Search

Tuesday, April 25, 2017

বহুমাত্রিক সমস্যার কবলে হাওর জনপদ


জি মুনীর / নয়াদিগন্ত 

 


সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওর অঞ্চল একসময় সুপরিচিত ছিল দেশের অন্যতম শস্যভাণ্ডার ও একই সাথে মৎস্যভাণ্ডার হিসেবে। একসময়ের যে বাংলার পরিচিত ছিল ‘গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ’ অভিধায়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ছিল এই হাওরাঞ্চল। অবশ্য এই প্রবাদটির যে সংস্করণটি হাওর এলাকায় পরিচিত ছিল তা ছিল এমন : ‘গোলা ভরা ধান আর বিল ভরা মাছ’। কারণ, হাওর এলাকায় পুকুরের চেয়ে বিলের ছড়াছড়িই বেশি। এসব বিলে ছিল মিঠাপানির প্রচুর দেশী মাছ, যা সারা দেশের মানুষের মাছের চাহিদা পূরণ করে আসছিল ব্যাপকভাবে। আর এসব বিলের চার পাশ ঘুরে রয়েছে বিস্তীর্ণ বোরো ধানের ক্ষেত। এসব ফসলের ক্ষেত বর্ষায় ডুবে থাকে কয়েক হাত পানির নিচে। আর গ্রামগুলো পানিতে ভাসে ভেলার মতো। শুধু হেমন্তে এসব ক্ষেত থাকে একটি ফসল ফলানোর উপযোগী, যা বোরো ফসল নামে সুপরিচিত। এই এক ফসলের ওপর নির্ভর করে এতদিন হাওরের কৃষকেরা সচ্ছল জীবনযাপন করে আসছিল। কারণ, এ অঞ্চলে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল বেশি, আর আজকের দিনের মতো আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এত ঘনঘন ফসলহানি ঘটত না। তখন হাওরের মানুষ মূলত কৃষি অর্থনীতির ওপরই নির্ভর ছিল। সরকারের কাছেও এরা কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা করত না। সরকারের কাছে ছিল না তাদের কোনো দাবি-দাওয়া। আর সরকারের বিরুদ্ধেও ছিল না তাদের কোনো অভিযোগ-অনুযোগ। কিন্তু এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। মাথাপিছু জমির পরিমাণ এক দিকে কমে গেছে, অপর দিকে বছর বছর অকাল বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে বোরো ধানের ক্ষেত। হাওরেও আগের মতো মাছ নেই। ফলে আজ হাওরাঞ্চলের মানুষের অর্থনীতি বলতে গেলে ভেঙে পড়েছে। তাই আজকের দিনে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছে হাওরের কৃষক পরিবারগুলো।

এবার বৈশাখ আসার আগেই চৈত্রের শেষ দিকেই প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল, ভারত থেকে আসা উজানের পানি এসে হাওরাঞ্চলে যে অকালবন্যা হয়েছে, তাতে তলিয়ে গেছে উল্লিখিত সাত জেলার হাওর এলাকার ৯০ শতাংশ বোরো ধানের ক্ষেত। এর ফলে হাওরাঞ্চলের কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে এক ধরনের হাহাকার। তা ছাড়া ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় ধানগাছ পচে হাওর এলাকার পানি এরই মধ্যে বিষাক্ত হয়ে গেছে। এর ফলে হাওরের ও নদীর মাছ মরে ভেসে উঠছে। তা ছাড়া এই বিষাক্ত মাছ খেয়ে কিংবা বিষাক্ত পানির বিরূপ প্রভাবে মরে যাচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকার হাঁস। এর ফলে কৃষক ও খামারিরা চোখে অন্ধকার দেখছেন। এর আগেও অকাল বন্যায় হাওরাঞ্চলে ফসলহানির ঘটনা ঘটেছে। তবে এভাবে মাছের মড়ক ও ঝাঁকে ঝাঁকে হাস মরে যেতে দেখা যায়নি। এই মাছের মড়ক ঠেকানো না গেলে হাওর এলাকার জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলবেন। এখন অবস্থা দাঁড়িয়েছে এমন : ঘরে নেই খানি, ঘরের চালে নেই ছানি, বিষাক্ত মাছ ধরা ও খাওয়ায় এসেছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা, নেই কেনো কর্মসংস্থানের সুযোগ, জেলে-চাষি চোখে দেখছেন অন্ধকার। হাওর পারের মানুষের দীর্ঘশ্বাস হাওরাঞ্চলের বাতাস ভারী করে তুলেছে।

অকালে ফসল তলিয়ে গেছে সময়মতো হাওর রক্ষা বাঁধগুলো নির্মাণে সরকারের চরম ব্যর্থতা ও হাওর রক্ষা বাঁধের টাকা লুটপাটের কারণে। আর এখন মাছ ও হাঁসের মড়ক ঠেকানোয় সরকারের কার্যকর তেমন কোনো উদ্যোগও চোখে পড়ছে না। শুধু বিচ্ছিন্নভাবে হাওরের পানিতে চুন ছিটিয়ে মাছের মড়ক ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা চলছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তারা তাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য উপহাসমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। যখন এবারের অভাবনীয় মাত্রার অকাল বন্যার বাপক ক্ষয়ক্ষতি দেখে চার দিক থেকে দাবি উঠেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকাকে ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণা করে বিপর্যয়কর এই পরিস্থিতি জরুরিভাবে মোকাবেলার, তখন সরকারি কর্মকর্তারা এই দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিদারদের মূর্খ বলে প্রতিপন্ন করার প্রয়াসে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। তাদের এই বক্তব্য ফসল হারিয়ে দিশেহারা কৃষকদের কাটা ঘায়ে নুন ছিটানোরই শামিল। সব কিছু হারিয়ে হাওর এলাকার মানুষ যখন বাঁচার লড়াইয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেছে, তখন সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের বক্তব্য ঔদ্ধত্যের চরম বহিঃপ্রকাশ।

গত বুধবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেছেন, ‘এই বন্যায় কোথাও একটি ছাগলও মরেনি।’ তিনি এ ধরনের মন্তব্য করে কৃষকদের কষ্টকে আরো বাড়িয়ে তুলেছেন। শুধু এ কথা বলেই তিনি থামেননি, বরং তিনি বাঙালকে হাইকোর্ট দেখাতেও প্রয়াস চালিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নামে একটি আইন আছে। এই আইনের ২২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো এলাকার অর্ধেকেরও বেশি লোক মারা যাওয়ার পর এই এলাকাকে দুর্গত ঘোষণা করতে হয়। না জেনে যারা এমন সস্তা দাবি জানায়, তাদের জ্ঞানই নেই।’ তিনি ঔদ্ধত্যের সীমা ছাড়িয়ে আরো বলেছেন, ‘কিসের দুর্গত এলাকা? একটি ছাগলও তো মারা যায়নি।’ 

উল্লেখ্য, ফসলডুবির ঘটনায় হাওরাঞ্চলের সর্বত্র জনপ্রতিনিধিরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, কৃষক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং গণমাধ্যমের লেখালেখির মাধ্যমে বিভিন্ন মহল ফসল ডুবে যাওয়া হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছে প্রতিবাদী মানুষের সংগঠন ‘হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’। পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা সচিব শাহ কামালের এই অযাচিত বক্তব্যের যথার্থ জবাব দিয়ে বলেছেন, ‘সচিব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২২ নম্বর ধারার ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই ধারায় রাষ্ট্রপতির ওপর দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন, ‘দেশের কোনো অঞ্চলে দুর্যোগের কোনো ঘটনা ঘটিয়াছে, যাহা মোকাবেলায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং অধিকতর ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয় রোধে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করা জরুরি ও আবশ্যক, তাহা হইলে সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করিতে পারিবেন।’ হাওর আন্দোলনের এই নেতা আরো বলেন, ‘সচিবের এই বক্তব্য অবিবেচনাপ্রসূত, হাওর এলকার মানুষ ও প্রাণীকুলের প্রতি চরম অন্যায়। এখন মাছের মড়ক লেগেছে। হাঁস ও পাখি মরছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ছাগলও মরবে। কঠিন হবে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা।’

আসলে এবারের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সচিব কামাল ছোট করে দেখাতেই এ ধরনের মন্তব্য করেছেন বলে মনে হয়। নইলে তিনি এই দুর্যোগ-দুঃসময়ে এ ধরনের বক্তব্য রাখতেন না। প্রশ্ন জাগে, হাওর এলাকায় এখন কী ঘটছে, কী পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা কি তিনি দেখছেন না? এরই মধ্যে হাওর এলাকার সার্বিক পরিস্থিতির খবর সরকারি মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছার কথা, কারণ তিনি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। তা ছাড়া অন্তত গণমাধ্যম সূত্রে প্রকাশিত খবরগুলো তো তার না জানার কথা নয়। দেশবাসী তো এরই মধ্যে গণমাধ্যম সূত্রেই জেনে গেছে- কয়েক দিনে সুনামগঞ্জের শুধু ধর্মপাশা উপজেলায়ই খামারিসহ গৃহস্থদের পাঁচ শতাধিক হাঁস মারা গেছে। ধর্মপাশার রবিউর রহমানের খামারে দেড় হাজারের মতো হাঁস ছিল। দু’দিনে হাওরের বিষাক্ত পানিতে মরে যাওয়া পচা মাছ খেয়ে মারা গেছে তার ১২০টি হাঁস। ফলে বেঁচে থাকা অন্য হাঁসগুলো তিনি এখন আর হাওরের পানিতে ছাড়ছেন না। বাড়িতে রেখেই এগুলোর যত্ন নিচ্ছেন। জানা গেছে, এই বিষাক্রান্ত হাঁস এক দিনেই মারা যায়। রবিউর রহমানের বাড়ি ধর্মপাশা উপজেলার বাদেহরিপুর গ্রামে। রবিউর রহমানের মতো একই অবস্থা উপজেলার সুখাইর রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের সরিষাকান্দা ইসলামপুর গ্রামের খামারি আল আমিনেরও। আল আমিনের ৭০০ হাঁসের মধ্যে দু’দিনে মারা গেছে ৭০টি। জানা যায়, ধর্মপাশা উপজেলায় ২৬০ জন খামারি ও ছোটখাটো গৃহস্থের সাত লাখ ১৫ হাজার ৩১০টি হাঁস রয়েছে। এগুলো নিয়ে খামারিরা এখন বিপদে। একইভাবে মোহনগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের হাঁস মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিঙ্গাপোতা হাওরে মারা গেছে অনেক হাঁস। হাঁস ও পাখি মারা গেছে হাকালুকি হাওরের মৌলভীবাজারের বড়লেখা অংশে। সুনামগঞ্জের সুরমা নদীতে ভেসে উঠেছে অনেক মরা মাছ। হাকালুকি হাওরেও মাছ মরছে। আরো বহু জায়গায় মাছ ও হাঁস মরার সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে একাধিক জাতীয় দৈনিকে। একইভাবে মাছের মড়ক ঠেকানোর জন্য চুনের পানি ছিটাতে দেখা গেছে অনেক হাওরে। এমনি পরিস্থিতিতে ‘একটি ছাগলও এখনো মরেনি’ ধরনের বক্তব্য একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে কাম্য নয়। হাওর জনপদের দিশেহারা মানুষের পক্ষ থেকে যখন হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি উঠেছে, তখন তাদের জ্ঞানই নেই বলে কটাক্ষ করাও অপ্রতাশিত।

এরই মধ্যে ধর্মপাশা ও মোহনগঞ্জের কয়েকটি হাওরের পানির উপাদান ও গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি গবেষকদল গত বুধবার সকালে ধর্মপাশার কাইঞ্জা ও ধরাম হাওরের এবং বৃহস্পতিবার মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপোতা হাওরের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি পরীক্ষা করে। গবেষণায় দেখা যায়, হাওরের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রতি লিটারে পাঁচ মিলিগ্রামের নিচে নেমে গেছে এবং প্রতি লিটারে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়েছে আধা থেকে ১ মিলিগ্রাম পর্যন্ত। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি লিটার পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ ৬ মিলিগ্রামের বেশি এবং অ্যামোনিয়ামের পরিমাণ প্রতি লিটারে শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য দুই (০.০০২) মিলিগ্রামের চেয়ে কম থাকার কথা। তবে গত বুধবার ধর্মপাশার হাওরে একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে হাওরের পানির অবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে বলে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাদে মতে, হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কমে যাওয়া এবং অ্যামোনিয়ামের পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় মাছ ও হাঁস মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর আগাম বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে কখনোই এবারের মতো বন্যার পানিতে মাছ, হাঁস ও পাখি মরতে দেখা যায়নি। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ইউরেনিয়াম খনি থেকে বিষাক্ত উপাদান হয়তো এবারের বন্যার পানিতে মিশে বাংলাদেশের হাওরে ছড়িয়ে পড়েছে। এই পানি একসময় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে, সে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ওপেন পিট ইউরেনিয়াম খনি। এ খবর দিয়েছে, ইরানের গণমাধ্যম পার্সটুডে। 

রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তিকেন্দ্রের রসায়ন বিভাগের প্রধান ড. বিলকিস আরা বেগম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভারত থেকে ইউরেনিয়াম মিশ্রিত পানি বাংলাদেশের হাওর এলাকাগুলোতে আসার সম্ভাবনা প্রচুর। আর যদি তা-ই ঘটে, তা হবে আমাদের জন্য পিজ্জনক। তবে এ ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না চালিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। কিন্তু ভারত থেকে ইউরেনিয়াম মিশ্রিত পানি বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, গত ডিসেম্বরে মেঘালয়ের স্থানীয় খাসিয়া জনগোষ্ঠী সে এলাকার রানিকর নদীর পানি নীল থেকে বদলে সবুজ হয়ে যেতে দেখে। এ প্রেক্ষাপটে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি খাসিয়া স্টুডেন্ট ইউনিয়ন এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। সংগঠনটি তখন এই নদীর মাছ মরে যাওয়ার বিষয়টিও অবহিত করে। এমনকি জলজ প্রাণীবিহীন এই নদীটি এখন মৃতপ্রায় বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। খাসিয়া সম্প্রদায়ের নেতা মারকনি থঙনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সন্দেহ ইউরেনিয়াম খনি খননের ফলে এ থেকে নিঃসৃত ইউরেনিয়াম পানিতে মিশে নদীর পানির রঙ বদলে দিয়েছে এবং এর প্রভাবে এর মাছও মরে গেছে। ভারতের যে নদীতে ইউরেনিয়াম মিশে যাওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদী থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে বলে পার্সটুডের খবরে বলা হয়েছে।

এমনিতেই হাওর এলাকার সমস্যার অন্ত নেই। এর মধ্যে এবার হাওরের পানিতে প্রয়োজনের তুলনায় অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া ও অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং ভারতের ইউরেনিয়াম খনি থেকে ইউরেনিয়ামের উপাদানের পানিতে এসে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা ইতাদি পরিবেশিক সমস্যা এখন দেখা দিয়েছে হাওরাঞ্চলের সমস্যার এক নতুন উপসর্গ হিসেবে। হাওরে এই সময়ে মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা আমাদের সামনে নিয়ে এলো নতুন তাগিদ। হাওরের মিঠা পানির সুস্বাদু মাছ সম্পদকে বাঁচাতে হলে হাওরের পানির ওপর নিয়মিত নজর রাখতে হবে। হাওরের পানি যেন সব সময় মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী বেঁচে থাকার উপযোগী থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সবার আগে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে ইউরেনিয়ামের বিষয়টি সম্পর্কে স্থির নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্বটি পালন করতে হবে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদেরই। ভুললে চলবে না, হাওর এলাকার মাছ যেমন মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উৎস, তেমনি হাওরের মাছ সম্পদ থেকে সরকার প্রতি বছর পেয়ে থাকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। পাশাপাশি হাওর এলাকার জেলেদের জীবন-জীবিকা মূলত নির্ভরশীল মাছ সম্পদের ওপর। কিন্তু সময়ের সাথে হাওরের মাছ সম্পদ ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এর সাথে সম্প্রতি হাওরের পানিতে পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা আমাদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। এতদিন হাওর এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি পুরোপুরি অবহেলিত হয়ে আসছে। এখন তা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে এসে ঠেকেছে। এখন এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র অবহেলার অবকাশ নেই।

হাওর এলাকার জনগোষ্ঠীর অর্থনীতি এখন পুরাপুরি ভঙ্গুর পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এই এলাকার মানুষ সার্বিক দৃষ্টিতে লেখাপড়ায় পিছিয়ে। ফলে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে রুটিরুজি করাও তাদের জন্য কষ্টকর। এর পরও এবারের ফসলহানি তাদের বাধ্য করছে গ্রাম ছেড়ে কাজের খোঁজে শহরমুখী হতে। অনেকেই হালের গরু অর্ধেক দামে বিক্রি করে ঋণের দায় মিটিয়ে গ্রাম ছাড়ছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর মতে, মহাজনদের হাত থেকে বাঁচতে হাওরের অনেক কৃষক গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। এ অবস্থায় অনেকেই কৃষিকাজ ছেড়ে দেয়ার স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেছেন। কারণ বছরের পর বছর ঋণের টাকায় ফসল ফলাবে, আর সেই ফসল প্রতি বছর পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে- এভাবে তো চলতে পারে না। এর ফলে হাওরের মানুষ ধানচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। সার্বিকভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে জাতীয় কৃষির ওপর। আর হাওরে মাছ না থাকলে জেলেরা বাধ্য হবে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হতে। 
  • লেখকঃ কলামিস্ট

Sunday, April 23, 2017

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক

এম. সিরাজুল ইসলাম / বণিক বার্তা


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ভারত সফর করেছেন। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দারুণ আতিথেয়তা দেখিয়েছেন। মোদি সরকার এ সফরের মর্যাদাকে একটি সরকারি সফর থেকে একটি রাষ্ট্রীয় সফরে উন্নীত করেছিল, যা ছিল পরিষ্কারভাবে প্রতিষ্ঠিত প্রটোকলের ব্যতিক্রম, কেননা রাষ্ট্রীয় সফরে যান রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান নন।


২০১০ সালেও কিন্তু একই ধরনের প্রতিষ্ঠিত প্রটোকলের ব্যতিক্রম ঘটানো হয়েছিল। ওই সফরকেও একটি রাষ্ট্রীয় সফর হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। এবার নয়াদিল্লি প্রতিষ্ঠিত প্রটোকলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রটোকল ভেঙে বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজেই অভ্যর্থনা জানান। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন না।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এ দুই সফরের মধ্যে আরেকটি পার্থক্য রয়েছে। সর্বশেষ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে ভারত সফরের আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার ক্ষমতায় আসার তিন বছরের বেশি সময় পর দ্বিতীয়বারের মতো ভারত সফরের আমন্ত্রণ পান। প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ মেয়াদে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে উভয় পক্ষের আন্তরিকতার প্রতিফলন হিসেবে প্রায়ই দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার— যার সঙ্গে বিজেপির ক্ষমতায় আসার মিল রয়েছে— পর থেকে ওই ধরনের ঘন ঘন উচ্চপর্যায়ের সফর অনেকটাই কমে যায়। প্রকৃতপক্ষে নয়াদিল্লির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল গত বছরের ডিসেম্বরে, যখন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর প্রতিরক্ষাসেবার তিনজন উপদেষ্টাসহ ঢাকা সফরে আসেন। ওই সফর ফাঁস করে দেয় যে, হঠাত্ করেই ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি করতে চাইছে।

প্রতিরক্ষা বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ভালো নয়, যদিও খুনি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে চূড়ান্ত ধাক্কা দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। চূড়ান্ত ধাক্কায়— তৃতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ৩ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১— ভারত কয়েক হাজার সৈন্য হারিয়েছিল। তথাপি যখন ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে আসেন, তখনো ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থান করছিল। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুই দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে ইন্দিরা গান্ধীকে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে নিতে বলেন।

ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ওই কথোপকথন ও ভালোবাসার সোনার বাংলাকে পূর্বের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দ্ব্যর্থহীনভাবে গুরুত্বারোপ করছে যে, ভারতসহ যেকোনো দেশের সঙ্গে সামরিক জোট তৈরি করার কোনো সুযোগ বাংলাদেশের নেই। অধিকন্তু হয়তো উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের সামনে বড় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ দশকে বাংলাদেশ কখনো কোনো বহিরাগত আগ্রাসনের সম্মুখীন হয়নি।

এজন্য এটা স্বাভাবিক ছিল যে, যখন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডিসেম্বরের সফরে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রস্তাব দেন, তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে উত্সাহী ছিলেন না। গুজব ও অনানুষ্ঠানিক তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর, যারা প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে মতামত জানাচ্ছিল, তাদের সঙ্গে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি দলের উদ্ধত মনোভাব নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যকে আরো জটিল করে তুলেছিল।

এটা স্বাভাবিক যে, ল্যান্ড ট্রানজিট বাংলাদেশ মেনে নেয়ার পর ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইবে। কৌশলগত বিষয় নিয়ে যারই সাধারণ জ্ঞান রয়েছে, তারাই বুঝতে পারবেন, বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামো তৈরির জন্য ভারত ‘সফট লোন’ হিসেবে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিতে চেয়েছিল, তা আদতে ছিল ওইসব সড়ক ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য ব্যবহারযোগ্য করে গড়ে তোলা, যাতে এ সড়ক ব্যবহার করে কৌশলগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ সেভেন সিস্টার্সে তারা যেতে পারে এবং একসময় ঠিকই ভারত ল্যান্ড ট্রানজিটকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য এ ধরনের চুক্তি করতে চাপ দেবে।

বাংলাদেশ নিজে ভারতের জন্য কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে যে ধরনের নিরাপত্তা সমস্যা ছিল, তা ভারতীয় ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো যৌথভাবে সামলে নিয়েছে। এটা ঠিক যে, ভারতীয় কৌশলগত বিবেচনায় চীনের কারণে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান সবসময় ভারতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুপার পাওয়ার হওয়ার দৌড়ে শক্তিশালীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। হয়তো শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে এক নম্বর আসন দখল করবে দেশটি।

এবং চীনের সঙ্গে ভারতের বড় ধরনের দ্বিপক্ষীয় সমস্যা রয়েছে। চীন ভারতীয় অঞ্চলের একটি বড় অংশ দাবি করে এবং এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে ১৯৫২ সালে দেশটির যুদ্ধও হয়েছে। সেভেন সিস্টার্সের একটি রাজ্য অরুণাচল। চীনের আঞ্চলিক দাবির একটি বড় অংশ রয়েছে এ রাজ্যে। ওই অংশে অভিযোগ রয়েছে, চীন সেভেন সিস্টার্সে বিছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে উত্সাহিত করছে এবং ভারত ভয় পাচ্ছে যে, এ ধরনের সম্পৃক্ততা বন্ধ হয়নি। এজন্য বাংলাদেশ ভারতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নয়াদিল্লি তত দিন পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না, যত দিন না তারা নিশ্চিত হবে যে, প্রয়োজনের সময় চীনের হুমকি মোকাবেলায় মূল ভূখণ্ড থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে তাদের সেনাবাহিনী চলাচল করতে পারবে।

প্রতিরক্ষা চুক্তি ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য তারা যত দ্রুত পারে বাংলাদেশের সঙ্গে এটি করতে চাইছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ইচ্ছা, যে কারণে তিনি ভারতকে বড় ধরনের ছাড় দিয়েছেন, এটিকে ভারত তার দুর্বলতা ভেবে ভুল করেছে এবং মনে করেছে, তারা এ চুক্তি করার জন্য তাকে রাজি করাতে পারবে। তিনি সেটা করেননি এবং কয়েকবার ওই সফর বিলম্ব করেন, যাতে ওই চুক্তির বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী আরো সচেতন ছিলেন যে, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ এ চুক্তির বিরোধিতা করবে।

এজন্য যখন নয়াদিল্লি বুঝতে পারল যে, প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে পারছে না, তখন তারা আর তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনো প্রচেষ্টা করেনি। প্রকৃতপক্ষে এ চুক্তির জন্য নয়াদিল্লির সবচেয়ে ভালো চেষ্টা ছিল নয়াদিল্লি সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও মমতা ব্যানার্জির মধ্যে একটি বৈঠকের আয়োজন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি চেয়ে চেয়ে দেখলেন, মমতা ব্যানার্জি তিস্তা চুক্তি হওয়ার পথে নতুন সমস্যা দাঁড় করিয়ে দিলেন। তিনি তিস্তার ওপর নতুন গবেষণার দাবি জানিয়েছেন। তিনি জানান, তিস্তা তার জনগণের হূদয়স্বরূপ এবং তিনি এটিকে ছিন্নভিন্ন হতে দেবেন না। এর চেয়ে বরং তিনি অন্য চারটি নদ-নদীর পানি দিতে চেয়েছেন, যেগুলোর কোনোটাই দুই দেশের মধ্যকার আলোচনায় কখনই আসেনি।

একটি দরিদ্র রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং ভারত একটি ‘আপাতদৃষ্টিতে ফেডারেশন’, যেখানে কেন্দ্র ‘ইউনিটারি স্টেটের’ মতো প্রায় একই রকম শক্তিশালী। নয়াদিল্লির কোষাগারের ক্ষমতা রয়েছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যেখানে রাজ্য কোনো ধরনের বাধা তৈরি করতে পারে না, যদি না কেন্দ্র চায়। বাংলাদেশের দাবি প্রত্যাখ্যানের যুক্তি হিসেবে নয়াদিল্লি বলছে, নদীর পানি ভাগ রাজ্যের বিষয়। কিন্তু অবশ্যই রাজ্যের ক্ষমতা আন্তর্জাতিক নদীর ক্ষেত্রে খাটে না বা খাটতে পারে না।

যদি নয়াদিল্লি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ইচ্ছার বিন্দুমাত্র প্রদর্শন করত, তবে তিস্তা চুক্তি অনেক আগেই হয়ে যেত। কংগ্রেসের শাসনামলে স্থানীয় রাজনীতির কারণে সংবিধানের খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে তিস্তা চুক্তি আটকে রেখেছিল নয়াদিল্লি। এ সময় প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই না করায় বাংলাদেশের ওপর নাখোশ ছিল নয়াদিল্লি। এজন্য তারা মমতা ব্যানার্জির অদ্ভুত দাবিতে সায় দিয়েছিল। নয়াদিল্লির এমন মনোভাব ছিল দুর্ভাগ্যজনক এবং যদি তারা মনে করে, ছোট প্রতিবেশীর সঙ্গে তারা যা খুশি তা-ই করতে পারবে, তবে তা সুবুদ্ধির পরিচায়ক হবে না।

আন্তর্জাতিক আইন ও অন্যান্য কনভেনশনে নিম্ন উপকূলবর্তী বা অববাহিকার দেশের জন্য অনুমোদন রয়েছে, সেই মোতাবেক বাংলাদেশ তিস্তা ও অন্যান্য ‘কমন’ নদ-নদীর ন্যায্য ভাগ দাবি করেছে। যদি জাতি হিসেবে মৃত্যু ঘটাতে চায়, তবেই বাংলাদেশ নিজ অধিকার থেকে সরে আসতে পারে। সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রয়োজন, দেশটির অর্থনৈতিক উন্নতিতে যার অবদান অপরিহার্য। এজন্য বাংলাদেশের স্বার্থের বিষয়টি যদি ভারত বিন্দুমাত্র আমলে নেয়, তাতে দেশটির উচিত হবে না চুক্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করা। এ চুক্তি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ও দেশপ্রেমিক প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে।

বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে রাজি না হলে ভারতও তিস্তা চুক্তি আরেকবার এড়িয়ে যাবে, এমনটা যে হবে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরে যাওয়ার আগেই বোঝা গিয়েছিল। এটি এ সফরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার সুযোগ কমিয়ে  দেয়। এজন্যই প্রটোকলের প্রতি বেশি মনোযোগ দিয়েছে ভারতীয়রা। তারা দেখাতে চেয়েছে যে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ঠিকঠাক রয়েছে।

কিন্তু শেখ হাসিনা এটা অনুমোদন করেননি। প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লির কাছে পরিষ্কার করেছেন যে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক টেকসই করার জন্য পানি প্রধান চাবিকাঠি এবং ঢাকায় প্রস্তাবিত উদযাপন বাতিল ছিল এ বার্তাকে ভারতের কাছে আরো পরিষ্কার ও জোরালোভাবে পাঠানো। এর সঙ্গে আরো একটি বার্তা দেয়া হয়েছে তা হলো, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ইচ্ছার সমকক্ষতা অর্জন করা, যা ভারতের ধারাবাহিক দুই প্রধানমন্ত্রী দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি বাংলাদেশ বড় ধরনের ছাড় দেয়ার পরও ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশের জরুরি চাহিদা, বিশেষ করে পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার, ভারত তা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

শেখ হাসিনা এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বলটি ভারতের কোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, রাজনৈতিক ঝুঁকি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ইচ্ছার মতো ভারত একই ধরনের রাজনৈতিক ইচ্ছা দেখায় কিনা এবং বাংলাদেশকে তার পানির অধিকার দেয় কিনা। ভারতের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি উঠিয়ে নিতে হবে, কারণ এ সফর জানাচ্ছে যে, এটি একটি ‘জিরো সাম’ প্রস্তাব, যেটা ভারতের স্বার্থ রক্ষা করতে বাংলাদেশকে নিজের স্বার্থের ক্ষতি করে সই করতে হবে।

যদি এর পর ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে, তবে এটা বলা অনুচিত হবে না যে, এটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বড় ধরনের আঘাত দেবে। এ সফর আরো বলছে, ভারতের শুধু রাজনৈতিক ইচ্ছারই অনুপস্থিতি নেই, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবেও দেশটির দূরদৃষ্টি ও মানসের অভাব রয়েছে। দেশটি এও দেখতে ব্যর্থ হয়েছে যে, বিশ্বাসের দিক থেকে বাংলাদেশে ভারতের গ্রহণযোগ্যতায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।

ভারতের এটা বোঝা উচিত যে, কয়েক বিলিয়ন ডলারের ‘সফট লোন’ দেশটির কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ চায় না বা তাদের প্রয়োজন নেই। একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে তারা যথাযোগ্য সম্মান চায়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে সামনে এগোতে হলে ভারতকে এটি এবং বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তিস্তা নিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে অদ্ভুত প্রস্তাব দিতে অনুমোদন দেয়া এবং প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রস্তাব দিয়ে ভারত দেখিয়ে দিয়েছে যে, যত দিন পর্যন্ত তাদের স্বার্থ পূরণ হচ্ছে, তত দিন তারা বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তা করে না।
  • লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত

Monday, April 17, 2017

কবে ফিরবেন ইলিয়াস আলী? রাষ্ট্রের কি কোন দায় নেই?

  কাদের গনি চৌধুরী

 

এম ইলিয়াস আলী। এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা। স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় অসীম সাহসী এ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জাগিয়ে রাখতো মিছিল, স্লোগান আর আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তাঁর গগনবিদারী স্লোগানে প্রকম্পিত হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে রাজধানীর রাজপথ। স্বৈরশাসকের রক্ত চক্ষু মেধাবী এ ছাত্রনেতাকে টলাতে পারেনি কখনো। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় একাধিকবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন তিনি। কি অসীম সাহস, কি নিখাদ দেশপ্রেম! অনেকে মজা করে বলতো আপনার কাছ থেকে কিছু সাহস আমাদের ধার দেন না ইলিয়াস ভাই। তিনি জবাবে বলতেন দেশকে ভালবাস, সাহস ধার নেয়া লাগবেনা। সাহস ধার দিতে পারবে। 

স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী অগ্নিঝড়া আন্দোলনের রাজপথের লড়াকু এ যোদ্ধাকে কেউ উপাধি দিলেন রাজপথপুত্র, কেউ বলতেন রাজপথের দাবানল, কেউ বলতেন রাজপথের অগ্নিমশাল। আরো কত কি। 

দেশে গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ের এ বীর 'ছাত্রনেতা' থেকে অল্প সময়ে হয়ে উঠেন ' জননেতা'। জনপ্রিয় জননেতা থেকে জননন্দিত জননেতা। আবার জননেতা থেকে পার্লামেন্ট মেম্বার - জাতীয় নেতা। বাংলাদেশের সর্ববৃহত রাজনৈতিক দল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। জাতীয়তাবাদের পতাকা উঁচিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন দুর্বার গতিতে। যে ইলিয়াস আলী জনতার,তাঁকে রুধিবে সাধ্য কার?

না, জননন্দিত এ নেতাকে আর এগুতে দিলো না, থামিয়ে দিল ফ্যাসিবাদী সরকার। এতবড় একজন জাতীয় নেতাকে গুম করার পর কি কোন সরকারের সাফল্য থাকতে পারে? সাধারণ মানুষ কি নিরাপদবোধ করতে পারেন? মানুষের যদি নিরাপত্তাই দিতে না পারে কিসের জন্য এ সরকার? কার জন্য এ সরকার?

কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকার বনানী থেকে ব্যক্তিগত গাড়ীচালক আনসার আলীসহ রহস্যজনকভাবে গুম হন তিনি। সে থেকে এখনো তাঁর পরিবার খুঁজে বেড়াচ্ছে ইলিয়াস আলী। তাদের কান্নার যেন আর শেষ নেই। তাদের অপেক্ষার যেন সমাপ্তি নেই। ইলিয়াস আলীর বৃদ্ধা মা সন্তানের পথ পানে চেয়ে থাকেন, এবুঝি আসছে 'বাছাধন'। প্রিয় সন্তানের চিন্তায় মা মৃত্যুপথ যাত্রী। ঈদ, আর নববর্ষে বাংলার মানুষ যখন উৎসবে মেতে উঠে, তখন ইলিয়াস আলীর পরিবারে দেখা দেয় কান্নার রোল। বাবাকে ছাড়া ইলিয়াসের সন্তানরা কিভাবে আনন্দ করবে?

ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর দেশব্যাপী গড়ে উঠে কঠোর আন্দোলন। ওই আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নির্বিচারে গুলি চালালে ইলিয়াসের ভালবাসায় প্রাণ দেন বিশ্বনাথের তিন বিএনপি কর্মী। ফিরে পাওয়ার আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা-মামলা শিকার হন হাজার হাজার বিএনপি নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। মামলায় কারাবরণ করেন অনেকে। তবুও আন্দোলন থেকে পিছু হঠেনি ইলিয়াস প্রেমিরা।

কিন্তু একে একে পাঁচ বছর পূর্ণ হলেও আজ পর্যন্ত তার কোন সন্ধান দিতে পারেনি দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাবেক এ সংসদ সদস্যকে উদ্ধারে সরকারের কোন তৎপরতাও চোখে পড়েনি। এপরও নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস’র জন্য অন্তহীন অপেক্ষা চলছে তার পরিবার, বিশ্বনাথের আপামর জনতা ও দেশবাসীর।

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান মারা যাওয়ার পর এম ইলিয়াস আলী হয়ে উঠেন সিলেট বিএনপির একমাত্র কান্ডারী। শুধু সিলেট নয়, গোটা বিভাগের একজন অভিভাবক হিসেবে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি।

তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেয়ার মিনতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছরেও সন্ধান মিললোনা তাঁর। এরপরও তাঁর নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এখনো বিশ্বাস করেন ইলিয়াস আলী জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় আবার তাদের কাছে ফিরে আসবেন।

গত বছর এক সাক্ষাৎকারে গুম হওয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী বেঁচে আছেন ও পশ্চিমবঙ্গের কোনো একটি কারাগারে বন্দি আছেন এমন দাবি করেছেন তার আপন ছোট ভাই আসকির আলী। চ্যানেল আই-লন্ডনের স্ট্রেইট ডায়ালগ অনুষ্ঠানের লাইভ প্রোগ্রামে তিনি এ দাবি করেন।

তবে ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদি লুনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। খবর বিভিন্ন ওয়েবসাইটের। আসকির আলী আরও বলেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন সূত্র থেকে যে তথ্য রয়েছে তাতে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে, ইলিয়াস আলী এখনও জীবিত আছেন। তাকে ভারতের দমদমের কাছাকাছি কোনো এক কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। যেমন করে কলকাতায় সুখরঞ্জন বালি আছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

এম ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানী ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। তারপর থেকে তাকে বহনকারী গাড়ির চালককেও পাওয়া যায়নি। তবে দুটি মোবাইল ফোনসহ গাড়িটি রাস্তায় পড়েছিল। নিখোঁজ হওয়ার পর ইলিয়াস আলীর মোবাইল ফোন থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির ফোনে কল করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার পর তার মোবাইল থেকে বারবার বিভিন্ন ব্যক্তির ফোনে ফোন আসাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। 

Monday, April 10, 2017

Recording Lifts Lid on Extra-Judicial Killings and Disappearances


BY DAVID BERGMAN

Dhaka: A secret recording of a senior officer employed by Bangladesh’s paramilitary organisation, Rapid Action Battalion (RAB), has added pressure on the government to come clean on its use of enforced disappearances, torture and extra-judicial killings.

In the recording, obtained and authenticated by Swedish National Radio, which broadcast the story on Monday (April 3), the RAB officer talks about how the organisation routinely picks people up, kills them and disposes off their bodies.

Swedish foreign minister Margot Wallström condemned the practices. “There is only one thing to say about this: that it’s horrific and that it must stop and that Bangladesh must take responsibility for this.”

“We will act, in particular via the EU, but also through our bilateral contacts, to make it completely clear that this is not acceptable, and must stop immediately,” she said.

The report comes a week after the UN Human Rights Committee published a report criticising the Bangladesh government for its “reported high rate of extra-judicial killings by police officers, soldiers and Rapid Action Battalion (RAB) force members and the reported enforced disappearances, as well as the excessive use of force by State actors.”

The UN committee went onto say that, it “is further concerned by the lack of investigations and accountability of perpetrators, leaving families of victims without information and redress.”

Since the Awami League came to power in 2009, human rights organisation Odhikar has identified over 325 people who were picked up and secretly detained for various degrees of time, allegedly by one of the country’s law enforcement bodies, including the RAB. After weeks or months in unlawful detention, the men are then either ‘shown arrested’ or killed. Out of the more than 90 people secretly detained in 2016, 22 dead bodies have been found.
In relation to extra-judicial killings – which happened in even greater numbers under previous governments – since 2009, Odhikar reports nearly 1,300 deaths.
[...]
In the Swedish Radio recording, the unnamed senior RAB officer, who was unaware that his conversation was being taped, said that there were three aspects to an enforced disappearance: the capture, the killing and the disposal.

“Everyone is not an expert on forced disappearances,” the officer is reported by Swedish radio to have said. “We have to make sure no clue is left behind. No ID cards that slip-off. We have to wear gloves; we can’t leave footprints behind and have to wear covers on our shoes to prevent that. We can’t smoke during these operations.”

The officer talks about how some of the picked up men are tortured. According to Swedish Radio, the officer “describes a dark room with a lamp in the middle where an arrested man was stripped naked. They hung him in handcuffs, and tied bricks to his testicles. His testicles were almost ripped off by the weight, the officer says. The tortured man fell unconscious and the RAB officer says he did not know if the man was dead or alive.”

In the recordings obtained by the radio station, the RAB officer is said to have claimed that dead bodies of the men who are killed are disposed of by throwing them into a river with blocks of concrete attached to their bodies. He says the fate of the men is decided by “high ups”.

This description of the disposal matches what happened to seven men who were picked up and killed by the RAB in April 2014, in a dispute between local leaders of the governing Awami League belonging to the district of Naranganj, close to the country’s capital city of Dhaka. A few days later their bloated bodies floated to the surface of the Shitalakkya river where they had been dumped. In January this year, a court convicted 35 people of involvement in the murders, sentencing 26 of them, including three former RAB officers, to death.

No other recent disappearances – including those of 19 opposition activists picked up in the capital city of Dhaka over a two week period four months earlier – has resulted in similar investigation or prosecution.

The Swedish Radio recording of the RAB officer is the first time that a media organisation has managed to record a conversation in which a Bangladeshi law enforcement officer has admitted to their involvement in disappearances and extra-judicial killings.

RAB’s legal and media wing director, Commander Mufti Mahmud Khan, denied the allegations contained in the secret recording. He told Bangladesh’s national newspaper Prothom Alo  that “RAB do nothing going against legal provision. …Those who have been killed in RAB’s crossfire so far are armed notorious terrorists, robbers and militants. When drives are conducted to arrest them, they open fire on RAB. And RAB also open fires in self-defence,” he added. ‘Things are not as though only terrorists were killed in the RAB shooting; RAB officers and members were also killed and maimed.”

The Swedish public broadcaster is unwilling to provide any information on how it managed to undertake or obtain the recording of the conversation due to the ‘sensitivity’ of the matter and the need to protect their sources. In addition, at present, it is not willing to provide a transcript or copy of the recording.
[Excerpted]

ছাত্রনেতা নূরু হত্যা, কারো দায় নিরূপিত হয়নি


মহিউদ্দিন খান মোহন / নয়া দিগন্ত

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম নূরুর হত্যাকাণ্ড এখন দেশের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়। রাতে পুলিশের পরিচয়ে হাতকড়া পরিয়ে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং পরদিন সকালে তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হওয়া কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। ফলে জনমনে এখন প্রশ্ন জোরালোভাবেই দেখা দিয়েছে যে, দেশে কারো কোনো নিরাপত্তা আছে কি না। একটি দেশের যেকোনো নাগরিকের যেকোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ গ্রহণ এবং তদনুযায়ী কর্মতৎপরতা চালানোর অধিকার রয়েছে। আমাদের সংবিধান সে অধিকার প্রতিটি নাগরিককে দিয়েছে। পাশাপাশি একজন নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে তাদের। এটাও সংবিধান নির্দেশিত বিষয়। ফলে একজন নাগরিককে রাষ্ট্রের একটি বাহিনীর পরিচয়ে রাতের অন্ধকারে তুলে নেয়া হবে, আর কয়েক ঘণ্টা পরে তার নিষ্প্রাণ দেহ পড়ে থাকতে দেখা যাবে এটা কারো পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, গত ২৯ মার্চ বুধবার রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের চন্দনপুরা পশ্চিম গলির বাসা থেকে সাদা পোশাকের একদল লোক নিজেদেরকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে নূরুল আলম নূরুকে তুলে নিয়ে যায়। অভিযানকারী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে রাউজান থানার নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জাবেদ মিয়া ছিল বলে জানিয়েছেন নিহত নূরুর ভাগ্নে। পরদিন সকালে নূরুর লাশ পাওয়া যায় তার গ্রামের বাড়ি থেকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার দূরে রাউজানের কোয়াপাড়া গ্রামের খেলারঘাটের পশ্চিম পাশে সওদাগরপাড়া এলাকায়। স্থানীয় লোকজন হাত-পা মুখ বাঁধা লাশটি দেখে পুলিশকে খবর দিলেও পুলিশ আসতে দেরি করে। বিকেল ৪টার পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে যায়।
দিকে নোয়াপাড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ জাবেদ মিয়া পত্রিকাকে বলেছেন - ‘আমি রাতে শহরে কোনো অভিযানে ছিলাম না। রাউজান থানার ওসির সঙ্গে থানার কাগতিয়া এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ছিলাম।অন্য দিকে রাউজান থানার ওসি কেফায়েত উল্লাহ বলেছেন- ‘রাউজান থানার টিম নগরীতে বুধবার রাতে অভিযান চালায়নি। ওই রাতে কাগতিয়া এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ছিলাম আমরা।’ (কালের কণ্ঠ ৩১, মার্চ ২০১৭) দিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, রাউজান থানা পুলিশ ওই রাতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়েছে, এমন কোনো বার্তা জেলা পুলিশের কার্যালয়ে নেই

নুরুল আলম নূরুর দাফন সম্পন্ন হওয়ার আগেই আরেকটি নৃশংস ঘটনার খবর আসে সিলেট থেকে। সেখানে একদল দুর্বৃত্ত কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রদল নেতা হাসান ডনকে। তাকে শাসক দলের ক্যাডাররা হত্যা করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে। দুটি ঘটনা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সংঘটিত হওয়ার কারণে দেশব্যাপী এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের দুজন নেতার এক দিনের ব্যবধানে নিহত হওয়ার ঘটনা স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। জনমনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে কারণে যে, একটি হত্যাকাণ্ডের হোতারা নিজেদেরকে রাষ্ট্রীয় একটি বাহিনীর পরিচয় দিয়েছে। অন্যটি সরকারি দলের ছাত্রকর্মীরা সংঘটিত করেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ক্ষমতাসীন সরকার এভাবে বিরোধী দল নির্মূলের বিশেষ কোনো কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কি না। অবশ্য হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি জোরালো অভিযোগ ওঠার পরও পুলিশ নূরু হত্যার বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি। বরং পুলিশের আচরণে একরকমঢাক গুড়, গুড়ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। নূরুল আলম নূরুর লাশ পাওয়ার খবর সকালেই রাউজান পুলিশকে জানানো হলেও তারা সঙ্গে সঙ্গে কেন অকুস্থলে গেল না প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সারা দিন পার করে বিকেল ৪টার পরে কেন তারা ঘটনাস্থলে গেল? তাহলে কি ওই দীর্ঘ সময়েনূরুল আলম নূরু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো গল্পের প্লট বানানোর পরিকল্পনা চলেছিল? জনমনে উত্থিত প্রশ্নের জবাব হয়তো পাওয়া যাবে না ; তবে ক্ষেত্রে পুলিশ যে একটা কিছু লুকাতে চাচ্ছে তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, নূরুল আলম নূরুকে হত্যা করা হয়েছে। আর তা করা হয়েছে অত্যন্ত নির্মম উপায়ে। হাত-পা মুখ বেঁধে তাকে মারা হয়েছে। তার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টেই বলা হয়েছে। অর্থাৎ বাসা থেকে তুলে নেয়ার পর নূরুর ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তারপর তাকে হত্যা করা হয়েছে। পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, নূরুকে যখন ওরা তুলে নিয়ে যায়, তখন তার স্ত্রী তাদের সঙ্গে থানায় যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তাকে সঙ্গে নেয়া হয়নি। কেন তাকে থানায় যেতে দেয়া হলো না? সাধারণ আসামিকে ধরে নিয়ে গেলে স্বজনেরা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির সঙ্গে থানায় যায়। কিন্তু ক্ষেত্রে কেন নূরুর স্ত্রীকে থানায় যেতে নিষেধ করা হলো এটা একটা রহস্য। পরদিন সকালে স্বজনেরা রাউজান থানায় গিয়ে নূরুর সন্ধান করলে থানা থেকে জানানো হয় সে থানায় নেই।
 
দেশে এখন স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে না - এটা বলা বোধ করি অসঙ্গত হবে না। অস্থিরতা বিরাজ করছে সর্বত্র। এক দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে উগ্রবাদী আস্তানার সন্ধান লাভ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপারেশন চলছে। নিহত হচ্ছে পুরুষ, নারী শিশু। অন্য দিকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলে কোনোভাবেই স্বীকার করা যাবে না। সরকারবিরোধী প্রধান দল বিএনপির পক্ষ থেকে নূরু হত্যার বিষয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। প্রেস ব্রিফিং করা হয়েছে। তাতে সরকারের দমননীতির নিন্দা জানানো হয়েছে এবং সরকার বিরোধী দলকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করে ক্ষমতায় টিকে থাকাতে চায় এমন অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগটি বিরাজমান বাস্তবতায় অসঙ্গত বলা যাবে না, বরং পেশিশক্তির ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলকে দমন করে রাজনীতির একচ্ছত্রাধিপতি হওয়ার একটা উদগ্র বাসনা সরকারকে পেয়ে বসেছে বলেই মনে হচ্ছে। অনেকেই বলছেন যে, এখন যেমন ঝোপঝাড়, জঙ্গল, সড়ক-মহাসড়কের ধারে কিংবা খাল-নদীর তীরে বিরোধীদলীয় কর্মীদের লাশ মাঝে মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে, তেমন অবস্থা ছিল স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেও। তখন বিশেষ বাহিনী যদি কাউকে ধরে নিয়ে যেত, তাহলে তার অক্ষত দেহে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসা ছিল অবসম্ভব ব্যাপার। সে সময় সারা দেশে কয়েক হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীর খুনের অভিযোগ রয়েছে। আর সে অভিযোগ উত্থাপনকারী দলটির নেতা এখন বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী!

রাউজান থানা পুলিশ বলেছে, নিহত ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নূরুর বিরুদ্ধে ওই থানায় দুটি হত্যা একটি বিস্ফোরকসহ চারটি মামলা রয়েছে। নূরু যেহেতু রাজনীতি করত, সেহেতু তার বিরুদ্ধে মামলা থাকা স্বাভাবিক। তবে, ধরনের মামলা থাকাটা একজন মানুষকে হত্যা করার যৌক্তিক কারণ বা কৈফিয়ত হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। সে যদি হত্যা মামলার আসামি হয়েই থাকে, তাহলে আরো আগেই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে বিচারের সম্মুখীন করা হলো না কেন? পুলিশ অবশ্য এখনো নূরু হত্যার কথা স্বীকার-অস্বীকার কোনোটাই করেনি। যদি পুলিশ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে না থাকে, তাহলে তো তাদের দায়িত্ব খুনিচক্রকে দ্রুত খুঁজে বের করা। অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ কর্মকর্তারা এমন কি স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলে থাকেন - ‘খুনিদের দ্রুত খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হবে কিন্তু ছাত্রনেতা নূরু হত্যার পর সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তেমন কোনো হুঙ্কার দেননি। কেন, নূরু সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন বলে? রাজনীতি করা, কোনো একটি সরকারের বিরোধিতা করা একজন নাগরিকের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার। আর বেঁচে থাকাও তার অধিকার। তাহলে নূরু কেন বাঁচতে পারলেন না? রাষ্ট্র কি এর দায়দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে?


  • লেখক : মিডিয়া কর্মী