে সুরক্ষা দিতে রাষ্ট্রপক্ষের সাংবিধানিক ধারা; এবং নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ রাষ্ট্রপক্ষের অনুমোদন করাকে স্বাগত জানায় কমিটি। তবে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি বা ঘুষ আদায়ের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক ও নিয়মিত নির্যাতন এবং অসদাচরণের অভিযোগের যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে উদ্বিগ্ন কমিটি। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্যে এমন ১৭টি ঘটনার কথা জানা গেছে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মামলা করা হয়েছে। কমিটি এ নিয়েও উদ্বিগ্ন যে এসব মামলার বিষয়ে আরও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি এবং প্রতিনিধিদলও এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। আইনটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এ আইনে দায়েরকৃত মামলাগুলোর একটিরও বিচার সম্পন্ন না হওয়ার খবরে উদ্বিগ্ন কমিটি। উপরন্তু, কমিটি এ খবর পেয়েছে, এ আইনের অধীন কিছু কিছু বাহিনীকে দায়মুক্তির সুরক্ষা দিতে বা আইনে নিষিদ্ধ আচরণের ব্যাপকতা সীমাবদ্ধ করতে আইনটি সংশোধন বা বাতিলের জন্য পুলিশ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষ বারবার অনুরোধ জানিয়েছে। এ আইনে কোনো সংশোধনী আনা হবে না বলে প্রতিনিধিদল যে বিবৃতি দিয়েছে সেটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অপরাধমূলক কাজে সরকারের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি এবং পুলিশ সপ্তাহ ২০১৯-এ প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য—কোনো নিরপরাধ মানুষকে যেন নির্যাতন ও হয়রানির শিকার করা না হয়—এ সবই কমিটি সাধুবাদ জানায়। কমিটি ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ রকম দায়মুক্তির অনুরোধ করছে এবং তাদের কাজের ক্ষেত্রে নির্যাতন ও অসদাচরণের শামিল হয় এমন ঘটনাকে প্রয়োজনীয় ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা অব্যাহত রেখেছে। উপরন্তু, এ-ও গভীর উদ্বেগের বিষয়, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ হচ্ছে না। রাষ্ট্রপক্ষকে কমিটি মনে করিয়ে দিতে চায়, সনদের আর্টিকেল ২-এর ধারা ২-এ বলা আছে, কোনো ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি যেমন যুদ্ধাবস্থা বা যুদ্ধের হুমকি, অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা বা অন্য যেকোনো জরুরি অবস্থাকে নির্যাতনের দোহাই হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না (আর্টিকেল ২, ৪, ১৫ ও ১৬)।

রাষ্ট্রপক্ষের যা করা উচিত (নির্যাতনবিরোধী সুপারিশ)  ——    

ক. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্যাতন ও অসদাচরণের বিষয়টিকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিয়ে কোনো অবস্থাতেই বা কারও বিরুদ্ধে তা সহ্য করা হবে না বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।

খ. এটি সরকারকে প্রকাশ্যে নিশ্চিত করতে হবে, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের প্রয়োগ রাষ্ট্রের কোনো কর্মীর স্বার্থে সীমিত করার কোনো রকম ইচ্ছে তাদের নেই। এই আইনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে যারা তালিকাভুক্ত রয়েছে, তার বাইরেও রাষ্ট্রের অন্য যেকোনো কর্মকর্তার ক্ষেত্রে বিধানটি কার্যকর করতে ও নির্যাতনের জন্য তার ব্যক্তিগতভাবে অপরাধের দায় বহন নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

গ. সরকারের যে কর্মকর্তারা নির্যাতন ও অসদাচরণ করবেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা এবং কৃত অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায় বা কমান্ড রেসপনসিবিলিটিও নিশ্চিত করতে হবে।

ঘ. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ফরেনসিক এবং বলপ্রয়োগহীন তদন্ত পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান ও এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সন্দেহভাজন অপরাধীর কাছ থেকে জোরপূর্বক অপরাধের স্বীকারোক্তি আদায়ে নির্যাতন ও অসদাচরণ অগ্রহণযোগ্য —আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সদস্যকে এ ব্যাপারে অবগত করার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

ঙ. নির্যাতন ও অসদাচরণের মাধ্যমে সন্দেহভাজন অপরাধীর কাছ থেকে আদায় করা স্বীকারোক্তি অপরাধের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হবে না, এটি নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া।

চ. নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে পরিসংখ্যানগত তথ্য পদ্ধতিগত উপায়ে সংগ্রহ করতে হবে। এতে অভিযোগের সংখ্যা, তদন্ত, প্রসিকিউশন, বিচার এবং নির্যাতন ও অসদাচরণের ঘটনায় কতজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, নির্যাতন ও অসদাচরণের জন্য দায়ী কর্মকর্তার শাস্তি এবং প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ, বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের তথ্য ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

নির্যাতনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অপর্যাপ্ত তদন্ত  ——   

কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অসদাচরণের অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তে রাষ্ট্রপক্ষের ব্যবস্থা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অর্থপূর্ণভাবে জবাবদিহি করতে পারছে না বলে যে তথ্য পাওয়া গেছে, সে ব্যাপারে কমিটি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ভুক্তভোগী বা পরিবারের সদস্যদের আনা নির্যাতন বা গুমের অভিযোগ পুলিশ কর্মকর্তারা প্রায়ই নথিভুক্ত করতে চান না বলে যে খবর পাওয়া যায়, তা নিয়ে কমিটি উদ্বিগ্ন। নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ দায়ের করতে চাইলে বা নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ করলে, প্রায় ক্ষেত্রেই তাঁদের হয়রানি, হুমকি ও প্রতিশোধপরায়ণতার শিকার হতে হয় বলে যে খবর পাওয়া যায়, তা নিয়েও কমিটি উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল বলেছে যে তারা ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের কথা বিবেচনা করছে এবং অংশীজনদের সঙ্গে এ আলোচনা করছে, কমিটি এই বিষয়টিকে সাধুবাদ জানায়। তবে উদ্বেগের সঙ্গে এটাও বলতে চায় যে এ বিষয়ে আইন কমিশনের একটি খসড়া প্রস্তাব অনেক বছর ধরেই বিবেচনাধীন রয়েছে, কিন্তু তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

কমিটি উদ্বেগের সঙ্গে বলতে চায় যে কর্মকর্তাদের নির্যাতনের ঘটনা বা নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে রাষ্ট্রে কোনো স্বাধীন কর্তৃপক্ষ নেই। কাজেই সেই সব কর্মকর্তাই এসব অভিযোগ তদন্ত করেন, যাঁরা অভিযুক্ত কর্মকর্তার দপ্তরে কর্মরত কিংবা একই শ্রেণির দপ্তরে কর্মরত। ফলে এতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। কমিটি দুঃখের সঙ্গে বলতে চায়, ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকার বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে যে ৭৭টি নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছে, সেগুলোর তদন্তের ফলাফলের ব্যাপারে প্রতিনিধিদল কোনো তথ্য দেয়নি। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের ঘটনা, যে বিষয়টি কমিটি সরাসরি উত্থাপন করেছিল। কমিটি দুঃখের সঙ্গে বলতে চায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসকেরা যখন বললেন যে শহিদুল আলম বড় কোনো আঘাত পাননি, তখন তাঁকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়, যদিও তিনি দাবি করেছিলেন যে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে এবং তাঁর সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে।

প্রতিনিধিদল জানিয়েছে যে ২০১৭ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের বেশ কয়েকজনকে ‘নানা অপরাধে’ অভ্যন্তরীণ নজরদারি কর্তৃপক্ষ শৃঙ্খলা ভঙ্গের শাস্তি দিয়েছে। কমিটি এই বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়ে উদ্বেগের সঙ্গে বলতে চায় যে এসব অভিযোগের সর্বোচ্চ সাজা চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া ও পদাবনতি, যা নির্যাতন ও অসদাচরণের মতো গুরুতর অপরাধের সাজা হিসেবে যথোপযুক্ত নয়।

২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু প্রতিরোধ আইনে অভিযোগকারীকে বিচারিক তদন্তের জন্য সরাসরি আদালতে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা কমিটি সাধুবাদ জানায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ আইনে বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করে না এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তদন্ত কর্মকর্তাকে তা করতে চাপ প্রয়োগ করেন না বলে যে খবর পাওয়া যায়, তা নিয়ে কমিটি উদ্বিগ্ন। কমিটি দুঃখের সঙ্গে বলতে চায় যে নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ থাকলেও তা শেষ হয়নি (পারভেজের মামলা, বশির উদ্দিনের মামলা) কিংবা বছরের পর বছর ধরে বিচার ঝুলে আছে (ইমতিয়াজ হোসেনের মামলা), এমন যে কয়টি মামলার বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে প্রতিনিধিদল কোনো তথ্য দেয়নি। (আর্টিকেল ২, ৪, ১০, ১২, ১৩, ১৫ ও ১৬)।

সব ধরনের নির্যাতন ও অসদাচরণের অভিযোগের দ্রুত, নিরপেক্ষ, কার্যকর ফৌজদারি তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রপক্ষকে। এ ক্ষেত্রে কমিটি রাষ্ট্রপক্ষকে সুপারিশ করছে:


ক. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অসদাচরণের অভিযোগ তদন্তে একটি তদন্ত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর পদস্থ কর্মকর্তাদের প্রভাবমুক্ত ও স্বাধীন থেকে কাজ করবে;

খ. দ্রুততার সঙ্গে ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে;

গ. নিশ্চিত করতে হবে যে একটি তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃপক্ষ নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে উল্লেখিত সময়সীমার মধ্যে তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম শেষ করার বিষয়টি দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করবে;

ঘ. চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে এবং নির্যাতনের অভিযোগে নির্দেশিত ডাক্তারি পরীক্ষা নির্যাতন ও অন্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মানহানিকর আচরণ বা সাজার কার্যকর তদন্ত ও নথিবদ্ধকরণের নির্দেশিকা (ইস্তাম্বুল প্রটোকল) অনুসারে সম্পাদনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

অস্বীকৃত বা অঘোষিত আটক ও গুম  ——    

রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ব্যক্তির স্বাধীনতা নির্বিচারে হরণ, পরে তাঁদের অনেককে হত্যার এবং তাঁদের অবস্থান বা ভাগ্যে কী ঘটেছে তা প্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার যে অসংখ্য, সংগত খবর পাওয়া যায়, তা নিয়ে কমিটি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ভুক্তভোগীকে হত্যা করা হোক বা তিনি পরবর্তী সময়ে ফিরে আসুন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে এ ধরনের আচরণকে গুম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। কমিটি এখানে উল্লেখ করছে যে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ‘বাংলাদেশে প্রায়ই গুমের ঘটনা ঘটে’ বলে যে অভিযোগ, তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং একটি ক্ষেত্রে তারা স্বীকার করেছে যে নারায়ণগঞ্জে কয়েকজনকে গুমের ঘটনায় কর্মকর্তাদের ফৌজদারি বিচারের আওতায় আনা হয়েছে, যে ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তাকে ‘অপহরণ’ ও ‘হত্যার’ অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কমিটি আরও উল্লেখ করছে যে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল বলেছে, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উত্থাপিত গুমের অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন, কেননা পরে দেখা গেছে তাঁরা ফিরে এসেছেন। যেমনটা ঘটেছে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর ক্ষেত্রে।

কমিটি উল্লেখ করছে যে হুম্মাম কাদের চৌধুরীসহ মীর আহমেদ বিন কাশেম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আল আজমির বিষয়গুলো ২০১৭ সালে জোরপূর্বক ও অনিচ্ছাকৃত গুমবিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ সামনে নিয়ে আসে। তাঁদের বাবাদের বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাজা হওয়ার পর তাঁরা তাঁদের মুক্তির পক্ষে প্রচারণা চালান। এরপর অজ্ঞাত কর্তৃপক্ষ তাঁদের আটক করে। ওয়ার্কিং গ্রুপ সে সময় উদ্বেগ প্রকাশ করে আরও বলেছিল, বাংলাদেশে গুমের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। কমিটি দুঃখের সঙ্গে বলছে, এসব ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ দীর্ঘসময় ধরে আটক রেখেও স্বীকার করেনি বলে যে অভিযোগ, তা তদন্ত করা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে রাষ্ট্র কোনো তথ্য দেয়নি। এমনকি হেফাজতে একরামুল হকের মৃত্যু ও পুলিশ হেফাজত থেকে শেখ মোখলেসুর রহমানের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাসহ অন্য ঘটনাগুলোয় চলমান তদন্তের বিষয়েও রাষ্ট্র কোনো তথ্য দেয়নি (আর্টিকেল ২, ৪, ১২, ১৩, ১১ ও ১৬)।

কমিটি রাষ্ট্রপক্ষকে সুপারিশ করছে  ——    

ক. সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সুস্পষ্টভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে অস্বীকৃত বা অঘোষিত আটকের অনুশীলন বন্ধ করবে;

খ. সব স্বীকৃত আটকের তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে রাষ্ট্রের কোনো জায়গায় কাউকেই গোপনে বা নির্জন আটকাবস্থায় রাখা হবে না;

গ. কাউকে অস্বীকৃত আটকাবস্থায় রাখার ঘটনায়, এমনকি আটক করার পর ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে যেকোনো কর্মকর্তাকে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় বিচার ও সাজা নিশ্চিত করতে হবে;

ঘ. অস্বীকৃত আটক, গুম এবং হেফাজতে মৃত্যুর সব অভিযোগ দ্রুত ও বিস্তারিত তদন্তে এমন কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে হবে, যা আটকের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হবে;

ঙ. রাষ্ট্রের কোনো জায়গায় স্বাধীনতা খর্বিত হলো কি না, তা নজরদারি করতে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আটককেন্দ্র, সেসব জায়গার যেকোনো ব্যক্তির সঙ্গে একান্তে কথা বলার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে হবে; এবং বেসরকারি সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা যেন সব আটককেন্দ্রে যাওয়ার অনুমতি পান, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে;

চ. অপশনাল প্রটোকল টু দ্য কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার অনুসমর্থনের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে;

ছ. রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের দ্বারা বা তাঁদের সহযোগিতায় অস্বীকৃত আটকের মতো গুরুতর অপরাধের প্রকৃতি ‘অপহরণ’-এর মতো অপরাধগুলো না থাকায় ‘গুমকে’ সুস্পষ্ট অপরাধ হিসেবে ‘সকল ব্যক্তিকে গুম হওয়া থেকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সনদ’ অনুসারে আইনে নিষিদ্ধ করতে হবে, এবং এই সনদ অনুসমর্থনের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন  ——    

পুলিশ বাহিনী ও সেনাবাহিনী থেকে বদলিকৃত সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সদস্যদের বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অস্বীকৃত আটক, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নির্ভরযোগ্য অভিযোগসংবলিত যে অসংখ্য খবর পাওয়া যায়, তা নিয়ে কমিটি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ওপরে উল্লিখিত নারায়ণগঞ্জের ঘটনা ছাড়া এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে এই বাহিনীর সদস্যদের ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি না হওয়ার বিষয়েও কমিটি একইভাবে উদ্বিগ্ন। কমিটি উদ্বিগ্ন যে সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়ন আইনের ১৩ ধারায় বাহিনীর সদস্যদের ‘সরল বিশ্বাসে করা বা করতে চাওয়ার’ যে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা এই বাহিনীর সদস্যদের নির্যাতন বা বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে দায়মুক্তি দিয়েছে। কমিটি দুঃখের সঙ্গে বলছে, সুইডিশ ন্যাশনাল রেডিওতে ২০১৭ সালে সম্প্রচারিত সাক্ষাৎকারে র‍্যাবের অজ্ঞাত এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দাবি করেছিলেন যে এই বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত অপহরণ, নির্যাতন এবং উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে হত্যা ও কোনো প্রমাণ না রেখেই নিহত ব্যক্তির লাশ গায়েব কিংবা আত্মরক্ষার্থে হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে বলে সমর্থন আদায়ে অস্ত্র রাখে, সেই দাবির বিষয়ে রাষ্ট্র কোনো স্বাধীন তদন্ত করেনি। কমিটি দুঃখের সঙ্গে আরও বলেছে, র‍্যাবের অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান ইউনিট কীভাবে গঠিত, বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিশ্চিত হওয়ার পর কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে কমিটিকে কোনো তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। র‍্যাবে কাজ করা সদস্যদের প্রায়ই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো হয় বলে যে খবর পাওয়া যায়, তা নিয়ে কমিটি উদ্বিগ্ন (আর্টিকেল ২, ৪, ১২, ১৩ ও ১৬)।

কমিটি রাষ্ট্রকে সুপারিশ করেছে  ——    

ক. র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সদস্যদের বিরুদ্ধে নিয়মিত নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অস্বীকৃত আটক, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে এবং যাঁরা এই তদন্ত করবেন, তাঁদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের হাত থেকে কার্যকরভাবে রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে;

খ. সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়ন (সংশোধিত) আইন, ২০০৩-এর ১৩ ধারা থেকে ‘সরল বিশ্বাস’ এর বিধান বাতিল করতে হবে;

গ. সেনাবাহিনী থেকে র‍্যাবে বদলির অনুশীলন বন্ধ করতে হবে, এই বাহিনীকে পুরোপুরি বেসামরিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার এবং অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মতো র‍্যাবের সদস্যদেরও নির্যাতন, অসদাচরণ, গুম অথবা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ফৌজদারি বিচারের ব্যবস্থা করার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে;

ঘ. জাতিসংঘের দিকনির্দেশনা অনুসারে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর প্রস্তাবিত সব সদস্যের স্বাধীন যথাযথ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম অথবা অন্য যেকোনো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে—এমন ব্যক্তি বা ইউনিটকে যাতে এই মিশনের জন্য বাছাই না করা হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

রিমান্ড ও মৌলিক আইনি সুরক্ষা  ——    

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ প্রায়ই আটক ব্যক্তিকে নির্যাতনের হাত থেকে মৌলিক আইনি সুরক্ষা দেয় না বলে যে খবর পাওয়া যায়, তাতে কমিটি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কমিটি এই মৌলিক আইনি সুরক্ষাকে সনদের ২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত নির্যাতন প্রতিরোধের বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণে জরুরি বলে চিহ্নিত করেছে। খবরে অভিযোগ করা হয় যে অনেক ক্ষেত্রেই আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে, তা জানানো হয় না তাঁকে; দ্রুত যোগ্য ও স্বাধীন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হয় না কিংবা গ্রেপ্তারের পরপরই এবং জিজ্ঞাসাবাদ বা শুনানিসহ আটকাবস্থার কোনো পর্যায়েই আইনি সহযোগিতা দেওয়া হয় না; আটককেন্দ্রে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটক ব্যক্তিকে বিনা মূল্যে ডাক্তারি পরীক্ষা করার সুযোগ দেওয়া হয় না, আটক ব্যক্তির পছন্দের চিকিৎসকের মাধ্যমে গোপনে পরীক্ষার অনুরোধ ও সুযোগ দেওয়া হয় না; গ্রেপ্তারের পরপরই গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে পরিবারের সদস্য কিংবা পছন্দ অনুযায়ী অন্য কাউকে জানানোর অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়।

আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে সব ঘটনাবলি আটককেন্দ্রসহ কেন্দ্রীয়ভাবে নথিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ব্যর্থ হয়েছেন এবং আইন অনুসারে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আটক ব্যক্তিকে বিচারকের সামনে হাজির করা হয় না বলে যেসব খবর পাওয়া যায়, সেগুলো নিয়েও কমিটি উদ্বিগ্ন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ প্রায়ই সন্দেহভাজন অপরাধীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার, যা রিমান্ড বলে পরিচিত, আবেদন করে এবং আইনজীবীর সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করার সুযোগ না রেখে বিচারিক হাকিম ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা অনুসারে নিয়মিত তা সর্বোচ্চ ১৫ দিন পর্যন্ত অনুমোদন দেন বলে যেসব খবর পাওয়া যায়, তা নিয়ে কমিটি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। খবর অনুসারে কমিটি উল্লেখ করেছে যে রাষ্ট্রে আটক হওয়া ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশেরও বেশি রিমান্ড হেফাজতে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ ও বিচারিক হাকিমদের ১৫টি নির্দেশনার মাধ্যমে যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলোর অনুশীলন হচ্ছে না বলে যে খবর পাওয়া যায়, তা নিয়েও কমিটি উদ্বিগ্ন। উচ্চ আদালত যদিও তাঁর রুলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারকে ফৌজদারি দণ্ডবিধি-১৮৯৮, দণ্ডবিধি-১৮৬০ ও এভিডেন্স অ্যাক্ট-১৮৭২-এর সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব পরিবর্তন করা হয়নি (আর্টিকেল ২, ৪, ১১, ১২, ১৩, ১৫ ও ১৬)।

রাষ্ট্রের উচিত  ——    

ক. ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় উচ্চ আদালতের রুল প্রতিফলিত করতে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা এবং এভিডেন্স অ্যাক্ট সংশোধন করা এবং তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে যেন হয়, তা নিশ্চিত করা;

খ. ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা, যা আপিল বিভাগ সমর্থন করেছেন, তা যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ ও বিচারিক হাকিমেরা দ্রুত ও পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেন, তা প্রশিক্ষণ ও বৃহত্তর নজরদারির মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে;

গ. ওপরে উল্লিখিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ও প্রাক্-বিচার বা রিমান্ডে থাকা ব্যক্তিরাসহ আটক সব ব্যক্তিকে আইনি সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারকের সামনে হাজির করার বিষয়টি রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করা উচিত; গ্রেপ্তারের পরপরই ও পরবর্তী সময়ে আইনি পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে; এবং ব্যক্তির গ্রেপ্তার ও আটক হওয়ার সময় ও স্থান দ্রুত পরিবারের সদস্যদের জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে;

ঘ. আটক ব্যক্তির আইনি সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে কি না, তার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে এবং কোনো কর্মকর্তা যদি এই সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হন, তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা অন্য যথোপযুক্ত সাজা নিশ্চিত করতে হবে;

ঙ. প্রাক্-বিচার আটকের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে আইন অনুযায়ী যেন হয় এবং মৌলিক আইন ও প্রক্রিয়াগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক বিচারিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে;

চ. প্রাক্-বিচার আটকের বৈধতা নিয়মিত পর্যালোচনা করতে হবে এবং অপরাধের সাজার তুলনায় প্রাক্‌-বিচার আটকাবস্থার সময়সীমা বেশি হলে মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে;

ছ. প্রাক্-বিচার আটকের ঘটনা কমাতে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ইউনাইটেড নেশনস স্ট্যান্ডার্ড মিনিমাম রুলস ফর নন-কাস্টোডিয়াল মেজার্স (টোকিও রুলস) অনুসারে আটক না রেখে বিচারিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার হার বাড়াতে হবে।

ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক, জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অন্যান্য দুর্বল গোষ্ঠী  ——    

সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা বা তাঁদের সহযোগিতায় ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক, অন্য জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর লোকজন যৌন সহিংসতাসহ ভয়ভীতি, হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় বলে যে খবর পাওয়া যায়, তা নিয়ে কমিটি উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতাল নিহত ও ৫০ জন আহত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে, যে ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলেছে, সাঁওতালদের বাড়িঘর ও বিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত ছিলেন না। যদিও টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ঘটনার ভিডিওতে এর বিপরীত দৃশ্যই দেখা গেছে। পিরোজপুরে সম্প্রতি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কয়েকজন সদস্যের বাড়িঘরে আগুন দেওয়াসহ সহিংসতা ও হয়রানির এবং হিন্দু অধিকারকর্মী ও আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের ঘটনা কমিটি উল্লেখ করেছে। প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে পলাশ কুমার রায়কে আটক করা হয় এবং পরে অভিযোগ পাওয়া যায় যে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাঁর ওপর হামলা হয় এবং গায়ে আগুন দিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ইঙ্গিত করেছে যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কয়েকজন সেনাসদস্যের দুই কিশোরীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর অধিকারকর্মী মাইকেল চাকমার গুম হওয়ার ঘটনাগুলোও উল্লেখ করেছে কমিটি। প্রতিনিধিদল বলেছে, মাইকেল চাকমার ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ অন্যদের মাধ্যমে সমকামীদের সহিংসতার খবরেও কমিটি উদ্বিগ্ন। সমলিঙ্গ যৌন সম্পর্ককে ‘অপ্রাকৃতিক আচরণ’ হিসেবে অভিহিত করে রাষ্ট্র অপরাধ বলে গণ্য করার কারণেই এসব ঘটানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে (আর্টিকেল ২, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৬)।

রাষ্ট্রের উচিত  ——    

ক. ওপরে উল্লিখিত বিস্তারিতসহ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, অন্য জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম ও অন্যান্য দুর্বল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও সহিংসতার ঘটনার স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করা;

খ. ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’-এর বিষয়টিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার আইন, যেমন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ রদ করার বিষয় বিবেচনা করা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হয়রানি করতে এ ধরনের আইনের প্রায়ই অপব্যবহার এবং এসব গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর সহিংসতা আইনিভাবে বৈধ বলে ধরে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়;

গ. ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, অন্য জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম ও অন্যান্য অরক্ষিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; তাদের অভিযোগ দেওয়ার স্বাধীন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা;

ঘ. সাঁওতাল সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু ও দুর্বল গোষ্ঠীর যারা শারীরিক সহিংসতা, ক্ষয়ক্ষতি ও লুটপাটের শিকার, তাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনসহ প্রতিকারের ব্যবস্থা করা; এবং ‘অর্পিত’ সম্পত্তি প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া নিশ্চিত করতে ‘অর্পিত সম্পত্তির প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ (আইন নম্বর ১৬)’ বাস্তবায়ন করা;

ঙ. ‘অপ্রাকৃতিক আচরণকে’ অপরাধ গণ্য করা বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা রদ করতে হবে। রাষ্ট্র সমলিঙ্গ যৌন সম্পর্ককে এই ধারা অনুসারে নিষিদ্ধ বলে বিবেচনা করে থাকে;

চ. সমকামী সম্প্রদায়সহ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, অন্য জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অন্যান্য দুর্বল সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর সহিংসতার সংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করতে হবে;

ছ. দুর্বল গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের ওপর সব ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত পুলিশের সদস্যসহ অন্য সাধারণ মানুষের বিচার ও সাজার ব্যবস্থা করতে হবে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন  ——    

সিইএসসিআর ২০১৮ সালের পর্যবেক্ষণের উপসংহারে পৌঁছেছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সম্ভবত যথেষ্ট বৃহত্তর এখতিয়ার (ম্যান্ডেট) না থাকার কিংবা সরকারি ব্যক্তি যেমন পুলিশ, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা নির্যাতন ও অসদাচরণের অভিযোগ সরাসরি তদন্তে এই কমিশনের বর্তমান এখতিয়ার (ম্যান্ডেট) পুরোপুরি কাজে লাগায়নি বলে কমিটি উদ্বিগ্ন। কমিশনের সদস্যদের বাছাই ও নিয়োগ–প্রক্রিয়া এবং ‘প্রিন্সিপালস রিলেটিং টু দ্য স্ট্যাটাস অব ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর দ্য প্রমোশন অ্যান্ড প্রোটেকশন অব হিউম্যান রাইটস’ (প্যারিস প্রিন্সিপালস) অনুসারে দায়িত্ব পালনে কমিশনের যথেষ্ট জনবল ও আর্থিক সংগতি না থাকার বিষয়ে কমিটি উদ্বিগ্ন (আর্টিকেল ২, ১২, ১৩ ও ১৬)।

রাষ্ট্রের উচিত  ——    

ক. সেনাবাহিনী, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অসদাচরণের অভিযোগ সরাসরি তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সক্ষমতা ও এখতিয়ার (ম্যান্ডেট) সম্প্রসারণে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ সংশোধন করা; এবং এর বৃহত্তর পরিসরে অবারিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে;

খ. জাতীয় প্রতিরোধক ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে কমিশন যেন তার পুরো ক্ষমতার অনুশীলন করতে পারে এবং যেখানেই কেউ আটক হবে, সেখানেই যেন পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করা;

গ. কমিশনকে পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদসংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার অনুমোদন দিতে হবে, যাতে কমিশন তার ম্যান্ডেট নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে সম্পাদন করতে পারে;

ঘ. প্যারিস নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও মেধাভিত্তিক নির্বাচন ও নিয়োগদান প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে হবে;

ঙ. নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের তদন্ত কীভাবে করতে হয়, সেই বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তারা যেন সঠিক প্রশিক্ষণ পান, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। 

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা  ——    

বিচারকেরা তাঁদের কাজসংশ্লিষ্ট বিষয়ে হুমকি ও চাপের মুখোমুখি হন—এ বিষয়ে কমিটি উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে, প্রতিনিধিদলের দেওয়া ব্যাখ্যা বিবেচনায় নিয়েও সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার করা অভিযোগের বিষয়ে কমিটি উদ্বিগ্ন। অভিযোগ আছে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীবিষয়ক মামলায় উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা তাঁর ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি হয়রানির শিকার হন, ফলে তাঁকে পদত্যাগে এবং দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়; এই বিষয়ে প্রতিনিধিদলের প্রধানের দেওয়া বিবৃতি, যাতে বলা হয়েছে, সিনহার পদত্যাগের সঙ্গে কমিটি ষোড়শ সংশোধনীবিষয়ক মামলার কোনো সম্পর্ক নেই, বরং দুর্নীতির অভিযোগের সম্পর্ক রয়েছে—সেটিও আমলে নেওয়া হয়েছে। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে, কমিটি এখনো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তা ছাড়া, বিচার বিভাগের সদস্যদের ওপর থাকা দৈনন্দিন যে চাপ, যার কারণে বিচারিক কর্মকর্তাদের ওয়ারেন্টবিহীন গ্রেপ্তারের ঘটনা গ্রহণ করতে হচ্ছে, কোনো তত্ত্বাবধান ছাড়াই হেফাজতে থাকার মেয়াদ বাড়াতে হচ্ছে, এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ড, যেগুলো একজন ব্যক্তিকে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের মতো নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতে মৌলিক আইনি নিরাপত্তা দেয়, সেগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে (আর্টিকেল ২)

রাষ্ট্রপক্ষকে অবশ্যই  ——    

ক. আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রভাব থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করতে হবে;

খ. উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাসহ অন্যান্য পক্ষ থেকে আসা হুমকি, হয়রানি এবং অনুচিত হস্তক্ষেপ থেকে বিচারিক কর্মকর্তাদের রক্ষা করতে হবে; 

গ. সব বিচারক ও আইনজীবী যাতে পর্যাপ্ত সম্মানী পান এবং অবসর বা কার্যালয়ের মেয়াদ শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত মেয়াদ পূরণের নিশ্চয়তা পান, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। 

মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা, হয়রানি ও সহিংসতা  ——    

কিছু প্রতিবেদন পেয়ে কমিটি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে সুশীল সমাজের যেসব কর্মী, আইনজীবী এবং সাংবাদিকেরা কর্তৃপক্ষ বা সরকারের আচরণের সমালোচনা করেন এবং নির্যাতন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও এ সম্পর্কিত অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়গুলো প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন, তাঁদের হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হতে হয়। একই সঙ্গে এসব সমালোচনা করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে শাসকদলীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিশোধমূলক মামলা করে থাকে এবং অন্যায্য বিচারকাজের সমালোচনা করায় তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। কমিটি উদ্বিগ্ন যে, সুশীল সমাজের কিছু কর্মী, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয়েছে, যখন কাজ সম্পর্কিত কারণে আনা অভিযোগে তাঁদের আটক করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের জারি করা কিছু আইন বিষয়ে কমিটি উদ্বিগ্ন, এর মধ্যে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, ২০১৮—যেগুলো এ ধরনের হয়রানি করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মামলা নিয়ে কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যাকে তাঁর কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, আদালত অবমাননা এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন অভিযোগে কয়েক বছর ধরে রিমান্ডে আটক রাখা হয়েছিল এবং হতাশার বিষয় হলো, তাঁকে এসব অভিযোগে আটক রেখে নির্যাতন চালানোর অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হয়েছে কি না, তা প্রতিনিধিদল উল্লেখ করেনি। কনভেনশন অনুযায়ী এমন তদন্ত করা প্রয়োজন।


মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা, হয়রানি ও সহিংসতা  ——    

গঠনমূলক সংলাপের সময় প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা কমিটি প্রশংসার সঙ্গে স্বীকার করে নিচ্ছে। এতে সরকার ‘সহানুভূতির সঙ্গে স্পষ্ট’ করেছে যে সরকারের পক্ষ থেকে সুশীল সমাজের সদস্য ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে প্রতিহিংসার হাত থেকে রক্ষা করা হবে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রাথমিক প্রতিবেদনের বিষয়ে কমিটির যে ভাবনা, তাতে সহযোগিতা দিয়ে থাকে সুশীল সমাজের সদস্য ও বেসরকারি সংস্থাগুলো (আর্টিকেল ২, ৪, ১১, ১২, ১৩, ১৫ ও ১৬)।


রাষ্ট্রপক্ষকে অবশ্যই  ——    

ক. সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ রাখতে হবে, যাতে সুশীল সমাজের কর্মীরা, আইনজীবী এবং সাংবাদিকেরা—যারা তথ্য বা মানবাধিকার লঙ্ঘনসংক্রান্ত অভিযোগ প্রকাশ করে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এবং সরকারের নেতারা বা তাদের নৈপুণ্যের সমালোচনা করার কারণে তারা যেন আদালত অবমাননা, মানহানি বা রাষ্ট্রদ্রোহের মতো প্রতিশোধমূলক অভিযোগের লক্ষ্য না হোন;

খ. বেআইনি বা বিতর্কিত গ্রেপ্তার, হয়রানি, নির্যাতন বা অমানবিক আচরণের বা সুশীল সমাজের সদস্য, আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ মানবাধিকার রক্ষায় নিয়োজিত কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর সব অভিযোগের তদন্ত করতে হবে;

গ. তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, ২০০৬, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, ২০১৮ এবং বিদেশি অনুদান (স্বেচ্ছাশ্রম) প্রবিধান আইন, ২০১৬-সহ কিছু আইনের সংশোধন করতে হবে—সংবিধান ও সাংবিধানিক সংস্থার বিষয়ে মানহানিকর মন্তব্যের বিষয়ে, ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড’ ও ‘জাতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা’ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা বিধান এগুলোতে আছে এবং এগুলো দূর করতে হবে। এ ছাড়া একই ধরনের বিধানগুলো, যেগুলো নির্যাতন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা অমানবিক আচরণের অভিযোগগুলো প্রচার করা বা সেসব অভিযোগের প্রত্যুত্তরে রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকার সমালোচনা করা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করার ভিত্তি দেয়, সেগুলো দূর করতে হবে।

ঘ. সুশীল সমাজের সদস্যরা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো—যারা রাষ্ট্রপক্ষের প্রাথমিক প্রতিবেদনের বিষয়ে কমিটির বিবেচনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিয়ে থাকে, তাদের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের বিধি ভাঙার অভিযোগসহ যেকোনো ধরনের প্রতিহিংসা বা হয়রানি থেকে রক্ষা করতে হবে এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রীর দেওয়া এ–সংক্রান্ত অঙ্গীকার পালন করতে হবে।


আটকের শর্তাবলিকমিটি কিছু বিষয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন  ——    

ক. রাষ্ট্রপক্ষের কারাগারগুলোর পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অনেক নিচু মানের এবং সেখানে কিছু চরম ক্ষেত্রে অনেক সময় নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ করা হয়—এমন প্রতিবেদন পেয়ে;

খ. কারাগারগুলোতে বন্দীদের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি, এমনকি ধারণক্ষমতার চেয়ে ২০০ শতাংশের বেশি এবং নির্বাচনের সময় ৪০ হাজার বন্দী ধারণক্ষমতার কারাগারগুলোতে এর চেয়েও বেশি বন্দী রাখা হয়—রিমান্ডের জন্য আটক রাখার বিধানের বহুল ব্যবহারের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে বন্দীদের পালা করে ঘুমাতে বাধ্য করা হয়, এমনকি কারাগার কর্তৃপক্ষকে কারাগারের সীমানার ভেতরেই অস্থায়ী ছাউনি তৈরির কথা বিবেচনায় নিতে হয় এবং এমন পরিস্থিতির কারণেই ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রায় ১০০ বন্দীকে একটি পরিত্যক্ত গুদামে রাখতে হয়েছিল;

গ. কারাগার ও হাজতখানার খুবই বাজে পরিস্থিতির কারণে ২০১৮ সালে ৭৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে অপর্যাপ্ত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা, খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাব, অপর্যাপ্ত শৌচাগার ও স্নানাগারের সুবিধা এবং বিছানা, অপর্যাপ্ত আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থার কথা জানা গেছে; এ ছাড়া চিত্তবিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ও মানসিক উত্তেজনা প্রশমনের সুযোগেরও অভাব রয়েছে;

ঘ. কারাগারগুলোতে বিদ্যমান দুর্নীতির বিষয়ে, এগুলোর মধ্যে আছে—সেখানে প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য রক্ষীদের চাঁদাবাজির শিকার হতে হয় বন্দী ও তাদের স্বজনদের; ‘মেট’ ব্যবস্থা থাকার কারণে জ্যেষ্ঠ বন্দীরা অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, এমনকি অন্য বন্দীদের খাবার পাওয়া ও কারাবাসের শর্তাবলিতেও তারা হস্তক্ষেপ করে থাকে; এবং তারা প্রায়ই কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ হয়ে সাজার সীমা কমিয়ে দেয়; এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরকারী বন্দীদের প্রতিশোধমূলক কার্যকলাপের শিকার হতে হয়;

ঙ. রাষ্ট্রপক্ষের থাকা ৬৮টি কারাগারের মধ্যে মাত্র ১২টিতে হাসপাতাল আছে এবং সেগুলোতে থাকা চিকিৎসকদের ১৭০টি পদের মধ্যে মাত্র এক ডজনে পদায়ন আছে, জানা গেছে বাজে পয়োনিষ্কাশন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে চিকিৎসকেরা কারাগারে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ভীত থাকেন;

চ. হেফাজতে থাকাকালে মৃত্যুর উচ্চ সংখ্যার বিষয়ে, যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেগুলোকে স্বাভাবিক মৃত্যু বা আত্মহত্যা বলে অভিহিত করে থাকে। কিন্তু এসব ঘটনার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ এবং নির্যাতনের কারণে সৃষ্ট আঘাত থেকে মৃত্যু হয়েছে, একই সঙ্গে খারাপ পরিস্থিতি, কারাগার কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ার অভাবও এসবের জন্য দায়ী; ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ১১ জন কারাগারে অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন; এবং প্রায় সব বন্দীই সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের সংস্পর্শে এসেছে এবং তা থেকে অসুস্থতা সৃষ্টি হয়;

ছ. অপ্রাপ্তবয়স্ক বন্দীদের প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে রাখা হয়; নারী বন্দীদের হয়তো পুরুষ বন্দীদের সঙ্গে রাখা হয়; এবং ওই কারাগারগুলোতে প্রতিবন্ধী বন্দীদের রাখার মতো ব্যবস্থা নেই (আর্টিকেল ২, ১১, ১২, ১৩ ও ১৬)।


রাষ্ট্রপক্ষকে অবশ্যই  ——    

ক. প্রয়োজনীয় স্বাধীনতার ঘাটতি আছে, এমন আটক করার শর্তাবলিগুলো উন্নত করার জন্য সব ধরনের জরুরি পদক্ষেপ জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করতে হবে, যাতে সেগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের সমান্তরালে নিয়ে আসা যায়, এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে বন্দীদের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ প্রণীত মানসম্মত ন্যূনতম নিয়মাবলি (ম্যান্ডেলা রুলস) এবং নারী বন্দীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিয়মাবলি এবং নারী অপরাধীদের ক্ষেত্রে হেফাজতে না রাখার ব্যবস্থা (ব্যাংকক রুলস);

খ. কারাগারগুলোতে থাকা অতিরিক্ত ভিড় কমিয়ে আনতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে, এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বিচারকাজ শুরুর আগে কোনো ব্যক্তিকে অযৌক্তিক সময়কালের জন্য হেফাজতে রাখা না হয় এবং রিমান্ড বা বিচারকাজ শুরুর আগে আটক রাখার নানা ধরনের প্রক্রিয়ায় আটক থাকা ব্যক্তির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা হয়; জামিনের পূর্বশর্তগুলো শিথিল করা এবং প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে হবে; আটক না করে নেওয়া পদক্ষেপসমূহের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানসম্মত ন্যূনতম নিয়মাবলির সঙ্গে সংগতি রেখে আটকের বিকল্পসমূহের প্রচার করা এবং বিচারের গতি ত্বরান্বিত করা (টোকিও রুলস);

গ. প্রয়োজনীয় স্বাধীনতার ঘাটতি আছে, এমন অবস্থার উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে পর্যাপ্ত মান ও পরিমাণের খাদ্য পাওয়া, পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিস্থিতি, বিছানা, আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, এ ছাড়া বিনোদনমূলক ও অন্যান্য অর্থমূলক কর্মকাণ্ড; আরও অন্তর্ভুক্ত থাকবে নতুন কারাগার নির্মাণ ও পুরোনো কারাগারগুলোর সংস্কার;

ঘ. কারাগারগুলোয় দুর্নীতি দূর করতে হবে, এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে বন্দী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি; কারাগার ব্যবস্থায় হেফাজতের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সঙ্গে অপরাধী গ্যাংগুলোর গোপন চুক্তির বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া; মানবিকতা ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বন্দীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে; বন্দীদের মধ্যকার সহিংসতাসহ সব ধরনের সহিংসতা কমিয়ে আনতে হবে;

ঙ. আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ভুলভ্রান্তি বা কমিশনের কারণে, নির্যাতন বা অন্য যেকোনো ধরনের অমানবিক আচরণের কারণে সংঘটিত হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি বজায় রাখতে হবে, যা কমিটির সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপের সময় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন এবং হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে তাৎক্ষণিক ও স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে, সেগুলোর কারণ যা-ই হোক না কেন;

চ. গুরুত্ব বিবেচনায় পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে, অতিরিক্ত চিকিৎসক মজুরি ভিত্তিতে নিয়ে শূন্য পদ পূরণ করতে হবে, একই সঙ্গে সময়ে সময়ে যাতে বিশেষজ্ঞদের এবং সেবিকাদের পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে; বিশেষায়িত সেবার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে পাঠানো এবং অ্যাম্বুলেন্সে করে কারাগারের বাইরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে; কারাগারে ঢোকানোর আগে বন্দীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা এবং পুরো বন্দী জনসংখ্যার স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; এবং কারাগারে আসার সময় যেসব বন্দী সুস্থ অবস্থায় পৌঁছাবে, তাদের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে;

ছ. বয়স্ক বন্দীদের থেকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা চালু করতে হবে; দোষী সাব্যস্ত বন্দীদের থেকে রিমান্ডে থাকা আটক ব্যক্তিদের আলাদা রাখতে হবে; পুরুষ বন্দীদের কাছ থেকে নারী বন্দীদের আলাদা রাখার নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং নারীদের জন্য লিঙ্গ-সংবেদনশীল পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে; যেসব বন্দী প্রতিবন্ধী তাদের মানবিক পরিস্থিতি রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং কারাগারগুলো যাতে তাদের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে;


জ. আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোসহ স্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে কারাগারের বিভিন্ন স্থানে অঘোষিত অভিযান এবং চিকিৎসাবিষয়ক পরিদর্শন চালানোর অনুমতি দিতে হবে এবং আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার অনুমোদন দিতে হবে।


ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহার  ——    

নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহারের ঘটনার নিয়মিত অভিযোগসমূহের বিষয়ে কমিটি খুবই উদ্বিগ্ন, এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে কাছে থেকে হাঁটু, পা বা কনুইয়ে গুলি করার অনুশীলন চালানো, যা ‘নিক্যাপিং’ নামে পরিচিত, যেগুলো প্রায়ই অঙ্গহানিসহ স্থায়ী প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টি করে থাকে। সাম্প্রতিক ও অতীতের নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত ঘটনায় কর্তৃপক্ষের ঘটানো নানা সহিংসতার বিষয়ে পাওয়া প্রতিবেদনের ব্যাপারেও কমিটি উদ্বিগ্ন, এর মধ্যে আছে বিক্ষোভকারীদের ওপর চালানো হামলা, পোলিং স্টেশন জব্দ করা এবং হুমকি দিয়ে ও সহিংসতার মাধ্যমে ভোট দমিয়ে রাখা (আর্টিকেল ২, ১০, ১২, ১৩ ও ১৬)।


রাষ্ট্রপক্ষকে অবশ্যই  ——    

ক. অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের শিকার হয়েছে এমন ভুক্তভোগীদের অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা স্থাপন করা, যেখানে এই নিশ্চয়তা দেওয়া হবে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা নির্যাতন বা কোনো ধরনের অন্যায় আচরণের অভিযোগ তুললে কেউ ফের নির্যাতিত হবে না এবং অতি অবশ্যই সব অভিযোগের বিষয়ে ত্বরিত, নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত করা হবে।

খ. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জন্য বলপ্রয়োগ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার এবং যেকোনো ধরনের আটক বা বন্দী ব্যক্তির সুরক্ষাসম্পর্কিত মূলনীতিগুলোর ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।


বিতর্কিত আটক  ——    

২০১৮ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রায় ৫ হাজার সমর্থককে আটকের তথ্যের ব্যাপারে কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করছে, যেখানে দুর্নীতি মামলায় বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশের পর সহানুভূতি প্রদর্শন করা অনেক সাধারণ মানুষও ছিল। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে-পরে বিরোধী দলের কয়েক হাজার সমর্থককে গ্রেপ্তার এবং তাদের অনেককেই এখনো আটক রাখার অভিযোগ সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করছে কমিটি। একই সঙ্গে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ রয়েছে, এমন সন্দেহে বিভিন্ন ব্যক্তির স্বাধীনতায় অযৌক্তিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও উদ্বিগ্ন কমিটি। (আর্টিকেল ২, ১১, ১২, ১৩ ও ১৬)

রাষ্ট্রপক্ষকে অবশ্যই রাজনৈতিক কর্মী, আন্দোলনকারী, গ্রেপ্তার ব্যক্তি, সহিংসতা রোধে গণজমায়েত থেকে আটকসহ সব আটক ব্যক্তিকে সত্যিকার অর্থেই আটককালীন সব মৌলিক নিরাপত্তা (১৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত) দিতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে তাকে বিচারকের সামনে হাজির করার বিষয়টিও রাষ্ট্রপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। ওপরে বর্ণিত প্রতিরোধমূলক কার্যকলাপের সময় আটক ব্যক্তিদের নির্যাতনের সব অভিযোগ দ্রুত ও কার্যকর তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তদন্তকারীদের সুপারিশক্রমে হয় বিচারের আওতায় আনা বা আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।


নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা  ——    

নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলায় রাষ্ট্রপক্ষ উল্লিখিত প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানাচ্ছে কমিটি। কিন্তু একই সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার খুবই অল্পসংখ্যকের বিচার ও সাজা হওয়া এবং একই সময়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আসা শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান অভিযোগের বিষয়ে কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কমিটি আরও উদ্বিগ্ন এই তথ্য জেনে যে আইনি বাধার কারণে যৌন সহিংসতার শিকার নারীরা নিজেদের সঙ্গে হওয়া আচরণকে ধর্ষণ দাবি করতে পারছেন না। আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, (বাল্যবিবাহ–সংক্রান্ত) আইনে আনা সাম্প্রতিক সংযোজনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ‘বিশেষ অবস্থা’র দোহাই দেখিয়ে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের অনুমোদন দিচ্ছে, যা দেশে বিদ্যমান বাল্যবিবাহের উচ্চ হারকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। একই সঙ্গে কমিটি উদ্বিগ্ন এই কারণে যে রাষ্ট্রীয় আইন মায়ের প্রাণসংশয় ছাড়া গর্ভপাতকে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করছে, যা নারীর শারীরিক ও মানসিক পীড়ন ও হতাশার কারণ হয়ে উঠতে পারে। (আর্টিকেল ২, ৪, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৬)


রাষ্ট্রপক্ষের করণীয় সম্পর্কে কমিটির সুপারিশ  ——    

ক. নারী ও মেয়েশিশুদের বিরুদ্ধে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার সব ধরনের অভিযোগ, বিশেষ করে রাষ্ট্র কিংবা (জাতিসংঘ) সনদ মোতাবেক আন্তর্জাতিক পরিসরে রাষ্ট্রের দায় রয়েছে এমন অন্য কোনো সংস্থার কর্মকাণ্ড বা নিষ্ক্রিয়তার সঙ্গে জড়িত অভিযোগগুলোর পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অভিযুক্ত অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা যায় এবং দোষী সাব্যস্ত হলে তার যথাযথ শাস্তি বিধানের পাশাপাশি ভুক্তভোগী পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ ন্যায়ানুগ প্রতিকার পায়।

খ. নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন ২০০০ (২০০৩ সালে সংশোধিত)-এ বিদ্যমান ধর্ষণের অভিযোগ দাখিল ও এ–সংক্রান্ত স্বাস্থ্য প্রতিবেদন তৈরিতে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা–সম্পর্কিত বিধি অপসারণ করতে হবে।

গ. ‘বিশেষ ক্ষেত্রে’ ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের আইনি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিধান বাদ দেওয়া এবং ১৩ বছরের বেশি বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে বৈবাহিক ধর্ষণ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিধান রহিত করা, যা দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় বর্ণিত আছে।

ঘ. ঘরোয়া সহিংসতা এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সেবা নিশ্চিত করা। এর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা, দেশজুড়ে যেসব নিরাপদ জরুরি আবাসন ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা আছে, সেখানে এ ধরনের ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি যাঁরা দেশের নাগরিক নন, তাঁদেরও সেখানে আশ্রয় নেওয়ার অধিকার থাকতে হবে।

ঙ. গর্ভধারণ অব্যাহত রাখলে তীব্র যন্ত্রণা ও কষ্টের শিকার হতে হবে, এমন সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে গর্ভপাতের অনুমতিদানের জন্য আইনি ব্যতিক্রমের সুযোগ করে দিতে সংশ্লিষ্ট বিধিবিধানগুলো পর্যালোচনা করা। যেমন, ধর্ষণের কারণে বা নিকটাত্মীয়র সঙ্গে যৌন সঙ্গমের কারণে গর্ভধারণ ঘটলে বা মারাত্মক ভ্রূণবৈকল্যের ঘটনা থাকলে। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নারীদের গর্ভপাত-পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট নারী বৈধ বা অবৈধ উপায়ে গর্ভপাত ঘটিয়েছেন কি না, তা এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হবে না। এ ধরনের সেবা নেওয়া বা দেওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট রোগী বা চিকিৎসককে আইনগত শাস্তি বা অন্য কোনো ধরনের হুমকির মুখোমুখি করা যাবে না।


পাচার  ——    

যৌন ও শ্রম পাচারের বিষয়টিকে অপরাধমূলক ঘটনা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে ২০১২ সালে একটি আইনি বিধান প্রণয়ন করায় রাষ্ট্রপক্ষ প্রশংসার দাবি রাখে। তবে কমিটি এই বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে পাচারের শিকার ব্যক্তিদের একটা বিরাট বড় অংশই পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটা ঘটে থাকে প্রতিশোধের ভয় ও ভয়ভীতি দেখানোর কারণে। ঘটনার শিকার অনেকেই এটা বিশ্বাস করেন না যে তাঁরা পুলিশের কাছ থেকে কার্যকর সুরক্ষা পাবেন। কমিটি আরেকটি বিষয়েও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সেটি হচ্ছে, ১০০টির বেশি ঘটনা পাওয়া গেছে, যেখানে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ভেতরেই জোরপূর্বক শ্রম ও যৌন পাচারের শিকার হতে হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, সামরিক বাহিনী এবং পুলিশের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের পাচারের সুযোগ করে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের হাইকোর্ট রোহিঙ্গাদের দায়ের করা পাচারবিরোধী মামলাগুলো গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন। আর কর্তৃপক্ষও এসব ঘটনার তদন্ত শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছে (আর্টিকেল ২, ৪, ১০, ১১, ১৪ ও ১৬)।


রাষ্ট্রকে যা করতে হবে  ——    

ক. বাংলাদেশের ভেতরে রোহিঙ্গাদের যৌন ও শ্রম পাচারের বিষয়ে ওঠা অভিযোগগুলো নথিভুক্ত করতে হবে এবং যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে, তাঁদের তদন্ত ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

খ. রোহিঙ্গাসহ পাচারের শিকার সব বিদেশি নাগরিককে সরকারি সেবার আওতায় আনতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সহিংসতার শিকার শিশু ও নারীদের জন্য বিদ্যমান সেন্টারগুলোতে প্রবেশাধিকার ও আইনি সহায়তা প্রদান। এ ছাড়া তাঁরা যে সহিংসতার শিকার, সে বিষয়ে দেশের বিচারালয়ের সামনে অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।


গ. এমন বাস্তবসম্মত অবস্থা ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যেখানে পাচারের শিকার ব্যক্তিরা অভিযোগ দায়ের করলে প্রতিশোধমূলক ঘটনার ভয় থেকে কার্যকর সুরক্ষা পেতে পারেন।

শরণার্থী ও নন-রিফাউলমেন্ট  ——    

বর্তমানে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর বিষয়ে নন-রিফাউলমেন্ট (নির্যাতনের ঝুঁকি থাকলে স্বদেশে ফেরতের জন্য চাপ না দেওয়া) নীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোয় কমিটি দেশটিকে প্রশংসা করে। বাংলাদেশ স্বীকার করেছে যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠালে তাদের নির্যাতন ও মন্দ আচরণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কমিটি একই সঙ্গে এ বিষয়ে হতাশ যে রাষ্ট্রপক্ষ কয়েকটি বিষয়ে কোনো তথ্য প্রদান করেনি। এর মধ্যে রয়েছে আইনি বিধিবিধানের মধ্যে অথবা কোন কোন দেশে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, সে বিষয়ে চাওয়া তথ্যের মধ্যে নন-রিফাউলমেন্ট নীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের বিভিন্ন প্রচেষ্টা এবং নির্যাতন ও মন্দ আচরণের মুখে পড়তে পারে এমন কোনো অবস্থার মধ্যে কোনো ব্যক্তিকে ফেরত না পাঠানোর নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ (আর্টিকেল ২, ৪, ১০, ১১, ১৪ ও ১৬)।


রাষ্ট্রপক্ষকে যা যা করতে হবে  ——    

ক. বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে নন-রিফাউলমেন্ট নীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো অব্যাহত রাখা;

খ. আশ্রয়প্রার্থী বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড ও নিয়মকানুনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে নিবিড় আইন প্রণয়ন করা। [নির্যাতনবিরোধী] সনদের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ মেনে সেই আইন করতে হবে;

গ. একটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা, যার মাধ্যমে কেউ যদি এমন উদ্বেগ তুলে ধরে যে তাকে রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে অন্য কোনো দেশে ফেরত পাঠালে প্রকৃতপক্ষেই নির্যাতন ও মন্দ আচরণের মুখোমুখি হতে হবে, তাহলে তিনি বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার সুযোগ নিতে পারবেন। এর ভিত্তিতে তিনি সেটা করতে পারবেন যে অন্য দেশে ফেরত পাঠালে তা হবে সনদের অধীনে বাংলাদেশের নন-রিফাউলমেন্ট নীতির বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন;

ঘ. নন-রিফাউলমেন্ট নীতির ওপরে রাষ্ট্রপক্ষের সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রশিক্ষণ প্রদান;

ঙ. নির্যাতন ও মন্দ আচরণের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া সবাইকে (যারা নাগরিক নয়, তাদেরও) শনাক্ত করা এবং প্রতিকার দেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা। সবাইকে স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক সেবায় যথোপযুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা;

চ. শরণার্থীদের মর্যাদাসংক্রান্ত ১৯৫১ সালের সনদ ও তার ১৯৬৭ সালের প্রটোকলে যোগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা;

ছ. নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের যেসব ক্ষেত্রে এখতিয়ার আছে, সেসব ক্ষেত্রে চলমান তদন্তে কৌঁসুলিদের সহযোগিতা করা।


প্রতিকার ও পুনর্বাসন  ——    

কমিটি খুবই উদ্বিগ্ন যে নির্যাতন ও মন্দ আচরণের শিকার ব্যক্তিদের প্রতিকার দেওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে এবং বাস্তবে রাষ্ট্রপক্ষ খুব সামান্যই প্রতিকার দিয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর এসেছে। কমিটি এ বিষয়েও উদ্বিগ্ন যে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (রোধ) আইন ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা খুব সামান্যই। এটি কোনো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে না এবং বাস্তবে এই আইনের আওতায় কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। কারণ, আজ পর্যন্ত ওই আইনের আওতায় কোনো রায় হয়নি। প্রতিনিধি দলটি বলেছে যে ওই আইনে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের যে পরিমাণের কথা বলা আছে, তা বৃদ্ধি করার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে। কমিটি এই বিবৃতির প্রশংসা করে। তবে কমিটি এ বিষয়েও উদ্বিগ্ন যে বাংলাদেশ এখনো সনদের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুমোদন করেনি। (আর্টিকেল ১৪)।


রাষ্ট্রপক্ষকে যা যা করতে হবে  ——    

ক. নির্যাতনের শিকার সবাইকে প্রতিকার পাওয়া এবং ন্যায্য ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে প্রয়োগযোগ্য অধিকার নিশ্চিত করা। এর মধ্যে থাকবে যতটা সম্ভব পুনর্বাসিত করার সব উপায় নিশ্চিত করা। এ বিষয়ে কমিটি সনদের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সাধারণ মন্তব্য নম্বর ৩ (২০১২)-এর প্রতি রাষ্ট্রপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে;

খ. দেশের ভূখণ্ডে থাকা শরণার্থী বাসিন্দাসহ রাষ্ট্রপক্ষের অধীনে থাকা নির্যাতন ও মন্দ আচরণের শিকার সবাই যেন দ্রুততার সঙ্গে উপযুক্ত মানসিক সেবা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং বিশেষায়িত পুনর্বাসন সেবায় প্রবেশাধিকার পায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা। এটিও নিশ্চিত করা যে এসব সেবায় প্রবেশাধিকার যেন নির্যাতনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের বা দোষী ব্যক্তিদের সাজা হওয়ার ওপর শর্তসাপেক্ষ না হয়।

গ. অপরাধের গুরুতর অবস্থার বিষয় স্বীকার করা এবং নির্যাতন ও মন্দ আচরণের শিকার ব্যক্তিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (রোধ) আইনে সংশোধনী আনা;

ঘ. সনদের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি তুলে নেওয়া।


আইনে শারীরিক শাস্তি  ——    

কমিটি লক্ষ করেছে যে সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানবিক, অথবা অবমাননাকর শাস্তি বা আচরণের মুখোমুখি করা যাবে না।’ এরপরও কমিটি এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে দেশের বিভিন্ন আইনে বেত্রাঘাতকে শাস্তি হিসেবে ব্যবহারের, পায়ে বেড়ি পরানোর অনুমতি রয়েছে। সংবিধানের ৩৫(৬) অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে এখানে বর্ণিত বিধিনিষেধ আইনগতভাবে প্রণীত কোনো শাস্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। (আর্টিকেল ১, ২, ৪, ১১ ও ১৬)।

সর্বস্তরের সব ধরনের দৈহিক শাস্তি নিশ্চিহ্ন করতে এবং সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করতে রাষ্ট্রপক্ষকে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, এগুলো নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানবিক, অথবা অবমাননাকর শাস্তি বা আচরণের সমতুল্য, যা সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপক্ষকে ১৮৯৪ সালের কারা আইনে সংশোধনী আনতে হবে।


শিশুদের শারীরিক শাস্তি  ——    

কমিটি খেয়াল করেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুদের সব ধরনের দৈহিক শাস্তি প্রদান বন্ধ করতে ২০১০ সালে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আর ২০১১ সালে হাইকোর্ট ঘোষণা করেছেন, বিদ্যালয়গুলোতে বেত্রাঘাত, মারধর, শিকল দিয়ে বাঁধা ও আটকে রাখাসহ সব ধরনের দৈহিক শাস্তি ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ এবং তা একধরনের মন্দ আচরণ। কমিটি এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে রাষ্ট্রপক্ষ সর্বস্তরে দৈহিক শাস্তিকে নিষিদ্ধ করেনি। এ ধরনের ঘটনা বৃহত্তর পরিসরে ঘটতেই আছে, যার মধ্যে বিদ্যালয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত। (আর্টিকেল ১ ও ১৬)।


রাষ্ট্রপক্ষকে যা যা করতে হবে  ——    

ক. শিশু আইন, দণ্ডবিধি ও অন্যান্য জাতীয় আইনে অতিরিক্ত সংশোধনী আনা, যাতে সর্বস্তরে দৈহিক শাস্তি বৃহত্তরভাবে ও সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা যায়;

খ. বিদ্যালয়সহ সবখানে দৈহিক শাস্তি প্রতিরোধ করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব শিক্ষক এখনো দৈহিক শাস্তি প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা ও যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া;

গ. দৈহিক শাস্তির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করতে বিভিন্ন ধরনের জন-অবহিতকরণ কর্মসূচি পরিচালনা করা; এবং দৈহিক শাস্তির বিপরীতে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যেসব অহিংস পন্থা রয়েছে, সেগুলো গ্রহণের জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা।


মৃত্যুদণ্ড  ——    

কমিটি অগণিত রায়ের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন, যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রতিনিধিদলটি বর্ণনা করেছে যে তারা মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ যেসব শাস্তি দেওয়া যেতে পারে, সেদিকে ধীরে ধীরে ধাবিত হচ্ছে। অবশ্য, প্রতিনিধিদলটি উল্লেখ করেছে যে ২০১৩-২০১৭ মেয়াদে যদিও ১ হাজার ১১৯টি মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে, পরে হাইকোর্টে ‘মাত্র’ ১৩০টি ঘটনায় ওই রায় বহাল রাখা হয়েছে। আর ২৩৯টি ঘটনায় সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে সব মিলিয়ে ১৭টি মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়েছে। কমিটি এসব কারণে উদ্বিগ্ন যে এ ধরনের রায় যে বিপুলসংখ্যক বন্দী পেয়ে থাকে, তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়; এ ধরনের বন্দীদের কারাগারে খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে রাখা হয়। এ ছাড়া কমিটির কাছে খবর রয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে, এমন অপরাধের তালিকা আরও সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছে। যেমন ২০১৮ সালের মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে বিষয়টি যুক্ত করার খবর রয়েছে (আর্টিকেল ২, ১১ ও ১৬)।

মৃত্যুদণ্ড মুলতবি রাখার জন্য একটি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়। রাষ্ট্রপক্ষকে মৃত্যুদণ্ডের সব রায়ের বিপরীতে অন্য ধরনের শাস্তি দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে; মৃত্যুদণ্ডের রায় পাওয়া বন্দীদের কারাগারে থাকার জায়গার অবস্থার উন্নতি করতে হবে; সন্ত্রাসবিরোধী আইন, মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন এবং সংশ্লিষ্ট অন্য যেসব আইনে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হতে পারে, সেগুলো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাধ্যবাধকতার আলোকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করতে হবে। আর মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করার লক্ষ্যে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদের দ্বিতীয় ঐচ্ছিক প্রটোকল অনুসমর্থন করার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।


ফলোআপ প্রক্রিয়া  ——    

কমিটি হাইকোর্টের বিভিন্ন নির্দেশনা আইনশৃঙ্খলা-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার বিষয়ে কমিটির বিভিন্ন সুপারিশের ফলোআপ তথ্য ২০২০ সালের ৯ আগস্টের মধ্যে প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের প্রতি অনুরোধ করছে। রাষ্ট্রপক্ষকে একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যেসব স্থানে নাগরিক স্বাধীনতাবঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, সেসব স্থানে নজরদারি করাতে হবে; বিধিবহির্ভূতভাবে আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে হবে; এবং রাষ্ট্রপক্ষের প্রাথমিক প্রতিবেদন বিবেচনায় নেওয়ার প্রেক্ষাপটে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের যেসব সদস্য কমিটিকে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের যেকোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক আচরণ ও হয়রানি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, যার প্রতিশ্রুতি কমিটিকে দিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় (ধারা ২২(খ), ১৬(ঙ), ৩৫(ক) ও ৩১(ঘ) দেখুন)। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপক্ষকে আসন্ন রিপোর্টিং সময়কালের মধ্যেই চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণের ওপর কিছু অথবা অবশিষ্ট সব সুপারিশের বিষয়ে তাদের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা কমিটিকে অবগত করানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।


অন্যান্য বিষয়  ——    

সনদের ২১ ও ২২ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় নির্ধারিত বিষয়গুলোর ঘোষণা দিতে রাষ্ট্রপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছে কমিটি। সনদের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের থাকা আপত্তি প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

কমিটি সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল অনুসমর্থন করতে এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট অন্য গুরুত্বপূর্ণ যেসব চুক্তিতে এখনো অন্তর্ভুক্ত হয়নি, সেগুলো অনুসমর্থন করতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। বিশেষ করে গুম থেকে সবাইকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থন করতে হবে।

কমিটি এ বিষয়ে সুপারিশ করছে যে রাষ্ট্রপক্ষ বিশেষ প্রক্রিয়ার ম্যান্ডেটধারী যে নয়জন পরিদর্শনের অনুমতির জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন, তাঁদের প্রবেশাধিকারের অনুমতি দেবে। এবং বিলম্ব ছাড়াই জাতিসংঘের নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তিবিষয়ক বিশেষ দূতকে; বিচারবহির্ভূত বা বিধিবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডবিষয়ক বিশেষ দূতকে; বিধিবহির্ভূত আটকবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপকে; গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপকে; এবং মানবাধিকারের রক্ষকদের পরিস্থিতিবিষয়ক বিশেষ দূতকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে।

রাষ্ট্রপক্ষ কমিটিকে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটি বৃহত্তরভাবে প্রচারের জন্য এবং চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ উপস্থাপনের অনুরোধ করা হচ্ছে। উপযুক্ত বিভিন্ন ভাষায়, দাপ্তরিক বিভিন্ন ওয়েবসাইট, গণমাধ্যম ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তা প্রকাশ করতে হবে এবং রাষ্ট্রপক্ষকে এই প্রচারমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কমিটিকে অবগত করতে হবে।


আগামী ২০২৩ সালের ৯ আগস্টের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে তার পরবর্তী পর্যায়ক্রমিক প্রতিবেদন (যেটি হবে তাদের দ্বিতীয় প্রতিবেদন) জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে, আগামী ২০২০ সালের ৯ আগস্টের মধ্যে সেই প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে সহজতর রিপোর্টিং প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার জন্য সম্মত হতে আহ্বান জানাচ্ছে কমিটি। সেই প্রক্রিয়ার অধীনে কমিটি রিপোর্টিংয়ের আগেই বিভিন্ন ইস্যুর একটি তালিকা রাষ্ট্রপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে। ইস্যুর সেই তালিকার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের জবাবের বিষয়টি সনদের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত হবে।
  • [অনুবাদ করেছেন আবু হুরাইরাহ্‌, হারুন–অর–রশীদ, রাজিউল হাসান ও অর্ণব সান্যাল]
  • কার্টসি — প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯ 

Wednesday, September 18, 2019

The country’s profit-loss debate on gas exports

Robab Rosan

Professor Anu Muhammad.
Recently, the government reintroduced a new production sharing contract (PSC) with the provision to export gas explored from Bangladesh’s offshore blocks in the Bay of Bengal. This was apparently done to persuade international oil companies to extract gas from the offshore blocks. Robab Rosan of The Daily Star talks to Prof Anu Muhammad, member-secretary of the National Committee to Protect Oil, Gas, Mineral Resources, Power and Port, and Prof M Tamim, a former adviser to the caretaker government, to know their thoughts on the issue.

How do you view the new PSC that reintroduced the provision for the foreign drilling companies to export gas extracted from Bangladesh’s offshore blocks?


I have seen that every time a new PSC is drawn, transparency, national interest, and the long-term results or consequences of a PSC are not considered. In most cases, it is seen that the PSC is drawn based on the model proposed by companies that will be its beneficiaries.

We have always argued that this model of PSC is not in line with the national interest of Bangladesh. The export provision was kept in the 2008 model of PSC as well. We had then demonstrated that 80 percent of gas would be exported to foreign countries through the drilling companies, using the opportunities provided in many of the clauses and the export provision. The export provision was suspended in the face of our protests. However, later it was seen that the opportunities for multinational companies were expanded in other areas. It was seen that it would cost more to buy gas from the extraction companies than to import gas.

You’ll see that LNG is being imported citing the gas crisis in Bangladesh. This so-called crisis is also used to build coal-based power plants and nuclear power plants. Now they are also using the excuse to draw gas export deals. This cannot be acceptable in any way.

What is needed for Bangladesh is to increase national capacity and strengthen institutions like Bapex. This institution should be given the opportunity to explore offshore blocks by further expanding the skills that Bapex has shown onshore. If there is a deficiency somewhere, we can subcontract some of the work or hire foreign experts. But ownership should be 100 percent in the hands of the country. There is no alternative to increasing national capacity to ensure that 100 percent of gas is being used within the country.

Another thing is: the price we will get or the benefit we can derive if the gas fields are owned by the country, will not be available in case of foreign ownership. With foreign ownership, the price of gas rises, competitiveness is reduced, and insecurity is created. Gas and mineral resources are part of national security—having national control and ownership over it is essential not just for our energy security, but also for national security.

In your opinion, which of the clauses of the new PSC seem to contradict our national interest?


The export provision in this PSC is dangerous. For a long time, we have been saying that we will have a seismic survey. We have the ability to do this survey. Or a company can be hired to do so. According to domestic and foreign surveys, the Bay has a good amount of gas reserves. This gas can be used to generate low-cost electricity.

However, an assessment of the prices charged through PSCs shows that it is more reasonable to import gas. This means that our gas will increase the profits of foreign companies and their partners. It will not be of any use to Bangladesh. Moreover, we will have to import LNG at a very high cost while coal-based power plants will be built, doing great harm to the country including the Sundarbans. It is quite unmistakable that this PSC is a trap that we are being thrown into.

In this PSC, it has been said that Petrobangla will be asked first to buy gas. If they do not buy gas, it will then be exported. If Petrobangla buys gas, then there will be no reason for export. Why are you protesting then?


This clause was there too before. It’s just an eye-wash. Whether Petrobangla will buy gas or not will depend on those who are in the energy ministry. Sadly, the main role of those involved with Petrobangla is to provide services to foreign companies rather than to strengthen the organisation. That is why it is seen that despite Bapex’s onshore ability, foreign companies are given the task of exploration for offshore blocks at a cost two-three times higher than the cost at which Bapex can do the work.

In fact, the role of the energy ministry has largely become that of the spokesperson of foreign companies. Many ministry officials are playing the role of their public relations officers in Bangladesh. That is the danger. It is likely that after the PSC is signed (with a foreign company), the cost of extracting gas or the price of gas that will be set will not be economically profitable for us. Then they will argue that it is better to export that gas. Then again, that export money is not likely to come to Bangladesh. The (gas production) sharing provisions will be set in a way that foreign companies will even receive that money eventually. This model should be completely rejected, since it serves only the foreign companies and their local collaborators.

Tell us more about the potential of Bapex.


Bapex is very powerful onshore. Still, onshore work is given to foreign companies instead of Bapex. Capacity cannot be created in a day. It needs time and budget. Unfortunately, budget allocation for mineral resource exploration and extraction is very limited. Moreover, the gas development fund or other funds are not allowed to be used for Bapex’s work. The money is controlled by Petrobangla or the energy ministry. There is no accountability of any sort. Bapex’s capacity is not being utilised.

How do you view the new PSC that reintroduced the provision for foreign drilling companies to export gas extracted from our offshore blocks?


Professor M Tamim
Gas export is the second option here. The first option is that Bangladesh will extract gas. If Bangladesh buys gas, there will be no need to go for the second option. If Bangladesh says it will buy gas, then the companies will not be able to sell gas anywhere else. On the other hand, if Bangladesh does not buy gas, then the companies will be able to export it.

Critics are saying that gas export is against the interest of the country.


In what sense is this against the interest of the country? One may recall that the provision to export gas was also there in the first PSC. But the condition attached there was that it had to be exported in LNG form.

If the question really boils down to only protecting the interest of the country, then a contract can be made with only one condition: that the government will buy all the gas wherever it is found. There must be a guarantee. Then the companies will not object because they want to sell the gas and they will not bother about who buys it.

The companies are taking huge financial risks in offshore exploration. If they do not get gas, everything they invest will be lost. They won’t even get a penny back. And if they get the gas, then they will keep an account of the cost and get their money back accordingly.

If they didn’t do the exploration, we would have to do that, in which case we would have to bear the whole cost. In the existing system, if they do not find gas, then we do not have to pay a penny. This is their risk. This is the basic aspect of the PSC. Then, since they are taking the risk, the gas that will be left after deducting their recovery costs will be divided as “profit gas” between the government and the company involved.

Many complain that if foreign companies extract gas and export their share abroad, both the gas and the profit will end up abroad. In that case, Bangladesh will get nothing.


No, this is not correct. According to PSC’s gas sharing clause, they will also export Bangladesh’s share of gas and Bangladesh will get that money.

Do you agree with those who say that handing over mineral resources to foreigners is not only a threat to energy security but also to national security?


No, I don’t think so. Because our PSC experience so far has been very satisfactory. We have been getting gas for a long time without any problem. About 60 percent of our gas is produced by foreign companies. There is a huge capacity gap within Petrobangla. They are not of international standards.

Can’t Petrobangla’s capacity be developed to meet international standards?


The management and technical know-how of Petrobangla can certainly be raised. However, there is no longer any opportunity to increase its capacity because it will involve a huge investment in hardware purchase. For example, Petronas or other companies are also not involved in many activities themselves. However, they can perform tasks such as dealing with foreign companies, supervising them etc,. They have that training. We should equip our workforce with management and supervision skills.

If foreign companies own the gas fields, will they be able to extract gas or stop extraction whenever they want?


I cannot say anything in this regard. I do not know if there is anything mentioned in the agreement on this issue. There is no detail in the agreement on how much can be exported, how long the gas will be extracted, whether it can or cannot be stopped.

What do you think are the negative aspects of this PSC? Does it have any gaps?


Overall, the deal is okay. But gaps can exist in the contract. All contracts have different kinds of gaps. I haven’t read the agreement in detail yet. So, I cannot say.

What happens when the price of gas in the international market is lower than that of the gas produced here?


Whenever gas price falls in the international market, the price of high furnace oil also goes down. If the price of gas fluctuates in the international market, then the price will fluctuate here too.

LNG is being bought citing gas crisis…

Listen, after extracting gas offshore, it has to be brought through pipelines. After all this, the cost of importing LNG may be lower than that cost. Then, why should I go and buy gas? Then, LNG can be bought at a lower cost with the export money. There can be many other situations. If more gas is found, then Bangladesh will not have the opportunity to make full use of it. So, will they just sit idle? I would like to say that although the contract talks about gas export to attract companies, in reality, the possibility of a circumstance of exporting gas is unlikely. If it is seen that gas is being exported against our best interests, then it can be stopped by agitation.
  • Courtesy  - The Daily Star/ Sep 18, 2019  

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা

এমাজউদ্দীন আহমদ
বাংলাদেশের রাজনীতি কোন পথে- এই প্রশ্ন সুধী সমাজে উঠছে। গণতন্ত্রের অবস্থাই-বা কেমন? গণতন্ত্রের ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক সমঝোতা ও যোগাযোগ। রাজনৈতিক কাজকর্মের মধ্যে পারস্পরিক সহিষুষ্ণতাই সবচেয়ে মূল্যবান উপাদান। যে কোনো সভ্য দেশে এমনটিই দেখা যায়? কিন্তু আমাদের দেশে কী দেখা যাচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তর কী, তাও সচেতন মানুষ মাত্রেরই জানা আছে। সরকার ও বিরোধী দল উভয় পক্ষের রাজনৈতিক নেতাদের প্রধান কাজ জাতীয় সমস্যা ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এখানে বিরোধী পক্ষের রাজনীতিকদের কোনো স্পেসই দেওয়া হয় না। মুশকিলটা হলো, তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে যারা নতুন গণতান্ত্রিক সমাজে প্রবেশ করেছে, সেখানে সহিষ্ণুতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। আমরাও এর বাইরে নই। এমতাবস্থায় গণতন্ত্রের চেহারা-চিত্র কেমন হতে পারে, তাও সচেতন মানুষ মাত্রেরই জানা আছে।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিশ্চিতকরণ ক্ষেত্রে একদিকে যেমন প্রয়োজন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, অন্যদিকে তেমনি প্রয়োজন রাজনীতির কুশীলবদের গণতান্ত্রিক মন। গণতন্ত্রের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য দুটিই অপরিহার্য। সফল গণতন্ত্রে দুই-ই চলে পাশাপাশি, অনেকটা হাত ধরাধরি করে। একটি পিছিয়ে গেলে অন্যটি সহায়তা করে। হাত ধরে কাছে টানে। কোনো সমাজে গণতন্ত্রের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি এই দুটিই এবং এদের সুষম সমন্বয়। কোনো সমাজে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হলেই যে গণতন্ত্র প্রাণবন্ত হবে, তা ঠিক নয়। বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে জাতীয় সংসদের মতো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সংগঠিত মন্ত্রিপরিষদ। স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারও; কিন্তু থাকলে কী হবে, এসব প্রতিষ্ঠান শুস্ক কাঠামোর মতোই। গণতান্ত্রিক প্রাণরসে এসব প্রতিষ্ঠান কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় জারিত হয়নি। যারা এসব প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করছেন, তাদের গণতান্ত্রিক চেতনার রসে তা সিক্ত নয়। গণতান্ত্রিক মনের স্পর্শে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণবন্ত হয়নি।

গণতন্ত্রের উদারতায় চারদিক উজ্জ্বল হয়ে ওঠেনি। সংকীর্ণতার ঘন অন্ধকারে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দল তাই হয়ে উঠেছে দলীয়করণের মাধ্যম। জাতীয় সংসদ হয়ে উঠেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের শক্তিমত্তার বাহন। নির্বাচন ব্যবস্থা চালু আছে বটে; কিন্তু প্রকৃত অর্থে জনমতের যথাযথ রায়দানে এর প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি কতটা স্বচ্ছ, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। দেশে গণতন্ত্রের উপযোগী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো রচিত হয়েছে নিশ্চয়ই; কিন্তু এই কাঠামোয় প্রাণের স্পন্দন আসেনি। অন্তঃকরণের স্ম্ফুরণ ঘটেনি। অস্থিমজ্জার সতত সঞ্চালনের ফলে সৃষ্ট গতিশীলতার জন্ম হয়নি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র তাই অনেকটা প্রাণহীন বিগ্রহের মতোই। গণতন্ত্রের আদল রয়েছে ঠিকই; কিন্তু নেই প্রাণের প্রতিষ্ঠা। নেই এর অন্তঃকরণ। তাই জনগণের কাছে নেই এর যথাযথ আবেদন। সংযম, বোঝাপড়া, আপস-মীমাংসা, আদান-প্রদান, সহিষুষ্ণতার মানদণ্ডে বাংলাদেশের গণতন্ত্র অনেকটা শুস্ক কাঠখণ্ডের মতো নিষ্প্রাণ, নিশ্চল, নিরেট। কিন্তু কেন? কথাগুলো বহুবার বলা হয়েছে, আবারও বলছি।

সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্র দু'ধারায় পরিপুষ্ট হয়েছে। সমৃদ্ধ হয়েছে মানবসভ্যতার দুটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অধ্যায়ের উন্নত অবদানে। গ্রিক সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান শাসনব্যবস্থায় জনগণের সংশ্নিষ্টতা লাভ করে গণতন্ত্র হয়েছে জনগণের সরকার। প্রথমে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ, পরে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের পরোক্ষ অংশগ্রহণের জন্যই সৃষ্টি হয়েছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে রোমান সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান হলো জনগণের সুনির্দিষ্ট অধিকার, আইনের শাসনের মাধ্যমে অধিকার সংরক্ষণের সুব্যবস্থা, বিশেষ করে সাংবিধানিকতার ঘন আস্তরণে ঢাকা গণতান্ত্রিকতাই এই ব্যবস্থার প্রাণস্বরূপ।

এই দুইয়ের সম্মিলন যে শাসনব্যবস্থায় ঘটেছে, তাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। জনগণ অথবা জনগণের প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কেউ শাসনব্যবস্থা পরিচালিত করলে তা হয় স্বৈরাচার। অন্যদিকে জনগণ অথবা জনগণের প্রতিনিধি কর্তৃক পরিচালিত ব্যবস্থায় যদি সাংবিধানিকতা ক্ষুণ্ণ হয়, আইনের শাসন অনুপস্থিত থাকে অথবা জনগণের অধিকার সংরক্ষিত না হয়, তা হলেও সেই ব্যবস্থা পর্যবসিত হয় নির্বাচিত স্বৈরাচারে। দুই-ই গণতন্ত্রের বিপরীত। দুই-ই গণতন্ত্রের শত্রু। দুই ব্যবস্থাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে হাজার যোজন দূরের। দুটিই জনস্বার্থবিরোধী। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পর্যালোচনা করলে অনুধাবনে কোনো অসুবিধা হয় না যে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে দেশের শাসনব্যবস্থা কীভাবে নির্বাচিত গণতান্ত্রিকরূপে রূপান্তরিত হয়েছে শুধু ক্ষমতাসীন মহলের নীতিনির্ধারকদের গণতান্ত্রিক মনের অভাবে।

উন্নত গণতান্ত্রিক সমাজে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং গণতান্ত্রিক মনের সম্মিলন জন্ম দিয়েছে এক ধরনের সংস্কৃতির। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পরিচালনায় সেই সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি অপরিহার্য এক উপাদানে পরিণত হয়েছে। বন্যা আসুক, ঝড় উঠুক, চারদিক অন্ধকারে আচ্ছন্ন হোক, কোনো সমাজে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটলে শাসনব্যবস্থায় কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয় না। কেননা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মৌল ভিত্তি হলো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা সম্পর্কে শুধু রাজনীতির কুশীলবদের মধ্যে নয়, সমগ্র সমাজব্যাপী সৃষ্ট ঐকমত্যের এক সুখদ আবহাওয়া। এই আবহাওয়ায় প্রত্যেকের কাছে সুস্পষ্ট থাকে নিজ নিজ অধিকার এবং নিজ নিজ দায়িত্বের বিষয়টি। সুস্পষ্ট থাকে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রকৃতি, এর প্রয়োগ এবং প্রয়োগকারী কর্তাদের প্রকৃতি সম্পর্কেও। কখন কোন দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকবে, কোন অবস্থায় তারা ক্ষমতা ছেড়ে দেবে, কখন নির্বাচন হবে, কীভাবে তা সম্পন্ন হবে, কারা বিরোধিতা করবে, কীভাবে বিরোধিতা করবে, বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক কী- এসব বিষয়ে সমাজব্যাপী এক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মূল কথা তা-ই। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির আর একটি উপাদান হলো সংসদীয় আচরণ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতি যেহেতু সংবিধানের আলোকে জনস্বার্থ সংরক্ষণ ও জনকল্যাণের লক্ষ্যে সুসংহত এক যৌথ কর্ম, তাই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পারস্পরিক আলাপ-আলোচনায়, আদান-প্রদানে, বক্তব্য-বিবৃতিতে, আইন পরিষদের ভেতরে এবং বাইরে কীরূপ আচরণ করবেন, তা নির্দিষ্ট হয় সংসদীয় আচরণের নিরিখে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি একদিনে গড়ে ওঠেনি। শত শত বছরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে, অনেকটা অভিজ্ঞতার স্রোতধারায় সঞ্চিত স্বর্ণরেণুর মতো সামগ্রিক প্রজ্ঞা হিসেবে তা উঠে এসেছে মানবসভ্যতায়।

এদিক থেকেও দেখা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবস্থা অনেকটাই অনুজ্জ্বল। নির্বাচিত হলেই যে সরকার গণতান্ত্রিক হয় না, আইনের প্রাধান্য তথা জনগণের অধিকার সংরক্ষণে ব্যর্থ অথবা উদাসীন হলে, শুধু নির্বাচনের ভিত্তিতেই পীড়নমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখলে যে সরকার নির্বাচিত অগণতান্ত্রিক শাসকরূপে পরিণত হয়, তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ বাংলাদেশেই দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতো সুস্থ প্রতিযোগিতা উন্নত গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিচায়ক। প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লক্ষ্যে দল পর্যায়েও গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। বিভিন্ন দল পারস্পরিক আদান-প্রদানে গণতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করে থাকে। জাতীয় পর্যায়ে গণতন্ত্রকে সুসংহত করার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম দলে গণতন্ত্রের চর্চা করে থাকে। প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলেও বৈরিতার পথ পরিহার করে। বাংলাদেশে কিন্তু এই সংস্কৃতির কোনোরূপ বিকাশ ঘটেনি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইন পরিষদ বা পার্লামেন্ট হলো সব নীতিনির্ধারক এবং জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। সংসদীয় আচরণের সৌষ্ঠবে জাতীয় সংসদ কিংবা আইন পরিষদ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কোনো সময় অকথা অথবা কুকথার কেন্দ্রে তা পর্যবসিত হয় না। প্রকৃতপক্ষে আইন পরিষদই হলো জাতীয় মেধার প্রাণকেন্দ্র, জাতীয় নেতৃত্বের প্রধানতম কেন্দ্র। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে কোনো কোনো সদস্যের আলোচনার মান পর্যবেক্ষণ করলে, সদস্যদের রুচিবোধের মাত্রা অনুভব করলে যে কেউ এই মন্তব্য করবেন যে, এটি শুধু অপরিণত নয়, অপরিশীলিত। জাতীয় রাজনীতির প্রধান কেন্দ্রের চেহারা যখন এমন, তখন রাজনীতি যে উন্নত মান অর্জনে সক্ষম হবে না, তা বলাই বাহুল্য।

বাংলাদেশে আজকে রাজনীতি যে পথে চলছে এর জন্য অবশ্য তীব্র সমালোচনা যথেষ্ট নয়, সমাজবিজ্ঞানীদের সৃজনশীল বিশ্নেষণে সমাজ জীবনে ঝড় তুলতে হবে। সমগ্র সমাজকে গণতন্ত্রের ভিত্তি সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। সব সামাজিক শক্তিগুলোকে গণতন্ত্রের জন্য তৈরি করতে হবে। সামাজিক শক্তিগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ভিত্তির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি না দিয়ে অট্টালিকার শীর্ষের দিকে তাকালে যেমন কোনো ফল লাভ হয় না, সামাজিক শক্তিগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ না ঘটিয়ে, নিম্নপর্যায়ে সংসদীয় আচরণের ব্যাপক বিস্তার সম্ভব না করে, শুধু রাজনৈতিক দল এবং দলীয় নেতা-নেত্রীর কার্যক্রম ও আচরণ বিশ্নেষণ করলে শুধু হতাশা বৃদ্ধি পাবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না। সচেতন নাগরিকদের তা স্মরণে রাখা উচিত।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান রচিত হয়েছে বটে; কিন্তু রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের অনেকের মধ্যে গণতান্ত্রিক মন এখনও সৃষ্টি হয়নি। অথচ গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য এই দুটিই হলো অপরিহার্য। অগণতান্ত্রিকতার দৈত্যপুরীতে ঘুমন্ত গণতন্ত্রের ঘুম ভাঙানোর জন্য সোনা ও রূপার কাঠির মতো মহামূল্যবান রাজনৈতিক নেতৃত্বের রাজকুমার বাংলাদেশে ঘুমে অচৈতন্য গণতন্ত্রকে জাগানোর জন্য কখন এই দুটি কাঠি নিয়ে উপস্থিত হবেন? এই প্রেক্ষাপটে অরাজনৈতিক সিভিল সোসাইটির প্রধানতম দায়িত্ব হলো, শুধু প্রশ্ন উত্থাপন নয়, রাজনীতির লক্ষ্য সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা, সামাজিক শক্তিগুলোর মধ্যে সচেতনভাবে সামাজিক স্বার্থ সম্পর্কে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা, বিশেষ করে দেশে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান রচনার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর মধ্যে গণতান্ত্রিক মন বিনির্মাণ করা যে অপরিহার্য, তা সুস্পষ্টভাবে উচ্চারণ করা। তা হলেই এমন বিবর্ণ কিংবা এক পরীক্ষায় রাজনীতির গণ্ডি থেকে সমাজ মুক্ত হতে পারবে। গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী
  • কার্টসিঃ সমকাল/ সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯ 

Saturday, September 14, 2019

‘Bangladesh should stay alert and observe Assam situation’

Badiuzzaman Bay

Dr Imtiaz Ahmed, a professor of international relations and director, Centre for Genocide Studies at the University of Dhaka, talks to Badiuzzaman Bay of The Daily Star about the ongoing crisis in Assam following the publication of the final National Register of Citizens (NRC) and its repercussions for Bangladesh.


Dr Imtiaz Ahmed
The final NRC in India’s Assam was published on August 31, leaving out 19.6 lakh people. This followed years of chaos, protests and political wrangling over the issue of “illegal migrants” from Bangladesh—and is now expected to result in a protracted legal battle before any resolution of the issue. How do you view this development?

First of all, this demonstrates the extent to which politicians can go to exploit an issue and the devastating effect that it may have. After the release of the final NRC in Assam, the number of the excluded came down to 1.9 million (an earlier list had excluded about 4 million). Out of these people, some 11 lakhs are supposedly Hindus and the remaining eight are Muslims. While the list itself remains highly debatable, it is a fact that BJP has time and again pointed out that it would grant citizenship to any Hindus coming from Afghanistan, Pakistan and Bangladesh. So that leaves us, hypothetically speaking, with eight lakh unresolved cases. In the final headcount, that number is likely to further come down. This downward trend in numbers is quite embarrassing for right-wing parties like the BJP that wanted to score political points by creating fear among ordinary Indians about the illegal migrants and, by extension, the Muslims. But they can’t—or won’t—change their rhetoric, however. So you hear them now saying that they want to “weed out” illegal immigrants not just from Assam but the entire India.

Secondly, we need to understand how the NRC issue came in the first place. Assam is a state in India’s northeast, a region that is relatively underdeveloped, which makes the migrants or “outsiders” easy targets of popular anger. This anger is often stoked or justified by politicians saying, incorrectly, that migrants will crowd out local residents and eat into their livelihood opportunities. We have seen similar situations even in developed countries like the US and the UK. You can win an election by using this anti-immigration, anti-development rhetoric but eventually its fault lines are going to get exposed.


Despite repeated warnings from BJP leaders including its president Amit Shah about “illegal migrants” from Bangladesh, the country seems to be in a denial mode about the possible outcome of this vitriol-filled campaign for Bangladesh—calling it India’s “internal affair”. Are we failing to see the bigger picture?

As tempting as it is to look at it that way, I think we should take a step back and assess the situation based on facts. First of all, Amit Shah is a politician and what he said reflects more the policy of his party than that of the Indian government. Now compare his comment, if you will, with the comment of India’s Minister of External Affairs Subrahmanyam Jaishankar, who had reportedly told his Bangladeshi counterpart that the NRC is India’s internal affair and that Bangladesh has nothing to worry about. Jaishankar is a diplomat, not a politician. What he said comes across as a more accurate reflection of the reality, and for good reasons. For one, the NRC issue has never come up in any Bangladesh-India official meeting at any level. I think Bangladesh would have taken it up with India, like it readily does in case of other strategically important issues, had there been a real danger.

We need to understand that the NRC is not as straightforward a case as it seems. It has emerged as a polarising factor in India and is facing pushback from various quarters. West Bengal remains a persistent opponent. The fact is, there are Bengalis spread across India. You throw away the Bengalis from one part of India, you are—as West Bengal Chief Minister Mamata Banerjee has put it—inviting a civil war in other parts of it. In Assam, contrary to what BJP and other right-wing parties are saying, a big part of the movement of population or the concentration of Bengalis was actually the result of internal migration to Assam from West Bengal, not from Bangladesh.

With its Hindutva ideology and its fixation on the illegal-Bangladeshi-Muslim-immigrant narrative, it appears the BJP is following the two-nation theory based on religion, first advocated by the Scottish historian James Mill. One may recall that the theory was taken up by the Rashtriya Swayamsevak Sangh, BJP’s ideological parent, even 17 years before Jinnah. Bangladesh broke out of this theory’s influence in 1971 but India under BJP seems to be returning to the fold. The very idea of Hindutva is in essence an extension of the two-nation theory that Hindus and Muslims are different nations and, therefore, incompatible. I sincerely hope the Indian society will reject it.

The illegal immigrant issue forms part of the BJP’s national security plank and has figured in the party’s manifesto since 1996. I mention this because in its second term in office, the BJP has shown a proclivity to make good on its controversial electoral pledges with the help of its absolute majority in parliament, which became evident after its decision to scrap the special status for Jammu and Kashmir. Do you see a pattern here that could affect the course of the NRC development?

Well, these are all politically saleable issues. With Jammu and Kashmir, all political parties in India had played politics, including the Congress. What happened in Kashmir is that the BJP only made “de jure” what had always been “de facto”. Let’s face it: there was no autonomy in Kashmir even before the abrogation of its special status. It had always been under Delhi’s control. There were 600,000 troops in Kashmir. So legally, you had article 370 but in practice, there was no autonomy and no special status. But they went ahead with the abrogation decision as a practical measure because the situation in Kashmir was going out of hand. Anyone who follows Kashmir knows that in the last 10 years, militancy was more homegrown than exported from Pakistan. How many troops are you going to put there to combat it? Kashmir as a region already had the highest concentration of troops in the world.

Coming back to your question about a pattern, no, I don’t think there’s any, because there is a big difference between playing politics with Kashmir and playing politics with NRC. In Kashmir, it’s the Muslims versus the rest of India. But in case of the NRC, there is no such political consensus. Bengalis include both Hindus and Muslims. Don’t forget, Bengali Muslims in West Bengal are also a big vote bank for Mamata. So the two issues are similar only in the sense that they are both politically saleable, but this time the BJP will have to tread very carefully because the stakes here are really high.

Some have compared the NRC to the Rohingya crisis, both being stark examples of states stripping a minority of their citizenship. In fact, like Assam, Myanmar also accuses the Rohingyas of being migrants from Bangladesh and refers to them as “Bengalis” in order to reinforce that narrative. What’s your take on this?

I think the comparison is a little far-fetched. The Rohingya crisis is a totally different issue. The Rohingyas as a community had to face a slow genocide, one might say, since as far back as 1962. Myanmar wanted to destroy this community first by not recognising them as an ethnic community, then slowly by imposing other restrictive and discriminatory measures. This whole “genocide” issue is missing in case of the NRC. Also, India has a secular constitution and a strong civil society and there is already resistance to the NRC from within the country. So I wouldn’t compare the Rohingya crisis to the NRC, which is a different ball game altogether.

To give you a little perspective on this, let me share a personal experience. In September 2004, I had visited Guwahati in Assam which, I was told, was full of Bangladeshis. I heard that there were slums and neighbourhoods inhibited by them. So along with two of my students, I went there to document their stories. Surprisingly, we didn’t find a single Bangladeshi in Guwahati at that time. Not a single one! When confronted, my sources then claimed that the Bangladeshis lived in the border areas. So, you see, I am not at all surprised by the increasingly thinning list of NRC left-outs. Speaking of borders, border areas have been historically fluid. Even on this side of the border, there are areas in some haors where you will see that people know the Assamese language.

So how would you assess the Assam situation from Bangladesh’s perspective? What should we do going forward?

Not much at this stage. But we should remain alert and closely observe the situation. For its part, India needs to find a way out of this quagmire and I hope it will sooner than later. There are some legal theories as to what should be done with those declared “foreigners,” but none involves a deportation to Bangladesh. While I am convinced that there is no real danger for Bangladesh, it’s imperative that Indian politicians discontinue their ongoing anti-Bangladesh rhetoric: firstly, because it will embolden the communal and anti-Indian elements in Bangladesh—a prospect that should worry both countries—and secondly, because Bangladesh is not Pakistan. Bangladesh is India’s closest ally in the region, and it is unreasonable why Delhi would want to jeopardise that. Bangladesh is also extremely important for the security of India’s north-east of which Assam is a part. In addition, India needs to think about the minorities living in Bangladesh and the sizeable Indian expat community who might be affected by any hostile tactic on its part.

  • Courtesy  - The Daily Star/ Sep 14, 2019  

Wednesday, September 11, 2019

চাঁদাবাজির দেশ

ড. আবদুল লতিফ মাসুম


মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান একবার বলেছিলেন, এটা বাজিকরের দেশ। বাজিকর বলতে তিনি চাঁদাবাজ, দলবাজ, রংবাজ, ধান্ধাবাজ, চালবাজ ইত্যাদি, হরেক রকমের ‘বাজিকর’দের বুঝিয়েছেন। এটি একটি অপ্রিয় সত্য যে, মূলত আমরা চাঁদাবাজ নিয়ন্ত্রিত সমাজ ও রাষ্ট্রে বসবাস করছি। ঘর থেকে বাইরে পা ফেলার পর থেকেই আপনাকে বিভিন্ন রকমের চাঁদাবাজির মোকাবেলা করতে হয়। কোথাও যাবেন, নিজ গাড়িতে অথবা বাসে, পথে পথে আটকাবে পুলিশ। আরো আছে টোলের নামে সরকারি চাঁদাবাজি। চাকরি চাইবেন? ব্যক্তি ও দলকে ‘চাঁদা’ দিতে হবে। ব্যবসা করতে চান? সিন্ডিকেট আছে। চাঁদা দিতে হবে ওদের। ভালো স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করাবেন? সেখানেও লিখিত-অলিখিত চাঁদাবাজি চলছে। খাবার কিনবেন বা খাবেন? সেখানেও ভ্যাট নামক আইনসিদ্ধ ‘চাঁদাবাজি’। হাসপাতালে রোগী ভর্তি করাবেন? আছে চাঁদাবাজির জন্য ‘দালাল’। এসব প্রশ্নের সমর্থনে টিভি চ্যানেলে এবং সংবাদপত্রে প্রতিদিন প্রতিবেদন দেখতে পাচ্ছেন।

সংবাদপত্র থেকে সাম্প্রতিক কিছু খবরের নমুনা দেয়া হলো। 

এলেঙ্গা হাইওয়েতে পুলিশের ব্যাপক চাঁদাবাজি 
(২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ : ইত্তেফাক)। 
চাঁদাবাজি করেই ওরা গাড়ি বাড়ির মালিক 
(সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৯ : জনকণ্ঠ)। 
চাঁদাবাজি যে গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা : গ্রেফতার ৯ 
(১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ : ভোরের কাগজ)। 
আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা, দুইজনের রিমান্ড আবেদন 
(৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ : নিউজ নারায়ণগঞ্জ)।
চাঁদাবাজি মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান 
(২২ আগস্ট ২০১৯ : জাগো নিউজ ২৪.কম)। 
নাটোরে নিষিদ্ধ থ্রি হুইলার থেকে যুবলীগ নেতার চাঁদাবাজি 
(৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ : বাংলাদেশের খবর)। 
শেরপুর-জামালপুরের মতো প্রতিটি জেলায় এখন পথে পথে হচ্ছে চাঁদাবাজি। ছাতকে চাঁদাবাজি নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, ওসিসহ আহত ৫০ 
(১৫ মে, ২০১৯ : সিলেট ভিউ.২৪কম)। 
শৈলকুপা পৌরমেয়রের চাঁদাবাজি বন্ধে বিক্ষোভ 
(৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ : দেশ সংবাদ)। 
বরগুনার অপরাধচক্র ০০৭ বন্ড গ্রুপ 
(৭ জুলাই ২০১৯ : ডেইলি স্টার)। 
ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে সোর্সের চাঁদাবাজি, জনতার ধাওয়া, পালাল দুই এএসআই
 (১৭ আগস্ট ২০১৯ : আওয়াজ বিডি.কম)। 
সীতাকুণ্ড চাঁদার টাকার ভাগ নিয়ে বিরোধে যুবক খুন 
(৩০ আগস্ট ২০১৯ : যুগান্তর)। 
সাঁথিয়ায় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনি, নিহত ২ 
(৭ আগস্ট ২০১৯ : ইত্তেফাক)। 
মদনপুরে বেপোরোয়া খলিল-কাবিলা বাহিনী 
(৩ সেপ্টেম্বর : ডান্ডিবার্তা)। 
রাস্তায় নয়, অফিসেই চাঁদা নিতে চান এনায়েত উল্যাহ 
(১৫ এপ্রিল ২০১৯ : চ্যানেল আই)। 
শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরিঘাটে গাড়ি পারাপারে চাঁদাবাজির অভিযোগ 
(১৪ মে ২০১৯ : বাংলাট্রিবিউন.কম)। 
পাহাড়ে বন্ধ হচ্ছে না খুন-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি। এক বছরে ৪৫ খুন অপহরণ অর্ধশত 
(১১ নভেম্বর ২০১৮ : ইনকিলাব)।
ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ, সীতাকুণ্ডে যুবক খুন
(৩০ আগস্ট ২০১৯ : বাংলাদেশ মেইল.নিউজ)।
জকিগঞ্জে চাঁদাবাজ সালামকে চার্জশিট থেকে বাঁচাতে পুলিশের পাঁয়তারা! 
(২৩ আগস্ট ২০১৯ : সাপ্তাহিক ক্রাইম সিলেট)।

এসব সংবাদ পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে, কিভাবে চাঁদাবাজি আমাদের সমাজের গহিন গভীরে বাসা বেঁধেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ সবচেয়ে ব্যাপক। বোঝা যায়, কিভাবে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা চাঁদাবাজির মাধ্যমে আঙুল ফুলে শুধু কলাগাছ নয়, তালগাছ হয়ে গেছে। তারা চাঁদাবাজি করেই গাড়ি-বাড়ির মালিক। এই তো সেদিন যাদের দুবেলা ভাত জুটত না, আমাদের চোখের সামনেই গত এক দশকে তারা এখন গাঁও-গেরামে দালান-কোঠা তুলেছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাঁদাবাজিকে তারা পেশা হিসেবে নিয়েছে। এর উদাহরণ রাজধানীতে আরো স্পষ্ট। রাজধানীর সব ফুটপাথে ‘হকার্স মার্কেট’ বসিয়ে চাঁদাবাজি করে মোটা অঙ্কের আয় করছে তারা। একেক জায়গায় একেকজন চাঁদাবাজ গডফাদারের আবির্ভাব ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জে গডফাদার কী ভাষায় প্রশাসনকে শাসিয়েছে, গত সপ্তাহের পত্র-পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়েছে। আজমেরী তার ভাইয়ের ছেলে। তাকে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাই এখন আস্ফালন। স্থানীয় পর্যায়ের নেতা চেয়ারম্যান, মেম্বারদের নানা কারসাজিতে চাঁদাবাজির বিষয়টি এ দেশে অনেক পুরনো। রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা স্থানীয় পর্যায়ে যেন ভদ্রতার আবরণ ছুড়ে ফেলেছেন। এখন তারা চৌকিদার কিংবা ঝাড়–দার থেকেও নাকি ঘুষ নেন। সেখানে চাঁদাবাজির নতুন এক কৌশল অবলম্বন করছেন স্থানীয় নেতারা। বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের হামলা ও মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করছেন তারা। তবে মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে রেহাই পাচ্ছেন কেউ কেউ। গত বছর নির্বাচনের আগে ও পরে গায়েবি বা আজগুবি মামলার ঘটনা সবারই জানা। চাঁদা না দিলে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের সহায় সম্পত্তি, জমি, ঘের-মৎস্য খামার দখল করে নিচ্ছেন শাসক দলের নেতাকর্মীরা। চাঁদাবাজির বড় একটি শিকার প্রবাসীরা। বিমানবন্দর থেকে তাদের ওপর চাঁদাবাজি শুরু। হয়তো ভেবেছেন, ঘরে ফিরলে রেহাই পাবেন তারা। কিন্তু সেখানেও চাঁদাবাজদের হানা। দলীয় চাঁদাবাজদের হামলায় কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে অতি সম্প্রতি। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি সবচেয়ে ব্যাপক এবং ওপেন সিক্রেট। পথে পথে ঘাটে ঘাটে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পকেটে গুঁজে নিচ্ছে পুলিশ। ড্রাইভার থেকে মালিক পর্যন্ত চাঁদাবাজির চ্যানেল সম্প্রসারিত। চাঁদাবাজি নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রায়ই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে শাসকদলের দুটো সংগঠনে এর ব্যাপকতা ভয়ঙ্কর-ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। এদিক দিয়ে ছাত্রলীগ এতটা ‘সুনাম’ কুড়িয়েছে যে, তাদের প্রধান উপদেষ্টা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিদারুণ নাখোশ হয়েছেন। চাঁদাবাজিতে মানুষ এত বেশি ক্ষুব্ধ যে, গণপিটুনিতে তারা প্রাণ হারাচ্ছে। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি নিয়ে আধিপত্যের চলছে লড়াই। অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে পাল্টাপাল্টি গ্রুপিং এবং খুনের ঘটনা ঘটছে। এসব নিয়ে মামলা মোকদ্দমা হচ্ছে না, তা নয়। তবে পুলিশের সহযোগিতায় আইনের ফাঁকফোকড়ে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে অনেকে।

এসব হলো বেসরকারি চাঁদাবাজির গল্প। অতি সাম্প্রতিককালে সরকারি চাঁদাবাজিও প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শাসক দলের লুটপাটে রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য হতে চলেছে। আর্থিক সঙ্কট মেটাতে বিভিন্ন উৎস থেকে বিপুল ঋণ নিচ্ছে সরকার। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ব্যয় নির্বাহ করতে সরকার অন্যান্য উৎস থেকেও অর্থের জোগান খুঁজছে হন্যে হয়ে। গত বছরে ৬৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠান মুনাফা করেছে। আর লোকসান দিয়েছে ২০টি। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনব্যয় মেটানোর পরে বাড়তি টাকার পরিমাণ দুই লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি। এই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ হিসেবে জমা আছে। সব টাকা পয়সা ‘ফতুর’ করার পর সরকারের এবার নজর পড়েছে এই অর্থের ওপর। এসব সরকারি স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের টাকা নিয়ে নেয়ার বুদ্ধি এঁটেছে সরকার। উন্নয়নের নামে প্রায় অচল হয়ে পড়া রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এই অর্থ জমা দেয়ার আইন করছে সরকার। এবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে এ জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন এই আইন অনুযায়ী আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালন ব্যয়ের সাথে এর আরো ২৫ শতাংশ অর্থ এসব সংস্থা সংরক্ষণ করতে পারবে। ওই সংস্থার কর্মীদের পেনশন বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থও তারা সংরক্ষণ করবেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, পেট্রোবাংলার ১৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ৯ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের চার হাজার ৩০ কোটি টাকা এখন সরকার আইনানুগভাবেই নিয়ে নিতে পারবে।

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ব্যয় নির্বাহ করতে ব্যাংক থেকে ব্যাপক ঋণ গ্রহণ করেছে সরকার। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৩৯ দিনে ২৩ হাজার ৭৬১ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ সরকার নিয়ে ফেলেছে। এটি নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের চেয়েও বেশি। এদিকে, সরকারকে এ ঋণের জোগান দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়েছে।



ব্যাংকিংখাতে অবাধ লুটপাটে জনগণের আস্থা হ্রাস পেয়েছে। উঠতি ধনিকশ্রেণী সরকারের আনুকূল্যে অযাচিত ও অন্যায় ঋণ গ্রহণ করছে। ব্যাংক খাতে তাই আমানত কমে গেছে। অন্যদিকে, ঋণ প্রবাহ বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার ঘাটতি শুরু হয়েছে। অপরদিকে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ছিল তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে গড় হিসাবে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে সরকার আশা করছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ধার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক থেকে এ ধরনের অর্থ গ্রহণ সরকারের একপ্রকার দেউলিয়া হওয়ার লক্ষণ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। এটি বাংলাদেশের গত ৪৮ বছরের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

সরকারি অর্থ আয়ত্তাধীন করার পরও বর্তমান সরকারের যেন খায়েশ মিটছে না। সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় তথা পরিবহন খাতে যখন ব্যাপক লুটপাট চলছে, তখন সরকার জাতীয় মহাসড়কে আইনসম্মত চাঁদাবাজির ব্যবস্থা পাকাপাকি করে ফেলছে। বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোতে গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে টোল নেয়ার নিয়ম চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকের সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাংলাদেশে সেতু পারাপার আর কোনো কোনো উড়াল সড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে টোল আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়ক ও জনপদে বিভিন্ন কায়দায় টোল আদায় করা হচ্ছে; কখনো সড়ক কর্তৃপক্ষের নামে, আবার কখনো বা পরিবহন সমিতির নামে অথবা জনকল্যাণের নামে। একনেকের সভার নির্দেশনার পর সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান প্রণয়ন করছে। অবশ্য এতে জনগণের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। কারণ যখনই কোনো কর ধার্য করা হয়, ব্যবসায়িক মহল প্রকারান্তরে তা সাধারণ মানুষের ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দেয়। রাজনৈতিক দলগুলো মহাসড়কে টোল আদায়ের প্রস্তাব প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে। জনসাধারণ আশা করে, সরকার জনস্বার্থে প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা নেবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাঁদাবাজি জনসাধারণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সরকার যত শিগগিরই বিষয়টি অনুধাবন করবে, ততই জনগণের মঙ্গল। 

  • লেখক অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। 
  •  কার্টসি —  নয়াদিগন্ত /সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯। 

NRC in Assam: What Happened? What’s Next?

Ali Riaz


People check their names after the publication of the final list of the National Register of Citizens (NRC) at a roadside shop in Pavakati village of Morigoan district on August 31, 2019. Photo: AFP

The bizarre phenomenon called updating the National Registry of Citizens (NRC) in Assam, completed under the auspices of the Indian central government with direct supervision of the Indian Supreme Court, which made 1.9 million people stateless citizens, has engendered strange events to date and indicates the likelihood of stranger episodes in the coming months. Since the culmination of a four-year process with the publication of the final list on 31 August, not only did those who have been excluded became devastated, but also the progenitors of this controversial task are now dissatisfied with the outcome but for a different reason.

Although the genesis of the crisis is well known, it is necessary to recall as many of the current features of the crisis and the possible trajectories shaped by it. The issue of updating the 1951 National Register of Citizens (NRC) came to the fore in in the six-year long agitation by All Assam Students Union beginning in 1979 which demanded the “identification and deportation of illegal immigrants” from Assam. The expression “illegal immigrant” was a clear reference to Bangla speaking people, alleging that they have “migrated” from Bangladesh. The movement, initially billed as against the “outsider”, was transformed into a movement against “foreigners”. Massacres throughout the period, particularly in 1983, of Bangla speaking Muslims who have lived for generations, were neither spontaneous nor sporadic, but instead were well planned and brutally executed; in some cases, plans were hatched for months.

While the All Assam Students Union (AASU) and the All Assam Gana Sangram Parishad (AAGSP), were at the forefront, the All Assam Volunteers Force (AAVF) was a key actor in the agitation and violence. There were allegations that the AAVF was acting on behalf of or was at least connected to the RSS. Besides, by the admission of the RSS ideologues Rajat Sethi and Shubhrastha, (The Last Battle of Saraighat: The Story of the BJP’s Rise in the North-east, 2017), the RSS had established its branches all over the Assam by 1975 and the “selfless service by swayamsevaks from all across the country” was instrumental in building the organisation. As such, the tone, tenor and contour of the agitation had the marks of RSS’s long-term agenda. Therefore, it is not surprising that the BJP, as it became stronger all around the country and had its eyes set in the northeast, weaponised the issue of citizenship in the 2000s.

The Assam Accord, signed in 1985 with then Prime Minister Rajiv Gandhi, remained on paper until the Supreme Court in 2013 pushed it to the politicians’ court. The BJP’s initial slow move, which the BJP supporters are now trying to portray as the BJP’s reluctance, was not because it was less enthusiastic, but instead it was preparing the ground for a larger gain—tying it up with its national anti-Muslim agenda and xenophobic exclusionary jingoism that has permeated the Indian society in the past decade. Day by day the ground was prepared in Assam and nationally, by the Assam Gana Parishad (AGP), the legatee of the so-called anti-foreigners’ movement, and the BJP, the product of the RSS, respectively.

With the interjection of the Supreme Court, various institutional actors, such as the bureaucracy, became entangled in the politics of identity in a highly polarised society where religion has been pushed by Sangh Parivar as the principal marker. The exercise no longer remained about who is or who is not a citizen in the legal term, but what constitutes citizenship, who determines the citizenship and how the discourse of citizenship is framed, propagated and consumed. The implication of this exercise will neither be limited to Assam—as the BJP has already demanded NRC in other states; nor will it be restricted to the outcome of the “appeal process” in Assam, for it has already shaped the discursive terrain of citizenship. Who among the 1.9 million, now being referred to the Foreigners Tribunal, escape the disenfranchisement, is important from the humanitarian point of view and in legal terms, but how politics of religiously informed identity becomes the essential part of being Indian is the more important issue with larger ramifications. That is what the NRC debate and the list have achieved.

Of course, the BJP’s claim that Assam is inundated by millions of “infiltrators” and “termites”—in other words Bangladeshis—who need to be thrown out, has not been validated; even the initial list of 4 million—a figure which was close to the BJP and AGP propaganda—tuned out to be grossly inaccurate. In equal measure, the expectation that the list will contain overwhelming numbers of Muslims, has not come true. Instead the majority, according to some account 60 percent, are Bangla speaking Hindus. There are also many people of Nepali origin, despite living in Assam for decades and generations, excluded. Those who are taking comfort in this information and arguing that the BJP has lost the game, should be careful as to whether this argument will feed into the BJP propaganda and eventually help similar exercises in other states. The inherent bias of the exercise against Muslims can’t be ignored because the list has a smaller number of them. Throughout the process of NRC, BJP and its ilk had made it amply clear that Muslims are the “enemy” who will be identified. This is not isolated from the lynching of Muslims in the name of cow protection, and the activities in Kashmir. Additionally, if we juxtapose this with the previously proposed 2016 Citizenship (Amendment) Bill, which promises to offer citizenship to all except the Muslims, there is no scope for doubt as to the content of the BJP agenda.

Since publication of the draft list and more so after the final list, the BJP and its ilk are crying foul and demanding rectification. The bizarre development is that one of the principal backers of the NRC in Assam has called for a general strike and threatening to launch agitations. There seems to be consensus among political parties—from the BJP to Congress to TMC—that the NRC list, which cost 1300 crore Indian rupees, is unacceptable. Notwithstanding the political objective of the NRC process, one can say without the hesitation that it has been bungled up. Assam’s finance minister, Himanta Biswas Sarma, a vocal supporter of NRC has spewed anti-immigrant venom, and claimed in August 2018 that legacy papers—those which prove longstanding residency of the inhabitants—have been “managed”, rendering the process of updating the NRC ineffective. But there is no reason to expect that the NRC will be scrapped altogether.

What comes next?

Those who are not listed can appeal to the Foreigners Tribunal (FT) in the next 120 days, and later seek redress from the court of law. According to media reports, Assam has 100 Foreigners Tribunals, 221 more are to be set up in all districts soon, and eventually the number will be about 500. But there are reasons to be concerned about the process itself. The discrepancy between the draft list and the final list clearly points to an inefficient bureaucracy. It took almost a year for it to sort out some of the mess. Will the FTs be another example of the incompetence? Can an issue which is fraught with political overtone be addressed fairly by a state appointed institution? There are logistical questions, can such a huge number of applications be dealt with in such short time?  Will the poor people have the resources to pursue the process, especially those whose appeal will fail in the FT process?

The Indian government clearly said that until the legal process is exhausted nobody will be considered as a foreigner, and that pushing them back to Bangladesh is not on the table. But there is no clear direction as to what will happen thereafter. The news that new detention centres are being built does not send a positive message to those who are to be disenfranchised. In June the press reported that the state government was preparing to build ten more detention centres in addition to six it already has. During the negotiations between the Congress-led central government and the agitators, leading to the Assam Accord in 1985, one suggestion was to resettle those who will be deemed “outsider” to other states, under the auspices of the central government. The proposal didn’t make into the 1985 Accord. That seems to be not in the mind of the central government at this point.

The logistical issues aside, despite the debacles of the process, the belligerent rhetoric of the Sangh Parivar hasn’t subsided. Therefore, what is most likely to happen in the coming months is the enactment of the Citizenship (amendment) Bill. The implication of this requires no elaboration—religion as the principal marker of Indian citizenship will be enshrined in the constitution, forever.



  • The writer is a Distinguished Professor of Political Science at Illinois State University, USA.
  • Courtesy — The Daily Star/ Sep 8, 2019.