Search

Sunday, March 31, 2024

মেজর জিয়ার ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল বাঙালি সৈনিকেরা

সাক্ষাৎকার:  মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম 




১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান। তার স্বাধীনতার ঘোষণা জাতিকে অনুপ্রাণীত করেছে, উজ্জীবিত করেছে। এমন একটি ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের ঈর্ষাভাজন হয়েছেন; এই ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের ছিল না। জিয়াউর রহমানকে নানান ধরনের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। এই মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআরের বাঙালি সৈনিকেরা।

৫৪তম মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলা আউটলুককে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা আউটলুকের ঢাকা প্রতিনিধি।

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, পড়াশোনা শেষ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১৯৬৮ সালে কমিশন পান। প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের মার্চে হাফিজ উদ্দিন তার ইউনিটের সঙ্গে যশোরের প্রত্যন্ত এলাকা জগদীশপুরে শীতকালীন প্রশিক্ষণে ছিলেন। ২৫ মার্চের পর তাদের ডেকে পাঠানো হয় এবং ২৯ মার্চ তারা সেনানিবাসে ফেরেন। পরে যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রথম অফিসার হিসেবে বিদ্রোহ করে যোগ দেন যুদ্ধে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষ করে ভারতে যান। যুদ্ধকালে তিনি কামালপুর, ধলই বিওপি, কানাইঘাট ও সিলেটের এমসি কলেজের যুদ্ধে বেশ ভূমিকা রাখেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য তিনি বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত হন।

বাংলা আউটলুক: প্রথম কারা অস্ত্র হাতে ধরেছিলেন?

মেজর হাফিজ: ১৯৭১ সাল জাতির জন্য গর্ব। অদ্ভূত এক সময়, একাত্তর সালে এই জাতিকে যারা দেখেনি, তারা এই জাতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকবে। পাকিস্তানিরা আমাদেরকে ঘৃণা করতো। তারা বলতো, ‘এরাতো মাছ খায়, নন মার্শল রেস্, এটা কোনো জাতিই না’। কিন্ত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে আমরা সাহসী জাতি। প্রথমে আমি প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ২০০ সৈনিক নিয়ে যশোর ক্যন্টনমেন্টে বিদ্রোহ করি। আমিই একমাত্র বিদ্রোহী অফিসার ছিলাম। ক্যান্টনমেন্ট থেকে বাইরে আসার পর দেখি হাজার হাজার ছাত্র-যুবক দৌঁড়ে আসছে আমাদের কাছে, এদের অধিকাংশই স্কুল কলেজের সাধারণ ছাত্ররা, সাধারণ মানুষ। এরা কেউই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। আমাদের কাছে এসে বলছে, ‘স্যার আমাদেরকে অস্ত্র দেন, আমরা যুদ্ধ করব’।

বাংলা আউটলুক: মূলত কারা এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?

মেজর হাফিজ: মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকেরা। যার সূচনা করেছিলেন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান। তার স্বাধীনতার ঘোষণা জাতিকে অনুপ্রাণীত করেছে, উজ্জীবিত করেছে। আওয়ামী লীগের জন্য ঈর্ষার কারণ হয়েছেন তিনি। তারা ঘোষণা দিতে পারেননি। ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের ছিল না। সৈনিকদের পক্ষ থেকে মেজর জিয়া এ ধরনের একটি ঘোষণা দিয়ে তাদের (আওয়ামী লীগের) ঈর্ষাভাজন হয়েছেন। নানান ধরনের মিথ্যা অপবাদ তাকে দেওয়া হয়। মূলত যুদ্ধ শুরু করেছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআরের বাঙালি সৈনিকেরা। এদের সাথে যোগ দিয়েছে হাজার হাজার ছাত্র, যুবক। সুতরাং এই স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা কেউ আলাদাভাবে দেখতে পারবে না।


বাংলা আউটলুক: কোন প্রেক্ষাপটে মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন?

মেজর হাফিজ: মুক্তিযুদ্ধের অনেকগুলো ফেইস বা ধাপ ছিল। এর প্রথম উন্মেষ ঘটে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। তার পর দীর্ঘ দিন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে ছাত্ররা। অবশেষে এসেছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ৭০ সালের ভোটে যিনি জিতেছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান, তিনি অবশ্যই বড় মাপের নেতা। কিন্তু তার সংগ্রাম ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের আন্দোলন। বেলুচিস্তান, পাঞ্জাব, ফর্টিয়ার প্রভিঞ্জ, সিন্ধু এদের সমান ভাগ তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তানি কাঠামোয়। পূর্ব পাকিস্তানকে যেন বঞ্চিত করা না হয়, এটিই ছিল ২৪ বছরের আওয়ামী লীগের আন্দোলন। কিন্তু ২৫ মার্চ ভয়াবহ গণহত্যার পর বাঙালিরা তখন নামে এক দফার আন্দোলনে এবং এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর’র সৈনিকেরা, হাজার হাজার ছাত্র যুবকেরা, গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষ এসে এই যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব পাকিস্তানের ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। সাধারণ মানুষ তাদেরকে ভোট দিয়েছিলেন, এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু তারা স্বাধীনতার কথা কখনো চিন্তা করেনি। ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর বাঙালিদের স্বাধীনতার কথা ভাবতে বাধ্য করা হয়েছে। একটি ঘুমন্ত জাতি জেগে উঠেছিল। আমরা যদি সৈনিকেরা সশস্ত্র নেতৃত্ব না দিতাম, এ দেশ আজও স্বাধীন হতো না, আজও পাকিস্তান থাকতো। আমরা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা অপেক্ষায় ছিলাম, শেখ মুজিব হয়তো স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন, সেটি যখন তিনি দেননি এবং তার কাছে স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য যখন তাজউদ্দিন আহম্মেদ টেপ রেকর্ডার নিয়ে গিয়েছিলেন ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে, তখন তিনি (শেখ মুজিব) বলেছিলেন, ‘আমি কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারব না, তাহলে আমি বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হব’। সুতরাং পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব তিনি নিতে চাননি। কিন্তু জনতা তখন পাগল-পাড়া, পাক বাহিনীর এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বাঙালি সৈনিকেরা। ১৯৭১ সালের এই যুদ্ধ ছিল জনতার যুদ্ধ, সাধারণ মানুষের যুদ্ধ। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের যুদ্ধ নয়।

বাংলা আউটলুক: কোন ধরনের মানুষ সেদিন সাথে পেয়েছিলেন যুদ্ধে?

মেজর হাফিজ: বিভিন্ন পেশার লোক ছিল। আমি বেনাপোল অঞ্চলে যুদ্ধ করেছি। সেখানে বাসের ড্রাইভার, হেলপার, কৃষক, মুদি দোকানদার এমনকি ওই এলাকায় যারা স্মাগলার ছিল, সেই সমস্ত যুবকরাও এসে আমাদের সাথে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল। কারণ জাতির তখন মহা দুর্দিন। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে হয়েছে।

বাংলা আউটলুক: স্বাধীনতার এত বছর পরও কে ঘোষণা দিয়েছে, কে দেয়নি- এই বিতর্ক করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে কি-না?

মেজর হাফিজ: অবশ্যই অপমান করা হচ্ছে। এটি হচ্ছে বর্তমান শাসক দল যে ইতিহাস বিকৃত করেছে তারই একটি প্রমাণ। সবাই জানে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু তারা প্রচার করে, শেখ মুজিবুর রহমান রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই একটি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, টেলিফোনে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন ইপিআর’র সিগনাল সেন্টারে। ইপিআর’র সিগনাল সেন্টার থেকে বর্হিঃবিশ্বে এটি ইথারের মাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে। এই মেসেজটি ধরেছে চট্টগ্রামের বহিঃনোঙ্গরে নোঙ্গর করা একটি বিদেশি জাহাজ। সেই জাহাজ থেকে ফোন করে নাকি জানিয়েছে চট্টগ্রামের কোন এক নেতাকে। প্রকৃতপক্ষে ২৩ মার্চ থেকেই পিলখানায় বাঙালি অফিসারদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে পাকিস্তানিরা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। ২৫ মার্চ রাতে প্রথমেই ইপিআরের শত শত সৈনিককে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু এই মেসেজ পাঠানো, রিসিভ করা এসব মিথ্যাচারের কোনো প্রয়োজন নেইতো। এমনিতেই শেখ মুজিব অনেক বড় নেতা। তার ডাকে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছিল। আমরাতো স্বীকার করি, এমনকি জিয়াউর রহমান সাহেবও তো সেটা স্বীকার করেন। কিন্তু যেহেতু তারা স্বাধীনতা নিয়ে চিন্তা করেনি, স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ ছিল না, সে জন্যই সাধারণ সৈনিকদের, সাধারণ মানুষের কৃতিত্বকে ম্লান করে দেবার জন্যই এই কল্প কাহিনীর অবতারণা করেছেন তারা।

বাংলা আউটলুক: আওয়ামী লীগ কেন এই বিষয়টি নিয়ে এমন করে, আপনার কী মনে হয়?

মেজর হাফিজ: আওয়ামী লীগ ঘটনাচক্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে। মুক্তিযুদ্ধতো সাধারণ মানুষ করেছে। তার পর উদার হৃদয়ে দেশের মানুষ তাদেরকেই ক্ষমতায় মেনে নিয়েছে। প্রথম দিন থেকেই মানে ১৯৭২ সাল থেকেই তারা গণতন্ত্র হত্যার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। ১৯৭২ সালে ডাকসুর ব্যালট পেপার তারা হাইজ্যাক করেছে। ১৯৭৩ সালে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল, সেটি ছিল কারচুপিতে ভরপুর। প্রার্থী হাইজ্যাক, ব্যলটবাক্স ছিনতাই এসব দিয়েই তাদের আসল চরিত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাদের চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ পেয়েছে ৭৫ সালে, বাকশাল ঘোষণার মধ্য দিয়ে। সুতরাং, গণতন্ত্রে যে তারা বিশ্বাস করে না, সেটি আমরা আগেই দেখতে পেয়েছি। বর্তমানে এই যে ১৬ বছর ধরে দেশ শাসন করছে, দুর্নীতিতে তারা সিদ্ধহস্ত। সাধারণ মানুষের কোনো অধিকার নেই। যেই গণতন্ত্রের জন্য ৭১ সালে লড়াই হয়েছে, সেই গণতন্ত্রকেই তারা নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার নেই, বাক স্বাধীনতা নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র শাসনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার দল বিএনপি সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের দল, তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে আসছে।

বাংলা আউটলুক: এমন পরিস্থিতিতে এই স্বাধীনতা দিবসে সাধারণ মানুষের প্রতি কী আহ্বান?

মেজর হাফিজ: আমরা বয়সে যখন তরুণ ছিলাম, আরো যারা শহীদ হয়ে গেছেন তাদের রক্তের বিনিময়ে, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মোটেই বাস্তবায়িত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান চেতনা ছিল- গণতন্ত্র। আজ সেই গণতন্ত্রই দেশ থেকে নির্বাসিত। সুতরাং, জনগণের প্রতি আমাদের উদাত্ত্ব আহ্বান, রাজপথে নেমে এসে কঠিন আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবারো বাস্তবায়িত করে গণতন্ত্রকে আবারো দেখতে চাই। রাষ্ট্র শাসনের মধ্যেই মানুষের মতামত এবং অধিকার প্রতিফলিত হচ্ছে এটি দেখতে চাই। মহান মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য ছিল, সাম্য-মানবিক মর্যাদা-গণতন্ত্র এই লক্ষ্যগুলো প্রতিষ্ঠিত করার লড়াইয়ে সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানাই। বর্তমান দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে রাজপথে নেমে আসুন।

বাংলা আউটলুক: আপনারা যারা মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, তারা কী পারবেন এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়ে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে?

মেজর হাফিজ: আমার বিশ্বাস আছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন সততা এবং দেশপ্রেমের, সেটি অবলম্বন করে বিএনপি দেশে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এই সংগ্রামে অবশ্যই আমরা বিজয়ী হবো। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যসমূহ বিএনপির নেতৃত্বেই একদিন বাস্তবায়িত হবে। এই দেশের লড়াকু জনগণ নিশ্চয়ই তাদের অধিকার ফিরে পাবে।

  • ২৬ মার্চ, ২০২৪

সাবেক আইজিপির অপকর্ম — বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ



ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ভাঙ্গা চৌরাস্তা থেকে টেকেরহাট হয়ে সামনে এগোলেই গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল গ্রাম। নিভৃত এই পল্লীর মাঝে গড়ে তোলা হয়েছে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র, যেখানে এক রাত থাকতে গেলে গুনতে হয় অন্তত ১৫ হাজার টাকা। রিসোর্টের ভেতরে ঘুরে দেখা গেছে একই সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর হাতে গড়া আভিজাত্যের অপরূপ মিশেল। বিশাল আকৃতির ১৫টি পুকুরের চারপাশে গার্ড ওয়াল, দৃষ্টিনন্দন ঘাট, পানির কৃত্রিম ঝরনা ও আলোর ঝলকানি।


পার ঘেঁষে রয়েছে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স কটেজ। বিদেশি শিল্পীদের নিপুণ হাতে তৈরি হয় এসব স্থাপত্য নকশা। কটেজের ভেতর থেকে পুকুর পর্যন্ত এমন পথ নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে মাটিতে পা ফেলার প্রয়োজন নেই; সরাসরি কটেজ থেকে কাচে ঘেরা আবরণ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় শান-বাঁধানো ঘাটে। সাভানা ইকো রিসোর্টের পরিধি এতটাই বড় যে সাহাপুর গ্রামের নাম লিখে গুগলে সার্চ দিলে এই রিসোর্টটিই আগে ভেসে ওঠে পর্দায়।


প্রায় এক হাজার ৪০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই ইকো রিসোর্টের বিভিন্ন জায়গায় মাটি ভরাট করে বানানো হয়েছে কৃত্রিম পাহাড়। সাগরের কৃত্রিম ঢেউ খেলানো সুইমিং পুলও রয়েছে এখানে। আছে হাজারের বেশি ভিয়েতনামি নারকেলগাছসহ বিভিন্ন ফলফলাদির গাছ। রয়েছে উন্নতমানের সাউন্ড সিস্টেমসহ বিশাল আকৃতির কনসার্ট হল।


দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একক পরিবারের জন্য বানানো এসব কটেজের পেছনে ব্যয় হয়েছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি। যুগলদের কাছে কটেজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রিসোর্টের ভেতরে এখন আরো ৫০টি কটেজ নির্মাণ করা হয়েছে। এত সব আয়োজন যেখানে, সেই রিসোর্টের নিরাপত্তায় পাশেই বসানো হয়েছে ‘বিশেষ’ পুলিশ ফাঁড়ি। যাতায়াতের জন্য সরকারি খরচে বানানো হয়েছে সাত কিলোমিটারের বেশি পাকা সড়ক।


দেশে এ রকম নজিরবিহীন আভিজাত্যে ঘেরা পর্যটন স্পটটির মালিকপক্ষ কারা জানেন? অবিশাস্য হলেও সত্য যে রাষ্ট্রীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারপ্রাপ্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের পরিবার।


সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বেনজীরের বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর এবং পরিচালক ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর।


শুধু এই এক ইকো রিসোর্টই নয়, পুলিশের সাবেক এই প্রভাবশালী শীর্ষ কর্মকর্তা তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের নামে অন্তত ছয়টি কম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে। এর পাঁচটিই নিজ জেলা গোপালগঞ্জে। জেলা সদরের সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা পাওয়া গেছে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে রয়েছে বেনজীর আহমেদের অঢেল সম্পদ। দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছেই দামি এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরো ১০ বিঘা জমি।


এই বিপুল সম্পদের মালিক পরিবারের কর্তা পুলিশের সাবেক আইজি ও র‌্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদ সরকারি বেতন-ভাতা থেকে কত টাকা উপার্জন করেছেন, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় করেছেন এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা। এর বাইরে পদবি অনুযায়ী পেয়েছেন আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। বাংলাদেশ পুলিশের ৩০তম মহাপরিদর্শক ছিলেন তিনি। ২০১১, ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম)। অবসরে যাওয়ার আগে ২০২১ সালে ভূষিত হন শুদ্ধাচার পুরস্কারেও। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার পর বেরিয়ে আসে সাবেক এই পুলিশকর্তার থলের বিড়াল।


সম্পদের মালিকানায় স্ত্রী ও দুই মেয়ে


অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সুকৌশলী বেনজীর আহমেদ নিজের নামে কোনো সম্পদ করেননি, করেছেন তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে। গোপালগঞ্জে সাভানা ফার্ম প্রডাক্টস, সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেড, সাভানা ন্যাচারাল পার্ক, সাভানা ইকো রিসোর্ট, সাভানা কান্ট্রি ক্লাব বানিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড নামের একটি কম্পানিতে বড় মেয়ে ফারহিনের নামে এক লাখ, আর ছেটে মেয়ে তাহসিনের জন্য কেনা হয়েছে আরো এক লাখ শেয়ার। এম/এস একটি শিশির বিন্দু (রেজি. পি-৪৩০৩৬) নামের ফার্মের ৫ শতাংশের মালিকানায় নাম রয়েছে বড় মেয়ের। আরো ৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে ছোট মেয়ের। একই প্রতিষ্ঠানে বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার রয়েছে ১৫ শতাংশ অংশীদারি। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটিতে মোট ২৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও মেয়েদের।


যৌথ মূলধনী ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে একটি নথি কালের কণ্ঠ’র হাতে এসেছে। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাবেক পুলিশ ও র‌্যাব কর্তা বেনজীর আহমেদ তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করেছেন সাভানা অ্যাগ্রো। ২০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনধারী সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক তিনজন। ১০টি শেয়ারধারী স্ত্রী জীশান মীর্জা চেয়ারম্যান, সমপরিমাণ শেয়ারের অধিকারী ২৯ বছর বয়সী বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর এমডি। আর মাত্র ২৪ বছর বয়সী ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর আছেন পরিচালক হিসেবে। প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে সরেজমিনে যায় কালের কণ্ঠ। সেখানে দেখা গেছে, ২০ কোটি নয়, সাভানা অ্যাগ্রোর রয়েছে কয়েক শ কোটি টাকার বিনিয়োগ ও ব্যবসা।


বেনজীর আহমেদের পরিবারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো সাভানা ন্যাচারাল পার্ক প্রাইভেট লিমিটেড। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কম্পানির (আরজেএসসি) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই কম্পানির অনুমোদিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকা। সাভানা অ্যাগ্রোর মতো এই কম্পানির মালিকানায়ও আছেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে। যথারীতি এখানেও স্ত্রী চেয়ারম্যান এবং মেয়েদের একজন এমডি, অন্যজন পরিচালক। প্রত্যেকের হাতে রয়েছে এক লাখ করে মোট তিন লাখ শেয়ার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই পার্কের আয়তন প্রায় ৬০০ বিঘা। পার্কটি বড় করতে পাশে আরো ৮০০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। এখন ভরাট করা হচ্ছে।


যৌথ মূলধনী কম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে পাওয়া নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাভানা অ্যাগ্রোর নিবন্ধনে ঠিকানা হিসেবে দেওয়া হয়েছে ২২৮/৩, শেখপাড়া রোড, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঠিকানাটি বেনজীরের শ্বশুরবাড়ি। বেনজীরের শ্বশুরের নাম মীর্জা মনসুর উল হক ও শাশুড়ির নাম লুত্ফুন নেসা মনসুর।


নথির তথ্য মতে, বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার জন্ম ১৯৭৩ সালের ১০ জুলাই। বড় মেয়ের জন্ম ১৯৯৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ছোট মেয়ে জন্মেছেন ২০০০ সালের ১২ এপ্রিল। দুই মেয়ে মাত্র ২৯ ও ২৪ বছর বয়সেই কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন প্রভাবশালী পুলিশকর্তা বাবার অবৈধ আয়ের ওপর ভর করে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। স্ত্রী জীশান মীর্জারও তেমন কোনো বৈধ আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও বিপুল বিনিয়োগে গড়ে তোলা ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি। জীশান মীর্জার পৈতৃক সূত্রে এত পরিমাণ সম্পদ পাওয়ার সুযোগ নেই। একইভাবে বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীরের ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বিয়ে হলেও ছোট মেয়ের এখনো বিয়েই হয়নি। বড় মেয়ের বিয়ের প্রায় ১২ বছর আগে থেকেই বেনজীর কম্পানিগুলোর জন্য জমি কেনা শুরু করেন এবং মেয়েকে কম্পানির এমডি বানান।


সরেজমিনে বেনজীরের রিসোর্ট


বেনজীরের সম্পদের খোঁজে সরেজমিন অনুসন্ধানে গোপালগঞ্জ যায় কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানী দল। বৈরাগীটোল এলাকায় সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কটিকে স্থানীয়রা ‘বেনজীরের চক’ নামে চেনে। পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের ডিজি থাকাকালে এলাকাটিতে স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে প্রায় এক হাজার ৪০০ বিঘা জমি কেনেন তিনি। এসব জমির বিঘাপ্রতি ক্রয়মূল্য ছিল তিন থেকে আট লাখ টাকা।


এলাকাবাসী জানায়, বেনজীর জমিগুলো কেনার পর অন্ততপক্ষে ১৫ ফুট ভরাট করে রিসোর্ট বানিয়েছেন। কারণ এগুলো ছিল বদ্ধ জলাশয়। নিচু হওয়ায় বেনজীরের রিসোর্টটি আগে ছিল মাছের অভয়ারণ্য।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাভানা রিসোর্টে ১৫টি কটেজ বানানো শেষ করে পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এগুলো কাপলদের কাছে শুধু দিন হিসাবে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা, রাত হিসাবে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত একই দামে, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। রিসোর্টে চাকরিরত দায়িত্বশীলরা জানান, যেকোনো বয়সী ছেলেমেয়ে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই এসব কটেজে থাকতে পারে। চাইলে রাত যাপন করতে পারে। বেনজীর বিলাসবহুল এই রিসোর্ট চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন থাইল্যান্ডসহ পশ্চিমা বিশ্বের আদলে।


রিসোর্টটির আলোকসজ্জা করতে কোনো মিটার ছাড়াই কিলোমিটারের পর কিলোমিটার বিদ্যুতের সরকারি তার সরবরাহ করা হয়েছে কোনো খুঁটি ছাড়াই। মাটির ওপর দিয়ে নেওয়া এসব বৈদ্যুতিক তার যে কারো জন্যই প্রাণনাশের হুমকিস্বরূপ। সাগরের কৃত্রিম ঢেউ খেলানো সুইমিং পুলও রয়েছে এখানে। আছে হাজারের বেশি ভিয়েতনামি নারকেলগাছসহ বিভিন্ন ফলফলাদির গাছ।


শুধু তাই নয়, রিসোর্টটির নিরাপত্তায় পাশেই বসানো হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থায় উন্নতি না হলেও এই রিসোর্টে প্রবেশ স্বাচ্ছন্দ্য করতে সাত কিলোমিটার সড়ক পাকা করা হয়েছে সরকারি খরচে। রিসোর্টের ভেতরেও সর্বত্র করা হয়েছে ঢালাইয়ের রাস্তা। রিসোর্টের সব রাস্তার হিসাব করলে দেখা যায়, প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক পিচ ঢালাই করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, বেনজীরের নিজ প্রতিষ্ঠানের এসব রাস্তাও করা হয়েছে সরকারি খরচে।


জানতে চাইলে রিসোর্টের ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানী টিমকে বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ এটিকে সাজাচ্ছেন দেশের সবচেয়ে বড় ইকোপার্ক ও বিলাসবহুল রিসোর্টের পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে। এ জন্য যা যা দরকার, তা-ই করা হচ্ছে।’


বেনজীরের কেনা জমির কয়েকজন মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ক্রমাগত চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেন বেনজীর। ভয়ভীতিতে কাজ না হলে ভেকু দিয়ে জমির মাটি নিয়ে যেতেন। গভীর গর্ত করে শেষ পর্যন্ত জমি বিক্রি করতে বাধ্য করতেন। পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন পদে থাকায় তাঁর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি জমির মালিকরা।


ঢাকা ও পূর্বাচলে বিপুল টাকার সম্পদ


অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশানে সুবিশাল অভিজাত একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে বেনজীর আহমেদের। গুলশান ১ নম্বরের ১৩০ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িটির নাম ‘র‌্যাংকন আইকন টাওয়ার লেক ভিউ’। ভবনের ১২ ও ১৩তম তলায় আট হাজার ৬০০ বর্গফুটের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তাঁর। সূত্র জানায়, আট হাজার ৬০০ বর্গফুটের এই অ্যাপার্টমেন্টের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।


ভবনটি নির্মাণ করে র‌্যাংকন ডেভেলপমেন্টস। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯.৭৫ কাঠা জমিতে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের আয়তন দুই হাজার ১৫০ বর্গফুট। এখানে রয়েছে ১৩টি ফ্লোর এবং দুটি বেইসমেন্ট। সত্যতা নিশ্চিত করতে সরেজমিনে গেলে ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মো. সবুজ কালের কণ্ঠকে জানান, ১২ ও ১৩তম তলায় রয়েছে বেনজীরের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।


এ ছাড়া রাজধানীর মগবাজার আদ-দ্বীন হাসপাতাল সংলগ্ন ইস্টার্ন প্রপ্রার্টিজের একটি বহুতল ভবনে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন বেনজীর আহমেদ।


পূর্বাচলে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি করেছেন বেনজীর আহমেদ। আনন্দ হাউজিং সোসাইটির দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় পোড়া মোড়ের পাশের এলাকায় অন্তত ৪০ কাঠা জমির ওপর গড়েছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি। জমি ও বাড়ির মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা বলে ধারণা স্থানীয়দের।


ওই এলাকার বাসিন্দা মো. শাহাদাত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই এলাকা ডোবা ও বিল হিসেবে আমরা দেখেছি। কিছুদিন আগেও এসব এলাকায় আমরা মাছ ধরেছি। পুলিশের কর্মকর্তারা আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরপরই বেনজীর আহমেদ এই জায়গায় মাটি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন।’


দীর্ঘদিন ধরেই আনন্দ হাউজিং সংলগ্ন এলাকায় অটো চালান মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, সোসাইটির ভেতরে সবচেয়ে দামি বাড়ি এটি। আনন্দ হাউজিং এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে বেনজীরের ডুপ্লেক্স বাড়িটি দেখার জন্য মাঝেমধ্যে ভিড় জমায় সাধারণ মানুষ।


রাজধানীর পূর্বাচলের ফারুক মার্কেটের পেছনের দিকে ১৭ নম্বর সেক্টরের ৩০১ নম্বর রোডের জি ব্লকে ১০ নম্বর প্লটের মালিক পুলিশের সাবেক এই আইজি। স্থানীয়রা বলছেন, ১০ কাঠা পরিমাণের এই প্লটের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২২ কোটি টাকা। বেনজীর আহমেদ পুলিশের আইজি থাকাকালে এই প্লট কেনেন। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, পুলিশের এই সাবেক আইজি তাঁর ১০ কাঠার প্লটটি বিক্রির পরিকল্পনা করছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু ক্রেতার সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। ওই এলাকার মোহাম্মদ নাঈম, আব্দুল কাদের ও মোহাম্মদ মোহসিন নামের তিন ব্যক্তি পুলিশের সাবেক এই আইজির ১০ কাঠার প্লটটির বিষয়ে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।


নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নাওড়ায় বেনজীর আহমেদের রয়েছে দুই বিঘা জমি, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।


বেনজীরের দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান। কেউ যদি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন, দুদক তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।’


বেনজীর আহমেদ পুলিশের একজন প্রভাবশালী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন, এ ক্ষেত্রে দুদক কতটুকু কী করতে পারবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আইনে প্রভাবশালী নিয়ে কিছু বলা নেই। সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীরও দুর্নীতির বিচার হয়েছে। সুতরাং যে কারো দুর্নীতির বিষয়ে দুদক চাইলে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে পারে।


জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, “বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই অনুসন্ধান করা হবে। তবে এখানে বলে রাখা ভালো, কারো বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে পর্যাপ্ত ‘সাপোর্টিং পেপারস’ আমাদের কাছে থাকতে হয়।”


তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট ও সঠিক তথ্য পেলে দুদক বেনজীর কেন, যে কারো বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান করবে। আর সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পরও যদি অনুসন্ধান না করা হয়, তাহলে দুদকের বিরুদ্ধেই তো রিপোর্ট হবে।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে কালের কণ্ঠ’র পরিচয় দিয়ে খুদে বার্তা পাঠিয়ে নিউজের বিষয়ে বক্তব্য প্রয়োজন বলে জানানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।


দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও লা মেরিডিয়ানে ২ লাখ শেয়ার

মেয়ের বিশ্রামের জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট

-----

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মেয়ে ক্লাসের ফাঁকে একটু সময় কাটাবেন, এ জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনেন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালে র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এই ফ্ল্যাট কেনেন তিনি। সি ব্লকের ৪০৭ নম্বর প্লটে সাত কাঠা জমির ওপর নির্মিত আটতলা ভবনের পঞ্চম তলায় তাঁর কেনা ফ্ল্যাটের আয়তন সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেনজীর আহমেদের বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।


ক্লাসের বিরতির সময় তিনি যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে বিশ্রাম নিতে পারেন, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেই এই ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল। তাঁর এই ফ্ল্যাট নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে।

সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে কথা হয় ভবনের নিরাপত্তাকর্মী তমিজ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি প্রায় ১৪ বছর ধরে এখানে কাজ করছেন।


তমিজ জানান, প্রস্তুত হওয়ার তিন বছর পর্যন্ত বেনজীর আহমেদের মেয়ে ফ্ল্যাটটি ব্যবহার করতেন। মাঝেমধ্যে বেনজীর তাঁর স্ত্রীসহ ফ্ল্যাটটিতে আসতেন। বছরখানেক আগে খোকন নামের গোপালগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর কাছে ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেন বেনজীর।

ভবনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বেনজীর আহমেদ ফ্ল্যাটটি ডেকোরেশনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিলেন।


কয়েকটি দরজারই মূল্য ছিল ৫০ লাখ টাকার বেশি। ভেতরের আসবাবও ছিল চোখ-ধাঁধানো। এ নিয়ে ওই ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দাদের মনেও কৌতূহলের অন্ত নেই।

 


দুই মেয়ের নামে পাঁচতারা হোটেলের মালিকানা


প্রাথমিক গণপ্রস্তাব প্রক্রিয়া (আইপিও) শেষে সম্প্রতি পুঁজিবাজারের ভ্রমণ ও আবাসন খাতে তালিকাভুক্ত হয় বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। এই বেস্ট হোল্ডিংসের অন্যতম প্রকল্প হলো বৈশ্বিক ব্যান্ড হিসেবে খ্যাত পাঁচতারা হোটেল ‘লা মেরিডিয়ান’।


তালিকাভুক্তির আগ থেকেই কম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন ও প্রসপেক্টাসে তথ্যের ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ থাকলেও একজনের ক্ষমতায় শেষ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কম্পানিটি। অভিযোগ রয়েছে, নামে-বেনামে এই কম্পানির বড় অঙ্কের শেয়ার ছিল বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের হাতে। তাই মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়েই পুঁজিবাজারে আসে কম্পানিটি।

পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে অনুসন্ধানে নামে কালের কণ্ঠ। বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের দেওয়া প্রসপেক্টাস অনুসন্ধানে বের হয়েছে চমকপ্রদ তথ্য। জানা যায়, কম্পানিটির দুই লাখ শেয়ারের মালিক সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুই মেয়ে। দুই মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে রয়েছে সমানসংখ্যক শেয়ার। ৫৫ টাকা অধিমূল্যে ৬৫ টাকা প্রতিটি শেয়ারের দর হিসাবে এই কম্পানিতে সাবেক আইজিপির দুই মেয়ের বিনিয়োগ রয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা।


অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালে বেস্ট হোল্ডিংসের দুই লাখ শেয়ার দুই মেয়ের জন্য কেনেন বেনজীর আহমেদ। ওই সময় র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।


তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বেস্ট হোল্ডিংসের শেয়ার কিনতে ফারহিন ব্যবহার করেছেন সার্কিট হাউসের ঠিকানা। বেস্ট হোল্ডিংসের প্রসপেক্টাসের ১৮৯ নম্বর পৃষ্ঠায় এই ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিকানার স্থলে লেখা হয়েছে : হাউস-১০, সার্কিট হাউস, শান্তিনগর, রমনা, ঢাকা। ঠিকানার পাশাপাশি উভয়ের বিও অ্যাকাউন্ট নম্বরও জানা গেছে।


বিও অ্যাকাউন্ট হচ্ছে বেনিফিশিয়ারি ওনার অ্যাকাউন্ট। এর মাধ্যমে ইস্যুয়ার কম্পানি তার শেয়ারহোল্ডার বা বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বা কম্পানির মালিকানা হস্তান্তর করে। বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীরের দেওয়া বিও অ্যাকাউন্ট নম্বর ১২০৬৩৫০০৭৫৬৮৫১৩২ এবং তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিও অ্যাকাউন্ট নম্বর ১২০৬৩৫০০৭৫৬৮৫২৫৮।


কত ছিল বেনজীরের বৈধ আয়?

--------

অবসরের আগে পুলিশের সর্বোচ্চ পদে আসীন ছিলেন বেনজীর আহমেদ। ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবন তাঁর। ১৯৮৮ সালে মাসিক এক হাজার ৪৭০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু। আর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরিজীবন শেষ করেন ৭৮ হাজার টাকা বেতনে।


সব মিলিয়ে তিনি বেতন-ভাতা বাবদ আয় করেন এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা।

বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের ৩০তম মহাপরিদর্শক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান। এর আগে ২০১১, ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম)।


অবসরে যাওয়ার আগে ২০২১ সালে ভূষিত হন শুদ্ধাচার পুরস্কারেও। তবে অবসরে যাওয়ার পর বেরিয়ে আসে, শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত এই প্রভাবশালী কর্মকর্তার দুর্নীতির ফিরিস্তি দীর্ঘ। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধান বলছে, স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে তিনি দেশের নানা প্রান্তে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ।


জাতীয় বেতন স্কেল ১৯৭৭ অনুযায়ী বেনজীর আহমেদ ১৯৮৮ সালে চাকরিতে যোগদানের পর নবম গ্রেড হিসেবে সর্বসাকল্যে প্রতি মাসে বেতন পান এক হাজার ৪৭০ টাকা।


সে অনুযায়ী প্রথম তিন বছরে সর্বসাকল্যে বেতন পান ৫২ হাজার ৯২০ টাকা।

পরবর্তীকালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পদোন্নতির পর জাতীয় পে স্কেল ১৯৯৭ হিসাবে সপ্তম গ্রেড অনুসারে প্রতি মাসে ৯ হাজার ৭৫০ টাকা বেতন পান। এই পদে দায়িত্বকালে চার বছরে সর্বসাকল্যে তাঁর বেতনের অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় চার লাখ ৬৮ হাজার টাকা।


২০০১ সালে এআইজি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত ছয় বছরে জাতীয় পে স্কেল ১৯৯৭ হিসাবে ষষ্ঠ গ্রেড অনুসারে প্রতি মাসে ১০ হাজার ৮৪০ টাকা মাসিক বেতনে সর্বসাকল্যে তাঁর বেতনের অর্থ দাঁড়ায় সাত লাখ ৮০ হাজার ৪৮০ টাকা।


এআইজি হিসেবে পঞ্চম গ্রেড অনুযায়ী জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৫ অনুসারে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মাসে ১৭ হাজার ৩২৫ টাকা বেতন পান।


সে হিসাবে ওই সময়কালে সর্বসাকল্যে তাঁর বেতনের মোট অর্থ দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ২০০ টাকা।

২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ অনুযায়ী অতিরিক্ত আইজিপি পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে দ্বিতীয় গ্রেডে পুলিশের সাবেক এই আইজির আট বছরে প্রতি মাসে ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা হারে সর্বসাকল্যে বেতনের অর্থ দাঁড়ায় ৩৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা।


পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সাল থেকে তাঁর চাকরিজীবনের শেষ ধাপ ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রেড-১ হিসাবে জাতীয় বেতন কাঠামো ২০১৫ অনুযায়ী সাত বছরে প্রতি মাসে ৭৮ হাজার টাকা হারে সর্বসাকল্যে তাঁর বেতনের অর্থ দাঁড়ায় ৭৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।


সেই হিসাবে এই কর্মকর্তা চাকরিজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোট বেতন বাবদ উপার্জন করেছেন এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা।


এর সঙ্গে পুলিশের সাবেক এই আইজি বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মিশনে অংশগ্রহণ করে বৈধ পন্থায় অর্জন করেছেন কিছু আর্থিক সুবিধা।


বেনজীরের দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, আইন সবার জন্য সমান। কেউ যদি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে, দুদক তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।


জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, বেনজীর আহমেদ যেহেতু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি ছিলেন, সে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির তথ্য উঠে এলে অবশ্যই সরকারকে গুরুত্বসহকারে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের এ বিষয়ে বিশদভাবে অনুসন্ধানে নামা উচিত।


ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের যেকোনো পর্যায়েই চাকরি করুন না কেন বৈধ উপায়ে কোনোভাবেই এত সম্পদ অর্জন করা সম্ভব নয়। বেনজীর আহমেদ যদি সত্যিই এত সম্পদের মালিক হয়ে থাকেন, সেটি বিস্ময়কর। বেনজীর দুর্নীতি করে থাকলে সেটি চিহ্নিত করা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁর বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জনের উৎস ও সূত্রগুলো চিহ্নিত করতে হবে। তাঁর দুর্নীতির পুরো চিত্র উন্মোচন করা উচিত। কারণ আইন সবার জন্য সমান।

Monday, February 26, 2024

ভারত আর ক্ষমতাসীনদের মদদে পিলখানা হত্যাকাণ্ড

বিজিবির সাবেক ডিজি লে. জে.(অব.) মইনুল ইসলাম



পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এ দিনে নির্মম হত্যাযজ্ঞে প্রাণ হারান অনেক সেনা কর্মকর্তা ও তাদের স্বজনরা। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের পর ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সাল থেকে ৯ মে ২০১০ সাল পর্যন্ত বালাদেশ রাইফেলস্-বিডিআরর মহাপরিচালক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন লেফটেন্যন্ট জেনারেল (অব.) মো. মইনুল ইসলাম। পিলখানার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে তদন্তও করেছেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।


তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ২০ থেকে ২১ দিন আগেই বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা হয়েছিল। ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকে তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের লোকজন বিডিআর সদস্যদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বেশ সরব হয়ে ওঠেন। তাদের সাথে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত বিডিআরের বেশ কিছু সদস্যও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলে তদন্তে উঠে আসে-এমনটাই জানান।


বিডিআর বিদ্রোহ ও পিলখানায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এর ৪৮ ঘণ্টার মাথায় বিধ্বস্ত বাহিনীটির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম।


তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ রাইফেলসের নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি করা হয়। জুলাই ২০১৫ সালে তিনি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার হন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম এ ঘটনার তদন্ত এবং নানা দিক নিয়ে বাংলা আউটলুকের সঙ্গে কথা বলেন লেফটেন্যন্ট জেনারেল (অব.) মো. মইনুল ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা আউটলুকের ঢাকা প্রতিনিধি।


বাংলা আউটলুক: বিদ্রোহের ৪৮ ঘন্টার মাথায় ২৮ ফেব্রুয়ারি আপনাকে তৎকালীন বিডিআর’র দ্বায়িত্ব দেয়া হলো; পিলখানায় গিয়ে কী দেখলেন?


লেফটেন্যন্ট জেনারেল (অব.) মো. মইনুল ইসলাম: চারদিকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গ্রেনেড ছড়ান-ছিটান। সেখানে যে ধরনের হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তার তেমন কোনো আলামত ছিল না। কোনো রক্তের চিহ্ন নেই। খুব যত্নে ধুয়ে-মুছে পরিপাটি করে রাখা হয়েছে। ওই দিনই সন্ধ্যায় পিলখানা থেকে যারা বাইরে চলে গিয়েছিল, তাদের ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয় টেলিভিশনে। আমি তখন মহাপরিচালক, আমিই জানি না। সবখানে অস্ত্রশস্ত্র, গ্রেনেড ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আমি জানালাম, এখনই ঢোকানো যাবে না।


বাংলা আউটলুক:  আপনি পরবর্তীতে যে তদন্ত কমিটি হয়েছিল, সেই কমিটিতে ছিলেন; পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে কী মনে হয়েছিল? এটি কী হঠাৎই ঘটেছিল?


মইনুল ইসলাম: হ্যাঁ। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল তখন সচিব ছিলেন। তিনিও ওই কমিটিতে ছিলেন। আমি সিভিলদের নিয়ে তদন্ত করার অনুরোধ করেছিলাম। সরকারকে চিঠিও দিয়েছিলাম। ঘটনার আগে-পরে চাইনিজদের বিষয়গুলোও আমলে নিতে বলেছিলাম। সেই সময়ের কন্ট্যাক্টগুলোর ব্যপারেও খোঁজ নিতে বলা হয়েছিল। ইন্ডিয়ার বিষয়েও খোঁজ নেয়া জরুরি ছিল।


বাংলা আউটলুক: চাইনিজরা ওই দিন কী করছিল?


মইনুল ইসলাম: তখন বিডিআর’র সাধারণ আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়ের কার্যক্রম চলমান ছিল। এগুলো ছিলো স্নাইপার রাইফেল। সেগুলো চীন ডেলিভারি দেওয়ার পর সে সম্পর্কে বিডিআর সদস্যদের ধারণা দিতে একটি টিম পিলখানায় অবস্থান করছিল। ঘটনার দিন গোলাগুলি কিছুটা বন্ধ হলে তারা নিরাপদেই বের হয়ে গিয়েছিল। তদন্তে তাদের বিষয়েও খোঁজ নেয়া প্রয়োজন ছিল।


বাংলা আউটলুক:  ইন্ডিয়ানদের প্রসঙ্গ আসলো কেন?

 

মইনুল ইসলাম: স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ইন্ডিয়ান বিএসএফ পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বর্ডারের খুব কাছে অবস্থান নিয়েছিল। যুদ্ধের পর ইন্ডিয়ান বিএসএফ কয়েকটি ঘাঁটি ছেড়েছিল। আবার কোথাও কোথাও ছাড়েনি। বিডিআরের তুলনায় ইন্ডিয়ান বিএসএফ দুর্বল ছিল। কারণ বিএসএফের কমান্ডিংয়ে আর্মি ছিল না। কিন্তু বিডিআরের কমান্ডে ছিল আর্মি। ইন্ডিয়ান বিএসএফ তাদের ক্যাম্পের সীমা পেরিয়ে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বিওপিতে অবস্থান করছিল সেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে। ১৯৭৫ সালের পর ১৯৮১ সালের আগে ইন্ডিয়ান বিএসএফকে বাংলাদেশের বিওপি ছাড়তে বাধ্য করার জন্য বেশ কয়েকটি অপারেশন শুরু হয়েছিল। অপারেশনে ইন্ডিয়ান বিএসএফ পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। ইন্ডিয়া এটার কাউন্টার কখনো করেনি বা করতে পারেনি। সেই সক্ষমতা বিএসএফের ছিলও না। সেই সুযোগও বিএসএফ পায়নি। ইন্ডিয়া সবসময়ই চেয়েছিল, কীভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা যায়। পিলখানা হত্যাকাণ্ড ছিল মোক্ষম সময়। সেনাবাহিনীর সবগুলো মোধাবী কর্মকর্তাকে দু’দিনের মধ্যে গুলি করে মেরে ফেলা হলো। এটা সবাই সেভাবেই দেখে। এই বিষয়টিও তখন আমলে নেয়া জরুরী ছিলো, বিভিন্ন পক্ষ থেকে কথাও এসেছিল। এর ওপর পিলখানার পরিস্থিতি বিশেষ করে অস্ত্রাগারের পরিবেশ দেখে পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছিল এটি পরিকল্পিত ভাবেই ঘটানো হয়েছিল এবং সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার পেছনের লোকজন ২০-২১ দিন আগেই এখানে ঢুকেছিল।


বাংলা আউটলুক: ইন্ডিয়ার সম্পৃক্ততা কি আপনাদের অনুমান ছিলো? না কোনো আলামত পেয়েছিলেন?


মইনুল ইসলাম: আমাদের কাছে মনে হয়েছে। সিম্পটমগুলো (লক্ষণ) ফুটে উঠেছিল, বিভিন্ন সময় ইন্ডিয়ান পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছিল। তারা বিরোধিতা করেছিল কেন বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড আর্মি দ্বারা পরিচালিত হয়। ইন্ডিয়া সবসময়ই বিডিআরের কমান্ডিংয়ে আর্মি এবং ১৯৮১ সালের আগের বেশ কয়েকটি অপারেশন এবং পরবর্তিতেও বেশ কয়েকটি অপারেশন নিয়ে প্রতিশোধপরায়ন ছিল। তারা চেষ্টাও করেছিল। এখানেই পরিষ্কার, এখানে ইন্ডিয়ার ইন্ধন ছিল। আমরা যখন বিডিআর (বিজিবি) রিফর্ম করি তখনও ইন্ডিয়ানদের অনেক বাধার মুখে পড়েছি। আর্মি কেন বিডিআরকে কমান্ড করে এটাও ইন্ডিয়া সহ্য করতে পারত না। সঠিক তদন্ত করলে নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসত। আরো অনেকের সম্পৃক্ততা ছিল। তা-ও বেরিয়ে আসত। 


বাংলা আউটলুক:  আর কাদের সম্পৃক্ততা ছিল বলে মনে হয়েছে?


মইনুল ইসলাম: স্থানীয় রাজনৈতিক একটি পক্ষের সম্পৃক্ততা ছিল। বিদ্রোহের আগে বেশ কয়েকবার স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সদর দপ্তরে বিভিন্ন ক্যম্পে দ্বায়িত্ব পালনকালে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বিডিআরের অভিযুক্ত জওয়ানদের পক্ষে দাবি নিয়ে যেতে দেখা গেছে। বিদ্রোহের দিন বিডিআরের কিছু লোক রিভেঞ্জ (প্রতিশোধপরায়ন) ছিল। তাদের সাথে আশপাশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন ছিল। কেন বিডিআর আর্মি অফিসার দ্বারা পরিচালিত হবে- এসব নিয়ে কথাও বলেছেন তারা। ঘটনার দিন পিলখানায় গোলাগুলি চলছে, আশপাশের সাধারণ মানুষ জীবন নিয়ে নিরাপদে সরে যাচ্ছিলেন। আর পাশেই বিদ্রোহীদের পক্ষে আজিমপুরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগ রাস্তায় মিছিলও করেছে। নিশ্চয়ই তাদেরও সমর্থন ছিল এই ঘটনায়। আর তারাও নিশ্চিত ছিল তাদের ওপর কেউ গুলি করবে না। সেগুলোও তদন্ত করা হয়নি। সবকটি পক্ষ মিলেই আর্মিকে শেষ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। 


বাংলা আউটলুক:  আর কী কী দুর্বলতা বা অসামঞ্জস্যতা দেখেছিলেন সেই দিন?

 

মইনুল ইসলাম: প্রতি বছরই একই প্রোগ্রাম হয়, একই আয়োজন থাকে। গতানুগতিকই কিছু কমিটি থাকে। কমিটিগুলোতে বিডিআরের অফিসারদেরই (ডিএডি) ইনচার্জ করা হতো। কিন্তু ওই বছরই (২০০৯ সালে) সকল কমিটির হেড করা হয়েছিল আর্মি থেকে আসা অফিসারদের। কেন আর্মি অফিসারদের প্রধান করা হলো? আর আর্মি অফিসরাদের সাথে আগ্নেয়াস্ত্র দেয়া হলো না। আগ্নেয়াস্ত্রের কমান্ডিং ক্ষমতা রাখা হলো বিডিআর অফিসারদের (ডিএডি) নিয়ন্ত্রণে। তার মানে আর্মি অফিসারদের হাতে কোনো অস্ত্র দেয়া হলো না। অস্ত্র থাকল বিডিআরদের হাতেই। এ বিষয়টিরই তো হিসেব মেলেনি। এর কারণটা কী? আগে-পরে করা হলো না; কিন্তু ওই বছর কেন করা হলো? এটা তো দরকার ছিল না। করা হলো, কিন্তু আগে যখন বিডিআর’র ডিএডিরা এই দ্বায়িত্বে ছিল, তখন আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার অনুমোদন ছিল, কিন্তু যখন আর্মি অফিসারদের ওইসব কমিটির প্রধান করা হলো, অস্ত্র দেয়া হলো, কিন্তু বিডিআর’র নিয়ন্ত্রণে রাখা হলো কমান্ডিং পাওয়ার। 


বাংলা আউটলুক:  অস্ত্রাগার, গোলাবারুদের দ্বায়িত্বে কারা ছিল?


মইনুল ইসলাম: অর্মির অফিসারদের দায়িত্বে ছিল। গার্ড কমান্ডাররা তাদের গ্রেফতার করেছিল। গোলাবারুদ এবং অস্ত্রাগার সবই লুট হয়েছিল। সব তো নিয়ে বের হয়ে যায়নি। যার যখন যা লেগেছে, তারা নিয়ে বেরিয়ে গেছে। যখন হিসেব শুরু হলো, কতগুলো ছিল, কতগুলো আমরা পেলাম, তা না হলে তো স্টক (মজুত) মিলবে না। গোলাবারুদ এবং অস্ত্র সব গণনা করা হলো। সমস্ত গোলাবারুদের বক্স থাকে সিল করা। যেগুলো সিলড সেগুলো চেক করিনি। বক্সের ওপর ওজন লেখা থাকে, মেপেছি। স্যম্পল চেক করেছি, ঠিক ছিল। যেগুলো ঠিক ছিল না, সেগুলো চেক করে দেখেছি। গ্রেনেডের ভেতরে ফিউজ দেওয়া। মানে রেডি টু ইউজ (ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা)। এটা কী করে সম্ভব! গ্রেনেড এবং ফিউজ আলাদা বক্সে থাকে। এটি ছিলো অস্বাভাবিক ঘটনা। এরকম অনেকগুলো বক্স ছিল। এটি আগে থেকেই রেডি করা ছিল। তার মানে আগে থেকেই ভেতর থেকে কেউ এ কাজ করেছে। পূর্বপরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে। এ বিষয়টিও তদন্ত করা হয়নি। আমাদের খতিয়ে দেখতেও দেয়া হয়নি।


বাংলা আউটলুক:  আপনি কী বলতে চাইছেন, এই বিদ্রোহে প্রত্যক্ষ মদদ ছিলো?


মইনুল ইসলাম: অবশ্যই ইন্ডিয়ার মদদ ছিলো। কারণ আমাদের তো আর কোনো শত্রু ছিলো না। মিয়ানমারের কিছুই করার ছিল না।


বাংলা আউটলুক: আপনাদের তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিলো?


মইনুল ইসলাম: আমরা ডিজিএফআই, এনএসআই, এনটিএমসি এদের যুক্ত করে তদন্ত করার কথা বলেছিলাম। কে কার কাছে কল করছে, কী বলছে। এসব বিষয় বের করার জন্য কল রেকর্ড বের করতে বলেছিলাম। এ রকম একটি অস্বাভাবিক ঘটনায় অনেক ধরনের আলামত থাকে, সেগুলো বের করা জরুরী ছিলো। কিন্তু তা করতে দেয়া হয়নি। তথ্য চেয়েও আমরা পাইনি। বলা হয়েছিল, এগুলো সিক্রেট। তাহলে আমরা তদন্ত করব কীভাবে? এ বিষয়ে সরকারকে এটা চিঠিও দিয়েছিলাম। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল আমাদর কমিটির প্রধান ছিলেন।  


বাংলা আউটলুক: তদন্তে আর কী কী অস্বাভাবিক ঘটনা পেয়েছিলেন?


মইনুল ইসলাম: আরেকটি বিষয়, আমাদের কাছে খটকা লেগেছিল। সেটি হচ্ছে পিলখানার ভেতরে দু’দিন ব্যাপী অফিসারদের হত্যা করা হচ্ছিল। ভেতর থেকে বাঁচার আকুতি শোনা যাচ্ছিল। বাইরে র‌্যাব ঘিরে রেখে ছিল। আর্মি ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিল। কিন্তু তখন আর্মিকে বলা হয়েছিল, ভেতরে ঢুকলে দেশে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবে। তাদের ঢুকতে দেয়া হলো না কেন? এখানে অবশ্যই কোনো একটা অদৃশ্য শক্তি ইশারা করেছে। তাদের নির্দেশেই আর্মিকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এটা পরিষ্কার।


বাংলা আউটলুক: আপনারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন?


মইনুল ইসলাম: আমরা একটা প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম। আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া, তথ্য চেয়ে না পাওয়ায় আমাদের সেই প্রতিবেদন আমলে নেয়া হয়নি। আমাদের ৭-৮ জনের ওই তদন্ত কমিটি একসাথে মিটিংও করতে পারিনি। 


বাংলা আউটলুক: পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হয়েছে, আপনার মন্তব্য কি?


মইনুল ইসলাম: এখানে দুই ধরনের অপরাধের বিচার হয়েছে। কিন্তু বিদ্রোহের কারণ এবং পরিকল্পনা বেরই করা হলো না।


  • বাংলা আউটলুক/ ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪

Tuesday, January 16, 2024

সংবিধান লঙ্ঘনের মহাযজ্ঞ — ''সদস্যদের কার্যভারগ্রহণ বিতর্ক''

সালাহউদ্দিন আহমেদ



বাংলাদেশে এখন দু’টি সংসদ চলমান। একাদশ সংসদ এবং দ্বাদশ সংসদ। যেহেতু রাষ্ট্রপতি এখন পর্যন্ত ভেঙে দেননি তাই একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৯শে জানুয়ারি ২০২৪। রাষ্ট্রপতি ভেঙে না দিলে এবং মেয়াদের শেষ না হলে সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং একাদশ সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় দ্বাদশ সংসদের সদস্যগণ শপথ নিয়েছেন।

এটি সংবিধানের সঙ্গে চরমভাবে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের ন্যূনতম নির্দেশনা অনুসরণ করলেও এই ধরনের অসাংবিধানিক কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে না।

দশম এবং একাদশ সংসদ রাষ্ট্রপতি ভাঙ্গিয়া দেন নাই এবং মেয়াদের অবসানও ঘটেনি। এতে বিনা কারণে এবং সহজে সংবিধান লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। সংবিধান লঙ্ঘনে প্রজাতন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠান নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে গেলে সংবিধান মান্য করার নৈতিক শক্তি হারিয়ে যাবে। ধারাবাহিকভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন কোনো ক্রমেই অনুসরণীয় হতে পারে না।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ'লীগের সংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ীকমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ একটি উপ-সম্পাদকীয় লিখেছেন। যা ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দৈনিক নয়াদিগন্তে প্রকাশিত হয়েছে। 

👇

———

সৌভাগ্যই বলিতে হইবে। মহাজোটের মহামন্ত্রী এবং মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের কল্যাণে আমরা দেশের প্রায় সকল আমজনতাই সংবিধান বিশেষজ্ঞ হইয়া উঠিয়াছি। উপায় ছিল না, বিগত কয়েক বৎসরে সংবিধানে কত রকমের অপারেশন করা হইয়াছে কেবল মুজিবকন্যার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পোক্ত করিবার মানসে। গতবারে গণভবন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত লইয়াছিলেন, কিন্তু কপালমন্দ; এইবারে অন্তত আজীবন থাকা যায় কি না, তাহারই আইনি কসরত চলিতেছে।

জনাব গওহর রিজভী সাহেবের একটি লেখা গত ১২ জানুয়ারি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-‘শপথগ্রহণ নিয়ে সংশয়ের সুযোগ নেই’ শিরোনামে ছাপানো হইয়াছে। জনাবের জন্ম ও লালনপালন, শিক্ষা-দীক্ষা, কর্মজীবন সকল কিছুই বিদেশে বলিয়া দুষ্ট লোকেরা বলিয়া থাকেন। সুতরাং তাহাকে বিদেশ মন্ত্রক বিষয়ের উপদেষ্টা করা হইয়াছে। অতিশয় ভাগ্যবান বলিতে হইবে। তিনি বিদেশ বিষয়ের সহিত যে সংবিধান বিশারদও হইয়া উঠিয়াছেন ইহা আমাদের জানিবার সুযোগ করিয়া দিয়াছেন উপরোক্ত লেখনীর মারফত। তাহার প্রসঙ্গে আলোচনা করিয়া অন্যান্য বিষয়ে যাইব মনস্থ করিয়াছি।

সংবিধানের ১৪৮(৩) অনুচ্ছেদ উদ্ধৃৃত করিয়া তিনি ব্যাখ্যা দিলেন যে, শপথ গ্রহণযোগ্য পদের ক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের অব্যবহিত পর শপথ গ্রহণকারী ব্যক্তি কার্যভার গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইলেও সংসদ সদস্যদের‌ ক্ষেত্রে তাহা প্রযোজ্য হইবে না।

তিনি যুক্তি হিসাবে উপস্থাপন করিয়াছেন সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণের জন্য তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত শপথ ও ঘোষণা পত্রের (ফরমে) ঘোষণা (শপথ) ও স্বাক্ষরের কথা। ফরম (৫)-‘আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইয়া... আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি তাহা আইন অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব’। তাহার যুক্তি হইল সংসদ সদস্যগণ শপথগ্রহণ করিলেও কর্তব্যভার এখনও গ্রহণ করেন নাই, তবে আরও পরে নিকট ভবিষ্যতে কোনো তারিখে কার্যভার গ্রহণ করিবেন।

জনাব গওহর রিজভী সাহেব চশমা দিয়া ভালোমতো দেখিলে বুঝিতেন যে, শপথের ফরমে ‘কর্তব্যভারের (Discharge the duties) কথা বলা হইয়াছে কার্যভারের (Enters upon an office) কথা বলা হয় নাই।’ এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, প্রধানমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীগণ গোপনীয়তার শপথ নেন এবং সংবিধান রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের জন্যও শপথ নেন যাহা সংসদ সদস্যদের নিতে হয় না।

এইবার মূল আলোচনায় আসিব

সংবিধানের ১২৩(৩) (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ তবে শর্ত থাকে যে, এই দফায় (ক) উপদফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ উক্ত উপদফায় উল্লেখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না। কার্যভারগ্রহণ সংক্রান্ত ইংরেজি পাঠ হইল (a) “Shall not assume office as members of parliament except after the expiration of the term referred to therein.” অর্থাৎ উক্ত ৯০ দিন সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কার্যভার গ্রহণ (office assume) করিবেন না, যাহা আগামী ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ ইং শেষ হইবার কথা। উল্লেখ্য, অনুচ্ছেদ ৭২(১) অনুযায়ী উক্ত ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের অধিবেশন না থাকিবার বিধানটি ইতোমধ্যে লঙ্ঘিত হইয়াছে পূর্ববর্তী অধিবেশন টানিয়া লম্বা করিবার কারণে।

অনুচ্ছেদ ১৪৮(১)-এর ভাষ্যমতে শপথ গ্রহণের বিধান অনুযায়ী-কার্যভার গ্রহণের পূর্বে তৃতীয় তফসিলের ফরম মতে, শপথগ্রহণ ও স্বাক্ষর করিতে হইবে। ১৪৮ (১) এর ইংরেজি পাঠে কার্যভার গ্রহণকে “Entering upon the office”  বলা হইয়াছে। ১৪৮(৩) এই সংবিধানের অধীন যে ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির পক্ষে কার্যভার গ্রহণের পূর্বে শপথের আবশ্যক সেই ক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের অব্যবহিত পর তিনি কার্যভারগ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে। ইংরেজি পাঠ Where under this constitution a person is required to make an oath before he enters upon an office he shall be deemed to have entered upon office immediately after he makes the oath’ অর্থাৎ সংসদ সদস্যগণ শপথের সাথে সাথে কার্যভারগ্রহণ করিয়াছেন (deemed to have entered upon office) বলিয়া গণ্য হইবে। একজন সাবেক সংসদ সদস্য হিসাবে সবিনয়ে এই তথ্য দিতে পারি যে, শপথের তারিখ হইতে বেতন ভাতা, অন্যান্য সুবিধাদি ও কার্যাবলি কার্যকর হয়। office assume (কার্যভারগ্রহণ) করা বা Enters upon an office (কার্যভারগ্রহণ) কে duties (কর্তব্যভার) বলিবার সুযোগ নাই। বাংলা ও ইংরেজি উভয় পাঠই পরিষ্কার এবং পাশাপাশি বর্ণিত আছে সংবিধানে। এখন প্রশ্ন হইলো নবম সংসদ ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ ইং তারিখ পর্যন্ত বহাল থাকা অবস্থায় দশম সংসদ গঠিত হইল কিভাবে? 

গওহর রিজভী সাহেবের বক্তব্য আরো একটি আছে তাহা হইল সংসদ সদস্যদের শপথের ফরমে (তৃতীয় তফসিল ফরম ৫) লেখা আছে ‘আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইয়া...... শপথ করিতেছি যে, আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি তাহা আইন অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব, যাহার ইংরেজি পাঠ “I will faithfully discharge the duties upon which I am about to enter according to law”  

গওহর রিজভী সাহেবের মূল ভাষ্য হইল; সংসদ সদস্যগণ এখনও কার্যভার গ্রহণ করেন নাই, কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে সম্ভাব্য কোনো তারিখে কার্যভার গ্রহণ করিবেন। অথচ তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করিবার দুর্বল প্রয়াস নিয়াছেন। তিনি কার্যভার এবং কর্তব্যভার এক বিষয় মনে করিয়াছেন। শপথের ফরমের ভাষ্য অনুযায়ী সংসদ সদস্যগণ “কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছেন” (Duties upon which I am about to enter) সংসদ সদস্যগণ বাড়িতে, হাটে, মাঠে, ঘাটে কত রকমের কর্তব্যপালন করিয়া থাকেন। তাহাদের ৯টা-৫টা অফিস নাই। আবার সব সময় সংসদের অধিবেশনও বসে না। 

এইবারে আলোচনা সমাপ্ত করিতে চাই

অনুচ্ছেদ ১২৩(৩) (ক) অনুযায়ী নবম সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগেই শপথগ্রহণপূর্বক সংসদ সদস্যরা কার্যভারগ্রহণ করিয়া (Assumed office) সংবিধান লঙ্ঘন করিয়াছেন। মাননীয় স্পিকার তাহাদের শপথ পাঠ করাইয়া সংবিধান লঙ্ঘন করিয়াছেন। অনুচ্ছেদ ১৪৮(৩) অনুযায়ী শপথ গ্রহণের অব্যবহিত পর সংসদ সদস্যগণ কার্যভার গ্রহণ করিয়াছেন (Deemed to have been entered upon the office) 

গওহর রিজভী সাহেবের কথাই যদি মানিয়া লই তাহা হইলে দশম সংসদের সদস্যগণ এখনও কার্যভারগ্রহণ করেন নাই, তবে কি মন্ত্রিসভা নবম সংসদের সদস্যগণ লইয়া গঠিত হইল? তাহা হইলে কি রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীদের শপথ পাঠ করাইয়া সংবিধান লঙ্ঘন করেন নাই? পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখিয়া যে অনুচ্ছেদ আনা হইয়াছে তাহা ভবিষ্যতে এইখানেও কার্যকর হইবে কি না বলা যাইতেছে না। 

বিনাভোট, বিনাভোটার, বিনাবিরোধী দল এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের নামে যে প্রহসনের নির্বাচন নাটক মঞ্চস্থ হইল তাহাদের কেবল শপথগ্রহণই যে একমাত্র ভরসা। শপথ সর্বস্ব এমপিদের লইয়া মুজিবকন্যা কত দূর যাইবার শপথ করিয়াছেন তাহাই এখন দেখিবার বিষয়।

অনেক সুশীলকে বলিতে শুনিলাম; নির্বাচন কমিশন দ্রুত গেজেট প্রকাশ করিবার কারণেই যত গণ্ডগোল। এক্সরে করিয়া দেখিলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ডের অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না। অতএব কর্তার ইচ্ছায় কর্ম।

মহাজোট সরকারের সংবিধান লঙ্ঘনের কাহিনী বর্ণনা করিতে হইলে আরেকটি মহাভারত লিখিতে হইবে; সুতরাং ইচ্ছা থাকিলেও সীমিত রাখিতে হইবে। তবে সাম্প্রতিককালের কয়েকটি বর্ণনা দিতে চাই।

নির্বাচনী সরকার গঠনের নামে সব মন্ত্রীর পদত্যাগ নাটক দেশ-বিদেশে সবাইকে দেখিতে হইল ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে। কয়েকজন মন্ত্রীকে দেখিলাম মুজিবকন্যার পদতলে পদত্যাগপত্র সমর্পণ করিয়া পদস্পর্শ করিয়া প্রণাম করিতে। জাতিকে দেখিতে হইল, আন্তর্জাতিকও দেখিল। ভবিষ্যতে ষষ্ঠাঙ্গে প্রণাম দেখিবার ভাগ্য হইলেও অবাক হইব না।

সংবিধানের ৫৮(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করিলেই মন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে। অথচ পদত্যাগী মন্ত্রীরা অফিস করিলেন; ক্যাবিনেট মিটিংয়ে অংশ নিলেন; পরবর্তীতে নির্বাচনী সরকারের সদস্য হইলেন। যদিও সংবিধানে ‘নির্বাচনকালীন’ সরকার বলিতে কিছুই নাই তারপরেও তিনি তাহা জাতিকে উপহার দিলেন। পদত্যাগী মন্ত্রীদের উক্ত সময়ের কার্যাবলি অসাংবিধানিক বিবেচনায় ভবিষ্যতে আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহিতারও সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা হইবার সম্ভাবনা অবশ্যই রহিয়াছে।

মুজিবকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবিধান লঙ্ঘনের প্রবণতা পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত। তাহার পিতা ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে ১৯৭৪ ইং সনের ১৬ মে তারিখে চুক্তি সম্পাদন করিয়া বাংলাদেশের দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়নের ২.৬৪ বর্গমাইল এলাকা ভারতের কাছে হস্তান্তর করেন, বিনিময়ে তিন বিঘা করিডোর (১৮৭ × ৮৫ মিটার) অদ্যাবধি আমরা স্থায়ীভাবে পাই নাই (এই চুক্তি লইয়া অন্য দিন লিখিবার ইচ্ছা রইল)। সংবিধান অনুযায়ী এই চুক্তি করিবার কোনো এখতিয়ার তাহার ছিল না। চুক্তি কার্যকর করিবার জন্য অতঃপর ২৯ নভেম্বর ১৯৭৪ ইং তারিখে সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী আইন প্রণয়ন করিতে হইয়াছে। বাংলাদেশকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী পৈতৃক সম্পত্তি মনে করিবার ইহাও একটি কারণ হইতে পারে।

আমাদের সকলেরই মনে থাকিবার কথা যে, মুজিবকন্যা দিল্লি সফর করিয়া বাংলাদেশে ফেরত আসিয়া বলিলেন ‘আমি জয়ী আজ, দিল্লি জয় করিয়াছি’। ৫০ দফার যৌথ ইশতেহার ও পাঁচটি চুক্তি সম্পাদন করিয়া দিল্লির কাছে আপদমস্তক ইজারা দিয়া আসিয়া পরবর্তীতে বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যাহা তিনি করিয়াছেন তাহা দেশের জনগণ দেখিয়াছে এবং বলিয়াছে ‘দিল্লি তাহাকে জয় করিয়াছে’। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মাঝে মধ্যে গান, কবিতা ইত্যাদি আওড়ানোর শখ আছে। তিনি না বুঝিয়াই কি মহাভারতের খলনায়ক দুর্যোধনের বাক্য বলিয়াছেন? কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে ‘গান্ধারীর আবেদন’ রচনা করিয়াছেন। 


সম্রাট ধৃতরাষ্ট্রের প্রশ্ন পুত্র দুর্যোধনের কাছে —

অখণ্ড রাজত্ব জিনি সুখ তোর কই রে দুর্মতি?

দুর্যোধন বলিলেন, সুখ চাহিনাই মহারাজ

জয়! জয় চেয়েছিনু, জয়ী আমি আজ।


সত্যই কলিযুগের দুর্যোধন মুজিবকন্যা দিল্লি জয় করিয়াছেন কি না জানি না; তবে দিল্লি অবশ্যই (দশম সংসদ নির্বাচনে) তাহাকে বিজয়ী দেখিতে চাহিয়াছেন ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই। ঢাকা-দিল্লির যে মহড়া চলিতেছে তাহা দেখিয়া কোন প্রাতঃকালে গাহিতে হইবে ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্য বিধাতা’ এখন আপাতত ইহাই চিন্তার বিষয়। 

লেখক : সালাহউদ্দিন আহমেদ

সদস্য, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, বিএনপি।

(এই কলামটি দৈনিক নয়াদিগন্তে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছে।)

Thursday, December 28, 2023

অবৈধ আওয়ামী মন্ত্রী-এমপিরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ

ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর দুর্নীতির খন্ডচিত্র বেরিয়ে আসছে




আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২০ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আয় গত পাঁচ বছরে নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। সর্বোচ্চ আয় বেড়েছে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির– ২ হাজার ১৩১ শতাংশেরও বেশি। আর যার আয় সবচেয়ে কম বেড়েছে, তিনি হলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর, তাও ১৩২ শতাংশেরও বেশি। গত ১৫ বছরে আটজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সম্পদও সীমাহীনভাবে বেড়েছে। এতে শীর্ষে আছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। 

প্রার্থীদের মধ্যে শতকোটি টাকার চেয়ে বেশি সম্পদের মালিক আছেন ১৮ জন। তাদের সবাই আওয়ামী লীগের কিংবা দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থী। এদিক থেকে শীর্ষে আছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৩৪৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার। 

ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩ রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘নির্বাচনী হলফনামার তথ্যচিত্র: জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে?’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের দেওয়া হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে অনেক মন্ত্রী-এমপির সম্পদ বৃদ্ধির চিত্র রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছে। 

তবে টিআইবি বলছে, হলফনামায় দেওয়া সম্পদ বিবরণী কতটা সঠিক এবং আয় ও সম্পদ বৈধ কিনা, তা যাচাই করে না নির্বাচন কমিশন, রাজস্ব বিভাগ কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন। আবার সম্পদের অর্জনকালীন যে মূল্য দেখানো হয়েছে, তা নিয়েও বড় রকমের প্রশ্ন রয়েছে। প্রার্থীরা তাদের অর্জিত সম্পদের কতটা দেখিয়েছেন অথবা বিদেশে সম্পদ থাকার তথ্য গোপন করেছেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে।

টিআইবির প্রতিবেদনে মন্ত্রী-এমপি প্রার্থীর সম্পদের যে চিত্র  তুলে ধরা হয়েছে, তা চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। অবশ্য অনেক মন্ত্রী-এমপি-প্রার্থীর ঋণও রয়েছে। যেমন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএকে একরামুজ্জামানের ৪২১ কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও তাঁর ঋণ ও দায় রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকার।  চারজন প্রার্থী রয়েছেন যাদের শত শত বিঘা জমি রয়েছে। অথচ বাংলাদেশের ভূমি আইন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ ৬০ বিঘা কৃষিজমি থাকার বিধান রয়েছে। 

প্রতিটি সংসদে পর্যায়ক্রমে রাজনীতিবিদের সংখ্যা কমছে। এবার প্রার্থীদের মধ্যে রাজনীতিবিদ আছেন ৩ শতাংশেরও কম। ব্যবসায়ী আছেন ৫৭ শতাংশেরও বেশি। 

সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রার্থীদের নিজের দেওয়া হলফনামায় সম্পদের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, বাস্তবে তাদের সম্পত্তির পরিমাণ আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। 

টিআইবির ট্রাস্টি মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘বৈধ উপায়ে এত সম্পদ মানুষের বাড়ে কিনা, আমি জানি না। আমরা দেখছি কিছু মানুষ হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়ে যাচ্ছে। আর কিছু মানুষ পেট ভরে খাওয়ার জন্য প্রতিদিন যুদ্ধ করছে। আমরা একটা অসম সমাজ তৈরি করছি। আমরা দ্রুত ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতায় চলে যাচ্ছি। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি।’ 


গত পাঁচ বছরে আয় বৃদ্ধিতে শীর্ষে ১০ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী 

  1. বাণিজ্যমন্ত্রী — টিপু মুনশির — ২,১৩১ % 
  2. স্বাস্থ্যমন্ত্রী — ডা. জাহিদ মালেক  — ২৭৬ %
  3. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী — নসরুল হামিদ — ২২৮ % 
  4. ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী — ডা. এনামুর রহমান — ২২৭ %
  5. শিক্ষামন্ত্রী — ডা. দীপু মনি — ২০৪ %
  6. শিল্প মন্ত্রী — নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন — ১৬৪ %
  7. প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী — মোঃ জাকির হোসেন — ১৪৯ %
  8. বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী — গোলাম দস্তগীর গাজী  — ১২২ %
  9. প্রধানমন্ত্রী — শেখ হাসিনা — ১১৯ %
  10. খাদ্য মন্ত্রী — সাধন চন্দ্র মজুমদার — ৯১ %

 


পাঁচ বছরে সম্পদ বৃদ্ধিতে শীর্ষে যারা


গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের– ১ হাজার ৬৩ শতাংশ। এরপর নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বেড়েছে ২৮৬ শতাংশ,  স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ২৪২ শতাংশ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর ২৪২ শতাংশ, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ২৩৯ শতাংশ, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের ১৯৬ শতাংশ, দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের ১৯৬ শতাংশ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ১৭৩ শতাংশ, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের ১৪০ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ১৩২ শতাংশ সম্পদ বেড়েছে।





৫ বছরে যেসব এমপির আয় বেড়েছে

এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ঢাকা-২০ আসনের এমপি বেনজীর আহমদ (২২৩৮.১০%)। আজ মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির সমন্বয়ক (আউট রিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) মোহাম্মদ তাওহিদুল ইসলাম। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া ২,০০০ এর বেশি হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য তুলে ধরেছে সংস্থাটি। 

একাদশ সংসদের এমপিদের ৫ বছরে আয় বৃদ্ধির হারে শীর্ষ ১০- এ যারা:

১. ঢাকা-২০ আসনের বেনজীর আহমদ (২২৩৮.১০%)
২. কুষ্টিয়া-১ আসনের আ. ক. ম. সরওয়ার জাহান (২২০০.৫৮%)
৩. রংপুর-৪ আসনের টিপু মুনশি (২১৩১.১২%)
৪. বগুড়া-২ আসনের শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ (২০৭৪.৮৩%)
৫. নাটোর-১ আসনের মো. শহিদুল ইসলাম (বকুল) (১৯৭২.১৬%)
৬. যশোর-১ আসনের শেখ আফিল উদ্দিন (১৬০৮.৬৩%)
৭. নওগাঁ-৩ আসনের মো. ছলিম উদ্দীন তরফদার (১৪৯৪.১২%)
৮. দিনাজপুর-৪ আসনের আবুল হাসান মাহমুদ আলী (১১৮৭.৫২%)
৯. পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির (১০৬০.৪৪%)
১০. যশোর-৩ আসনের কাজী নাবিল আহমেদ (১০৩৯.৭৮%)






১৫ বছরে সম্পদ বৃদ্ধিতে শীর্ষে যারা
গত ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের– ৬ হাজার ৩৫০ শতাংশ। গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বেড়েছে ২ হাজার ৮৫৮ শতাংশ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ২ হাজার ৭০৩ শতাংশ, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের ২ হাজার ১৭৯ শতাংশ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ৯৮২ শতাংশ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ৭৮৩ শতাংশ,  শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের ৪৯৩ শতাংশ এবং ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বেড়েছে ১২৯ শতাংশ। 


১৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে শীর্ষে যারা

  1. রাজশাহী-৪ — এনামুল হক —  ২,৪৩,৫১৩ শতাংশ
  2. নাটোর-৩  জুনায়েদ আহমেদ পলক  ১৬,৭৪২ শতাংশ   
  3. মাদারীপুর-১ — নূর আলম চৌধুরী  — ৮,৩২৪ শতাংশ 
  4. গাজীপুর-৫ — মেহের আফরোজ — ৭,৬৯২ শতাংশ
  5. নওগাঁ-১ — সাধন চন্দ্র মজুমদার — ৬,৩৫০ শতাংশ
  6. দিনাজপুর-৪ — আবুল হাসান মাহমুদ আলী — ৬,১৩৮ শতাংশ
  7. ঢাকা-২ — কামরুল ইসলাম — ৫,৩৯০ শতাংশ
  8. কুষ্টিয়া-২ — হাসানুল হক ইনু — ৪,৭২৩ শতাংশ
  9. চট্টগ্রাম-৭ — মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ — ৪,৬৮৩ শতাংশ
  10. চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ — জিয়াউর রহমান — ৪, ৬৮২ শতাংশ




বছরে কোটি টাকা আয়ের প্রার্থী বাড়ছে
গত চারটি জাতীয় সংসদের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেশি আয়ের প্রার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বছরে কোটি টাকা আয় করেন এ রকম প্রার্থী ২০০৮ সালে ছিল ৪৩ জন, ২০১৩ সালে ৬২ জন এবং ২০১৮ সালে ১৪৩ জন। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১৬৪ জন। 

১৮ প্রার্থী শতকোটি টাকার মালিক
এবার ১৮ জন প্রার্থী রয়েছেন, যারা শতকোটি টাকারও বেশি সম্পদের মালিক। এর মধ্যে ১০ জনই আওয়ামী লীগের। অন্য আটজনও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে শীর্ষ ১০ জন হলেন পর্যায়ক্রমে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের গোলাম দস্তগীর গাজী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের স্বতন্ত্র একরামুজ্জামান, ঢাকা-১ আসনের আওয়ামী লীগের সালমান এফ রহমান, কুমিল্লা-৮ আসনের আওয়ামী লীগের আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, কুমিল্লা-৩ আসনের আওয়ামী লীগের ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের  স্বতন্ত্র দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের আওয়ামী লীগের আব্দুল মমিন মণ্ডল, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র গাজী গোলাম মর্তুজা, নরসিংদী-৩ আসনের স্বতন্ত্র সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। 

কৃষিজমির মালিকানায় শীর্ষ ১০

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের গোলাম কবির ভূঞার জমির পরিমাণ ৬৪৭ একর। বগুড়া-২ আসনের বিউটী বেগমের ৫৪৮ একর, ময়মনসিংহ-৪ আসনের মোহাম্মদ মোহিত উর রহমানের ১৯৫ একর, বাগেরহাট-৪ আসনের জামিল হোসাইনের ১১০ একর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের ফিরোজুর রহমানের ৮৩ একর, যশোর-১ আসনের শেখ আফিল উদ্দিনের ৬৮ একর, চট্টগ্রাম-২ আসনের হোসাইন মো. আবু তৈয়বের প্রায় ৭০ একর, ঢাকা-১৫ আসনের কামাল আহমেদ মুজদারের ৬১ একর, ভোলা-১ আসনের ছিদ্দিকুর রহমানের ৬০ একর ও সুনামগঞ্জ-২ আসনের চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ৫১ একর। এর মধ্যে শেষের দু’জন জাসদ থেকে এবং অন্যরা আওয়ামী লীগ বা একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী।



অকৃষি জমিতে শীর্ষে যারা

জামালপুর-৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাকির হোসেনের আছে ৮১৩ একর, নাটোর-৪ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির আলাউদ্দিন মৃধার ৫৮২ একর, পিরোজপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দীন মহারাজের ৩৮১ একর, রাজবাড়ী-১ আসনে আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলীর ১৮১ একর, সুমানগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়া সেনগুপ্তার ৯৫ একর, ঢাকা-১৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরীর ৬১ একর, ভোলা-২ আসনে জেপির মো. গজনবীর ৫৩ একর, নারায়ণণগঞ্জ-২ আসনে তৃণমূল বিএনপির আবু হানিফ হৃদয়ের ৪৩ একর, বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ৫৮ একর, দিনাজপুর-৯ আসনের স্বতন্ত্র তরিকুল ইসলাম তারিকের সাড়ে ৩৬ একর অকৃষি জমি রয়েছে।     

দেশে বিদ্যমান ভূমি আইন অনুযায়ী, কৃষি ও অকৃষি মিলিয়ে কারও ১০০ বিঘার বেশি জমির মালিক হওয়ার  সুযোগ নেই। এর বেশি থাকলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। অতিরিক্ত জমি বাজেয়াপ্ত বা অধিগ্রহণ করতেও পারে সরকার। এই নিয়ম অনুযায়ী, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগদানও অনৈতিক বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়। 

১০ জনের আয় বেড়েছে অবিশ্বাস্য গতিতে
গত পাঁচ বছরে ১০ জন এমপির আয় অসম্ভব গতিতে বেড়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-২০ আসনের বেনজীর আহমদের আয় বেড়েছে ২ হাজার ২৩৮ শতাংশ, কুষ্টিয়া-১ আসনের সরওয়ার জাহানের ২ হাজার ২০০ শতাংশ, রংপুর-৪ আসনের টিপু মুনশির ২ হাজার ১৩১ শতাংশ, বগুড়া-২ আসনের শরিফুল ইসলাম জিন্নার ২ হাজার ৭৪ শতাংশ, নাটোর-১ আসনের শহিদুল ইললাম বকুলের ১ হাজার ৯৭২ শতাংশ, যশোর-১ আসনের শেখ আফিল উদ্দিনের ১ হাজার ৬০৮ শতাংশ, নওগাঁ-৩ আসনের ছলিম উদ্দীন তরফদারের ১ হাজার ৪৯৪ শতাংশ,  দিনাজপুর-৪ আসনের আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ১ হাজার ১৮৭ শতাংশ, পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবিরের ১ হাজার ৬০ শতাংশ এবং যশোর-৩ আসনের কাজী নাবিল আহমেদের আয় ১ হাজার ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। 

১০ জনের স্ত্রী ও পরিবারও তাক লাগিয়েছে 
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিনের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের আয় বেড়েছে ২ হাজার ৪০৯ শতাংশ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির পরিবারের ২ হাজার ১৩১ শতাংশ, ফেনী-২ আসনের নিজাম উদ্দিন হাজারীর ১ হাজার ২৩০ শতাংশ, পটুয়াখালী-৪ আসনের মহিবুর রহমানের ৬৬৯ শতাংশ, ঢাকা-৩ আসনের নসরুল হামিদ বিপুর ৬২৭ শতাংশ, শরীয়তপুর-৩ আসনে নাহিম রাজ্জাকের ৫১১ শতাংশ, রাজশাহী-১ আসনের ওমর ফারুক চৌধুরীর ৪৯৯ শতাংশ, ঢাকা-২০ আসনের বেনজীর আহমদের ৩৪৪ শতাংশ, যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্য্যের ২৭১ শতাংশ এবং নাটোর-১ আসনের শহিদুল ইসলাম বকুলের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের আয় বেড়েছে ২৩৬ শতাংশ।
 
৫ বছরে কয়েক এমপির অস্থাবর সম্পত্তি বৃদ্ধির চিত্র
রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হকের অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৫ হাজার ৪৭০ শতাংশ, নোয়াখালী-৩ আসনের মামুনুর রশীদ কিরনের ৩ হাজার ৬৫ শতাংশ, নাটোর-১ আসনের শহিদুল ইসলাম বকুলের ১ হাজার ৯১৩ শতাংশ, খাগড়াছড়ির কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ১ হাজার ৫৪ শতাংশ, পটুয়াখালী-৪ আসনের মহিববুর রহমানের ১ হাজার ২৪ শতাংশ, গাজীপুর-৫ আসনের মেহের আফরোজ চুমকির ৮২৭ শতাংশ, কুষ্টিয়া-১ আসনের আ ক ম সরওয়ার জাহানের ৫৭৪ শতাংশ,  ময়মনসিংহ-১১ আসনের কাজিম উদ্দিন আহম্মদের ৫৪৩ শতাংশ এবং যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্য্যের ৪৮৬ শতাংশ। 

যেসব এমপির স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ ব্যাপকহারে বেড়েছে
পাঁচ বছরের ব্যবধানে রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হকের স্ত্রী ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় বেড়েছে ৩৮ হাজার ৪৭৩ শতাংশ, বগুড়া-২ আসনের শরিফুল ইসলাম জিন্নার ৯ হাজার ৪৫১ শতাংশ,  সুনামগঞ্জ-৫ আসনের মহিবুর রহমান মানিকের ২ হাজার ৫৭৯ শতাংশ, পটুয়াখালী-৪ আসনের মহিববুর রহমানের ২ হাজার ৯৩ শতাংশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেনের ১ হাজার ৬২৪ শতাংশ,  কুষ্টিয়া-১ আসনের আ কা ম সরওয়ার জাহানের ১ হাজার ১৬২ শতাংশ, নওগাঁ-৩ আসনের ছলিম উদ্দীন তরফদারের ১ হাজার ১৯ শতাংশ, ফেনী-২ আসনের নিজাম উদ্দিন হাজারীর ৯২০ শতাংশ, সাতক্ষীরা-১ আসনের মুস্তফা লুৎফুল্লাহর ৮৯৩ শতাংশ এবং রাজবাড়ী-১ আসনের কাজী কেরামত আলীর বেড়েছে ৮৭১ শতাংশ।
 
আয় বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ এমপি 
গত ১৫ বছরে সর্বোচ্চ আয় বেড়েছে পিরোজপুর-২ আসনের এমপি আনোয়ার হোসেনের– ৭ হাজার ১১৬ শতাংশ। এ সময়ে মাদারীপুর-১ আসনের নূর-ই আলম চৌধুরীর বেড়েছে ৫ হাজার ৬৯৬ শতাংশ, মাদারীপুর-২ আসনের শাজাহান খানের ৪ হাজার ৬৯৭ শতাংশ, নোয়াখালী-১ আসনের এইচ এম ইব্রাহিমের ৪ হাজার ২৯৬ শতাংশ, শেরপুর-২ আসনের মতিয়া চৌধুরীর বেড়েছে ৪ হাজার ১৩৫ শতাংশ,  নওগাঁ-১ আসনের সাধন চন্দ্র মজুমদারের ৪ হাজার ১৩২ শতাংশ, জয়পুরহাট-২ আসনের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের ২ হাজার ৮৯৫ শতাংশ, বাগেরহাট-১ আসনের শেখ হেলাল উদ্দীনের ২ হাজার ৭৬৭ শতাংশ,  রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হকের ২ হাজার ৭৫৬ শতাংশ ও গাজীপুর-২ আসনের জাহিদ আহসান রাসেলের বেড়েছে ২ হাজার ৫৪৫ শতাংশ।
 
১৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে শীর্ষে যারা
গত ১৫ বছরের ব্যবধানে অস্থাবর সম্পত্তি বৃদ্ধিতে শীর্ষে আছেন রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক। তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৩ শতাংশ। এরপর পর্যায়ক্রমে মাদারীপুর-১ আসনের নূর আলম চৌধুরীর ৮ হাজার ৩২৪ শতাংশ, গাজীপুর-৫ আসনের মেহের আফরোজের ৭ হাজার ৬৯২ শতাংশ, নওগাঁ-১ আসনের সাধন চন্দ্র মজুমদারের ৬ হাজার ৩৫০ শতাংশ, দিনাজপুর-৪ আসনের আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ৬ হাজার ১৩৮ শতাংশ, ঢাকা-২ আসনের কামরুল ইসলামের ৫ হাজার ৩৯০ শতাংশ, কুষ্টিয়া-২ আসনের হাসানুল হক ইনুর ৪ হাজার ৭২৩ শতাংশ, চট্টগ্রাম-৭ আসনের মোহাম্মদ হাছান মাহমুদের ৪ হাজার ৬৮৩ শতাংশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের জিয়াউর রহমানের ৪ হাজার ৬৮২ শতাংশ ও ঢাকা-২০ আসনের বেনজীর আহমদের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৪ হাজার ১৯৭ শতাংশ।




ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে সংসদ
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে মূল পেশা বিবেচনায় ব্যবসায়ী আছেন ৫৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ ছাড়া আইনজীবী আছেন ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, কৃষিজীবী ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ, চাকরিজীবী ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ, শিক্ষক ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, রাজনীতিবিদ আছেন ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ২ দশমিক ৭১ শতাংশ, চিকিৎসক ২ দশমিক ১৯ শতাংশ, সাংবাদিক দশমিক ৮৩ শতাংশ, গৃহস্থালি দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং অন্যান্য ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। প্রার্থীদের মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ খুবই কম– মাত্র ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। পুরুষ ৯৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। 

যুক্তরাজ্যে এক মন্ত্রীর ছয় কোম্পানি
‘নির্ভরযোগ্য’ তথ্যের বরাতে টিআইবি জানায়, বর্তমান মন্ত্রিসভায় এমন একজন সদস্য রয়েছেন, যাঁর যুক্তরাজ্যে ছয়টি কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানিতে তাঁর বিনিয়োগ ১৭ দশমিক ২০ কোটি পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। তবে টিআইবির হিসাবে, ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার সম্পদ তাঁর। তিনি সেখানে প্রথম কোম্পানি স্থাপন করেন ২০১০ সালে আর পঞ্চম ও ষষ্ঠ কোম্পানি ২০২১ সালে। ওই মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেনি টিআইবি।



তিনি হলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। সমকালের নিজস্ব অনুসন্ধানে সাইফুজ্জামান নিজে পরিচালক এমন আটটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নিশ্চিত হওয়া গেছে, টিআইবির কাছে ভূমিমন্ত্রীর বিষয়েই তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। সমকাল জানতে পেরেছে, লন্ডনে মন্ত্রী জাবেদের কোম্পানি ছয়টি না; আটটি। কোম্পানিগুলোর সম্পদমূল্য ২০ কোটি ৩১ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। স্ত্রী রুখমিলা জামান এবং মেয়ে জেবা জামানের নামেও কোম্পানি খুলেছেন তিনি। এ ছাড়া পারিবারিক মালিকানায় থাকা ব্যবসায়িক গ্রুপ আরামিটের নামেও একটি কোম্পানি খুলেছেন।

জনগণের টাকা লুটপাট করে অর্থ পাচারের মাধ্যমে গত ১৫ বছর যাবত মাফিয়া হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা দেশে ও দেশের বাইরে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে।